text
stringlengths
11
126k
title
stringlengths
1
182
বাংলা ভাষা (বাঙলা, বাঙ্গলা, তথা বাঙ্গালা নামগুলোতেও পরিচিত) একটি ইন্দো-আর্য ভাষা, যা দক্ষিণ এশিয়ার বাঙালি জাতির প্রধান কথ্য ও লেখ্য ভাষা। মাতৃভাষীর সংখ্যায় বাংলা ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা পরিবারের পঞ্চম ও মোট ব্যবহারকারীর সংখ্যা অনুসারে বাংলা বিশ্বের ষষ্ঠ বৃহত্তম ভাষা। বাংলা সার্বভৌম ভাষাভিত্তিক জাতিরাষ্ট্র বাংলাদেশের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা তথা সরকারি ভাষা এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, আসামের বরাক উপত্যকার সরকারি ভাষা। বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের প্রধান কথ্য ভাষা বাংলা। এছাড়া ভারতের ঝাড়খণ্ড, বিহার, মেঘালয়, মিজোরাম, উড়িষ্যা রাজ্যগুলোতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাংলাভাষী জনগণ রয়েছে। ভারতে হিন্দির পরেই সর্বাধিক প্রচলিত ভাষা বাংলা। এছাড়াও মধ্য প্রাচ্য, আমেরিকা ও ইউরোপে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাংলাভাষী অভিবাসী রয়েছে। সারা বিশ্বে সব মিলিয়ে ২৬ কোটির অধিক লোক দৈনন্দিন জীবনে বাংলা ব্যবহার করে। বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত এবং ভারতের জাতীয় সঙ্গীত ও স্তোত্র বাংলাতে রচিত। বাংলা ভাষা বিকাশের ইতিহাস ১৩০০ বছর পুরনো। চর্যাপদ এ ভাষার আদি নিদর্শন। অষ্টম শতক থেকে বাংলায় রচিত সাহিত্যের বিশাল ভাণ্ডারের মধ্য দিয়ে অষ্টাদশ শতকের শেষে এসে বাংলা ভাষা তার বর্তমান রূপ পরিগ্রহণ করে। বাংলা ভাষার লিপি হল বাংলা লিপি। বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে প্রচলিত বাংলা ভাষার মধ্যে শব্দগত ও উচ্চারণগত সামান্য পার্থক্য রয়েছে। বাংলার নবজাগরণে ও বাংলার সাংস্কৃতিক বিবিধতাকে এক সূত্রে গ্রন্থনে এবং বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিকাশে তথা বাংলাদেশ গঠনে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। ১৯৪৭ থেকে ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দে পূর্ব বাংলায় সংগঠিত বাংলা ভাষা আন্দোলন এই ভাষার সাথে বাঙালি অস্তিত্বের যোগসূত্র স্থাপন করেছে। ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দের ২১শে ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবাদী ছাত্র ও আন্দোলনকারীরা সংখ্যাগরিষ্ঠের মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষাকরণের দাবিতে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেন। ১৯৮৭ সালের বাংলা ভাষা প্রচলন আইন বাংলাদেশের সকল রাষ্ট্রীয় কাজে বাংলার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ১৯৫২ সালের ভাষা শহিদদের সংগ্রামের স্বীকৃতি স্বরূপ ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দে ইউনেস্কো ২১শে ফেব্রুয়ারি দিনটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। ইতিহাস বাংলা ভাষার ইতিহাসকে সাধারণত তিন ভাগে ভাগ করা হয়: প্রাচীন বাংলা (৯০০/১০০০ – ১৪০০ খ্রিস্টাব্দ) — চর্যাপদ, ভক্তিমূলক গান এই সময়কার লিখিত নিদর্শন। এই সময় আমি, তুমি ইত্যাদি সর্বনাম এবং -ইলা, -ইবা, ইত্যাদি ক্রিয়াবিভক্তির আবির্ভাব ঘটে। মধ্য বাংলা (১৪০০–১৮০০ খ্রিস্টাব্দ) — এ সময়কার গুরুত্বপূর্ণ লিখিত নিদর্শন চণ্ডীদাসের শ্রীকৃষ্ণকীর্তন ইত্যাদি। শব্দের শেষে "অ" ধ্বনির বিলোপ, যৌগিক ক্রিয়ার প্রচলন, ফার্সি ভাষার প্রভাব এই সময়ের সাহিত্যে লক্ষ্য করা যায়। কোনো কোনো ভাষাবিদ এই যুগকে আদি ও অন্ত্য এই দুই ভাগে ভাগ করেন। আধুনিক বাংলা (১৮০০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে-বর্তমান) — এই সময় ক্রিয়া ও সর্বনামের সংক্ষেপণ ঘটে, যেমন তাহার → তার; করিয়াছিল → করেছিল। বাংলার প্রাচীন ভাষা খ্রিস্টপূর্ব প্রথম সহস্রাব্দ থেকে বাংলায় হিন্দু ব্রাহ্মণগণ সংস্কৃত ভাষার চর্চা করত, কিন্তু স্থানীয় বৌদ্ধরা প্রাকৃত ভাষার কোন কোন রূপে (ভ্যারাইটি) কথা বলত, যাকে ডঃ সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায় উল্লেখ করেছেন মাগধী প্রাকৃতের পূর্ব রূপ বা ভ্যারাইটি হিসেবে। গুপ্ত সাম্রাজ্যের সময়, বাংলা ছিল হিন্দু যাজক বা পুরোহিতদের জন্য সংস্কৃত সাহিত্যের একটি কেন্দ্র, যা স্থানীয়দের কথ্য ভাষাকে প্রভাবিত করে। প্রথম সহস্রাব্দে বাংলা যখন মগধ রাজ্যের একটি অংশ ছিল তখন মধ্য ইন্দো-আর্য উপভাষাগুলি বাংলায় প্রভাবশালী ছিল। এই উপভাষাগুলিকে মাগধী প্রাকৃত বলা হয় এবং এটি আধুনিক বিহার, বাংলা ও আসামে কথিত হত। এই ভাষা থেকে অবশেষে অর্ধ-মাগধী প্রাকৃতের বিকাশ ঘটে। প্রথম সহস্রাব্দের শেষের দিকে অর্ধ-মাগধী থেকে অপভ্রংশের বিকাশ ঘটে। সময়ের সাথে সাথে বাংলা ভাষা একটি স্বতন্ত্র ভাষা হিসেবে বিকশিত হয়। প্রাচীন যুগ অন্যান্য পূর্বাঞ্চলীয় ইন্দো-আর্য ভাষাসমূহের মতো বাংলাও সংস্কৃত ও মগধী প্রাকৃত থেকে ১০০০-১২০০ খ্রিস্টাব্দে বিকশিত হয়। সেসময় উপমহাদেশের পূর্বাঞ্চলের স্থানীয় আপভ্রংশ ছিল পূর্ব অপভ্রংশ বা অবহট্‌ঠ ("অর্থহীন ধ্বনি"), সেটা থেকেই অবশেষে আঞ্চলিক উপভাষাসমূহের বিকাশ ঘটে, এক্ষেত্রে তিনটি ভাষাদল গঠিত হয় - বাংলা–অসমিয়া ভাষাসমূহ, বিহারি ভাষাসমূহ এবং ওড়িয়া ভাষাসমূহ। অনেকে যুক্তি দেখান যে, এই ভাষাদলগুলোর পৃথকীকরণ অনেক আগেই ঘটেছে, কেউ কেউ ৫০০ খ্রিস্টাব্দের কথাও বলেন। অনেকে বলেন, মধ্যযুগে প্রাচীন সাহিত্যসমূহের অনেকগুলোকেই আর পাওয়া যায়না, যার ফলে সেসময়কার অনেক শব্দই আমাদের ধরাছোঁয়ার বাইরে। কিন্তু ভাষা স্থির ছিল না: সেসময় ভাষার বিভিন্ন রূপ বা ভ্যারাইটির সহাবস্থান ছিল, আর সেসময়ে লেখকগণ প্রায়ই একাধিক উপভাষায় লিখেছিলেন। উদাহরণস্বরূপ, ষষ্ঠ শতাব্দীর আশেপাশে অর্ধ-মাগধী থেকে অবহট্‌ঠ ভাষার বিকাশ ঘটেছে বলে ধারণা করা হয়, এই অবহট্‌ঠ ভাষা কিছুসময়ের জন্য বাংলা ভাষার পূর্বপুরুষ প্রোটো-বাংলার সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল। প্রোটো-বাংলা ছিল পাল সাম্রাজ্য এবং সেন রাজবংশের ভাষা। চৈতন্য মহাপ্রভুর যুগে ও বাংলার নবজাগরণের সময় বাংলা সাহিত্য সংস্কৃত ভাষা দ্বারা অত্যন্ত প্রভাবিত হয়েছিল। সংস্কৃত থেকে যে সমস্ত শব্দ বাংলা ভাষায় যোগ করা হয়, তাদের উচ্চারণ অন্যান্য বাংলা রীতি মেনে পরিবর্তিত হলেও সংস্কৃত বানান অপরিবর্তিত রাখা হয়। মধ্যযুগ বাংলা ভাষার ব্যাপক পৃষ্ঠপোষকতা করেন বাংলার মুসলিম শাসকগোষ্ঠী। ফার্সির পাশাপাশি বাংলাও বাংলার সালতানাতের দাফতরিক ভাষা হিসেবে স্বীকৃত ছিলো এবং ব্যাপক হারে ব্যবহার হতো। এছাড়াও প্রত্ন বাংলা ছিলো পাল এবং সেন সাম্রাজ্যের প্রধান ভাষা। মধ্য বাংলার লক্ষণ মধ্য স্তরের বাংলা ভাষায় দুইটি সুস্পষ্ট উপস্তর দেখা যায়, আদি-মধ্য আর অন্ত্য-মধ্য। আদি-মধ্য বাংলার স্থিতিকাল আনুমানিক ১৩৫০ খ্রীঃ হতে ১৪৫০ খ্রীঃ পর্যন্ত। চতুর্দশ শতাব্দে ও পঞ্চদশ শতাব্দে লেখা বলে নিশ্চিতভাবে নেওয়া যেতে পারে এমন কোন রচনা মিলে না। সুতরাং ১৩৫০ হতে ১৪৫০ অবধি শতাব্দ কালের কতটা প্রাচীন বাংলার অন্তর্গত ছিল এবং কতটা আদি-মধ্য বাংলার অন্তর্গত ছিল তা নিশ্চয় করে বলবার উপায় নাই। সব প্রাচীন রচনায় অষ্টাদশ শতাব্দীর নকল করা উচিত এ পাওয়া গিয়েছে। তাই পঞ্চদশ-ষোড়শ শতাব্দের ভাষার পরিপূর্ণ রূপটি এগুলিতে প্রতিফলিত নয়। তবে বড়ু চণ্ডীদাসের শ্রীকৃষ্ণকীর্তনের পুথি তেমনি পুরানো না হলেও মূলে হস্তক্ষেপ খুব বেশি না পড়ায় আদি-মধ্য বাংলার পরিচয় খানিকটা পাওয়া যায়। অন্ত্য-মধ্য বাংলার স্থিতিকাল ১৬০১ হতে ১৮০০ খ্রীঃ পর্যন্ত। মনে রাখতে হবে যে এই কালসীমা অত্যন্ত আনুমানিক। সাধু ভাষার পরিবর্তনের কথা মনে রাখলে অন্ত্য-মধ্য উপস্তরের শেষসীমা ১৭৫০ খ্রীঃ ধরাই সঙ্গত। তবে সেই সঙ্গে সাহিত্যে ব্যবহারের দিকেও লক্ষ্য রাখলে ১৮০০ খ্রীঃ ধরতে হয়। আদি-মধ্য বাংলার প্রধান বিশেষত্ব আ-কারের পরস্থিত ই-কার ও উ-কার ধ্বনির ক্ষীণতা, এবং পাশাপাশি দুই স্বরধ্বনির স্থিতি। যেমন—বড়াই > বড়া, আউলাইল > আলাল। মহাপ্রাণ নাসিক্যের মহাপ্রাণতার লোপ অথবা ক্ষীণতা অর্থাৎ ‘হ্ন (ন্‌হ) > ন’, এবং ‘হ্ম (ম্‌হ) > ম’। যেমন—কাহ্ন > কান, আহ্মি > আমি। [রা] বিভক্তির যোগে সর্বনামের কর্তৃকারকের বহুবচন পদ সৃষ্টি। যেমন—আহ্মারা, তোহ্মারা, তারা। [-ইল] -অন্ত অতীতের এবং [-ইব] -অন্ত ভবিষ্যতের কতৃবাচ্যে প্রয়োগ। যেমন—“মো শুনিলোঁ” (=আমি শুনিলাম), “মোই করিবোঁ” (=মুই করিব)। প্রাচীন [-ইঅ-] বিকরণযুক্ত কর্মভাব-বাচ্যের ক্রমশ অপ্রচলন এবং ‘যা’ ও ‘ভূ’ ধাতুর সাহায্যে যৌগিক কর্মভাব-বাচ্যের সামরিক প্রচলন। যেমন—“ততেকে সুঝাল গেল মোর মহাদানে”, “সে কথা কহিল নয়”। অসমাপিকার সহিত ‘আছ্’ ধাতুর যোগে যৌগিক ক্রিয়াপদ গঠন। যেমন—লইছে < লই + (আ)ছে, রহিলছে < রহিল + (আ)ছে (=রহিয়াছে)। যথাক্রমে বক্তার প্রাতিমুখ্য ও আভিমুখ্য বুঝাতে ‘গিয়া’ ও ‘সিয়া’ (< এসে) অসমাপিকা ক্রিয়াপদ অনুসর্গরূপে ব্যবহার। যেমন—দেখ গিয়া > দেখ গে, দেখ সিয়া > দেখ সে। ষোড়শ-মাত্রিক পাদাকুলক-পজ্ঝটিকা হতে চতুর্দশাক্ষর পয়ারের বিকাশ। আধুনিক ঊনবিংশ ও বিংশ শতাব্দীতে নদিয়া অঞ্চলে প্রচলিত পশ্চিম-মধ্য বাংলা কথ্য ভাষার ওপর ভিত্তি করে আধুনিক বাংলা সাহিত্য গড়ে ওঠে। বিভিন্ন আঞ্চলিক কথ্য বাংলা ভাষা ও আধুনিক বাংলা সাহিত্যে ব্যবহৃত ভাষার মধ্যে অনেকখানি পার্থক্য রয়েছে। আধুনিক বাংলা শব্দভাণ্ডারে মাগধী প্রাকৃত, পালি, সংস্কৃত, ফার্সি, আরবি ভাষা এবং অস্ট্রো-এশীয় ভাষাসমূহ সহ অন্যান্য ভাষা পরিবারের শব্দ স্থান পেয়েছে। অষ্টাদশ শতাব্দীর পূর্বে, বাংলা ব্যাকরণ রচনার কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ১৭৩৪ থেকে ১৭৪২ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে ভাওয়াল জমিদারীতে কর্মরত অবস্থায় পর্তুগিজ খ্রিস্টান পুরোহিত ও ধর্মপ্রচারক ম্যানুয়েল দ্য আসুম্পসাও সর্বপ্রথম ভোকাবোলারিও এম ইডিওমা বেঙ্গালা, এ পোর্তুগুয়েজ ডিভিডিডো এম দুয়াস পার্তেস () নামক বাংলা ভাষার অভিধান ও ব্যাকরণ রচনা করেন। ন্যাথানিয়েল ব্র্যাসি হ্যালহেড নামক এক ইংরেজ ব্যাকরণবিদ আ গ্রামার অব দ্য বেঙ্গল ল্যাঙ্গুয়েজ () নামক গ্রন্থে একটি আধুনিক বাংলা ব্যাকরণ রচনা করেন, যেখানে ছাপাখানার বাংলা হরফ প্রথম ব্যবহৃত হয়। বাঙালি সমাজসংস্কারক রাজা রামমোহন রায় ১৮৩২ খ্রিষ্টাব্দে গ্র্যামার অফ্ দ্য বেঙ্গলি ল্যাঙ্গুয়েজ্ () নামক একটি ব্যাকরণ গ্রন্থ রচনা করেন। ভাষা আন্দোলন বাংলাদেশ ১৯৫১–৫২ সালে পূর্ব পাকিস্তানে বাঙালি জনগণের প্রবল ভাষা সচেতনতার ফলস্বরূপ বাংলা ভাষা আন্দোলন নামক একটি ভাষা আন্দোলন গড়ে ওঠে। এই আন্দোলনে পাকিস্তান সরকারের নিকট বাংলা ভাষার সরকারি স্বীকৃতি দাবি করা হয়। ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দে ২১শে ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে বহু ছাত্র ও রাজনৈতিক কর্মী নিহত হন। বাংলাদেশে প্রতি বছর ২১শে ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলন দিবস পালিত হয়। ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ই নভেম্বর ইউনেস্কো এই দিনটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মর্যাদা প্রদান করে। ভারত thumb|আসামের শিলচরে শহীদ মিনার বাংলাদেশ ছাড়াও ১৯৫০-এর দশকে ভারতের বিহার রাজ্যের মানভূম জেলায় বাংলা ভাষা আন্দোলন ঘটে। ১৯৬১ খ্রিষ্টাব্দের ভারতের অসম রাজ্যের বরাক উপত্যকায় একইরকম ভাবে বাংলা ভাষা আন্দোলন সংঘ ভাষা বঙ্গ অঞ্চলের বাঙালি অধিবাসীর মাতৃভাষা। স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশ এবং ভারতের রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরা নিয়ে এই অঞ্চল গঠিত। এছাড়া ভারতের অসম রাজ্যের দক্ষিণাংশেও এই ভাষা বহুল প্রচলিত। ভারতের আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের অধিকাংশ অধিবাসী বাংলা ভাষায় কথা বলে থাকেন। ভৌগোলিক ভাষাভাষী বাংলা ভাষা বঙ্গভূমির অধিবাসীদের মাতৃভাষা, যা ভারতের অঙ্গরাজ্য পশ্চিমবঙ্গ এবং বর্তমান জাতিরাষ্ট্র বাংলাদেশ নিয়ে গঠিত। মূল অঞ্চলের পাশাপাশি ত্রিপুরা,দক্ষিণ আসাম এবং ভারতীয় সংযুক্ত অঞ্চল আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে বসবাসরত বাঙালীদেরও মাতৃভাষা বাংলা। উরিসা, বিহার এবং ঝাড়খণ্ডের প্রতিবেশী রাজ্যসমূহের বাংলা ভাষায় কথা বলা হয় এবং দিল্লি, মুম্বাই, বারাণসী এবং বৃন্দাবন সহ বঙ্গের বাইরে উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় বাংলা ভাষাভাষী রয়েছেন। মধ্যপ্রাচ্য, যুক্তরাষ্ট্র, সিঙ্গাপুর মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, যুক্তরাজ্য এবং ইতালিতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় বাঙালি বসবাস করেন। সরকারি মর্যাদা বাংলাদেশের সংবিধানের ৩নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, বাংলাদেশের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা তথা সরকারি ভাষা বাংলা। ১৯৮৭ সালের বাংলা ভাষা প্রচলন আইন বাংলাদেশের সকল রাষ্ট্রীয় কাজে বাংলার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করেছে। বাংলা বাংলাদেশের জাতীয় ভাষাও। ভারতে ভারতীয় সংবিধান দ্বারা স্বীকৃত ২৩টি সরকারি ভাষার মধ্যে বাংলা অন্যতম। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, অসম এবং ত্রিপুরা রাজ্যের সরকারি ভাষা হল বাংলা এছাড়াও বাংলা ভারতের আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের অন্যতম প্রধান ভাষা। ২০১১ খ্রিষ্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাস হতে বাংলা ভাষা ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্যের দ্বিতীয় সরকারি ভাষা রূপে স্বীকৃত। পাকিস্তানের করাচী শহরের দ্বিতীয় সরকারি ভাষা রূপে বাংলাকে গ্রহণ করা হয়েছে। ২০০২ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে সিয়েরা লিওনের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি আহমাদ তেজন কাব্বাহ ওই রাষ্ট্রে উপস্থিত জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা বাহিনীর ৫,৩০০ বাংলাদেশি সৈনিকের সেবার স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলা ভাষাকে সরকারি ভাষার মর্যাদা প্রদান করেন। নোবেলজয়ী বাঙালি কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দুইটি বাংলা কবিতা ভারত ও বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত হিসেবে গৃহীত হয়। অধিকন্তু, অনেকে মনে করেন যে, শ্রীলংকার জাতীয় সংগীত (শ্রীলঙ্কা মাতা) মূলত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি বাংলা কবিতার প্রভাবে লেখা হয়েছিল, আবার অনেকে এমনটাও মনে করেন যে জাতীয় সঙ্গীতটি প্রথমে বাংলায় রচিত হয়েছিল এবং তারপর তা সিংহলিতে অনুবাদ করা হয়েছিল। ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা জাতিসংঘের সরকারি ভাষা হিসেবে বাংলা ভাষাকে মর্যাদা দেওয়ার দাবী জানান। কথ্য ও সাহিত্যের ভাষার বিবিধতা বাংলার কথ্য ও লেখ্য রূপের মধ্যে বিবিধতা বর্তমান। বিভিন্ন শব্দভাণ্ডার দ্বারা সমৃদ্ধ হয়ে বাংলায় দুই ধরনের লিখনপদ্ধতি তৈরি হয়েছে। সাধু ভাষা সাধু ভাষা বাংলার এক ধরনের লেখ্য রূপ, যেখানে সংস্কৃত ও পালি ভাষাসমূহ থেকে উদ্ভূত তৎসম শব্দভাণ্ডার দ্বারা প্রভাবিত অপেক্ষাকৃত দীর্ঘ ক্রিয়াবিভক্তি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। ঊনবিংশ শতাব্দী ও বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে এই ধরনের ভাষা বাংলা সাহিত্যে বহুল ব্যবহৃত হলেও বর্তমানে সাহিত্যে এই ভাষারূপের ব্যবহার নেই বললেই চলে। মান্য চলিত ভাষা চলিতভাষা, যা ভাষাবিদদের নিকট মান্য চলিত বাংলা নামে পরিচিত, বাংলার এক ধরনের লেখ্য রূপ, যেখানে মানুষের কথ্য বাগধারা স্থান পায়। এই লিখনশৈলীতে অপেক্ষাকৃত ছোটো আকারের ক্রিয়াবিভক্তি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। বর্তমান বাংলা সাহিত্যে এই ধরনের শৈলী অনুসরণ করা হয়ে থাকে। ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে প্যারীচাঁদ মিত্রের আলালের ঘরে দুলাল প্রভৃতি রচনাগুলিতে এই ধরনের শৈলী সাহিত্যে জায়গা করে নেয়। এই শৈলী নদিয়া জেলার শান্তিপুর অঞ্চলে প্রচলিত কথ্য উপভাষা থেকে গঠিত হয়েছে, ফলে একে অনেক সময় শান্তিপুরি বাংলা বা নদিয়া উপভাষা বলা হয়ে থাকে। মান্য চলিত বাংলায় অধিকাংশ বাংলা সাহিত্য রচিত হলেও, কথ্য বাংলা ভাষার উপভাষাসমূহ মধ্যে যথেষ্ট বিবিধতা রয়েছে। কলকাতাসহ দক্ষিণ-পশ্চিম পশ্চিমবঙ্গের অধিবাসীরা মান্য চলিত বাংলায় কথা বলে থাকেন। কিন্তু বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের অন্যান্য অঞ্চলগুলির কথ্য ভাষা মান্য চলিত বাংলার থেকে অনেকটাই ভিন্ন। বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চলের কথ্য ভাষার সঙ্গে মান্য চলিত বাংলার খুব সামান্যই মিল রয়েছে। তবে অধিকাংশ বাঙালি নিজেদের মধ্যে ভাব আদানপ্রদানের সময় মান্য চলিত বাংলা সহ একাধিক উপভাষায় কথা বলতে সক্ষম বলে মনে করা হলেও অনেক ভাষাবিদ তা স্বীকার করেন না। == উপভাষা [[File:Bengali dialects political map bn.svg|alt=|upright|thumb| বঙ্গভূমির (এবং আসাম ও ঝাড়খন্ডের কিছু জেলা) একটি মানচিত্র যাতে বাংলা ভাষার উপভাষা সমূহ দেখানো হয়েছে (* দিয়ে শুরু হওয়া মোটা বর্ণের নামগুলোকে কখনো বাংলার উপভাষা আবার কখনো স্বতন্ত্র ভাষা হিসেবে বিবেচনা করা হয়)]] কথ্য বাংলাতে আঞ্চলিক প্রকরণ একটি উপভাষার ধারাবাহিকতা গঠন করে। ভাষাতত্ত্ববিদ সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় এই উপভাষাগুলি চারটি বৃহৎ ভাগে বিভক্ত করেছেন - রাঢ়ী, বঙ্গ, কামরূপী উপভাষা এবং বরেন্দ্র; তবে অনেক বিকল্প শ্রেণীকরণ প্রকল্পও প্রস্তাব করা হয়েছে। দক্ষিণ-পশ্চিমা উপভাষাগুলি (রাঢ়ী বা নদীয়া উপভাষা) আধুনিক মান্য ভাষাগত বাঙালির ভিত্তি তৈরি করে। পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব বাংলাদেশের বেশিরভাগ উপাখ্যানগুলিতে (বাংলাদেশের বরিশাল, চট্টগ্রাম, ঢাকা এবং সিলেট বিভাগ), পশ্চিমবঙ্গে শোনা অনেক যতি ও সুস্পষ্ট ব্যঞ্জনধ্বনিকে উষ্ম ব্যঞ্জনধ্বনি হিসাবে উচ্চারণ করা হয়। পাশ্চাত্য তালব্য-মূর্ধন্য ঘোষ ব্যঞ্জনধ্বনি চ , , যথাক্রমে প্রাচ্যের , , এর সাথে সম্পর্কিত। বাংলার কিছু উপভাষা বিশেষত চট্টগ্রাম এবং চাকমা ভাষার সুর রয়েছে বৈপরীত্য ; বক্তার কণ্ঠের উচ্চারণের তীক্ষ্মতা শব্দগুলোকে পৃথক করতে পারে। রংপুরী, খারিয়া থাট এবং মাল পাহাড়িয়া ভাষা পশ্চিমাঞ্চলীয় বাংলা উপভাষার সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ হলেও সাধারণভাবে তাদেরকে স্বতন্ত্র ভাষা হিসেবে শ্রেণীকরণ করা হয়। উত্তরাঞ্চলীয় বাংলা উপভাষার সঙ্গে সাদৃশ্য থাকা সত্ত্বেও হাজং কে স্বতন্ত্র ভাষা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। উনবিংশ শতাব্দী এবং বিংশ শতাব্দীর প্রথমদিকে বাংলা ভাষার প্রমিতীকরণের সময় ব্রিটিশ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত কলকাতা ছিল বঙ্গভূমির সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। বাংলাদেশের সীমানার পাশে অবস্থিত নদীয়া জেলার পশ্চিম-মধ্য উপভাষার উপর ভিত্তি করে পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশে বর্তমান প্রমিত রূপটি গৃহীত হয়েছে। মাতৃভাষা বাংলা হওয়া সত্বেও পশ্চিমবঙ্গের একজন বক্তা আদর্শ বাংলায় যে শব্দ ব্যবহার করবেন তা বাংলাদেশের একজন বক্তা ব্যবহার নাও করতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ পশ্চিমাঞ্চলে ব্যবহৃত নুন শব্দটির পরিবর্তে পশ্চিমপ্রান্তে লবণ শব্দটি ব্যবহার করা হয়। বেশিরভাগ লেখা প্রমিত বাংলায় (এসসিবি) থাকলেও কথ্য উপভাষাগুলি বৈচিত্র‍্য প্রদর্শন করে। কলকাতা সহ দক্ষিণ-পূর্ব পশ্চিমবঙ্গের লোকেরা এসসিবিতে কথা বলে॥ প্রমিত চলিত থেকে কিছুটা স্বল্প পরিবর্তনের সাথে সাথে অন্যান্য উপভাষাগুলি পশ্চিমবঙ্গ এবং পশ্চিম বাংলাদেশের অন্যান্য অংশে যেমন মেদিনীপুরের উপভাষায় কিছু নিজস্ব শব্দ রয়েছে। তবে, বাংলাদেশের বেশিরভাগ লোক উপভাষায় কথা বলেন, এসসিবি থেকে আলাদা কিছু উপভাষা বিশেষত চট্টগ্রাম অঞ্চলের লোকেরা প্রমিত চলিতরূপেই লেখেন চট্টগ্রাম অঞ্চলে উপভাষাটি সাধারণ বাঙালী জনসাধারণের কাছে সহজে বোধগম্য হয় না। এমনকি এসসিবিতেও বক্তার ধর্ম অনুসারে শব্দভাণ্ডার পৃথক হতে পারে: হিন্দুরা সংস্কৃত থেকে উদ্ভূত শব্দ এবং মুসলমানরা দেশীয় শব্দের পাশাপাশি ফারসি এবং আরবি ভাষার শব্দ ব্যবহার করার সম্ভাবনা বেশি। উদাহরণস্বরূপ: ধ্বনিব্যবস্থা বাংলা ভাষায় প্রচুর স্বরদ্যোতনা রয়েছে ; একই অক্ষরে একাধিক স্বরধ্বনি উচ্চারিত হয়। এর মধ্যে এবং দ্বয় কেবলমাত্র একটি করে স্বরবর্ণ এবং দ্বারা লেখা হয়। সর্বমোট যৌগিক স্বরধ্বনির সংখ্যা ১৭ থেকে ৩১ এর মধ্যে রয়েছে বলে অনেকে ধারণা করেন। সরকার (১৯৮৫) কর্তৃক প্রদত্ত একটি লেখ নিচে দেয়া হল: শ্বাসাঘাত আদর্শ বাংলায় সাধারণত শুরুতে শ্বাসাঘাত লক্ষ করা যায়। বাংলা শব্দগুলো বিমুর্তভাবে দ্বিপর্ববিশিষ্ট ; শব্দের প্রথম অক্ষরে মুখ্য শ্বাসাঘাত পড়ে এবং প্রায়ই বিজোড় অবস্থানের অক্ষরগুলোতে গৌণ শ্বাসাঘাত লক্ষ করা যায়। ফলে শব্দটি উচ্চারিত হয় shô-hô-jo-gi-ta "cooperation", যেখানে মোটাদাগ মুখ্য এবং গৌণ শ্বাসাঘাত নির্দেশ করে। যুক্তব্যঞ্জন স্থানীয় বাংলা ভাষায় শব্দের শুরুতে যুক্তবর্ণ থাকে না; সর্বোচ্চ ব্য-স্ব-ব্য আকারের অক্ষর হতে পারে(স্বরধনির দুপাশে ব্যঞ্জনধ্বনি)। অনেক বাঙালি এমনকি ইংরেজি কিংবা সংস্কৃত থেকে ধারকৃত শব্দ উচ্চারণের ক্ষেত্রেও এই ধারাটি বজায় রাখে যেমন গ্রাম (ব্য-ব্য.ব্য-স্ব-ব্য) উচ্চারণ করেন গেরাম(ব্য-স্ব.ব্য-স্ব-ব্য), স্কুল(ব্য-ব্য-স্ব-ব্য) উচ্চারণ করেন ইস্কুল(স্ব-ব্য.ব্য-স্ব-ব্য) হিসেবে। বানানতাত্ত্বিক গভীরতা সাধারণভাবে বাংলা লিপির তুলনামূলক বানানতাত্ত্বিক গভীরতা বেশি নয়, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বাঙালীদের ধ্বনি এবং বর্ণের মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগ রয়েছে। তবে কিছু ক্ষেত্রে উচ্চারণ-বানান অসঙ্গতি ঘটে। এক ধরনের অসঙ্গতি হল একই শব্দের জন্য লেখায় বেশ কয়েকটি বানানের উপস্থিতি। উনবিংশ শতাব্দীতে কিছু পরিবর্তন হওয়া সত্ত্বেও, বাংলা বানান পদ্ধতি সংস্কৃত ভাষার জন্য ব্যবহৃত বানানরীতির উপর ভিত্তি করেই রচিত হচ্ছে এবং এভাবে কথ্য ভাষায় কিছু শব্দ সংযোজনের বিষয়টি বিবেচনায় থাকে না। উদাহরণস্বরূপ,অঘোষ দন্তমূলীয়-তালব্য ব্যঞ্জন -এর জন্য তিনটি বর্ণ ( , , এবং রয়েছে যদিও বর্ণটি নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে যেমন -এ ব্যবহৃত হয়। তখন অঘোষ দন্তমূলীয় ঊষ্মধ্বনি শব্দ ধরে রাখে; যেমন "স্কুল", ইত্যাদি। বর্ণটি নির্দিষ্ট ক্ষেত্র যেমন -এ ব্যবহৃত হয়। তখন অঘোষ মূর্ধন্য ঊষ্মধ্বনি শব্দ ধরে রাখে; যেমনঃ , ইত্যাদি। একইভাবে,ঘোষ তালব্য-দন্তমূলীয় ব্যঞ্জনধ্বনি প্রকাশ করার জন্য দুটি অক্ষর রয়েছে ( এবং )। তাছাড়া, আগে উচ্চারিত এবং লিখিত মূর্ধন্য অনুনাসিক কে এখন সাধারণ আলাপচারিতায় দন্তমূলীয় হিসেবে উচ্চারণ করা হয় (যখন উচ্চারণ করা হয় তখন পার্থক্য বোঝা যায়) (যদি না অপর একটি মূর্ধন্যধ্বনির যেমন , এবং -এর সঙ্গে সংযুক্ত থাকে), তবে বানানে এই পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয় না। অর্ধ-সংবৃত সম্মুখ স্বরবর্ণ বানানতাত্ত্বিকভাবে একাধিক উপায়ে নিরূপিত হয়। উদাহরণস্বরূপ: , , , , , । অন্য ধরনের অসঙ্গতিটি লেখায় যথেষ্ট ঔচ্চারণিক তথ্যের ঘাটতিসম্পর্কিত। পূর্ববর্তী ধ্বনির স্বরসঙ্গতির উপর নির্ভর করে লেখায় প্রতিটি ব্যঞ্জনবর্ণের সাথে জড়িত অন্তর্নিহিত স্বরবর্ণটি কিংবা হতে পারে;কিন্তু লেখায় স্পষ্টভাবে প্রকাশ না পাওয়ায় তা পাঠকের জন্য দ্ব্যর্থতা তৈরি করে। তাছাড়া অন্তর্নিহিত স্বরটি প্রায়শই শব্দের শেষে উহ্য থাকে (যেমন: ;তবে তা বানানে প্রতিফলিত না হওয়ায় নতুন পাঠকের পক্ষে এটি কঠিন করে তোলে। অনেক যুক্তব্যঞ্জন তাদের মূল ব্যঞ্জনবর্ণের চেয়ে আলাদা রূপে থাকে। উদাহরণস্বরূপ, ব্যঞ্জনবর্ণের এবং যুক্ত হয়ে গঠন করে এবং তা ( উচ্চারিত হয় ) কিংবা ( - ) অথবা (যেমন এর উচ্চারণ ) হিসেবে উচ্চারিত হতে পারে যা কোনও শব্দে যুক্তব্যঞ্জনটির অবস্থানের উপর নির্ভর করে। বাংলা লেখার ব্যবস্থাটি তাই সর্বদা উচ্চারণের সত্যিকারের সহায়ক নয়। ব্যবহারসমূহ বাংলা, অসমিয়া এবং অন্যান্য ভাষার জন্য ব্যবহৃত লিপিটি বাংলা লিপি হিসাবে পরিচিত। বাংলা এবং তার উপভাষায় বাংলা বর্ণমালা হিসেবে এবং কিছু ছোটখাট পরিবর্তনের সঙ্গে অসমিয়া ভাষায় অসমিয়া বর্ণমালা হিসেবে পরিচিত। নিকটবর্তী অঞ্চলের অন্যান্য সম্পর্কিত ভাষা যেমন ভারতীয় রাজ্য মণিপুরে মৈতৈ মণিপুরী ভাষাও বাংলা বর্ণমালা ব্যবহার করে, যেখানে মৈতৈ ভাষা বহু শতাব্দী ধরে বাংলা বর্ণমালায় রচিত হয়েছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে মৈতৈ লিপি প্রচার করা হয়েছে। লিখন পদ্ধতি বাংলা লিপি এক ধরনের আবুগিডা, যেখানে ব্যঞ্জনধ্বনির জন্য বর্ণ, স্বরধ্বনির জন্য কারচিহ্ন এবং যদি কোন কার চিহ্ন না থাকে তবে স্বয়ংক্রিয় স্বরবর্ণ হিসেবে অ ধরে নেওয়া হয়। সমগ্র বাংলাদেশ এবং ভারতের পূর্বাঞ্চলে (আসাম, পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা) বাংলা বর্ণমালা ব্যবহৃত হয়। আনুমানিক ১০০০ অব্দে ( অথবা ১০ম থেকে ১১শ শতাব্দীতে) ব্রাহ্মী লিপির পরিবর্তিত রূপ থেকে বাংলা বর্ণমালার উদ্ভব হয়েছে বলে মনে করা হয়। এক্ষেত্রে লক্ষণীয় যে বাংলাদেশ মুসলিম প্রধান দেশ হওয়া সত্ত্বেও এটি পাকিস্তানে ব্যবহৃত শাহমুখি লিপির মত আরবি ভিত্তিক বর্ণমালার পরিবর্তে বাংলা বর্ণমালা ব্যবহার করে। বাংলা ভাষায় বক্রলিপিতে নয়টি স্বরধ্বনি এবং দুটি যৌগিক স্বরধ্বনি নির্দেশ করার জন্য ১১ টি প্রতীক বা চিহ্ন এবং ব্যঞ্জনধ্বনি ও অন্যান্য প্রভাবকের জন্য ৩৯ টি প্রতীক ব্যবহৃত হয়। এক্ষেত্রে লক্ষণীয় যে বড় হাতের এবং ছোট হাতের বর্ণের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। বর্ণগুলো বাম থেকে ডানে লেখা হয় এবং ফাঁকা স্থান গুলো লিখিত শব্দসমূহ পৃথক করতে ব্যবহৃত হয়। বাংলা লেখায় দুটি বর্ণকে পাশাপাশি যুক্ত করার জন্য একটি সমান্তরাল রেখা টানা হয় যাকে মাত্রা বলা হয়। বাংলা লিপি আবুগিদা হওয়ায় ব্যঞ্জনবর্ণ গুলো সাধারণত উচ্চারণগত ভাষাতত্ত্ব নির্দেশ করে না বরং উহ্যভাবে স্বরধ্বনি ধরে রাখে। ফলে এগুলো প্রকৃতিগতভাবে অক্ষর। উদ্ধৃত্ত স্বরধ্বনি সাধারণত একটি পশ্চাৎ স্বরধ্বনি। কোন রূপ স্বরধ্বনি উচ্চারণ ব্যতীত কোন একটি ব্যঞ্জনধ্বনির উচ্চারণে জোর প্রদান করতে মূল ব্যঞ্জনবর্ণের নিচে হসন্ত () নামক চিহ্ন ব্যবহৃত হয়। এই চিহ্নটি সব সময় পাওয়া যায় না ;তবে যখন উচ্চারণের বৈপরীত্য দেখা যায় তখন এটি ব্যবহৃত হয়। বাংলা ব্যঞ্জন ধ্বনির চিত্রমূলের আবুগিডা প্রকৃতি সর্বদা সামঞ্জস্যপূর্ণ থাকে না। প্রায়শই ব্যঞ্জনান্ত অক্ষরসমূহে হসন্ত না থাকলেও কোন স্বরধ্বনি উচ্চারিত হয় না। সহজাত ব্যতীত কিছু স্বরধ্বনির পরে একটি ব্যঞ্জনাত্মক ধ্বনি উপরের, নিচে, আগে, পরে বা ব্যঞ্জনবর্ণের চিহ্নের চারপাশে বিভিন্ন স্বরবর্ণ ব্যবহার করে সর্বব্যাপী ব্যঞ্জনবর্ণ-স্বর লিখনরূপের নিয়ম গঠন করে শব্দস্বরূপাত্মকভাবে উপলব্ধি করা যায়। ‘কারচিহ্ন’ নামে পরিচিত এই শব্দস্বরূপগুলি স্বররূপ এবং এগুলি স্বাধীনভাবে ব্যবহৃত হতে পারে না। বাংলায় স্বরবর্ণগুলো দুটি রূপ নিতে পারে: লিপির মূল তালিকাতে পাওয়া স্বতন্ত্র রূপ এবং নির্ভরশীল, সংক্ষিপ্তরূপ (উপরে বর্ণিত কারচিহ্ন)। কোনও পূর্ববর্তী বা নিম্নলিখিত ব্যঞ্জনবর্ণ থেকে বিচ্ছিন্নভাবে একটি স্বরকে উপস্থাপন করতে, স্বরবর্ণের স্বতন্ত্র রূপ ব্যবহার করা হয়। অন্তর্নিহিত-স্বর-দমনকারী হসন্তের পাশাপাশি, আরও তিনটি চিহ্ন সাধারণত বাংলাতে ব্যবহৃত হয়। এগুলি হল উর্ধ্বধাবিত চন্দ্রবিন্দু (ঁ) দ্বারা স্বরবর্ণের অনুনাসিক এর অনুপস্থিতিকে বোঝানো হয় (যেমন চাঁদ), পশ্চাদ্ধাবিত অনুস্বার পশ্চাত্তালব্য নাসিক্যধ্বনি (ঙ) ইঙ্গিত করে (যেমন বাংলা ; "বাঙলা") এবং পশ্চাদ্ধাবিত বিসর্গ (ঃ) অঘোষ কণ্ঠনালীয় ঊষ্মধ্বনি (হ) (যেমন উঃ! [উঃ]" আউচ! ") বা পরবর্তী ব্যঞ্জনের দ্বিত্ব (যেমন দুখখ [দুকু]" দুঃখ ") ইঙ্গিত করে। বাংলা যুক্তব্যঞ্জনসমূহ (লিখিত যুক্তব্যঞ্জন) সাধারণত সংযুক্ত হিসাবে লেখা হয়, যেখানে প্রথমে যে ব্যঞ্জনবর্ণ আসে তা পরবর্তীটির উপরে বা বাম দিকে যুক্ত হয়। এই সংযুক্তিতে মাঝেমাঝে মূল রূপের চেয়ে এতটাই বিকৃত হয় যে তাকে আলাদা করে চেনা যায় না। বাংলা লিপিতে, এমন প্রায় ২৮৫টি যুক্তব্যঞ্জন রয়েছে। তবে যুক্তাক্ষর গঠনের কিছু বাহ্যিক নিয়ম থাকলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তা ছোটবেলা থেকে রপ্ত করতে হয়। সম্প্রতি, তরুণ শিক্ষার্থীদের উপর এই বোঝা হ্রাস করার লক্ষ্যে, দুটি মূল বাংলা-ভাষা অঞ্চল (পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশ) এর বহু যুক্তাক্ষরের "অস্পস্ট" আকৃতির সমাধানের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি চেষ্টা করেছে এবং ফলস্বরূপ, আধুনিক বাংলা পাঠ্যপুস্তকে যুক্তবর্ণগুলোর আরও বেশি "স্বচ্ছ" রূপ ধারণ করা শুরু হয়েছে, যেখানে একটি যুক্তাক্ষরের ব্যঞ্জনবর্ণগুলি বাহ্যিক রূপ সহজেই প্রকাশ পায়। তবে, যেহেতু এই পরিবর্তনটি তত বিস্তৃত নয় এবং বাকী বাংলা মুদ্রিত সাহিত্যের মতো একইভাবে অনুসরণ করা হচ্ছে না, তাই আজকের বাংলা-শিক্ষিত বাচ্চাদের সম্ভবত নতুন "স্বচ্ছ" এবং পুরাতন "অস্বচ্ছ" উভয় রূপই চিনতে হবে, যা শেষ পর্যন্ত শেখার বোঝা পরিমাণ বৃদ্ধি করেছে। বাংলা বিরামচিহ্ন, "।" (দাড়ি) - একটি ফুলস্টপ এর বাংলা সমতুল্য - যা পশ্চিমা লিপি থেকে গৃহীত হয়েছে এবং ব্যবহারও তাদের অনুরূপ। নমুনা পাঠ্য নিম্নলিখিত বাংলা ভাষাতে মানবাধিকার সনদের প্রথম ধারার নমুনা পাঠ্য: বাংলা লিপিতে বাংলা ভাষা ধারা ১: সমস্ত মানুষ স্বাধীনভাবে সমান মর্যাদা এবং অধিকার নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। তাঁদের বিবেক এবং বুদ্ধি আছে; সুতরাং সকলেরই একে অপরের প্রতি ভ্রাতৃত্বসুলভ মনোভাব নিয়ে আচরণ করা উচিত। বাংলার রোমানীকরণ . '''আন্তর্জাতিক ধ্বনিমূলক বর্ণমালাতে বাংলা ভাষার উচ্চারণ . সম্পর্কিত ভাষাসমূহ বাংলা ভাষার সাথে নেপালি ভাষার ৪০ শতাংশ সাদৃশ্য রয়েছে । এছাড়া অসমীয়া ভাষা, সাদরি ভাষা প্রায় বাংলার অনুরূপ। অনেকেই অসমীয়াকে বাংলার উপভাষা বা আঞ্চলিক রীতি হিসেবে বিবেচনা করেন। সাঁওতালি ভাষা, বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী ভাষার সাথেও বেশ সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়। আরও দেখুন বৃহত্তর ময়মনসিংহের ভাষা সিলেটি ভাষা চাঁটগাঁইয়া ভাষা রংপুরী ভাষা বাংলা উপভাষা বাংলা লিপি বাংলা সংখ্যা পদ্ধতি বাংলা ভাষা আন্দোলন বাংলা একাডেমি পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি তথ্যসূত্র আরো পড়ুন . . . . . . . Chakraborty, Byomkes, A Comparative Study of Santali and Bengali, K.P. Bagchi & Co., Kolkata, 1994, Byomkes Chakrabarti . . . . . . . . . . . . . . . শ, রামেশ্বর: সাধারণ ভাষাবিজ্ঞান ও বাঙ্গাল ভাষা, পুস্তক বিপনি, ১৯৯৭ হালদার নারায়ণ : বাংলা ভাষা প্রসঙ্গ: বানান কথন লিখনরীতি, পুস্তক বিপনি, কলকাতা, ২০০৭ . Thompson, Hanne-Ruth (2012). Bengali''. Volume 18 of London Oriental and African Language Library. John Benjamins Publishing. . বহিঃসংযোগ বাংলা একাডেমি বিষয়শ্রেণী:পূর্ব ইন্দো-আর্য ভাষাসমূহ বিষয়শ্রেণী:বাংলাদেশের ভাষা বিষয়শ্রেণী:ভারতের ভাষা বিষয়শ্রেণী:ভারতের সরকারি ভাষাসমূহ
বাংলা ভাষা
ক্রিকেট হচ্ছে ব্যাট ও বলের একটি দলীয় খেলা যাতে এগারোজন খেলোয়াড়বিশিষ্ট দুইটি দল অংশ নেয়। এই খেলাটির উদ্ভব হয় ইংল্যান্ডে। পরবর্তীতে ব্রিটিশ উপনিবেশগুলোসহ অন্যান্য দেশগুলোতে এই খেলা ব্যাপকভাবে প্রভাব বিস্তার লাভ করে চলছে। বর্তমানে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারত, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, জিম্বাবুয়ে, আফগানিস্তান ও আয়ারল্যান্ড আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ৫ দিনের টেস্ট ক্রিকেট ম্যাচ খেলে থাকে। ২০০৫ সাল থেকে জিম্বাবুয়ে স্বেচ্ছায় টেস্ট ক্রিকেট থেকে নিজেদেরকে বিচ্ছিন্ন করে রেখে ২০১১ সালে আবার খেলায় ফিরে আসে। এছাড়া, আরো বেশ কিছু দেশ ক্রিকেটের আন্তর্জাতিক সংস্থা আইসিসি'র সদস্য। টেস্টখেলুড়ে দেশগুলি ছাড়াও আইসিসি অনুমোদিত আরো দু’টি দেশ অর্থাৎ মোট ১২টি দেশ একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলায় অংশগ্রহণ করে থাকে। খেলোয়াড় হিসেবে যিনি ক্রিকেট খেলায় অংশগ্রহণ করেন বা খেলে থাকেন, তিনি ক্রিকেটার নামে পরিচিত। ক্রিকেট খেলা ঘাসযুক্ত মাঠে (সাধারণত ওভাল বা ডিম্বাকৃতির) খেলা হয়, যার মাঝে ২২ গজের ঘাসবিহীন অংশ থাকে, তাকে পিচ বলে। পিচের দুই প্রান্তে কাঠের তিনটি করে লম্বা লাঠি বা স্ট্যাম্প থাকে। ঐ তিনটি স্ট্যাম্পের উপরে বা মাথায় দুইটি ছোট কাঠের টুকরা বা বেইল থাকে। স্ট্যাম্প ও বেইল সহযোগে এই কাঠের কাঠামোকে উইকেট বলে। ক্রিকেটে অংশগ্রহণকারী দু’টি দলের একটি ব্যাটিং ও অপরটি ফিল্ডিং করে থাকে। ব্যাটিং দলের পক্ষ থেকে মাঠে থাকে দুইজন ব্যাটসম্যান। তবে কোন কারণে ব্যাটসম্যান দৌড়াতে অসমর্থ হলে ব্যাটিং দলের একজন অতিরিক্ত খেলোয়াড় মাঠে নামতে পারে। তিনি রানার নামে পরিচিত। ফিল্ডিং দলের এগারজন খেলোয়াড়ই মাঠে উপস্থিত থাকে। ফিল্ডিং দলের একজন খেলোয়াড় (বোলার) একটি হাতের মুঠো আকারের গোলাকার শক্ত চামড়ায় মোড়ানো কাঠের বা কর্কের বল বিপক্ষ দলের খেলোয়াড়ের (ব্যাটসম্যান) উদ্দেশ্যে নিক্ষেপ করে। সাধারণত নিক্ষেপকৃত বল মাটিতে একবার পড়ে লাফিয়ে সুইং করে বা সোজাভাবে ব্যাটসম্যানের কাছে যায়। ব্যাটসম্যান একটি কাঠের ক্রিকেট ব্যাট দিয়ে ডেলিভারীকৃত বলের মোকাবেলা করে, যাকে বলে ব্যাটিং করা। যদি ব্যাটসম্যান না আউট হয় দুই ব্যাটসম্যান দুই উইকেটের মাঝে দৌড়িয়ে ব্যাটিং করার জন্য প্রান্ত বদল করে রান করতে পারে। বল নিক্ষেপকারী খেলোয়াড়বাদে অন্য দশজন খেলোয়াড় ফিল্ডার নামে পরিচিত। এদের মধ্যে দস্তানা বা গ্লাভস হাতে উইকেটের পিছনে যিনি অবস্থান করেন, তাকে বলা হয় উইকেটরক্ষক। যে দল বেশি রান করতে পারে সে দল জয়ী হয়। একদিনের ক্রিকেটে জয়লাভ দু'ধরনের হয়:- (ক) রানের ব্যবধানে এবং (খ) উইকেটের ব্যবধানে। রানের ব্যবধানে জয়লাভের উদাহরণ হচ্ছে - প্রথমে ব্যাট করে বাংলাদেশ দল ৫০ ওভারে ৪ উইকেটের বিনিময়ে ৩১১ রান করে। পরবর্তীতে অস্ট্রেলিয়া দল ৪৭ ওভারে সবক'টি উইকেট বা ১০ উইকেটের বিনিময়ে ২১০ রান করে। ফলে বাংলাদেশ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১০১ রানে জয়ী হবে। উইকেটের ব্যবধানে জয়লাভের উদাহরণ হচ্ছে - প্রথমে ব্যাট করে অস্ট্রেলিয়া দল ৫০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ২৩৮ রান করে। পরবর্তীতে বাংলাদেশ দল ৩৭•৫ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে ২৩৯ রান করে। ফলে বাংলাদেশ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৭ উইকেটে জয়ী হবে। কয়েকশ’ বছর ধরে ক্রিকেট একটি দলীয় খেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এটির আধুনিক রূপের সূত্রপাত হয় ইংল্যান্ডে এবং কমনওয়েলথ দেশগুলোর মধ্যেই এই খেলা সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশ যেমন: বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও শ্রীলঙ্কায় ক্রিকেটই অধিক জনপ্রিয় খেলা। বিভিন্ন অঞ্চল যেমনঃ ইংল্যান্ড ও ওয়েলস, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, জিম্বাবুয়ে, বারমুডা এবং ক্যারিবিয়ানের ইংরেজিভাষী দ্বীপ রাষ্ট্রসমূহে ক্রিকেট একটি প্রধান খেলা। ক্যারিবীয় অঞ্চলের দেশগুলো একত্রে ওয়েস্ট ইন্ডিজ নামে বিশ্বে ক্রিকেট খেলে থাকে। নেদারল্যান্ড, কেনিয়া, নেপাল ও আর্জেন্টিনা প্রভৃতি দেশে বিভিন্ন অ-পেশাদার ক্রিকেট ক্লাব সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এছাড়া একশর বেশি ক্রিকেট-খেলুড়ে দেশ রয়েছে যারা বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রণ সংস্থা আইসিসি'র সদস্য। ক্রিকেটে বিভিন্ন সময়ে অনেক রাজনৈতিক বিতর্ক উঠেছে, যার মধ্যে সবচেয়ে কুখ্যাত হচ্ছে ব্যাসিল ডি’অলিভিয়েরা কেলেঙ্কারি যার জন্য দক্ষিণ আফ্রিকাকে বিশ্ব ক্রিকেট থেকে বহিস্কার করা হয়েছিল। এছাড়া অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ইংল্যান্ডের বডিলাইন সিরিজ এবং অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের মধ্যে আন্ডারআর্ম বোলিংয়ের ঘটনা উল্লেখযোগ্য। বর্ণনা thumb|150px|একটি ক্রিকেট বল। সাদা সেলাইকৃত অংশ সিম নামে পরিচিতএকদিনের খেলায় সাধারণত সাদা বল ব্যবহৃত হয়। right|thumb|150px|একটি ক্রিকেট ব্যাট ব্যাটিং দলের উদ্দেশ্য হচ্ছে যত বেশি ও যত দ্রুত পারা যায় রান করা। রান হয় যখন উভয় ব্যাটসম্যান উইকেটে নিজেদের মধ্যে প্রান্ত পরিবর্তন করেন। (সাধারণত ব্যাটসম্যান বল মোকাবেলার পরই রান নিতে চেষ্টা করেন, তবে এটি জরুরি নয়।) এছাড়া ব্যাটসম্যান যদি বলকে মাঠের সীমানার বাইরে পাঠিয়ে দিতে পারেন তখনও রান হয়। যদি মাঠ স্পর্শ না করে বল সীমানার বাইরে চলে যায় তবে ছয় রান এবং মাঠ স্পর্শ করে সীমানা পার হলে চার রান দেয়া হয়। এছাড়া বোলার নিয়ম মোতাবেক বল না করলেও রান দেয়া হয়। বোলিং দলের উদ্দেশ্য হচ্ছে ব্যাটিং দলের সব ব্যাটসম্যানদের আউট (উইকেট, অথবা ডিসমিসাল নামেও পরিচিত) করে দেয়া। ব্যাটসম্যান বিভিন্নভাবে আউট হতে পারে। সবচেয়ে ভাল পথ হচ্ছে বোলারের এমনভাবে বল নিক্ষেপ করা যাতে ব্যাটসম্যান বলকে ঠিকমত খেলতে পারে না এবং বল স্ট্যাম্পে আঘাত করে বেইল ফেলে দেয়। এ ধরনের আউটকে বোল্ড বলে। ব্যাটসম্যানেরা যখন দৌড়ে রান নেয় তখন ফিল্ডাররা বল নিক্ষেপ করে ব্যাটসম্যান কর্তৃক ঠিকমত ক্রিজে পোঁছার আগেই স্ট্যাম্প থেকে বেইল ফেলে দেয়ার চেষ্টা করে। এটি রান আউট নামে পরিচিত। অন্যান্য আউট করার পদ্ধতির মধ্যে আছে ব্যাটসম্যানের মোকাবেলাকৃত বল মাটিতে পরার আগেই ক্যাচ ধরা যা কট আউট নামে পরিচিত এবং ব্যাটসম্যানের পায়ে বল লাগানোর ফলে এল.বি.ডব্লিউ. বা লেগ বিফোর উইকেটের ফাঁদে ফেলে আউট করা হয়। কোন বল মোকাবেলা ও রান নেয়ার পর ব্যাটসম্যান যখন আর কোন রান করার চেষ্টা করেন না তখন বলকে "মৃত (dead)" ঘোষণা করা হয় এবং এর পরিবর্তে আরেকটি বল নিক্ষেপ করা হয়। খেলাটি ছয়টি (বৈধ) বলের ওভারে খেলা হয়। বিভিন্ন ধরনের খেলায় ওভারসংখ্যার বিভিন্নতা রয়েছে। ওভার শেষে ব্যাটিং ও বোলিং করা দল প্রান্ত বদল করে এবং ফিল্ডিং দলকে বোলার পরিবর্তন করতে হয়। এসময় আম্পায়ারদ্বয় তাদের অবস্থান পরিবর্তন করেন। একজন ব্যাটসম্যান আউট হয়ে গেলে তার স্থানে আরেকজন ব্যাটসম্যান ব্যাট করতে নামে। যখন ব্যাটিং দলের দশম ব্যাটসম্যান আউট হয়ে যায় তখন সে দলের ইনিংস শেষ হয়। দশ জন ব্যাটসম্যান আউট হওয়াকে বলে অল আউট। (সীমিত ওভারের ক্রিকেটে ইনিংস শেষ হয় যদি কোন দল অলআউট হয় অথবা দল পূর্বনির্ধারিত সংখ্যক ওভার খেলে ফেলে।) ইনিংস শেষে ব্যাটিং করা দল ফিল্ডিং এবং ফিল্ডিং করা দল ব্যাটিং করতে নামে। সাধারণত যে দল বেশি রান করে সে দল বিজয়ী হয়। তবে বিভিন্ন অবস্থায় জয়ের সংজ্ঞা বিভিন্ন হয়। উদাহরণস্বরুপ বলা যায় বৃষ্টির কারণে সীমিত ওভারের খেলার ওভার সংখ্যা কমিয়ে আনা হতে পারে, অথবা ডাকওয়ার্থ-লুইস পদ্ধতি অবলম্বন করে বিজয়ী নির্ধারন করা হতে পারে। ফলাফল যদি শেষে ব্যাট করা দলের বিপক্ষ দলের করা রানের চেয়ে কম রান করে সবাই আউট হয়ে যায় তবে সে দল "(n) রানে হেরেছে" বলা হয় (যেখানে (n) দুই দলের রানের পার্থক্য নির্দেশ করে)। যদি শেষে ব্যাট করা দল সবাই আউট হওয়ার আগেই বিপক্ষ দলের করা রানের চেয়ে বেশি রান করে তখন সে দল "(n) উইকেটে জিতেছে" বলা হয় (যেখানে (n) ১০ ও জয়ী দলের কতটি উইকেট পড়েছে তার পার্থক্য নির্দেশ করে)। যেসব খেলায় প্রতি দলের দু'টি ইনিংস থাকে তাদের ক্ষেত্রে যদি কোন দল প্রথম ও দ্বিতীয় ইনিংস মিলিয়ে বিপক্ষ দলের প্রথম ইনিংসের সমান রান করতে না পারে তবে এবং ২য় ইনিংসে সবাই আউট হয়ে যায় তবে বিপক্ষ দলকে আর ব্যাট করতে হয় না ও তারা ইনিংস ও (n) রানে জিতেছে বলা হয় (যেখানে (n) দুই দলের রানের পার্থক্য নির্দেশ করে)। যদি সব ব্যাটসম্যান আউট হওয়ার পর দুই দলের রান সমান হয় তাহলে টাই হয়। প্রতি দলে দুই ইনিংসের খেলাতে টাই প্রায় দেখাই যায় না। গতানুগতিক খেলাতে যদি বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে কোন দল জিততে না পারে তবে খেলাটিকে ড্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়। যেসব খেলায় একটি দল কেবল একটি ইনিংস খেলে সেসব খেলাতে সাধারণত নির্দিষ্ট সংখ্যক ওভারের বাধ্যবাধকতা দেয়া থাকে। এগুলো সীমিত ওভারের অথবা একদিনের খেলা হিসেবে পরিচিত। এতে যে দল বেশি রান করে তারাই জিতে এবং এই খেলার ফলাফলে উইকেটের কোন মূল্য নেই বলে এসব খেলায় ড্র হয় না। যদি আবহাওয়ার কারণে এই খেলায় সাময়িক বিঘ্ণ ঘটে তাহলে ডাকওয়ার্থ-লুইস পদ্ধতি নামে একটি সূত্রের মাধ্যমে খেলার জেতার লক্ষ্যমাত্রা পুনঃনির্ধারিত হয়। একদিনের খেলার ফলাফল অমীমাংসিত হতে পারে যদি কোন দলই একটি সর্বনিম্ন সংখ্যক ওভার খেলতে না পারে। আবহাওয়া খারাপ থাকার কারণেই সাধারণত এ ঘটনা ঘটে। ক্রিকেটের আইন ক্রিকেট খেলায় ৪২টি ক্রিকেট আইন আছে, যা বিভিন্ন প্রধান ক্রিকেট-খেলুড়ে দেশের সাথে আলোচনার ভিত্তিতে প্রণয়ন করেছে মেরিলেবোন ক্রিকেট ক্লাব। কোন বিশেষ খেলাতে দলগুলো সর্বসম্মতিক্রমে কোন আইন পরিবর্তন বা লঙ্ঘন করতে পারে। অন্যান্য আইনগুলো প্রধান আইনের সম্পূরক এবং বিভিন্ন পরিস্থিতি সামলাতে ব্যবহৃত হয়। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, সাম্প্রতিক সময়ে সীমিত ওভারের খেলায় পুরনো আদল থেকে বেরিয়ে ক্রিকেটকে আরো আকর্ষনীয় করতে ফিল্ডিং দলের ওপর কিছু বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হচ্ছে। খেলোয়াড় ও কর্মকর্তা খেলোয়াড় একটি দল এগারজন খেলোয়াড় নিয়ে গঠিত হয়। খেলার দক্ষতার উপর নির্ভর করে এদেরকে বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যান অথবা বোলার হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ করা যায়। যে-কোন ভারসাম্যপূর্ণ দলে সাধারণত পাঁচ থেকে ছয় জন বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যান এবং চার থেকে পাঁচ জন বিশেষজ্ঞ বোলার থাকে। প্রতি দলেই একজন বিশেষজ্ঞ উইকেট রক্ষক থাকে। সাম্প্রতিককালে বিশেষজ্ঞ ফিল্ডারের ধারণা চালু হয়েছে এবং সমান গুরুত্ব পাচ্ছে। প্রতি দলে একজন অধিনায়ক থাকেন যিনি মাঠে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেন। যে খেলোয়াড় বোলিং এবং ব্যাটিং উভয় ক্ষেত্রেই সমান পারদর্শী তিনি অল-রাউন্ডার হিসেবে পরিচিত। যিনি ব্যাটসম্যান ও উইকেটরক্ষণের কাজে পারদর্শী তিনি উইকেট-রক্ষক কাম ব্যাটসম্যান হিসেবে পরিচিত, যা কখনও কখনও বিশেষ ধরনের অল-রাউন্ডার হিসেবে বিবেচিত হয়। সত্যিকারের অল-রাউন্ডার দলের মূল্যবান খেলোয়াড় তবে এদের দেখা কমই মেলে। অধিকাংশ খেলোয়াড়ই হয় ব্যাটিং, না হয় বোলিংয়েই বেশি মনোযোগ দেন। আম্পায়ার প্রতি খেলায় মাঠে দুইজন আম্পায়ার থাকেন যারা খেলা পরিচালনা করেন। একজন আম্পায়ার (ফিল্ড আম্পায়ার) বোলার যে প্রান্ত থেকে বল করেন সেই প্রান্তে উইকেটের পিছনে অবস্থান করেন। মাঠে তিনিই অধিকাংশ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। অন্য আম্পায়ার (স্কয়ার লেগ আম্পায়ার) মাঠে স্কয়ার লেগ অবস্থানে থাকেন, যাতে তিনি ব্যাটসম্যানকে পাশ থেকে দেখতে পারেন এবং তিনি যেসব সিদ্ধান্ত গ্রহণে ফিল্ড আম্পায়ারকে সাহায্য করেন। পেশাদার খেলায় মাঠের বাইরে একজন অতিরিক্ত আম্পায়ার থাকেন যিনি তৃতীয় আম্পায়ার বা থার্ড আম্পায়ার নামে পরিচিত। মাঠের আম্পায়ারেরা কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রয়োজনবোধে তৃতীয় আম্পায়ারের সাহায্য নিতে পারেন যিনি টেলিভিশনে পুণঃপ্রচার দেখে সিদ্ধান্ত নেন। আন্তর্জাতিক খেলাগুলোতে মাঠের বাইরে একজন ম্যাচ রেফারি থাকেন, যিনি খেলাটি ক্রিকেটের আইনানুযায়ী হচ্ছে কি-না তা পর্যবেক্ষণ করেন। স্কোরার সাধারণত প্রতিটি দল একজন করে দুইজন স্কোরার নিয়োগ করে থাকে। ক্রিকেটের আইন অনুসারে অফিসিয়াল স্কোরার কত রান হয়েছে, কত উইকেট পড়েছে, এবং কত ওভার খেলা হয়েছে তা লিপিবদ্ধ করে রাখে। তারা আম্পায়ারের সংকেত দেখে এবং খেলার বিরতিতে আম্পায়ারের সাথে স্কোর মিলিয়ে দেখে তা ঠিক আছে কিনা। বাস্তবে স্কোরাররা আরো অনেক ব্যাপার লিপিবদ্ধ করে, যেমনঃ বোলারের বোলিং পরিসংখ্যান, কোন দল কি হারে বোলিং করেছে এবং দলগুলোর বিভিন্ন গড় ও পরিসংখ্যান ইত্যাদি। আন্তর্জাতিক ও জাতীয় ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় গণমাধ্যমকে বিভিন্ন রেকর্ড ও পরিসংখ্যান জানতে হয়, তাই ধারাভাষ্যকার, সাংবাদিক ও সম্প্রচারের জন্য বিভিন্ন সময়ে আনঅফিসিয়াল স্কোরার রাখা হয়। অফিসিয়াল স্কোরাররা মাঝে মাঝে ভুল করে, তবে আম্পায়ারের ভুলের সাথে এটির তফাৎ হলো ঘটনার পর এটিকে সংশোধন করা যায়। right|thumb|150px|১৯৯২ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপ চলাকালে মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ড খেলার মাঠ ক্রিকেট মাঠ একটি বিশাল বিশাল বৃত্তাকার অথবা ডিম্বাকার ঘাসবহুল জমিনের উপর নির্মিত হয়। যদিও মাঠের আকারের বেলায় সুনির্দিষ্ট কোন নিয়ম নেই তবে এটির ব্যাস সাধারণত ৪৫০ ফুট (১৩৭ মি) থেকে ৫০০ ফুট (১৫০ মি) এর মধ্যে হয়ে থাকে। অধিকাংশ মাঠেই দড়ি দিয়ে মাঠের পরিসীমা ঘেরা দেয়া থাকে যা সীমানা নামে পরিচিত। পিচ right|thumb|150px|একটি উইকেট তিনটি মাটিতে পোতা স্ট্যাম্পের সমন্বয়ে গঠিত। স্ট্যাম্পের উপরে দুইটি বেইল থাকে 150px|বোলারের প্রান্ত থেকে ক্রিকেট পিচের দৃশ্য450px|ক্রিকেট পিচের মাপজোখ ক্রিকেট খেলার বেশিরভাগ ঘটনা ঘটে থাকে মাঠের মাঝে যা সাধারণত ছোট করে ছাটা ঘাস অথবা ঘাসবিহীন চতুর্ভুজাকৃতির অংশ। এটিকে পিচ বলা হয়। পিচের পরিমাপ হচ্ছে ১০ × ৬৬ ফুট (৩.০৫ × ২০.১২ মি)। পিচের দুইপ্রান্তে তিনটি করে খাড়া কাঠের দন্ড মাটিতে গাঁথা থাকে, যা স্টাম্প নামে পরিচিত। স্টাম্পের উপরে দুটি কাঠের টুকরা থাকে যা বেইল নামে পরিচিত।, তিনটি স্ট্যাম্পের উপর দুটি বেইল স্ট্যাম্পগুলোকে সংযুক্ত করে। ক্রিকেটে স্ট্যাম্পে লেগে আউট হওয়ার ক্ষেত্রে যেকোন একটি বেইল ফেলা বাধ্যতামূলক। তিনটি স্ট্যাম্প ও দুটি বেইলের সমষ্টিগত সেট নামে উইকেট নামে পরিচিত। পিচের একপ্রান্তের নাম ব্যাটিং প্রান্ত, যে প্রান্তে ব্যাটসম্যান দাঁড়ায় এবং অপর প্রান্তের নাম বোলিং প্রান্ত যেখান থেকে বোলার দৌড়ে এসে বল করে। দুটি উইকেটের সংযোগকারী রেখার মাধ্যমে মাঠটি দুটি অংশে বিভক্ত হয়; তার মধ্যে যেদিকে ব্যাটসম্যান ব্যাট ধরেন সেদিকটিকে অফ সাইড এবং যে দিকে ব্যাটসম্যানের পা থাকে সেদিকটিকে বলে অন সাইড। অন্যভাবে বলা যায় ডান-হাতি ব্যাটসম্যানের ডান দিক এবং বাম-হাতি ব্যাটসম্যানের বাম দিক হচ্ছে অফ সাইড এবং অন্যটি অন সাইড বা লেগ সাইড। পিচে যে রেখা আঁকা থাকে তাকে বলে ক্রিজ। ব্যাটসম্যান আউট হয়েছেন কিনা তা যাচাই করার জন্য ক্রিজ ব্যবহৃত হয়। এছাড়া বোলার বৈধ বল করেছেন কি না তা যাচাইয়ের জন্যও ক্রিজ ব্যবহৃত হয়। right|thumb|150px|একটি প্রমিত ক্রিকেট মাঠ খেলোয়াড়ের অবস্থান ম্যাচের গঠন টস খেলার শুরুতে মুদ্রার নিক্ষেপের মাধ্যমে কোন দল আগে ব্যাটিং করবে এবং কোন দল বোলিং করবে সেটা নির্ধারণ করা হয়। একে টস বলে। ওভার প্রতি ৬ বৈধ বলে একটি ওভারের সফল সমাপ্তি ঘটে। ছয়টি বল করার পর আম্পায়ার ‘ওভার’ বলে থাকেন; তাই ওভার নামকরণ করা হয়েছে। পিচের একপ্রান্তে অবস্থান নিয়ে বোলার বোলিং করেন। ওভার শেষে উইকেটের অপর প্রান্ত থেকে অন্য আরেকজন বোলার বল করার জন্য প্রস্তুত থাকেন। এরফলে ফিল্ডিংয়ের অবস্থান পরিবর্তনসহ স্কয়ার লেগে অবস্থানকারী আম্পায়ারও পরিবর্তন হয়ে উইকেটের পিছনে অবস্থান করেন। তবে, ব্যাটসম্যান তার নিজ অবস্থানে থেকেই বোলারকে মোকাবেলা করে থাকেন। তখন ব্যাটসম্যান ‘স্ট্রাইকার’ ও পিচের অন্য প্রান্তে অবস্থানকারী ব্যাটসম্যান ‘নন-স্ট্রাইকার’ নামে পরিচিত। কোনো বোলার পরপর ২ ওভার বোলিং করতে পারেন না। কিন্তু একপ্রান্তে থেকে তিনি অসংখ্য ওভার করতে সক্ষম। ৫০-ওভারের একদিনের আন্তর্জাতিকে একজন বোলার সর্বোচ্চ ২০% বা ১০ ওভার এবং ২০-ওভারের টুয়েন্টি২০ ক্রিকেটে সর্বোচ্চ ২০% বা ৪ ওভার করতে পারে। তবে, টেস্ট ক্রিকেটে ওভার সংখ্যা অসীম থাকায় ওভার সংখ্যার কোন সীমারেখা নেই। পাওয়ার প্লে ১৯৯১ সালে প্রথম এ নিয়ম চালু করা হয় তবে সাম্প্রতিক সময় এ নিয়মের ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। এটি শুধুমাত্র একদিনের ম্যাচে প্রযোজ্য। প্রথম ১০ ওভারের পাওয়ার প্লেতে সর্বোচ্চ দুজন ফিল্ডার ৩০গজ বৃত্তের বাইরে থাকতে পারে। এরপর ১৬ থেকে ৪০ ওভারের মধ্যে যেকোনো সময় ব্যাটিং দল ৫ ওভার এবং বোলিং দল ৫ ওভার পাওয়ার প্লে বেছে নিতে পারে,এ সময় সর্বোচ্চ ৩ জন ৩০ গজের বাইরে থাকতে পারে। ইনিংসের পরিসমাপ্তি খেলার সময় ব্যাটিং ও রান করা ব্যাটিং রান করা অতিরিক্ত বোলিং এবং আউট বোলিং ব্যাটসম্যানের আউট হওয়া ফিল্ডিং ও উইকেট-রক্ষণ অন্যান্য ভূমিকা অধিনায়ক রানার যদি কোন ব্যাটসম্যান ব্যাট করার জন্য সক্ষম কিন্তু দৌড়াতে অসমর্থ হয় তবে আম্পায়ার ও ফিল্ডিং দলের অধিনায়ক ব্যাটিং দলের আরেক খেলোয়াড়কে অসমর্থ খেলোয়াড়ের রানার হিসেবে মাঠে নামার অনুমতি দেন। সম্ভব হলে রানারকে অবশ্যই আগে ব্যাট করে আউট হয়েছে এমন হতে হয়। রানারের একমাত্র কাজ উইকেটের মাঝে দুর্বল খেলোয়াড়ের বদলে দৌড়ানো। রানারকে অবশ্যই যে ব্যাটসম্যানের হয়ে মাঠে নেমেছে, সেই ব্যাটসম্যানের ব্যবহৃত সকল উপকরন ধারণ করতে হয়। ২০১১ সালের জুনে, আইসিসির এক ঘোষণার ফলে ১ অক্টোবর থেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে রানার প্রথাটি বাতিল হয়ে যায়। বদলী খেলোয়াড় টেষ্ট ক্রিকেটের সাম্প্রতিক নিয়মে (২০১৯) আইসিসি অনুমোদন করেছে কোনো খেলোয়াড়ের মাথায় আঘাত লাগলে তার বদলে আরেকজন পূর্ণ খেলোয়াড় নামতে পারে।কিন্তু কোনো খেলোয়াড় বিশ্রামের জন্য মাঠ থেকে উঠে বদলি খেলোয়াড় নামলে সে শুধু ফিল্ডিং করতে পারে। ইতিহাস এর তেমন কোনো ইতিহাস জানা যায়নি।তবে প্রথম ইংল্যান্ডে এ খেলা হয় বলে জানা যায়। ক্রিকেটের ধরন বিশ্বে বিভিন্ন ধরনের ক্রিকেট খেলা হয়; আন্তর্জাতিক পর্যায়ের পেশাদার ক্রিকেটের মধ্যে টেস্ট, ওডিআই ও টি২০আই উল্লেখযোগ্য। টেস্ট ক্রিকেট টেস্ট ক্রিকেট সাধারণত ৫ দিনে হয়। প্রতি দল দু’টি করে ইনিংস খেলে। এ খেলায় ৪ রকমভাবে ফলাফল নির্ধারণ করা হয়। একদিনের আন্তর্জাতিক একদিনের আন্তর্জাতিকে দুই দল ৫০ ওভার করে ব্যাটিং করে থাকে। এ খেলাগুলোয় সাদা রঙের বল ব্যবহার করা হয়। টুয়েন্টি২০ আন্তর্জাতিক টুয়েন্টি২০ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার নবীনতম সংস্করণ। এখানে প্রতিটি দল ২০ ওভার করে ব্যাটিং করে। প্রথম-শ্রেণীর খেলা ক্রিকেটের অন্যান্য ধরন আন্তর্জাতিক গঠন আরও দেখুন তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ Explanation of Cricket Cricket Explained (An American Viewpoint) Wisden Cricinfo CricketArchive International Cricket Council ICC World Cup বিষয়শ্রেণী:ক্রিকেট বিষয়শ্রেণী:ইংল্যান্ডে উদ্ভাবিত ক্রীড়া বিষয়শ্রেণী:বল খেলা বিষয়শ্রেণী:প্রাক্তন গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক ক্রীড়া বিষয়শ্রেণী:দলগত ক্রীড়া বিষয়শ্রেণী:বল এবং ব্যাটের ক্রীড়া
ক্রিকেট
ক্রীড়া হচ্ছে একটি সংগঠিত, প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ, বিনোদনধর্মী এবং দক্ষতাসূচক শারীরিক কার্যকলাপ প্রদর্শনের উত্তম ক্ষেত্র। শারীরিক ও মানসিক দৃঢ়তা, কলা-কৌশল এবং সুস্থ ক্রীড়া প্রদর্শন করে একজন বিজয়ী তার অপূর্ব ক্রীড়াশৈলীর নিদর্শন রাখতে পারেন। এটি পরিচালিত হয় একগুচ্ছ নিয়ম-কানুন বা নিজস্ব চিন্তা-চেতনার মাধ্যম। খেলার প্রধান চালিকাশক্তি হচ্ছে শারীরিক সক্ষমতা, দক্ষতা ও মর্যাদা যাতে বিজয়ী এবং বিজিত পক্ষ নির্ধারিত হয়। শারীরিক সক্ষমতা হিসেবে মানুষ, প্রাণীসহ বল, যন্ত্র ইত্যাদি সরঞ্জামাদি জড়িত। এছাড়াও মনঃস্তাত্তিক খেলাধুলা হিসেবে কার্ড গেম এবং বোর্ড গেম রয়েছে। এগুলোর কিছু আবার আন্তর্জাতিক অলিম্পিক ক্রীড়া সংস্থা কর্তৃক স্বীকৃত। শারীরিক ইভেন্টগুলো যেমন গোল করা কিংবা নির্দিষ্ট রেখা অতিক্রম করলে খেলায় ফলাফল হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এছাড়াও, ডাইভিং, ফিগার স্কেটিংয়ে খুব ভাল করার দক্ষতা যাচাই ও প্রদর্শন করা অন্যতম বিচার্য বিষয়। ব্যতিক্রম হিসেবে বডি বিল্ডিংয়ের মতো ইভেন্টগুলোয় দক্ষতা প্রদশর্নকে গণ্য করা হয় না। প্রতিটি খেলার ফলাফলই রেকর্ড হিসেবে রাখা হয় এবং সর্বদাই অধিকাংশ খেলাগুলোতে সর্বোচ্চ পর্যায়কে গুরুত্ব দিয়ে প্রচার মাধ্যমে খেলাধূলার সংবাদে প্রচার করা হয়। বেশীরভাগ খেলাধূলাই শুধুমাত্র নিছক আনন্দ, মজা অথবা মানুষের সবচেয়ে উৎকৃষ্ট শারীরিক সক্ষমতার লক্ষ্যে ব্যয়ামের জন্য করা হয়। অধিকন্তু, পেশাদারী খেলাধূলা বিনোদনের অন্যতম মাধ্যমও বটে। খেলাধূলা চর্চার ফলে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে সুন্দর প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ খেলোয়ারসুলভ আচরণের বহিঃপ্রকাশ ঘটে। আচরণগুলোর মধ্যে - ব্যক্তিগত আচরণ পরিবর্তনসহ প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়ের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন, বিচারক(বৃন্দ)কে ধন্যবাদজ্ঞাপন এবং হেরে গেলে বিজয়ীকে অভিনন্দন প্রদান করা অন্যতম। উৎপত্তি ক্রীড়া শব্দটি এসেছে প্রাচীন ফরাসী শব্দ ডিস্পোর্টস থেকে যার অর্থ হচ্ছে অবসর। আমেরিকানরা স্পোর্টস শব্দটিকে নিছক বিনোদনমূলক কর্মকাণ্ড হিসেবে চিহ্নিত করেছে এবং ক্রীড়ার একবচন শব্দ হিসেবে স্পোর্টস নামকরণ করেছে। ফার্সি শব্দ হিসেবে ক্রীড়ার ভাবার্থ দাঁড়ায় জয়ী। ক্রীড়াকে চীনা ভাষায় শারীরিক প্রশিক্ষণ এবং আধুনিক গ্রীক শব্দে দৌঁড়বিদ হিসেবে দাবী করছে। ইতিহাস বিভিন্ন তথ্যসূত্র ঘেটে জানা গেছে, সর্বপ্রথম চীনের নাগরিকেরা খ্রীষ্ট পূর্ব ৪০০০ বছর আগে থেকে খেলাধূলার সাথে জড়িত। জিমন্যাস্টিকস্ প্রাচীন চীনের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা হিসেবে স্থান পেয়েছিল। কয়েক হাজার বছর পূর্বে প্রাচীন মিশরের ফারাও সাম্রাজ্যে বেশকিছু খেলা প্রচলিত ছিল। তন্মধ্যে সাঁতার কাটা, মাছ ধরা অন্যতম। এছাড়াও, মিশরীয় খেলাধূলার মধ্যে জ্যাভেলিন বা বর্শা নিক্ষেপ, উচ্চ লম্ফ এবং কুস্তির ব্যাপক প্রচলন ছিল। প্রাচীন ফারসী খেলার মধ্যে ইরানীয় মার্শাল আর্ট হিসেবে জোরখানে যুদ্ধংদেহী মনোভাবের পরিচয় পাওয়া যায়। এছাড়াও, প্রাচীন ফারসী খেলা হিসেবে পোলো এবং জস্টিং রয়েছে। খেলোয়াড়সূলভ মনোভাব খেলোয়াড়সূলভ মনোভাব হচ্ছে এমন একটি ধারা যা সুস্থ, সুন্দর খেলার অংশবিশেষ। এতে দলীয় সঙ্গীর সাথে সৌজন্যপূর্ণ আচরণ প্রদর্শনসহ প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়দের নৈতিক আচরণ, স্বাধীনতা এবং জয়ী বা পরাজিত হলেও ব্যক্তি বা দলকে সম্মান দেখানো হয়ে থাকে। অখেলোয়াড়োচিত আচরণ সুস্থ, সুন্দর খেলাকে কলুষিত করে, খেলার মর্যাদাকে ধুলিস্মাৎ করে। ক্রীড়াবিদ, কোচ, সমর্থক, শুভ্যানুধ্যায়ীরাই মূলতঃ এর সাথে জড়িত। ফলে ব্যক্তি বা রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি নষ্টসহ সংক্ষুদ্ধ জনতা সুন্দর সমাজ ও পরিবেশকে ধ্বংস করে, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সমস্যা তৈরী করে, দেশ ও দশের ভাবমূর্ত্তি ক্ষুণ্ন করে। পেশাগত খেলা এককালে খেলাধূলার মূল উদ্দেশ্যই ছিল মূলতঃ চিত্ত বিনোদন। কিন্তু গণমাধ্যম এবং অবসর সময় কাটানোয় পেশাগত খেলার জুড়ি মেলা ভার। এর ফলে খেলোয়াড়দের মধ্যে অর্থ উপার্জনই মূল উদ্দেশ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। পেশাগত খেলায় বিনোদন নয়, বরং আর্থিকভাবে লাভবান এবং নিজ নিজ জনপ্রিয়তাই মুখ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে যা প্রাচীন রীতি-নীতি হিসেবে ক্রীড়া চর্চার নির্মল বিনোদনকে নষ্ট করে দিচ্ছে। এছাড়াও, চিত্ত বিনোদনের নতুন মাত্রা হিসেবে পুরুষ এবং মহিলা - উভয় খেলোয়াড়কেই জনপ্রিয় ও শীর্ষস্থানীয় তারকা খ্যাতি এনে দিয়েছে বর্তমানকালের গণমাধ্যম। thumb|আধুনিক খেলাগুলোর নিয়ম-কানুন সুনির্দিষ্ট এবং জটিল বিশ্বের বিভিন্ন ক্রীড়া বা খেলার নাম ফুটবলই বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় খেলা। এছাড়াও, হকি, ক্রিকেট, হ্যান্ডবল, ভলিবল, সাঁতার, দৌঁড়, পোলভল্ট, পোলো, রাগবি, টেনিস, টেবিল টেনিস, খোঁ খোঁ, রোয়িং, ব্যাডমিন্টন, কুস্তি, মুষ্টিযুদ্ধ, দাবা, জুডু, ফ্যান্সিং, বাস্কেটবল ইত্যাদি বিভিন্ন দেশের জনপ্রিয় খেলা। মধ্যস্থতাকারী বিজয়ী ও বিজিত নির্ধারণে এক বা একাধিক বিচারক থাকেন। খেলার ধরন অনুযায়ী রেফারী বা মধ্যস্থতাকারীর নাম নির্ধারিত হয়। যেমনঃ হকি ও ক্রিকেটে আম্পায়ার, ফুটবলে রেফারী, দৌঁড়ে বিচারক ইত্যাদি। তার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে বিবেচিত এবং খেলোয়াড়দের অবশ্য পালনীয়। আচরণবিধি প্রতিটি ক্রীড়াতেই কিছু লিখিত আকারে রুলস্ বা নিয়ম লিপিবদ্ধ থাকে, যা কোড অব কন্ডাক্ট নামে পরিচিত। নিয়ম বিরুদ্ধ কিছু ঘটলে রেফারী কর্তৃক সতর্কীকরণ চিহ্ন হিসেবে লাল, হলুদ কিংবা সবুজ রংয়ের কার্ড দেখানো হয়। খেলোয়াড়ের বিরুদ্ধে কার্ড প্রদর্শনের উপর নির্ভর করে যে পরবর্তী খেলায় খেলোয়াড়টি অংশ নিতে পারবে কি-না। মূল্যায়ন দৌঁড়জাতীয় খেলাগুলোতে নির্দিষ্ট একটি স্ট্যাণ্ডে ১ম, ২য় ও ৩য় স্থান অধিকারীর মর্যাদা দিয়ে পদক প্রদান করা হয়। পূর্বে অলিম্পিক খেলায় খেজুর পাতার মুকুট পড়িয়ে মূল্যায়িত করা হতো। দলীয় খেলা হিসেবে ফুটবল, হকি, ক্রিকেটে সোনা, রূপার কাপ বা ট্রফি প্রদান করার পাশাপাশি সেরা খেলোয়াড়ের মর্যাদা হিসেবে নির্দিষ্ট পুরস্কার প্রদান করা হয়। পাশাপাশি চেকের মাধ্যমে অর্থ কিংবা মোটর গাড়ীসহ অন্যান্য দ্রব্যাদি উপহার হিসেবে দেয়া হয়। thumb|আধুনিককালে মোটর গাড়ির রেস একটি জনপ্রিয় খেলা বাংলাদেশের জাতীয় খেলা সম্পূর্ণ দেশীয় খেলা হিসেবে কাবাডি বাংলাদেশের জাতীয় খেলার মর্যাদা লাভ করেছে। তবে আইসিসি ট্রফি জয়ের পরবর্তী সময়ে ক্রিকেট খেলা বাংলাদেশের সমধিক পরিচিত ও ব্যাপকভাবে প্রচলিত খেলারূপে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। তথ্যসূত্র আরও পড়ুন The Meaning of Sports by Michael Mandel (PublicAffairs, ). Journal of the Philosophy of Sport Avedon, Elliot; Sutton-Smith, Brian, The Study of Games. (Philadelphia: Wiley, 1971), reprinted Krieger, 1979. বিষয়শ্রেণী:ক্রীড়া
ক্রীড়া
thumb|ওশেনিয়া অঞ্চলের ভৌগোলিক মানচিত্র প্রশান্ত মহাসাগরের মধ্যভাগ ও দক্ষিণাংশের দ্বীপসমূহকে একত্রে ওশেনিয়া বলা হয়। তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে এই অঞ্চলকে - মেলানেশিয়া, মাইক্রোনেশিয়া এবং পলিনেশিয়া। মতান্তরে অস্ট্রেলিয়াকেও ওশেনিয়া অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ব্যুৎপত্তি সংজ্ঞা দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের সকল দ্বীপকে একত্রে ওশেনিয়া বলে ইতিহাস জনসংখ্যার উপাত্ত Oceania Wider Geographic Oceania. Little of the South Pacific is apparent at this scale, though Hawaii is just visible near the eastern horizon. Narrower Geographic Oceania. Island Melanesia, Micronesia, and Polynesia (apart from New Zealand) ধর্মচারণ ক্রীড়া আরও দেখুন ওশেনিয়ার দেশসমূহ Art of Oceania Economy of Oceania Europeans in Oceania Festival of Pacific Arts       Flags of Oceania History of Oceania List of cities in Oceania List of Oceanian cuisines Military history of Oceania Oceania (journal) Pacific Islands Forum Pacific Union Secretariat of the Pacific Community United Nations geoscheme for Oceania টীকা বহিঃসংযোগ "Australia and Oceania" from National Geographic বিষয়শ্রেণী:মহাদেশ বিষয়শ্রেণী:প্রশান্ত মহাসাগর
ওশেনিয়া
পাকিস্তান (), সরকারিভাবে ইসলামি প্রজাতন্ত্রী পাকিস্তান (), দক্ষিণ এশিয়ার একটি রাষ্ট্র। ২১,২৭,৪২,৬৩১ এর অধিক জনসংখ্যা নিয়ে এটি জনসংখ্যার দিক থেকে বিশ্বের ৫ম বৃহত্তম রাষ্ট্র এবং আয়তনের দিক থেকে ৩৩তম বৃহত্তম রাষ্ট্র। পাকিস্তানের দক্ষিণে আরব সাগর এবং ওমান উপসাগরীয় উপকূলে ১০৪৬ কিলোমিটার (৬৫০ মাইল) উপকূল রয়েছে এবং এটি পূর্ব দিকে ভারতের দিকে, আফগানিস্তান থেকে পশ্চিমে, ইরান দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং উত্তর-পূর্ব দিকে চীন সীমান্তে অবস্থিত। এটি উত্তর-পশ্চিমে আফগানিস্তানের ওয়াখান করিডোরের দ্বারা তাজিকিস্তান থেকে সংকীর্ণভাবে বিভক্ত এবং ওমানের সাথে সমুদ্রের সীমান্ত ভাগ করে। নামকরণ ফার্সি ও উর্দু ভাষায় 'পাকিস্তান' অর্থ- পবিত্র স্থান বা এলাকা। ফার্সি ও পশতু শব্দ 'পাক' অর্থ- পবিত্র। আর শব্দাংশ ـستان (-স্তান) একটি তৎসম-ফার্সি শব্দ যার অর্থ স্থান বা এলাকা। চৌধুরী রহমত আলী "নাউ অর নেভার" পুস্তকে এ নামটির প্রস্তাব দেন। আরবি ভাষায় এর অর্থ "মদিনা-এ-তৈয়্যাবা" বা পবিত্র স্থান, মদিনা শব্দের অর্থ এলাকা এবং তৈয়্যাবা অর্থ পবিত্র। আর একটি মত অনুসারে , অর্থাৎ PAKISTAN ইংরাজি বানানে এইরূপে পাকিস্তানের নামকরণ করা হয়েছে । P - পাঞ্জাব A - আফগানিস্তান K - কাশ্মীর I - ইন্দাস অর্থাৎ সিন্ধু নদ STAN - স্থান অর্থাৎ এই কয়টি নির্দিষ্ট অঞ্চল জুড়ে হিন্দুস্তান থেকে পৃথক হওয়া রাষ্ট্রটি গঠিত হওয়ায় এর নাম হয় 'পাকিস্তান' । ইতিহাস প্রারম্ভিক এবং মধ্যযুগীয় সময়কাল প্রাচীন সিন্ধু অঞ্চল যা মোটামুটি বর্তমান পাকিস্তানের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশ ছাড়া বাকিটা নিয়ে গঠিত, প্রাচীন কালে নব্য প্রস্তর যুগীয় মেহেরগড় সহ অনেক উন্নত সভ্যতার উৎপত্তিস্থল ছিল। ব্রোঞ্জ যুগে সিন্ধু সভ্যতায় (২৮০০- ১৮০০খ্রিষ্টপূর্বাব্দ) হরপ্পা ও মহেঞ্জো-দাড়ো নামে দুটি উন্নত নগর ছিল। বৈদিক যুগে (১৫০০ - ৫০০খ্রিষ্টপূর্বাব্দ) ইন্দো আর্যদের মাধ্যমে এখানে হিন্দুদের গোড়াপত্তন হয়, যা পরবর্তীতে পুরো এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। মুলতান শহর হিন্দুদের গুরুত্বপূর্ণ তীর্থযাত্রা কেন্দ্রে পরিণত হয়। ঔপনিবেশিক আমল ভারতীয় অঞ্চলে ঔপনিবেশিক আমলকে দুই ভাগে ভাগ করা হয় যথা: ১. ইংলিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনামল, ২. ব্রিটিশ সরকারের শাসনামল। তবে পাকিস্তান প্রথম থেকেই ইংলিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনাধীনে যায়নি। কারণ তখনও এই অঞ্চলে স্বাধীনভাবে রাজারা শাসন করতো । তারপর ধীরে ধীরে পাকিস্তান অঞ্চল ব্রিটিশ অধিভুক্ত হয়। স্বাধীনতা এবং পরাধীনতা ১৯৪৭ সালে ভারতীয় উপমহাদেশ যুক্তরাজ্য থেকে স্বাধীনতা লাভ করার পর ভারতীয় উপমহাদেশ বিভাজনের মাধ্যমে ভারত ও পাকিস্তান এ' দুটি দেশের জ‌ন্ম হয়। তারমধ্যে ছিল পশ্চিম পাকিস্তান ও পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমান বাংলাদেশ)। তারপর পূূর্ব পাকিস্তান (বর্তমান বাংলাদেশ) এর সাথে ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ থেকে যুদ্ধ শুরু হয়ে টানা "নয় মাস" রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ১৬ই ডিসেম্বর পাকিস্তান পরাজিত হয়। রাজনীতি পাকিস্তানের রাজনীতি বর্তমানে একটি অর্ধ-রাষ্ট্রপতিশাসিত যুক্তরাষ্ট্রীয় প্রজাতন্ত্র কাঠামোয় সম্পাদিত হয়, যদিও অতীতে বিভিন্ন সময়ে সংসদীয় ও রাষ্ট্রপতি শাসিত ব্যবস্থার প্রচলন ছিল। রাষ্ট্রপতি হলেন রাষ্ট্রের প্রধান। সরকারপ্রধান হলেন প্রধানমন্ত্রী। রাষ্ট্রের নির্বাহী ক্ষমতা সরকারের উপর ন্যস্ত। আইন প্রণয়নের ক্ষমতা প্রধানত আইনসভার উপর ন্যস্ত। দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ভারতের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অর্থমন্ত্রী লিয়াকত আলি খান । এযাবৎ কোনো প্রধানমন্ত্রী তার কার্যকাল সম্পূর্ণ করতে পারেনি। দীর্ঘ মেয়াদি প্রধানমন্ত্রীরা হলেন বেনজীর ভুট্টো , নওয়াজ শরীফ ও ইউসুফ রেজা গিলানি। ২০১৩ সালের মে মাসের ১১ তারিখে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হন নওয়াজ শরীফ। একই বছর জুলাইয়ের ৩১ তারিখ হতে পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন মামনুন হোসাইন । ২০১৮ সাল থেকে পাকিস্তানের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী, একসময়কার বিখ্যাত ক্রিকেটার ইমরান খান। প্রশাসনিক অঞ্চলসমূহ পাকিস্তানের মূল ভূখণ্ডটি কয়েকটি প্রশাসনিক অঞ্চলে বিভক্ত। যথা- পাঞ্জাব সিন্ধ্ খাইবার পাখতুনখোয়া বালুচিস্তান পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মীর গিলগিত-বালতিস্তান ইসলামাবাদ রাজধানী অঞ্চল ভূগোল পাকিস্তানকে তিনটি প্রধান ভৌগোলিক অঞ্চলে ভাগ করা যায়: উত্তরের উচ্চভূমি, সিন্ধু নদের অববাহিকা (যেটিকে পাঞ্জাব ও সিন্ধু প্রদেশে উপবিভক্ত করা যায়) এবং বেলুচিস্তান মালভূমি। অরণ্য বনাঞ্চল কম—এশিয়ার এমন দেশের তালিকায় একদম পেছনে রয়েছে পাকিস্তান। দেশটির মোট আয়তনের মাত্র ১ দশমিক ৯ শতাংশ বনাঞ্চল। ৮ দশমিক ৪ শতাংশ বনাঞ্চল নিয়ে পাকিস্তানের সামনেই রয়েছে মঙ্গোলিয়া। পেছন থেকে তৃতীয় অবস্থান বাংলাদেশের। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) তথ্যমতে, এডিবির তালিকায় সর্বশেষ অবস্থানে থাকা পাকিস্তানে ১৯৯০ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ২০ বছরে খোয়া গেছে ৮ লাখ ৪০ হাজার হেক্টরের বনভূমি। গড়ে বছরপ্রতি এই হ্রাসের হার ৪২ হাজার হেক্টর। অর্থনীতি পাকিস্তান একটি উন্নয়নশীল দেশ হিসাবে বিবেচিত হয় সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, ২০১৩-এর দশক ধরে সামাজিক অস্থিতিশীলতার পরে, রেল পরিবহন এবং বৈদ্যুতিক শক্তি উৎপাদন, যেমন মৌলিক পরিষেবায় ম্যাক্রোম্যানেজমেন্ট এবং ভারসাম্যহীন সামষ্টিক অর্থনীতিতে গুরুতর ঘাটতিগুলি বিকাশ লাভ করেছে। সিন্ধু নদীর তীরে বর্ধনকেন্দ্রগুলি'সহ দেশের অর্থনীতিকে অর্ধ-শিল্পোন্নত বলে মনে করা হয়। করাচী এবং পাঞ্জাবের নগর কেন্দ্রগুলির দেশের অন্যান্য অঞ্চলে, বিশেষত বেলুচিস্তানে কম উন্নত অঞ্চলের সাথে বৈচিত্র্যময় অর্থনীতি রয়েছে। অর্থনৈতিক জটিলতা সূচক অনুসারে, পাকিস্তান বিশ্বের ৬৭ তম বৃহত্তম রফতানি অর্থনীতি এবং ১০৬ তম সবচেয়ে জটিল অর্থনীতি। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে পাকিস্তানের রফতানি দাঁড়িয়েছে ২০.৮১১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং আমদানি হয়েছে ৪৪.৬৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যার ফলে নেতিবাচক বাণিজ্য ভারসাম্য হয়েছে ২৩.৯৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০১৬ সালের হিসাবে, পাকিস্তানের আনুমানিক নামমাত্র জিডিপি $২৭১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। পিপিপির জিডিপি ৯,৪৬,৬৬৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। মাথাপিছু জিডিপি আনুমানিক নামমাত্র $১,৫৬১ মার্কিন ডলার, মাথাপিছু মার্কিন জিডিপি (পিপিপি) ৫,০১০ ডলার (আন্তর্জাতিক ডলার) এবং ঋণ ও জিডিপি অনুপাত ৬৬.৫০%। বিশ্বব্যাংকের মতে, পাকিস্তানের গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত সম্পদ ও উন্নয়নের সম্ভাবনা রয়েছে। পাকিস্তানের যুবকের ক্রমবর্ধমান অনুপাত দেশকে একটি সম্ভাব্য জনসংখ্যার উপাত্ত এবং উভয়ই পর্যাপ্ত পরিষেবা এবং কর্মসংস্থান সরবরাহ করে। জনসংখ্যার ২১.০৪% আন্তর্জাতিক দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে, যাদের প্রতিদিনের আয় ১.২৫ মার্কিন ডলারের কম। ১৫ বছর বা তার বেশি বয়সের মধ্যে বেকারত্বের হার ৫.৫%। পাকিস্তানের প্রায় ৪০ মিলিয়ন মধ্যবিত্ত নাগরিক রয়েছে, ২০২০ সালের মধ্যে তা বেড়ে ১০ কোটিতে উন্নীত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিশ্বব্যাংকের প্রকাশিত ২০১৫ সালের একটি প্রতিবেদনে ক্রয়ক্ষমতার উপর ভিত্তি করে পাকিস্তানের অর্থনীতিকে বিশ্বের ২৪ তম বৃহত্তম ও পরম শর্তে ৪১ ম বৃহত্তমের স্থান দিয়েছে। দেশটির স্থূল অভ্যন্তরীণ উৎপাদন মান ভারতের এক দশমাংশ । জনসংখ্যা ২০১৭ সালের আদমশুমারীর প্রদেশের তথ্য অনুসারে, বর্তমান জনসংখ্যা ২০.৭৮ কোটি যা গত ১৯ বছরে ৫৭% বৃদ্ধি পেয়েছে। যা পৃথিবীর জনসংখ্যায় ২.৬% অবদান রেখেছে। জন-অভিবাসন পাকিস্তানে জন-অনুপ্রবেশ ও বঃহির্গমন দুই ধরনেরই অভিবাসন দেখা যায়। অনুপ্রবেশ মূলত মুসলিম জনগোষ্ঠীর যারা আফগানিস্তান , বাংলাদেশ ও ভারত থেকে। প্রায় ৩.৬ মিলিয়ন অনুপ্রবেশ ও ৬.৩ মিলিয়ন বঃহির্গমন পর্যবেক্ষিত হয়েছে। ভাষাসমূহ পাকিস্তানের সরকারি ভাষা ইংরেজি এবং জাতীয় ভাষা উর্দু। এছাড়াও দেশটিতে পাঞ্জাবি, সিন্ধি, সারাইকি, পাশতু, বেলুচি, ব্রাহুই ইত্যাদি ভাষা প্রচলিত। অনেক ভাষাই ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাপরিবারের বিভিন্ন শাখার অন্তর্গত। উর্দু, পাঞ্জাবি ও সিন্ধি -আর্য ভাষাসমূহ, পশতু ও বেলুচি ইরানীয় ভাষাসমূহ, ব্রাহুই দ্রাবিড় ভাষাসমূহের অন্তর্গত। এছাড়া উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন দার্দীয় ভাষা যেমন খোওয়ার ও শিনা প্রচলিত। জাতীয় পতাকা thumb|250px|right|23px অনুপাত: ২:৩ পাকিস্তানের জাতীয় পতাকার নকশা প্রণয়ন করেন সৈয়দ আমিরুদ্দিন কেদোয়াই। এই নকশাটি অল ইন্ডিয়া মুসলিম লীগের ১৯০৬ সালের পতাকার উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়। পাকিস্তান স্বাধীনতা লাভ করার ৫ দিন আগে ১৯৪৭ সালের ১১ই আগস্ট তারিখে এই পতাকাটির নকশা গৃহীত হয়। পতাকাটিকে পাকিস্তানে সাব্‌জ হিলালি পারচাম বলা হয়। উর্দু ভাষার এই বাক্যটির অর্থ হলো "নতুন চাঁদ বিশিষ্ট সবুজ পতাকা"। এছাড়াও এটাকে "পারচাম-ই-সিতারা আও হিলাল" অর্থাৎ "চাঁদ ও তারা খচিত পতাকা" বলা হয়ে থাকে। তাৎপর্য পতাকাটির খুঁটির বিপরীত দিকের গাঢ় সবুজ অংশটি ইসলাম ধর্মের প্রতীক। খুঁটির দিকে সাদা অংশ রয়েছে, যা পাকিস্তানে বসবাসরত সংখ্যালঘু অমুসলিমদের প্রতীক। পতাকার মধ্যস্থলে রয়েছে একটি সাদা নতুন চাঁদ, যা প্রগতির প্রতীক; এবং একটি পাঁচ কোনা তারকা, যা ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের প্রতীক। আকার ও ব্যবহার আকার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ব্যবহারের জন্য. ২১' x ১৪', ১৮' x ১২', ১০' x ৬-২/৩' বা ৯' x ৬ ১/৪. ভবনে ব্যবহারের জন্য. ৬' x ৪' or ৩' x ২'. গাড়িতে ব্যবহারের জন্য ১২" x ৮". টেবিলে ব্যবহারের জন্য ৬ ১/৪" x ৪ ১/৪". যেসব অনুষ্ঠানে পতাকা উড্ডয়ন করা হয় পাকিস্তান দিবস (মার্চ ২৩) মাদার-ই-মিল্লাত এর জন্মদিন (জুলাই ৩০) পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবস (আগস্ট ১৪) আল্লামা ইকবাল এর জন্মদিন (নভেম্বর ৯) মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ এর জন্মদিন (ডিসেম্বর ২৫) অন্যান্য যেসব দিনে সরকারি নির্দেশ রয়েছে। যেসব দিনে পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয আল্লামা ইকবালের মৃত্যু বার্ষিকী (এপ্রিল ২১) মাদার-ই-মিল্লাতের মৃত্যু বার্ষিকী (জুলাই ৮) মুহাম্মদ আলী জিন্নাহের মৃত্যু বার্ষিকী (সেপ্টেম্বর ১১) নওয়াবজাদা লিয়াকত আলি খান এর মৃত্যু বার্ষিকী (অক্টোবর ১৬) অন্য যেসব দিনে সরকারী নির্দেশ রয়েছে। সংস্কৃতি এবং সমাজ পাকিস্তানের নাগরিক সমাজ মূলত শ্রেণিবদ্ধ, স্থানীয় ও সাংস্কৃতিক শিষ্টাচার এবং ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক জীবন পরিচালিত ঐতিহ্যবাহী ইসলামী মূল্যবোধের উপর জোর দেয়। প্রাথমিক ভবে পারিবারিকগুলি হ'ল বৃহৎ পরিবার, যদিও আর্থ-সামাজিক কারণে ক্ষুদ্র পরিবার গঠনের দিকে ক্রমবর্ধমান প্রবণতা দেখা দিয়েছে। পুরুষ এবং মহিলা উভয়ের জন্য ঐতিহ্যবাহী পোশাক হ'ল শালওয়ার কামিজ; ট্রাউজার্স, জিন্স এবং শার্টগুলিও পুরুষদের মধ্যে জনপ্রিয়। আরও দেখুন পাকিস্তান ক্রিকেট দল পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি মামনুন হুসাইন শহীদ আফ্রিদি তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ বিষয়শ্রেণী:দক্ষিণ এশিয়ার দেশ বিষয়শ্রেণী:পাকিস্তান বিষয়শ্রেণী:ভারতীয় উপমহাদেশ বিষয়শ্রেণী:ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থার সদস্য রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:কমনওয়েলথ প্রজাতন্ত্র বিষয়শ্রেণী:সার্ক রাষ্ট্র
পাকিস্তান
এটি একটি সার্বভৌম রাষ্ট্রসমূহের তালিকা যা সারাবিশ্বের রাষ্ট্রসমূহের রাজনৈতিক অবস্থান ও সার্বভৌমত্বের স্বীকৃতির ওপর তথ্যসহ তাদের একটি সংক্ষিপ্ত চিত্র তুলে ধরে| তালিকাটিতে ২০৬টি দেশ লিপিভুক্ত আছে| দেশগুলো বিভক্ত করা হয়েছে দুটি পদ্ধতির ব্যবহার করে: জাতিসংঘ ব্যবস্থায় সদস্যপদ কলামটি দেশগুলোকে দুটি শ্রেণীতে ভাগ করে: জাতিসংঘের ১৯৩টি সদস্য দেশ ও ২টি পর্যবেক্ষক রাষ্ট্র, এবং ১১টি অন্যান্য রাষ্ট্রসমূহ| সার্বভৌমত্বে দ্বন্দ্ব কলামটি দেশগুলোকে দুটি শ্রেণীতে ভাগ করে: ১৬টি রাষ্ট্রসমূহ যাদের সার্বভৌমত্ব বিষয়ে দ্বন্দ্ব আছে এবং ১৯০টি অন্যান্য রাষ্ট্রসমূহ| এমন একটি তালিকা তৈরি করা একটি দুরূহ ও বিতর্কিত প্রক্রিয়া যেহেতু এমন কোনো সংজ্ঞা নেই যা জাতিগোষ্ঠীর ওপর রাষ্ট্রত্বের মানদণ্ড বিষয়ে বাধ্যবাধকতা আরোপ করে| এই তালিকাটির বিষয়বস্তু নির্ধারণে ব্যবহৃত মানদণ্ড সম্পর্কে অতিরিক্ত তথ্যের জন্যে অনুগ্রহ করে নিচের অন্তর্ভুক্ত করার জন্য মানদণ্ড অনুচ্ছেদটি দেখুন| দেশের তালিকা অন্তর্ভুক্ত করার জন্য মানদণ্ড The dominant customary international law standard of statehood is the declarative theory of statehood that defines the state as a person of international law if it "possess[es] the following qualifications: (a) a permanent population; (b) a defined territory; (c) government; and (d) capacity to enter into relations with the other states." Debate exists on the degree to which recognition should be included as a criterion of statehood. The declarative theory of statehood, an example of which can be found in the Montevideo Convention, argues that statehood is purely objective and recognition of a state by other states is irrelevant. On the other end of the spectrum, the constitutive theory of statehood defines a state as a person under international law only if it is recognized as sovereign by other states. For the purposes of this list, included are all states that either: (a) have declared independence and are often regarded as having control over a permanently populated territory or (b) are recognized as a sovereign state by at least one other sovereign state Note that in some cases there is a divergence of opinion over the interpretation of the first point, and whether an entity satisfies it is disputed. On the basis of the above criteria, this list includes the following 206 entities: 203 states recognized by at least one UN member state Two states that control a permanently populated territory and are recognized only by non-UN member states: Nagorno-Karabakh Republic,Transnistria One state that controls a permanently populated territory and is not recognized by any other state: Somaliland আরো দেখুন ISO 3166-1 List of country-name etymologies List of international rankings List of states with limited recognition List of micronations List of sovereign states by date of formation List of territorial disputes Lists of sovereign states by year সার্বভৌম রাষ্ট্র Table of administrative divisions by country ক্লিকযোগ্য বিশ্বের মানচিত্র Terra nullius টীকা তথ্যসূত্র গ্রন্থপঞ্জী বিষয়শ্রেণী:দেশের তালিকা বিষয়শ্রেণী:রাষ্ট্র nap:Lista d%27%27e Paise d%27%27o munno nds:Land#Länner sv:Världsgeografi#Lista över länder
সার্বভৌম রাষ্ট্রসমূহের তালিকা
অস্ট্রিয়া ( ও্যস্টারাইশ্‌, ক্রোয়েশীয় ভাষায়: Austrija আউস্ত্রিয়া, হাঙ্গেরীয় ভাষায়: Ausztria অউস্ত্রিয়, স্লোভেনীয় ভাষায: Avstrija আভ্‌স্ত্রিয়া) পশ্চিম ইউরোপের একটি রাষ্ট্র। স্থলবেষ্টিত এই দেশের উত্তরে জার্মানি ও চেক প্রজাতন্ত্র, পূর্বে স্লোভাকিয়া ও হাঙ্গেরি, দক্ষিণে স্লোভেনিয়া ও ইতালি, এবং পশ্চিমে সুইজারল্যান্ড ও লিশ্‌টেন্‌ষ্টাইন। অস্ট্রিয়া মূলত আল্পস পর্বতমালার উপরে অবস্থিত। দেশটির তিন-চতুর্থাংশ এলাকাই পর্বতময়। অস্ট্রিয়া একটি সংসদীয় গণতন্ত্র। এখানে ৯টি ফেডারেল রাজ্য রয়েছে। এটি ইউরোপের ৬টি রাষ্ট্রের অন্যতম যারা স্থায়ীভাবে নিরপেক্ষতা ঘোষণা করেছে। অস্ট্রিয়া ১৯৫৫ থেকে জাতিসংঘের এবং ১৯৯৫ থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য। অস্ট্রিয়া অতীতে হাবসবুর্গ রাজাদের অধীনস্থ একটি বিস্তৃত শক্তিশালী সাম্রাজ্যের প্রাণকেন্দ্র ছিল। ভিয়েনা ছিল সেই সাম্রাজ্যের রাজকীয় রাজধানী। ভিয়েনা এখনও বিশ্বের অন্যতম প্রধান শহর হিসেবে আদৃত। এর রাজকীয় রূপ, অসাধারণ বারোক স্থাপত্য, সঙ্গীত ও নাট্যকলা জগদ্বিখ্যাত। ভিয়েনা বর্তমানে অস্ট্রিয়ার বৃহত্তম শহর ও রাজধানী। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের (১৯১৪-১৯১৮) শেষে অস্ট্রিয়ার অধীনস্থ বহুজাতিক সাম্রাজ্যটি ভেঙে যায় এবং তার স্থানে একাধিক জাতিরাষ্ট্রের উদ্ভব ঘটে। অস্ট্রিয়া নিজে একটি ক্ষুদ্র স্থলবেষ্টিত রাষ্ট্রে পরিণত হয়। নতুন রাষ্ট্রগুলি বাণিজ্য বাধার সৃষ্টি করলে অস্ট্রিয়া তার প্রাক্তন বৈদেশিক বাজার এবং জ্বালানির উৎস থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। দেশটির অর্থনীতি বৈদেশিক সাহায্যের পর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। অস্ট্রিয়াতে রক্ষণশীল শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। ১৯৩০-এর দশকের অর্থনৈতিক মন্দা দেশটিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দেয়। যে সমাজতান্ত্রিক রাজনৈতিক শক্তি ভিয়েনাকে সামাজিক গণতন্ত্রের মডেল হিসেবে গড়ে তুলেছিল, ১৯৩৪ সালে তাদের পতন ঘটে এবং ডানপন্থী স্বৈরশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৩৯ সালে নাৎসি জার্মানি অস্ট্রিয়াকে নিজেদের সাথে সংযুক্ত করে নেয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে (১৯৩৯-১৯৪৫) জার্মানির পরাজয়ের পর মিত্রশক্তি অস্ট্রিয়া দখল করে। এসময় মার্কিন ও সোভিয়েত সেনারা এখানে অবস্থান করছিল। ১৯৫৫ সালে অস্ট্রিয়া আবার স্বাধীন হয় এবং তারপর থেকে দেশটির অভাবনীয় অর্থনৈতিক উন্নতি ঘটে। বর্তমানে দেশটি একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ রাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য। রপ্তানি ও পর্যটন শিল্প দেশটির আয়ের বড় উৎস। ভিয়েনার সমৃদ্ধ সংস্কৃতি এবং অস্ট্রিয়ার অসাধারণ সৌন্দর্যময় পার্বত্য ভূদৃশ্যাবলীর টানে এখানে বহু পর্যটক বেড়াতে আসেন। ইতিহাস অস্ট্রিয়ার ইতিহাস ৯৭৬ সালে শুরু হয়। ঐ বছর লেওপোল্ড ফন বাবেনবের্গ বর্তমান অস্ট্রীয় এলাকার বেশির ভাগ অংশের শাসকে পরিণত হন। ১২৭৬ সালে রাজা প্রথম রুডলফ হাব্‌স্‌বুর্গ বংশের প্রথম রাজা হিসেবে অস্ট্রিয়ার শাসক হন। হাব্‌স্‌বুর্গ রাজবংশের রাজারা প্রায় ৭৫০ বছর অস্ট্রিয়া শাসন করেন। রাজনৈতিক বিবাহ সম্পাদনের মাধ্যমে হাব্‌স্‌বুর্গেরা মধ্য ইউরোপের এক বিরাট এলাকা দখলে সক্ষম হন। তাদের ভূসম্পত্তি এমনকি আইবেরীয় উপদ্বীপ (বর্তমান স্পেন) পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। ১৬শ ও ১৭শ শতকে উসমানীয় সাম্রাজ্যের আক্রমণের ফলে অস্ট্রীয় এলাকাটি ধীরে ধীরে দানিউব নদীর অববাহিকার কেন্দ্রীয় ইউরোপীয় অংশটিতে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে। ১৮৪৮ সালে প্রথম ফ্রান্‌ৎস ইয়োজেফ সিংহাসনে আরোহণ করেনে এবং ১৯১৬ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলেন। তার আমলে অস্ট্রীয় ইতিহাসের বহু গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক ঘটনা ঘটে। ১৮৬৭ সালে অস্ট্রীয় সাম্রাজ্যের ভেতরে হাঙ্গেরি আগের চেয়ে বেশি রাজনৈতিক স্বাধীনতা পায়, ফলে অস্ট্রো-হাঙ্গেরীয় দ্বৈত রাজ্যব্যবস্থার আবির্ভাব ঘটে। ২০শ শতকে এসে রাজনৈতিক টানাপোড়েন বৃদ্ধি পায় এবং ১ম বিশযুদ্ধ শেষে সাম্রাজ্যের অবসান ঘটে। ঐ সময় অস্ট্রীয় প্রজাতন্ত্র স্বাধীনতা ঘোষণা করে, যার সীমানা ও বর্তমান অস্ট্রিয়ার সীমানা মোটামুটি একই রকম। ১৯১৯ সালে সাঁ জেরমাঁ-র চুক্তির ফলে হাব্‌স্‌বুর্গ রাজবংশ সরকারিভাবে বিলুপ্ত হয়ে যায় এবং অস্ট্রীয় প্রজাতন্ত্র আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯১৮ থেকে ১৯৩৪ সাল পর্যন্ত অস্ট্রিয়াতে রাজনৈতিক সংঘাত বৃদ্ধি পায়। ১৯২০-এর দশকের শেষে এবং ১৯৩০-এর দশকের শুরুতে আধা-সামরিক রাজনৈতিক সংগঠনগুলি হরতাল ও সহিংস সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে। বেকারত্বের হার বেড়ে ২৫% হয়ে যায়। ১৯৩৪ সালে একটি কর্পোরেশনবাদী স্বৈরাচারী সরকার ক্ষমতায় আসে। ১৯৩৪ সালের জুলাই মাসে অস্ট্রীয় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক (নাৎসি) দল কু-এর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। ১৯৩৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে জার্মানির সামরিক আগ্রাসনের হুমকির মুখে অস্ট্রিয়ার চ্যান্সেলর কুর্ট শুশনিগ অস্ট্রীয় নাৎসিদের সরকারে নিতে বাধ্য হন। ১৯৩৮ সালের ১২ই মার্চ জার্মানি অস্ট্রিয়াতে সৈন্য পাঠায় এবং দেশটিকে জার্মানির অংশভুক্ত করে নেয়। এই ঘটনাটির ঐতিহাসিক নাম দেয়া হয়েছে আন্‌শ্লুস (জার্মান ভাষায় Anschluss)। সেসময় বেশির ভাগ অস্ট্রীয় এই আনশ্লুস সমর্থন করেছিল। ১৯৩৮ সালের মার্চ থেকে ১৯৪৫ সালের এপ্রিলের মধ্যে অস্ট্রিয়ার অধিকাংশ ইহুদীকে হয় হত্যা করা হয় অথবা নির্বাসনে যেতে বাধ্য করা হয়। সিন্তি, জিপসি, সমকামী এবং অন্যান্য রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্ব্বীদেরও একই পরিণাম ঘটে। ১৯৩৮ সালের আগে অস্ট্রিয়াতে ২ লক্ষ ইহুদী বাস করত। ১৯৩৮ থেকে ১৯৪০ সালের মধ্যে এদের অর্ধেকের বেশি দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায়। জার্মানরা ইহুদীদের ব্যবসা ও দোকানপাটে লুটতরাজ চালায়। প্রায় ৩৫ হাজার ইহুদীকে পূর্ব ইউরোপে গেটো বা বস্তিতে পাঠানো হয়। প্রায় ৬৭ হাজার ইহুদীকে কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে পাঠানো হয়; যুদ্ধশেষে এদের মাত্র ২ হাজার বেঁচে ছিল। ১৯৪৫ সালে জার্মানির পরাজয়ের পর মিত্রশক্তিরা অস্ট্রিয়াকে চারভাগে ভাগ করে। ১৯৫৫ সালের ২৫শে অক্টোবর নাগাদ এরা সবাই অস্ট্রিয়া ত্যাগ করে এবং অস্ট্রিয়া পূর্ণ স্বাধীনতা পায়। রাজনীতি অস্ট্রিয়ার রাজনীতি-র ভিত্তি একটি কেন্দ্রীয় সংসদীয় প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্রী প্রজাতন্ত্র ব্যবস্থা, যেখানে চ্যান্সেলর হলেন সরকারপ্রধান। এটি একটি বহুদলীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থা। সরকার নির্বাহী ক্ষমতার অধিকারী। আইন প্রণয়ন ক্ষমতা দ্বি-কাক্ষিক সংসদ (জাতীয় কাউন্সিল ও কেন্দ্রীয় কাউন্সিল) ও সরকার, উভয়ের হাতে ন্যস্ত। ১৯৪৯ সাল থেকে রক্ষণশীল দল Austrian People's party ও সমাজবাদী গণতান্ত্রিক দল Social Democratic Party of Austria দেশটির রাজনৈতিক ব্যবস্থায় প্রাধান্য বিস্তার করে আসছে। প্রশাসনিক অঞ্চলসমূহ ভূগোল right|350px|thumb|অস্ট্রিয়ার ভৌগোলিক মানচিত্রঅস্ট্রিয়াকে তিনটি অসম ভৌগোলিক অঞ্চলে ভাগ করা যায়। এদের মধ্যে বৃহত্তম অংশটি (৬২%) হল আল্পস পর্বতমালার অপেক্ষাকৃত নবীন পাহাড়গুলি। এদের পূর্বে আছে পানোনীয় সমভূমি, এবং দানিউব নদীর উত্তরে আছে বোহেমীয় অরণ্য নামের একটি পুরানো কিন্তু অপেক্ষাকৃত নিচু গ্রানাইট পাথরে নির্মিত পার্বত্য অঞ্চল। দানিউব নদী দানিউব নদী দক্ষিণ-পশ্চিম জার্মানির ডোনাএশিঙেনের কাছ থেকে উৎপত্তি লাভ করে অস্ট্রিয়ার ভেতর দিয়ে পূর্বমুখে প্রবাহিত হয়ে কৃষ্ণসাগরে পতিত হয়েছে। আল্পসের উত্তরের ইন নদী, ৎসালজাখ নদী ও এন্স নদী দানিউবের উপনদী। অন্যদিকে আল্পসের দক্ষিণের অর্থাৎ মধ্য ও পূর্ব অস্ট্রিয়ার গাইল নদী, ড্রাভা নদী, ম্যুর্ৎস নদী ও মুরা নদী সার্বিয়াতে গিয়ে দানিউবে পতিত হয়েছে। আল্পস পর্বতমালা right|200px|thumb|গ্রোসগ্লকনার পর্বতশৃঙ্গ আল্পসের তিনটি প্রধান শাখা, উত্তর চুনাপাথরীয় আল্পস, কেন্দ্রীয় আল্পস, ও দক্ষিণ চুনাপাথরীয় আল্পস অস্ট্রিয়ার পশ্চিম থেকে পূর্ব জুড়ে বিস্তৃত। ৩৭৯৭ মিটার উচ্চতাবিশিষ্ট গ্রোস্‌গ্লকনার অস্ট্রিয়ার সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ। অস্ট্রিয়ার মাত্র ২৮% অঞ্চল সমতল বা অপেক্ষাকৃত কম পাহাড়ি। বোহেমীয় অরণ্য দানিউব উপত্যকার উত্তরে অস্ট্রিয়ার প্রায় ১০% এলাকা জুড়ে অবস্থিত একটি গ্রানাইট মালভূমি এলাকা। অর্থনীতি অস্ট্রিয়ার অর্থনীতি ব্যবস্থাকে একটি সামাজিক বাজার অর্থনীতি হিসেবে গণ্য করা হয়। এর গঠন প্রতিবেশী জার্মানির অর্থনৈতিক ব্যবস্থার মতন। ২০০৪ সালের তথ্য অনুযায়ী অস্ট্রিয়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের ৪র্থ ধনী দেশ। এখানকার মাথাপিছু স্থুল জাতীয় উৎপাদন প্রায় ২৭,৬৬৬ ইউরো। কেবন লুক্সেমবুর্গ, আয়ারল্যান্ড এবং নেদারল্যান্ড্‌স এই দিক থেকে অস্ট্রিয়ার চেয়ে এগিয়ে। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, ২০০২-২০০৬ সময়সীমাতে, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ১ থেকে ৩.৩%-এর মধ্যে স্থিতিশীল ছিল। মধ্য ইউরোপে অবস্থিত বলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নতুন সদস্যরাষ্ট্রগুলির (যেগুলি বেশির ভাগই পূর্ব ইউরোপে অবস্থিত) প্রবেশদ্বার হিসেবে অস্ট্রিয়া গুরুত্ব লাভ করেছে। জনসংখ্যা অস্ট্রিয়ার জনসংখ্যা বর্তমানে ৮,৭২৫,৯৩১ জন। সংস্কৃতি ধর্মবিশ্বাস অস্ট্রিয়াতে প্রচলিত ধর্মবিশ্বাসের মধ্যে রোমান ক্যাথলিক খ্রিস্টধর্ম প্রধান। ২০০১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী ৭৩.৬% লোক এই ধর্মে বিশ্বাসী। প্রায় ১১.৫% লোক প্রতি রোববারে গির্জায় যান। তবে গির্জায় যাওয়ার পরিমাণ ধীরে ধীরে হ্রাস পাচ্ছে। লুথেরান খ্রিস্টধর্মাবলম্বীরা ২০০৬ সালে জনসংখ্যার ৪.৭% গঠন করেছে; এরা বেশির ভাগই দক্ষিণ অস্ট্রিয়ার কের্নটেন অঙ্গরাজ্যে বাস করে। অস্ট্রিয়াতে মুসলিম ধর্মাবলম্বীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, বর্তমানে এরা জনসংখ্যার ৪.২%। এছাড়াও অস্ট্রিয়াতে স্বল্পসংখ্যক হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ ও ইহুদীবাস করেন। ভাষা অস্ট্রিয়াতে মূলত জার্মান ভাষার একটি পরিবর্তিত রূপ ব্যবহৃত হয়। এর নাম অস্ট্রীয় জার্মান। জার্মান ভাষায় এর নাম Schönbrunner Deutsch (শ্যোনব্রুনার ডয়চ অর্থাৎ রাজকীয় প্রাসাদের জার্মান)। অস্ট্রীয় জার্মান বর্তমান আদর্শ জার্মান ভাষা থেকে বেশ কিছু দিকে থেকে আলাদা। কিছু কিছু ক্ষেত্রে যে সমস্ত স্বরধ্বনি আদর্শ জার্মান ভাষায় উচ্চারিত হয়, অস্ট্রীয় জার্মান ভাষায় সেগুলি উচ্চারিত হয় না; কিংবা সামান্য ভিন্নভাবে উচ্চারিত হয়। অস্ট্রীয় জার্মান ভাষায় নিজস্ব প্রত্যয়েরও (suffix) ব্যবহার আছে। এছাড়া বলা হয়ে থাকে যে অস্ট্রীয় জার্মান খানিকটা নাসিক্য স্বরে (nasalized) বলা হয়ে থাকে। অস্ট্রীয় জার্মান ভাষার উপভাষাগুলিকে আলেমানীয় উপভাষা ও দক্ষিণ বাভারীয় উপভাষা - এই দুই ভাগে ভাগ করা যায়। আলেমানীয় উপভাষা দেশটির পূর্ব এক-তৃতীয়াংশে প্রচলিত (ফোরার্লবের্গ প্রদেশে)। আর দক্ষিণ বাভারীয় উপভাষাগুলি দেশের বাকি অংশে ব্যবহৃত। আলেমানীয় উপভাষাগুলি সুইজারল্যান্ডের জার্মান ও দক্ষিণ-পূর্ব জার্মানির ভাষাগুলির সাথে তুলনীয়। আর দক্ষিণ বাভারীয় উপভাষাগুলি জার্মানির বাভারিয়ার বা বায়ার্নের ভাষাগুলির সাথে তুলনীয়। এছাড়াও অস্ট্রিয়ায় অনেকগুলি সংখ্যালঘু সম্প্রদায় নিজস্ব ভাষায় কথা বলে থাকে। এগুলির মধ্যে অন্যতম হল ক্রোয়েশীয়, স্লোভেনীয়, হাঙ্গেরীয়, চেক, স্লোভাক এবং জিপসি ভাষাসমূহ। শহর অস্ট্রিয়ার পাঁচটি প্রধান শহর হল ভিয়েনা, গ্রাৎস, লিন্‌ৎস, জাল্‌ৎসবুর্গ এবং ইন্স‌ব্রুক। ভিয়েনা অস্ট্রিয়ার রাজধানী ও বৃহত্তম শহর। এটি অস্ট্রিয়ার অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক প্রাণকেন্দ্র। শহরটি দানিউব নদীর দুই তীরে অবস্থিত। এর শহরতলীগুলি পশ্চিমে বিখ্যাত ভিয়েনা অরণ্য পর্যন্ত চলে গেছে। ভিয়েনা ইউরোপের সবচেয়ে রাজকীয় শহরগুলির একটি। এখানে অনেক জমকালো বাসভবন, রাজপ্রাসাদ, পার্ক ও গির্জা আছে। শহরের জনসংখ্যা ১৬ লক্ষের বেশি। গ্রাৎস অস্ট্রিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর। এটি ষ্টাইয়ারমার্ক প্রদেশের রাজধানী। শহরটি একটি উর্বত উপত্যকায় মুর নদীর তীরে অবস্থিত। গ্রাৎস একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্প, বাণিজ্য ও শিক্ষাকেন্দ্র। এখানে প্রায় আড়াই লক্ষ লোকের বাস। লিন্‌ৎস ওবারঅস্টাররাইখ প্রদেশের রাজধানী। এটি দানিউব নদীর তীরে অবস্থিত বন্দর শহর ও শিল্পকেন্দ্র। জাল্‌ৎসবুর্গ অস্ট্রিয়ার সবচেয়ে নয়নাভিরাম শহরগুলির একটি। এটি জাল্‌ৎসাখ নদীর তীরে আল্পস পর্বতমালার পাদদেশে অবস্থিত। শহরটি বিখ্যাত সুরকার ভোলফগাং আমাদেউস মোৎসার্টের জন্মস্থান। এখানকার বাৎসরিক সঙ্গীত উৎসবগুলি সারা বিশ্বে পরিচিত। এখানে অনেক পর্যটক বেড়াতে আসেন। ইন্সব্রুক টিরোলিয়ান আল্পস পর্বতমালায় সমুদ্র সমতল থেকে বহু উঁচুতে অবস্থিত একটি শীতকালীন অবকাশ যাপন কেন্দ্র। এটি টিরোল প্রদেশের রাজধানী ও ইন নদীর তীরে অবস্থিত। ইন্সব্রুকের অবস্থান ও সৌন্দর্যের কারণে এখানেও অনেক পর্যটক বেড়াতে আসেন। তথ্যসূত্র আরও দেখুন বহিঃসংযোগ বিষয়শ্রেণী:ইউরোপের রাষ্ট্র
অস্ট্রিয়া
{{Infobox Country |native_name = República de Boliviaরেপুব্লিকা দ়ে বোলিব্‌য়াBulibya Republikaবুলিব্‌য়্যা রেপুব্লিক্যাWuliwya Suyuউলিউয়া সুয়ু |conventional_long_name = বলিভিয়া প্রজাতন্ত্র |common_name = বলিভিয়া |image_flag = Flag of Bolivia (state).svg |image_coat = Coat of arms of Bolivia.svg |image_map = Bolivia in its region.svg |national_motto = "¡La unión es la fuerza!""Unity is strength!"</small> |national_anthem = বলিভিয়ানোস, এল হাদো প্রোপিচিও |capital = বলিভিয়া (স্পেনীয়: Bolivia বোলিব‌্‌য়া, কেচুয়া: Bulibya বুলিব্‌য়্যা, আইমারা: Wuliwya উলিউয়া) দক্ষিণ আমেরিকার মধ্যভাগের একটি দেশ। আন্দেস পর্বতমালায় অনেক উঁচুতে অবস্থিত বলে দেশটিকে পৃথিবীর ছাদ নামেও অনেক সময় ডাকা হয়। বলিভিয়াতে আছে বরফাবৃত বহু পর্বতশৃঙ্গ, আর দেশটির উন্মুক্ত মালভূমির উপর দিয়ে বয়ে যায় দুরন্ত হাওয়া। পর্বতমালার পূর্বে রয়েছে সবুজ তৃণভূমি এবং তারও নিম্নে আছে ক্রান্তীয় বনাঞ্চল। সরকারীভাবে বলিভিয়ার রাজধানীর নাম সুক্রে। তবে লা পাজ দেশটির প্রশাসনিক রাজধানী ও সরকারের প্রধান কর্মস্থল। ৩,৬০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত লা পাজ বিশ্বের উচ্চতম রাজধানী। বলিভিয়া দক্ষিণ আমেরিকার দরিদ্রতম দেশগুলির একটি। দেশের অধিকাংশ লোক আদিবাসী আমেরিকান। কিন্তু একটি ক্ষুদ্র স্পেনীয়ভাষী অভিজাত শ্রেণী ঐতিহ্যগতভাবে দেশটির রাজনীতি ও অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ করে এসেছে এবং দেশের বেশির ভাগ সম্পদ এদের হাতে কুক্ষিগত। প্রথমে আন্দেস পর্বতমালায় প্রাপ্ত খনিজ ছিল এই সম্পদের উৎস। ১৯৯০-এর দশকে শেষের দিকে এসে পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস বলিভিয়ার প্রধান খনিজ সম্পদ। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে দেশটি কোকেনের উপকরণ কোকা পাতাও রপ্তানি শুরু করে। বলিভিয়ার বেশির ভাগ লোক আন্দেস পর্বতমালার দুইটি পর্বতশ্রেণীর মাঝখানে অবস্থিত একটি মালভূমিতে বাস করেন। দেশের এক-তৃতীয়াংশ এলাকা জুড়ে আন্দেস পর্বতমালা অবস্থিত। তবে ১৯৫০-এর দশক থেকে পূর্বের নিচু সমভূমিগুলিতে ধীরে ধীরে ঘনবসতিপূর্ণ জনপদ গড়ে উঠেছে। বিশেষত ঐ এলাকায় খনিজ তেল ও গ্যাসের মজুদ আবিষ্কৃত হবার পর এটি ঘটেছে। এছাড়াও দেশটির উর্বর খামারভূমিগুলি বসতির জন্য খুলে দেওয়া হয়। ২০০০-এর দশকের শুরুতে এই অঞ্চলের প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্র সান্তা ক্রুজ দে লা সিয়েরা লা পাজকে ছাড়িয়ে বলিভিয়ার বৃহত্তম শহরে পরিণত হয়। ১৬শ শতক থেকে ১৯শ শতকের শুরু পর্যন্ত বলিভিয়া স্পেনের একটি উপনিবেশ ছিল। ১৮২৫ সালে দেশটি স্বাধীনতা লাভ করে। ১৯৫২ সালে এখানে একটি রাজনৈতিক বিপ্লব ঘটে যার প্রভাব ছিল সুদূরপ্রসারী। বিপ্লবী নেতারা আদিবাসী আমেরিকানদের অধিকতর রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সুযোগ সুবিধা প্রদানের প্রকল্প গ্রহণ করেন। সরকার তাদের ভোট দেবার সুযোগ দেন, এবং পল্লী এলাকাগুলিতে শিক্ষার ব্যবস্থা করেন। বড় বড় জমিদারীগুলি ভেঙে দেয়া হয় এবং আদিবাসী আমেরিকান চাষীদের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জমি দেওয়া হয়। তবে এই সংস্কারগুলি বলিভিয়ার অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধান করতে পারেনি। পরবর্তী সরকারগুলি অর্থনীতির বড় অংশ বেসরকারীকরণের চেষ্টা করলেও এখনও বলিভিয়া সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকে একটি অস্থিতিশীল রাষ্ট্র। ইতিহাস রাজনীতি ডিপার্টমেন্ট ও প্রদেশসমূহ right|thumb|বলিভিয়ার ডিপার্টমেন্টসমূহের মানচিত্র বলিভিয়া মোট ৯টি ডিপার্মেন্টে (departamentos) বিভক্ত। এর রাজধানীগুলোকে বন্ধনীর মধ্যে দেখানো হয়েছে: Beni (ত্রিনিদাদ) Chuquisaca (সুক্রে) Cochabamba (Cochabamba) La Paz (লা পাজ) Oruro (Oruro) Pando (Cobija) Potosí (Potosí) Santa Cruz (সান্তা ক্রুজ দে লা সিয়েরা) Tarija (Tarija) ভূগোল right|thumb|Map of Bolivia from the CIA World Factbook. thumb|left|Uyuni thumb|left|Colours of Altiplano Boliviano বলিভিয়ার এলাকার ক্ষেত্রফল ১,০৯৮,৫৮০ বর্গকিলোমিটার। এলাকার দিক থেকে এটি পৃথিবীতে ২৮তম। ১৮৭৯ হতে বলিভিয়া একটি ভূবেষ্টিত (land-locked) দেশ। ঐ বছর চিলির সাথে প্রশান্ত মহাসাগরের যুদ্ধে বলিভিয়া উপকূলবর্তী আন্তোফাগাস্তা এলাকাটির দখল হারায়। তবে প্যারাগুয়ে নদীর মাধ্যমে বলিভিয়া অ্যাটলান্টিক মহাসাগরের সাথে সংযুক্ত। বলিভিয়ার পরিবেশে ব্যাপক বৈচিত্র রয়েছে। পশ্চিমের পাহাড়ী এলাকা আন্দেজ পর্বতমালায় অবস্থিত। এখানে বলিভীয় আলতিপ্লানো এলাকা রয়েছে। পূর্বের সমতলভূমিতে আমাজন বনাঞ্চল এর চিরহরিৎ (??) বৃক্ষরাজি রয়েছে। বলিভিয়ার সর্বোচ্চ পর্বতশিখর হলো নেভাদো সাজামা যার উচ্চতা ৬৫৪২ মিটার। টিটিকাকা হ্রদ বলিভিয়া ও পেরুর সীমান্তে অবস্থিত। পৃথিবীর বৃহত্তম লবনাক্ত ভূমি সালার দি উইয়ুনি বলিভ্যার দক্ষিণ-পশ্চিম অংশ অবস্থিত। বলিভিয়ার বৃহৎ শহরগুলোর মধ্যে রয়েছে লা পাজ, এল্‌ অল্টো, সান্তা ক্রুজ দে লা সিয়েরা, এবং কোচাবাম্বা। অর্থনীতি মাথাপিছু আয়া ৪,৪৪৪ মা,ডলার জনসংখ্যা বলিভিয়ার মোট জনসংখ্যা ১ কোটি ২ লক্ষ জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১.৬% সংস্কৃতি আরও দেখুন তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ বিষয়শ্রেণী:দক্ষিণ আমেরিকার রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:প্রজাতন্ত্র বিষয়শ্রেণী:বলিভিয়া
বলিভিয়া
thumb |রাফায়েলের কল্পনায় ৩য় শতাব্দীর বিখ্যাত গণিতবিদ ইউক্লিড, দ্য স্কুল অফ এথেন্স ছবির অংশবিশেষ। গণিত পরিমাণ, সংগঠন, পরিবর্তন ও স্থান বিষয়ক গবেষণা। গণিতের নিদিষ্ট কোন সংজ্ঞা নেই।গণিতে সংখ্যা ও অন্যান্য পরিমাপযোগ্য রাশিসমূহের মধ্যকার সম্পর্ক বর্ণনা করা হয়। গণিতবিদগন বিশৃঙ্খল ও অসমাধানযুক্ত সমস্যাকে শৃঙ্খলভাবে উপস্থাপনের প্রক্রিয়া খুঁজে বেড়ান ও তা সমাধানে নতুন ধারণা প্রদান করে থাকেন। গাণিতিক প্রমাণের মাধ্যমে এই ধারণাগুলির সত্যতা যাচাই করা হয়। গাণিতিক সমস্যা সমাধান সম্পর্কিত গবেষণায় বছরের পর বছর, যুগের পর যুগ বা শত শত বছর পর্যন্ত লেগে যেতে পারে। গণিতের সার্বজনীন ভাষা ব্যবহার করে বিজ্ঞানীরা একে অপরের সাথে ধারণার আদান-প্রদান করেন। গণিত তাই বিজ্ঞানের ভাষা। ১৭শ শতক পর্যন্তও কেবল পাটীগণিত, বীজগণিত ও জ্যামিতিকে গাণিতিক শাস্ত্র হিসেবে গণ্য করা হত। সেসময় গণিত দর্শন ও বিজ্ঞানের চেয়ে কোন পৃথক শাস্ত্র ছিল না। আধুনিক যুগে এসে গণিত বলতে যা বোঝায়, তার গোড়াপত্তন করেন প্রাচীন গ্রিকেরা, পরে মুসলমান পণ্ডিতেরা এগুলি সংরক্ষণ করেন, অনেক গবেষণা করেন এবং খ্রিস্টান পুরোহিতেরা মধ্যযুগে এগুলি ধরে রাখেন। তবে এর সমান্তরালে ভারতে এবং চীন-জাপানেও প্রাচীন যুগ ও মধ্যযুগে স্বতন্ত্রভাবে উচ্চমানের গণিতচর্চা করা হত। ভারতীয় গণিত প্রাথমিক ইসলামী গণিতের উপর গভীর প্রভাব ফেলেছিল। ১৭শ শতকে এসে আইজাক নিউটন ও গটফ্রিড লাইবনিৎসের ক্যালকুলাস উদ্ভাবন এবং ১৮শ শতকে অগুস্তঁ লুই কোশি ও তার সমসাময়িক গণিতবিদদের উদ্ভাবিত কঠোর গাণিতিক বিশ্লেষণ পদ্ধতিগুলির উদ্ভাবন গণিতকে একটি একক, স্বকীয় শাস্ত্রে পরিণত করে। তবে ১৯শ শতক পর্যন্তও কেবল পদার্থবিজ্ঞানী, রসায়নবিদ ও প্রকৌশলীরাই গণিত ব্যবহার করতেন। thumbnail|right|আইজ্যাক নিউটন (১৬৪৩-১৭২৭), ক্যালকুলাসের জনক ১৯শ শতকের শুরুতে তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের যে আধুনিক ধারা সূচিত হয়, সে-সংক্রান্ত গবেষণাগুলির ফলাফল প্রকাশের জন্য জটিল গাণিতিক মডেল উদ্ভাবন করা হয়। বিশুদ্ধ গণিতের বিভিন্ন ক্ষেত্রে গবেষণায় জোয়ার আসে। অন্যদিকে ২০শ শতকের মাঝামাঝি সময়ে কম্পিউটারের আবিষ্কার এ-সংক্রান্ত সাংখ্যিক পদ্ধতিগুলির গবেষণা বৃদ্ধি করে। গণিতের ইতিহাস ইতিহাস ও গণিতবিশ্ব thumbnail|left|বিখ্যাত গ্রিক গণিতবিদ পীথাগোরাস (৫৭০-৪৯৫ খ্রিষ্টপূর্ব) গণনা করা ছিল আদিমতম গাণিতিক কর্মকাণ্ড। আদিম মানুষেরা পশু ও বাণিজ্যের হিসাব রাখতে গণনা করত। আদিম সংখ্যা ব্যবস্থাগুলি প্রায় নিশ্চিতভাবেই ছিল এক বা দুই হাতের আঙুল ব্যবহার করে সৃষ্ট। বর্তমানের ৫ ও ১০-ভিত্তিক সংখ্যা ব্যবস্থার বিস্তার এরই সাক্ষ্য দেয়। মানুষ যখন সংখ্যাগুলিকে বাস্তব বস্তু থেকে পৃথক ধারণা হিসেবে গণ্য করা শিখল এবং যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগ --- এই চারটি মৌলিক অপারেশন বা প্রক্রিয়া উদ্ভাবন করল, তখনই পাটীগণিতের যাত্রা শুরু হল। আর জ্যামিতির শুরু হয়েছিল রেখা ও বৃত্তের মত সরল ধারণাগুলি দিয়ে। গণিতের পরবর্তী উন্নতির জন্য চলে যেতে হবে খ্রিস্টপূর্ব ২০০০ অব্দে, যখন ব্যাবিলনীয় ও মিশরীয় সভ্যতা বিকাশ লাভ করেছিল। প্রাচীন মেসোপটেমিয়ার ব্যাবিলনীয়রা এবং নীল নদের অববাহিকায় প্রাচীন মিশরীয়রা সুশৃঙ্খল গণিতের প্রাচীনতম নিদর্শন রেখে গেছে। তাদের গণিতে পাটীগণিতের প্রাধান্য ছিল। জ্যামিতিতে পরিমাপ ও গণনাকে প্রাধান্য দেয়া হয়, স্বতঃসিদ্ধ বা প্রমাণের কোন নিদর্শন এগুলিতে পাওয়া যায় না। প্রাচীন ব্যাবিলনীয়দের গণিত ব্যাবিলনিয়ার গণিত সম্পর্কে আমরা জানতে পারি এই সভ্যতার নিদর্শনবাহী কাদামাটির চাঙড় থেকে, যেগুলির উপর ব্যাবিলনীয়রা কীলক আকৃতির খোদাই করে করে লিখত। এই লেখাগুলিকে কিউনিফর্ম বলা হয়। সবচেয়ে প্রাচীন চাঙড়গুলি খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০ অব্দ সালের বলে ধারণা করা হয়। খোদাইগুলির বেশির ভাগ গণিতই ছিল বাণিজ্য বিষয়ক। ব্যাবিলনীয়রা অর্থ ও পণ্যদ্রব্য আদানপ্রদানের জন্য পাটীগণিত ও সরল বীজগণিত ব্যবহার করত। তারা সরল ও যৌগিক সুদ গণনা করতে পারত, কর গণনা করতে পারত, এবং রাষ্ট্র, ধর্মালয় ও জনগণের মধ্যে সম্পদ কীভাবে বন্টিত হবে তা হিসাব করতে পারত। খাল কাটা, শস্যাগার নির্মাণ ও অন্যান্য সরকারি কাজকর্মের জন্য পাটীগণিত ও জ্যামিতির ব্যবহার হত। শস্য বপন ও ধর্মীয় ঘটনাবলির জন্য পঞ্জিকা নির্ধারণেও গণিতের ব্যবহার ছিল। বৃত্তকে ৩৬০টি ভাগে বা ডিগ্রীতে বিভক্ত করা এবং প্রতি ডিগ্রী ও মিনিটকে আরও ৬০টি ভাগে বিভক্ত করার রীতি ব্যাবিলনীয় জ্যোতির্বিজ্ঞান থেকে এসেছে। ব্যাবিলনীয়রাই একেক দিনকে ২৪ ঘণ্টায়, প্রতি ঘণ্টাকে ৬০ মিনিট ও প্রতি মিনিটকে ৬০ সেকেন্ডে ভাগ করে। তাদের সংখ্যা ব্যবস্থা ছিল ৬০-ভিত্তিক। ১-কে একটি কীলকাকৃতি খাঁজ দিয়ে নির্দেশ করা হত এবং এটি বারবার লিখে ৯ পর্যন্ত নির্দেশ করা হত। ১১ থেকে ৫৯ পর্যন্ত সংখ্যাগুলি ১ এবং ১০-এর জন্য ব্যবহৃত চিহ্ন ব্যবহার করে নির্দেশ করা হত। ৬০-এর চেয়ে বড় সংখ্যার জন্য ব্যাবিলনীয়রা একটি স্থাননির্দেশক চিহ্ন ব্যবহার করত। স্থানিক মানের এই ধারণার উদ্ভাবন গণনাকে অনেক এগিয়ে দেয়। এর ফলে একই প্রতীক বিভিন্ন স্থানে বসিয়ে একাধিক মান নির্দেশ করা সম্ভব হয়। ব্যাবলিনীয়দের সংখ্যা ব্যবস্থায় ভগ্নাংশও নির্দেশ করা যেত। তবে তাদের ব্যবস্থায় শূন্য ছিল না, এবং এর ফলে দ্ব্যর্থতার সৃষ্টি হয়। ব্যাবিলনীয়রা বিপরীত সংখ্যা, বর্গ সংখ্যা, বর্গমূল, ঘন সংখ্যা ও ঘনমূল, এবং যৌগিক সুদের সারণী প্রস্তুত করেছিল। তারা ২-এর বর্গমূলের একটি ভাল আসন্ন মান নির্ধারণ করতে পেরেছিল। কিউনিফর্ম চাঙড়গুলি থেকে আরও প্রমাণ পাওয়া গেছে যে ব্যাবিলনীয়রা দ্বিঘাত সমীকরণের সমাধানের সূত্র আবিষ্কার করেছিল এবং তারা দশটি অজানা রাশি বিশিষ্ট দশটি সমীকরণের ব্যবস্থা সমাধান করতে পারত। খিস্টপূর্ব ৭০০ অব্দে এসে ব্যাবিলনীয়রা গণিত ব্যবহার করে চাঁদ ও গ্রহসমূহের গতি নিয়ে গবেষণা আরম্ভ করে। এর ফলে তারা গ্রহগুলির দৈনিক অবস্থান পূর্বাভাসে সক্ষম হয়, যা জ্যোতির্বিজ্ঞান ও জ্যোতিষশাস্ত্র --- দুই ক্ষেত্রেই তাদের কাজে আসে। thumbnail|right|গণিতবিদ লিওনার্দ অয়লার (১৭০৭-১৭৮৩), গণিত জনপ্রিয়করনে তাঁর ভূমিকা অবিস্মরনীয় জ্যামিতিতে ব্যাবিলনীয়রা সদৃশ ত্রিভুজের একই বাহুগুলির মধ্যে সমানুপাতিকতার সম্পর্কের ব্যাপারে অবহিত ছিল। তারা পীথাগোরাসের উপপাদ্য ব্যবহার করে সমস্যা সমাধান করতে পারত এবং অর্ধবৃত্তের উপর অঙ্কিত কোণ যে সমকোণ হয়, তা জানত। তারা সরল সমঢতলীয় বিভিন্ন চিত্র যেমন সুষম বহুভুজ, ইত্যাদির ক্ষেত্রফলের সূত্র এবং সরল ঘনবস্তুগুলির আয়তনের সূত্র বের করেছিল। তারা পাই-এর জন্য ৩-কে আসন্ন মান হিসেবে ব্যবহার করত। প্রাচীন মিশরীয়দের গণিত মিশরীয়রা তাদের স্তম্ভগুলিতে হায়ারোগ্লিফের মাধ্যমে সংখ্যা অঙ্কিত করেছিল, কিন্তু মিশরীয় গণিতের আসল নিদর্শন হল আনুমানিক ১৮০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের দুইটি প্যাপিরাস। এগুলিতে পাটীগণিত ও জ্যামিতির নানা সমস্যা আছে, যার মধ্যে বাস্তব সমস্যা যেমন নির্দিষ্ট পরিমাণ মদ তৈরির জন্য কতটুকু শস্য লাগবে, এক জাতের শস্য ব্যবহার করে মদের যে মান পাওয়া যায়, অন্য জাতের শস্য কতটুকু কাজে লাগিয়ে সেই একই মান পাওয়া যায়, তার সমস্যা। মিশরীয় বেতন নির্ণয়ে, শস্যক্ষেত্রের ক্ষেত্রফল ও শস্যাগারের আয়তন নির্ণয়ে, কর নির্ণয়ে ও নির্দিষ্ট কাঠামোর জন্য প্রয়োজনীয় ইটের সংখ্যা বের করতে গণিতকে কাজে লাগাত। এছাড়াও পঞ্জিকা গণনাতেও তারা গণিতভিত্তিক জ্যোতির্বিজ্ঞান ব্যবহার করত। পঞ্জিকার সাহায্যে তারা ধর্মীয় ছুটির তারিখ ও নীল নদের বার্ষিক প্লাবনের সময় নির্দেশ করতে পারত। মিশরীয়দের সংখ্যা ব্যবস্থা ছিল ১০-ভিত্তিক। তারা ১০-এর বিভিন্ন ঘাতের জন্য ভিন্ন ভিন্ন হায়ারোগ্লিফ প্রতীক ব্যবহার করত। তারা ১-এর প্রতীক পাঁচবার লিখে ৫, ১০-এর প্রতীক ৬ বার লিখে ৬০, আর ১০০-র প্রতীক ৩ বার লিখে ৩০০ নির্দেশ করত। একসাথে এই প্রতীকগুলি ৩৬৫ নির্দেশ করত। সমসাময়িক যুগে গণিত ১৯০০ খ্রিষ্টাব্দে প্যারিসে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক গণিত সম্মেলনে জার্মান গণিতবিদ ডাভিড হিলবের্ট একটি বক্তৃতায় তার তত্ত্বগুলি ব্যাখ্যা করেন। হিলবের্ট গোটিঙেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানসূচক আসনপ্রাপ্ত গণিতবিদ ছিলেন, যে আসনে এর আগে গাউস ও রিমান অধিষ্ঠিত ছিলেন। হিলবের্ট গণিতের প্রায় সমস্ত ক্ষেত্রে অবদান রাখেন। জ্যামিতির ভিত্তি (১৮৯৯) নিয়ে তার ধ্রুপদী গবেষণা যেমন ছিল, তেমনি অন্যান্য গণিতবিদদের সাথে গণিতের ভিত্তি নিয়ে গবেষণাতেও তিনি অবদান রাখেন। প্যারিসের বক্তৃতায় হিলবের্ট ২৩টি গাণিতিক সমস্যা উপস্থাপন করেন এবং তার বিশ্বাস ছিল ২০শ শতকের গাণিতিক গবেষণার উদ্দেশ্য হবে এই সমস্যাগুলির সমাধান খুঁজে বের করা। বাস্তবিকপক্ষেই এই সমস্যাগুলি ২০শ শতকের সিংহভাগ গাণিতিক গবেষণাকর্মের জন্য উদ্দীপক হিসেবে কাজ করেছিল। যখনই কোনও গণিতবিদ একটি করে হিলবের্টের সমস্যার সমাধান খুঁজে পাওয়ার ঘোষণা দিতেন, আন্তর্জাতিক গণিতবিদ সম্প্রদায় অধৈর্যের সাথে সেই সমাধানের বিশদ বিবরণের অপেক্ষায় থাকত। যদিও উপরের সমস্যাগুলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল, তা সত্ত্বেও হিলবের্ট একটি ব্যাপার কল্পনায় আনতে পারেন নি, আর তা হল ডিজিটাল প্রোগ্রামযোগ্য গণকযন্ত্র তথা কম্পিউটারের উদ্ভাবন। কম্পিউটার গণিত নিয়ে গবেষণার প্রকৃতি পালটে দেয়। কম্পিউটারের উৎস হিসেবে পাস্কাল ও লাইবনিৎসের গণনাযন্ত্রিকা বা ক্যালকুলেটরকে গণ্য করা হলেও কেবল ১৯শ শতকে এসে ইংরেজ বিজ্ঞানী চার্লস ব্যাবেজ এমন একটি যন্ত্র নকশা করতে সক্ষম হন যা কাগজের টুকরা বা ফিতাতে লেখা নির্দেশমালা অনুসরণ করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গাণিতিক ক্রিয়া সম্পাদন করতে সক্ষম ছিল। ব্যাবেজের কল্পনাপ্রসূত যন্ত্র বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় সঠিক প্রযুক্তি তার আমলে লভ্য ছিল না। রিলে, বায়ুশূন্য নল ও ট্রানজিস্টরের উদ্ভাবনের পরে বড় মাপের প্রোগ্রামযোগ্য গণনা সম্পাদন করা সম্ভবপর হয়। এই প্রযুক্তিগত উন্নতি গণিতের বেশ কিছু শাখায় বড় ধরনের সাহায্য করে, যেমন সাংখ্যিক বিশ্লেষণ ও সসীম গণিতের মতো ক্ষেত্রগুলিতে। এছাড়া এর ফলে গণিতের নতুন নতুন শাখারও উদ্ভব হয়, যেমন অ্যালগোরিদমসমূহের গবেষণা। সংখ্যাতত্ত্ব, ব্যবকলনীয় সমীকরণ ও বিমূর্ত বীজগণিতের মত বিচিত্র সব ক্ষেত্রে কম্পিউটার প্রযুক্তি একটি শক্তিশালী উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃত হতে শুরু করে। এছাড়া কম্পিউটারের সুবাদে এমন সব গাণিতিক সমস্যা সমাধান খুঁজে পাওয়া সম্ভব হয়, যেগুলি অতীতে করা সম্ভব ছিল না। যেমন ১৯শ শতকের মধ্যভাগে প্রস্তাবিত চার বর্ণ টপোগাণিতিক সমস্যাটি সমাধান করা সম্ভব হয়। চার বর্ণ উপপাদ্যটিতে বলা হয় যে যেকোনও মানচিত্র অঙ্কনের জন্য চারটি বর্ণ বা রঙই যথেষ্ট, সাথে শর্ত হল দুইটি পাশাপাশি দেশের বর্ণ ভিন্ন হতে হবে। ১৯৭৬ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি উচ্চ গণনক্ষমতাবিশিষ্ট কম্পিউটার ব্যবহার করে উপপাদ্যটি প্রমাণ করে দেখানো হয়। আধুনিক বিশ্বে গণিতের ক্ষেত্রে জ্ঞান যে গতিতে অগ্রসর হয়েছে, তা অতীতে কখনও ঘটেনি। যেসমস্ত তত্ত্ব অতীতে একে অপর থেকে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র হিসেবে গণ্য করা হত, সেগুলিকে একীভূত করে সম্পূর্ণতর ও আরও বিমূর্ত তত্ত্ব গঠন করা হয়েছে। যদিও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাগুলির সিংহভাগই সমাধান করা হয়েছে, বেশ কিছু সমস্যা যেমন রিমানের অনুমিতিটি এখনও মীমাংসিত হয়নি। একই সময়ে নতুন নতুন উদ্দীপনামূলক সমস্যা আবির্ভূত হয়ে চলেছে। আপাতদৃষ্টিতে গণিতের সবচেয়ে বিমূর্ত তত্ত্বগুলিও বাস্তবে প্রয়োগ খুঁজে পাচ্ছে। গণিতের মৌলিক ধারণাসমূহ অঙ্ক thumb|400px|ভারতীয় সংখ্যার দশটি অঙ্ক, মানের উর্ধ্বক্রমে। গণিতে অঙ্ক হলো সংখ্যা প্রকাশক চিহ্ন। কোনো সংখ্যায় একটি অঙ্কের দুধরনের মান থাকে, নিজস্ব মান ও স্থানীয় মান। দশমিক সংখ্যা পদ্ধতিতে ০ থেকে শুরু করে ৯ পর্যন্ত দশটি অঙ্ক আছে। এছাড়াও রয়েছে আরো নানা ধরনের সংখ্যা পদ্ধতি যেমনঃ বাইনারি( দুই ভিত্তিক সংখ্যা পদ্ধতি), অক্টাল ( আট ভিত্তিক), হেক্সাডেসিমাল ( ষোলো ভিত্তিক)। তবে দশমিক সংখ্যা পদ্ধতিই বিশ্বে সবচেয়ে জনপ্রিয় সংখ্যা পদ্ধতি । গণিতের প্রধান ক্ষেত্রসমূহ পরিমাণ পরিমাণ বিষয়ক গবেষণার ভিত্তি হচ্ছে সংখ্যা। শুরুতেই আলোচিত হয় স্বাভাবিক সংখ্যা ও পূর্ণ সংখ্যা এবং এদের উপর সম্পন্ন বিভিন্ন গাণিতিক প্রক্রিয়া বা অপারেশন আলোচিত হয় পাটীগণিতে। পূর্নসংখ্যাগুলির গভীরতর ধর্মগুলি আলোচিত হয় সংখ্যাতত্ত্ব শাখায়। ফার্মার শেষ উপপাদ্য এই শাখার একটি বিখ্যাত ফলাফল। এখনও সমাধান হয়নি এরকম দুইটি সমস্যা হচ্ছে দ্বৈত মৌলিক সংখ্যা অনুমান এবং গোল্ডবাখের অনুমান। আরও উন্নত সংখ্যাব্যবস্থায় পূর্ণসংখ্যাগুলি মূলদ সংখ্যার উপসেট হিসেবে পরিগণিত হয়। মূলদ সংখ্যাগুলি আবার বাস্তব সংখ্যার অন্তর্গত। বাস্তব সংখ্যাগুলি অবিচ্ছিন্ন রাশি বর্ণনা করতে ব্যবহার করা হয়। বাস্তব সংখ্যাগুলিকে আবার জটিল সংখ্যাতে সাধারণীকৃত করা হয়। জটিল সংখ্যাগুলিকে কোয়ার্টানায়ন ও অক্টোনায়োন-বিশিষ্ট সংখ্যাব্যবস্থায় সম্প্রসারিত করা যায়। {| style="border:1px solid #999; text-align:center; margin: auto;" cellspacing="20" ||||||||| |- | স্বাভাবিক সংখ্যা|| পূর্ণ সংখ্যা || ভগ্নাংশ || বাস্তব সংখ্যা || জটিল সংখ্যা |} সংখ্যা • হাইপারকমপ্লেক্স সংখ্যা • কোয়ার্টারনিয়ন • অক্টোনিয়ন • সেডেনিয়ন • হাইপাররিয়াল সংখ্যা • পরাবাস্তব সংখ্যা • পূরণবাচক সংখ্যা • অঙ্কবাচক সংখ্যা • পি-এডিক সংখ্যা • পূর্ণসাংখ্যিক অনুক্রম • গাণিতিক ধ্রুবক • সংখ্যার নাম • অসীম • ভিত্তি গঠন আকার, প্রতিসাম্য এবং গাণিতিক গঠন সংক্রান্ত আলোচনা। {| style="border:1px solid #999; text-align:center; margin: auto;" cellspacing="15" ||| 96px || 96px|সংযোগ=Special:FilePath/Rubik_float.png||96px || 96px |-| পাটিগণিত || সংখ্যা তত্ত্ব || Abstract algebra || দল তত্ত্ব || ক্রম তত্ত্ব |} Monoids • Rings • ফীল্ড • রৈখিক বীজগণিত • বীজগাণিতিক জ্যামিতি • সার্বজনীন জ্যামিতি স্থান স্থান নিয়ে গবেষণা মানব মনে গণিতের বীজ বপন করেছিল। {| style="border:1px solid #999; text-align:center; margin: auto;" cellspacing="15" | 96px || 96px || 96px || 96px || 96px |- |জ্যামিতি || ত্রিকোণমিতি || সমাকলন জ্যামিতি || টপোগণিত || ফ্র্যাক্টাল জ্যামিতি |} বীজগাণিতিক জ্যামিতি • স্থানাংক পদ্ধতি • অন্তরক টপোগণিত • বীজগাণীতিক টপোগণিত • রৈখিক বীজগণিত • গুচ্ছবিন্যাসতাত্ত্বিক জ্যামিতি • বহুধা পরিবর্তন গাণিতিক ফাংশন এবং সংখ্যার মানসমূহের পরিবর্তনের প্রকাশ। {| style="border:1px solid #999; text-align:center; margin: auto;" cellspacing="20" | 96px || 96px |||| 96px || 96px || 96px |- | ক্যালকুলাস || ভেক্টর ক্যালকুলাস|| ব্যবকলনীয় সমীকরণ || গতিশীল সিস্টেম || বিশৃঙ্খলা তত্ত্ব || জটিল-সাংখ্যিক বিশ্লেষণ |} গাণিতিক বিশ্লেষণ • বাস্তব বিশ্লেষণ • জটিল বিশ্লেষণ • ফাংশনাল এনালিসিস • বিশেষ ফাংশন • পরিমাপন তত্ত্ব • ফুরিয়ার বিশ্লেষণ • পরিবর্তনশীল ক্যালকুলাস ভিত্তি এবং পদ্ধতি গণিতের স্বভাব ও ধর্ম বুঝার জন্য সহায়ক। {| style="border:1px solid #999; text-align:center; margin: auto;" cellspacing="15" ||| 128px || 96px |- | গাণিতিক যুক্তি || সেট তত্ত্ব || ক্যাটাগরি তত্ত্ব || |} গণিতের ভিত্তি • গণিতের দর্শন • প্রাতিষ্ঠানিকতা • কনস্টাক্টিভিজম • প্রমাণ তত্ত্ব • মডেল তত্ত্ব • রিভার্স গণিত বিচ্ছিন্ন গণিত বিচ্ছিন্ন গণিত {| style="border:1px solid #999; text-align:center; margin: auto;" cellspacing="15" ||| || 96px || 96px |- | কম্বিনেটরিক্স ||গণনার তত্ত্ব || ক্রিপ্টোগ্রাফি || লেখ তত্ত্ব |} কম্পিউটিবিলিটি তত্ত্ব • কম্পিটেশনাল কমপ্লেক্স থিওরি • উপাত্ত তত্ত্ব ফলিত গণিত ফলিত গণিত গণিতের সাহায্যে বাস্তব-বিশ্বের বিভিন্ন সমস্যা সমাধান নির্দেশ করে। • বলবিদ্যা • গাণিতিক অর্থনীতি • গাণিতিক জীববিজ্ঞান • ক্রিপটোগ্রাফি • অপারেশনস রিসার্চ পেশা হিসাবে গণিত ফিল্ডস পদক হচ্ছে গণিতের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার যেটি ১৯৩৬ সালে যাত্রা শুরু করে, বর্তমানে প্রতি চার বছর পরপর এই পুরস্কার দেওয়া হয়। এই পুরষ্কারটিকে গণিতে নোবেল পুরষ্কারের সমতুল্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তেইশটি উন্মুক্ত সমস্যার একটি বিখ্যাত তালিকা ১৯০০ সালে জার্মান গণিতবিদ ডাভিড হিলবের্ট তৈরি করেন যেটাকে বলা হয় "Hilbert's problems". এই তালিকাটি গণিতবিদদের মধ্যে অনেক বড় আলোড়ন তৈরি করে। এই সমস্যা গুলোর মধ্যে নয়টি সমস্যার সমাধান করা হয়েছে। সাতটি গুরুত্বর্পূণ সমস্যার একটি নতুন তালিকা "Millennium Prize Problems" নামে ২০০০ সালে প্রকাশিত হয়। এর প্রত্যেকটি সমস্যার সমাধানের জন্য এক মিলিওন ইউএস ডলার পুরস্কার ঘোষণা করা হয়। গুরুত্বপূর্ণ উপপাদ্য দেখুন উপপাদ্যের তালিকা পীথাগোরাসের উপপাদ্য • ফার্মির ভাগশেষ উপপাদ্য • গোডেলের অসম্পূর্ণতার তত্ত্ব • পাটীগণিতের মৌলিক উপপাদ্য • বীজণিতের মৌলিক উপপাদ্য • ক্যালকুলাসের মৌলিক উপপাদ্য • ক্যান্টরের কর্ণ-বৃদ্ধি • চার রঙ উপপাদ্য • যোরনের লেমা • অয়লারের অভেদ • গাউস-বনেট তত্ত্ব • কোয়াড্রাটিক রিসিপ্রোসিটি • রিম্যান-রখ তত্ত্ব। গুরুত্বপূর্ণ অনুমান বেশ কিছু গাণিতিক সমস্যা আছে, যা আজও সমাধান হয়নি। গোল্ডবাখ অনুমান • দ্বৈত মৌলিক অনুমান • রিম্যান প্রকল্প • কোলাজ অনুমান • P=NP? • open হিলবার্টের সমস্যাগুচ্ছ। আরও দেখুন গণিতের ইতিহাস • গণিতের ইতিহাসের তারিখ • গণিতবিদ তালিকা • ফিল্ডস্ মেডাল • অ্যাবেল পুরস্কার • Millennium Prize Problems (Clay Math Prize) • ইন্টারনেশনাল ম্যাথেম্যাটিক্যাল ইউনিয়ন • গণিতের প্রতিযোগিতাসমূহ • Lateral thinking • গাণিতিক শিক্ষা • গাণিতিক যোগ্যতা এবং লৈঙ্গিক ইস্যুসমূহ তথ্যসূত্র গ্রন্থসূত্র Benson, Donald C., The Moment of Proof: Mathematical Epiphanies, Oxford University Press, USA; New Ed edition (December 14, 2000). . Boyer, Carl B., A History of Mathematics, Wiley; 2 edition (March 6, 1991). . — A concise history of mathematics from the Concept of Number to contemporary Mathematics. Courant, R. and H. Robbins, What Is Mathematics? : An Elementary Approach to Ideas and Methods, Oxford University Press, USA; 2 edition (July 18, 1996). . Davis, Philip J. and Hersh, Reuben, The Mathematical Experience. Mariner Books; Reprint edition (January 14, 1999). . — A gentle introduction to the world of mathematics. Eves, Howard, An Introduction to the History of Mathematics, Sixth Edition, Saunders, 1990, . Gullberg, Jan, Mathematics — From the Birth of Numbers. W. W. Norton & Company; 1st edition (October 1997). . — An encyclopedic overview of mathematics presented in clear, simple language. Hazewinkel, Michiel (ed.), Encyclopaedia of Mathematics. Kluwer Academic Publishers 2000. — A translated and expanded version of a Soviet mathematics encyclopedia, in ten (expensive) volumes, the most complete and authoritative work available. Also in paperback and on CD-ROM, and online. Jourdain, Philip E. B., The Nature of Mathematics, in The World of Mathematics, James R. Newman, editor, Dover Publications, 2003, . Kline, Morris, Mathematical Thought from Ancient to Modern Times, Oxford University Press, USA; Paperback edition (March 1, 1990). . Oxford English Dictionary, second edition, ed. John Simpson and Edmund Weiner, Clarendon Press, 1989, . The Oxford Dictionary of English Etymology, 1983 reprint. . Pappas, Theoni, The Joy Of Mathematics, Wide World Publishing; Revised edition (June 1989). . JSTOR. Peterson, Ivars, Mathematical Tourist, New and Updated Snapshots of Modern Mathematics, Owl Books, 2001, . বহিঃসংযোগ Free Mathematics books Free Mathematics books collection. Applications of High School Algebra Encyclopaedia of Mathematics online encyclopadia from Springer, Graduate-level reference work with over 8,000 entries, illuminating nearly 50,000 notions in mathematics. HyperMath site at Georgia State University FreeScience Library The mathematics section of FreeScience library Rusin, Dave: The Mathematical Atlas. A guided tour through the various branches of modern mathematics. (Can also be found here.) Polyanin, Andrei: EqWorld: The World of Mathematical Equations. An online resource focusing on algebraic, ordinary differential, partial differential (mathematical physics), integral, and other mathematical equations. Cain, George: Online Mathematics Textbooks available free online. Tricki, Wiki-style site that is intended to develop into a large store of useful mathematical problem-solving techniques. Mathematical Structures, list information about classes of mathematical structures. Math & Logic: The history of formal mathematical, logical, linguistic and methodological ideas. In The Dictionary of the History of Ideas. Mathematician Biographies. The MacTutor History of Mathematics archive Extensive history and quotes from all famous mathematicians. Metamath. A site and a language, that formalize mathematics from its foundations. Nrich, a prize-winning site for students from age five from Cambridge University Open Problem Garden , a wiki of open problems in mathematics Planet Math. An online mathematics encyclopedia under construction, focusing on modern mathematics. Uses the Attribution-ShareAlike license, allowing article exchange with Wikipedia. Uses TeX markup. Some mathematics applets, at MIT Weisstein, Eric et al.: MathWorld: World of Mathematics. An online encyclopedia of mathematics. Patrick Jones' Video Tutorials on Mathematics বিষয়শ্রেণী:গণিত
গণিত
ডাভিড হিলবের্ট ( ডাভ়িট্‌ হিল্‌বেয়াট্‌, জানুয়ারি ২৩, ১৮৬২ - ফেব্রুয়ারি ১৪, ১৯৪৩) একজন জার্মান গণিতবিদ এবং ১৯শে ও ২০শ শতকের প্রথমভাগের সবথেকে প্রভাবশালী গণিতবিদদের অন্যতম। হিলবের্ট গণিতের অনেক শাখায় প্রচুর পরিমাণে মৌলিক ধারণার অবতারণা করেছেন এবং সেগুলোর উন্নতি করেছেন, যেমন ইনভ্যারিয়্যান্ট থিওরি, ক্যালকুলাস অফ ভ্যারিয়েশন, কম্যুটেটিভ অ্যালজেব্রা, অ্যালজেব্রিক নাম্বার থিওরি, জ্যামিতির ভিত্তি, স্পেক্ট্রাল থিওরি অফ অপারেটরস এবং ইন্টিগ্রাল ক্যালকুলাসে এর প্রয়োগ, গাণিতিক পদার্থবিদ্যা এবং গণিতের ভিত্তিস্থাপন (বিশেষত প্রমাণ তত্ত্ব)। হিলবের্ট জর্জ ক্যান্টরের সেট থিওরি এবং ট্রান্সফাইনাইট নাম্বারসের তত্ত্বকে গ্রহণ করেছিলেন এবং তার স্বপক্ষে মতদান করেছিলেন। ১৯০০ সালে, তিনি সমস্যার সংকলন প্রস্তুত করেন যা ২০শ শতকের গাণিতিক গবেষণায় প্রভূত সাহায্য করেছিল। হিলবের্ট এবং তাঁর ছাত্ররা আধুনিক গাণিতিক পদার্থবিজ্ঞানে গুরুত্বপূর্ণ উন্নতিসাধন করে এবং রিগর প্রতিষ্ঠা করে খুব গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন। হিলবের্ট প্রমাণ তত্ত্ব এবং গাণিতিক যুক্তিবিজ্ঞানের অন্যতম একজন প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে পরিচিত। টীকা তথ্যসূত্র বিষয়শ্রেণী:১৮৬২-এ জন্ম বিষয়শ্রেণী:১৯৪৩-এ মৃত্যু বিষয়শ্রেণী:জার্মান গণিতবিদ বিষয়শ্রেণী:জ্যামিতিবিদ
ডাভিড হিলবের্ট
জ্যামিতি গণিতের একটি শাখা যেখানে আকার ও আকৃতি এবং এতদসম্পর্কিত বিভিন্ন আঙ্গিকের পারস্পরিক সম্পর্ক নিয়ে গবেষণা করা হয়। জ্যামিতিকে স্থান বা জগতের বিজ্ঞান হিসেবে গণ্য করা যায়। পাটিগণিতে যেমন গণনা সংক্রান্ত আমাদের বিভিন্ন অভিজ্ঞতা নিয়ে আলোচনা করা হয়, তেমনি জ্যামিতিতে স্থান বা জগৎ নিয়ে আমাদের অভিজ্ঞতার বর্ণনা ও ব্যাখ্যা দেয়া হয়। প্রাথমিক জ্যামিতিকে কাজে লাগিয়ে দ্বি-মাত্রিক বিভিন্ন আকারের ক্ষেত্রফল ও পরিসীমা এবং ত্রিমাত্রিক বস্তুসমূহের পৃষ্ঠতলের ক্ষেত্রফল ও আয়তন নির্ণয় করা সম্ভব। জ্যামিতিক বিশ্লেষণের পদ্ধতি জ্যামিতিতে কতগুলি সরল ধারণা ব্যবহার করে যুক্তিভিত্তিক জটিলতর কাঠামো গঠন করা হয়। এই সরল ধারণাগুলিকে মোটামুটি তিনটি বড় শ্রেণীতে ভাগ করা সম্ভব - অসংজ্ঞায়িত পদসমূহ, সংজ্ঞায়িত পদসমূহ এবং স্বতঃসিদ্ধসমূহ। অসংজ্ঞায়িত পদসমূহ জ্যামিতির কিছু কেন্দ্রীয় ধারণার কোন সরল সংজ্ঞা নেই। এই অসংজ্ঞায়িত ধারণাগুলির মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত হল বিন্দু, রেখা ও তলের ধারণা। এই মৌলিক ধারণাগুলি আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে উদ্ভূত। একটি বস্তু কোথায়? - এই প্রশ্নের উত্তরে আমাদেরকে একটি নির্দিষ্ট, স্থির অবস্থানের কথা চিন্তা করতে হয়। "বিন্দু" পদটি দিয়ে আমাদের এই স্বজ্ঞাভিত্তিক (intuitive) স্থির, নির্দিষ্ট অবস্থানের ধারণাকেই নির্দেশ করা হয়। অনেক ভৌত বস্তুই বিন্দুর ধারণা নির্দশ করে। যেমন কোন ব্লক আকৃতির বস্তুর কোনা, পেন্সিলের ডগা, কিংবা কাগজের উপর ফুটকি। এই জিনিসগুলিকে বিন্দু নামক মানসিক, বিমূর্ত ধারণাটির বাস্তব, মূর্ত প্রতিরূপ বা মডেল হিসেবে গণ্য করা হয়। একইভাবে একটি টানটান সুতা, টেবিলের ধার, পতাকাবাহী দণ্ড, ইত্যাদি পরপর সাজানো অনেকগুলি বিন্দুকে নির্দেশ করে। যদি কল্পনা করা যায় যে এই বিন্দুসারি দুই দিকে অসীম পর্যন্ত বিস্তৃত, তবে আমরা যে মানসিক ধারণাতে উপনীত হই, জ্যামিতিতে তার নাম দেয়া হয়েছে "রেখা"। আর "তল" পদটি কোন চ্যাপ্টা পৃষ্ঠ যেমন মেঝে, টেবিলের উপরটা, কিংবা ব্ল্যাকবোর্ড ইত্যাদি ভৌত বস্তু দিয়ে নির্দেশ করা যায়, কিন্তু আমাদেরকে কল্পনা করে নিতে হবে যে এটি চারিদিকে অসীম পর্যন্ত সম্প্রসারিত, অর্থাৎ রেখার যেমন কোন শেষবিন্দু নেই, ঠিক তেমনি তলের কোন ধার নেই। জ্যামিতির অন্যান্য অসংজ্ঞায়িত পদগুলি বিন্দু, রেখা ও তলের মধ্যে সম্পর্কের বর্ণনা দেয়। যেমন - "একটি রেখার উপর অবস্থিত একটি বিন্দু" বাক্যাংশটি একটি অসংজ্ঞায়িত সম্পর্ক। অর্থাৎ এটিকে আরও কোন সরলতর ধারণার সাহায্য নিয়ে সংজ্ঞায়িত করা যায় না। সংজ্ঞায়িত পদসমূহ অসংজ্ঞায়িত পদগুলিকে একত্র করে অন্যান্য পদের সংজ্ঞা দেয়া সম্ভব, যেগুলিকে বলা হয় সংজ্ঞায়িত পদ। যেমন অসমরেখ বিন্দু বলতে সেইসব বিন্দুকে বোঝায় যারা একই রেখার উপর অবস্থিত নয়। একটি রেখাংশ বলতে বোঝায় কোন দুইটি নির্দিষ্ট বিন্দু ও এদের মধ্যবর্তী সমস্ত বিন্দু নিয়ে গঠিত কোন রেখার অংশ। আবার রশ্মি বলতে বোঝায় একটি আংশিক রেখাকে বোঝায় যার একটিমাত্র শেষবিন্দু আছে এবং বাকি সমস্ত বিন্দু ঐ শেষবিন্দু থেকে কোন এক দিকে অসীম পর্যন্ত প্রসারিত। সংজ্ঞায়িত পদগুলিকে একে অপরের সাথে এবং অসংজ্ঞায়িত পদের সাথে একত্র করে আরও অনেক পদের সংজ্ঞা দেয়া যায়। যেমন - কোণ বলতে দুইটি রশ্মিকে বোঝায় যাদের একটি সাধারণ শেষবিন্দু আছে। একইভাবে ত্রিভুজ ধারণাটিকে তিনটি অসমরেখ বিন্দু এবং এদের মধ্যে অবস্থানকারী রেখাংশের মাধ্যমে সংজ্ঞায়িত করা যায়। স্বতঃসিদ্ধসমূহ স্বীকার্য বা স্বতঃসিদ্ধগুলি হচ্ছে অপ্রমাণিত কিন্তু সার্বজনীনভাবে স্বীকৃত কিছু অনুমান, যেমন - "দুইটি ভিন্ন বিন্দুর মধ্য দিয়ে একটি এবং কেবলমাত্র একটি রেখা গমন করতে পারে"। যে ব্যবস্থা বা সংশ্রয়ে বিন্দু, রেখা ও তল সম্পর্কিত কতগুলি বিরোধিতাহীন স্বতঃসিদ্ধ প্রস্তাব করা হয় এবং এই স্বতঃসিদ্ধগুলি থেকে বিভিন্ন উপপাদ্য প্রমাণ করা হয়, সেই সংশ্রয়কে একটি জ্যামিতিক ব্যবস্থা (বা সংক্ষেপে জ্যামিতি) বলা হয়। স্বতঃসিদ্ধসমূহের বিভিন্ন সেট ব্যবহার সম্পূর্ণ ভিন্ন ভিন্ন জ্যামিতিক ব্যবস্থায় উপনীত হওয়া সম্ভব। যদি ভৌত স্থান বা জগতের অভিজ্ঞতার সাথে স্বতঃসিদ্ধগুলির মিল থাকে, তবে যৌক্তিকভাবে আশা করা যায় যে ঐ স্বতঃসিদ্ধগুলি ব্যবহার করে প্রাপ্ত সিদ্ধান্তগুলিও ভৌত জগতের অভিজ্ঞতার সাথে মিলে যাবে। তবে যেহেতু যেকোন স্বতঃসিদ্ধের সেটই খণ্ডিত, অসম্পূর্ণ অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে পছন্দ করা হয়, সুতরাং তাদের সিদ্ধান্তগুলিও বাস্তব জগতের সাথে পুরোপুরি মিলে যাবে না। তাই কিছু কিছু জ্যামিতিক ব্যবস্থা বাস্তব জগতে সম্পূর্ণ প্রয়োগ না-ও করা যেতে পারে। উপপাদ্যসমূহ উপপাদ্যগুলি স্বতঃসিদ্ধগুলি থেকে যুক্তিভিত্তিক আরোহী পদ্ধতিতে বের করা হয়। আর এই আরোহী পদ্ধতিকে বলা হয় উপপাদ্যটির প্রমাণ। কোন প্রমাণের প্রতিটি ধাপকে হয় কোন স্বতঃসিদ্ধ অথবা কোন পূর্ব-প্রমাণিত উপপাদ্য দিয়ে সমর্থিত হতে হয়। উদাহরণস্বরূপ, একটি উপপাদ্য বলে যে, যদি একটি রেখা কোন সমান্তরাল রেখাজোড়ের যেকোন একটির সাথে সমান্তরাল হয়, তবে সেটি রেখাজোড়ের অপর রেখাটির সাথেও সমান্তরাল। এখানে সমান্তরাল রেখা বলতে সেই সব রেখাকে বোঝায় যারা একে অপরের থেকে তাদের গোটা দৈর্ঘ্য বরাবর সমান দূরত্ব্ব বজায় রাখে। আমরা যখন জ্যামিতিতে কোন উপপাদ্য প্রমাণ করি, তখন আমরা কতগুলি অনুমানের একটি সেট থেকে একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হই। ইউক্লিডীয় জ্যামিতি বিভিন্ন জ্যামিতিক ব্যবস্থার মধ্যে ইউক্লিডীয় জ্যামিতির সাথেই আমরা বেশি পরিচিত। ইউক্লিডীয় জ্যামিতি আমাদের চারপাশের প্রাত্যহিক জগতের বেশির ভাগ অভিজ্ঞতা ব্যাখ্যা করতে পারে। প্রাচীন গ্রিক গণিতবিদ ইউক্লিডের নামে এই জ্যামিতিক ব্যবস্থার নামকরণ করা হয়েছে, কেননা তিনিই প্রথম এই জ্যামিতিক ব্যবস্থার বিবরণ দেন। যদিও ইউক্লিডীয় জ্যামিতির স্বতঃসিদ্ধগুলির সাথে বাস্তব জগতের অনেক মিল পাওয়া যায়, প্রমাণ পাওয়া গেছে যে এগুলি পুরোপুরি নিখুঁত নয়। দ্বি-মাত্রিক ইউক্লিডীয় জ্যামিতিকে অনেকসময় সমতলীয় জ্যামিতি এবং ত্রি-মাত্রিক ইউক্লিডীয় জ্যামিতিকে অনেক সময় ঘন জ্যামিতি নামে ডাকা হয়। সমতলীয় জ্যামিতিতে কেবল সেইসব জ্যামিতিক বস্তু নিয়ে আলোচনা করা হয় যেগুলি কেবল একটি তলের উপর অবস্থিত। এগুলির দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ - এই দুইটি মাত্রা আছে। অন্যদিকে ঘন জ্যামিতিতে সেইসব জ্যামিতিক বস্তু নিয়ে আলোচনা করা হয় যেগুলির তিনটি মাত্রা আছে: দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতা। ত্রিমাত্রিক ফাঁপা কোণককে একটি তল দিয়ে কাটলে যে দ্বিমাত্রিক রেখা পাওয়া যায়, তাকে কনিক ছেদ বলে; এটি জ্যামিতির একটি অন্যতম আলোচ্য বিষয়। ইউক্লিডের স্বতঃসিদ্ধসমূহ ইউক্লিড খ্রিস্টপূর্ব ৩য় শতকের জ্যামিতিবিদ ছিলেন। তিনি বুঝতে পারেন যে তার সময়কার বিভিন্ন জ্যামিতিক উপপাদ্যগুলিকে খুবই অল্প সংখ্যক স্বতঃসিদ্ধের সাহায্যে ব্যাখ্যা করা সম্ভব। তিনি নির্ণয় করেন যে নিচের মাত্র পাঁচটি স্বতঃসিদ্ধ থেকে সমস্ত উপপাদ্যতে উপনীত হওয়া যায়: যেকোন দুইটি প্রদত্ত বিন্দুর মধ্য দিয়ে একটি সরলরেখা আঁকা সম্ভব। কোন সরলরেখাকে অসীম পর্যন্ত প্রসারিত করা যায় কিংবা যেকোন বিন্দুতে সীমাবদ্ধ করা যায়। যেকোন প্রদত্ত বিন্দুকে কেন্দ্র ধরে ও যেকোন প্রদত্ত ব্যাসার্ধ (বৃত্তের যেকোন বিন্দু থেকে কেন্দ্রের দূরত্ব) দিয়ে একটি বৃত্ত আঁকা সম্ভব। সব সমকোণ সবসময় সমান। একটি প্রদত্ত সরলরেখার বহিঃস্থ একটি প্রদত্ত বিন্দু দিয়ে প্রথম সরলরেখার সমান্তরাল কেবলমাত্র একটি সরলরেখা আঁকা সম্ভব। উপরের পাঁচটি স্বতঃসিদ্ধকে অনান্য সংজ্ঞায়িত পদের সাথে বিভিন্নভাবে সমন্বিত করে দ্বিমাত্রিক ও ত্রিমাত্রিক জ্যামিতিক বস্তুর ধর্মগুলি (যেমন ক্ষেত্রফল, পরিধি, ইত্যদি) প্রমাণ করা সম্ভব। এই ধর্মগুলি আবার আরও জটিল জ্যামিতিক উপপাদ্যের প্রমাণে ব্যবহার করা যায়। দ্বিমাত্রিক ইউক্লিডীয় আকৃতি দ্বিমাত্রিক জ্যামিতিতে প্রায়শই দেখা যায় এমন জ্যামিতিক আকৃতির মধ্যে আছে বৃত্ত, বহুভুজ, ত্রিভুজ, এবং চতুর্ভুজসমূহ। ত্রিভুজ ও চতুর্ভুজ দুইটি বিশেষ ধরনের বহুভুজ। বৃত্ত বৃত্ত একটি সমতলীয় বক্ররেখা যার প্রতিটি বিন্দু একই সমতলের উপর অবস্থিত একটি নিদিষ্ট বিন্দু থেকে সমদূরবর্তী, এই নির্দিষ্ট বিন্দুকে বৃত্তের কেন্দ্র বলে।তিনটি অসমরেখ বিন্দুর মধ্য দিয়ে কেবলমাত্র একটি বৃত্ত আঁকা সম্ভব। অনেকসময় বৃত্ত বলতে শুধু বক্ররেখাটিকে না বুঝিয়ে রেখাটি দ্বারা সম্পূর্ণ ক্ষেত্রকেও বোঝানো হয়। যেসব বৃত্তের একটি সাধারণ কেন্দ্র আছে তাদেরকে সমকেন্দ্রিক বৃত্ত বলা হয়। যেসব কোণের শীর্ষবিন্দু বৃত্তের কেন্দ্র এবং দুই বাহু বৃত্তের দুইটি ব্যাসার্ধ, সেগুলিকে বৃত্তের কেন্দ্রীয় কোণ বলে। বৃত্তের পরিধিকে ৩৬০টি সমান ভাগ বা ডিগ্রিতে ভাগ করা হয় এবং কোন কেন্দ্রীয় কোণের ডিগ্রি পরিমাপ ঐ কোণটি বৃত্ত থেকে যে চাপ ছেদ করে তাতে অন্তর্গত ডিগ্রির সংখ্যার সমান। বৃত্তের পরিধি (C) ও ব্যাসের (d) গুণফলকে ৪ দিয়ে ভাগ করলে এর ক্ষেত্রফল A পাওয়া যায় অর্থাৎ । পরিধি ও ব্যাসের অনুপাতের আসন্ন মান ৩.১৪১৫৯২৬৫। দশমিকের পরে অসীমসংখ্যক অ-পর্যায়বৃত্ত অঙ্কবিশিষ্ট এই ধ্রুবকটিকে পাই নামে ডাকা হয়। বৃত্তের ক্ষেত্রফলকে আকারেও লেখা যায়, যেখানে r হল ব্যাসার্ধ। একইভাবে, বৃত্তের পরিধি হল ব্যাস ও পাই-এর গুণফল । বহুভুজ সরলরেখা দ্বারা আবদ্ধ সমতল যেকোন চিত্রকে বহুভুজ বলা হয়। যদি বহুভুজের সবগুলি বাহু ও কোণ সমান হয়, তবে সেটিকে সুষম বহুভুজ বলে। সুষম বহুভুজের কেন্দ্র থেকে যেকোন বাহুর দূরত্বকে apothem বলে। কোন সুষম বহুভুজের ক্ষেত্রফল হল এর apothem (a) ও পরিসীমার (p) গুণফলের অর্ধেক, অর্থাৎ । ত্রিভুজ ত্রিভুজ হল সমতলের উপর অঙ্কিত একটি চিত্র যা তিনটী সরলরেখা দ্বারা সীমাবদ্ধ। যদি ত্রিভুজের তিনটি বাহুই অসম হয়, তবে একে বিষমবাহু ত্রিভুজ বলে। আর কেবল দুই বাহু সমান হলে তাকে সমদ্বিবাহু ত্রিভুজ এবং তিনটি বাহুই সমান হলে তাকে সমবাহু ত্রিভুজ বলা হয়। সমদ্বিবাহু ত্রিভুজে সমান বাহুদ্বয়ের বিপরীত কোণগুলি সমান। আর সমবাহু ত্রিভুজের সবগুলি কোণ সমান। যে ত্রিভুজের একটি কোন সমকোণ তাকে সমকোণী ত্রিভুজ বলে। সমকোণী ত্রিভুজের সমকোণের বিপরীত বাহুর নাম অতিভুজ। পিথাগোরাসের বিখ্যাত উপপাদ্য অনুযায়ী সমকোণী ত্রিভুজের অতিভুজের বর্গ এর সমকোণ-সংলগ্ন দুই বাহুর বর্গের যোগফলের সমান। অর্থাৎ ত্রিভুজের ভিতরের কোনগুলিকে অন্তঃস্থ কোণ বলে, আর ত্রিভুজের বাহুগুলিকে বাড়িয়ে দিয়ে যে কোণগুলি পাওয়া যায়, তাদেরকে হলে বহিঃস্থ কোণ। ত্রিভুজের তিনটি অন্তঃস্থ কোণের সমষ্টি ১৮০°। এছাড়াও, যেকোন বহিঃস্থ এর অন্তঃস্থ বিপরীত কোণদ্বয়ের সমষ্টির সমান। ত্রিভুজের কোন শীর্ষবিন্দু থেকে বিপরীত বাহুর মধ্যবিন্দু পর্যন্ত আঁকা রেখাকে বলা হয় ত্রিভুজটির একটি মধ্যমা। ত্রিভুজের তিনটি মধ্যমা একই বিন্দুতে ছেদ করে এবং এটি প্রতিটি মধ্যমার শীর্ষবিন্দু থেকে দুই-তৃতীয়াংশ দূরত্বে অবস্থিত। ত্রিভুজের কোন শীর্ষবিন্দু থেকে বিপরীত বাহুর উপর অঙ্কিত লম্বকে ঐ ত্রিভুজের উচ্চতা বলে। দুইটি ত্রিভুজকে সর্বসম বলা হয় যদি এগুলি নিচের তিনটি শর্তের সেটের যেকোনটি পূরণ করে: (১) একটি ত্রিভুজের এক বাহু ও দুইটি কোণ অন্যটির অনুরূপ বাহু ও দুইটি কোনণর সমান; (২) কোন একটি ত্রিভুজের দুই বাহু এবং এদের অন্তর্ভুক্ত কোণ অন্য ত্রিভুজটির দুই বাহু ও অন্তর্ভুক্ত কোণের সমান; অথবা (৩) একটি ত্রিভুজের তিনটি বাহু অপর ত্রিভুজের তিন বাহুর সমান। যদি একই সমতলে অবস্থিত দুইটি ত্রিভুজকে নিখুঁতভাবে একটির উপর আরেকটিকে বসিয়ে দেয়া যায়, তবে তারা সরাসরি সর্বসম। আর যদি বসানোর আগে একটিকে উল্টে নিতে হয়, তবে ত্রিভুজ দুটি বিপরীতভাবে সর্বসম। যদি দুইটি ত্রিভুজের একটির সবগুলি কোণ অন্যটির সবগুলি কোণের সমান হয়, তবে তাদেরকে সদৃশ ত্রিভুজ বলা হয় এবং এদের অনুরূপ বাহুগুলি সমানুপাতিক হয়। ত্রিভুজের ক্ষেত্রফল এর ভূমি (b) ও এই ভূমির উপর অঙ্কিত উচ্চতার (h) গুণফলের অর্ধেক ()। যেকোন বাহুকেই ভূমি ধরা যায়। যদি ত্রিভুজটি সমবাহু হয়, তবে এর ক্ষেত্রফল , যেখানে a যেকোন বাহুর দৈর্ঘ্য। যদি কোন ত্রিভুজের তিনটি বাহু a, b এবং c হয়, তবে গ্রিক গণিতবিদ আর্কিমিডিসের দেয়া সূত্র অনুযায়ী এর ক্ষেত্রফল , যেখানে s ত্রিভুজের পরিসীমার অর্ধেক (s = ½ (a + b + c)। চতুর্ভুজ চতুর্ভুজ হল চারটি সরলরেখা দ্বারা আবদ্ধ সমতল ক্ষেত্র। যেসব বিভিন্ন চতুর্ভুজের সাথে আমরা অতিপরিচিত তাদের মধ্যে আছে ট্রাপিজিয়াম, যার দুইটি সমান্তরাল কিন্তু অসমান। সামান্তরিকের বিপরীত বাহুগুলি সমান ও সমান্তরাল। রম্বস এক ধরনের সামান্তরিক যার সবগুলি বাহু সমান। আয়তক্ষেত্র এক ধরনের সামান্তরিক যার কোণগুলি সমকোণ। বর্গক্ষেত্র হল সমান বাহুবিশিষ্ট আয়তক্ষেত্র। সামান্তরিকের কর্ণদ্বয় পরস্পরকে সমদ্বিখণ্ডিত করে। আয়োতক্ষেত্রের কর্ণদ্বয় সমান। যেসব চতুর্ভুজের বাহুগুলি অসমান ও অসমান্তরাল, তাদেরকে বিষম চতুর্ভুজ বলে। ট্রাপিজিয়ামের ক্ষেত্রফল এর সমান্তরাল বাহুদ্বয়ের সমষ্টি ও উচ্চতার গুণফলের অর্ধেক: A = [(b1 + b2)/2]h। সামান্তরিকের ক্ষেত্রফল এর ভূমি ও উচ্চতার গুণফলের সমান: A = bh। বিষম চতুর্ভুজের ক্ষেত্রফল গণনার জন্য চতুর্ভুজটিকে সাধারণত কর্ণের সাহায্যে দুইটি ত্রিভুজে ভাগ করে নেয়া হয় এবং তারপর ত্রিভুজ দুইটির ক্ষেত্রফল আলাদা করে বের করে যোগ করে সম্পূর্ণ চতুর্ভুজের ক্ষেত্রফল বের করা হয়। ত্রিমাত্রিক ইউক্লিডীয় আকৃতিসমূহ ত্রিমাত্রিক জ্যামিতিতে যে বস্তুগুলি প্রায়োই আলোচিত হয় তাদের মধ্যে আছে গোলক, বহুতলক, ত্রিশিরা বা প্রিজম, বেলন বা সিলিন্ডার, ও কোণক। বেলন আসলে প্রিজমেরই একটি বিশেষ রূপ; আর কোণক পিরামিডের বিশেষ রূপ। গোলক গোলক একটি তল যার সমস্ত বিন্দু কেন্দ্র নামের একটি বিন্দু থেকে সমদূরত্বে অবস্থিত। গোলককে একটি সমতল দিয়ে ছেদ করলে ছেদবিন্দুগুলি একটি বৃত্ত গঠন করে। তলটি গোলকের কেন্দ্র দিয়ে গেলে এরূপ বৃহত্তম বৃত্তটি পাওয়া যায়। পৃথিবীর বিষুবরেখা এরকম একটি বৃহত্তম বৃত্ত (যদি পৃথিবীকে একটি গোলক কল্পনা করি)। গোলকের পৃষ্ঠতলের ক্ষেত্রফল A = 4pr2, এবং আয়তন V = 4/3pr3 সমীকরণ দিয়ে পাওয়া যায়। বহুতলক সমতল পৃষ্ঠ দ্বারা আবদ্ধ যেকোন ঘনবস্তুকে বহুতলক বলে। যদি কোন বহুতলকের পৃষ্ঠগুলির প্রতিটি সর্বসম সুষম বহুভুজ হয়, তবে এটিকে সুষম বহুতলক বলা হয়। প্রমাণ করা হয়েছে যে কেবল পাঁচ রকমের বহুতলকের জন্য সুষম বহুতলক সম্ভব। এগুলি হল চতুস্তলক (চারটি তল), ঘনক (ছয়টি তল), অষ্টতলক (আটটি তল), দ্বাদশতলক (১২টি তল), এবং বিশতলক (২০টি তল)। প্রাচীন গ্রিক জ্যামিতিবিদেরা এই পাঁচটি বহুতলক সম্পর্কে জানতেন। সুষম কিংবা অসম, যেকোন বহুতলকের একটি বিশেষ ধর্ম হচ্ছে এর তলের সংখ্যা ও শীর্ষবিন্দুর সংখ্যা যোগ করে ২ বিয়োগ করলে এর ধারের সংখ্যা পাওয়া যায়। সাম্প্রতিককাল পর্যন্তও বহুতলকগুলির সাথে প্রকৃতির রহস্যময়তার সম্পর্ক আছে বলে ধারণা করা হত। ত্রিশিরা বা প্রিজম প্রিজম হচ্ছে এমন এক ধরনের বহুতলক যার দুইটি পৃষ্ঠ পরস্পর সমান্তরাল ও সর্বসম (এদেরকে ভূমি বলে) এবং যার অন্য সব পৃষ্ঠ সামান্তরিক। parallelepiped এক ধরনের প্রিজম যার ভূমিদ্বয় সামান্তরিক। একটি সমকোণী প্রিজমের তলগুলি আয়তাকার(ভূমিগুলি আয়তাকার হতেও পারে নাও হতে পারে)। প্রিজমের আয়তন এর যেকোন ভূমির ক্ষেত্রফল ও উচ্চতার গুণফল: V = bh. পিরামিড পিরামিড একটি বহুতলক যার ভূমি একটি বহুভুজ এবং পার্শ্বগুলি একই শীর্ষবিন্দুবিশিষ্ট ত্রিভুজ। যদি কোন পিরামিডের ভূমি সুষম বহুভুজ হয় এবং এর শীর্ষ ও ভূমির কেন্দ্রবিন্দুকে সংযোগকারী রেখা ভূমির উপর লম্ব হয়, তবে এটিকে সুষম সমকোণী পিরামিড বলে। পিরামিডের ক্ষেত্রফল এর ভূমির ক্ষেত্রফলের এক-তৃতীয়াংশ ও এর উচ্চতার গুণফলের সমান। বেলন বা সিলিন্ডার ও কোণক বেলন বা সিলিন্ডার হল বৃত্তাকার ভূমিবিশিষ্ট প্রিজম। এর আয়তনের সূত্রও তাই প্রিজমের মত ভূমির ক্ষেত্রফল ও উচ্চতার গুণফল দিয়ে বের করা হয়। যদি দুইটি ভূমির কেন্দ্রকে সংযোগকারী রেখা ভূমিদ্বয়ের উপর লম্ব হয়, তবে সেই সিলিন্ডারকে সমকোণী সিলিন্ডার বলা হয়। নতুবা একে তির্যক সিলিন্ডার বলে। কোণক (cone) হল বৃত্তাকার ভূমিবিশিষ্ট পিরামিড। পিরামিডের শীর্ষ ও ভূমির কেন্দ্রকে সংযোগকারী রেখা ভূমির উপর লম্ব হলে তাকে সমকোণী কোণক বলে। b ক্ষেত্রফলের ভূমি ও h উচ্চতার কোণকের আয়তনের সূত্র পিরামিডের অনুরূপ: V = €bh কনিক ছেদ কোণকের পৃষ্ঠতলকে সমতল একটি তল দিয়ে ছেদ করলে যে বক্ররেখা পাওয়া যায়, তাকে কনিক ছেদ বলে (উল্লেখ্য এখানে কোণক বলতে আসলে দুইটি সমকোণী বৃত্তভূমিক কোণকের একটিকে উল্টিয়ে দুই শীর্ষবিন্দু একত্রে স্থাপন করলে যে জ্যামিতিক চিত্রটি তৈরি হয়, তাকে বোঝাচ্ছে)। শীর্ষবিন্দুর দুইপাশের কোণকের যেকোন পৃষ্ঠকে nappe বলে। যদি কোণকের অক্ষ ও এর পৃষ্ঠের অন্তর্বর্তী কোণ A হয় এবং কোণকটিকে একটি তল A-এর চেয়ে বড় কোণে ছেদ করে, তবে ছেদরেখাটি হয় একটি বদ্ধ বক্ররেখা যার নাম উপবৃত্ত। যদি তলটি কোণককে অক্ষের সাথে লম্বভাবে ছেদ করে, তবে যে আবদ্ধ বক্ররেখাটি পাওয়া যায়, তার নাম বৃত্ত। বৃত্ত তাই উপবৃত্তের একটি বিশেষ রূপ। যদি তলটি অক্ষের সাথে A কোণের সমান কোণ করে ছেদ করে, অর্থাৎ কোণকের পৃষ্ঠতলের সমান্তরালে ছেদ করে, তবে যে উন্মুক্ত ও অসীমে বিস্তৃত বক্ররেখাটি ছেদরেখা হিসেবে পাওয়া যায়, তাকে পরাবৃত্ত বলে। আর যদি তলটি অক্ষের সমান্তরালে বা A কোণের চেয়ে ক্ষুদ্রতর কোণে ছেদ করে, তবে যে বক্ররেখাটি পাওয়া যায়, তাকে অধিবৃত্ত বলে। এইক্ষেত্রে কোণকটির উভয় nappe-ই ছিন্ন হয়, ফলে অধিবৃত্তের দুইটি শাখা থাকে, যাদের প্রতিটি অসীম পর্যন্ত প্রসারিত। যেহেতু কনিক ছেদগুলি দ্বিমাত্রিক বক্ররেখা, তাই এদের সংজ্ঞায় ত্রিমাত্রিক কোণকের উল্লেখ না করে অন্য উপায়ে সংজ্ঞা দেয়া হয়। দ্বিমাত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে কোণকীয় ছেদ হল সেই সমস্ত বিন্দুর চলনপথ একটি নির্দিষ্ট বিন্দু থেকে যেগুলির দূরত্ব এবং ঐ নির্দিষ্ট বন্দুর বহিঃস্থ একটি নির্দিষ্ট রেখা থেকে ঐ একই বিন্দুগুলির দূরত্ব একটি ধ্রুব অনুপাত বজায় রাখে। নির্দিষ্ট বিন্দুটিকে বলা হয় ফোকাস বা উপকেন্দ্র, এবং নির্দিষ্ট রেখাটিকে বলা হয় নিয়ামক বা দিগাক্ষ। ধ্রুব অনুপাতটিকে বলা হয় কনিক ছেদের উৎকেন্দ্রিকতা এবং একে e দিয়ে নির্দেশ করা হয়। যদি P একটি বিন্দু হয় এবং Q বিন্দুটি P থেকে দিগাক্ষরেখার উপর অঙ্কিত লম্বের পাদবিন্দু হয়, তবে P বিন্দুটির F ফোকাসবিশিষ্ট একটি কনিক ছেদের উপর অবস্থিত হওয়ার একমাত্র শর্ত হল [FP] = e[QP]। যখন e = ১ তখন কনিকটি একটি পরাবৃত্ত; যখন e > ১, তখন এটি অধিবৃত্ত; এবং যখন e < ১, এটি একটি উপবৃত্ত। কনিকের অনেক গাণিতিক বৈশিষ্ট্য গাণিতিক পদার্থবিজ্ঞানে কাজে আসে। উদাহরণস্বরূপ, কোন কনিকের আকারে নির্মিত দর্পণে আলো নির্দিষ্ট ধর্ম অনুযায়ী প্রতিফলিত হয়। বৃত্তাকার দর্পণের ফোকাস থেকে উৎসারিত রশ্মি প্রতিফলিত হয়ে আবার ফোকাসে ফিরে আসে। উপবৃত্তাকার দর্পণের দুইটি ফোকাসের যেকোন একটি থেকে উৎসারিত রশ্মি প্রতিফলনের পর অন্য ফোকাসটি দিয়ে গমন করে। পরাবৃত্তীয় দর্পণে ফোকাস থেকে উৎসারিত আলো প্রতিফলনের পর সমান্তরাল রেখায় গমন করে, এ কারণে স্পটলাইটে পরাবৃত্তীয় দর্পণ ব্যবহার করা হয়, যেন আলো চারপাশে বিক্ষিপ্ত না হয়। অধিবৃত্তের একটি ফোকাস থেকে উৎসারিত আলোকরশ্মি প্রতিফলনের পর এমনভাবে গমন করে যেন মনে হয় এগুলি অন্য ফোকাসটি থেকে উৎসারিত হচ্ছে। বিশ্লেষণী জ্যামিতি কিছু কিছু সাংখ্যিক ও বীজগাণিতিক সমীকরণ দিয়ে বিন্দু, রেখা এবং অন্যান্য জ্যামিতিক আকৃতি নির্দেশ করা যায়, এই উপলব্ধি থেকেই বিশ্লেষণী জ্যামিতির জন্ম। অক্ষ ও স্থানাঙ্ক ব্যবহার করে সমীকরণগুলির চিত্রলেখ অঙ্কনের মাধ্যমে বিন্দু, রেখা ও অন্যান্য আকৃতি নির্দেশ করা সম্ভব। যেমন, লম্বভাবে অবস্থিত দুইটি অক্ষ থেকে দূরত্ব নির্দেশ করে কোন একটি বিন্দুর অবস্থান চিহ্নিত করা সম্ভব। যদি কোনো বিন্দু x-অক্ষ থেকে ৫ একক দূরে এবং y-অক্ষ থেকে ৭ একক দূরে অবস্থিত হয়, তবে এটির অবস্থান x = 7, y = 5, এই সমীকরণ দুইটি দিয়ে নির্দেশ করা সম্ভব। একইভাবে, একটি সরলরেখাকে সবসময় ax + by + c = 0 আকারের একটি সমীকরণ দিয়ে নির্দেশ করা যায়। বৃত্ত, উপবৃত্ত, কোণীয় ছেদ ও অন্যান্য আকৃতির জন্য আরও জটিল সমীকরণ আছে। বিশ্লেষণী জ্যামিতিতে দুই ধরনের সমস্যা খুবই সাধারণ। প্রথম ধরনের সমস্যাতে কতগুলি বিন্দুর জ্যামিতিক বিবরণ দেয়া থাকে, এবং সেখান থেকে এই বিন্দুগুলিকে সিদ্ধ করে এমন বীজগাণিতিক সমীকরণ করতে হয়। দ্বিতীয় ধরনের সমস্যা এর বিপরীত: প্রদত্ত বীজগাণিতিক সমীকরণ থেকে এমন কোন বিন্দু সমাহার বের করতে হয় যেগুলি একটি জ্যামিতিক বিবৃতি মেনে চলে। উদাহরণস্বরূপ ৩ ব্যাসার্ধবিশিষ্ট একটি বৃত্ত যার কেন্দ্র x ও y অক্ষের ছেদবিন্দু তথা মূলবিন্দুতে অবস্থিত, সেটির সমস্ত বিন্দু সমীকরণ মেনে চলবে। এই ধরনের সমীকরণ ব্যবহার করে জ্যামিতিক অন্যান্য সমস্যা যেমন কোন কোণ বা রেখাংশের সমদ্বিখণ্ডক বের করা, বা কোন রেখার নির্দিষ্ট বিন্দুতে লম্ব আঁকা, তিনটি প্রদত্ত অসমরেখ বিন্দুর মধ্য দিয়ে বৃত্ত আঁকা, ইত্যাদি সম্পাদন করা যায়। একইভাবে তিনটি অক্ষ ব্যবহার করে ত্রিমাত্রিক জগতে বিন্দু, রেখা ও অন্যান্য চিত্র নির্দেশ করা সম্ভব। এক্ষেত্রে তৃতীয় অক্ষ বা z অক্ষটি পর দুইটি অক্ষের উপর লম্বভাবে অবস্থিত থাকে। গণিতের উন্নয়নে বিশ্লেষণী জ্যামিতি মূল্যবান ভূমিকা রাখে। এটি সংখ্যার সম্পর্ক তথা বিশ্লেষণী গণিতের সাথে জ্যামিতি তথা স্থানিক সম্পর্কের যোগসূত্র স্থাপন করে। বিশ্লেষণী জ্যামিতির কৌশলগুলি সংখ্যা ও বীজগাণিতিক রাশিমালার জ্যামিতিক উপস্থাপন সম্ভব করে। ফলে ক্যালকুলাস, ফাংশনের তত্ত্ব, ও উচ্চতর গণিতের অন্যান্য সমস্যা নতুন আলোকে দেখার সুযোগ হয়। বিশ্লেষণী জ্যামিতি ছাড়া অ-ইউক্লিডীয় জ্যামিতি ও তিনের অধিক মাত্রার জ্যামিতির আলোচনা সম্ভবপর হত না। অন্তরক জ্যামিতি জার্মান গণিতবিদ কার্ল ফ্রিড্‌রিশ গাউস ভূমি জরিপ ও প্রভূমিতি (geodesy) সংক্রান্ত ব্যাবহারিক সমস্যার সমাধান করতে গিয়ে অন্তরক জ্যামিতি শাখা শুরু করেন। এতে তিনি অন্তরক ক্যালকুলাস ব্যবহার করে বক্ররেখা ও বক্রতলসমূহের স্বকীয় বৈশিষ্ট্যগুলি চিহ্নিত করেন। উদাহরণস্বরূপ তিনি গাণিতিকভাবে দেখান যে একটি বেলনের স্বকীয় বক্রতা ও একটি সমতলের স্বকীয় বক্রতা একই, কেননা একটি ফাঁপা বেলনকে অক্ষ বরাবর কেটে চ্যাপ্টা করলে এটি একটি সমতলে পরিণত হয়, কিন্তু গোলকের ক্ষেত্রে রূপবিকার না করে এটি করা যায় না। অ-ইউক্লিডীয় জ্যামিতি ইউক্লিডের পঞ্চম স্বতঃসিদ্ধ বলে যে কোনো প্রদত্ত রেখার বহিঃস্থ একটি বিন্দু দিয়ে ঐ রেখার সমান্তরাল কেবল একটি রেখা আঁকা সম্ভব এবং এই সমান্তরাল রেখা কখনোই প্রদত্ত রেখাটিকে স্পর্শ করবে না, অসীম পর্যন্ত সমান্তরালে চলতে থাকবে। ১৯শ শতকের শুরুর দিকে জার্মান গণীতবিদ কার্ল ফ্রিড্‌রিশ গাউস, রুশ গণিতবিদ নিকলাই ইভানভিচ লোবাচেভ্‌স্কি এবং হাঙ্গেরীয় গণিতবিদ ইয়ানোশ বলিয়ই একে অপরের থেকে স্বাধীনভাবে দেখান যে এমন একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ জ্যামিতিক ব্যবস্থা গঠন করা সম্ভব যেখানে ইউক্লিডের এই পঞ্চম স্বতঃসিদ্ধটিকে অন্য একটি স্বতঃসিদ্ধ দিয়ে প্রতিস্থাপন করা সম্ভব যেটি বলে যে কোন প্রদত্ত রেখার বহিঃস্থ কোন বিন্দু দিয়ে রেখাটির সমান্তরাল অসীম সংখ্যক রেখা আঁকা সম্ভব। পরবর্তীতে ১৮৬০ সালে জার্মান গণিতবিদ গেয়র্গ ফ্রিড্‌রিশ বের্নহার্ট রিমান দেখান যে আরেকটি জ্যামিতিক ব্যবস্থা গঠন করা সম্ভব যেখানে এরকম কোনো সমান্তরাল রেখাই আঁকা সম্ভব নয়। উপরের দুই ধরনের অ-ইউক্লিডীয় জ্যামিতির বিস্তারিত বিবরণ বেশ জটিল, তবে দুটিকেই সহজ মডেলের মাধ্যমে দেখানো সম্ভব। বলিয়াই-লোবাচেভ্‌স্কি জ্যামিতিতে (যাকে অনেক সময় অধিবৃত্তীয় জ্যামিতিও বলা হয়) এমন একটি জ্যামিতিক ব্যবস্থা আলোচনা করা হয় যার সমস্ত বিন্দু একটি বৃত্তের মধ্যে সীমাবদ্ধ এবং যার সমস্ত সম্ভাব্য রেখা বৃত্তটির জ্যা। যেহেতু সংজ্ঞা অনুসারে দুইটি সমান্তরাল রেখাকে যতই প্রসারিত করা হোক না কেন, এর কখনোই মিলবে না, এবং অধিবৃত্তীয় জ্যামিতিতে যেহেতু রেখাগুলি বৃত্তের ধারের বাইরে প্রসারিত করা সম্ভব নয়, সে কারণে যেকোন রেখার সমান্তরাল অসীম সংখ্যক রেখা রেখাটির বহিঃস্থ বিন্দু দিয়ে আঁকা সম্ভব। একইভাবে রিমানীয় বা উপবৃত্তীয় অ-ইউক্লিডীয় জ্যামিতিতে জ্যামিতিক "বিশ্ব" বা "জগত" একটি বিশাল গোলকের পৃষ্ঠ যেখানে সব সরলরেখা একেকটি বৃহত্তম বৃত্ত। এই জ্যামিতিতে এক জোড়া সমান্তরাল রেখা আঁকা অসম্ভব। অপেক্ষাকৃত কম দূরত্বের জন্য, অর্থাৎ আমাদের প্রাত্যহিক অভিজ্ঞতার ক্ষেত্রে, ইউক্লিডীয় ও অ-ইউক্লিডীয় জ্যামিতির মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। তবে মহাজাগতিক দূরত্ব এবং আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের সমস্যা যেমন আপেক্ষিকতার সমস্যাগুলি সমাধানের জন্য ইউক্লিডীয় জ্যামিতির চেয়ে অ-ইউক্লিডীয় জ্যামিতি পর্যবেক্ষণকৃত ঘটনাবলির আরও সূক্ষ্ম ও সঠিক ব্যাখ্যা দিতে পারে। উদাহরণস্বরূপ: আলবার্ট আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতা তত্ত্ব বক্রতলের একটি রিমানীয় জ্যামিতির উপর ভিত্তি করে সম্পাদিত। অভিক্ষেপী জ্যামিতি বিভিন্ন জ্যামিতিক বস্তু ও এদের অভিক্ষেপের মধ্যে সম্পর্ক আলোচনা করতে গিয়ে ১৭শ শতকে জ্যামিতির আরেকটি শাখা শুরু হয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, কনিকগুলিকে অভিক্ষেপের মাধ্যমে একটি থেকে আরেকটিতে রূপান্তরিত করা যায়। কোন ফ্ল্যাশলাইটকে দেয়ালের সাথে লম্বভাবে ধরলে বৃত্তাকার আলোকপট্টি ফেলে, কিন্তু কোণ করে হেলিয়ে ধরলে দেয়ালে উপবৃত্তাকার আলোকপট্টির সৃষ্টি হয়। অভিক্ষেপী রূপান্তরের পরেও জ্যামিতিক চিত্রের কিছু কিছু ধর্ম অপরিবর্তনশীল থাকে। এই অপরিবর্তনশীল ধর্মগুলি কী, তাই অভিক্ষেপী জ্যামিতির বিভিন্ন উপপাদ্যের আলোচ্য। চার বা তার বেশি মাত্রার জ্যামিতি অভিক্ষেপী ও বিশ্লেষণী জ্যামিতির উন্নয়ন গণিতবিদদেরকে তিনের বেশি মাত্রার জগতের জ্যামিতি অধ্যয়নে উৎসাহী করে। অনেকে মনে করেন এ ধরনের বহুমাত্রিক জগৎ নিয়ে চিন্তা করা খুব কঠিন। কিন্তু আসলে গণিতবিদেরা এগুলি আরও সহজ উপায়ে কল্পনা করেন। ভৌত বিশ্বের যেকোন বিন্দুর অবস্থান তিনটি অক্ষের (সাধারণত x, y, ও z-অক্ষ নামে পরিচিত) সাপেক্ষে নির্দেশ করা সম্ভব। ভৌত বিশ্বের স্থান বিষয়ক জ্যামিতি তাই ত্রিমাত্রিক। এই ত্রিমাত্রিক জগতের প্রতিটি বিন্দুকে কল্পনায় যদি একটি গোলক দিয়ে প্রতিস্থাপিত করে নেওয়া হয়, তবে এটি একটি চতুর্মাত্রিক জগতে পরিণত হয়। কেননা তখন প্রতিটি বিন্দু-গোলকের অবস্থান নির্দেশ করার জন্য চারটি নির্দেশক লাগবে: গোলকের কেন্দ্র নির্দেশকারী x, y, ও z-স্থানাংক এবং গোলকটির ব্যাসার্ধের দৈর্ঘ্য। একইভাবে দ্বিমাত্রিক জগৎ দিয়ে একটি ত্রিমাত্রিক জগতকে উপস্থাপন করা সম্ভব। এক্ষেত্রে দ্বিমাত্রিক জগতের প্রতিটি বিন্দুকে একটি বৃত্ত দিয়ে প্রতিস্থাপিত করা হয়, এবং ত্রিমাত্রিক জগতের তিনটি মাত্রা হল বৃত্তের কেন্দ্র নির্দেশক দুইটি স্থানাংক এবং এর ব্যাসার্ধ। তিনের বেশি মাত্রার জগৎ নিয়ে জ্যামিতিক ধারণাগুলি ভৌত বিজ্ঞানে, বিশেষ করে আপেক্ষিকতা তত্ত্বের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। চার বা তার বেশি মাত্রার জগতের সুষম জ্যামিতিক বস্তুগুলির অধ্যয়নে বিশ্লেষণী জ্যামিতির পদ্ধতিও প্রয়োগ করা হয়। এই জ্যামিতিকে বলে সাংগঠনিক জ্যামিতি (structural geometry)। সাংগঠনিক জ্যামিতির একটি সরল উদাহরণ হল শুন্য, এক, দুই, তিন, চার বা তার বেশি মাত্রার জগতের সরলতম জ্যামিতিক বস্তুটির সংজ্ঞা বের করা, যাকে সবচেয়ে কম সংখ্যক শীর্ষ, ধার ও পৃষ্ঠ দিয়ে সংজ্ঞায়িত করা যায়। এদের মধ্যে শুন্য, এক, দুই ও তিন মাত্রার জন্য বস্তুগুলি হচ্ছে আমাদের পরিচিত বিন্দু, রেখা, ত্রিভুজ ও চতুস্তলক। চার মাত্রার জগতের জন্য দেখানো যায় যে সরলতম জ্যামিতিক বস্তুটির পাঁচটি শীর্ষ, ১০টি ধার এবং ১০টি পৃষ্ঠ আছে। জ্যামিতিশাস্ত্রের ইতিহাস প্রাচীন জ্যামিতিবিদেরা ভূমিক্ষেত্রসমূহের ক্ষেত্রফল ও ঘরবাড়ি নির্মাণের সময় সঠিকভাবে সমকোণ নির্ণয়ের সমস্যা নিয়ে চিন্তা করতেন। প্রাচীন মিশরে প্রতি বছর নীল নদের বন্যায় জমিসমূহের সীমানা নষ্ট হয়ে যেত এবং এই সীমানাগুলি পুনরুদ্ধারের জন্য জ্যামিতির সাহায্য নেয়া হত। এই ধরনের অভিজ্ঞতাভিত্তিক জ্যামিতি প্রাচীন মিশর, সুমের এবং ব্যাবিলনিয়াতে বিকাশ লাভ করে এবং পরবর্তীতে গ্রিকদের হাতে পরিশীলিত ও নিয়মাবদ্ধ হয়। প্রাচীন গ্রিসের জ্যামিতি ইতিহাসের সর্বপ্রথম গুরুত্বপূর্ণ জ্যামিতিবিদ হিসেবে যার নাম পাওয়া যায়, তিনি হলেন মিলেতুসের থালেস। থালেস ৬০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের দিকে গ্রিসে বাস করতেন। থালেসকে অনেকগুলি সরল কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ উপপাদ্যের জনক হিসেবে গণ্য করা হয়; এদের মধ্যে অন্যতম হল অর্ধবৃত্তস্থিত কোণ যে সমকোণ, তার প্রমাণ। থালেসই প্রথম দেখান যে কতগুলি সার্বজনীনভাবে স্বীকৃত বিবৃতি তথা স্বতঃসিদ্ধ থেকে যৌক্তিকভাবে অগ্রসর হয়ে একটি জ্যামিতিক সত্য প্রতিষ্ঠা করা যায়। এই স্বতঃসিদ্ধগুলিকে থালেস ও তার পরবর্তী গ্রিক জ্যামিতিবিদেরা স্ব-প্রমাণিত সত্য বলে মনে করতেন। তবে আধুনিক গাণিতিক চিন্তাধারায় এগুলিকে কতগুলি সুবিধাজনক কিন্তু যথেচ্ছ অনুমান বলে গণ্য করা হয়। থালেসের এই আরোহী পদ্ধতির ধারণা সমস্ত জ্যামিতিক গবেষণায়, এমনকি সমস্ত গাণিতিক গবেষণায় বর্তমান কাল পর্যন্ত আধিপত্য বিস্তার করেছে। থালেসের এক বিখ্যাত ছাত্র ছিলেন পিথাগোরাস। পিথাগোরাস ও তার সহযোগীরা ত্রিভুজ, বৃত্ত, অনুপাত, ও কিছু কিছু ঘনবস্তুর জন্য অনেক নতুন নতুন উপপাদ্য প্রমাণ করেন। পিথাগোরাসের সবচেয়ে বিখ্যাত উপপাদ্যটি বর্তমানে তার নামে নামান্বিত এবং বলে যে, সমকোণী ত্রিভুজের অতিভুজের বর্গ বাকি বাহুদ্বয়ের বর্গের যোগফলের সমষ্টি। গ্রিকদের প্রস্তাবিত ও স্বীক্রৃত স্বতঃসিদ্ধগুলি ছিল এই জাতীয়: “দুইটি বিন্দুর মধ্যবর্তী ক্ষুদ্রতম পথ সরলরেখা।” এই ধরনের স্বতঃসিদ্ধ থেকে বিন্দু, রেখা, কোণ, বক্ররেখা ও তলসমূহ সম্পর্কে বিভিন্ন উপপাদ্যে যৌক্তিকভাবে উপনীত হওয়া যেত। তবে খ্রিস্টপূর্ব ৩য় শতকে ইউক্লিডই সর্বপ্রথম বিভিন্ন ছড়িয়ে থাকা উপপাদ্য ও স্বতঃসিদ্ধগুলি একটি সমন্বিত ব্যবস্থার অধীনে এনে তার Elements গ্রন্থতে প্রকাশ করেন। ১৩টি পার্চমেন্ট রোল বা পুস্তকে লেখা এই গ্রন্থ মানবমনের চরম উৎকর্ষের একটি নিদর্শন। প্রকাশের প্রায় ১০০০ বছর গণিতবিদের এগুলোতে সামান্যই কোন গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন যোগ করতে পেরেছিলেন। বিংশ শতাব্দীতেও জ্যামিতির প্রাথমিক পাঠ্য হিসেবে ইউক্লিডের বইটি অবিকৃতভাবে ব্যবহার করা হত। ইউক্লিডের কাজের গুরুত্ব তার ফলাফলে নয়, বরং তার পদ্ধতিতে। তার প্রমাণিত বেশির ভাগ উপপাদ্যই বহু বছর আগেই জানা ছিল, কিন্তু তার আগে কেউই দেখাতে পারেনি যে এগুলি সব ঘনিষ্ঠ সম্পর্কযুক্ত এবং সামান্য কিছু প্রাথমিক স্বতদঃসিদ্ধ থেকে এগুলিতে উপনীত হওয়া সম্ভব। ইউক্লিড এভাবে তার কাজের মাধ্যমে আরোহী পদ্ধতির গুরুত্ব প্রতিষ্ঠিত করেন। গ্রিকরা কেবল রুলার ও কাঁটা-কম্পাস ব্যবহার করে জ্যামিতিক চিত্র আঁকার সমস্যা (সমপাদ্য) উদ্ভাবন করেছিল। সরল সমস্যাগুলির মধ্যে আছে কোন প্রদত্ত রেখাংশের দ্বিগুণ দৈর্ঘ্যের রেখাংশ আঁকা, কোন একটি কোণকে সমদ্বিখণ্ডিত করা, ইত্যাদি। গ্রিকদের এ সংক্রান্ত তিনটি বিখ্যাত সমস্যা বহু বছর ধরে গণিতবিদেরা সমাধান করতে পারেন নি: প্রদত্ত ঘনকের দ্বিগুণ আয়তনের ঘনক আঁকা, প্রদত্ত বৃত্তের ক্ষেত্রফলের সমান ক্ষেত্রফলের বর্গ আঁকা, এবং একটি কোণকে সমত্রিখণ্ডিত করা। এগুলির কোনটিই রুলার ও কাঁটাকম্পাসের সাহায্য নিয়ে আঁকা সম্ভব নয়। এদের মধ্যে বৃত্তের বর্গীকরণের অসম্ভাব্যতা ১৮৮২ সালের আগে প্রমাণিত হয়নি। গ্রিক গণিতবিদ পের্গার আপোল্লনিয়ুস কনিক ছেদগুলি নিয়ে গবেষণা করেন এবং এগুলির অনেক মৌলিক ধর্ম খ্রিস্টপূর্ব ৩০০ অব্দেই আবিষ্কার করেন। কনিকগুলি ভৌত বিজ্ঞানের অনেক ক্ষেত্রে কাজে আসে। যেমন যেকোন খ-বস্তুর কক্ষপথ, যেমন সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘুরছে এমন গ্রহ বা ধূমকেতুর গতিপথ সবসময় কোন এক ধরনের কনিকের উপর অবস্থান করে। ক্রৃত্রিম উপগ্রহগুলিও পৃথিবীকে উপবৃত্তাকার পথে প্রদক্ষিণ করে। মহান গ্রিক বিজ্ঞানী আর্কিমিদিস খ্রিস্টপূর্ব ৩য় শতকে জ্যামিতিতে অনেকগুলি অবদান রাখেন। তিনি অনেকগুলি বক্ররেখাবদ্ধ আকৃতির ক্ষেত্রফল এবং বক্রতলাবদ্ধ ঘনবস্তুর, যেমন সিলিন্ডারের পৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল ও আয়তন নির্ণয় করার সূত্র বের করেন। এছাড়াও পাই-এর আসন্ন মান নির্ণয়ের একটি পদ্ধতি বের করেন এবং বলেন যে এই মান ৩ ১০/৭০ ও ৩ ১০/৭১ এর মধ্যবর্তী। মধ্যযুগে জ্যামিতি ৫ম শতাব্দীতে রোমান সাম্রাজ্যের পতনের পর ১৫শ শতক পর্যন্ত ইউরোপে জ্যামিতির তেমন উন্নতিসাধন হয়নি।এসময় ইউরোপ অন্ধকার যুগে প্রবেশ করে এবং উত্তর আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের মুসলমানেরা এবং ভারতের হিন্দুরা জ্যামিতির বেশির ভাগ উন্নতি সাধন করেন।গ্রিক গণিতের বেশির ভাগই ছড়িয়ে যায় বা নষ্ট হয়ে যায়। তবে এদের কিছু কিছু, যেমন ইউক্লিডের Elements মুসলমান ও হিন্দুরা অনুবাদ করে সংরক্ষণ করেন ও অধ্যয়ন করেন। ৬ষ্ঠ শতকের ভারতীয় গণিতবিদ আর্যভট্ট সমদ্বিবাহু ত্রিভুজের ক্ষেত্রফলের সূত্র পুনরাবিষ্কার করেন। এছাড়াও তিনি পাই-এর অত্যন্ত সঠিক মানের একটি সূত্র দান করেন; তিনি পাই-এর মান ধরেন ৬২৮৩২/২০০০০, বা ৩.১৪১৬, যা দশমিকের পর চার ঘর পর্যন্ত পাইয়ের সঠিক মান। ৪র্থ ও ১৩শ শতকের মধ্যবর্তী সময়ে জ্যামিতির জ্ঞান কাজে লাগিয়ে ত্রিকোণমিতি শাস্ত্রের উন্নতি সাধন করা হয়। ১২শ ও ১৩শ শতকে ইউক্লিডের এলিমেন্টস গ্রিক ও আরবি থেকে লাতিনে ও আধুনিক ইউরোপীয় ভাষায় অনুবাদ করা হয় এবং ধর্মীয় শিক্ষালয়ে জ্যামিতি শিক্ষা যোগ করা হয়। ১৭শ ও ১৮শ শতকের জ্যামিতি ফরাসি দার্শনিক ও গণিতবিদ রেনে দেকার্তে জ্যামিতিকে সামনের দিকে এগিয়ে দেন। ১৬৩৭ সালে তার প্রভাবশালী রচনা Discourse on Method প্রকাশিত হয়, যেখানে তিনি স্থানাঙ্ক ব্যবস্থার সাহায্যে জ্যামিতিক আকৃতি প্রকাশের পদ্ধতি উপস্থাপন করেন। তার কাজ জ্যামিতি ও বীজগণিতের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপন করে। এই যোগসূত্রই বিশ্লেষণী জ্যামিতি এবং আধুনিক জ্যামিতির ভিত্তি। ১৭শ শতকের জ্যামিতির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ছিল অভিক্ষেপী জ্যামিতির উদ্ভাবন। অভিক্ষেপী জ্যামিতিতে কোন জ্যামিতিক বস্তুর এক তল থেকে আরেক তলে অভিক্ষেপ ফেললে এর ধর্মের কী পরিবর্তন ঘটে তা নিয়ে গবেষণা করা হয়। জেরার দ্যজার্গ নামের এক ফরাসি প্রকৌশলী perspective নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে অভিক্ষেপী জ্যামিতি উদ্ভাবন করেন। ১৮শ শতকে গাসপার মোঁজ নামের ফরাসি এক গণিতের অধ্যাপক বিবরণমূলক জ্যামিতি নামে জ্যামিতির আরেকটি শাখা উদ্ভাবন করেন। বিবরণমূলক জ্যামিতিতে দ্বি-মাত্রিক চিত্রের সাহায্যে ত্রিমাত্রিক বস্তুসমূহকে কীভাবে ত্রুটিহীনভাবে উপস্থাপন করা যায় এবং এর সাহায্যে কীভাবে ত্রিমাত্রিক জ্যামিতির নানা সমস্যা সমাধান করা যায়, তার আলোচনা করা হয়। প্রকৌশল ও স্থাপত্যের অঙ্কনের ভিত্তি হল এই বিবরণমূলক জ্যামিতি। আধুনিক জ্যামিতি ইউক্লিডীয় জ্যামিতির কাঠামোর ভেতরেই বিশ্লেষণী, অভিক্ষেপী ও বিবরণমূলক জ্যামিতির আবর্ভাব ঘটে। বহু শতাব্দী ধরে গণিতবিদেরা বিশ্বাস করতেন যে অনন্য সমান্তরাল রেখা সংক্রান্ত ইউক্লিডের পঞ্চম স্বতঃসিদ্ধটি বাকী চারটি স্বতঃসিদ্ধ থেকে প্রমাণ করা যাবে, কিন্তু এই প্রমাণ বের করার সমস্ত চেষ্টা ব্যর্থ হয়। কিন্তু ১৯শ শতকে এসে নতুন নতুন জ্যামিতিক ব্যবস্থা উদ্ভাবন করা হয় যেগুলিতে ইউক্লিডের পঞ্চম স্বতঃসিদ্ধটিকে অন্য কিছু দিয়ে প্রতিস্থাপন করা হয়। এইসব নতুন ধরনের অ-ইউক্লিডীয় জ্যামিতির উদ্ভাবনে নেতৃত্ব দেন কার্ল ফ্রিড্‌রিশ গাউস, ইয়ানোশ বলিয়ই, নিকলাই লবাচেভ্‌‌স্কি এবং গেয়র্গ ফ্রিড্‌রিশ বের্নহার্ট রিমান। ১৮৭২ সালে জার্মান গণিতবিদ ফেলিক্স ক্লাইন গণিতের একটি অপেক্ষাকৃত নবীন শাখা গ্রুপ তত্ত্ব ব্যবহার করে তার সময়কার সমস্ত জ্যামিতিক ব্যবস্থাগুলিকে এক ব্যবস্থার অধীনে আনেন। ১৮৯৯ সালে আরেকজন জার্মান গণিতবিদ ডাভিড হিলবের্ট তার Foundations of Geometry বইটি প্রকাশ করেন, যাতে ইউক্লিডীয় জ্যামিতির জন্য স্বতঃসিদ্ধসমূহের একটি সুশৃঙ্খল ব্যবস্থা প্রদান করা হয় এবং এটি গণিতের অন্যান্য শাখায় গভীর প্রভাব ফেলে। ১৯১৬ সালে আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতা তত্ত্ব অনুসারে দেখা যায় অনেক ভৌত ঘটনা জ্যামিতিক মূলনীতি থেকে উপনীত হওয়া সম্ভব। এই তত্ত্বের সাফল্য অন্তরক জ্যামিতি ও টপোগণিতের গবেষণায় জোয়ার আনে। ১৯শ শতকের ব্রিটিশ গণিতবিদ আর্থার কেলি চার বা তারও বেশি মাত্রার জ্যামিতি প্রবর্তন করেন। ১৯শ শতকে ফ্র্যাক্টাল মাত্রার আলোচনা শুরু হয়। ১৯৭০-এর দশকে ফ্র্যাক্টালের ধারণা কাজে লাগিয়ে জ্যামিতির নতুন শাখা ফ্র্যাক্টাল জ্যামিতির উদ্ভব হয়। তথ্যসূত্র বিষয়শ্রেণী:জ্যামিতি
জ্যামিতি
প্রযুক্তি (‘নৈপুণ্যের বিজ্ঞান’ গ্রিক techne থেকে আগত যার অর্থ কলা, দক্ষতা বা হাতের কারসাজি) হল  কৌশল, দক্ষতা, পদ্ধতি ও প্রক্রিয়া সমষ্টি যা পণ্য ও সেবা উৎপাদনে অথবা উদ্দেশ্য সাধনে ব্যবহৃত হয় যেমন বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান।প্রযুক্তির হতে পারে কৌশল ও প্রক্রিয়ার জ্ঞান অথবা এটি অন্তর্ভুক্ত হতে পারে শুধুমাত্র যন্ত্রের ধারণা যে এটি কিভাবে পরিচালিত হয় এগুলো সম্পর্কে বিশদ জ্ঞান ব্যতিরেকে। সিস্টেম ( অর্থাৎ মেশিন বা যন্ত্র) যা প্রযুক্তির ব্যবহার ইনপুট নিয়ে একটি  আউটপুট ফলাফলে পরিণত করে  তাকে প্রযুক্তি সিস্টেম বা প্রযুক্তিগত সিস্টেম বলে। প্রযুক্তির সরলতম রূপ হল মৌলিক সরঞ্জামের বিকাশ ও ব্যবহার। প্রাগৈতিহাসিক কালে আগুন নিয়ন্ত্রণের আবিষ্কার ও পরবর্তীতে নিওলিথিক বিপ্লব খাদ্যের উৎসের বৃদ্ধি করেছে এবং চাকার আবিষ্কার মানুষকে এই পরিবেশে পরিভ্রমণ ও নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করেছে।  ক্রমে ক্রমে প্রিন্টিং প্রেস, টেলিফোন ও ইন্টারনেটের আবিষ্কার যোগাযোগ ক্ষেত্রে মানুষের শারীরিক বাঁধা কে  দূর করেছে এবং মানুষকে বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে মুক্তভাবে যোগাযোগে সক্ষম করেছে। প্রযুক্তির অনেক প্রভাব রয়েছে। এটি  অধিক সমৃদ্ধ অর্থনীতি বিকাশে সাহায্য করেছে (বর্তমানের বৈশ্বিক অর্থনীতি সহ) এবং যার ফলে বিলাসী সম্প্রদায়ের উদ্ভব হয়েছে।অনেক প্রযুক্তিগত প্রক্রিয়ায় অনাকাঙ্ক্ষিত উপজাত উৎপন্ন হয় যা দূষণ হিসেবে পরিচিত এবং যা প্রাকৃতিক সম্পদের অবনতির মাধ্যমে পৃথিবীর পরিবেশের ক্ষতি করে। উদ্ভাবন  সর্বদাই সমাজের মূল্যবোধকে প্রভাবিত করে ও  সাথে সাথে  প্রযুক্তির শিষ্টাচার নিয়ে নতুন প্রশ্ন উত্থাপিত হয়।উদাহরণের মধ্যে রয়েছে দক্ষতার ভিত্তিতে খ্যাতির নির্ধারণ জৈব শিষ্টাচার কে বাধাগ্রস্ত করে। প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে দার্শনিক যুক্তি তর্ক  এখনো একমত নয় যে এটি মানুষের পরিস্থিতির উন্নতি করেছে নাকি অবনতি করছে। নব্য-লুডিজম, অ্যানার্কো-আদিমবাদ এবং অনুরূপ প্রতিক্রিয়াশীল আন্দোলন প্রযুক্তির বিস্তারকে সমালোচনা করে যুক্তি দেন যে এটি মানুষের ক্ষতি করে। অন্যদিকে টেকনো-প্রগতিবাদ মতামতের সমর্থকরা প্রযুক্তিকে সমাজের পক্ষে উপকারী মনে করেন। প্রযুক্তি বলতে কোন একটি প্রজাতির বিভিন্ন যন্ত্র এবং প্রাকৃতিক উপাদান প্রয়োগের ব্যবহারিক জ্ঞানকে বোঝায়। নিজের প্রাকৃতিক পরিবেশের সাথে প্রজাতিটি কেমন খাপ খাওয়াতে পারছে এবং তাকে কিভাবে ব্যবহার করছে তাও নির্ধারণ করে প্রযুক্তি। মানব সমাজে প্রযুক্তি হল বিজ্ঞান এবং প্রকৌশলের একটি আবশ্যিক ফলাফল। অবশ্য অনেক প্রাযুক্তিক উদ্ভাবন থেকেই আবার বিজ্ঞান ও প্রকৌশলের অনেক জ্ঞানের ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে। মানব সমাজের প্রেক্ষিতে প্রযুক্তির সংজ্ঞায় বলা যায়, "প্রযুক্তি হল কিছু প্রায়োগিক কৌশল যা মানুষ তার প্রতিবেশের উন্নয়নকার্যে ব্যবহার করে।" যেকোন যন্ত্র এবং প্রাকৃতিক উপাদান সম্বন্ধে জ্ঞান এবং তা দক্ষভাবে ব্যবহারের ক্ষমতারকেও প্রযুক্তি বলা হয়। আমরা যে পৃথিবী তে বাস করি তা নিয়ন্ত্রণ করার জন্যই আমরা প্রযুক্তি ব্যবহার করি। প্রযুক্তি হল জ্ঞান, যন্ত্র এবং তন্ত্রের ব্যবহার কৌশল যা আমরা আমাদের জীবন সহজ করার স্বার্থে ব্যবহার করছি। সংজ্ঞা ও ব্যবহার ‘প্রযুক্তি’ শব্দটির ব্যবহার গত ২০০ বছরের তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে পরিবর্তিত হয়েছে। বিংশ শতাব্দীর আগে এই শব্দটি ইংরেজিতে অপরিচিত ছিল যা সাধারণত কখনো কখনো প্রয়োজনীয় কলারব্যাখ্যা দিতে ব্যবহৃত হতো আবার কখনো কখনো ম্যাসাচুসেট্স ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি এর কৌশলগত বিদ্যাকে বোঝানো হতো (১৮৬১ সালে তালিকাভুক্ত)। ‘প্রযুক্তি’ শব্দটি প্রাধান্য পায় দ্বিতীয় শিল্প বিপ্লবের সান্নিধ্যের মাধ্যমে।এই শব্দটির অর্থ বিংশ শতাব্দীতে পরিবর্তিত হয় যখন থর্স্টেইন ভেবলেন থেকে শুরু করে আমেরিকান সমাজবিজ্ঞানীরা জার্মান Technik থেকে ‘প্রযুক্তি’  এর অনুবাদ করা শুরু করেন। জার্মান ও ইউরোপীয় ভাষায় technik এবং technologie দুটি শব্দ ভিন্ন অর্থ প্রকাশ করে কিন্তু ইংরেজিতে এ  দুটিকেই একই অর্থে ‘Technology’ তে অনুবাদ করা হয়েছে।.১৯৩০ এর দশকে প্রযুক্তি  কেবল ইন্ডাস্ট্রিয়াল শিল্পের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে নি। ১৯৩৭ সালে আমেরিকার সমাজবিজ্ঞানীরা রেড বাইন লিখেছিলেন ‘ প্রযুক্তি অন্তর্ভুক্ত করে সমস্ত মেশিন, সরঞ্জাম, যন্ত্রপাতি এবং যোগাযোগ ও পরিবহনের ডিভাইস ও দক্ষতা যা আমরা তৈরি  এবং ব্যবহার করি। বাইন এর সংজ্ঞা আজ ও পরিচিত বিশেষ করে সমাজ বিজ্ঞানীদের কাছে। বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলীরা যেকোনো কিছু তৈরি ও ব্যবহার কে প্রযুক্তির সংজ্ঞা দেওয়ার চাইতে এটিকে ফলিত বিজ্ঞান হিসেবে বিবেচনা করতে অধিক আগ্রহী। সম্প্রতি বিভিন্ন যান্ত্রিক কারণে অনেক বিজ্ঞানীরা ইউরোপীয় দার্শনিকদের চিন্তা ধারাকে বিবেচনা করেন প্রযুক্তিকে বিশ্লেষণ করতে  যেমন করা হয়েছে ফোকল্টসের টেকনোলজিস অফ দ্যা সেলফ। অভিধান ও বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন ধরনের সংজ্ঞা দিয়ে থাকেন। মেরিয়ামিয়াম-ওয়েস্টার লার্নার্স ডিকশনারি বিষয়টির এইরকম সংজ্ঞা প্রদান করে ‘প্রযুক্তি হল শিল্প ও প্রকৌশল ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের ব্যবহার যা প্রয়োজনীয় জিনিস আবিষ্কার ও সমস্যা সমাধানে ব্যবহৃত হয়’ এবং ‘মেশিন বা সরঞ্জাম হল প্রযুক্তির তৈরি ফলাফল’। উরসুলা ফ্রাঙ্কলিন ১৯৮৯ সালে তাঁর ‘রিয়েল ওয়ার্ল্ড অফ টেকনোলজি’ লেকচারে  এই ধারণাটির অন্য একটি সংজ্ঞা দিয়েছেন ‘ এটি হলো আমরা চারপাশের কাজ কিভাবে করি তার কৌশল। এটি প্রায়শই ইলেকট্রনিক্স টেকনোলজি বা উচ্চতর প্রযুক্তিকে বুঝায়’। বার্নার্ড স্টিলগার ‘প্রযুক্তি ও সময়-১’ প্রযুক্তিকে দুইভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন যেমন -  ‘জৈবিক উপায় ছাড়া জৈবিক কার্য সাধন’ এবং ‘সুসংহত অজৈব পদার্থ’ হিসেবে। বিস্তর পরিসরে প্রযুক্তি  হল মানসিক ও শারীরিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে সৃষ্ট বস্তুগত ও অবস্তুগত জিনিস বা মাধ্যম  যার মাধ্যমে কোনো মূল্য অর্জন করা হয়। এই দৃষ্টিকোণ থেকে প্রযুক্তি হল যন্ত্র ও সরঞ্জাম যা বাস্তব জীবনের সমস্যা সমাধানে ব্যবহৃত হয়। এটি একটি সুদূরপ্রসারি ধারণা যা সরল যন্ত্র যেমন চামচ থেকে শুরু করে অনেক জটিল যন্ত্র যেমন মহাশূন্য স্টেশন ইত্যাদি কে অন্তর্ভুক্ত করে। যন্ত্র ও সরঞ্জাম কেবল বস্তুই হতে হবে তা নয় যেমন কম্পিউটার সফটওয়্যার ও ব্যবসার পদ্ধতি এগুলো প্রযুক্তির সংজ্ঞার মধ্যে পড়ে। ডব্লিউ ব্রায়ান আর্থার একইভাবে বিস্তর পরিসরে প্রযুক্তিকে সংজ্ঞায়িত করেন, ‘একটি পদ্ধতি হিসেবে যা মানুষের উদ্দেশ্য পূরণ করে’। প্রযুক্তির শব্দটি বিভিন্ন কৌশলের সংগ্রহকে ও বুঝায়। এই পাঠ্য অংশে মানবিক জ্ঞানের প্রচলিত ধারণা উৎসগুলোকে সমন্বিত করে কাঙ্খিত জিনিস তৈরি, সমস্যা সমাধান, চাহিদা পূরণ করা হয় তা প্রযুক্তি, পদ্ধতি ও এর কাঁচামাল ব্যবহার করে।যখন এটি ‘চিকিৎসা প্রযুক্তি’ ও ‘মহাশূন্য প্রযুক্তি’ এর সাথে জড়িত হয় তখন এটি সেই ক্ষেত্রের সরঞ্জামও জ্ঞানকে বুঝায়। ‘কলা প্রযুক্তি’ মানবিক ক্ষেত্রে ব্যবহৃত উন্নত প্রযুক্তিকে বুঝায়। প্রযুক্তিকে সমাজ পরিবর্তনের কার্যক্রম হিসেবে উল্লেখ করা যায়। তাছাড়া প্রযুক্তি হল গণিত, বিজ্ঞান ও কলার প্রয়োগ যা জীবনে উপকারে আসে। এর আধুনিক উদাহরণ হল যোগাযোগ প্রযুক্তির উদ্ভব যার মাধ্যমে মানুষের মধ্যকার শারীরিক মিথস্ক্রিয়ার বাধাকে অতিক্রম করে একটি নতুন সংস্কৃতি সাইবার সংস্কৃতির নামে আবির্ভূত হয়েছে যার ভিত্তি হলো কম্পিউটার ও ইন্টারনেট। একটি সাংস্কৃতিক কার্যক্রম হিসেবে প্রযুক্তি বিজ্ঞান ও প্রকৌশল কে নির্দেশিত করে কারণ এদের প্রত্যেকটি প্রযুক্তিগত প্রচেষ্টার ধারণা উদ্ভব করে। বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও প্রকৌশল বর্তমানে আমরা বিভিন্ন প্রযুক্তি যেমন  বই, কলম, টেবিল, বৈদ্যুতিক বাতি, ঘড়ি ইত্যাদি ব্যবহার করে লেখাপড়া করছি। বৈজ্ঞানিক জ্ঞান ব্যবহার করে এ সকল প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হয়েছে । বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির মধ্যে পার্থক্য কী? এদের মধ্যে কী সম্পর্ক রয়েছে? বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির পার্থক্য বিজ্ঞান হলো প্রকৃতি সম্পর্কিত জ্ঞান যা পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে প্রাকৃতিক ঘটনাকে ব্যাখ্যা ও বর্ণনা করে। প্রাকৃতিক ঘটনা সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে  বিজ্ঞানীরা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণ  করেন। যার মধ্যে নিম্নোক্ত  ধাপগুলো রয়েছে। প্রযুক্তি হল আমাদের জীবনের বাস্তব সমস্যা সমাধানের জন্য বিজ্ঞানের ব্যবহারিক প্রয়োগ।প্রযুক্তি মানুষের জীবনের মান উন্নয়নে বিভিন্ন পণ্য, যন্ত্রপাতি ও পদ্ধতির উদ্ভাবন করে। যেমন - বিজ্ঞানীরা বিদ্যুৎ নিয়ে গবেষণা করে এ বিষয়ে আমাদের ধারণা বা জ্ঞান সৃষ্টি করেছেন। এই বৈজ্ঞানিক জ্ঞান আবার ফ্রিজ, টেলিভিশন, মোবাইল এবং বৈদ্যুতিক বাতি উদ্ভাবনে কাজে লাগানো হয়েছে।প্রযুক্তি ব্যবহারের নানান ক্ষেত্র রয়েছে। যেমন - শিক্ষা, চিকিৎসা, যোগাযোগ, যাতায়াত ইত্যাদি। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সম্পর্ক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উদ্দেশ্য ভিন্ন হলেও আমাদের জীবনে  এদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এরা পরস্পরের সাথে  নিবিড় ভাবে সম্পর্কিত। অতীতের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির মধ্যে এত নিবিড় সম্পর্ক ছিল না। বিজ্ঞানীরা প্রকৃতি নিয়ে গবেষণা করেছেন এবং বিভিন্ন ঘটনার ব্যাখ্যা দিয়েছেন। সেখানে ব্যবহারিক জীবনের সমস্যা সমাধানের কোনো উদ্দেশ্যে  ছিল না। তারা বিদ্যুৎ ও আলোর মত বৈজ্ঞানিক জ্ঞান আবিষ্কার করেছেন। অপরদিকে জীবনকে উন্নত করার লক্ষ্যে বাস্তব সমস্যা সমাধানের জন্য মানুষ প্রযুক্তির উদ্ভাবন করেছে।তারা পাথরের হাতিয়ার, আগুন, পোশাক, ধাতব যন্ত্রপাতি এবং চাকার মত সরল প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে। আঠারো শতকে শিল্প বিপ্লবের সময়কালে প্রযুক্তির ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। বিশেষ করে কৃষি, শিল্প-কারখানা, পরিবহন ইত্যাদি ক্ষেত্রে। বিজ্ঞানীদের আবিষ্কৃত জলীয় বাষ্পের ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে মানুষ বাষ্পীয় ইঞ্জিন আবিষ্কার করেছে। এই বাষ্পীয় ইঞ্জিন  কল-কারখানা রেল গাড়ি  এবং জাহাজ চালাতে ব্যবহার করা হতো। বিভিন্ন প্রশ্ন ও প্রযুক্তি উদ্ভাবনে মানুষ বৈজ্ঞানিক জ্ঞান  ব্যবহার করে থাকে। বিজ্ঞানীরা প্রকৃতি নিয়ে  গবেষণার সময়ও প্রযুক্তির ব্যবহার করে থাকেন। যেমন - দূরবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে বিজ্ঞানীরা মহাকাশের    বিভিন্ন বস্তু পর্যবেক্ষণ করতে সক্ষম হয়েছেন। খালি চোখে দেখা যায় না এমন জিনিস অনুসন্ধানে  বিজ্ঞানীরা অণুবীক্ষণ যন্ত্র ব্যবহার করে থাকেন। বর্তমানকালে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি একে অপরের উপর নির্ভরশীল। প্রযুক্তি ও প্রকৌশল বিজ্ঞান, প্রকৌশল এবং প্রযুক্তির মধ্যে পার্থক্য সর্বদা পরিষ্কার হয় না। বিজ্ঞান হল পর্যবেক্ষণ এবং পরীক্ষার মাধ্যমে প্রাপ্ত প্রাকৃতিক জগতের নিয়মতান্ত্রিক জ্ঞান। প্রকৌশল হল প্রায়শই (তবে সর্বদা নয়) বিজ্ঞানের ফলাফল এবং কৌশল গুলো ব্যবহার করে ব্যবহারিক মানবিক উপায়ে প্রাকৃতিক ঘটনাকে কাজে লাগানোর জন্য সরঞ্জামগুলি এবং সিস্টেমগুলি ডিজাইন এবং তৈরির লক্ষ্য-ভিত্তিক প্রক্রিয়া।প্রযুক্তি প্রায়শই বিজ্ঞান এবং প্রকৌশলের পরিণতি হয়। প্রযুক্তি জীবন চক্র right|thumb|350px|প্রযুক্তি জীবন চক্রপ্রযুক্তির জীবনচক্র (টিএলসি) একটি পণ্যের প্রযুক্তিগত উন্নয়নের পর্ব থেকে বাজারের পরিপক্কতা পর্যন্ত অবশেষে  পতন পর্যন্ত ব্যয় এবং লাভের বর্ণনা দেয়। গবেষণা ও  উন্নয়নের (আরএন্ডডি) ব্যয়গুলো একবার পণ্য বাজারে আসার পরে অবশ্যই লাভ দ্বারা ভারসাম্য করতে হয়।  প্রযুক্তির জীবনচক্র মূলত উন্নয়নের ব্যয়  এবং এর থেকে  সম্ভাব্য লাভ এর মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করে। প্রযুক্তির জীবন চক্রের চারটি পর্যায় রয়েছে। পাশের চিত্রে এটি বোঝা যাচ্ছে। ধাপ চারটি হচ্ছে - গবেষণা ও উন্নয়ন (আরএন্ডডি) - এই পর্যায়ে প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের জন্য বিনিয়োগের ঝুঁকি নেওয়া হয় ।সংস্থা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান গুলো গবেষণা ও উন্নয়নে কৌশলগত দিক নির্দেশনার মাধ্যমে ধীরে ধীরে  একটি প্রযুক্তির  পরীক্ষামূলক সংস্করণে  পৌঁছায়। সমুত্থান ও বাণিজ্যিকীকরণ - এই পর্বে পণ্য আবিষ্কার থেকে সম্পূর্ণরূপে ব্যয় পুনরুদ্ধার করা সময়সীমার অন্তর্ভুক্ত।এই পর্যায়ে  আবিষ্কারের দ্রুত বৃদ্ধি ও বন্টন দেখা যায় এবং নতুন ও অধিক কার্যকরী পণ্যের প্রতিযোগিতামূলক সুবিধার  দ্বার উন্মোচিত হয়। ব্যাপন ও পরিপক্কতা - যেহেতু জনসাধারণ নতুন উদ্ভাবন গ্রহণ করে  তাই প্রতিযোগিরা বাজারে প্রবেশ করে এবং জোগান চাহিদাকে অতিক্রম করতে শুরু করে। এই পর্যায়ে, ধারণাটি স্বাভাবিক হওয়ার সাথে সাথে বিনিময় ধীর হতে শুরু করে। পতন ও প্রতিকল্পন - চূড়ান্ত পর্যায়ে  যখন পণ্য সুবিধা ও  সম্ভাব্য মূল্য  নিয়ন্ত্রিত হয় তখন উৎপাদন ও বিক্রয়  কমতে থাকে। এই হ্রাস একসময় পতনে পৌঁছে যায়। তখন সংস্থাগুলো নতুন  উদ্ভাবনের দিকে অগ্রসর হয়। প্রযুক্তির ক্ষেত্রসমূহ এরোস্পেস প্রযুক্তি: মহাকাশ অভিযানের জন্য ক্ষুদ্র এবং বৃহৎ যান তৈরি এবং চালনা। নভোযান উৎক্ষেপণ, উচ্চ গতি সম্পন্ন আকাশযান, বিমান , নভোযান নির্দেশনার জন্য ব্যবহৃত ভূ-কেন্দ্রিক উপকরণসময় তৈরি এই প্রযুক্তির কাজ। ভৌগোলিক যোগাযোগ এবং তথ্য চালনা পদ্ধতি এখান থেকেই উন্নয়ন লাভ করে। কৃষি প্রযুক্তি: এই প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রথাগত ট্রাক্টর এবং চাষের অন্যান্য যন্ত্রপাতির সাথে আধুনিক ল্যাপটপ এবং গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম-এর সমন্বয় ঘটায়। খাদ্য উৎপাদনের প্রতিটি খুটিনাটি বিষয় তলিয়ে দেখা এবং উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধিই এর মূল কাজ। জৈব প্রযুক্তি: এটি জীবনের মূল উপাদান এবং একক যেমন, কোষ, জিন এবং ব্যাক্টেরিয়া নিয়ে অধ্যয়ন করে । এর মাধ্যমে  নতুন খাদ্য এবং ওষুধ,  মানুষের জিনের নকশা  ইত্যাদি তৈরি করা হয়  যাতে রোগ প্রতিরোধ  এবং জৈবিক ঝুঁকি নির্ণয় করা যায়। নির্মাণ প্রযুক্তি: নির্মাণ প্রযুক্তি পৌর প্রকৌশল এবং প্রযুক্তি কে একত্র করে বসবাসের এবং কাজের নিরাপদ পরিবেশ তৈরি, পরিকল্পনা এবং ব্যবস্থাপনা করে।এটি দালানকোঠা, রাস্তাঘাট, জন-পরিবহন ব্যবস্থা, টানেল, পানি পরিশোধন,  ব্রিজ ইত্যাদির ডিজাইন এবং নির্মাণ নিয়ে কাজ করে। প্রকৌশল প্রযুক্তি: ইলেকট্রনিক্স এবং বলবিদ্যা থেকে শুরু করে জেট ইঞ্জিন  এবং আকাশযান পর্যন্ত প্রকৌশল প্রযুক্তি সমস্ত কিছু তৈরি করে যা আমাদের পৃথিবীকে চালায়। এই বিস্তারিত ক্ষেত্র বস্তু কিভাবে কাজ করে তা বুঝার জন্য এর বিশেষত্ব সহ গণিত, বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির নীতি গুলো কাজে  লাগায়। পরিবেশগত প্রযুক্তি: পরিবেশগত প্রযুক্তি আমাদের জলবায়ু পরিবর্তন, বায়ুর গুনাগুন এবং প্রাকৃতিক সম্পদের নির্ভরযোগ্যতা বুঝতে সক্ষম করেছে।পরিবেশের উপর মানুষের ক্রিয়া-কলাপ এর প্রভাব ও শক্তির নবায়নযোগ্য উৎস এর সঠিক ব্যবহার পরিদর্শন এবং বুঝতে এই প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়। ভৌগোলিক তথ্য ব্যবস্থা: জিআইএস এবং জিপিএস রক্ষণশীল নকশা প্রযুক্তিকে আমাদের হাতের মুঠোয় নিয়ে এসেছে। জিপিএস বিভিন্ন স্থানের অবস্থান নির্ণয় ও পরিভ্রমণ করতে ভূগোল এবং কৃত্রিম উপগ্রহ  প্রযুক্তি ব্যবহার করে। এর অনুষাঙ্গিক প্রযুক্তি  জিআইএস কম্পিউটার থেকে উৎপন্ন স্থল ও জল পরিবেশের নকশা তৈরি করে যা অন্য কোন  বিকল্প উপায়ে করা সম্ভব নয়। তথ্য প্রযুক্তি: তথ্য প্রযুক্তি  (আইটি) হলো আজকের কম্পিউটারাইজড ও  ওয়্যারলেস  দুনিয়ার কেন্দ্র যার মধ্যে আমরা বসবাস করি।এটির যেমন একটি ইন্ডাস্ট্রি  হিসেবে ইলেকট্রনিক্স  তত্ত্বের  সমন্বয়ে কম্পিউটার হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার তৈরি করছে  তেমনি একটি প্রযুক্তি হিসেবে বর্তমানে অন্য প্রযুক্তির ক্ষেত্রগুলোকে   সচল  করছে। আইটি যেকোনো ধরনের তথ্য তৈরি,  জমা ও আদান প্রদানে ব্যবহৃত হয় যেমন - বিজনেস ডাটা, ভয়েস কমিউনিকেশন, ফটোগ্রাফি ও গ্রাফিক্স ইত্যাদি। উৎপাদন প্রযুক্তি: আমরা যে খাদ্য খাই, যে গাড়ি চালাই, যে কম্পিউটার ও ওষুধ ব্যবহার করি ওদের জীবন নিরাপদ ও সহজ করার জন্য  এই সমস্ত কিছু একটি সুনির্দিষ্ট উৎপাদন প্রক্রিয়ার ফলাফল।উৎপাদন প্রযুক্তি কম্পিউটার ও অর্ধপরিবাহী এবং এদের উপাংশ  তৈরি করে। এটি যান্ত্রিক এবং প্রযুক্তিগত দক্ষতা কাজে লাগিয়ে যন্ত্র ও উৎপাদন ব্যবস্থা তৈরি করে। নৌ প্রযুক্তি: নৌ প্রযুক্তি বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও প্রকৌশল কে সমন্বয় করে  পানির নিচের  জগতে বিচরণ  করে।নৌ প্রযুক্তিবিদ  সাবমারসিবল রোবট, সোনার এবং আন্ডারওয়াটার স্যাটেলাইট  ব্যবহার করে পানির নিচের সামুদ্রিক পরিবেশ, বাস্তুসংস্থান, জলবায়ু ও প্রাকৃতিক শক্তির উৎস বুঝতে সক্ষম হন। মাইক্রো প্রযুক্তি ও ন্যানো প্রযুক্তি: মাইক্রো প্রযুক্তি প্রচলিত যন্ত্রপাতি কে  ক্ষুদ্র লেভেলে  পরিচালিত করে। এই প্রযুক্তি এমন ক্যামকর্ডার ও কম্পিউটার তৈরি করেছে যা হাতের মুঠিতে মধ্যে রাখা সম্ভব। ন্যানো প্রযুক্তি আরো এক ধাপ এগিয়ে সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম যন্ত্রের উদ্ভাবন করেছে। রাসায়নিক প্রযুক্তি: রাসায়নিক প্রযুক্তি বিভিন্ন ধরনের কাঁচামাল যেমন তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস  ইত্যাদি নিয়ে পরিশোধিত করে প্রচলিত বিভিন্ন জ্বালানি থেকে শুরু করে বর্তমানে বিভিন্ন আধুনিক বহনযোগ্য শক্তির উৎস উৎপন্ন করছে। এই প্রযুক্তি বিভিন্ন উপাদান বিশুদ্ধকরণ এর ক্ষেত্রে ও ব্যবহৃত হয়। যাতায়াত প্রযুক্তি: যাতায়াত প্রযুক্তি মানুষ, পণ্য এবং সেবা কে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় স্থানান্তরিত করে যেমন - কার, ট্রাক, প্লেন, ট্রেন, বাইক।এটি পরিবেশের উপর যাতায়াত ব্যবস্থার  প্রভাব নিয়েও আলোচনা করে। ইতিহাস প্যালিওলিথিক (২.৫ মিলিয়ন বছর পূর্ব - ১০ হাজার বছর পূর্ব) প্রথমদিকে মানুষের দ্বারা সরঞ্জাম এর ব্যবহার আবিষ্কার ও বিবর্তন অংশ ছিল। মানুষ প্রথম দিকে শিম্পাঞ্জির একটি প্রজাতি যা ইতিমধ্যে দ্বিপদী ছিল তা থেকে বিবর্তনের মাধ্যমে আসে যার মস্তিষ্কের ওজন ছিল আধুনিক মানুষের আধুনিক মানুষের এক-তৃতীয়াংশ। প্রাক-প্রাথমিক কালে মানুষের সরঞ্জাম ব্যবহারের ইতিহাস অপরিবর্তিত ছিল। প্রায় ৫০,০০০  বছর আগে সরঞ্জাম ও জটিল ব্যবহারের আবির্ভাব হয় এবং অনেক প্রত্নতাত্ত্বিকগণ এ সময় কে একটি পূর্ণাঙ্গ ভাষার আবির্ভাব বলে মনে করেন। পাথরের সরঞ্জাম আদি মানব  মিলিয়ন মিলিয়ন বছর আগে পাথরের সরঞ্জাম ব্যবহার করতেন। সর্বপ্রথম পাথরের হাতিয়ার ছিল ভাঙ্গা শিলা কিন্তু প্রায় ৭৫,০০০ বছর আগে  চাপের প্রয়োগ আরো সূক্ষ্ম কাজ করতে সাহায্য করে। আগুন শক্তির উৎস হিসেবে আগুনের আবিষ্কার ও ব্যবহার মানবসৃষ্ট প্রযুক্তির আবির্ভাবের অগ্রদূত ছিল। এই আবিষ্কারের সুনির্দিষ্ট তারিখ জানা যায়নি তবে ‘মানবজাতির ক্র্যাডল’ এ ১ মিলিয়ন বছর আগে গৃহ কাজে আগুনের ব্যবহার নিদর্শন পাওয়া যায়। পরীক্ষিত আদমশুমারি দেখায় যে মানুষ ৫০০ হাজার বছর এবং ৪০০  হাজার বছরের আগের মধ্যবর্তী সময়ে আগুনকে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়। কাঠ ও কয়লার জ্বালানি ব্যবহার করে আগুনের দ্বারা মানুষের রান্না করা তাদেরকে সক্ষম করেছে খাদ্যের হজম যোগ্যতা, পুষ্টি ও উৎস বৃদ্ধি করতে। পোশাক ও আশ্রয় প্যালিওলিথিক কালে আরেকটি উল্লেখযোগ্য আবিষ্কার ছিল পোশাক ও আশ্রয় যার সঠিক তারিখ না জানা থাকলেও এটি মানুষের সভ্যতার বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। প্যালিওলিথিক কালের অগ্রসর এর সাথে সাথে মানুষের বাসস্থান আরো সংরক্ষণশীল ও প্রসারিত হতে থাকে এবং ৩৮০ হাজার বছর পূর্বের কাছাকাছি সময়ে মানুষ সর্বপ্রথম কাঠের তৈরি অস্থায়ী ঘর নির্মাণ করে। গাছের বাকল ও শিকারকৃত পশুদের চামড়া দ্বারা তৈরিকৃত পোশাক মানুষকে শীতপ্রধান অঞ্চলের ছড়িয়ে পড়তে সাহায্য করে এবং ২০০ হাজার বছর আগে আফ্রিকা ও ইউরেশিয়া মানুষ অভিবাসন শুরু করে। শাস্ত্রীয় প্রাচীনতার মাধ্যমে নিওলিথিক (১০ হাজার বছর পূর্ব - ৩০০ খ্রিস্টপূর্ব) মানুষের প্রযুক্তির উৎসাহ শুরু হয় যে প্রাক্কালে তাকে বলে নিওলিথিক পর্ব (নিউ স্টোন এজ)। মসৃণ পাথরের দন্ডের আবিষ্কার একটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি ছিল যার মাধ্যমে জঙ্গল কেটে চাষাবাদের তৈরি করা হয়। এই মসৃণ পাথরের দন্ডের ব্যবহার উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পায় নিওলিথিক কালে কিন্তু যা প্রকৃতপক্ষে আবিষ্কৃত হয় মেসোলিথিক খালে আয়ারল্যান্ডের মত কিছু জায়গায়। কৃষি উল্লেখযোগ্য মানুষের খাদ্যের যোগান দিত যার ফলে একইসাথে স্থানান্তর ও অধিক সন্তান  লালন পালন সম্ভব হয় কারণ তখন শিশুদের বহন করতে হত না যা নমাডিকদের জন্য অবশ্য পালনীয় ছিল। তাছাড়া শিকার নির্ভর অর্থনীতির চেয়ে কৃষিনির্ভর অর্থনীতিতে সন্তানেরা অধিক সহজে শ্রম দিতে পারছিল। একই সাথে জনসংখ্যা ও শ্রমের বৃদ্ধির ফলে শ্রমের ধরনের মধ্যে বিশেষত্বের  বৃদ্ধি হয়। যা প্রাথমিক নিওলিথিক গ্রাম থেকে প্রথম শহরের উত্তরণের সাহায্য করে যেমন - উরুক এবং প্রথম সভ্যতা যেমন - সুমার। যদিও তা অধিক পরিমাণে পরিচিত ছিল না। পর্যায়ক্রমিক সমাজব্যবস্থার এবং বিশেষায়িত শ্রমের বৃদ্ধির ফলে সংস্কৃতির মধ্যে বাণিজ্য ও যুদ্ধ শুরু হয়। প্রাকৃতিক চ্যালেঞ্জ হিসেবে সেচ এর প্রয়োজনীয়তা এক্ষেত্রে প্রধান কারণ হিসেবে কাজ করেছে। ধাতব সরঞ্জাম প্রযুক্তির চলমান উন্নতির ফলে সোনা, তামা, রুপা, সিসা - বিশুদ্ধ ধাতুসমূহ গলানো ও আকার দেওয়া সম্ভব হয়েছে। পাথর ও কাঠের তৈরি সরঞ্জাম এর তুলনায় তামার তৈরি সরঞ্জাম গুলোর অধিক সুবিধা পরিষ্কারভাবে এগুলো ব্যবহারের তাগিদ শুরু হয়  নিওলিথিক কালের শুরুর দিকে (প্রায় ১০ হাজার বছর আগে)। বিশুদ্ধ তামা প্রকৃতিতে অধিক পরিমাণে পাওয়া যায় না কিন্তু এগুলোর আকরিক খুব সহজে পাওয়া যায় যা কাঠ ও  কয়লার আগুনে পুড়িয়ে খুব সহজে বিশুদ্ধ তামা পাওয়া যায়। এর পরিণতি ধাতু নিয়ে কাজ করার মাধ্যমে আবিষ্কার মিশ্র ধাতু হয় যেমন কাঁসা ও পিতল (প্রায় খ্রিস্টপূর্ব ৪০০০ দিকে)। লোহার প্রথম মিশ্র ধাতু হিসেবে সর্বপ্রথম স্টিল ব্যবহৃত হয় খ্রিস্টপূর্ব ১৮০০ সালে। শক্তি ও পরিবহন ইতিমধ্যে মানুষ শক্তির অন্যান্য গ্রুপগুলো কাজে লাগাতে শুরু করেছে।বায়ুর ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে নীল নদে প্রথম নামে পাল তোলা নৌকা চালানোর নিদর্শন পাওয়া যায় খ্রিস্টপূর্ব অষ্টম সহস্রাব্দের দিকে। প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে মিশরীরা নীল নদের বার্ষিক বন্যাকে কাজে লাগিয়ে সেচ কার্য পরিচালনা করত যা পরবর্তীতে তাদের পানি সংরক্ষণ করতে ও সাহায্য করেছিল। মেসোপটেমিয়ায় সুমেরীয়রা জটিল খাল ও নর্দমার মাধ্যমে টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস নদীর পানিকে তাদের সেচে পরিণত করত। প্রত্নতত্ত্ববিদদের মতে চাকা প্রথম আবিষ্কৃত হয় খ্রিস্টপূর্ব ৪০০০ বছর পূর্বে একই সাথে কিন্তু পৃথকভাবে মেসোপটেমিয়া (বর্তমান ইরাক), উত্তর ককেশাস (মেকপ সংস্কৃতি) ও মধ্য ইউরোপে। খ্রিস্টপূর্ব ৫৫০০ থেকে ৩০০০ সময়কালে অধিকাংশের মতে খ্রিস্টপূর্ব ৪০০০ সালে এটি আবিষ্কৃত হয় বলে ধারণা করা হয়। খ্রিস্টপূর্ব ৩৫০০ এর দিকে সবচেয়ে পুরনো চাকার চিত্র পাওয়া যায়। যাইহোক এই চিত্র আঁকার সহস্রাব্দ আগে থেকে চাকার ব্যবহার অব্যাহত ছিল। অতি সম্প্রতি কাঠের তৈরি চাকার নিদর্শন পাওয়া যায় লুবলজানা স্লোভেনিয়ার জলাভূমিতে। চাকার আবিষ্কার বাণিজ্য যুদ্ধে বিপ্লব আনয়ন করে। এটা আবিষ্কার করতে বেশি সময় লাগেনি যে চাকার তৈরি মালগাড়ি  অধিক ভার বহন করতে পারে। প্রাচীন সুমেরীয়রা প্রথম কুমোরের চাকা ব্যবহার করেন অথবা আবিষ্কার করেন। খ্রিস্টপূর্ব ৩৪২৯ এর দিকে উর শহরে প্রথম কুমোরের চাকার নিদর্শন পাওয়া যায় এবং চাকার অন্যান্য পুরাতন নিদর্শনগুলো ওই একই অঞ্চলে পাওয়া যায়।এই ধরনের দ্রুত চাকা (ঘূর্ণনশীল) শক্তির রূপান্তরক হিসেবে প্রথম ব্যবহৃত হয় (পানিকল, বায়ুকল ও ট্রেডকল এর মাধ্যমে)। এর প্রয়োগ  মানুষের শ্রম বিহীন শক্তির উৎস হিসেবে বিপ্লব সাধন করে। প্রথম দুই চাকার গাড়ি তৈরি হয় ট্র্যাভয়েস থেকে যা প্রথম ব্যবহৃত হয় মেসোপটেমিয়া ও ইরানে খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০ এর দিকে। প্রথম পাথরের তৈরি রাস্তা নির্মাণ হয় উর শহরে খ্রিস্টপূর্ব ৪০০০ এর দিকে এবং কাঠের তৈরি নির্মাণ হয় ইংল্যান্ডের গ্লাস্টনবারির জলাবনে প্রায় একই সময়ের দিকে। খ্রিস্টপূর্ব ৩৫০০ এর দিকে প্রথম দীর্ঘ রাস্তা তৈরি হয় পারস্যের গলফ থেকে ভূমধ্যসাগর পর্যন্ত প্রায় ১৫০০ মাইল  যদিও তা বাঁধানো ছিল না। খ্রিস্টপূর্ব ২০০০ এর দিকে ১৫ কিলোমিটার (৩০ মাইল) দীর্ঘ রাস্তা গ্রিক দ্বীপের ক্রিটের মিনোয়্যানরা নির্মাণ করেন যা দ্বীপের দক্ষিণ দিক গোর্তিন প্যালেস থেকে পর্বতের মধ্য দিয়ে দ্বীপের উত্তর দিক ননোসোস প্যালেস পর্যন্ত লম্বা। পূর্বের রাস্তার ব্যতিক্রম হিসেবে মিনোয়্যানদের তৈরি রাস্তা সম্পূর্ণরূপে বাঁধানো ছিল। চৌবাচ্চা স্থাপন মিনোয়্যানদের ব্যক্তিগত বাড়িতে চলমান পানির ধারা ছিল। বর্তমানের বাথটাবের আদি নিদর্শন ননোসোস প্যালেসে পাওয়া যায়। কতিপয় মিনোয়্যানদের ব্যক্তিগত বাড়িতে টয়লেট এর ব্যবস্থাও ছিল যা পানি ঢেলে পরিষ্কার করা হতো।প্রাচীন রোমানদের ফ্লাশ টয়লেট ছিল যা বিস্তর পয়ঃনিষ্কাশন পদ্ধতির দ্বারা খালি করা হতো। রোমের প্রথম ও প্রধান নর্দমা ‘ক্লোকা ম্যাক্সিমা’ খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীর দিকে নির্মাণ শুরু হয় যা এখনো ব্যবহৃত হচ্ছে। প্রাচীন রোমানদের সুগঠিত কৃত্রিম জল-প্রণালী বা নালার ব্যবস্থা যা দূরবর্তী স্থানে পানি স্থানান্তরের জন্য ব্যবহৃত হতো। রোমানদের প্রথম প্রাচীন জল-প্রণালী খ্রিস্টপূর্ব ৩১২ সালে নির্মিত হয় এবং  একাদশতম ও শেষ জল-প্রণালী নির্মিত হয় খ্রিস্টপূর্ব ২২৬ সালে।একত্রে রোমান জল-প্রণালী প্রায় ৪৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ কিন্তু ৭০ কিলোমিটার এর কম দূরত্ব মাটির উপরে ও খিলান দ্বারা প্রতিষ্ঠিত। মধ্যযুগীয় এবং আধুনিক ইতিহাস (৩০০ খ্রিস্টপূর্ব - বর্তমান) মধ্যযুগে রেশম এর উদ্ভাবনের মাধ্যমে প্রযুক্তির উন্নয়ন চলতে থাকে (ইউরোপে এর পরিচিতি এশিয়ার পরিচিতি লাভের শতবর্ষ পর সম্পন্ন হয়)।পঞ্চম শতাব্দীতে রোমান সাম্রাজ্যের পতনের প্রথম কয়েক শত বছরের মধ্যে ঘোড়ার লাগাম ও ঘোড়ার খুরের নাল এর ব্যবহার শুরু হয়। মধ্যযুগীয় প্রযুক্তি দেখিয়ে দেয় সহজ যন্ত্র সমূহ এর ব্যবহার (যেমন লিভার, স্ক্রু ও পুলি) এর সমন্বয়ে আরো জটিল যন্ত্র যেমন ঠেলাগাড়ি, বায়ুকল ও ঘড়ি তৈরি হয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থা করে উঠে যার মাধ্যমে বৈজ্ঞানিক ধারণা ও অনুশীলনগুলো ছড়িয়ে দেয়া হয়। রেনেসাঁ এর সময় প্রিন্টিং প্রেস (যা জ্ঞানের আদান প্রদানকে সহজ করে) সহ নানা আবিষ্কার সম্পন্ন হয় এবং প্রযুক্তি বিজ্ঞানের সাথে মিলে যৌথ ভাবে উন্নতি লাভ করতে থাকে।প্রযুক্তির উন্নতি খাদ্যের সরবরাহকে আরো নির্ভরশীল করে তুলে সাথে সাথে অন্যান্য ভোগ্যপণ্যের সরবরাহকে ও। অষ্টাদশ শতাব্দীতে যুক্তরাজ্যের শিল্প বিপ্লবের মধ্য দিয়ে কৃষি, উৎপাদন, খনন, কঠিন ধাতু  ও যোগাযোগ ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত আবিষ্কারের উন্নয়ন সাধিত হয়। যা  বাষ্প ইঞ্জিন ও ফ্যাক্টরি ব্যবস্থার মাধ্যমে গতি লাভ করে। প্রযুক্তি দ্বিতীয় শিল্প বিপ্লবের সময় (১৮৭০ সাল থেকে ১৯১৪ সাল) আরেকটি পদক্ষেপ নিয়ে বৈদ্যুতিক মোটর, আলোর বাতি ইত্যাদির মত আবিষ্কার এর সুবিধা পাইয়ে দেয়।প্রযুক্তির উন্নয়ন নতুন নতুন আবিষ্কারের ধারনা পরবর্তীতে চিকিৎসা, রসায়ন, পদার্থ বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিদ্যা এর জন্ম দেয়। প্রযুক্তির উত্তরোত্তর উন্নয়ন আকাশচুম্বী সফলতা লাভ করে এবং বড় বড় নগরের বাসিন্দারা এখন তাদের কাজের জন্য ও খাদ্য সরবরাহের জন্য স্বয়ংক্রিয় মোটর এর উপর নির্ভরশীল। টেলিগ্রাফ, টেলিফোন, রেডিও ও টেলিভিশনের আবিষ্কার এর মাধ্যমে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়ন লাভ করে। ঊনবিংশ ও বিংশ শতাব্দীতে  বিমান ও মোটর গাড়ির আবিষ্কার যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিপ্লব এনে দেয়। বিংশ শতাব্দী উদ্ভাবন এর পোষক হিসেবে কাজ করে। পদার্থবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে নিউক্লিয়ার ফিশন এর আবিষ্কার নিউক্লিয়ার অস্ত্র ও নিউক্লিয়ার শক্তির দিকে ধাবিত করে। কম্পিউটার আবিষ্কারের পর ট্রানজিস্টর ও সমন্বিত বর্তনীর মাধ্যমে এগুলোকে ক্ষুদ্রাকারে নিয়ে আসা হয়। তথ্যপ্রযুক্তি পর্যায়ক্রমে উনবিংশ শতাব্দীর আশির দশকে ইন্টারনেটের জন্ম দেয় যা বর্তমান তথ্য যুগের ভিত্তি স্থাপন করে। মানুষ কৃত্রিম উপগ্রহের মাধ্যমে মহাশূন্যে বিচরণ (উনবিংশ শতাব্দীর পঞ্চাশের দশকের শেষের দিকে, যা পরবর্তীতে টেলিকমিউনিকেশন এর ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়) শুরু করে ও সাথে সাথে চাঁদে যাওয়ার পরিকল্পনা শুরু করে (উনবিংশ শতাব্দীর ষাটের দশকে)। চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নয়ন ওপেন হার্ট সার্জারি ও পরবর্তীতে স্টেম সেল থেরাপি ইত্যাদি নিয়ে আসে। জটিল উৎপাদন ও নির্মাণের প্রয়োজনে মানুষের কাজগুলো সহজ করার জন্য ইন্ডাস্ট্রি ও সংস্থাগুলো জটিল যন্ত্র উদ্ভাবন শুরু করে। আধুনিক প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করার জন্য এখন ডিজাইনার, নির্মাতা, ব্যবস্থাপক ও এর ব্যবহারকারীদের প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হয়। অধিকন্তু প্রযুক্তির এখন এতটা জটিল হয়ে গেছে যে প্রকৌশল বিদ্যা, চিকিৎসা বিজ্ঞান, কম্পিউটার বিজ্ঞান এই সমস্ত ক্ষেত্রগুলোকে এখন নির্মাণ, পরিবহন ও স্থাপনা সম্পন্ন করতে সংরক্ষণশীল ভাবে কাজ করতে হয়। দর্শন টেকনিসিজম সাধারণভাবে টেকনিসিজম হল মানব সমাজের উন্নয়নের জন্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মতবাদ। আরেকটু জোরালোভাবে, ‘টেকনিসিজম বাস্তবতাকে নিয়ন্ত্রণ এবং বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত ভাবে সকল সমস্যা সমাধানের মৌলিক মনোভাবকে প্রতিফলিত করে’। অন্যভাবে বলা যায় মানুষ একদিন সকল সমস্যা সমাধানে সক্ষম হবে এবং সম্ভবত ভবিষ্যতকেও প্রযুক্তি দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করবে। যেমন, স্টিফেন ভি মন্সমা এই ধারণাগুলো কে ধর্মীয় বিশ্বাসের বিরুদ্ধে ও নৈতিকতা বিরোধী হিসেবে গণ্য করেছেন। অপটিমিজম অপটিমিস্টিক ধারণা গুলো ট্রান্সহিউম্যানিজম ও একবিন্দুবাদ দার্শনিক মতবাদের প্রবক্তাদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত যা সাধারণত প্রযুক্তিকে মানুষের অবস্থা ও সমাজের জন্য উপকারী মনে করে। এই মতবাদ অনুযায়ী, প্রযুক্তিগত উন্নয়ন নৈতিকভাবে ও ভালো। ট্রান্সহিউম্যানিস্টগণ  মনে করেন প্রযুক্তিগত ধারণা প্রতিবন্ধকতাকে অতিক্রম করতে সাহায্য করে ও যা সাধারণভাবে মনে করে মানুষের অবস্থা একটি প্রতিবন্ধকতা যা তাকে সব সময় অতিক্রম করতে হবে। একবিন্দুবাদীগণ মনে করেন একটি ‘ত্বরান্বিত পরিবর্তন’ যার মাধ্যমে প্রযুক্তিগত উন্নয়নের গতি বৃদ্ধি পাবে এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার আবিষ্কারের মাধ্যমে অসীম উন্নয়নের মধ্য দিয়ে তা এককতায় পরিণত হবে। এককতায় পরিণত হওয়ার সময় এখনও অনুমান করা যায়নি তবে বিখ্যাত ভবিষ্যদ্বাণী প্রণেতা রে কুর্জওয়েল ধারণা করেন ২০৪৫ সালের মধ্যে এটি সংঘটিত হবে। কুর্জওয়েল তার মহাবিশ্বের ছয় যুগ ইতিহাসের জন্য পরিচিত - (১) ভৌতিক / রাসায়নিক যুগ, (২) জীব যুগ, (৩) মানব / বুদ্ধিমত্তার যুগ, (৪) প্রযুক্তির যুগ, (৫)কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যুগ এবং (৬) বৈশ্বিক উপনিবেশায়নের যুগ। এক যুগ থেকে অন্য যুগে গমন একতা দ্বারা পরিচালিত ও ত্বরান্বিত হয়। প্রতিটি যুগ স্বল্প সময় নিয়ে গঠিত যার মানে বুঝায় সমগ্র মহাবিশ্বের ইতিহাস একটি প্রকাণ্ড এককতার ঘটনা মাত্র। কিছু সমালোচকগণ এই মতবাদ গুলো কে বৈজ্ঞানিকতা ও টেকনো-ইউটোপিয়ানিজম এর উদাহরণ হি সেবে গণ্য করেন এবং তারা মানুষের বর্ধন এবং প্রযুক্তিগত এককত্বের ধারণা নিয়ে শঙ্কিত। কিছু লোক কার্ল মার্কস কে  টেকনো-অপটিমিস্ট হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। স্কেপটিসিজম এবং ক্রিটিক্স কতিপয় সংশয়বাদী দার্শনিকগণ যেমন - হারবার্ট মার্কুস এবং জন জেরজান বিশ্বাস করে প্রযুক্তিগত সমাজ সহজাতভাবে ত্রুটিপূর্ণ।তারা প্রস্তাব করেন অত্যধিক প্রযুক্তিগত উন্নয়নের অবশ্যম্ভাবী ফলাফল হল স্বাধীনতা ও মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষয়। অনেকে যেমন লুডাইটস এবং প্রখ্যাত দার্শনিক মার্টিন হাইডেগার গুরুতর ক্ষয়কারী যদিও পুরোপুরি নয় ধারনা পোষন করেন প্রযুক্তি সম্পর্কে। হাইডেগার এর শিক্ষক হুবার্ট ড্রইফাস এবং চার্লস স্পিনোসা এর মতে, “হাইডেগার প্রযুক্তি এর বিরোধিতা করেন না। তিনি শুধু আশা করে প্রযুক্তিকে এমনভাবে প্রকাশ করতে, ‘যে প্রকারে কেউ আমাদেরকে সংশয় সম্পন্ন না করে প্রযুক্তিকে অন্ধভাবে অনুসরণ করতে’। যা তাকে প্রযুক্তির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে তুলেছে”। প্রকৃতপক্ষে, তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে 'আমরা যখন প্রযুক্তির সারমর্মের কাছে একবার নিজেকে প্রকাশ করি, তখন আমরা নিজেকে অপ্রত্যাশিতভাবে একটি মুক্ত দাবিতে নিয়ে যেতে দেখি’। প্রযুক্তিগত-আশাবাদী বা টেকনো-হতাশাবাদীরা এর অনুমোদন দেওয়ার চেয়ে প্রযুক্তির সাথে আরও জটিল সম্পর্ককে অন্তর্ভুক্ত করে। প্রযুক্তির সবচেয়ে কটু সমালোচনা পাওয়া যায় যেমন - আলডাস হাক্সলির ‘ব্রেভ নিউ ওয়ার্ল্ড’, এন্থনি বার্জেস এর ‘এ ক্লকওয়ার্ক অরেঞ্জ’, এবং জর্জ অরওয়েলের ‘নাইনটিন এইটি ফোর’ এর মধ্যে যা এখন ডিস্টোপিয়ান ক্লাসিক সাহিত্য বলে মনে করা হয়। গ্যাটের ফাউস্ট এর মধ্যে,ফাউস্ট এর শয়তানের কাছে জড়জগৎ উপর ক্ষমতা বিনিময়ে তার আত্মা বিক্রি প্রায়ই শিল্প প্রযুক্তি গ্রহণ একটি রূপক হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয়। সম্প্রতি, ফিলিপ কে ডিক ও উইলিয়াম গিবসনের বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর আধুনিক কাজগুলো এবং ব্লেড রানার ও গোস্ট ইন দ্য সেল এর মত চলচ্চিত্রগুলো মানব সমাজ ও পরিচয় এর উপর প্রযুক্তির প্রভাবের অত্যন্ত সতর্কতাপূর্ণ মনোভাব প্রকাশ করে। প্রয়াত সাংস্কৃতিক সমালোচক নীল পোস্টম্যান সরঞ্জাম-ব্যবহারকারী সমাজগুলোকে প্রযুক্তিগত সমাজগুলো এবং যেটিকে তিনি "টেকনোপলিজ" বলে সম্বোধন করেছেন সেগুলি থেকে আলাদা করেছেন যার মাধ্যমে প্রযুক্তিগত এবং বৈজ্ঞানিক অগ্রগতির আদর্শের দ্বারা অন্যান্য সাংস্কৃতিক চর্চা, মূল্যবোধ এবং বিশ্ব-মতামত ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ডারিন বার্নি নাগরিকত্ব ও গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির চর্চায় প্রযুক্তির প্রভাব সম্পর্কে লিখেছেন এবং প্রস্তাব করেন প্রযুক্তিটিকে চিহ্নিত করা যেতে পারে, (১) রাজনৈতিক বিতর্কের একটি বিষয় হিসেবে, (২) আলোচনার উপায় বা মাধ্যম হিসেবে, এবং (৩) গণতান্ত্রিক মুক্তি ও নাগরিকত্বের বিন্যাস হিসেবে। গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির একটি বিন্যাস হিসেবে, বার্নি সুপারিশ করেছেন যে প্রযুক্তি একটি ভাল জীবন কী নিয়ে গঠিত এসব প্রশ্ন সহ নীতিগত প্রশ্ন তোলে, যা প্রায় অসম্ভব কারণ তারা ইতিমধ্যে প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে: একটি ভাল জীবন হলো যা অধিক থেকে অধিকতর প্রযুক্তির ব্যবহারকে অন্তর্ভুক্ত করে। নিকোলাস কমপ্রিডিস নতুন প্রযুক্তি বিপদ নিয়েও লিখেছেন যেমন জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, ন্যানোপ্রযুক্তি, সিন্থেটিক জীববিদ্যা এবং রোবোটিক্স । তিনি সতর্ক করেছেন যে এই প্রযুক্তিগুলি আমাদের জৈবিক প্রকৃতির স্থায়ীভাবে পরিবর্তনের সম্ভাবনা সহ মানুষের কাছে অভূতপূর্ব নতুন চ্যালেঞ্জের পরিচয় দেয়। এই উদ্বেগগুলি অন্যান্য দার্শনিক, বিজ্ঞানী এবং পাবলিক বুদ্ধিজীবীরা প্রকাশ করেছেন যারা অনুরূপ বিষয় সম্পর্কে লিখেছেন (যেমন ফ্রান্সিস ফুকুয়ামা, জর্জেন হাবেরমাস, উইলিয়াম জয় এবং মাইকেল স্যান্ডেল)। প্রযুক্তির আর একটি বিশিষ্ট সমালোচক হুবার্ট ড্রেইফাস , যিনি ‘অন দ্যা ​​ইন্টারনেট’ এবং ‘হোয়াট কম্পিউটারস স্টিল ক্যান টু ডো’ এর মতো বই প্রকাশ করেছেন। আরো কুখ্যাত প্রযুক্তি-বিরোধী গ্রন্থ হল ‘ইন্ডাস্ট্রিয়াল সোসাইটি এন্ড ইটস ফিউচার’, আনবমবার টেড ক্যাকজেনস্কি দ্বারা লিখিত এবং অনেকগুলি প্রধান সংবাদপত্র (এবং পরে বইগুলোতে) ছাপানো হয় তার টেকনো-শিল্প পরিকাঠামো বিরুদ্ধে বোমাবর্ষণ অভিযান শেষ করার একটি প্রচেষ্টা অংশ হিসেবে। এছাড়াও এমন উপ-সংস্কৃতি রয়েছে যা কিছু বা বেশিরভাগ প্রযুক্তি অস্বীকার করে যেমন স্ব-চিহ্নিত অফ-গ্রিডারগুলি। উপযুক্ত প্রযুক্তি উপযুক্ত প্রযুক্তির ধারণাটি বিকশিত হয়েছিল বিংশ শতাব্দীতে ই এফ শুমাচর এবং জ্যাক এলুলের মতো চিন্তাবিদদের দ্বারা এমন পরিস্থিতি বর্ণনা করার জন্য যেখানে খুব নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করা বা কাঙ্ক্ষিত কিছু কেন্দ্রীয় অবকাঠামো বা অংশ বা দক্ষতা বা অন্য কোথাও থেকে আমদানি করা দক্ষতাগুলির ব্যবহার করা বাঞ্ছনীয় ছিল না। ইকোভিলেজ আন্দোলন এর অংশ হিসেবে আবির্ভূত হয়। একবিংশ শতাব্দীতে অপটিমিজম ও স্কেপটিসিজম এই বিভাগটি মূলত আমেরিকান উদ্বেগকে কেন্দ্র করে এমনকি অন্য পশ্চিমা দেশগুলিতে যুক্তিসঙ্গতভাবে সাধারণীকরণ করা যেতে পারে। আমেরিকান চাকরির অপর্যাপ্ত পরিমাণ এবং গুণগত মান হল অন্যতম মৌলিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ যার আমরা সম্মুখীন হই। প্রযুক্তি এবং এই মৌলিক সমস্যার মধ্যে যোগসূত্রটি কী? বার্নস্টেইন জ্যারেড, "আমেরিকান প্রত্যাশা, অক্টোবর ২০১৪ এ " এটি কোনও দক্ষতার অভাব নয় যা মজুরিকে কমিয়ে রাখে: এটি দুর্বল অর্থনীতি" জ্যারেড বার্নস্টেন, বাজেট এবং নীতি অগ্রাধিকার সেন্টারের সিনিয়র সহকর্মী তার নিবন্ধটিতে, প্রশ্ন তোলেন যে অটোমেশন এবং আরও ব্যাপকভাবে প্রযুক্তিগত অগ্রগতি প্রধানত এই ক্রমবর্ধমান শ্রমবাজার সমস্যা সৃষ্টিতে অবদান রাখে। তার থিসিসটি অপটিমিজম ও স্কেপটিসিজম এর মধ্যে তৃতীয় উপায় হিসেবে আবির্ভূত হয়। মূলত, তিনি বেকারত্ব এবং ক্রমহ্রাসমান মজুরি এর সাথে প্রযুক্তি এবং আমেরিকান ইস্যুগুলির মধ্যে যোগসূত্রের একটি নিরপেক্ষ পদ্ধতির পক্ষে দাঁড়িয়েছেন। তিনি তার বক্তব্য রক্ষার জন্য দুটি প্রধান যুক্তি ব্যবহার করেন। প্রথমত, সাম্প্রতিক প্রযুক্তিগত অগ্রগতির কারণে, একটি ক্রমবর্ধমান সংখ্যক শ্রমিক তাদের চাকরি হারাচ্ছেন। তবুও, বৈজ্ঞানিক প্রমাণ স্পষ্টভাবে প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে যে প্রযুক্তি এত বেশি শ্রমিককে বাস্তুচ্যুত করেছে যে এটি সমাধানের চেয়ে আরও বেশি সমস্যা তৈরি করেছে। প্রকৃতপক্ষে, অটোমেশন পুনরাবৃত্তিমূলক চাকরীর জন্য সুবিধাজনক তবে উচ্চতর কর্মসংস্থানগুলি এখনও প্রয়োজনীয় কারণ তারা প্রযুক্তি এবং ম্যানুয়াল কাজের পরিপূরক যার জন্য "নমনীয়তার বিচার এবং সাধারণ জ্ঞানের প্রয়োজন" যা মেশিনগুলির দ্বারা প্রতিস্থাপন করা কঠিন হয়ে যায়। দ্বিতীয়ত, অধ্যয়নগুলি সাম্প্রতিক প্রযুক্তির অগ্রগতি এবং গত দশকগুলির মজুরি প্রবণতার মধ্যে সুস্পষ্ট যোগসূত্র দেখায় নি। সুতরাং, বার্নস্টেইনের মতে, বর্তমান আমেরিকান বর্ধমান বেকারত্ব ও ক্রমহ্রাসমান মজুরির উপর প্রযুক্তি এবং এর অনুমানমূলক প্রভাবগুলিতে মনোনিবেশ করার পরিবর্তে, "অচল নীতি যা চাহিদা, বাণিজ্য, আয় এবং সুযোগের ভারসাম্যহীনতা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়" সে সম্পর্কে আরও বেশি চিন্তা করা দরকার। জটিল প্রযুক্তিগত ব্যবস্থা টমাস পি হিউজেস বলেছিলেন যে প্রযুক্তি সমস্যা সমাধানের মূল উপায় হিসাবে বিবেচিত হয়েছে, তাই আরও কার্যকরভাবে এটি ব্যবহার করার জন্য আমাদের এর জটিল এবং বিচিত্র চরিত্র সম্পর্কে সচেতন হওয়া দরকার। চাকা বা কম্পাস এবং রান্না করার যন্ত্র যেমন ওভেন বা গ্যাসের চুলার মধ্যে পার্থক্য কী? আমরা কি তাদের সমস্ত কিছু, বা কেবল তাদের একটি অংশ, অথবা না তাদের কোনওটিকেই প্রযুক্তি হিসাবে বিবেচনা করতে পারি? প্রযুক্তি প্রায়শই খুব সংকীর্ণ হিসাবে বিবেচিত হয়; হিউজেসের মতে, "প্রযুক্তি মানবীয় কৌতূহল জড়িত একটি সৃজনশীল প্রক্রিয়া"। এই সংজ্ঞাটি সৃজনশীলতার উপর জোর সীমাহীন সংজ্ঞাগুলো এড়িয়ে চলে যা ভুলভাবে রান্না করাকে "প্রযুক্তি" এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করতে পারে; তবে এটি জটিল প্রযুক্তিগত সিস্টেমগুলির ব্যবহারের জন্য মানুষের ভূমিকা এবং তাদের দায়িত্ব এর উপর গুরুত্বারোপও করে। তবুও, যেহেতু প্রযুক্তি সর্বত্র রয়েছে এবং নাটকীয়ভাবে ভূদৃশ্য এবং সমাজ গুলোকে পরিবর্তন করেছে, হিউজেস যুক্তি দিয়েছিলেন যে প্রকৌশলী , বিজ্ঞানীরা এবং পরিচালকরা প্রায়শই বিশ্বাস করেছেন যে তারা প্রযুক্তিটিকে তারা যেমন চান তেমন রূপ দেওয়ার জন্য ব্যবহার করতে পারে্ন। তারা প্রায়শই ধরে নিয়েছে যে প্রযুক্তি সহজেই নিয়ন্ত্রণযোগ্য এবং এই অনুমানটি যথাযথভাবে প্রশ্ন করা উচিত। উদাহরণস্বরূপ, অ্যাভজেনি মরোজভ বিশেষত দুটি ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করেছেন: "ইন্টারনেট কেন্দ্রিক" এবং "সমাধানবাদ"। ইন্টারনেট কেন্দ্রিক ধারণাটি বোঝায় যে আমাদের সমাজ নিশ্চিত যে ইন্টারনেট অন্যতম স্থিতিশীল এবং সুসংহত শক্তি। সমাধানবাদ হল একটি আদর্শ যা বিশ্বাস করে প্রযুক্তির এবং বিশেষত ইন্টারনেটের সুবাদে প্রতিটি সামাজিক সমস্যা সমাধান করা যায়। আসলে, প্রযুক্তির অভ্যন্তরীণভাবে অনিশ্চয়তা এবং সীমাবদ্ধতা রয়েছে। আলেক্সিস মাদ্রিগালের মোরোজভের তত্ত্বের পর্যালোচনা অনুসারে, এটিকে অবহেলা করলে "অপ্রত্যাশিত পরিণতি তারা যে সমস্যার সমাধান করতে চায় তার চেয়ে বেশি ক্ষতির কারণ হতে পারে"। বেনজামিন আর কোহেন এবং গেন ওয়েটিংগার প্রযুক্তির বহুল যোজী প্রভাব সম্পর্কেও আলোচনা করেছিলেন। অতএব, প্রযুক্তির সীমাবদ্ধতাগুলির  নির্ণয় এবং আরও ব্যাপকভাবে বৈজ্ঞানিক জ্ঞান প্রয়োজন - বিশেষত পরিবেশগত বিচার এবং স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সমস্যাগুলির ক্ষেত্রে। ওটিঞ্জার এই যুক্তিটি অব্যাহত রেখেছেন এবং যুক্তি দিয়েছেন যে বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের সীমাবদ্ধতার চলমান স্বীকৃতি বিজ্ঞানীদের এবং ইঞ্জিনিয়ারদের তাদের ভূমিকার নতুন অনুধাবনের সাথে মিশে গেছে। প্রযুক্তি এবং বিজ্ঞানের এই ধরনের প্রভাবে প্রযুক্তিগত পেশাদারদের এই প্রক্রিয়াটিতে তাদের ভূমিকা আলাদাভাবে বিবেচনা করা উচিত। কেবলমাত্র তথ্য এবং প্রযুক্তিগত সমাধান সরবরাহকারীদের চেয়ে গবেষণা এবং সমস্যা সমাধানে তাদের নিজেকে নিয়োজিত করতে হবে। অন্যান্য প্রাণী প্রজাতি মৌলিক প্রযুক্তির ব্যবহার মানব ছাড়াও অন্যান্য প্রাণী প্রজাতির বৈশিষ্ট্য। এর মধ্যে শিম্পাঞ্জি, কিছু ডলফিন সম্প্রদায়, এবং কাকের মতো প্রাইমেট অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। প্রযুক্তির আরও বৈশিষ্ট্যগত দৃষ্টিভঙ্গিকে সক্রিয় পরিবেশগত নিয়ন্ত্রণ ও নিয়ন্ত্রণের নীতিশাস্ত্র হিসেবে বিবেচনা করে আমরা প্রাণীর উদাহরণ গুলি যেমন বিভার এবং তাদের বাঁধগুলো, বা মৌমাছি এবং তাদের মধুচক্রগুলিও উল্লেখ করতে পারি। সরঞ্জাম তৈরি ও ব্যবহারের দক্ষতা একসময় Homo গণ এর একটি সংজ্ঞাযুক্ত বৈশিষ্ট্য হিসেবে বিবেচিত হত। তবে শিম্পাঞ্জি এবং এদের সম্পর্কিত প্রাইমেটের মধ্যে সরঞ্জাম নির্মাণের আবিষ্কারটি মানুষের একমাত্র প্রযুক্তি ব্যবহারের ধারণাটিকে প্রত্যাখ্যান করেছে। উদাহরণস্বরূপ, গবেষকরা পর্যবেক্ষণ করেছেন বুনো শিম্পাঞ্জি গুলি চারণের জন্য সরঞ্জামগুলি ব্যবহার করে: ব্যবহৃত কয়েকটি সরঞ্জামের মধ্যে রয়েছে লিফ স্পঞ্জস , ডাইমেট ফিশিং প্রোব, কীটপতঙ্গ এবং লিভার। পশ্চিম আফ্রিকান শিম্পাঞ্জি পাথরের হাতুড়ি ও নেহাই ব্যবহার করে বাদাম গুড়া করার জন্য যেমনটা বোয়া ভিস্তা, ব্রাজিল এর একপ্রকার সন্ন্যাসী বানরও করে থাকে। ভবিষ্যত প্রযুক্তি প্রযুক্তির তত্ত্বগুলি প্রায়শই কোনো সময়ের উচ্চ প্রযুক্তি এবং বিজ্ঞানের উপর ভিত্তি করে প্রযুক্তির ভবিষ্যতের ভবিষ্যদ্বাণী করার চেষ্টা করে। ভবিষ্যতের সমস্ত পূর্বাভাসের মতো, প্রযুক্তিও অনিশ্চিত। ২০০৫ সালে, ভবিষ্যৎ বিদ রে কুর্জওয়েল ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে প্রযুক্তির ভবিষ্যতে মূলত জেনেটিক্স, ন্যানো টেকনোলজি ও রোবটিক্স এর একটি ওভারল্যাপিং "জিএনআর রেভোলিউশন" সমন্বয় থাকবে এবং এই তিনটির মধ্যে রোবটিক্স সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হবে। তথ্যসূত্র বিষয়শ্রেণী:প্রযুক্তি __FORCETOC__
প্রযুক্তি
শিক্ষা প্রক্রিয়ায় কোন ব্যক্তির অন্তর্নিহিত গুণাবলীর পূর্ণ বিকাশের জন্য উৎসাহ দেয়া হয় এবং সমাজের একজন উৎপাদনশীল সদস্য হিসেবে প্রতিষ্ঠালাভের জন্য যে সকল দক্ষতা প্রয়োজন সেগুলো অর্জনে সহায়তা করা হয়। সাধারণ অর্থে জ্ঞান বা দক্ষতা অর্জনই শিক্ষা। ব্যাপক অর্থে পদ্ধতিগতভাবে জ্ঞানলাভের প্রক্রিয়াকেই শিক্ষা বলে। তবে শিক্ষা হল সম্ভাবনার পরিপূর্ণ বিকাশ সাধনের অব্যাহত অনুশীলন। বাংলা শিক্ষা শব্দটি এসেছে ‍'শাস' ধাতু থেকে। যার অর্থ শাসন করা বা উপদেশ দান করা। অন্যদিকে শিক্ষার ইংরেজি প্রতিশব্দ এডুকেশন এসেছে ল্যাটিন শব্দ এডুকেয়ার বা এডুকাতুম থেকে। যার অর্থ বের করে আনা অর্থাৎ ভেতরের সম্ভাবনাকে বাইরে বের করে নিয়ে আসা বা বিকশিত করা। হেরা গুহায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর সর্বপ্রথম যে ওহী নাযিল হয় তা হচ্ছে, ‘পড়, তোমার প্রতিপালকের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাট রক্তপিন্ড থেকে।’-সূরা আলাক : ১-২।হজরত ইবনে মাসঊদ (রা.) বলেন, ‘মুনাফিক জ্ঞানের পরিচয় দেয় মুখে আর মুমিনের জ্ঞানবত্তা প্রকাশ হয় তার আমলের মাধ্যমে। ’ তিনি আরও বলেন, ‘যদি জ্ঞানের অধিকারীগণ জ্ঞানকে সংরক্ষণ করতেন এবং যথার্থ স্থানে তাকে রাখতেন তবে তারা দুনিয়াবাসীর ওপর জয়লাভ করতেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য যে, তারা জ্ঞানকে দুনিয়াদারদের কাছে সমর্পণ করেছেন দুনিয়াবী স্বার্থ হাসিলের অভিপ্রায়ে। ফলে তারা অপদস্ত হয়েছেন। -কিতাবুল উম : ১/১৫৬ সক্রেটিসের ভাষায় “শিক্ষা হল মিথ্যার অপনোদন ও সত্যের বিকাশ।” এরিস্টটল বলেন “সুস্থ দেহে সুস্থ মন তৈরি করাই হল শিক্ষা”। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায় “শিক্ষা হল তাই যা আমাদের কেবল তথ্য পরিবেশনই করে না বিশ্বসত্তার সাথে সামঞ্জস্য রেখে আমাদের জীবনকে গড়ে তোলে।” শব্দের উৎপত্তি শিক্ষা শব্দের উৎপত্তি সংস্কৃত "শাস" ধাতু থেকে। সাধারণভাবে বলা যায় মানুষের আচরণের কাঙ্ক্ষিত, বাঞ্চিত এবং ইতিবাচক পরির্বতনই হলো শিক্ষা। যুগে যুগে নানা মনীষী নানাভাবে শিক্ষাকে সজ্ঞায়িত করেছেন। আবার সময়ের সাথে সাথে শিক্ষার সজ্ঞা বা ধারণাও পরির্বতন এসেছে। ইংরেজিতে ব্যাকরণগতভাবে, "এডুকেশন" শব্দটি লাতিন ēducātiō (যার অর্থ প্রজনন এবং লালন পালন করা), ēducō (যার অর্থ আমি শিক্ষাদান করি, আমি প্রশিক্ষণ দেই) যা হোমোনিম ēdūcō এর সাথে সম্পর্কিত (যার অর্থ আমি এগিয়ে নিয়ে যাই, আমি উত্থাপন করি) এবং Dōcō ( যার অর্থ আমি নেতৃত্ব দেই, আমি পরিচালনা করি ) থেকে উৎপত্তি হয়েছে। ইতিহাস প্রাগৈতিহাসিক কালে শিক্ষা শুরু হয়েছিল বয়স্ক ব্যক্তিদের দ্বারা যুবকদের সমাজের জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞান ও দক্ষতার প্রশিক্ষণ দেয়ার মাধ্যমে। প্রাক-শিক্ষিত সমাজ মূলত মৌখিকভাবে এবং অনুকরণের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। গল্প-বলার মাধ্যমে জ্ঞান, মূল্যবোধ এবং দক্ষতা এক প্রজন্ম থেকে পরের প্রজন্মের কাছে স্থানান্তরিত হয়েছে। সাংস্কৃতিক দক্ষতা প্রসারিত হতে পারে অনুকরণের মাধ্যমে জ্ঞান অর্জন ও আনুষ্ঠানিক শিক্ষা উন্নত করার মধ্যমে। মিশরে মিডল কিংডম এর সময় স্কুল বিদ্যমান ছিল। প্লেটো এথেন্সে একাডেমী প্রতিষ্ঠা করেছিলেন যা ছিল ইউরোপের উচ্চতর শিক্ষার প্রথম প্রতিষ্ঠান। ৩৩০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে মিশরে আলেকজান্দ্রিয়া শহরটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, এথেন্সের বুদ্ধিবৃত্তিক প্যাড হিসাবে এটি প্রাচীন গ্রিসে বিখ্যাত হয়ে ওঠেছিল। সেখানে, আলেকজান্দ্রিয়ার বৃহত্তর গ্রন্থাগারটি খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দীতে নির্মিত হয়েছিল। ৪৭৬ খ্রিষ্টাব্দে রোমের পতনের পর ইউরোপীয় সভ্যতায় সাক্ষরতা এবং সংগঠনের পতন ঘটেছিল। চীনে কনফুসিয়াস (৫৫১-৪৭৯ খ্রিস্টপূর্বাব্দ), লূ এর রাজ্যের সবচেয়ে প্রভাবশালী প্রাচীন দার্শনিক ছিলেন, যার শিক্ষাগত দৃষ্টিভঙ্গি চীনের সমাজ এবং কোরিয়া, জাপান ও ভিয়েতনামের মত প্রতিবেশী রাষ্ট্রের উপর প্রভাব বিস্তার করেছিল। কনফুসিয়াস শিষ্যদের একত্রিত করেন এবং একটি শাসককে নিরর্থকভাবে অনুসন্ধান করেন, যিনি সুশাসনের জন্য তার আদর্শগুলি গ্রহণ করবে। তার Analects অনুসরণকারীদের দ্বারা লিখিত হয়েছিল যা পূর্ব এশিয়ায় আধুনিক যুগেও শিক্ষার উপর ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে চলেছে। রোমের পতনের পর, ক্যাথলিক চার্চ পশ্চিম ইউরোপে সাক্ষরতার ও স্কলারশিপের একমাত্র রক্ষাকর্তা হয়ে উঠেছিল। চার্চ ক্যাথিড্রাল স্কুলকে আধুনিক যুগের শিক্ষা ব্যবস্থার কেন্দ্র হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেছিল। এই প্রতিষ্ঠানগুলি শেষ পর্যন্ত মধ্যযুগীয় বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইউরোপের বিভিন্ন আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলির অগ্রদূত হিসাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছিল। উচ্চ মধ্যযুগে সময় চার্টার্স ক্যাথিড্রাল দ্বারা বিখ্যাত এবং প্রভাবশালী Chartres ক্যাথিড্রাল স্কুল পরিচালিত হয়েছিল। পশ্চিম ইউরোপের মধ্যযুগীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলি পশ্চিম ইউরোপ জুড়ে সুসংহত ছিল, যা তদন্তের স্বাধীনতাকে উত্সাহিত করে, এবং একদল পণ্ডিত ও প্রাকৃতিক দার্শনিকদের সৃষ্টি করেছিল , যেমন, নেপলস বিশ্ববিদ্যালয়ের টমাস অ্যাকুইনাস , অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির রবার্ট গ্রোসেটেস্ট এবং বৈজ্ঞানিক পরীক্ষার পদ্ধতিগত পদ্ধতির প্রারম্ভিক প্রকাশক, এবং জৈবিক গবেষণার অগ্রদূত সেন্ট অ্যালবার্ট গ্রেট ছিলেন অন্যতম। ১০৮৮ সালে প্রতিষ্ঠিত বলোনি বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রথম এবং প্রাচীনতম অপারেটিং ইউনিভার্সিটি বলে মনে করা হয়। মধ্যযুগীয় সময়ে মধ্যপ্রাচ্যে ইসলামিক বিজ্ঞান ও গণিত সমৃদ্ধ হয়েছিল ইসলামিক খলিফার অধীনে, যা পশ্চিম আইবেরিয়ান উপদ্বীপ থেকে পূর্ব সিন্ধু পর্যন্ত এবং দক্ষিণে আলমোরাভিড রাজবংশ ও মালির সাম্রাজ্য পর্যন্ত বিস্তৃতি লাভ করেছিল। ইউরোপে রেনেসাঁ প্রাচীন গ্রিক এবং রোমান সভ্যতার বৈজ্ঞানিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক তদন্ত এবং উপলব্ধির নতুন যুগের সূচনা করেছিল। প্রায় ১৪৫০ সালের দিকে জোহানেস গুটেনবার্গ একটি প্রিন্টিং প্রেস তৈরি করেন, যা সাহিত্যের কাজকে আরও দ্রুত ছড়িয়ে দেওয়ার অনুপ্রেরণা দিয়েছিল। ইউরোপীয় সাম্রাজ্যের যুগে ইউরোপীয় দর্শন, ধর্ম, শিল্প ও বিজ্ঞান বিষয়ক ধারণাগুলি বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছিল। মিশনারি ও পণ্ডিতরা অন্যান্য সভ্যতা থেকে নতুন ধারণা নিয়ে আসছিল - জেসুইট চীন মিশনের সাথে যারা চীন ও ইউরোপের মধ্যে জ্ঞান, বিজ্ঞান এবং সংস্কৃতি প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। ইউরোপ থেকে কাজগুলি অনুবাদ করে যেমন চীনের পণ্ডিতদের জন্য ইউক্লিডের এলিমেন্টস অনুবাদ এবং ইউরোপীয় শ্রোতাদের জন্য কনফুসিয়াসের চিন্তা চেতনা কথা বলা যায়। আলোকায়নের যুগের মাধ্যমে ইউরোপ আরও নিরপেক্ষ শিক্ষাগত দৃষ্টিভঙ্গির প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে ছিল। বেশিরভাগ দেশে আজ নির্দিষ্ট বয়স পর্যন্ত সব শিশুদের জন্য পূর্ণ-সময়ের শিক্ষা স্কুলে বা অন্যত্র বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এই কারণে বাধ্যতামূলক শিক্ষার বিস্তার ও জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে মিলিতভাবে, ইউনেস্কো গণনা করে লক্ষ্য করেছে যে আগামী ৩০ বছরের মধ্যে আরও মানুষ আনুষ্ঠানিক শিক্ষা লাভ করবে যা মানব ইতিহাসে বিরল ঘটনা হবে এটি। শিক্ষার ধরন শিক্ষা একটি জীবনব্যাপী প্রক্রিয়া। মানুষ জন্মের পর থেকে মৃত্যুর আগে মূহুর্ত পর্যন্ত শেখে। তাই শিক্ষার লাভের ধরন বিভিন্ন।যেমন: আনুষ্ঠানিক শিক্ষা আনুষ্ঠানিক শিক্ষা এমন একটি কাঠামোগত পরিবেশে ঘটে থাকে যার সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য হচ্ছে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদান । সাধারণত, একটি স্কুলের পরিবেশে আনুষ্ঠানিক শিক্ষা সঞ্চালিত হয় যেখানে শ্রেণীকক্ষে একাধিক শিক্ষার্থীদের জন্য একজন প্রশিক্ষিত এবং প্রত্যয়িত শিক্ষকের প্রয়োজন পড়ে বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষাদানের জন্য । বেশিরভাগ স্কুলে একটি মানসম্মত আদর্শ ডিজাইন করা হয় যার মাধ্যমে সিস্টেমে সমস্ত শিক্ষাগত পছন্দগুলি নিয়ন্ত্রণ করা হয় । এই ধরনের পছন্দগুলি পাঠ্যক্রম, সাংগঠনিক মডেল, শারীরিক শিক্ষার স্থানগুলির (যেমন শ্রেণীকক্ষ) নকশা, ছাত্র-শিক্ষক ইন্টারঅ্যাকশন, মূল্যায়ন পদ্ধতি, শ্রেণীর আকার, শিক্ষাগত কর্মকাণ্ড, এবং আরও অনেক কিছু অন্তর্ভুক্ত করে।শিক্ষকদের কাছ বেল বাজাতে পারেন। প্রাকস্কুল প্রাকস্কুলগুলি প্রায় তিন থেকে সাত বছর বয়স পর্যন্ত ছেলেমেয়েদের শিক্ষা প্রদান করে যা দেশের উপর নির্ভর করে যখন শিক্ষার্থীরা প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে প্রবেশ করে । এইগুলি নার্সারি স্কুল এবং কিন্ডারগার্টেন হিসাবেও পরিচিত । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, যেখানে কিন্ডারগার্টেন শব্দটি প্রাথমিক শিক্ষার জন্য ব্যবহৃত শব্দ । কিন্ডারগার্টেন তিন থেকে সাত বছরের জন্য একটি শিশু-কেন্দ্রিক প্রাক পাঠ্যক্রম প্রদান করে । এখানে মূলত শিশুদের শারীরিক, বুদ্ধিবৃত্তিক এবং নৈতিক প্রকৃতির উদ্ঘাটন করার জন্য চেষ্টা করা হয় । প্রাথমিক প্রাথমিক শিক্ষা আনুষ্ঠানিক ও কাঠামোগত যা প্রথম পাঁচ থেকে সাত বছর নিয়ে গঠিত। সাধারণত, প্রাথমিক শিক্ষা পাঁচ থেকে ছয় বছর এবং ছয় থেকে আট বছর বয়স পর্যন্ত পড়াশোনা করানো হয়ে থাকে, যদিও এর মধ্যে, মাঝে মাঝে দেশ ভেদে ভিন্নতা রয়েছে। বিশ্বব্যাপী, ছয় থেকে বারো বছর বয়সী প্রায় ৮৯% শিশু প্রাথমিক শিক্ষায় ভর্তি হয় এবং এই অনুপাত বেড়েই চলেছে। ইউনেস্কো দ্বারা চালিত ২০১৫ সালের মধ্যে "সবার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা" বেশিরভাগ দেশ এই প্রোগ্রাম বাস্তবায়নের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছে এবং অনেক দেশে এটি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে । প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার মধ্যে বিভাজন কিছুটা আলাদা, তবে এটি সাধারণত প্রায় এগারো বা বারো বছর বয়সের মধ্যে ঘটে । কিছু শিক্ষা ব্যবস্থায় পৃথক মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে, যেখানে চৌদ্দ বছর বয়স পর্যন্ত মাধ্যমিক শিক্ষার চূড়ান্ত পর্যায়ে স্থানান্তর করা হয় । প্রাথমিক শিক্ষা প্রদানের স্কুলগুলি প্রাথমিকভাবে প্রাথমিক বিদ্যালয় হিসাবে পরিচিত। প্রাথমিক বিদ্যালয়কে আবার শিশু এবং জুনিয়র স্কুলের মধ্যে বিভক্ত করা হয়। ভারতে, উদাহরণস্বরূপ, বারো বছর ধরে বাধ্যতামূলক শিক্ষা, আট বছরে প্রাথমিক(elimentary) শিক্ষা, প্রাথমিক শিক্ষার জন্য পাঁচ বছর এবং উচ্চ প্রাথমিক শিক্ষার জন্য তিন বছর করা হয়েছে । ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ এডুকেশনাল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং দ্বারা পরিকল্পিত একটি জাতীয় পাঠ্যক্রমের কাঠামোর উপর ভিত্তি করে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ১২ বছরের বাধ্যতামূলক স্কুল শিক্ষা প্রদান করা হয়। মাধ্যমিক বিশ্বের বেশিরভাগ সমসাময়িক শিক্ষা ব্যবস্থায়, মাধ্যমিক শিক্ষায় বয়ঃসন্ধির সময় আনুষ্ঠানিক শিক্ষার প্রসার ঘটে। এটি প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য সাধারণত "মাধ্যমিক উত্তর" বা "উচ্চতর" শিক্ষা (যেমন, বিশ্ববিদ্যালয়, বৃত্তিমূলক স্কুল) থেকে অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্য সাধারণত প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক । এই সিস্টেমের উপর ভিত্তি করে এই সময়ের জন্য বিদ্যালয়গুলি, বা এর একটি অংশকে সেকেন্ডারি বা উচ্চ বিদ্যালয়, জিমন্যাশিয়াম, লিসিম, মধ্যম স্কুল, কলেজ বা বৃত্তিমূলক স্কুল বলা যেতে পারে। এই পদগুলির কোনও সঠিক অর্থ এক সিস্টেম থেকে অন্যটিতে পরিবর্তিত হতে পারে । প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার মধ্যে সঠিক সীমাও দেশ ভেদে আলাদা হতে পারে । তবে সাধারণত সপ্তম থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত স্কুলে যাওয়া হয় । মাধ্যমিক শিক্ষার প্রধানত কিশোর বয়সের মধ্যেই ঘটে । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা এবং অস্ট্রেলিয়ায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার সাথে কখনও কখনও K-12 নির্দেশ করা হয় , এবং নিউজিল্যান্ডে বছরে ১-১৩ বছর পর্যন্ত ধরা হয়। মাধ্যমিক শিক্ষার উদ্দেশ্য হতে পারে সাধারণ জ্ঞান দান , উচ্চশিক্ষার জন্য প্রস্তুত করা, অথবা সরাসরি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যেতে পারে পেশার জন্য । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১৯১০ সাল পর্যন্ত মাধ্যমিক শিক্ষার প্রচলন ছিল না । বড় কর্পোরেশনের উত্থান এবং কারখানায় প্রযুক্তির অগ্রগতির সাথে দক্ষ শ্রমিকদের প্রয়োজন ছিল । এই নতুন চাকরির চাহিদা পূরণের জন্য উচ্চ বিদ্যালয়গুলি তৈরি করা হয়েছিল, কারিকুলামটি বাস্তব পেশাগত কাজের দক্ষতার উপর নিবদ্ধ ছিল যা ছাত্রদেরকে সাদা কলার বা দক্ষ নীল কলারের কাজের জন্য ভালভাবে প্রস্তুত করবে। এটি নিয়োগকর্তাদের এবং কর্মীদের উভয়ের জন্য উপকারী বলে প্রমাণিত হয়েছে, যেহেতু উন্নত মানবাধিকারের ফলে নিয়োগকর্তার খরচ কম হচ্ছিল, অন্যদিকে দক্ষ শ্রমিকরা উচ্চতর বেতন ও পাচ্ছিল । ইউরোপে মাধ্যমিক শিক্ষার একটি দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে । যেখানে ষোড়শ শতকের গোঁড়ার দিকে ব্যাকরণ স্কুল বা একাডেমী , পাবলিক স্কুলগুলির আকারে, বিনা বেতনে পড়ার জন্য স্কুল বা দাতব্য শিক্ষাগত ফাউন্ডেশনগুলির কথা উল্লেখ করা যেতে পারে যা ব্যাপকভাবে প্রচলিত ছিল । কমিউনিটি কলেজ পরিবর্তনশীল পর্যায়ে অন্য একটি বিকল্প প্রস্তাব করে । তারা একটি নির্দিষ্ট এলাকার বাসিন্দাদের nonresidential জুনিয়র কলেজ কোর্স প্রদান করে। উচ্চতর উচ্চশিক্ষা হল তৃতীয় পর্যায়, বা পোষ্টসেকন্ডারি শিক্ষা, এটি একটি অ-বাধ্যতামূলক শিক্ষাগত স্তর যা উচ্চ বিদ্যালয় বা মাধ্যমিক বিদ্যালয় যেমন স্কুল সমাপ্তি অনুসরণ করে । তৃতীয়তঃ স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর শিক্ষা সহ বৃত্তিমূলক শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণ কে এর অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রধানত উচ্চ শিক্ষা প্রদান করে। সমষ্টিগতভাবে এইগুলি উচ্চ বিভাগ হিসাবে পরিচিত। উচ্চ শিক্ষা সম্পন্ন করা ব্যক্তি সাধারণত সার্টিফিকেট, ডিপ্লোমা, বা একাডেমিক ডিগ্রী প্রাপ্ত হয়ে থাকে । উচ্চ শিক্ষা সাধারণত একটি ডিগ্রী-স্তর বা ডিগ্রী যোগ্যতা জড়িত থাকে। অধিকাংশ উন্নত দেশগুলিতে জনসংখ্যা (৫০% পর্যন্ত) এখন তাদের জীবনের কোন একটা সময় উচ্চশিক্ষায় প্রবেশ করে। জাতীয় অর্থনীতির জন্য উচ্চশিক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, উভয়ই একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্প হিসেবে বিবেচিত হয়, এবং বাকি প্রশিক্ষিত এবং শিক্ষিত কর্মীরা অর্থনীতির উৎস হিসাবে গণ্য । বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা শিক্ষাদান, গবেষণা এবং সামাজিক সেবা কার্যক্রমকে অন্তর্ভুক্ত করে, এবং এটি স্নাতক পর্যায়ে উভয়ই অন্তর্ভুক্ত (কখনও কখনও উচ্চতর বিভাগ হিসাবে উল্লেখ করা হয়) এবং স্নাতক (বা স্নাতকোত্তর) স্তর (কখনও কখনও স্নাতক স্কুল হিসাবে পরিচিত)। বিশ্ববিদ্যালয় সাধারণত বেশ কিছু কলেজ নিয়ে গঠিত হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ইউনিভার্সিটিগুলি ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো ব্যক্তিগত এবং স্বাধীন হতে পারে; সরকারি এবং স্টেট নিয়ন্ত্রিত পেনসিলভানিয়া উচ্চ মাধ্যমিকের সিস্টেমের মতো রাজ্য শাসিত; বা স্বাধীন, কিন্তু ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মত স্টেট থেকে তহবিল প্রাপ্ত হতে পারে । এখন ইন্টারনেটের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কাছে সহজলভ্য বেশ কিছু ক্যারিয়ার নির্দিষ্ট কোর্স পাওয়া যায়। উদার শিল্প শিক্ষা(liberal arts education) নামে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার একটি কোর্স আছে যাকে কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রম হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা যেতে পারে যার মূল কাজ হল সাধারণ জ্ঞান প্রদান এবং একটি পেশাদার, বৃত্তিমূলক বা কারিগরি পাঠ্যক্রমের বিপরীতে সাধারণ বুদ্ধিবৃত্তিক ক্ষমতা বিকাশের লক্ষ্যে শিক্ষাদান করা । ইউরোপে উদার শিল্প শিক্ষার( liberal arts education) সূচনা হয়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্রে liberal arts college শব্দটির সাথে যুক্ত। বৃত্তিমূলক বৃত্তিমূলক শিক্ষা হচ্ছে সরাসরি এবং বাস্তব প্রশিক্ষণের উপর নিবদ্ধ শিক্ষার একটি ফর্ম । পেশাগত শিক্ষা একটি শিক্ষানবিশ বা ইন্টার্নশিপের পাশাপাশি চলতে পারে এমন একটি কাঠামো যেমন , কৃষি, প্রকৌশল, ঔষধ, স্থাপত্য এবং কলা এর অন্তর্ভুক্ত। বিশেষ অতীতে অক্ষম ছিল তারা প্রায়ই সরকারি শিক্ষার জন্য যোগ্য ছিল না । প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য শিক্ষা বার বার চিকিৎসক বা বিশেষ টিউটর দ্বারা অস্বীকৃত হত । এই প্রারম্ভিক চিকিৎসক (ইটারড, সেগোইন, হাউ, গালাদেডের মত মানুষ) আজকে বিশেষ শিক্ষার ভিত্তি স্থাপন করেছে । তারা স্বতন্ত্র এবং কার্যকরী দক্ষতার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করেন । তার প্রাথমিক বছরগুলিতে, বিশেষ শিক্ষা শুধুমাত্র গুরুতর অক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য প্রদান করা হয়েছিল, কিন্তু সম্প্রতি এটি সবার জন্য খোলা হয়েছে । অন্যান্য শিক্ষা ব্যবস্থা যদিও আজকাল তা "বিকল্প" হিসাবে বিবেচিত, অধিকাংশ বিকল্প শিক্ষা ব্যবস্থা প্রাচীন কাল থেকেই বিদ্যমান ছিল । উনবিংশ শতকের প্রথম দিকে পাবলিক স্কুল ব্যবস্থার ব্যাপকভাবে উন্নত হওয়ার পর, কিছু বাবা-মা নতুন ব্যবস্থা নিয়ে অসন্তুষ্ট হয়। অনুন্নত সীমাবদ্ধতার প্রতিক্রিয়া এবং ঐতিহ্যগত শিক্ষার ব্যর্থতার অংশ হিসেবে বিকল্প শিক্ষাটি উন্নত হয় । বিস্তৃত পরিসরে শিক্ষার প্রসার ঘটেছে বিকল্প বিদ্যালয় সহ , স্ব-শিক্ষণ, গৃহে শিক্ষাদান এবং বিদ্যালয়ের বাহিরে শিক্ষাদান । বিকল্প স্কুলের মধ্যে মন্টেসরি স্কুল, ওয়াল্ডর্ফ স্কুল (বা স্টেনার স্কুল), ফ্রেন্ডস স্কুল, স্যান্ডস স্কুল, সামারলিল স্কুল, ওয়ালডেনের পথ, পিপল গ্রোভ স্কুল, সডবেরি ভ্যালি স্কুল, কৃষ্ণমূর্তি স্কুল এবং ওপেন ক্লাসরুম স্কুল রয়েছে । চার্টার স্কুল বিকল্প শিক্ষার অন্য একটি উদাহরণ, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সাম্প্রতিক বছরগুলিতে যুক্ত হয়েছে এবং পাবলিক শিক্ষা ব্যবস্থায় তা অধিক গুরুত্ব পেয়েছে। সময়ের সাথে সাথে, এই পরীক্ষা এবং দৃষ্টান্তের চ্যালেঞ্জ থেকে কিছু ধারণা শিক্ষা ক্ষেত্রে আদর্শ হিসাবে গ্রহণ করা যেতে পারে, ঠিক যেমন উনবিংশ শতকের জার্মানিতে ফ্রেডরিখ ফ্রোবেলের শৈশব শিক্ষার দৃষ্টিভঙ্গি সমসাময়িক কিন্ডারগার্টেন শ্রেণীকক্ষে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে । অন্যান্য প্রভাবশালী লেখক ও চিন্তাবিদরা সুইস মানবতাবাদী জোহান হেনরিচ পেস্টলজ্জীকে অন্তর্ভুক্ত করেছেন; আমেরিকান ট্রানস্যানডেন্টালিস্ট আমোস ব্রোনসন অ্যালকোট, রালফ ওয়াল্ডো এমারসন এবং হেনরি ডেভিড থোরো; প্রগতিশীল শিক্ষা প্রতিষ্ঠাতা, জন ডুয়ি এবং ফ্রান্সিস পার্কার; এবং মারিয়া মন্টেসরি এবং রুডলফ স্টিনারের মত শিক্ষাবিদদের অগ্রদূত, এবং সম্প্রতি জন কেলডওয়েল হোল্ট, পল গুডম্যান, ফ্রেডেরিক মেয়ার, জর্জ ডেনিসন এবং ইভান ইলিচ। আদিবাসী আদিবাসী শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে আদিবাসী জ্ঞান, মডেল, পদ্ধতি, আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যবস্থা প্রচলিত আছে । উপনিবেশ উত্তর প্রেক্ষাপটে, উপনিবেশবাদ প্রক্রিয়ায় আদিবাসী শিক্ষা পদ্ধতির বর্ধিত স্বীকৃতি এবং ব্যবহারের মাধ্যমে আদিবাসী জ্ঞান জ্ঞান চর্চা বেড়ে যেতে পারে। অধিকন্তু, এটি আদিবাসী সম্প্রদায়গুলিকে তাদের ভাষা ও সংস্কৃতির পুনর্নির্মাণ এবং পুনর্বিন্যস্ত করতে পারে এবং আদিবাসী ছাত্রদের শিক্ষাগত সাফল্যের উন্নতি সাধন করতে পারে। অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা ইকোনোমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ওইসিডি) সংস্থা দ্বারা নির্ধারিত শিক্ষার তিনটি পদ্ধতির মধ্যে অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা অন্যতম । অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা বিভিন্ন জায়গায় যেমন বাড়িতে, কাজের মধ্যে , এবং দৈনিক ইন্টারঅ্যাকশন যা সমাজের সদস্যদের মধ্যে শেয়ারে মাধ্যমে পরিচালিত হয় । অনেক শিক্ষার্থীর জন্য ভাষা অধিগ্রহণ, সাংস্কৃতিক নিয়ম এবং আচরণকে অন্তর্ভুক্ত করা যায় । অল্পবয়সী ছেলেমেয়েদের জন্য অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা একটি চলমান প্রক্রিয়া যা বিভিন্ন জায়গায় , যেমন স্কুলের সময়ের বাহিরে , কমিউনিটি সেন্টারে এবং মিডিয়া ল্যাবগুলিতে পরিচালিত হয়ে থাকে। অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা সাধারণত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বাহিরে ঘটে থাকে যা নির্দিষ্ট পাঠ্যক্রমের অনুসরণ করে না । বিশেষ করে বাস্তবের পরিবর্তনের সাথে ব্যবহারিক প্রয়োজনীয়তার উপর ভিত্তি করে এর উৎপত্তি ঘটতে পারে । এটা অপরিহার্যভাবে তথাকথিত শিক্ষা ব্যবস্থাকে অনুসরণ করেনা। শিক্ষণীয়ভাবে সচেতন, নিয়মানুবর্তিতা এবং বিষয় অনুযায়ী, কিন্তু অজ্ঞানভাবে আনুষ্ঠানিক, holistically সমস্যা সম্পর্কিত, এবং পরিস্থিতি ব্যবস্থাপনা এবং জীবনের জন্য ফিটনেস সম্পর্কিত পরিকল্পনা করা হয় না। এটা মানুষ তার দৈনন্দিন জীবনের সরাসরি অভিজ্ঞতা থেকে অর্জন করে। উনবিংশ শতকে শৈশবের বিকাশে 'বিনোদন দ্বারা শিক্ষা' ধারণার প্রয়োগ করা হয়েছিল। বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে তরুণ প্রজন্মকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য ধারণাটি আরও বিস্তৃত করা হয়েছিল কিন্তু বেশি জোর দেওয়া হয়েছিল শারীরিক কার্যকলাপের উপর । এল.পি জ্যাকস, জীবনযাত্রার শিক্ষার প্রথম প্রবর্তক, বিনোদন দ্বারা শিক্ষার বর্ণনা দিয়েছেন: "জীবন যাপনের শিল্পে একজন মাস্টার তার কাজের এবং খেলার মধ্যে, তার শ্রম এবং অবসরের মধ্যে , তার মন এবং শরীরের মধ্যে , তার শিক্ষা এবং বিনোদনের মধ্যে কোন পার্থক্য খোঁজেন না । তিনি জানেননা যে তিনি কী কাজ করছেন । এবং অন্য যে কোনও কাজ তিনি করেন বা খেলেন তা ছেড়ে দিয়ে তিনি নিজের শ্রেষ্ঠত্বের দৃষ্টিভঙ্গি অনুধাবন করার জন্য চেষ্টা করেন। নিজের জন্য তিনি সবসময়ই উভয় কাজ করছেন বলে মনে করেন। যা করছেন তা নিজের জন্য ভাল । বিনোদনের মাধ্যমে শিক্ষা একটি সুযোগ যেখানে জীবনের সমস্ত কর্মের মাধ্যমে মানুষ অনেক কিছু শিখতে পারে । চিকিৎসা বিজ্ঞানের ছাত্রদের এনাটমি শিক্ষা দেওয়ার জন্য ওয়েস্টার্ন অন্টারিওর ইউনিভার্সিটি এই ধারণাটি পুনর্বিন্যস্ত করেছে। স্ব-নির্দেশিত শিক্ষা অটোডাইডেকটিক্সিজম একটি চিত্তাকর্ষক গ্রহণ প্রক্রিয়া যেখানে "নিজে নিজে শেখা" বা "নিজের দ্বারা" বা স্ব-শিক্ষক হিসাবে ভূমিকা পালন করতে হয় । কিছু অটোডাইডেক্টস( স্ব-শিক্ষায় শিক্ষিত) প্রচুর সময় ব্যয় করে লাইব্রেরী ও শিক্ষাগত ওয়েবসাইটগুলির সম্পদগুলি পর্যালোচনা করার মাধ্যমে । একজন লোক তার জীবনের প্রায় যেকোনো সময় অটোডাইডেক্ট হতে পারে। যদিও কেউ কেউ একটি নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে এবং একটি প্রচলিত পদ্ধতিতে তারা নিজেদেরকে আনরিলেটেড বিষয় অবহিত করতে পারে । উল্লেখযোগ্য অটোডাইডেক্টসের( স্ব-শিক্ষায় শিক্ষিত) মধ্যে আব্রাহাম লিঙ্কন (ইউএস প্রেসিডেন্ট), শ্রীনিবাস রামানুজন (গণিতবিদ), মাইকেল ফ্যারাডে (রসায়নবিদ ও পদার্থবিজ্ঞানী), চার্লস ডারউইন (প্রফেসর), টমাস আলভা এডিসন (আবিষ্কারক), তাদো আন্ডো (স্থপতি), জর্জ বার্নার্ড শ (নাট্যকার), ফ্রাঙ্ক জাপ্পা (সুরকার, রেকর্ডিং প্রকৌশলী, চলচ্চিত্র পরিচালক) এবং লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি(প্রকৌশলী, গণিতবিদ) অন্যতম । উন্মুক্ত শিক্ষা ও ইলেকট্রনিক প্রযুক্তি ২০১২ সালে ইলেকট্রনিক শিক্ষাগত প্রযুক্তি (ই-লার্নিং নামেও পরিচিত) এর আধুনিক ব্যবহারটি প্রথাগত শিক্ষার হার থেকে ১৪ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে । ওপেন এডুকেশন ক্রমবর্ধমান শিক্ষা ব্যবস্থা হিসেবে পরিণত হয়েছে । ঐতিহ্যগত শিক্ষা পদ্ধতির তুলনায় তার দক্ষতা এবং ফলাফলই তার মূল কারণ । শিক্ষার খরচ সমগ্র ইতিহাস জুড়ে একটি সমস্যা হিসেবে বিবেচিত হয়েছে, এবং এটি এখন বেশিরভাগ দেশের একটি প্রধান রাজনৈতিক বিষয় । অনলাইন কোর্স প্রায়ই মুখোমুখি ক্লাসের চেয়ে বেশি ব্যয়বহুল হতে পারে। ২০০৯সালে মোট ১৮২ টিরও বেশি কলেজের উপর জরিপ করে দেখা যায় যে প্রায় অর্ধেক সংখ্যক লোকই বলেছে যে অনলাইন ভিত্তিক শিক্ষার খরচ ক্যাম্পাস ভিত্তিক শিক্ষার চেয়ে উচ্চতর ছিল । অনেক বড় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠানগুলি বর্তমানে হার্ভার্ড, এমআইটি এবং বার্কলে যেমন ফ্রি বা প্রায় বিনামূল্যে বিনামূল্যে কোর্স অফার করছে EDX গঠন করার জন্য । উন্মুক্ত শিক্ষা প্রদানের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় হল স্ট্যানফোর্ড, প্রিন্সটন, ডিউক, জনস হপকিন্স, এডিনবার্গ, ইউ. পেন, ইউ.মিশিগান, ইউ ভার্জিনিয়া, ইউ.ওয়াশিংটন, এবং ক্যালটেক । মুদ্রণযন্ত্র প্রকাশ হবার পর থেকে এই ব্যবস্থার মধ্যে শিক্ষা ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় পরিবর্তন হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে । কার্যকারিতার উপর অনুকূল পরিবেশ থাকা সত্ত্বেও অনেক মানুষ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কারণে ঐতিহ্যবাহী ক্যাম্পাসকে শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে নির্বাচন করতে চায়। উন্মুক্ত শিক্ষার ডিগ্রী প্রদান প্রচলিত মেধা-পদ্ধতির ডিগ্রী প্রদানের মতো সাধারণ নয় এমনকি এটি ক্যাম্পাস ভিত্তিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো ও নয় । যদিও কিছু উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় ইতোমধ্যে ইউনাইটেড কিংডমে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের মত প্রচলিত ডিগ্রী প্রদান করে আসতেছে । বর্তমানে বেশিরভাগ উন্মুক্ত শিক্ষা উৎসগুলি তাদের নিজস্ব গঠনের সনদপত্র প্রদান করে। উন্মুক্ত শিক্ষার জনপ্রিয়তার কারণে, এই নতুন ধরনের একাডেমিক সার্টিফিকেটগুলি ঐতিহ্যগত ডিগ্রির মতো আরও সম্মান এবং সমান "একাডেমিক মূল্য" অর্জন করছে। অনেক উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদের জন্য মান সংবলিত পরীক্ষা এবং ঐতিহ্যগত ডিগ্রী প্রদান করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে । একটি নতুন সংস্কৃতি শুরু হচ্ছে এমন ব্যক্তিদের জন্য যারা ঐতিহ্যবাহী ক্যাম্পাসে আসক্ত সামাজিক সংযোগগুলি খুঁজছেন । উদাহরণস্বরূপ, শিক্ষার্থীরা অধ্যয়নের জন্য গ্রুপ তৈরি করতে পারে, মিলিত হতে পারবে যেমন তারা UnCollege নাম কলেজ তৈরি করতে পারে। প্র উন্নয়নের লক্ষ্য ১৯০৯ সাল থেকে উন্নয়নশীল বিশ্বের শিশুদের স্কুলে অংশগ্রহণের অনুপাত বৃদ্ধি পেয়েছে । এর আগে, ছেলেদের একটি ছোট্ট অংশ স্কুলে পড়ত। একবিংশ শতকের শুরুতে বিশ্বের অধিকাংশ অঞ্চলে অধিকাংশ শিশু স্কুলে যেতে শুরু করে । ইউনিভার্সাল প্রাইমারী এডুকেশন আটটি আন্তর্জাতিক মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল এর মধ্যে একটি, যা পূর্ববর্তী দশকে যে অগ্রগতি হয়েছে, তারপরেও কিছু বাধা এখনও অব্যাহত রয়েছে। সম্ভাব্য দাতাদের কাছ থেকে দাতব্য তহবিল সুরক্ষিত করা একটি স্থায়ী সমস্যা । ওভারসিজ ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউটের গবেষকরা দেখিয়েছেন যে শিক্ষার জন্য তহবিলের প্রধান বাধাগুলির মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সমস্যাযুক্ত দাতাদের অগ্রাধিকার দেয়া, সাহায্য প্রদানের অপরিপক্ষ ব্যবস্থাপনা এবং এই বিষয়ের পক্ষে প্রমাণ সমর্থনের অভাব । এ ছাড়া, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল আফ্রিকার সার্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা অর্জনের জন্য একটি প্রধান বাধা হিসেবে শিক্ষা খাতে দুর্নীতির বিষয়টিকে চিহ্নিত করেছে । উপরন্তু, উন্নয়নশীল বিশ্বের উন্নততর শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রবেশাধিকারের জন্য বিদেশীরা যা আশা করে চাহিদার তা এখনও অপ্রতুল । আদিবাসী সরকার চলমান শিক্ষার জন্য যে খরচ হয় তার দায়ভার নিতে অনিচ্ছুক । কিছু পিতামাতার কাছ থেকে অর্থনৈতিক চাপও রয়েছে, যারা তাদের সন্তানদের শিক্ষার দীর্ঘমেয়াদি উপকারের পরিবর্তে স্বল্প মেয়াদী অর্থ উপার্জন করাকে বেশি অগ্রাধিকার দেয় । ইউনেস্কোর ইন্টারন্যাশনাল ইন্সটিটিউট ফর এডুকেশনাল প্ল্যানিং দ্বারা পরিচালিত একটি গবেষণায় ইঙ্গিত দেয় যে, শিক্ষাগত পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনায় শক্তিশালী ক্ষমতা শিক্ষা কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে । স্থায়ী ক্ষমতা বিকাশের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক, সাংগঠনিক ও স্বতন্ত্র পর্যায়ে জটিল হস্তক্ষেপের প্রয়োজন যা কিছু মৌলিক নীতির উপর ভিত্তি করে হতে পারে: জাতীয় নেতৃত্ব এবং মালিকানা যেকোনো হস্তক্ষেপের টাচস্টোন হওয়া উচিত; কৌশলগুলিকে প্রাসঙ্গিক এবং নির্দিষ্ট করা আবশ্যক; পরিকল্পনাগুলিতে একটি সমন্বিত পদক্ষেপের প্রয়োজন , যদিও পদক্ষেপের মধ্যে বাস্তবায়ন মুখ্য ভূমিকা পালন করতে পারে; অংশীদারদের ক্ষমতা উন্নয়নে একটি দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ করা উচিত, স্বল্প মেয়াদী লক্ষ্য অর্জনের জন্য নয়; বাইরের হস্তক্ষেপের বিভিন্ন স্তরে জাতীয় ক্ষমতার প্রভাব মূল্যায়ন শর্তাধীন হওয়া উচিত; শিক্ষার্থীদের নির্দিষ্ট শতাংশ শিক্ষার সংস্কারের জন্য সরানো উচিত (সাধারণত দশম শ্রেণির তা পরে স্কুলগুলিতে অনুশীলন করা হয়) । আন্তর্জাতিকীকরণ প্রায় সব দেশে এখন সার্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা রয়েছে। সমতা-পদ্ধতিতে বা এমনকি ধারণাগুলি-যেগুলি আন্তর্জাতিকভাবে আন্তর্জাতিক স্কুলগুলিতে আন্তর্জাতিক ছাত্র বিনিময় বৃদ্ধি করেছে । ইউরোপীয় সক্রেটিস-ইরাসমাস প্রোগ্রাম ইউরোপীয় বিশ্ববিদ্যালয় জুড়ে বিনিময় সহজতর করে তুলেছে । সোরোস ফাউন্ডেশন কেন্দ্রীয় এশিয়া ও পূর্ব ইউরোপের শিক্ষার্থীদের জন্য অনেক সুযোগ সুবিধা প্রদান করে । International Baccalaureate প্রোগ্রামের মতো প্রোগ্রামগুলি শিক্ষার আন্তর্জাতিকীকরণে ব্যাপক অবদান রেখেছে । আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়গুলির নেতৃত্বে পরিচালিত The global campus online, প্রকৃত ক্লাস চলাকালীন সময়ে ক্লাস সামগ্রী এবং রেকর্ডকৃত বক্তৃতার ফাইলগুলিতে বিনামূল্যে প্রবেশের অনুমতি দেয় । উন্নয়নশীল দেশে শিক্ষা ও প্রযুক্তি দরিদ্র এলাকায় এবং উন্নয়নশীল দেশের বাসিন্দাদের জন্য শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রবেশাধিকার উন্নত করার ক্ষেত্রে প্রযুক্তি ক্রমবর্ধমান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসতেছে । One Laptop per Child এর মতো দাতব্য প্রতিষ্ঠানগুলি অবকাঠামো প্রদানের জন্য নিবেদিত যার মাধ্যমে সুবিধা-বঞ্চিত ছেলেমেয়েরা শিক্ষাগত সামগ্রীগুলি সহজেই হাতের কাছে পেতে পারে । OLPC ফাউন্ডেশন MIT Media Lab এর একটি গ্রুপ যা বেশ কয়েকটি বড় কর্পোরেশনের দ্বারা সমর্থিত যাদের একটি উল্লেখযোগ্য লক্ষ্য হলো $১০০ ডলারের ল্যাপটপ শিক্ষা সফটওয়্যার জন্য প্রদান করা । ২০০৪ সালে ল্যাপটপগুলি সব জায়গায় পাওয়া যেত । তারা দানের দামের উপর ভিত্তি করে বিক্রি হয় । আফ্রিকাতে, দ্য নিউ পার্টনারশিপ ফর আফ্রিকার ডেভেলপমেন্ট (এনইপিএডি) "ই-স্কুল প্রোগ্রাম" চালু করেছে ১০ বছরের মধ্যে ৬০০০০০ প্রাথমিক ও উচ্চ বিদ্যালয়কে কম্পিউটার সরঞ্জাম, শেখার সামগ্রী এবং ইন্টারনেট এক্সেস সহ আনুষঙ্গিক সুযোগ সুবিধা প্রদানের লক্ষ্যে । এনবিইউইউ ডটকম নামে একটি আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা প্রকল্প যা সাবেক আমেরিকান প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের সহায়তায় শুরু হয়েছিল , এটি মূলত সামাজিক উন্নয়ন বিষয়ক কাজে যারা জড়িত তাদের ইন্টারনেট ব্যবহার করার সহযোগিতা প্রদানের লক্ষ্যে কাজ করে । ভারত প্রযুক্তিগুলিকে বিকশিত করতেছে যা সরাসরি স্থল-ভিত্তিক টেলিফোন এবং ইন্টারনেট অবকাঠামোর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে শিক্ষামূলক বিষয়গুলো প্রচার করবে । ২০০৪ সালে ভারতীয় স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশন এডুসেট নামে একটি সাবস্ক্রিপশন উপগ্রহ উৎক্ষেপণ করে, যা শিক্ষাগত উপকরণগুলি অনেক কম খরচে শিক্ষার্থীদের মধ্যে পৌঁছাতে পারবে। শিক্ষাগত তত্ত্ব শিক্ষাগত মনোবিজ্ঞান হচ্ছে কিভাবে মানুষ কিভাবে শিক্ষাগত পদ্ধতিগুলো, শিক্ষামূলক হস্তক্ষেপের কার্যকারিতা, শিক্ষার মনোবিজ্ঞান এবং স্কুলগুলি সামাজিক মনোবিজ্ঞান হিসাবে কীভাবে সংগঠিত হয় তা শিখে । যদিও "শিক্ষাগত মনোবিজ্ঞান" এবং "স্কুল মনোবিজ্ঞান" শব্দগুলি প্রায়ই স্বতঃস্ফূর্তভাবে ব্যবহার করা হয়, তবে গবেষকরা এবং থিয়োরিস্টরা শিক্ষামূলক মনোবৈজ্ঞানিক হিসাবে চিহ্নিত হতে পারে, যদিও স্কুল বা স্কুল-সম্পর্কিত সেটিংসের অনুশীলনকারীদের স্কুল মনোবৈজ্ঞানিক হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। শিক্ষাগত মনোবিজ্ঞান সাধারণ জনসংখ্যার মধ্যে শিক্ষাগত অর্জনের প্রক্রিয়ায় এবং উপ-জনসংখ্যার যেমন প্রতিভাধর শিশুদের এবং নির্দিষ্ট অক্ষমতার সাথে যারা সম্পর্কিত তাদেরকে নির্দেশ করে । শিক্ষাগত মনোবিজ্ঞান অন্যান্য শাখায় সঙ্গে তার কেমন সম্পর্ক তার মাধ্যমে বোঝা যাবে । এটা মূলত মনোবিজ্ঞান দ্বারা জানানো হয়, এটি এমন একটি সম্পর্ক বহন করে যা চিকিৎসা বিজ্ঞান এবং জীববিদ্যা মধ্যে যে সম্পর্ক তার অনুরূপ । শিক্ষাগত মনোবিজ্ঞান একটি বিস্তৃত বিশেষত্বকে বুঝায় যা শিক্ষামূলক নকশা, শিক্ষাগত প্রযুক্তি, পাঠ্যক্রম উন্নয়ন, সাংগঠনিক শিক্ষা, বিশেষ শিক্ষা এবং শ্রেণীকক্ষ ব্যবস্থাপনা সহ শিক্ষাগত গবেষণার মাধ্যমে প্রতিফলিত হয় । শিক্ষাগত মনোবিজ্ঞান cognitive science এবং learning sciences থেকে উদ্ভূত । বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে, শিক্ষাগত মনোবিজ্ঞান বিভাগগুলি সাধারণত শিক্ষার অনুষদগুলির মধ্যেই থাকে, যা সম্ভবত প্রচলিত মনোবিজ্ঞান এর প্রতিনিধিত্ব মূলক যে লেকনেছ আছে তা অনুসন্ধান করে উদাহরণস্বরূপ পরিচিতিমূলক মনোবিজ্ঞান সংক্রান্ত পাঠ্যপুস্তক (লুকা, ব্লেজ, এবং রালে, ২০০৬) এর কথা উল্লেখ করা যায় । মন, মস্তিষ্ক এবং শিক্ষা শিক্ষাগত স্নায়ুবিজ্ঞান একটি উদ্ভূত বৈজ্ঞানিক ক্ষেত্র যা জৈবিক প্রক্রিয়া ও শিক্ষার মধ্যে মিথস্ক্রিয়া খোঁজার জন্য জ্ঞানীয় স্নায়ুবিজ্ঞান, বিকাশমূলক জ্ঞানীয় স্নায়ুবিজ্ঞান, শিক্ষাগত মনোবিজ্ঞান, শিক্ষাগত প্রযুক্তি, শিক্ষা তত্ত্ব এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোকে একত্রিত করে । শিক্ষাগত স্নায়ুবিজ্ঞান গবেষকরা স্নায়োবিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পড়াশোনা, সংখ্যাসূচক চেতনা, মনোযোগ এবং ডিসলেকসিয়া, ডিসক্যালকুলিয়া এবং এডিএইচডি সহ তাদের সহকারী সমস্যাগুলি অনুসন্ধান করে যা শিক্ষার সাথে সম্পর্কযুক্ত। সারা বিশ্বে বেশ কয়েকটি একাডেমিক প্রতিষ্ঠান শিক্ষাগত স্নায়ুবিজ্ঞান গবেষণা প্রতিষ্ঠার জন্য অর্থ বিনিয়োগ করতে শুরু করেছে । শিক্ষার দর্শন একটি একাডেমিক ক্ষেত্র হিসাবে, শিক্ষা দর্শন হল "শিক্ষা এবং এর সমস্যাগুলির দার্শনিক অধ্যয়ন । এর কেন্দ্রীয় বিষয় হল শিক্ষা, এবং এর পদ্ধতিগুলো হল দর্শনের বিষয় ।" শিক্ষার দর্শন মূলত শিক্ষার প্রক্রিয়ার দর্শন বা শিক্ষার শৃঙ্খলার দর্শন হতে পারে। শৃঙ্খলা, লক্ষ্য, গঠন, পদ্ধতি বা ফলাফলগুলির সাথে সংশ্লিষ্ট হওয়ার অনুভূতিই হল শিক্ষা দর্শনের আলোচ্য বিষয় । শিক্ষার প্রসার বা শিক্ষিত হওয়া, অথবা শিক্ষার ধারণা, লক্ষ্য ও পদ্ধতির সাথে সংশ্লিষ্টতার পরিপ্রেক্ষিতে এটি মেটাডিসিপ্লিনারি হতে পারে। " যেমন, এটি শিক্ষার ক্ষেত্র এবং শিক্ষাদান পদ্ধতির সাথে জড়িত এমনকি শিক্ষা নীতি এবং পাঠ্যক্রমের পাশাপাশি শেখার প্রক্রিয়া সম্পর্কে প্রশ্ন করার জন্য দর্শনশাস্ত্রের ক্ষেত্র, আধ্যাত্মিকতার ক্ষেত্রসমূহ, প্রবন্ধমালা, এবং দার্শনিক পন্থা (অনুমানমূলক, প্রবিধানিক বা বিশ্লেষণাত্মক) থেকে সাহায্য নিতে পারে । উদাহরণস্বরূপ, এটি কিভাবে শিক্ষা ব্যবস্থা বেড়ে ওঠে তা পর্যালোচনা করতে পারে যা উন্নত ও শিক্ষামূলক প্রথাগুলির মাধ্যমে শিক্ষার মানদণ্ড এবং শিক্ষার বৈধতা, এবং শিক্ষার তত্ত্ব ও অনুশীলনের মধ্যে সম্পর্কের মাধ্যমে প্রকাশিত মূল্যবোধ ও নিয়মসমূহকে অধ্যয়ন করতে সাহায্য করে । শিক্ষা অর্থনীতি এটি যুক্তি প্রদান করেছে যে, উচ্চ মাত্রার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য দেশে উচ্চ শিক্ষার হার অপরিহার্য । সমালোচকদের বিশ্লেষণ ও তাত্ত্বিক জ্ঞান পূর্বাভাস দেয় যে, দরিদ্র দেশগুলিকে ধনী দেশগুলির তুলনায় দ্রুততর হওয়া উচিত কারণ তারা অত্যাধুনিক প্রযুক্তিগুলি ইতিমধ্যে ধনী দেশগুলির দ্বারা পরীক্ষিত এবং পরিচালিত হয়েছে তা সহজেই গ্রহণ করতে পারে । যাইহোক, প্রযুক্তি স্থানান্তরের জন্য নতুন মেশিন বা উৎপাদন পদ্ধতি পরিচালনা করতে সক্ষম এমন জ্ঞানী পরিচালকদের এবং ইঞ্জিনিয়ারদের প্রয়োজন হয় যার মাধ্যমে অনুকরণ করার ফাঁকটা বন্ধ করা যাবে । অতএব একটি দেশ শিক্ষক থেকে যা শিখতে পারে একে "human capital" বলে মনে করা হয় । সমষ্টিগত অর্থনৈতিক বৃদ্ধির নির্ধারকদের সাম্প্রতিক গবেষণার মাধ্যমে মৌলিক অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলির গুরুত্ব এবং জ্ঞানীয়(cognitive) দক্ষতার ভূমিকার উপর জোর দেয়া হয়েছে । ব্যক্তিগত স্তরে, একটি বড় সাহিত্য আছে যা জ্যাকব মিন্সারের কাজের সাথে সম্পর্কিত যা শিক্ষার এবং অন্যান্য মানব মূলধনের সাথে কিভাবে আয়ের সম্পর্ক আছে তা পর্যালোচনা করে । এই কাজটির মাধ্যমে বেশ কয়েকটি গবেষণা অনুপ্রাণিত হয়েছে, কিন্তু বিতর্কিতও বটে । প্রধান বিতর্কগুলি হচ্ছে কিভাবে শিক্ষার প্রভাব ব্যাখ্যা করতে হয় । কিছু শিক্ষার্থী আছে যারা উচ্চ বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন হয়ে থাকে কিন্তু আর্থিক সমস্যার কারণে তাদের পূর্ণ একাডেমিক সম্ভাবনা অর্জন করতে পারে না। অর্থনীতিবিদ শ্যামুয়েল বোলস এবং হরবার্ট গিন্টস ১৯৭৬ সালে যুক্তি দেন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণের সাম্যবাদী লক্ষ্য এবং পুঁজিবাদী উৎপাদন অব্যাহত মুনাফা দ্বারা প্রভাবিত বৈষম্যগুলির মধ্যে একটি মৌলিক দ্বন্দ্ব অব্যাহত আছে । প্রতিযোগিতা শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রতিযোগিতা প্রধান উপাদান হিসেবে কাজ করে। বৈশ্বিক কিংবা জাতীয় শিক্ষা পদ্ধতিতে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে নিজেকে তুলে ধরতে প্রতিযোগিতামূলক মনোভাবের সৃষ্টি করা হয়। এক্ষেত্রে বৃত্তি প্রদান অন্যতম মানদণ্ডস্বরূপ। ইংল্যান্ড এবং সিঙ্গাপুরের ন্যায় উন্নত দেশগুলোয় বিশেষ শিক্ষা ব্যবস্থায় বিশেষ ছাত্রদেরকে নির্বাচিত করে শিক্ষা ব্যয় থেকে অব্যহতি দেয়া হয়। শিক্ষাক্রমিক ফলাফলে ছাত্রদের মাঝে প্রতিযোগিতার মনোভাব সৃষ্টি করে সেরা ছাত্রকে গ্রেডের মাধ্যমে নির্ধারণ করা হয়। অনেকক্ষেত্রে কিছুসংখ্যক দেশে অতি উচ্চমাত্রায় চাপ প্রয়োগের ফলে ছাত্রদের মাঝে বুদ্ধি-বৃত্তি চর্চায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। অনেকসময় পরীক্ষায় অকৃতকার্যতার দরুন তা আত্মহত্যার পর্যায়ে এসে পৌঁছে যায়। এক্ষেত্রে জাপানের শিক্ষাপদ্ধতি প্রধান উদাহরণ হিসেবে বিবেচ্য। আলফি কন শিক্ষা ব্যবস্থায় এজাতীয় প্রতিযোগিতার সমালোচনা করেছেন। তার মতে, ‘ছাত্রদের যোগ্যতা নির্ধারণে প্রতিযোগিতা প্রকৃতপক্ষে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে এবং এটি আমাদের সবাইকে পরাজয়ের দিকে নিয়ে যায়’। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ রিচার্ড লেয়ার্ডও প্রতিযোগিতার ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘প্রতিযোগিতার ফলে ছাত্ররা এক ধরনের চাপ উপলদ্ধি করে। তারা মনে করে যে তাদের জীবনের প্রধান উদ্দেশ্যই হচ্ছে অন্যান্যদের তুলনায় সেরা হওয়া। তরুণেরা তাদের প্রাত্যহিক বিদ্যালয় জীবনে কি শিখছে তাই মুখ্য বিষয়। এবং এ ধরনের প্রতিযোগিতা সমাজের জন্য কল্যাণ বয়ে নিয়ে আসে না। তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ Educational Resources from UCB Libraries GovPubs UNESCO Institute for Statistics: International comparable statistics on education systems OECD education statistics Child and Teacher Educational from Kireet Joshi Planipolis: a portal on education plans and policies IIEP Publications on Education Systems ভিডিওচিত্র The Meaning of Educational Quality বিষয়শ্রেণী:শিক্ষা বিষয়শ্রেণী:জ্ঞানে অংশীদারিত্ব বিষয়শ্রেণী:শিক্ষার দর্শন
শিক্ষা
thumb|right|ফ্লাস্কে বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদান thumb|right|রসায়ন পদার্থের নিজেদের মধ্যে এবং শক্তির সাথে পারস্পরিক ক্রিয়া সম্পর্কে আলোচনা করে। রসায়ন পদার্থের উপাদান, কাঠামো, ধর্ম ও পারস্পরিক ক্রিয়া-বিক্রিয়া সংক্রান্ত বিজ্ঞান। রসায়নবিদেরা মনে করেন বিশ্বের যাবতীয় বস্তু পরমাণু দিয়ে গঠিত। দুই বা ততোধিক পরমাণু রাসায়নিক বন্ধন দ্বারা আবদ্ধ হয়ে অণুর সৃষ্টি করে। এক বা একাধিক ইলেকট্রন পরমাণু বা অণু থেকে সরিয়ে নিলে বা যোগ করলে আধানযুক্ত কণা তথা আয়ন সৃষ্টি হয়। ধনাত্মক আয়ন ও ঋণাত্মক আয়নের সংযোগে সৃষ্টি হয় আধান-নিরপেক্ষ লবণ(মূলত এটি ক্লোরিন বা সালফেটের যৌগ)। রসায়নবিদেরা আণবিক ও পারমাণবিক স্তরে পদার্থ সম্পর্কে তাদের জ্ঞান দিয়ে কীভাবে বিভিন্ন ধরনের পদার্থ একে অপরের সাথে ক্রিয়া করে এবং এগুলি কীভাবে বিভিন্ন অবস্থায় রূপান্তরিত হয়, তা ব্যাখ্যা করতে পারেন। রসায়নবিদেরা পদার্থের পরিবর্তন সাধন করতে পারেন ও নতুন নতুন যৌগ সৃষ্টি করতে পারেন যাদের মধ্যে আছে ঔষধ, বিস্ফোরক, প্রসাধনী ও খাদ্য। রাসায়নিক সংশ্লেষণ কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন শিল্পে বিপুল পরিমাণ রাসায়নিক দ্রব্য উৎপাদন করা হয়। পদার্থের প্রকারভেদ কিংবা গবেষণার সাদৃশ্য বিবেচনা করে রসায়নের বিভিন্ন শাখা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। রসায়নের প্রধান শাখাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো অজৈব রসায়ন অর্থাৎ রসায়নের যে শাখায় অজৈব যৌগ নিয়ে আলোচনা করা হয়, জৈব রসায়ন বা যে শাখায় জৈব যৌগ নিয়ে আলোচনা করা হয়, প্রাণরসায়ন, রসায়নের যে শাখায় জীবদেহের রাসায়নিক পদার্থ নিয়ে আলোচনা করা হয়, ভৌত রসায়ন, এই শাখায় আণবিক পর্যায়ে শক্তির সাথে সম্পর্কযুক্ত রাসায়নিক ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা করা হয়, বিশ্লেষণী রসায়ন, এক্ষেত্রে পদার্থের বিশ্লেষণের মাধ্যমে তাদের গঠন, সংযুক্তি ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করা হয়। সাম্প্রতিক কালে রসায়নের আরও অনেক নতুন শাখার উদ্ভব হয়েছে, যেমন- স্নায়ু রসায়ন, স্নায়ুতন্ত্রের রাসায়নিক গঠন নিয়ে এই শাখায় আলোচনা করা হয়। তত্ত্ব ল্যাবরেটরি, ইন্সটিটিউট অফ বায়োকেমিস্ট্রি, ইউনিভার্সিটি অফ কনজ এই সকল প্রতিষ্ঠানগুলোতে ঐতিহ্যবাহী রসায়ন চর্চা শুরু হয়। এখানে মৌলিক উপাদান, পরমাণু, পদার্থ, গলন, ক্রিস্টাল ও পদার্থ একত্র করা,কঠিন পদার্থ, তরল, বায়বীয় পদার্থ, যৌগ তৈরির নীতি, কথাবার্তা, বিক্রিয়া এবং রূপান্তর ইত্যাদি নিয়ে গবেষণা করা হয়। ইতিহাস রসায়নের ইতিহাস একটি অনেক বড় বিষয়।এটি প্রাচীন ও প্রধান বিজ্ঞানগুলোর অন্যতম। বলা চলে আগুন আবিষ্কারের পর থেকেই মানব সভ্যতার হাত ধরে এগিয়ে চলেছে রসায়ন। ভারতবর্ষে প্রায় ৫০০০ বছর পূর্বেই কাপড়কে আকর্ষণীয় করে তুলতে রঙের ব্যবহার শুরু হয়েছিল। রসায়ন '''চর্চায় প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতার অবদান অনেক। প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় রসায়ন চর্চা আল-কেমি (Alchemy) নামে পরিচিত। আল-কেমি আরবি আল-কিমিয়া থেকে উদ্ভূত, যা দিয়ে মিশরীয় সভ্যতাকে বুঝানো হতো। জাবির ইবন হাইয়ানকে রসায়ন শাস্ত্রের ও লাভোয়াজিয়েকেকে আধুনিক রসায়ন শাস্ত্রের জনক বলা হয়ে থাকে। মধ্যযুগে ধাতুকে সোনায় পরিণত করতে পারার পদ্ধতি আবিষ্কারের প্রচেষ্টায় শুরু হয় আলকেমি বিদ্যা, যা লাভোয়াজিয়ে, মেন্ডেলিফদের হাতে পূর্ণতা লাভ করেছে। রসায়ন শব্দের উৎপত্তি রসায়ন শব্দের ইংরেজি Chemistry (কেমিস্ট্রি)। মধ্যযুগে পরশ পাথরের সন্ধানে পরীক্ষারত মুসলিম বিজ্ঞানীরা একটি শাস্ত্র বা পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। এটাকে তারা বলতেন আলকামিস্তা বা আলকেমি। আলকেমি এসেছে আরবী শব্দ আল-কিমিয়া থেকে। আল-কিমিয়া শব্দটি এসেছে 'কিমি' থেকে। কিমি থেকেই chemistry শব্দের উৎপত্তি। আলকেমি আল অর্থ দি(The), এবং কেমি বা কিমি অর্থ ব্লাক সয়েল বা কালো মাটি। এই কালো মাটি আসলে মিশরের নীল নদের তীরের মাটি। প্রাচীন মিশরকে রসায়নের জন্মক্ষেত্র বলা যায়। কারণ, মিশরীয়রা সভ্যতার আদি লগ্নে যে মমি তৈরি করতো তাতেই তারা নানান রকমের রাসায়নিক ব্যবহার করতো। প্রাচীন গ্রীসেও রসায়নের চর্চা শুরু হয়েছে সুপ্রাচীনকাল থেকেই। তারা চিন্তা করতো এ্যালিক্সির বা জীবন সঞ্জিবনীর কিভাবে তৈরি করা যায়! কারণ, মানুষ চিরদিন বেঁচে থাকতে চায় অমর হতে চায়। ভারতীয় উপমহাদেশের ঋষিরাও চাইতেন তেমন কিছু তৈরি করার। তারা একে বলতেন পরশ পাথর! গ্রিসদের এই চিন্তা ভাবনা ও কাজের সাথে পরিচিত ছিলেন জাবির ইব্নে হাইয়ান। তাঁর পিতা ইবনে হাইয়ানও একজন গুপ্তবিদ্যাচর্চাকারী ছিলেন। প্রাচীনকালে রসায়ন গুপ্ত বিদ্যা বলে পরিচিত ছিলো। কারণ রসায়নবিদরা লোক চক্ষুর অন্তরালে তাদের পরীক্ষা-নীরিক্ষা করতেন। কারণ সাধারণ মানুষের কৌতুুহল বেশি থাকে এবং তারা কাজে বাঁধা সৃষ্টি করতে তৎপর থাকে। পরবর্তী সময়ে জাবির ইবনে হাইয়ান তাঁর নিজ বাসভূমি আরবীয় অঞ্চলে ফিরে আসেন এবং রসায়ন শাস্ত্রের উপর ১০৮ খানা গ্রন্থ লেখেন। তাঁর এই মহামূল্য গ্রন্থগুলো রসায়ন গবেষণায় সহায়ক ভূমিকা রেখেছে। তাকে প্রাচীন রসায়নের জনক বলে অভিহিত করা হয়। মৌলিক ধারণা আমরা জানি যে, যার ভর আছে, কোন স্থান দখল করে অবস্থান করে এবং যা স্থিতিশীল বা গতিশীল অবস্থার বাধা প্রদান করে, তাকে পদার্থ বলে। পদার্থের মধ্যে অণু থাকে যা আবার পরমাণুর সমন্বয়ে গঠিত। পরমাণু সমূহ গঠিত হয় ইলেকট্রন, প্রোটন ও নিউট্রন এর সমন্বয়ে। এসব ইলেকট্রন, প্রোটন ও নিউট্রন পদার্থের অনুর সাথে কিভাবে সম্পর্কযুক্ত থাকে এবং এদের বিক্রিয়ার সময় এরা কি ধরনের আচরণ করে সেসব নিয়ে আলোচনা করা হয় রসায়নে। সংজ্ঞাসমূহ রসায়ন শাস্ত্রে অনেক গুলো মৌলিক বিষয়ের অবতারণা করা হয়েছে। প্রতিটি বিষয়ের জন্য আলাদা আলাদা সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে পরমাণু মৌলিক পদার্থের ক্ষুদ্রতম কণা যা ঐ পদার্থের বৈশিষ্ট্য রক্ষা করে। যাকে বিশ্লেষিত করলে আরো ক্ষুদ্রতম কণা ইলেক্ট্রন, প্রোটন ও নিউট্রন পাওয়া যায়। পরমাণুকে দুটি ভিন্ন অঞ্চলে ভাগ করা যায়। একটিকে কেন্দ্র বলা হয়- যে অংশে পরমাণুর সকল ভর ও ধনাত্বক চার্জ পুঞ্জীভূত থাকে। অর্থাৎ নিরপেক্ষ নিউট্রন ও ধনাত্বক প্রোটন একত্রে কেন্দ্র বা নিউক্লিয়াসে থাকে আর দ্বিতীয়টিকে বলা হয় বহিঃঅঞ্চল- যে অংশে নির্দিষ্ট শক্তির কতক শক্তিস্তর থাকে আর ঐ শক্তিস্তরে নির্দিষ্ট শক্তির ঋণাত্বক চার্জ যুক্ত ইলেক্ট্রন পরিক্রমণরত অবস্থায় থাকে। পদার্থ যার ভর আছে, কোন স্থান দখল করে অবস্থান করে এবং যা স্থিতিশীল বা গতিশীল অবস্থার বাধা প্রদান করে, তাকে পদার্থ বলে। পৃথিবীর সমস্ত পদার্থকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে । যথা:কঠিন,তরল ও বায়বীয় ।এছাড়া ও পদার্থের আরেকটি অবস্থা ও হিসাব করা হয়, যাকে প্লাজমা বলে।এটিকে উচ্চ তাপমাত্রায় আয়নিত গ্যাস বলা হয়। যৌগ একাধিক মৌলের সমন্বয়ে গঠিত নতুন পদার্থকে যৌগ বলে। যেমন: সোডিয়াম ক্লোরাইড, কার্বন‌ ডাই অক্সাইড সালফিউরিক এসিড ইত্যাদি। বস্তু যেকোন পদার্থের নির্দিষ্ট একটা অংশকে বস্তু বলে। যেমনঃ মৌল, এক অণু বিশিষ্ট যৌগ। অর্থাৎ হাইড্রোজেন, অক্সিজেন, পানি ইত্যাদি। অণু দুই বা ততোধিক পরমাণুর সমন্বয়ে গঠিত ক্ষুদ্র কণাকে বলা হয় অণু। যেমন: হাইড্রোজেনের দুটি পরমাণু পরস্পর যুক্ত হয়ে অণু গঠন করে। হাইড্রোজেনের পরমাণু H এবং হাইড্রোজেনের অণু H2। মোল কোনো পদার্থের পারমাণবিক ভর বা আণবিক ভরকে গ্রাম এককে প্রকাশ করলে যে পরিমাণ পাওয়া যায়, তাকে ঐ পদার্থের এক মোল বলে। ১ mole=৬.০২x১০ ২৩ টি অণু/পরমাণু/আয়ন। এই সংখ্যাটিকে অ্যাভোগেড্রোর সংখ্যা বলা হয়। কোন পদার্থের যে পরিমাণের মধ্যে অ্যাভোগেড্রোর সংখ্যার সমান সংখ্যক অণু/পরমাণু/আয়ন বিদ্যমান থাকে তাকে ঐ পদার্থের একমোল বলে। কার্বনের পারমাণবিক ভর ১২ একে গ্রাম এককে প্রকাশ করলে, ১২ গ্রাম কার্বন = ১ মোল কার্বন আবার পানির আণবিক ভর ১৮ সুতরাং ১ মোল পানি = ১৮ গ্রাম পানি। অম্লত্ব ও ক্ষারত্ব অম্ল বা ক্ষারের কয়েকটি তত্ত্ব রয়েছে; তার মধ্যে সবচেয়ে চেয়ে সহজতর তত্ত্বটি হচ্ছে 'আরহেনিয়াসের তত্ত্ব'। তার মতে, অম্ল হচ্ছে এমন ধরনের বস্তু যা পানির সাথে দ্রবীভুত হলে হাইড্রনিয়াম আয়ন উৎপন্ন করে এবং ক্ষার হল যা পানির সাথে দ্রবীভূত হলে হাইড্রোক্সাইড আয়ন উৎপন্ন করে। ব্রনস্টেড-লাউরি‘র অম্ল-ক্ষার সূত্রানুসারে, রাসায়নিক বিক্রিয়ার সময় যদি একটি মৌল অন্য একটি মৌলকে ধ্ণাত্মক হাইড্রোজেন আয়ন প্রদান করে তবে তাকে অম্ল বলে; অপরপক্ষে ক্ষার হচ্ছে ঐ বস্তুু যা ঐ হাইড্রোজেন আয়ন গ্রহণ করে। এ সম্বন্ধে লুইস এর অম্ল-ক্ষার তত্ত্ব নামে তৃতীয় একটা তত্ত্ব রয়েছে,যার ভিত্তি হল নতুন রাসায়নিক বন্ধন গঠন করা। লুইসের তত্ত্বানূসারে অম্ল হচ্ছে ঐ মৌল যা বন্ধন গঠনের সময় অন্য মৌল হতে এক জোড়া ইলেক্ট্রন গ্রহণ করতে সক্ষম; অন্যদিকে ক্ষার হচ্ছে ঐ মৌল যা নতুন বন্ধনে এক জোড়া ইলেক্ট্রন দিতে পারে। তাছাড়া আরো অনেক ভাবেও অম্ল ও ক্ষার কে সঙ্গায়িত করা হয়ে থাকে। অম্লের ক্ষমতা প্রধানত ২ পদ্ধতিতে পরিমাপ করা হয়ে থাকে।একটা পদ্ধতি হচ্ছে আরহেনিয়াসের অম্লত্বের বর্ণনার উপর ভিত্তি করে, pH ,যেটা দ্রবণে ঘণীভূত হাইড্রোনিয়াম আয়ন কে বোঝায়,যেটাকে ঋণাত্মক লগারিদ্মিক স্কেল এ প্রকাশ করা হয়। এভাবে,যে দ্রবণের pH এর মান কম ও উচ্চ ঘণীভূত হাইড্রনিয়াম আয়ন তবে সেটা অধিক অম্লীয়। অন্য পদ্ধতি টা হচ্ছে, ব্রনস্টেড-লাউরি‘র বর্ণনার উপর ভিত্তি করে,যে বস্তুর ka এর মান অধিকতর এবং রাসায়নিক বিক্রিয়ার সময় নিম্নতর ka মানের তুলনায় অত্যধিক পরিমাণে হাইড্রোজেন আয়ন প্রদান করে। ব্রনস্টেড-লাউরি‘র অম্ল-ক্ষার সূত্রানুসারে, রাসায়নিক বিক্রিয়ার সময় যদি একটি মৌল অন্য একটি মৌলকে ধ্ণাত্মক হাইড্রোজেন আয়ন প্রদান করে তবে তাকে অম্ল বলে; অপরপক্ষে ক্ষার হচ্ছে ঐ বস্তু যা ঐ হাইড্রোজেন আয়ন গ্রহণ করে। এ সম্বন্ধে লুইস এর অম্ল-ক্ষার তত্ত্ব নামে তৃতীয় একটা তত্ত্ব রয়েছে,যার ভিত্তি হল নতুন রাসায়নিক বন্ধন গঠন করা। লুইসের তত্ত্বানূসারে অম্ল হচ্ছে ঐ মৌল যা বন্ধন গঠনের সময় অন্য মৌল হতে এক জোড়া ইলেক্ট্রন গ্রহণ করতে সক্ষম; অন্যদিকে ক্ষার হচ্ছে ঐ মৌল যা নতুন বন্ধনে এক জোড়া ইলেক্ট্রন দিতে পারে। তাছাড়া আরো অনেক ভাবেও অম্ল ও ক্ষার কে সঙ্গায়িত করা হয়ে থাকে। অম্লের ক্ষমতা প্রধানত ২ পদ্ধতিতে পরিমাপ করা হয়ে থাকে।একটা পদ্ধতি হচ্ছে আরহেনিয়াসের অম্লত্বের বর্ণনার উপর ভিত্তি করে, pH ,যেটা দ্রবণে ঘণীভূত হাইড্রোনিয়াম আয়ন কে বোঝায়,যেটাকে ঋণাত্মক লগারিদ্মিক স্কেল এ প্রকাশ করা হয়। এভাবে,যে দ্রবণের pH এর মান কম ও উচ্চ ঘণীভূত হাইড্রনিয়াম আয়ন তবে সেটা অধিক অম্লীয়। অন্য পদ্ধতি টা হচ্ছে, ব্রনস্টেড-লাউরি‘র বর্ণনার উপর ভিত্তি করে,যে বস্তুর ka এর মান অধিকতর এবং রাসায়নিক বিক্রিয়ার সময় নিম্নতর ka মানের তুলনায় অত্যধিক পরিমাণে হাইড্রোজেন আয়ন প্রদান করে। দশা পদার্থের নির্দিষ্ট ভৌত অবস্থাকে (কঠিন, তরল,গ্যাসীয় ও প্লাজমা ) নির্দেশ করা হয়। জারণ-বিজারণ যে বিক্রিয়ায় ইলেক্ট্রন আদান প্রদান হয় তাকে জারণ-বিজারণ বিক্রিয়া বলে । যে বিক্রিয়ায় ইলেক্ট্রন ত্যাগ বা বর্জন করা হয় তাকে জারণ বলে । আবার যে বিক্রিয়ায় ইলেক্ট্রন গ্রহণ করা হয় তাকে বিজারণ বলে । জারক ইলেক্ট্রন গ্রহণ করে নিজে বিজারিত হয় এবং অপরকে জারিত করে আর বিজারক ইলেক্ট্রন ত্যাগ করে নিজে জারিত হয় এবং অপরকে বিজারিত করে । বন্ধন অনুতে পরমাণু সমূহ পরস্পর যেভাবে বন্ধন শক্তিতে যুক্ত থাকে, তাকে রাসায়নিক বন্ধন বলে। বিক্রিয়া রসায়নের পরিভাষায় যে পদ্ধতিতে দুই বা ততোধিক মৌল বা যৌগ পরস্পর যুক্ত হয়ে এক বা একাধিক নতুন যৌগ উৎপন্ন করে তাকে বিক্রিয়া বলে। যদি একাধিক মৌল বা যৌগ পরস্পর যুক্ত নতুন যৌগ উৎপন্ন না-করে তবে তাকে বিক্রিয়া বলা যাবে না। বিক্রিয়ায় মূলত পরমাণু বা ইলেকট্রনের আদান প্রদান ঘটে। রাসায়নিক সমীকরণ রাসায়নিক বিক্রিয়াকে সংক্ষেপে উপস্থাপন করার জন্য রাসায়নিক সমীকরণ ব্যবহার করা হয় ৷ অর্থাৎ সমীকরণ হলো রাসায়নিক শর্টহ্যান্ড (Chemical Shorthand ) ও কোনো রাসায়নিক প্রক্রিয়াকে রসায়নের ভাষায় প্রকাশ৷ রাসায়নিক সমীকরণ লেখার নিয়ম: রাসায়নিক বিক্রিয়া যে সকল পদার্থ নিয়ে শুরু হয় তাদেরকে বিক্রিয়ক ( Reactant ) এবং যে সকল পদার্থ উৎপন্ন হয়, তাদেরকে উৎপাদ (Product) বলে ৷ রাসায়নিক সমীকরণে বিক্রিয়কসমূহ বামপাশে এবং উৎপাদসমূহ ডানপাশে লিখে মাঝখানে সমান (=) অথবা তীর( → ) চিহ্ন দেয়া হয় ৷ বিক্রিয়ায় একাধিক বিক্রিয়ক এবং একাধিক উৎপাদ থাকলে তাদেরকে (+) চিহ্ন দিয়ে লেখা হয় ৷ সমীকরণের বামপাশে বিভিন্ন মৌলের পরমাণু সংখ্যা এবং ডানপাশে একই মৌলের পরমাণু সংখ্যা সমান করা হয় ৷ বিক্রিয়ক এবং উৎপাদ ভিন্ন যৌগ হলেও তা অভিন্ন মৌলের পরমাণুর সমন্বয়ে গঠিত হয় ৷ এতে ভরের সংরক্ষণ নীতি অনুসরণ করে ৷ বিক্রিয়ক ও উৎপাদের ভৌত অবস্থা যৌগের ডানপাশে নিচে প্রথম বন্ধনীর মধ্যে লেখা হয় ৷ যৌগের ভৌত অবস্থা কঠিন (Solid) হলে (s), তরল (Liquid) হলে (l) এবং গ্যাসীয় (Gaseous) হলে (g) লেখা হয় ৷ বিক্রিয়ক এবং উৎপাদ হিসেবে কোনো যৌগের জলীয় দ্রবণ (Aqueous solution) থাকলে (aq) লেখা হয় ৷ রাসায়নিক সাম্যাবস্থা উভমুখী বিক্রিয়ার ক্ষেত্রে সময়ের সাথে এক সময় বিক্রিয়ার সম্মুখবেগ ও পশ্চাৎবেগ সমান হয়। এ অবস্থাকে রাসায়নিক সাম্যাবস্থা বলে। সাম্যাবস্থা তখনই হয়, যখন কোনো পদার্থের বিভিন্ন ধরনের গঠন সম্ভব হয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে, বিভিন্ন যৌগের একটি মিশ্রণ যারা একজন আরেকজন এর সাথে বিক্রিয়া করতে পারে অথবা যখন একটি যৌগ একাধিক অবস্থায় থাকতে পারে সেটাই সাম্যাবস্থা। শক্তি বস্তুর শক্তি হচ্ছে ঐ বস্তু মোট যতখানি কাজ করতে পারে। উপবিভাগ ভৌত রসায়ন জৈব রসায়ন অজৈব রসায়ন পরিবেশ রসায়ন বিশ্লেষণী রসায়ন তড়িৎ রসায়ন রসায়ন বিভাগ রসায়ন বিজ্ঞানের একটি অন্যতম দিক । রসায়নের অনেক গুলো বিভাগ রয়েছে । যা বিজ্ঞান এর জন্য মঙ্গলজনক সবুজ রসায়ন সবুজ রসায়ন হলো রসায়নের একটি শাখা যাতে কম পরিবেশ দূষণ করে এবং ঝুঁকি হ্রাস করে এমন রাসায়নিক প্রক্রিয়া বা উৎপাদন-পদ্ধতি নিয়ে গবেষণা হয়। কার্যত: 'সবুজ রসায়ন' এমন একটি গবেষণাদর্শন যার উদ্দেশ্য এমন রাসায়নিক পদ্ধতির উদ্ভাবন ও অবলম্বন করা যাতে শিল্পজাত বর্জ্যের পরিমাণ হ্রাস পায়, ঝুকিঁপূর্ণ রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহার হ্রাস পায় এবং শক্তির অপচয় হ্রাস পায়। এটি রসায়নের একটি নবতর শাখা। এর লক্ষ্য মানবদেহের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ উপাদান বর্জিত পণ্য ও পদ্ধতি আবিষ্কার। এটি পরিবেশ রসায়ন থেকে ভিন্ন। রাসায়নিক শিল্প ১. কাচ শিল্প ২. জ্বালানি শিল্প ৩. সিরামিক শিল্প ৪. পেট্রোলিয়াম শিল্প ৫. ঔষধ শিল্প ৬. সিমেন্ট শিল্প ৭. সার শিল্প ৮. পলিমার শিল্প ৯. চিনি শিল্প ১০. কাগজ শিল্প ১১. রং শিল্প ১২. কীটনাশক শিল্প ১৩. তেল শিল্প ১৪. সাবান ও ডিটারজেন্ট শিল্প ১৫. চামড়া শিল্প ১৬. লৌহ শিল্প ১৭. বিস্ফোরক শিল্প পেশাদার প্রতিষ্ঠান নিরাপত্তা কিছু রাসায়নিক উপাদান খুবই ক্ষতিকারক ও বিপজ্জনক। মার্কারী (২) ক্লোরাইড অত্যন্ত বিষাক্ত পদার্থ। ক্রোমেট ক্যান্সার সৃষ্টি করে। টিন (২) ক্লোরাইড খুব সহজেই পানি দূষণ করে থাকে। হাইড্রোক্লোরিক এসিড শরীরের চামড়া পুড়িয়ে ফেলে। হাইড্রোজেনের মতো পদার্থ বিস্ফোরক কিংবা অগ্নিসংযোগে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। তাই, যাবতীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা রসায়ন পরীক্ষাগারে করা উচিত। সেখানে বিশেষ নিরাপত্তামূলক উপকরণ এবং কাপড়ের ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও রাসায়নিক উপকরণসমূহ সুবিন্যস্ত আকারে রাখা হয়। ঔষুধাদি তৈরীতে এর ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে। ব্লিচের ন্যায় পদার্থের সাহায্যে পরীক্ষা করা হয় যে রাসায়নিক পদার্থটি নিরাপদ। কিছু রাসায়নিক বস্তু তথ্যসূত্র আরও দেখুন জৈব রসায়ন ভৌত রসায়ন বিশ্লেষণী রসায়ন রাসায়নিক বন্ধন বিষয়শ্রেণী:রসায়ন
রসায়ন
thumb|এর্ডফুঙ্কশ্টেল রাইস্টিং–জার্মানিস্থ পরাবৃত্তাকার স্যাটেলাইট thumb|অপটিক প্রজেক্ট থেকে নেয়া ইন্টারনেটের অগণিত পথের একাংশের প্রত্যক্ষীকরণ টেলিযোগাযোগ বলতে মূলত বোঝায় প্রযুক্তি ব্যবহার করে যোগাযোগের উদ্দেশ্যে দূরবর্তী কোনো স্থানে সংকেত তথা বার্তা পাঠানো। এই যোগাযোগ তারের মাধ্যমে অথবা তারবিহীন প্রযুক্তি ব্যবহার করেও হতে পারে। খ্রিষ্টপূর্ব দ্বিতীয় সহস্রাব্দ থেকে দূর পাল্লার যোগাযোগ প্রচলিত হয়। পরবর্তীতে তারযুক্ত ও তারহীন বার্তা প্রেরণের হরেক মাধ্যম বিবর্তিত হয়েছে। টেলিফোন বা রেডিও যার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। বর্তমানে বৈদ্যুতিক ট্রান্সমিটার ব্যবহার করে তড়িচ্চুম্বক‌ তরঙ্গ পাঠানো হচ্ছে। এ যুগে টেলিযোগাযোগ বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত এবং এ পদ্ধতিতে ব্যবহৃত যন্ত্র যেমন টেলিফোন, রেডিও, টেলিভিশন এবং ওয়াকিটকি সর্বত্র দেখতে পাওয়া যায়। এ সকল যন্ত্রকে পরস্পরের সাথে সংযুক্ত করার জন্য বিভিন্ন ধরনের নেটওয়ার্ক রয়েছে। যেমন: পাবলিক টেলিফোন নেটওয়ার্ক, বেতার নেটওয়ার্ক, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক এবং টেলিভিশন নেটওয়ার্ক। ইন্টারনেট এর মাধ্যমে একটি কম্পিউটারের সাথে আরেকটি কম্পিউটারের সংযোগ স্থাপনও একপ্রকার টেলিযোগাযোগ। টেলিযোগাযোগে ব্যবহৃত প্রযুক্তি টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার মূল অংশগুলো হলো তিনটি: ট্রান্সমিটার বা প্রেরণযন্ত্র। এটি বার্তাকে প্রচার উপযোগী সংকেতে পরিণত করে। ট্রান্সমিশন মিডিয়াম বা প্রচার মাধ্যম: যার মধ্য দিয়ে সংকেত বা সিগনাল পাঠানো হয়। যেমন: বায়ু। রিসিভার বা গ্রাহকযন্ত্র: এটি সংকেত গ্রহণ করে এবং সংকেতকে ব্যাবহারযোগ্য বার্তায় পরিবর্তন করে। উদাহারণস্বরূপ, বেতার সম্প্রচারের কথা বলা যায়। এই ক্ষেত্রে, সম্প্রচার টাওয়ারটি হলো ট্রান্সমিটার, রেডিও হলো রিসিভার এবং প্রচার মাধ্যম হলো শূন্যস্থান। অনেক ক্ষেত্রেই টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা উভমুখী যোগাযোগ রক্ষা করে এবং একই যন্ত্র ট্রান্সমিটার ও রিসিভার হিসেবে কাজ করে। এগুলোকে বলা হয় ট্রান্সিভার। যেমন: মোবাইল ফোন একটি ট্রান্সিভার। ফোনের মাধ্যমে টেলিযোগাযোগকে বলা হয় পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট যোগাযোগ, কারণ এ ক্ষেত্রে একটি মাত্র ট্রান্সমিটার ও রিসিভারের মধ্যে সংযোগ স্থাপিত হচ্ছে। বেতার সম্প্রচারের মাধ্যমে টেলিযোগাযোগ বলা হয় ব্রডকাস্ট (সম্প্রচার) যোগাযোগ, কারণ এ ক্ষেত্রে একটি শক্তিশালী ট্রান্সমিটার ও অসংখ্য রিসিভারের মধ্যে সংযোগ ঘটছে। সিগনাল অ্যানালগ ও ডিজিটাল দু’ধরনের হতে পারে। অ্যানালগ সিগনালের ক্ষেত্রে তথ্যের পরিবর্তনের উপর ভিত্তি করে সংকেতের শক্তি ক্রমাগত পরিবর্তন করা হয়। ডিজিটাল সিগনালের বেলায় তথ্যকে কিছু নির্দিষ্ট মানের (যথা ০ এবং ১) সমন্বয়ে সংকেত এ পরিণত করা হয়। পরস্পরের সাথে সংযুক্ত এক গুচ্ছ ট্রান্সমিটার, রিসিভার বা ট্রান্সিভারের সমন্বয়ে গঠিত হয় নেটওয়ার্ক। ডিজিটাল নেটওয়ার্কে এক বা একাধিক রাউটার থাকে, যার কাজ হলো একটি নির্দিষ্ট বাবহারকারীর কাছে তথ্য পাঠানো। অ্যানালগ নেটওয়ার্কে এ এক বা একাধিক সুইচ থাকে যা দুই বা ততোধিক ব্যবহারকারীর মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে। দুই ধরনের নেটওয়ার্ক ক্ষেত্রেই বহু দূরে সিগনাল পাঠাতে রিপিটার প্রয়োজন হয়, যাতে দুর্বল অ্যানালগ সিগনালকে বিবর্ধিত করে শক্তিশালী এবং বিকৃত ডিজিটাল সিগনালকে পুনর্গঠন করা যায়। অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো শব্দ (যা নয়েজ নামে পরিচিত) যাতে সিগনালকে বিকৃত করতে না পারে, সেজন্য এ ব্যবস্থা নেয়া হয়। চ্যানেল হলো এক ধরনের প্রচার মাধ্যম যার মধ্য দিয়ে একই সময়ে একাধিক তথ্য প্রবাহ পাঠানো যায়। যেমন, একটি বেতার কেন্দ্র ৯৬ মেগাহার্জ বেতার তরঙ্গে, আবার আরেকটি বেতার কেন্দ্র একই সময়ে ৯৪.৫ মেগাহার্টজ বেতার তরঙ্গে অনুষ্ঠান সম্প্রচার করতে পারে। এ ক্ষেত্রে মাধ্যমকে তরঙ্গ কম্পাঙ্ক বা ফ্রিকোয়েন্সি অনুসারে বিভক্ত করা হয়েছে এবং একেকটি বেতার কেন্দ্রের অনুষ্ঠান সম্প্রচারের জন্য এক একটি ফ্রিকোয়েন্সি নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে। আবার সম্প্রচারের জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় দৈর্ঘ্য নির্ধারণ করেও একটি চ্যানেল নির্দিষ্ট করা যায়। মডুলেশন তথ্য পাঠানোর উদ্দেশ্যে সিগনালের আকার পরিবর্তন করার পদ্ধতিকে বলা হয় মডুলেশন (উপযোজন)। মডুলেশন হলো টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার প্রাণ। একটি সিগনালে উপস্থিত তথ্য আরেকটি সিগনালের উপর চাপিয়ে দেয়ার জন্য সর্বদাই মডুলেশন পদ্ধতি বাবহৃত হয়। মডুলেশন ব্যবহার করা হয় সিগনালের কম্পাঙ্ক বাড়ানোর জন্য। কারণ বায়ু মাধ্যমে নিম্ন কম্পাঙ্কের সিগনাল খুব বেশি দূরে পাঠানো সম্ভব নয়। তাই সিগনাল পাঠানোর পূর্বে একে উচ্চ কম্পাঙ্কের আরেকটি সিগনালের উপর স্থাপন করা হয়। এটি করা হয় মূল সিগনালে বা ইনফরমেশন সিগনালে অবস্থিত তথ্য অনুসারে উচ্চ কম্পাঙ্কের সিগনালের কম্পাঙ্ক, বিস্তার () অথবা দশা (phase) পরিবর্তনের মাধ্যমে। সাধারণত মূল সিগনালের বিস্তারের পরিবর্তনের মধ্যে তথ্য উপস্থিত থাকে। উচ্চ কম্পাঙ্কের সিগনালটিকে বলা হয় বাহক সিগনাল বা ক্যারিয়ার সিগনাল। মিশ্র সিগনালটিকে বলে মডুলেটেড সিগনাল। মডুলেশন অ্যানালগ ও ডিজিটাল দুই প্রকার হতে পারে। ইনফরমেশন সিগনাল অনুসারে বাহক সিগনালের কোন বৈশিষ্ট্যটি পরিবর্তিত হচ্ছে, তার উপর নির্ভর করে অ্যানালগ মডুলেশন ৩ প্রকার হতে পারে। ১। বিস্তার উপযোজন পদ্ধতি(amplitude modulation): এ পদ্ধতিতে মূল সিগনালের বিস্তারের পরিবর্তনের সাথে সাথে যদি বাহক সিগনালের বিস্তার পরিবর্তিত হয়। ২। কম্পাঙ্ক উপযোজন পদ্ধতি(frequency modulation): এ পদ্ধতিতে মূল সিগনালের বিস্তার পরিবর্তনের সাথে সাথে বাহক সিগনালের কম্পাঙ্ক পরিবর্তিত হয়ে যায়। ৩। দশা উপযোজন পদ্ধতি(phase modulation): এ পদ্ধতিতে মূল সিগনালের বিস্তারের সাথে সাথে বাহক সিগনালের দশা পরিবর্তিত হয়। এটিও এক প্রকার কম্পাঙ্ক উপযোজন পদ্ধতি। উপরোল্লিখিত তিনটি মডুলেশন প্রক্রিয়াই এনালগ সিগনালের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। যদি একটি মূল অ্যানালগ সিগনাল থেকে নির্দিষ্ট সময় পর পর নমুনা সংগ্রহ করা হয় এবং সেই নমুনায় সিগনালের বিস্তারের মান (value)-কে ডিজিটাল সংখ্যায় রূপান্তর করা হয়, তবে তাকে ডিজিটাল সিগনাল বলা হয়। ডিজিটাল তথ্যকে অ্যানালগ তরঙ্গাকারে উপস্থাপন করতে মডুলেশন করা হয়। একে বলা হয় “কীয়িং”। বিভিন্ন ধরনের কীয়িং প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়, যেমন- ফেজ শিফ্‌ট কীয়িং, অ্যাম্পলিচ্যুড শিফ্‌ট কীয়িং, মিনিমাম শিফ্‌ট কীয়িং। ব্লুটুথ প্রযুক্তিতে দু’টি যন্ত্রের মধ্যে সংযোগ স্থাপনে ফেজ শিফ্‌ট কীয়িং প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়। মডুলেশনের উদাহারণ: মানুষের কণ্ঠস্বরের উপর উপযোজিত কম্পাঙ্ক সাধারণত ৩০০–৩৪০০ হার্জের মাঝে। এই কম্পাঙ্কের শব্দ খুব বেশি দূরে থেকে শুনতে পাওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু যদি মানুষের এই কম্পাঙ্কের কথা একটি ৯৬ মেগাহার্টজ কম্পাঙ্কের বাহক সিগনালের তবে তা দূরে প্রেরণ করা সম্ভব হয়। এভাবেই বেতার সম্প্রচারিত হয়ে থাকে। ইতিহাস প্রাচীন যুগের যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রাচীন যুগে মানুষ দুরে অবস্থানকারী কোনো মানুষের সাথে ধোঁয়ার সংকেত দিয়ে বা ঢোল বাজিয়ে যোগাযোগ করত। আফ্রিকা, নিউ গিনি এবং দক্ষিণ আমেরিকার স্থানীয় উপজাতিরা ঢোল বাজিয়ে পরস্পরের সাথে যোগাযোগ করত। চিন ও উত্তর আমেরিকার অধিবাসীরা ধোঁয়ার সংকেত দিয়ে দূরে খবর পাঠাত। খ্রিষ্টপূর্ব দ্বিতীয় সহস্রাব্দে মেসোপটেমিয়ায় এমনই এক টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল। ইউফ্রেটিস নদীর তীরে মালির আক্কাদিয়ান নগরীতে আলোক সংকেতের মাধ্যমে সংবাদ প্রেরণ করত। ১৭৫৪ খ্রিষ্টাব্দে ফরাসি পদার্থবিদ জাঁ-আন্তোয়িন নুলে () বৈদ্যুতিক ট্রান্সমিশন উদ্ভাবন করেন। ১৭৯২ সালে ক্লদ শাপে (Claude Chappe) নামে একজন ফরাসি প্রকৌশলী প্রথম দৃশ্যমান টেলিগ্রাফ যন্ত্র তৈরি করেন যা লিল ও প্যারিস এর মাঝে সংযোগ স্থাপন করে। এ ক্ষেত্রে সেমাফোর পদ্ধতি ব্যবহৃত হত। সেমাফোর পদ্ধতিতে দুটি পতাকার বিভিন্ন অবস্থানের মাধ্যমে বিভিন্ন বর্ণ নির্দেশ করে সংকেত পাঠানো হয়। লিল থেকে প্যারিস পর্যন্ত স্থাপিত প্রথম সংযোগটি পরে স্ট্রাসবার্গ পর্যন্ত বর্ধিত হয়। ১৭৯৪ সালে সুইডিশ প্রকৌশলী আব্রাহাম এডেলক্রান্টজ সামান্য ভিন্ন একটি প্রযুক্তি ব্যবহার করে স্টকহোম থেকে ড্রটিংহোম পর্যন্ত সংযোগ স্থাপন করেন। শাপে-র যন্ত্রে কপিকলের মাধ্যমে কাঠের তক্তা ঘওরার ব্যাবস্থা ছিল। অপরদিকে ক্রান্টজের যন্ত্রে কেবল হালকা শাটার ব্যবহৃত হওয়ায় এর গতি ছিল বেশি। কিন্তু সেমাফোর পদ্ধতি ব্যবহার করে যোগাযোগ করা অভিজ্ঞ ব্যক্তি ছাড়া অসম্ভব ছিল। এছাড়াও অল্প দূরত্ব (১০-৩০ কি.মি.) পরপর টাওয়ার নির্মাণের বিশাল খরচের কারণে ১৮৮০ সালের পর থেকে বাণিজ্যিকভাবে এ যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যায়। টেলিগ্রাফ ও টেলিফোন স্যার চার্লস হুইটস্টোন এবং স্যার উইলিয়াম ফদারগিল কুক সর্বপ্রথম বাণিজ্যিকভাবে বৈদ্যুতিক টেলিগ্রাফ যন্ত্র তৈরি করেন। এতে একটি নির্দেশক কাঁটার বিক্ষেপের মাধমে বার্তা পাঠানো হতো। ১৮৩৯ সালের ৯ই এপ্রিল তারিখে গ্রেট ওয়েস্টার্ন রেলওয়ের ২১ কি.মি. দূরত্বে যোগাযোগ স্থাপন করতে এর ব্যবহার শুরু হয়। একই সময়ে আটলান্টিকের অপর পারে স্যামুয়েল মোর্স আলাদাভাবে একটি বৈদ্যুতিক টেলিগ্রাফ যন্ত্র তৈরি করেন এবং ১৮৩৭ সালের ২রা সেপ্টেম্বর জনসমক্ষে উপস্থাপন করেন। কিন্তু যন্ত্রটি সফলভাবে কাজ করতে ব্যর্থ হয়। এরপর তিনি আলফ্রেড় ভেইল নামে একজন বিজ্ঞানীর সঙ্গে সম্মিলিতভাবে আরেকটি যন্ত্র আবিষ্কার করেন যেটি টেলিগ্রাফ বার্তাকে কাগজের ফিতায় সংরক্ষণ করতে পারে। ১৮৩৮ সালের ৬ই জানুয়ারি তাদের এই যন্ত্রটি প্রথমে ৫ কিলোমিটার ও পরে ২৪মে,১৮৪৪ তারিখে ওয়াশিংটন ও বাল্টিমোরের মাঝে ৬৪ কি.মি. দূরত্বে সফলভাবে কাজ করে। তারা তাদের এই যন্ত্রটি পেটেন্ট করেন। ১৮৫১ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে ২০,০০০ মাইল দীর্ঘ টেলিগ্রাফ লাইন স্থাপিত হয়। ১৮৬৬ সালে প্রথম সফলভাবে আটলান্টিকের দু'প্রান্তের মাঝে টেলিগ্রাফ সংযোগ স্থাপিত হয়। এর পুর্বে ১৮৫৭ ও ১৮৫৭ সালেও এ সংযোগ স্থাপন করা হয়েছিল, কিন্তু কয়েকদিন বা কয়েক সপ্তাহ পরেই তা অচল হয়ে পড়ে। thumb|আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল কর্তৃক আবিষ্কৃত প্রথম টেলিফোনযন্ত্রের অনুলিপি ১৮৫৭ সালে আলেক্সান্ডার গ্রাহাম বেল টেলিফোন আবিষ্কার করেন। অবশ্য এর আগে ১৮৪৯ সামে অ্যান্টোনিও মেউচ্চি একটি যন্ত্র আবিষাক্র করেন যার মাধ্যমে লাইনের মধ্য দিয়ে বৈদ্যুতিকভাবে কন্ঠ প্রেরণ করা যেত। এই যন্ত্রটি শব্দবৈদ্যুতিক প্রভাবের উপর নির্ভর করত। কিন্তু এই যন্ত্রটি ব্যবহার করা অসম্ভব ছিল কারণ ব্যবহারকারীকে গ্রাহক যন্ত্রটি মুখে ঢুকিয়ে কথা শুনতে হত। ১৮৭৮ ও ১৮৭৯ সালে আটলান্টিকের উভয় পারে নিউ হ্যাভেন ও লন্ডোন শহরে বাণিজ্যিক টেলিফোন ব্যবস্থা চালু হয়। এই ব্যবস্থা চালু করার জন্য আলেক্সান্ডার বেল উভয় দেশেই পেটেন্ট লাভ করেন। এরপর অতি দ্রুত প্রযুক্তির প্রসারণ হয়। ১৮৮০ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান শহরগুলোতে এক্সচেঞ্জ এবং আন্তঃশহর টেলিফোন লাইন স্থাপিত হয়। সংযোগ স্থাপন করার জন্য সুইচিং প্রযুক্তিও উন্নত হয়। তা সত্বেও আটলান্টিকের দু'পারের মাঝে কন্ঠ আদান প্রদান করা সম্ভব ছিল না। ১৯২৭ সালের ৭ই জানুয়ারি প্রথম বেতার সংযোগের মাধ্যমে কন্ঠ যোগাযোগ স্থাপিত হয়। ১৯৫৬ সালের ২৫শে সেপ্টেম্বর ট্রান্স-আটলান্টিক-টেলিফোন লাইন স্থাপিত হওয়ার আগ পর্যন্ত দুই ভুখন্ডের মাঝে কোন তার সংযোগ ছিল না। এই টেলিফোন লাইন্টিতে ৩৬টি টেলিফোন সার্কিট ছিল। বেতার ও টেলিভিশন ১৮৩২ সালে জেমস লিন্ডসে শ্রেনীকক্ষে তার ছাত্রদের সামনে তারবিহীন টেলিগ্রাফ সংযোগ উপস্থাপন করেন। ১৮৫৪ সালে তিনি পানিকে মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে ডান্ডি থেকে উঢ্যাভেন পরযন্ত দুই মাইল দূরত্বে তার বিহীন সংযোগ স্থপন করে দেখান। ১৮৯৩ সালে ফ্রাঙ্কলিন ইন্সটিটিউটে এক বক্তৃতায় নিকোলা টেসলা উদাহারণসহ তারবিহীন টেলিগ্রাফি প্রযুক্তির বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দেন। ভ্যাকুয়াম টিউব আবিষ্কারের পুর্বে বেতার ব্যবস্থায় যে সকল যন্ত্রপাতি ব্যবহৃত হত সে সব উপকরণ ব্যবহার করেই তিনি এ উদাহারণ উপস্থাপন করেন। ১৯০০ সালে রেগিনাল্ড ফেসেন্ডেন প্রথম তার ছাড়া মানুষের কন্ঠস্বর প্রেরণ করতে সক্ষম হন। ১৯০১ সালে গুগলিয়েলমো মার্কনি যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের মাঝে তার বিহীন সংযোগ স্থাপন করেন, যা তাকে ১৯০৯ সালে নোবেল পুরস্কার এনে দেয় (তিনি কার্ল ব্রাউন এর এর সাথে যুগ্মভাবে এ পুরস্কার পান)। ১৯২৫ সালের ২৫শে মার্চ, লন্ডনের সেলফ্রিজ নামের একটি মনিহারী দোকানে জন লগি বেয়ার্ড চলন্ত ছবি প্রেরণ করে দেখান। অবশ্য তার যন্ত্রটি সম্পুর্ণ ছবি দেখাবার বদলে ধারণকৃত ছবির একটি অস্পষ্ট ছায়া প্রদর্শন করেছিল কিন্তু অবিলম্বে অক্টোবর মাসেই তিনি এ সমস্যার সমাধান করেন এবং ১৯২৬ সালের ২৬শে জানুয়ারী পুনরায় ঐ সেলফ্রিজ দোকানেই আবার টেলিভিশন উপস্থাপন করেন। বেয়ার্ডের তৈরি টেলিভিশন নিপকও চাকতি(nipkow disk) ব্যবহার করে ছবি গ্রহণ ও প্রদর্শন করা হতো, তাই একে বলা হয় যান্ত্রিক টেলিভিশন। এই যন্ত্রের উপর নির্ভর করেই ১৯২৯ সালের ৩০শে সেপ্টেম্বর ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং করপোরেশন বা বিবিসি এর পরীক্ষামুলক সম্প্রচার চালু হয়। বিংশ শতকের অধিকাংশ টেলিভিশনে ব্যবহৃত হয় কার্ল ব্রাউন এর আবিষ্কৃত ক্যাথোড রে টিউব প্রযুক্তি। এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে ফিলো ফার্ন্সওয়র্থ প্রথম একটি কার্যকরী মডেল তৈরি করে তার পরিবারের সদস্যদের দেখান ১৯২৭ সালের ৭ই সেপ্টেম্বর। একই সময়ে ভলাদিমির যোরিকিনও এই রযুতিতে ব্যবহার করে বৈদ্যুতিক টেইভিশন আবিষ্কার করেন। পরে আদালতে ফয়সালা করে ফার্ন্সওয়র্থকে এই আবিষ্কারের কৃতিত্ব দেয়া হয়। কম্পিউটার নেটওয়ার্ক এবং ইন্টারনেট তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ ATIS Telecom Glossary Communications Engineering Tutorials Federal Communications Commission IEEE Communications Society International Telecommunication Union (Ericsson removed the book from their site in September 2005) VoIP, Voice over Internet Protocol and Internet telephone calls Free Telco Dictionary বিষয়শ্রেণী:টেলিযোগাযোগ প্রযুক্তি
টেলিযোগাযোগ
right|thumb|মায়ের সাথে বেবুন, তানজানিয়ার জাতীয় উদ্যান হতে তোলা ছবি বেবুন বানর জাতীয় একটি স্তন্যপায়ী প্রাণী। তথ্য বিষয়শ্রেণী:স্তন্যপায়ী প্রাণী বিষয়শ্রেণী:আফ্রিকার প্রাণী
বেবুন
কার্বন বা অঙ্গারক (ল্যাটিন ভাষায়ঃ কার্বো "কয়লা")(রাসায়নিক সংকেত C, পারমাণবিক সংখ্যা ৬) একটি মৌলিক পদার্থ। এটি একটি অধাতু এবং যদি চারটি মুক্ত ইলেক্ট্রন পায় তবে যা টেট্রাভেলেন্ট বৈশিষ্ট্যের কারণে চারটি সমযোজী রাসায়নিক বন্ধন গঠন করতে সক্ষম। পর্যায় সারণীতে এর অবস্থান গ্রুপ ১৪তে ও এটি একটি পি-ব্লক মৌল এবং C ও C প্রকৃতিতে এটি দুইটি আইসোটোপ স্থায়ী রুপে মুক্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। কিন্তু অস্থায়ী C শুধুমাত্র রেডিওনিক্লিড রুপে পাওয়া যায়। এটি ক্ষয়িষ্‌নু হওয়ায়, যার অর্ধআয়ু (হাফ-লাইফ) প্রায় ৫,৭৩০ বছর। এটি পৃথিবীর জীবজগতের প্রধান গাঠনিক ও প্রাচীনতম মৌল উপাদানগুলির অন্যতম। ভূত্বকের প্রাচুর্যতার দিক দিয়ে এটি ১৫তম অবস্থানে রয়েছে, কিন্তু ভরের দিক দিয়ে বিবেচনা করলে হাইড্রোজেন, হিলিয়াম, এবং অক্সিজেন-এর পরে চতুর্থতম এর স্থান। আবিষ্কারের ইতিহাস কার্বন কবে আবিষ্কৃত হয়েছিল তা সঠিকভাবে বলা সম্ভব নয়। কারণ আগুন আবিষ্কারের আগে থেকেই মানুষ কার্বনের সাথে পরিচিত ছিল। বজ্রাঘাতের ফলে পুড়ে যাওয়া কাঠের মাধ্যমেই মানুষ প্রথম কার্বনের সাথে পরিচিত হয়। আগুন আবিষ্কারের পর কার্বন হয় মানুষের নিত্যসঙ্গী। কারণ এটি অতিমাত্রায় দাহ্য একটি বস্তু। কার্বন পদার্থটির সাথে পরিচিত থাকলেও এটি যে একটি মৌলিক পদার্থ তা মানুষ বেশিদিন আগে জানতে পারেনি। এমনকি কার্বন নামটির ইতিহাস বেশি প্রাচীন নয়। ১৭৮৯ সালে এন্টনি ল্যাভয়সিয়ে কর্তৃক সংকলিত মৌলিক পদার্থের তালিকায় কার্বন উপস্থিত ছিল। মূলত ল্যাভয়সিয়েই প্রথম ব্যক্তি যিনি প্রমাণ করেছিলেন কার্বন একটি মৌলিক পদার্থ। কয়লা ও অন্যান্য যৌগের দহন পরীক্ষা করে তিনি এই প্রমাণ পেয়েছিলেন। প্রকৃতিতে কার্বনের দুইটি বহুরুপ রয়েছে। একটি হীরক এবং অন্যটি গ্রাফাইট। অনেক আগে থেকেই মানুষ এ পদার্থ দুটিকে চিনতো। এমনকি উচ্চ তাপমাত্রায় হীরাকে দহন করালে যে অবশেষ হিসেবে কিছু পাওয়া যায়না তাও মানুষের জানা ছিল। কিন্তু এই পদার্থ দুটিকে সম্পূর্ণ ভিন্ন পদার্থ হিসেবে মনে করা হতো। কার্বন ডাই অক্সাইড আবিষ্কারের পর এই সমস্যার সমাধান হয়। ল্যাভয়সিয়ে দেখেন যে, হীরক এবং কাঠকয়লা দুটির দহনেই কার্বন ডাই অক্সাইড উৎপন্ন হয়। এ থেকে সিদ্ধান্ত নেয়া গিয়েছিল যে এরা অভিন্ন পদার্থ। ১৭৮৭ খ্রিস্টাব্দে Methods of Chemical Nomenclature নামক গ্রন্থে (ল্যাভয়সিয়ে, এল. গুইটন ডি. মারভিউ, সি. বারথোলেট এবং এ. ফোউরক্রই কর্তৃক লিখিত) প্রথম কার্বনেয়াম (কার্বন) নামটির উল্লেখ পাওয়া যায়। ল্যাটিন নাম তথা কার্বনেয়াম আবার সংস্কৃত ভাষা থেকে এসেছে। সংস্কৃত ভাষায় ক্রা শব্দের অর্থ ফোটা। ১৮২৪ খ্রিস্টাব্দে মৌলটির নাম কার্বন দেয়া হয়েছিল। ১৭৯৭ খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞানী এস. টেন্যান্ট আবিষ্কার করেন, সম পরিমাণ হীরক ও গ্রাফাইটের দহনে সমআয়তন কার্বন ডাই অক্সাইড উৎপন্ন হয়। অবশেষে ১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দে এল. গুইটন ডি. মারভিউ নিশ্চিতভাবে প্রমাণ করেন যে হীরক, গ্রাফাইট এবং কোকের একমাত্র উপাদান হচ্ছে কার্বন। এর বিশ বছর পর তিনি সতর্কতার সাথে উত্তপ্ত করে হীরককে গ্রাফাইট এবং গ্রাফাইটকে কার্বন ডাই অক্সাইডে পরিণত করতে সমর্থ হন। কিন্তু গ্রাফাইট থেকে হীরক তৈরির মত প্রযুক্তি তখনও ছিলনা। অবশেষে ১৯৫৫ সালে ব্রিটিশ বিজ্ঞানীদের একটি দল ৩০০০° সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রা এবং ১০৯ প্যাসকেল চাপে গ্রাফাইট থেকে হীরক সংশ্লেষণ করতে সক্ষম হন। এর কিছুদিন পর সোভিয়েত ইউনিয়নে কার্বন নামে আরেকটি পদার্থ তৈরি করা হয় যাকে কার্বনের তৃতীয় বহুরুপ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই পদার্থের ক্ষেত্রে কার্বনের পরমাণুগুলো একটির সাথে আরেকটি সংযুক্ত হয়ে লম্বা শিকল তৈরি করে। এটি দেখতে অনেকটা ভূসিকালির মত। তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ আরও দেখুন ব্যক্তি এন্টনি ল্যাভয়সিয়ে এল. গুইটন ডি. মারভিউ সি. বারথোলেট এ. ফোউরক্রোই এস. টেন্যান্ট অন্যান্য হীরক গ্রাফাইট কয়লা জৈব যৌগ বিষয়শ্রেণী:মৌলিক পদার্থ
কার্বন
জর্জ ওয়াশিংটন (ফেব্রুয়ারি ২২, ১৭৩২ – ডিসেম্বর ১৪, ১৭৯৯) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম রাষ্ট্রপতি। তিনি আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধ-এ কন্টিনেন্টাল আর্মির সর্বাধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন। তাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গঠনের প্রধান বলে উল্লেখ করা হয় এবং তিনি তার জীবদ্দশায় এবং এখনও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতির জনক হিসেবে পরিচিত। ওয়াশিংটন উপনিবেশিক ভার্জিনিয়ার এক ধনাট্য পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পরিবার তামাক চাষ এবং দাস ব্যবসায়ের সাথে জড়িত ছিল। তিনি পরবর্তীতে উত্তরাধিকার সূত্রে তা লাভ করেন। তার যৌবনে তিনি উপনিবেশিক মিলিশিয়ার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন এবং ফরাসি ও ভারতীয় যুদ্ধের প্রথম ভাগ পর্যন্ত এই পদে ছিলেন। ১৭৭৫ সালে দ্বিতীয় কন্টিনেন্টাল কংগ্রেস মার্কিন বিপ্লবের সময় তাকে কন্টিনেন্টাল আর্মির সর্বাধিনায়ক পদে পদোন্নতি প্রদান করেন। ওয়াশিংটন ১৭৭৬ সালে ব্রিটিশদের বোস্টন থেকে বিতাড়িত হতে বাধ্য করে, কিন্তু পরের বছর তিনি ব্রিটিশদের কাছে পরাজিত হন এবং নিউ ইয়র্ক সিটিতে প্রায় ধরা পড়ে যান। শীতকালের মাঝামাঝিতে ডিলাওয়্যার নদী পাড় হয়ে তিনি ট্রেন্টন এবং প্রিন্সটনের যুদ্ধে ব্রিটিশদের পরাজিত করেন এবং নিউ জার্সি পুনঃদখল করেন। তার কৌশলে কন্টিনেন্টাল সৈন্যদল ১৭৭৭ সালে সারাটোগায় এবং ১৭৮১ সালে ইয়র্কটাউনে দুটি প্রধান ব্রিটিশ সৈন্যদলকে বন্দী করতে সমর্থ হয়। ইতিহাসবেত্তাগণ ওয়াশিংটনকে তার জেনারেল নির্বাচন এবং তত্ত্বাবধান; সেনাদের নির্দেশ প্রদান; কংগ্রেস, রাজ্য সরকার ও তাদের মিলিশিয়ার সাথে সমন্বয়; এবং যুদ্ধের রসদ, সরঞ্জামাদি ও প্রশিক্ষণের জন্য তার উচ্চ-প্রশংসা করেন। যুদ্ধে ওয়াশিংটন ১৭৮৩ সালে বিজয় নিশ্চিত হওয়ার পর, ওয়াশিংটন ক্ষমতা দখল না করে সর্বাধিনায়ক পদ থেকে অব্যহতি নেন, যা মার্কিন গনপ্রজাতন্ত্র প্রণয়নে তার অঙ্গীকারের প্রমাণ। ১৭৮৭ সালে তিনি ফিলাডেলফিয়ায় অনুষ্ঠিত সাংবিধানিক সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন। এই সম্মেলনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নতুন সরকার ব্যবস্থা প্রণয়ন করা হয়। ওয়াশিংটন তার নেতৃত্বের গুণাবলির জন্য প্রশংসিত ছিলেন এবং ইলেকটোরাল কলেজের প্রথম দুটি নির্বাচনে সর্বসম্মতভাবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। ১৭৮৯ সালে নির্বাচন পরবর্তী সময়ে তিনি বিদ্রোহী অংশসমূহ একত্রিত করার কাজ করেন। তিনি সকল ফেডারেল এবং রাজ্যের সকল ঋণ পরিশোধের জন্য আলেকজান্ডার হ্যামিলটনের অনুষ্ঠানের সমর্থন দেন, সরকারের একটি স্থায়ী আসন প্রতিষ্ঠা করেন, একটি কার্যকর করব্যবস্থা চালু করেন এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন। দুই মেয়াদে রাষ্ট্রপতি থাকার পর তিনি অবসরে যান। দুই মেয়াদে এই অবসরের রীতি ১৯৪০ সালের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ফ্রাঙ্কলিন ডি. রুজভেল্ট তৃতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত চলে। তার মৃত্যুর পর ভার্জিনিয়ার তৃতীয় হেনরি লি ওয়াশিংটনের প্রশংসা করে বলেন, "যুদ্ধে প্রথম, শান্তিতে প্রথম এবং তার জনগণের হৃদয়ে প্রথম।" তিনি জীবিত অবস্থায় এবং মৃত্যুর পরও পরম পূজনীয়। সমালোচকদের এবং জনগণের উপর করা জরিপে ফলাফলে তিনি সবসময় যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের সেরা তিন রাষ্ট্রপতির একজন হিসেবে স্থান অধিকার করেছেন। প্রারম্ভিক জীবন thumb|left|জর্জ ওয়াশিংটনের জন্মস্থান জন্ম ও শিক্ষা (১৭৩২–১৭৫৩) জর্জ ওয়াশিংটন পোপ্‌স ক্রিক এস্টেট ওয়েস্টমোরল্যান্ড, ভার্জিনিয়া, ব্রিটিশ আমেরিকায় (বর্তমান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) জন্মগ্রহণ করেন। তিনি অগাস্টিন ওয়াশিংটন (১৬৯৪-১৭৪৩) ও তার দ্বিতীয় স্ত্রী ম্যারি বল ওয়াশিংটন-এর প্রথম সন্তান। জুলীয় বর্ষপঞ্জী অনুসারে তার জন্ম তারিখ ১১ ফেব্রুয়ারি, ১৭৩১ খ্রিষ্টাব্দ এবং গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জী অনুসারে ২২ ফেব্রুয়ারি, ১৭৩২ খ্রিষ্টাব্দ। ওয়াশিংটন মূলত ইংরেজ ভদ্র সম্প্রদায় বংশোদ্ভূত। তার পূর্বপুরুষগণ ইংল্যান্ডের সালগ্রেভ থেকে আমেরিকায় যান। তার প্র-পিতামহ জন ওয়াশিংটন ১৬৫৬ সালে ভার্জিনিয়া গমন করেন এবং জমি ও ক্রীতদাসদের একত্রিত করেন। একই কাজ করেন তার পুত্র লরেন্স ওয়াশিংটন এবং তার নাতী, জর্জের পিতা অগাস্টিন ওয়াশিংটন। অগাস্টিন ছিলেন একজন তামাক চাষী এবং তিনি তার জমিতে লোহা উৎপাদনে বিনিয়োগ করেন। জর্জের বাল্যকালে অগাস্টিন ভার্জিনিয়ার ভদ্র সম্প্রদায়ের মধ্যবিত্ত সদস্য ছিলেন। জর্জ ওয়াশিংটনের ছয়জন ভাইবোন প্রাপ্ত বয়স্ক হয়েছিল, যাদের মধ্যে লরেন্স ও অগাস্টিন জুনিয়র - এই দুইজন ছিল তার পিতার প্রথম পক্ষের স্ত্রী জেন বাটলার ওয়াশিংটনের গর্ভের। তার বাকি চার ভাইবোনরা হল স্যামুয়েল, বেটি এলিজাবেথ, জন অগাস্টিন, ও চার্লস। তার তিনজন ভাইবোন প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার পূর্বে মারা গিয়েছিল। তাদের মধ্যে তার বোন মিলড্রেড এক বছর বয়সে মারা যায়, তার সৎভাই বাটলার শিশুকালে মারা যায় এবং সৎবোন জেন বার বছর বয়সে মারা যায়, তখন জর্জের বয়স ছিল দুই। তার পিতা ১৭৪৩ সালে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে মারা যান। তখন তার বয়স এগার। ভূমি জরিপকার্য ওয়াশিংটনের জরিপকার্যে অংশগ্রহণ শুরু হয় তার জীবনের প্রারম্ভিক পর্যায়ে স্কুলে চর্চার মাধ্যমে। এই চর্চার মাধ্যমে তিনি ভূমি জরিপ পেশার মূল বিষয়ের শিক্ষা গ্রহণ করেন এবং পরে বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। তার প্রথম জরিপ কাজের অভিজ্ঞতা হয় মাউন্ট ভার্ননের পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে। জরিপকার্যের তার প্রথম সুযোগ আসে ১৭৪৮ সালে যখন তার প্রতিবেশী এবং বন্ধু জর্জ ফেয়ারফ্যাক্সের নেতৃত্বে একটি জরিপ দলের সাথে যোগদান করার জন্য আমন্ত্রণ পান। ফেয়ারফ্যাক্স পশ্চিম ভার্জিনিয়া সীমান্ত বরাবর ভূখণ্ডের বিশাল ভূভাগের জরিপের জন্য একটি পেশাদারী জরিপ সংস্থা গঠন করে। সেখানে তরুণ ওয়াশিংটন অমূল্য অভিজ্ঞতা লাভ করে। ওয়াশিংটন ১৭৪৯ সালে ১৭ বছর বয়সে একজন পেশাদারী আমিন হিসেবে কর্মজীবন শুরু করে। তিনি পরবর্তীতে উইলিয়াম অ্যান্ড মেরি কলেজ থেকে কমিশন লাভ করেন এবং আমিনের লাইসেন্স পান এবং নব্য প্রতিষ্ঠিত কুলপিপার কাউন্টির সরকারি আমিন হন। তার ভাই লরেন্সের বিশিষ্ট ফেয়ারফ্যাক্স পরিবারের সাথে তার যোগাযোগের কারণে তিনি ভালো বেতনের এই সরকারি পদে চাকরি পান। তিনি তার প্রথম জরিপ কাজ সম্পন্ন করেন দুই সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে। এই সময়ে তিনি ৪০০ একর জমির ভূগর্ভস্থ অংশের নকশা তৈরি করেন এবং একটি প্রতিশ্রুতিশীল কর্মজীবনের পথে এগিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি পশ্চিম ভার্জিনিয়াতে তার অনেক জমি অধিগ্রহণ করেন এবং এই কাজের প্রাথমিক পর্যায়ে অধিগ্রহণকৃত শেনানডোহ উপত্যকায় জমি ক্রয় করেন। পরের চার বছর ধরে ওয়াশিংটন পশ্চিম ভার্জিনিয়ায় এবং ভার্জিনিয়া বিনিয়োগকারীদের দ্বারা পরিচালিত ভূমি বিনিয়োগ সংস্থা ওহাইও কোম্পানির জন্য ভূমি জরিপের কাজ করেন। তিনি ভার্জিনিয়া মিলিশিয়া কমান্ডার হিসেবে লরেন্সের অবস্থানের কারণে ভার্জিনিয়ার নতুন লেফটেন্যান্ট গভর্নর ররবার্ট ডিনউইডির নজরে আসেন। তিনি নজরে না আসার কোন কারণ ছিল না। তিনি ছিলেন ছয় ফুটের অধিক লম্বা, এবং তার সমসাময়িক অধিকাংশের তুলনায় লম্বা ছিলেন। ১৭৫০ সালের অক্টোবর মাসে ওয়াশিংটন সরকারি আমিন পদ থেকে পদত্যাগ করেন, যদিও তিনি তার নতুন পেশায় পরবর্তী তিন বছর ধরে কঠোর পরিশ্রমী হিসেবে কাজ করতে থাকেন। তিনি দক্ষিণ ভার্জিনিয়া জন্য সেনা বিভাগের সহকারী কর্মকর্তা হিসাবে সামরিক লাভের পূর্ব পর্যন্ত আরো দুই বছর পেশাগতভাবে তার জরিপকার্য অব্যাহত রাখেন এবং তাকে বেশিরভাগই ফ্রেডেরিক কাউন্টিতে কাজ করতে দেখা যায়। ১৭২৫ সাল নাগাদ ওয়াশিংটন প্রায় ২০০টি জরিপ কাজ সম্পন্ন করেন এবং ৬০ হাজার একরের বেশি ভূমির জরিপ করেন। তিনি ১৭৯৯ সাল পর্যন্ত তার জীবনের বিভিন্ন সময়ে জরিপের কাজ চালিয়ে যান। ফরাসি ও ভারতীয় যুদ্ধ thumb|upright|ওয়াশিংটনের মানচিত্র, তার ওহাইওর দিনলিপি (১৭৫৩–১৭৫৪) থেকে। ওয়াশিংটন ফরাসি ও ভারতীয় যুদ্ধে ভার্জিনিয়ার ব্রিটিশ উপনিবেশের মিলিশিয়ার মেজর হিসেবে সেনাবাহিনীতে তার কর্মজীবন শুরু করেন। ১৭৫৩ সালে তাকে ব্রিটিশ রাজের দূত হিসেবে দুর-উত্তরে বর্তমান পেনসিলভানিয়ার এরিতে ফরাসি ও ভারতীয় অফিসালদের নিকট পাঠানো হয়। ওহাইও কোম্পানি ছিল ওহাইও উপত্যকায় ব্যবসায় সম্প্রসারণের জন্য ব্রিটিশ বিনিয়োগকারীদের অন্যতম মাধ্যম, যার মাধ্যমে ভারতীয় বাণিজ্যে নতুন দিগন্তের সূচনা হয়। ১৭৫৩ সালে ফরাসিরা ওহাইও কাউন্টিতে তাদের সেনা মোতায়ন নিয়ন্ত্রণে নিয়ে যায়। ভার্জিনিয়া ও পেনসিলভানিয়ার ব্রিটিশ উপনিবেশ ওহাইওকে তাদের নিজেদের অঞ্চল হিসেবে দাবী করে। এ থেকে দুই অঞ্চলের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়, যা পরে ফরাসি ও ভারতীয় যুদ্ধ (১৭৫৪-১৭৬২) নামে পরিচিতি লাভ করে এবং এ থেকেই বিশ্বব্যাপী সাত বছরের যুদ্ধ (১৭৫৬-৬৩) শুরু হয়। ওয়াশিংটন শুরু থেকেই এই যুদ্ধে জড়িত হয়ে পড়েন। যুদ্ধের শুরু উপনিবেশিক ভার্জিনিয়ার ডেপুটি গভর্নর রবার্ট ডিনউইডিকে ব্রিটিশ সরকার নির্দেশ দেয় ওহাইও নদী অববাহিকাসহ ব্রিটিশ অঞ্চলসমূহ দাবী করছে এমন প্রতিপক্ষকে পাহারা দিতে। ১৭৫৩ সালের শেষের দিকে ডিনউইডি ওয়াশিংটনকে ফরাসিদের ওহাইও উপত্যকা ছাড়ার চিঠি পাঠাতে নির্দেশ দেন। এর এক বছর পূর্বে মিলিশিয়ার নতুন জেনারেল হিসেবে দ্বায়িত্ব পাওয়ার পর ওয়াশিংটন নিজেকে প্রমাণ করার সুযোগের অপেক্ষায় ছিলেন। এই সফরে ওয়াশিংটন মিলিশিয়ার সাথে ফরাসিদের আসন্ন সংঘর্ষে তাদেরকে সমর্থন দেওয়ার জন্য লগ্‌সটাউনে তানাচারিসন ("হাফ-কিং" নামেও পরিচিত ছিল) এবং ইংল্যান্ডের সাথে সন্ধিকৃত অন্যান্য ইরোকোইস প্রধানদের সাথে সাক্ষাৎ করেন। তিনি চিঠিটি স্থানীয় ফরাসি কমান্ডার জাক লেগার্দিয়ো দে সেন্ট-পিঁয়েরের কাছে পাঠান। জাক ভদ্রভাবে তা প্রত্যাখ্যান করেন। ওয়াশিংটন এই সময়ে একটি দিনলিপি রাখতেন যা ডিনিউডির আদেশে উইলিয়াম হান্টার প্রকাশ করেন এবং এই দিনলিপি তাকে ভার্জিনিয়ার বিখ্যাত করে তুলে। তার এই জনপ্রিয়তা তাকে কমিশন পেতে এবং তার সামরিক জীবন শুরু করতে সাহায্য করে। thumb|left|ফোর্ট নেসিসিটিতে জর্জ ওয়াশিংটনের ইভেনিং কাউন্সিল। ডিনউইডি ওয়াশিংটনকে ওহাইও কাউন্টিতে প্রেরণ করে বর্তমান পেনসিলভানিয়ার পিটসবার্গে অবস্থিত ওহাইও কোম্পানির নির্মাণাধীন দুর্গ পাহারা দেওয়ার জন্য। তার সেখানে পৌঁছানোর পূর্বে একটি ফরাসি সেনাদল সেখানকার উপনিবেশিক বাণিজ্যকর্মীদের বিতাড়িত করে ডুকোয়েন্স দুর্গ নির্মাণ শুরু করে। ফরাসি সৈন্যদের একটি বিচ্ছিন্ন অংশ পরিচালনা করেন জোসেপ কোলোঁ দে জুমনভিয়া। তাদের খোঁজ করেন তানাচারিসন এবং বর্তমান পেনসিলভানিয়ার ইউনিয়নটাউনের কয়েকজন সৈন্য। ১৭৫৪ সালের ২৮ মে ওয়াশিংটন এবং তার কয়েকটি মিলিশিয়া ইউনিট এবং তাদের মিঙ্গো সহযোগীদের সহায়তায় ফরাসিদের অতর্কিত আক্রমণ করে, যা জুমনভিয়া গ্লেনের যুদ্ধ নামে পরিচিতি লাভ করে। যুদ্ধে বা যুদ্ধের পরে আসলে কি হয়েছিল এই বিষয় নিয়ে মতানৈক্য রয়েছে। কিন্তু কিছু প্রাথমিক সূত্র এই বিষয়ে একমত হয়েছে যে এই যুদ্ধ ১৫ মিনিট স্থায়ী হয়েছিল। জুমনভিয়াকে হত্যা করা হয়েছিল এবং তার দলের লোকজনকে হয় মেরে ফেলা হয়েছিল বা বন্দী হিসেবে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তবে জুমনভিয়া তানাচারিসনের হাতে খুন হয়েছিল, বা ওয়াশিংটনের সাথে যখন বসেছিল তখন কেউ বন্দুক দিয়ে গুলি করে হত্যা করে, নাকি অন্য কোন উপায়ে হত্যা করা হয়েছিল এই বিষয় স্পষ্ট নয়। এই যুদ্ধের পর তানাচারিসন ওয়াশিংটনকে 'শহর ধ্বংসকারী' আখ্যা প্রদান করেন। ফরাসিরা এই আক্রমণের প্রতিবাদে ১৭৫৪ সালের জুলাইয়ে ফোর্ট নেসেসিটিতে আক্রমণ করে এবং ওয়াশিংটনকে বন্দী করে নিয়ে যায়। তারা পরে তাকে ভার্জিনিয়ায় তার দলের কাছে ফিরে যাওয়ার অনুমতি দেয়। ইতিহাসবিদ জোসেফ এলিসের ভাষ্য হল এই সময় ওয়াশিংটনের সাহসিকতা, নতুন পরিকল্পনা, অনভিজ্ঞতা, এবং প্রচন্ডতা লক্ষ্য করা যায়। ভার্জিনিয়ায় ফিরে ওয়াশিংটন ক্যাপ্টেন হিসেবে তার পদ অবনতি প্রত্যাখ্যান করেন এবং তার কমিশন থেকে অব্যহতি নেন। ওয়াশিংটনের ওহাইও কাউন্টিতে আক্রমণের আন্তর্জাতিক প্রভাব দেখা যায়। ফরাসিরা ওয়াশিংটনকে জুমনভিয়াকে গুপ্তহত্যার জন্য অভিযুক্ত করে। তারা জুমনভিয়াকে কূটনৈতিক মিশনের অংশ ছিল বলে দাবী করে। ফ্রান্স এবং ব্রিটেন উভয়ই এই অঞ্চলের সমন্বয় ফিরিয়ে আনতে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত ছিল এবং উভয় দেশ ১৭৫৫ সালে উত্তর আমেরিকায় সৈন্য পাঠায়। আনুষ্ঠানিকভাবে ১৭৫৬ সালে যুদ্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়। ব্রাডক অভিযান ১৭৫৫ ১৭৫৫ সালে ওয়াশিংটন দুর্ভাগ্যজনক ব্রাডক অভিযানে ব্রিটিশ জেনারেল এডওয়ার্ড ব্রাডকের উর্ধ্বতন মার্কিন সাহায্য প্রদানকারী হন। ইহা ছিল উপনিবেশসমূহে ব্রিতিশদের সবচেয়ে বড় অভিযান এবং এর উদ্দেশ্য ছিল ফরাসিদের ওহাইও কাউন্টি থেকে বিতাড়িত করা ও প্রথম উদ্দেশ্য ছিল ডিউকোয়েন্স দুর্গ দখল করা। ওয়াশিংটন প্রথমে ব্রাডকের কাছ থেকে মেজর হিসেবে নিয়োগ চান, কিন্তু যখন বলা হয় যে লন্ডন থেকে না দেওয়া হলে ক্যাপ্টেনের উপর কোন পদ দেওয়া হবে না তখন তিনি স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে যোগ দেন। অভিযানে যাত্রাপথে ওয়াশিংটন মাথা ব্যথা এবং জ্বরাক্রান্ত হয়ে পড়েন। তা সত্ত্বেও তিনি যুদ্ধযাত্রা অব্যাহত রাখেন এবং যখন সৈন্যদল ধীরগতিতে চলতে থাকে তিনি ব্রাডককে সৈন্যদলকে দুইটি ভাগে বিভক্ত করতে পরামর্শ দেন। প্রাথমিক ও তুলনামূলক হালকা অস্ত্রসজ্জিত সৈন্যরা দ্রুত গতিতে চলতে পারে তাই তাদের সামনে রাখতে এবং তাদের পিছনে ভারী অস্ত্রসজ্জিত সৈন্যদের রাখতে বলেন। ব্রাডক তার পরামর্শ গ্রহণ করেন এবং সামনের ভাগের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। মনঙ্গাহেলার যুদ্ধে ফরাসি এবং তাদের মিত্র ভারতীয়রা ব্রাডকের স্বল্প সৈন্যদলে গুপ্ত আক্রমণ চালায় এবং জেনারেল ব্রাডক মারাত্মকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হন। বিপর্যস্ত ও হতাহতের ঘটনার পর ব্রিটিশরা ভয়ার্ত ও ছত্রভঙ্গ হয়ে যুদ্ধ থেকে পিছিয়ে আসে। ওয়াশিংটন যুদ্ধক্ষেত্রে ফিরে যায় এবং ব্রিটিশ ও ভার্জিনীয় বিশৃঙ্খল সৈন্যদলকে শৃঙ্খলাবদ্ধভাবে ফিরিয়ে নিয়ে আসে। এই কাজে তিনি তার অসুস্থতা সত্ত্বেও সাহসিকতা ও শক্তির পরিচয় দেন। তার দুটি ঘোড়া গুলিবিদ্ধ হয় এবং তার মাথার টুপি ও কোটে বেশ কয়েকটি গুলি এসে লাগে। যুদ্ধে ৯৭৬ জনের ব্রিটিশ সৈন্যদলের দুই তৃতীয়াংশ মারা যায় এবং আহত হয়। ফোর্ট নেসেসিটির যুদ্ধে ওয়াশিংটনের নির্দেশনার যারা সমালোচনা করেছিলেন তারা এই যুদ্ধে তার কাজের জন্য তাকে পুনরায় বাহবা দেন। ভার্জিনিয়া রেজিমেন্টের কমান্ডার লে. গভর্নর ডিনউইডি ১৭৫৫ সালে ওয়াশিংটনকে "ভার্জিনিয়া রেজিমেন্টের কর্নেল এবং সমস্ত বাহিনীর সর্বাধিনায়ক" হিসেবে কমিশন প্রদান করেন এবং তাকে ভার্জিনিয়ের সীমান্ত রক্ষার দায়িত্ব প্রদান করেন। ভার্জিনিয়া রেজিমেন্ট উপনিবেশসমূহের মধ্যে প্রথম পূর্ণকালীন মার্কিন সামরিক ইউনিট ছিল, যা পার্ট টাইম মিলিশিয়া এবং ব্রিটিশ নিয়মিত ইউনিটের বিপরীত ছিল। ওয়াশিংটনকে "রক্ষনাত্মক বা আক্রমনাত্মক", যেটা তিনি ভাল মনে করেন সেভাবে কাজ করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়। তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে কমিশন গ্রহণ করেন, কিন্তু অফিসার পদে পদোন্নতির লাল কোট (এবং বেতন) তাকে এড়িয়ে যেতে থাকে। ব্রিটিশ সেনাদের ভার্জিনিয়া রেজিমেন্টের অন্তর্ভুক্ত করার জন্য ডিনউইডিও ব্যর্থ হয়েছিলেন। হাজার সৈন্যের নির্দেশ প্রদানে ওয়াশিংটন একজন কড়াশাসক ছিলেন এবং তিনি প্রশিক্ষণের ওপর জোর দিয়েছিলেন। তিনি পশ্চিমে ভারতীয়দের বিরুদ্ধে নিষ্ঠুর অভিযানের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন; তার রেজিমেন্ট ১০ মাসে ২০টি যুদ্ধে জয়লাভ করে এবং তার এক তৃতীয়াংশ মানুষ হারায়। ওয়াশিংটনের জোরালো প্রচেষ্টায় ভার্জিনিয়ার সীমান্ত জনগণ অন্যান্য উপনিবেশ থেকে কম পীড়িত হয়। ইতিহাসবেত্তা এলিস এই প্রসঙ্গে বলেন যে এই যুদ্ধে "এটি ছিল তার একমাত্র অযোগ্য সাফল্য"। ১৭৫৮ সালে ওয়াশিংটনে ডিউকোয়েন্স দুর্গ দখল করার জন্য ফোর্বস অভিযানে অংশগ্রহণ করেন। তিনি একটি বন্ধুত্বপূর্ণ গোলা-বারুদ প্রদর্শনীতে বিব্রত হন। তার দল এবং অন্য ব্রিটিশ সৈন্যদল মনে করে তাদের ফরাসি শত্রুরা এই প্রদর্শনী সংগঠিত করেছে। এতে তারাও পাল্টা গোলা-বারুদ নিক্ষেপ করে এবং এই দুর্ঘটনায় ১৪ জন নিহত এবং ২৬ জন আহত হয়। ওয়াশিংটন এই অভিযানের অন্য কোনও আক্রমণের সাথে জড়িত ছিলেন না। ব্রিটিশরা এতে কৌশলগত জয়লাভ করে এবং ফরাসিরা দুর্গের ত্যাগ করলে তারা ওহাইও উপত্যকার নিয়ন্ত্রণ লাভ করে। অভিযানের পর তিনি ১৭৫৮ সালের ডিসেম্বরে ভার্জিনিয়া রেজিমেন্ট কমিশন থেকে অবসর গ্রহণ করেন। ১৭৭৫ সালে বিপ্লব শুরু না হওয়া পর্যন্ত তিনি সামরিক জীবনে ফিরে আসেননি। যুদ্ধের মধ্যবর্তী সময়: মাউন্ট ভারনন (১৭৫৯-৭৪) thumb|upright|১৭৫৭ সালে জন ওলাস্টন কর্তৃক অঙ্কিত মার্থা ওয়াশিংটনের মেজোতিন্ত। ওয়াশিংটন ১৯৫৯ সালের ৬ জানুয়ারি ধনী বিধবা মার্থা ডানড্রিজ কাস্টিসকে বিয়ে করেন। তখন মার্থার বয়স ছিল ২৮। ওয়াশিংটনের প্রাপ্ত চিঠিসমূহ থেকে বলা যায় যে তার বন্ধুের স্ত্রী স্যালি ফেয়ারফ্যাক্সের সাথে তার প্রেমের সম্পর্ক থাকতে পারে। তবুও জর্জ এবং মার্থার বিবাহ সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল, কারণ মার্থা বুদ্ধিমান, করুণাময় এবং প্লান্ট এস্টেট পরিচালনায় অভিজ্ঞ ছিলেন। একসাথে তারা মার্থার আগের পক্ষের সন্তান, জন পারেক কাস্টিস এবং মার্থা পার্ক (প্যাস্টি) কাস্টিসকে প্রতিপালন করেন। পরে তারা মার্থার নাতি-নাতনী এলিনর পার্ক কাস্টিস এবং জর্জ ওয়াশিংটন পার্ক কাস্টিসকে প্রতিপালন করেছিল। জর্জ এবং মার্থা দম্পতির কোন সন্তানই ছিল না; ১৭৫১ সালে গুটিবসন্ত রোগ তাকে বন্ধ্যা করে দেয়। নব-দম্পতি আলেকজান্দ্রিয়ার কাছাকাছি মাউন্ট ভারননে চলে যান, এবং সেখানে তিনি আবাদকারী এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের জীবন গ্রহণ করেন। thumb|left|ওয়াশিংটন তার বিয়ের পর মাউন্ট ভারননে তার এস্টেট বর্ধিত করেন। মার্থার সঙ্গে ওয়াশিংটনের বিবাহের ফলে তার সম্পত্তি এবং সামাজিক অবস্থান উন্নততর হয় এবং তিনি ভার্জিনিয়ার অন্যতম ধনীদের একজন হয়ে ওঠেন। তিনি তার বিয়ের ফলে কাস্টস এস্টেটের এক-তৃতীয়াংশের মালিক হন, যার মূল্য ছিল প্রায় ১০০,০০০ মার্কিন ডলার, এবং মার্থার সন্তানদের প্রতি যত্নবান ছিলেন এবং তাদের পক্ষে বাকি সম্পত্তির দেখাশুনা করেন। ১৭৫৪ সালে রবার্ট ডিনউইডি প্রতিজ্ঞা করেন, যে সকল সেনা এবং কর্মকর্তা ফরাসি ও ভারতীয় যুদ্ধে অংশগ্রহণ করবে তাদের জমি দান করা হবে। ওয়াশিংটন নতুন গভর্নর লর্ড বোটেটোর্টের কাছ থেকে জমি দখল করে নেন এবং ১৭৬৯-৭০ সালে ডিনউইডির প্রতিজ্ঞা পূরণ করেন। পাশাপাশি ওয়াশিংটন বর্তমান ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ার পশ্চিমাঞ্চলে জমির মালিকানা লাভ করেন, যে স্থানে কানাওহা নদী প্রবাহিত হয়ে ওহাইও নদীতে পতিত হয়েছে। পরে তিনি তার নিজের নামে আরও জমি ক্রয় করেছিলেন। ১৭৭৫ সাল নাগাদ ওয়াশিংটন মাউন্ট ভারননের সীমানা দ্বিগুণ করে পর্যন্ত নিয়ে যান, এবং এর ক্রীতদাসের পরিমাণ বৃদ্ধি করে ১০০ জনের অধিকে নিয়ে যান। সম্মানিত সামরিক বীর ও বৃহৎ জমিদার হিসেবে তিনি স্থানীয় অফিস স্থাপন করেন এবং ভার্জিনিয়ার প্রাদেশিক আইন পরিষদে নির্বাচিত হন। তিনি ১৭৫৮ সাল থেকে শুরু ক্রএ সাত বছর হাউজ অব বুরগেসের পক্ষে ফ্রেডেরিক কাউন্টির প্রতিনিধিত্ব করেন। ১৭৫৮ সালের নির্বাচনে তিনি ভোটারদের ১৭০ গ্যালন চালের গুঁড়ো, বিয়ার, মদ, হার্ড সিডার এবং ব্র্যান্ডি নিয়ে যান, যদিও ফোর্বস অভিযানে তিনি বেশিরভাগ সময় অনুপস্থিত ছিলেন। বেশ কয়েকজন স্থানীয় অভিজাতদের সহায়তায় ওয়াশিংটন আসনটিতে প্রায় ৪০ শতাংশ ভোট পেয়ে বাকি তিনজন প্রার্থীকে পরাজিত করে নির্বাচনে জয়লাভ করেন। আইন পরিষদে তার কর্মজীবনের প্রাথমিক পর্যায়ে ওয়াশিংটন খুব কম কথা বলতেন, কিন্তু ১৭৬০-এর দশকে তিনি ব্রিটেনের কর ও বাণিজ্য নীতির উল্লেখযোগ্য সমালোচক হয়ে ওঠেন। মার্কিন বিপ্লব (১৯৭৫-৮৩) ওয়াশিংটন আমেরিকান বিপ্লবে নেতৃস্থানীয় সামরিক এবং রাজনৈতিক ভূমিকা পালন করে। ১৭৬৭ সালে যখন তিনি ব্রিটিশ পার্লামেন্টের বিভিন্ন কর্মের বিরুদ্ধে প্রথম রাজনৈতিক অবস্থান নেন তখন থেকেই এই বিপ্লবে তার সম্পৃক্ততা শুরু হয়। তিনি উপনিবেশসমূহের জন্য ব্রিটিশ পার্লামেন্ট কর্তৃক প্রণীত প্রথম কর আইন ১৭৬৫ সালের স্ট্যাম্প অ্যাক্টের বিরোধিতা করেন। এই অ্যাক্টে উপনিবেশ থেকে কোন প্রতিনিধি ছিলেন না। তিনি ১৭৬৭ সালে প্রণীত টাউনশিড অ্যাক্টের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়লে তিনি ক্রমবর্ধমান ঔপনিবেশিক প্রতিরোধে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে শুরু করেন। তিনি ১৭৬৯ সালের মে মাসে এই অ্যাক্ট বাতিল করা না হলে ভার্জিনিয়ায় ইংরেজদের পণ্য বর্জন করার প্রস্তাব পেশ করেন। প্রস্তাবটি নথিবদ্ধ করেন তার বন্ধু জর্জ ম্যাসন। ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ১৭৭০ সালে টাউনশেড অ্যাক্ট বাতিল করে। ১৭৭৪ সালে ওয়াশিংটন ইনটলারেবল অ্যাক্টে এই আইনকে "আমাদের অধিকার ও স্বাধিকারের আগ্রাসন" হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বন্ধু ব্রায়ান ফেয়ারফ্যাক্সকে বলেন, "আমার মনে হয় গ্রেট ব্রিটেনের পার্লামেন্টের আমার অনুমতি ছাড়া আমার পকেটে হাত দেওয়ার অধিকার নেই।" তিনি আরও বলেন যে আমেরিকানরা কোন প্রকার অত্যাচারের নিকট মাথা নত করবে না। ১৭৭৪ সালের জুলাই মাসে তিনি একটি বৈঠকের সভাপতিত্ব করেন, যেখানে "ফেয়ারফ্যাক্স রিসলভস" গৃহীত হয়েছিল। এই রিসলভটিতে অন্যান্য বিষয়াবলির সাথে কন্টিনেন্টাল কংগ্রেসের আহ্বান জানানো হয়। আগস্ট মাসে ওয়াশিংটন প্রথম ভার্জিনিয়া কনভেনশনে যোগ দেন, যেখানে তিনি প্রথম কন্টিনেন্টাল কংগ্রেসের প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হন। সর্বাধিনায়ক left|thumbnail|upright|চার্লস উইলসন পিল কর্তৃক তৈল রঙে অঙ্কিত জর্জ ওয়াশিংটন, জুলাই ১৭৭৬, ব্রুকলিন জাদুঘর। ১৭৭৫ সালের এপ্রিল মাসে বোস্টনের নিকটবর্তী সংগঠিত লেক্সিংটন ও কনকর্ডের যুদ্ধের পরে উপনিবেশগুলো যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। ওয়াশিংটন দ্বিতীয় কন্টিনেন্টাল কংগ্রেসে সামরিক উর্দিতে হাজির হন, যা তার যুদ্ধের প্রস্তুতি নির্দেশ করে। তার সম্মান, সামরিক অভিজ্ঞতা, দক্ষতা ছিল এবং তিনি মিলিটারি প্রধান হিসেবে সেনাবাহিনী পরিচালক এবং দেশপ্রেমিক হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ভার্জিনিয়া সর্ববৃহৎ উপনিবেশ ছিল এবং স্বীকৃতি লাভের যোগ্য ছিল। নিউ ইংল্যান্ডে প্রথম যুদ্ধ শুরু হয় এবং তার উপলব্ধি করে যে তাদের দক্ষিণের সমর্থন প্রয়োজন। ওয়াশিংটন সর্বাধিনায়কের দপ্তর লাভের আশা করেনি এবং তিনি মনে করতেন তিনি এই পদের যোগ্য নন, কিন্তু তাতে কোন গুরুতর প্রতিযোগিতা ছিল না। কংগ্রেস ১৭৭৫ সালের ১৪ জুন কন্টিনেন্টাল আর্মি গড়ে তুলে। ম্যাসাচুসেটসের জন অ্যাডামস ওয়াশিংটনকে মনোনীত করেন, এবং পরে তাকে কন্টিনেন্টাল আর্মির পূর্ণ জেনারেল এবং সর্বাধিনায়ক হিসেবে নিয়োগ প্রদান করেন। ওয়াশিংটনের বেতন গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানান, যার ফলে তিনি "মহৎ এবং উদার" কমান্ডিং অফিসার হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন। ব্রিটিশরা তখন ওয়াশিংটন এবং তার সেনাবাহিনীর দ্বারা সংগঠিত হতে যাওয়া আসন্ন বিপদ অনুধাবন করে। ১৭৭৫ সালের ২৩ আগস্ট ব্রিটেন মার্কিন দেশপ্রেমিককে রাজদ্রোহী হিসেবে অভিযুক্ত করে রাজকীয় ফরমান জারি করে। যদি তারা বলপ্রয়োগ করে, তবে তাদের সম্পত্তি জব্দ করা হবে এবং তাদের নেতাদের ফাঁসির মঞ্চে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হবে। জেনারেল ওয়াশিংটন যুদ্ধে তিনটি ভূমিকা পালন করেন। প্রথমত, তিনি ১৭৭৫-৭৭ সালে এবং পুনরায় ১৯৮১ সালে প্রধান ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর বিপক্ষে সৈন্যদের নেতৃত্ব প্রদান করেন। তিনি অনেকগুলো যুদ্ধে পরাজিত হন, কিন্তু তিনি যুদ্ধে তার সেনাবাহিনী নিয়ে আত্মসমার্পণ করেন নি। তিনি যুদ্ধ শেষ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে অক্লান্তভাবে যুদ্ধ করেন। তিনি কংগ্রেসের সহযোগিতায় যুদ্ধের সামগ্রিক কৌশলের নকশা করেন। thumb|upright|জন ট্রামবুল অঙ্কিত জেনারেল জর্জ ওয়াশিংটন অ্যাট ট্রেন্টন, ইয়েল ইউনিভার্সিটি আর্ট গ্যালারি (১৭৯২)। দ্বিতীয়ত, তিনি সেনাবাহিনীকে সংগঠিত করতেন এবং প্রশিক্ষণ প্রদান করতেন। তিনি নিয়মিত সৈনিক নিয়োগ করেন এবং অভিজ্ঞ প্রুশীয় সৈনিক ব্যারন ফন স্টেউবেনকে তাদের প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্য নিয়োগ দেন। যুদ্ধের প্রচেষ্টা এবং সেনা সরবরাহ কংগ্রেসের আওতায় ছিল, কিন্তু ওয়াশিংটন কংগ্রেসকে অপরিহার্য উপাদানসমূহ প্রদান করার জন্য চাপ প্রদান করতেন। ১৭৭৬ সালের জুন মাসে কংগ্রেসের প্রথম প্রচেষ্টার পাশাপাশি "যুদ্ধ ও অর্ডিন্যান্স বোর্ড" কমিটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৭৭৭ সালের জুলাই মাসে তা বোর্ড অব ওয়ারের আওতায় চলে যায়, এই কমিটিতে সেনাবাহিনীর সদস্যদেরও অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সশস্ত্র বাহিনীর নেতৃত্বের কাঠামো ছিল জগাখিচুড়ি ধরনের ছিল, যার তদারকি করত কংগ্রেসনাল নিয়োগকর্তারা (এবং কংগ্রেস মাঝে মাঝে ওয়াশিংটনের মতামত ব্যতীতই নিয়োগ প্রদান করত)। পাদটীকা তথ্যসূত্র গ্রন্থপঞ্জি , Pulitzer Prize বিষয়শ্রেণী:১৭৩২-এ জন্ম বিষয়শ্রেণী:১৭৯৯-এ মৃত্যু বিষয়শ্রেণী:১৮শ শতাব্দীর মার্কিন রাজনীতিবিদ বিষয়শ্রেণী:আমেরিকান একাডেমি অব আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সেসের ফেলো বিষয়শ্রেণী:ইংরেজ বংশোদ্ভূত মার্কিন ব্যক্তি বিষয়শ্রেণী:ওলন্দাজ বংশোদ্ভূত মার্কিন ব্যক্তি বিষয়শ্রেণী:কন্টিনেন্টাল আর্মির জেনারেল বিষয়শ্রেণী:মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি বিষয়শ্রেণী:মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতির জনক বিষয়শ্রেণী:মার্কিন সামরিক কর্মকর্তা
জর্জ ওয়াশিংটন
গ্রিক পুরাণে জিউস ( বা ; প্রাচীন গ্রিক: Ζεύς জ়্‌দেউ্যস্‌, আধুনিক গ্রিক: Δίας, Dias) হলেন "দেবগণ ও মানবজাতির পিতা"। হেসিয়ডের থিওজেনি অনুসারে, তিনি পরিবারের পিতার ন্যায় মাউন্ট অলিম্পাসের অলিম্পিয়ানদের শাসন করতেন। গ্রিক পুরাণে তিনি ছিলেন আকাশ ও বজ্রের দেবতা। গ্রিকদের বিশ্বাসে তিনি দেবরাজ। জিউস নিরন্তর বিশ্বব্রহ্মাণ্ডকে পর্যবেক্ষণ করেন। পসেনিয়াস লিখেছেন, "জিউস স্বর্গের রাজা, এই প্রবাদটি সকলেই জানেন।" হেসিয়ডের থিওজেনি গ্রন্থের মতে, জিউস বিভিন্ন দেবতাদের মধ্যে তাঁদের দায়িত্ব বণ্টন করে দেন। হোমারীয় স্তোত্রাবলি-তেও তাঁকে দেবতাদের প্রধান বলা হয়েছে। হেসিয়ডের থিওজেনি গ্রন্থে তাঁকে "দেবগণ ও মানবজাতির পিতা" বলেও অভিহিত করা হয়েছে। তাঁর প্রতীকগুলি হল বজ্র, ঈগল, ষাঁড় ও ওক। ইন্দো-ইউরোপীয় ঐতিহ্যের এই সকল নিদর্শনগুলি ছাড়াও, এই ধ্রুপদি "মেঘ-সমাবেশকারী" প্রাচীন নিকট প্রাচ্য থেকেও কিছু মূর্তিতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য অর্জন করেছেন। এর উদাহরণ হল রাজদণ্ড। গ্রিক শিল্পীরা মূলত দুটি ভঙ্গিতে জিউসের মূর্তিগুলি নির্মাণ করেছেন: প্রথমত, দণ্ডায়মান অবস্থায় দ্রুত-অগ্রসর হওয়ার ভঙ্গিতে, যেখানে তিনি ডান হাতে বজ্র উঁচিয়ে থাকেন এবং দ্বিতীয়ত রাজসভায় উপবিষ্ট মূর্তিতে। রোমান ও এট্রুস্ক্যান পুরাণে জিউসের সমতুল দেবতারা হলেন যথাক্রমে জুপিটার ও টিনিয়া। জিউস ক্রোনাস ও রেয়ার কনিষ্ঠ সন্তান। সর্বাধিক প্রচলিত মত অনুযায়ী, তিনি হেরাকে বিবাহ করেছিলেন। তবে ডোডোনার ওর‌্যাকল মতে, তাঁর স্ত্রী ছিলেন ডায়োনে: ইলিয়ড মহাকাব্যের বর্ণনা অনুযায়ী, তাঁর ঔরসে ডায়োনের গর্ভে আফ্রোদিতির জন্ম হয়। জিউস তাঁর কামলালসার জন্য প্রসিদ্ধ। এর ফলস্রুতিতে তাঁর অনেক দেবতা ও যোদ্ধা সন্তানের জন্ম হয়। এঁরা হলেন অ্যাথেনা, অ্যাপোলো ও আর্টেমিস, হার্মিস, পার্সেফোনি (ডিমিটারের গর্ভে), ডায়োনিসাস, পার্সেউস, হেরাক্লেস, হেলেন, মিনোস ও মিউজগণ (নিমোসিনের গর্ভে); জিউসের ঔরসে হেরার গর্ভে জন্ম হয় আরেস, হেবে ও হেফাস্টাসের। পৌরাণিক উপাখ্যান thumbnail|250px|left| জিউসের রথ, আলফ্রেড চার্চ রচিত স্টোরিজ ফ্রম দ্য গ্রিক ট্রাজেডিয়ানস গ্রন্থের (১৮৭৯) চিত্রণ জন্ম ক্রোনাসের ঔরসে রিয়ার গর্ভে একাধিক সন্তানের জন্ম হয়: হেস্টিয়া, ডিমিটার, হেরা, হেডিস ও পোসেইদন। কিন্তু জন্মমাত্রেই ক্রোনাস তাঁর সন্তানদের গিলে ফেলতেন। কারণ গাইয়া ও ইউরেনাসের থেকে তিনি জানেছিলেন যে তিনি যেমন নিজের পিতাকে ক্ষমতাচ্যুত করেছিলেন, তেমনই তাঁর নিজের সন্তানই তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করবে। জিউসের জন্মের পূর্বে রিয়া তাঁকে রক্ষা করার জন্য গাইয়ার সঙ্গে পরামর্শ চান, যাতে ইউরেনাস ও তাঁর সন্তানদের প্রতি কৃত অপরাধের উপযুক্ত শাস্তি পান ক্রোনাস। রিয়া ক্রিটে জিউসের জন্ম দেন এবং শিশুর কাপড়ে জড়িয়ে একটি পাথর ক্রোনাসের হাতে তুলে দেন। এই পাথরটিই গিলে ফেলেন ক্রোনাস। শৈশব thumb|left|সোনার স্ট্যাটারে অঙ্কিত জিউসের মাথায় লরেল পাতার মুকুট, ল্যাম্পস্যাকাস ৩৬০-৩৪০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ রিয়া জিউসকে ক্রিটের মাউন্ট ইডার একটি গুহায় লুকিয়ে রাখেন। তাঁর শৈশব সম্পর্কে একাধিক পরস্পরবিরোধী কাহিনি প্রচলিত আছে: ১: গাইয়া তাঁকে লালনপালন করেন। ২: অ্যামালথিয়া নামে একটি ছাগল তাঁকে প্রতিপালন করেন। অন্যদিকে একদল সেনা বা ছোটো দেবতা নাচগান, চেঁচামেচি ও বর্শানিক্ষেপে শব্দ সৃষ্টি করেন, যাতে শিশুর কান্না ক্রোনাস না শুনতে পায়। ৩: অ্যাডাম্যান্থিয়া নামে এক নিম্ফ তাঁকে প্রতিপালন করেন। ক্রোনাস যেহেতু পৃথিবী, স্বর্গ ও সমুদ্রের দেবতা ছিলেন, তাই তাঁর কাছ থেকে লুকোতে গিয়ে সেই নিম্ফ একটি দড়ির দোলনায় জিউসকে গাছে ঝুলিয়ে রাখেন, যাতে সে পৃথিবী, সমুদ্র ও আকাশের বাইরে থেকে তাঁর পিতার দৃষ্টির অগোচরে থাকেন। ৪: সিনোসুরা নামে এক নিম্ফ তাঁকে প্রতিপালন করেন। কৃতজ্ঞতাবশত জিউস নক্ষত্রমণ্ডলীতে তাঁকে স্থান দেন। ৫: মেলিসা তাঁকে প্রতিপালন করেন। তিনি জিউসকে ছাগলের দুধ ও মধু খাওয়াতেন। ৬: একটি পশুপালক পরিবার এই মর্মে তাঁকে প্রতিপালন করতে রাজি হয় যে, তাদের ভেড়ার পালে নেকড়েরা কখনও হানা দেবে না। দৈবরাজ্য লাভ thumbnail|150px|right|জিউস, গেটি ভিলা, প্রথম শতাব্দী, অজ্ঞাত শিল্পী বয়ঃপ্রাপ্তির পর জিউস ক্রোনাসকে সেই পাথরটি ওগরাতে বাধ্য করেন যেটি ওম্ফালোস নামক নশ্বর মানুষদের প্রতীক হিসেবে পাইথো পারনাসাসের উপত্যকায় রেখেছিল। তারপর গেলার বিপরীত ক্রমে ক্রোনাসকে তিনি তাঁর ভাইবোনদের ওগরাতে বাধ্য করেন। কোনো কোনো পাঠান্তর থেকে জানা যায়, শিশুগুলিকে ওগরানোর জন্য মেটিস ক্রোনাসকে বমি করার ঔষধ প্রদান করেছিলেন। আবার কোনো কোনো মতে, জিউস ক্রোনাসের পেট চিরে তার ভাইবোনদের উদ্ধার করেছিলেন। এরপর টারটারাসের রক্ষক ক্যাম্পেকে হত্যা করে তিনি ক্রোনাসের ভাই জাইগ্যানেটস, হেক্টনকারস ও সাইক্লোপসদের উদ্ধার করেন। কৃতজ্ঞতাবশত, সাইক্লোপসরা তাঁকে বজ্র ও বিদ্যুৎ প্রদান করেন, যা পূর্বে গাইয়া কর্তৃক লুকিয়ে রাখা হয়েছিল। জিউস তাঁর ভাইবোন, জাইগ্যানেটস, হেক্টনকারস ও সাইক্লোপসের সহায়তায় ক্রোনাস সহ অন্যান্য টাইটানদের ক্ষমতাচ্যুত করেন। এই ঘটনা টাইটানোমেশি বা টাইটানদের যুদ্ধ নামে পরিচিত। টাইটানদের পরাজিত করে তাঁরা তাঁদের টারটারাস নামে অন্ধকার এক পাতাললোকে নিক্ষেপ করেন। অ্যাটলাস নামে এক টাইটানকে জিউসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের শাস্তিস্বরূপ আকাশ ধরে রাখার কাজ দেওয়া হয়। টাইটানদের সঙ্গে যুদ্ধের পর জিউস তাঁর দুই দাদা পসেইডন ও হেডিসের সঙ্গে বিশ্বচরাচর ভাগ করে নেন। জিউস হন আকাশের দেবতা, পসেইডন সমুদ্রের এবং হেডিস মৃতলোক বা পাতালের দেবতা হন। প্রাচীন পৃথিবী গাইয়াকে কেউ দাবি করতে পারেন না। তাই তিনি এই তিন জনেরই নিয়ন্ত্রণাধীন থাকেন। এই কারণেই পসেইডনকে "ভূকম্প-সৃষ্টিকারী" (ভূমিকম্পের দেবতা) বলা হয় এবং হেডিস মৃত মানুষদের উপর নিজ আধিপত্য কায়েম করেন। (পেনথাস দেখুন) টাইটানদের প্রতি জিউসের আচরণ গাইয়াকে ক্ষুব্ধ করে। কারণ টাইটানরা ছিল তাঁর সন্তান। দৈবরাজ্য লাভের পরই জিউসকে তাই গাইয়ার অন্যান্য সন্তান অর্থাৎ টাইফোন ও একিদনা নামে দৈত্যদ্বয়ের সঙ্গে লড়াই করতে হয়। তিনি টাইফোনকে একটি পর্বতের তলায় বন্দী করেন। কিন্তু একিদনা ও তাঁর সন্তানদের মুক্তি দেন। জিউস ও হেরা thumb| বিশালাকার রোমান শ্বেতপাথরে নির্মিত জিউসের আবক্ষমূর্তি, খ্রিষ্টীয় দ্বিতীয় শতাব্দী (ব্রিটিশ মিউজিয়াম) জিউস হেরার ভ্রাতা ও স্বামী। জিউসের ঔরসে হেরার গর্ভে আরেস, হেবে ও হেফাস্টাসের জন্ম হয়। যদিও কোনো কোনো মতে, হেরা একাকীই এই সকল সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন। অন্য মতে, ইলিথিয়া ও এরিসও হেরার কন্যা। নিম্ফ ও বিভিন্ন পৌরাণিক নশ্বর রাজবংশীয় নারী ও বালকদের সঙ্গে জিউসের যৌনসম্পর্ক ও প্রণয়কাহিনি প্রসিদ্ধ। অলিম্পিয়ান পুরাণতত্ত্বের মতে, লেটো, ডিমিটার, ডায়োনে ও মাইয়ার সঙ্গেও জিউসের যৌন সম্পর্ক বজায় ছিল। জিউসের প্রণয়ী নশ্বরেরা হলেন সেমেল, আইয়ো, ইউরোপা ও লেডা। (বিস্তারিত বর্ণনার জন্য নিচে দেখুন) একাধিক পুরাণে দেখানো হয়েছে হেরা তাঁর স্বামীয় প্রণয়ীদের প্রতি ঈর্ষাকাতর। এই ঈর্ষাবশত তিনি জিউসের অন্যান্য প্রণয়ী ও তাঁদের সন্তানদের প্রতি শত্রুভাবাপন্ন। কিছু সময়ের জন্য ইকো নামে এক নিম্ফ অবিরাম কথা বলে হেরার মনোযোগ তাঁর স্বামীর প্রণয়াভিযান থেকে সরিয়ে রাখেন। হেরা এই ছলটি ধরে ফেললে, ইকোকে অভিশাপ দেন যে সে শুধু অন্যের শব্দই প্রতিধ্বনিত করতে পারবে। প্রণয়সঙ্গী ও সন্তানাদি দৈব মাতৃকার গর্ভে নশ্বর/নিম্ফ/অন্যান্য মায়ের গর্ভে *The Greeks variously claimed that the Fates were the daughters of Zeus and the Titaness Themis or of primordial beings like Nyx, Chaos or Anake. † He is described as being "Earth-born" and was gestated buried beneath the ground; this is Gaia's domain, though she had no direct involvement in his birth or development. Other versions of his parentage include a version of the former excluding Poseidon and one with solely Poseidon and Euryale as his parents. পাদটীকা অতিরিক্ত পাঠ Burkert, Walter, (1977) 1985. Greek Religion, especially section III.ii.1 (Harvard University Press) Cook, Arthur Bernard, Zeus: A Study in Ancient Religion, (3 volume set), (1914–1925). New York, Bibilo & Tannen: 1964. Volume 1: Zeus, God of the Bright Sky, Biblo-Moser, June 1, 1964, (reprint) Volume 2: Zeus, God of the Dark Sky (Thunder and Lightning), Biblo-Moser, June 1, 1964, Volume 3: Zeus, God of the Dark Sky (earthquakes, clouds, wind, dew, rain, meteorites) Druon, Maurice, The Memoirs of Zeus, 1964, Charles Scribner's and Sons. (tr. Humphrey Hare) Farnell, Lewis Richard, Cults of the Greek States 5 vols. Oxford; Clarendon 1896–1909. Still the standard reference. Farnell, Lewis Richard, Greek Hero Cults and Ideas of Immortality, 1921. Graves, Robert; The Greek Myths, Penguin Books Ltd. (1960 edition) Mitford,William, The History of Greece, 1784. Cf. v.1, Chapter II, Religion of the Early Greeks Moore, Clifford H., The Religious Thought of the Greeks, 1916. Nilsson, Martin P., Greek Popular Religion, 1940. Nilsson, Martin P., History of Greek Religion, 1949. Rohde, Erwin, Psyche: The Cult of Souls and Belief in Immortality among the Greeks, 1925. Smith, William, Dictionary of Greek and Roman Biography and Mythology, 1870, Ancientlibrary.com, William Smith, Dictionary: "Zeus" Ancientlibrary.com বহিঃসংযোগ Greek Mythology Link, Zeus stories of Zeus in myth Theoi Project, Zeus summary, stories, classical art Theoi Project, Cult Of Zeus cult and statues Photo: Pagans Honor Zeus at Ancient Athens Temple from National Geographic * বিষয়শ্রেণী:ইলিয়ডের দেবতা বিষয়শ্রেণী:গ্রিক দেবতা বিষয়শ্রেণী:গ্রিক পুরাণ বিষয়শ্রেণী:দ্বাদশ অলিম্পিয়ান বিষয়শ্রেণী:পৌরাণিক রাজা বিষয়শ্রেণী:রক্ষক দেবতা বিষয়শ্রেণী:আকাশ ও আবহাওয়ার দেবতা বিষয়শ্রেণী:বজ্রের দেবতা বিষয়শ্রেণী:ওর‌্যাকুলার দেবতা বিষয়শ্রেণী:দেবতাদের নাম বিষয়শ্রেণী:গ্রিক পুরাণের চরিত্র
জিউস
300px|right|thumb|জেলিফিশ জেলিফিশ এক ধরনের অমেরুদণ্ডী প্রাণী যাদের পৃথিবীর সব মহাসাগরে দেখতে পাওয়া যায়। নামে "ফিশ" হলেও এটি মাছ নয়; এর মেরুদণ্ড নেই। ঘণ্টাকৃতি জেলীসদৃশ প্রাণীটি প্রাণীজগতের নিডারিয়া পর্বের সিফোজোয়া শ্রেণীর অন্তর্গত। জেলিটিন সমৃদ্ধ ছাতার মত অংশ এবং ঝুলে পড়া কর্ষিকা - এ দুই অংশে প্রাণীটির দেহ গঠিত। অন্তত ৫০০০ কোটি বছর ধরে সাগরে এদের বাস। প্রজনন অযৌন এবং যৌন উভয় পদ্ধতিতেই এরা বংশবিস্তার করে থাকে। এদের অযৌন জনন প্রক্রিয়া দুই প্রকারে সম্পন্ন হতে পারে। যথাঃ ১। পুনরুৎপত্তি (Regeneration) ২। মুকুলোদগম (Buddin) জীবনকাল জেলিফিশের জীবনকাল কয়েকঘণ্টা (ছোট আকারের কিছু হাইড্রোমিউডিসি (hydromedusae) থেকে কয়েক মাস পর্যন্ত হতে পারে। প্রজাতিভেদে জীবনকাল ও দোহবয়ব ভিন্ন হতে পারে। বাসস্থান বেশিরভাগ জেলিফিশ সামুদ্রিক জীব হলেও স্বাদুপানিতেও কিছু (যেমন ;হাইড্রোমিউডিসি (hydromedusae)) দেখা যায়। কিছু জেলিফিশ আবার শুধু লেকেই বাস করে। যেমন পালাউ (Palau) এর জেলিফিশ হৃদে এমনটি দেখা যায়। প্রকারভেদ বক্স জেলিফিশ একে অনেকসময় সামুদ্রিক ভীমরুল বলেও আখ্যায়িত করা হয়। এছাড়াও একে মৃত্যুর বাক্সও বলা হয় (box of death)। এর আছে লম্বা কর্ষিকা যা নেমাটোসিস্ট ও বিষ বহন করে। এর হুলের আঘাত প্রাণঘাতী হতে পারে এবং মাত্র চার মিনিটেই শিকারকে মেরেও ফেলতে পারে অর্থ্যাৎ সাপের বিষকেও হার মানিয়ে দেয়। এগুলোর বিষ-রোধক এখনো আবিষ্কৃত হয়নি। বাস উত্তর অষ্ট্রেলিয়ায়। তথ্যসূত্র বিষয়শ্রেণী:নিডেরিয়া বিষয়শ্রেণী:অমেরুদণ্ডী প্রাণী
জেলিফিশ
গাবন (), সরকারী নাম গাবোনীয় প্রজাতন্ত্র () মধ্য আফ্রিকার পশ্চিমভাগের একটি রাষ্ট্র। এর উত্তর-পশ্চিমে বিষুবীয় গিনি, উত্তরে ক্যামেরুন, পূর্বে ও দক্ষিণে কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, এবং পশ্চিমে আটলান্টিক মহাসাগর। গাবনের আয়তন ২৬৭,৬৬৭ বর্গকিমি। লিব্রভিল দেশের রাজধানী ও বৃহত্তম শহর। গাবন ১৯৬০ সালের ১৭ই আগস্ট ফ্রান্সের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে। এরপর থেকে আজ পর্যন্ত মাত্র দুইজন স্বৈরশাসক দেশটি শাসন করেছেন। ১৯৯০-এর দশকের শুরুতে বহুদলীয় ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয় এবং নতুন গণতান্ত্রিক সংবিধান পাস করা হয়। গাবনের জনসংখ্যা কম (২০ লক্ষ)। এখানে প্রচুর প্রাকৃতিক সম্পদ আছে এবং অনেক বিদেশী বিনিয়োগও ঘটেছে। এর ফলে গাবন আফ্রিকার সবচেয়ে সমৃদ্ধ দেশগুলির একটি এবং এর মানব উন্নয়ন সূচক আফ্রিকার দেশগুলির মধ্যে শীর্ষে। তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ সরকারী Le Gabon : official site of the Gabonese Republic Assemblée Nationale du Gabon official site Gabonese Embassy in London government information and links Le Sénat de la République Gabonaise official site UNPR Louis Gaston Mayila : Official Site political opposition party UNPR রাষ্ট্র প্রধান এবং মন্ত্রিপরিষদ সদসবৃন্দ পর্যটন ভ্রমণ করা পাতা- গাবন সাধারণ তথ্য Country Profile from BBC News Gabon from UCB Libraries GovPubs : Articles re Gabonese economy, culture and tourism from sarahmonaghan.co.uk সংবাদ মিডিয়া Gabon news headline links from Gaboneco.com Gabon news headline links from AllAfrica.com Gabon news and articles from gabonmagazine.com সাংস্কৃতিক The official site of the Arts, Traditions and Culture of Gabon - Discover the first Virtual Museum of the arts and traditions Gabonese literature at a glance Gabon Solidarité Internationale Baka Pygmies of Cameroon and Gabon Culture and music of the first inhabitants of Gabon বিষয়শ্রেণী:আফ্রিকার রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থার সদস্য রাষ্ট্র
গ্যাবন
মেক্সিকান যুক্তরাষ্ট্র, () বা সাধারণ নামে মেক্সিকো () ( ) উত্তর আমেরিকার একটি যুক্তরাষ্ট্রীয় সাংবিধানিক প্রজাতন্ত্র। এই দেশের উত্তর সীমান্তে অবস্থিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র; দক্ষিণ ও পশ্চিমে প্রশান্ত মহাসাগর; দক্ষিণ-পূর্বে গুয়াতেমালা, বেলিজ ও ক্যারিবিয়ান সাগর এবং পূর্বে মেক্সিকো উপসাগর অবস্থিত। প্রায় দুই মিলিয়ন বর্গ কিলোমিটার জুড়ে অবস্থিত মেক্সিকো আয়তনের বিচারে দুই আমেরিকার পঞ্চম বৃহত্তম রাষ্ট্র তথা বিশ্বের চতুর্দশ বৃহত্তম স্বাধীন রাষ্ট্র। দেশের জনসংখ্যা প্রায় ১০৯ মিলিয়ন; জনসংখ্যার বিচারে মেক্সিকো বিশ্বের একাদশ জনবহুল রাষ্ট্র। মেক্সিকো যুক্তরাষ্ট্র একত্রিশটি রাজ্য ও রাজধানী শহর একটি যুক্তরাষ্ট্রীয় জেলা নিয়ে গঠিত। প্রাককলম্বিয়ান মধ্য আমেরিকায় ইউরোপীয়দের আগমনের পূর্বেই ওলমেক, তোলতেক, তিওতিহুয়াকান, মায়া ও আজটেক সভ্যতার মতো একাধিক উন্নত সভ্যতা বিকাশলাভ করেছিল। ১৫২১ সালে স্পেন নিউ স্পেন প্রতিষ্ঠা করে। এই দেশটিই পরে মেক্সিকো উপনিবেশে পরিণত হয়। ১৮২১ সালে এক স্বাধীনতা যুদ্ধের মাধ্যমে মেক্সিকো স্বাধীনতা অর্জন করে। মেক্সিকোর স্বাধীনতা-উত্তর পর্যায় ছিল অর্থনৈতিক অস্থিরতা, অঞ্চল হস্তচ্যুত হওয়া, গৃহযুদ্ধ এবং বৈদেশিক হস্তক্ষেপ, দুটি সাম্রাজ্য ও দুটি দীর্ঘ অভ্যন্তরীণ একনায়কতন্ত্রের ইতিহাস। সর্বশেষ একনায়কতান্ত্রিক শাসনের শেষে ১৯১০ সালে সংঘটিত হয় মেক্সিকান বিপ্লব। এই বিপ্লবের ফলস্রুতি ১৯১৭ সালের সংবিধান এবং দেশের বর্তমান রাজনৈতিক ব্যবস্থার উত্থান। ২০০০ সালের জুলাই মাসের সাধারণ নির্বাচনে প্রথম বার প্রাতিষ্ঠানিক বিপ্লবী দলের ( পার্তিদ়ো রেভ়োলুসিওনারিও ইন্‌স্তিতুসিওনাল্‌ বা PRI পে, এরে, ই,) হাত থেকে রাষ্ট্রপতির পদ ছিনিয়ে নেয় কোনো বিরোধী দল। একটি আঞ্চলিক শক্তি এবং ১৯৯৪ সাল থেকে অর্গ্যানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ওইসিডি)-এর একমাত্র লাতিন আমেরিকান দেশ মেক্সিকো উচ্চ মধ্য-আয়ের দেশ হিসেবে দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত। মেক্সিকোকে সদ্য শিল্পায়িত দেশ হিসেবেও অভিহিত করা হয়। জিডিপির বিচারে মেক্সিকো বিশ্বের একাদশ বৃহত্তম অর্থব্যবস্থা। এছাড়াও আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের হিসেবে মাথাপিছু জিডিপির বিচারে লাতিন আমেরিকার বৃহত্তম রাষ্ট্র। দেশের অর্থব্যবস্থা মেক্সিকোর নর্থ আমেরিকান ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট (নাফটা) সহযোগীদের সঙ্গে ওতোপ্রতোভাবে জড়িত। বর্তমানে মেক্সিকো বিশ্বের এক উত্থানশীল শক্তি হওয়া সত্ত্বেও অসম আয়বণ্টন ও ড্রাগ-সংক্রান্ত হিংসার ঘটনা দেশের অন্যতম প্রধান সমস্যা বলে বিবেচিত হয়। এটি ল্যাটিন আমেরিকার সবচেয়ে উত্তরে ও সবচেয়ে পশ্চিমে অবস্থিত দেশ, এবং পৃথিবীর বৃহত্তম স্পেনীয় ভাষাভাষী রাষ্ট্র। দেশটির সরকারি নাম মেক্সিকান যুক্তরাষ্ট্র (স্পেনীয় ভাষায়: Estados Unidos Mexicanos এস্তাদোস উনিদোস মেহিকানোস)। মেক্সিকোর অধিবাসীরা দেশটিকে অনেক সময়মেক্সিকান প্রজাতন্ত্র (República Mexicana; রেপুব্লিকা মেহিকানা) যদিও এই নামটি সরকারী ভাবে স্বীকৃত নয়। ব্যুৎপত্তি thumb|left|কোডেক্স মেন্ডোজা থেকে মেক্সিকো-টেনোচটিটলান শহরের চিত্র স্পেনের অধীনতাপাশ থেকে মুক্তিলাভ করার পর নিউ স্পেন স্থির করে নতুন রাষ্ট্রের নামকরণ করা হবে রাজধানী মেক্সিকো সিটির নামে। ১৫২৪ সালে প্রাচীন আজটেক রাজধানী তেনোচতিৎলান (Mēxihco-Tenōchtitlan আ-ধ্ব-ব: /tenoːtʃˈtitɬan/, মেশি'কো-তেনোচ্‌তিৎলান্‌) উপর এই শহর স্থাপিত হয়। শহরের নামটি এসেছে নাউয়াত ভাষা থেকে। এই ভাষায় মেশ্ত্‌লি (Mextli) বা মেশি'ৎলি (Mēxihtli) আজটেকদের রক্ষাকর্তা ও যুদ্ধদেবতা উইৎসিলোপোচ্‌ৎলির (Huitzilopōchtli, আ-ধ্ব-ব /witsiloˈpoːtʃtɬi/) গোপন নাম। এক্ষেত্রে মেশি'কো (Mēxihco) শব্দের অর্থ "মেশ্ত্‌লি যেখানে বাস করেন"। অন্য এক মতে মেশি'কো শব্দটি এসেছে মেৎস্ত্‌লি (mētztli, চাঁদ) শিক্ত্‌লি (xictli নাভি, কেন্দ্র, বা পুত্র) এবং স্থানবাচক অনুসর্গ -কো (-co) যুক্ত হয়ে। এই ক্ষেত্রে নামের অর্থ "চাঁদের কেন্দ্রের স্থান" বা "চাঁদ হ্রদের কেন্দ্রের স্থান"। এই নামটি তেশকোকো হ্রদটিকে (Texcoco তেশ্‌কোকো) নির্দেশ করছে। যে পরস্পর সংযুক্ত হ্রদব্যবস্থার কেন্দ্রে তেশকোকো হ্রদটি অবস্থিত, সেটি কতকটা খরগোসের আকার বিশিষ্ট। ঠিক একই রকম একটি ছবি আজটেকরা চাঁদের গায়ে দেখতে পেত। তেনোচতিৎলান অবস্থিত ছিল সেই হ্রদের (বা চাঁদ/খরগোস) কেন্দ্রে বা নাভিস্থলে। আবার অন্য একটি মতে শব্দটি মাগেই (স্পেনীয় ও ইংরেজি: maguey) গাছের দেবী মেক্ত্‌লি-র (Mēctli) নাম থেকে উদ্ভূত হয়েছে। ইতিহাস রাজনীতি মেক্সিকোতে একটি ফেডারেল বা যুক্তরাষ্ট্রীয় প্রজাতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থা বিদ্যমান। রাষ্ট্রপতি একাধারে রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকার প্রধান। আইনসভা দ্বিকাক্ষিক। নিম্নকক্ষের নাম ফেডারেল চেম্বার অভ ডেপুটিজ, যার সদস্যসংখ্যা ৫০০। উচ্চকক্ষের নাম সেনেট, যার সদস্যসংখ্যা ১২৮। ভোটাধিকারের বয়স ১৮। বর্তমান সংবিধান ১৯১৭ সালের ৫ই ফেব্রুয়ারি প্রণয়ন করা হয়। সুপ্রিম কোর্ট দেশের সর্বোচ্চ বিচারালয়। মেক্সিকোর সরকারব্যবস্থা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতোই তিনটি শাখায় বিভক্ত – নির্বাহী, আইন প্রণয়নকারী এবং বিচার। কিন্তু মেক্সিকোতে নির্বাহী শাখাটি অপর দুইটি শাখার উপর অনেক বেশি আধিপত্য বিস্তার করে। ফলে মেক্সিকোর রাষ্ট্রপতি দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থা অনেকাংশেই নিয়ন্ত্রণ করেন। বিংশ শতাব্দীর অধিকাংশ সময় ধরে একটি মাত্র রাজনৈতিক দল ইন্সটিটিউশনাল রেভোলিউশনারি পার্টি ক্ষমতা দখল করে রেখেছিল। ২০০০ সালে এসে প্রথমবারের মত এর প্রার্থী রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে পরাজিত হয়। সেইবার ন্যাশনাল অ্যাকশন পার্টির বিসেন্তে ফক্স জয়লাভ করেন। প্রশাসনিক অঞ্চলসমূহ পাদটীকা গ্রন্থপঞ্জি বহিঃসংযোগ Mexico Travel Guide The Presidency of Mexico Official site of the Government of Mexico Chief of State and Cabinet Members Tourism Board official website Mexico from UCB Libraries GovPubs Mexico on OneWorld Country Guides বিষয়শ্রেণী:মেক্সিকো বিষয়শ্রেণী:জি১৫ রাষ্ট্র
মেক্সিকো
কোস্টা রিকা (স্পেনীয়: Costa Rica কোস্তা রিকা) দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের এক‌টি রাষ্ট্র। এর উত্তরে নিকারাগুয়া, দক্ষিণ-দক্ষিণপূর্বে পানামা, পশ্চিমে ও দক্ষিণে প্রশান্ত মহাসাগর, এবং পূর্ব দিকে ক্যারিবিয়ান সাগর। কোস্টা রিকা পৃথিবীর প্রথম দেশ যেটি তার সেনাবাহিনীর অবসান ঘটিয়েছে। ইতিহাস রাজনীতি কোস্টা রিকাতে একটি গণপ্রজাতন্ত্রী সরকার ব্যবস্থা বিদ্যমান। রাষ্ট্রপতি যুগপৎ রাষ্ট্র ও সরকারের প্রধান। দেশটিতে একটি এককাক্ষিক আইনসভা বিদ্যমান যার সদস্যসংখ্যা ৫৭। ভোটাধিকার ১৮ বছর বা তদুর্ধ্ব বয়সের নারী-পুরুষ সবার জন্য উন্মুক্ত। বর্তমান সংবধানটি ১৯৪৯ সালের ৯ই নভেম্বর গৃহীত হয়। সুপ্রিম কোর্ট দেশের সর্বোচ্চ বিচারালয়। প্রশাসনিক অঞ্চলসমূহ কোস্টা রিকা দেশটির নিজস্ব কোনও সেনাবাহিনী নেই । এটিই পৃথিবীর একমাত্র দেশ যার কোনও সেনাবাহিনী নেই এবং দেশটির সমস্ত নিরাপত্তা দ্বায়িত্ব দেশটির পুলিশ বাহিনীর হাতে নেস্ত । ভূগোল অর্থনীতি জনসংখ্যা সংস্কৃতি তথ্যসূত্র আরও দেখুন বহিঃসংযোগ বিষয়শ্রেণী:কোস্টা রিকা বিষয়শ্রেণী:মধ্য আমেরিকা
কোস্টা রিকা
এটি বিশ্বের উল্লেখযোগ্য অর্থনীতিবিদদের নামের তালিকা। এখানে শুধুমাত্র উইকিপিডিয়ায় নিবন্ধ রয়েছে এমন অর্থনীতিবিদদের নাম তাদের শেষ নাম অনুযায়ী বর্ণানুক্রমিকভাবে যোগ করা হয়েছে। অর্থনীতিবিদ অ-অ্যা-আ কেনেথ অ্যারো ল্যাজারাস অ্যারোনসন রবার্ট আউমান মোজাফফর আহমদ আকবর আলি খান অমর্ত্য সেন ই-ঈ মুহাম্মদ ইউনূস - বাংলাদেশের এক মাত্র নোবেল বিজয়ী। উ-ঊ এ-ঐ জর্জ একারলফ ফ্রিডরিখ এঙ্গেলস ও-ঔ বিয়াট্রিস ওয়েব ক-খ ড্যানিয়েল কানেমান আহমাদ তেজন কাব্বাহ জন মেনার্ড কেইনস পল ক্রুগম্যান কাজী খলিকুজ্জামান গ-ঘ জন কেনেথ গলব্রেইথ ক্লাইভ গ্রেঞ্জার চ-ছ জ-ঝ ট-ঠ জেমস টোবিন ড-ঢ পিটার আর্থার ডায়মন্ড আঙ্গুশ ডিয়াটোন ত-থ জ্যাঁ তিরোল দ-ধ ন জন ফর্ব্‌স ন্যাশ প-ফ পিয়েরে জোসেফ প্রুধোঁ ভিলফ্রেডো পারেটো ক্রিস্টোফার এ. পিসারাইডস রুফস পোলক এডমণ্ড এস ফেল্পস ফরাসউদ্দিন আহমেদ ব-ভ আবুল বারকাত জেমস ম্যাকগিল বিউকানান গ্যারি বেকার ম বার্নার্ড ম্যান্ডেভিল টমাস ম্যালথাস কার্ল মার্ক্‌স আলফ্রেড মার্শাল জন স্টুয়ার্ট মিল য র ডেভিড রিকার্ডো লিওনেল চার্লস রবিন্স রেহমান সোবহান ল আর্থার লিউইস শ-স ইয়োজেফ শুম্‌পেটার পল স্যামুয়েলসন হার্বার্ট সাইমন হার্নান্দো ডি সোতো রেহমান সোবহান জোসেফ স্টিগলিত্স অ্যাডাম স্মিথ হ ফ্রিড‌রিশ ফন হায়ক *
অর্থনীতিবিদদের তালিকা
উলাহ্‌-ইয়োহান ডাল (১২ অক্টোবর ১৯৩১ - ২৯ জুন ২০০২) ছিলেন একজন নরওয়েজীয় কম্পিউটার বিজ্ঞানী, যাকে ক্রিস্টেন নাইগার্ড-এর সাথে যৌথ ভাবে সিমুলা এবং অবজেক্ট ওরিয়েন্টেড প্রোগ্রামিং-এর জনক হিসাবে বিবেচনা করা হয়। জীবনী ডাল ১৯৩১ সালে নরওয়ের মানডাল শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তাকে নরওয়ের অন্যতম সেরা কম্পিউটার বিজ্ঞানী হিসাবে বিবেচনা করা হয়। তিনি ক্রিস্টেন নাইগার্ড-এর সাথে যৌথ ভাবে ২০০১ সালে টুরিং পুরস্কার এবং ২০০২ সালে আইইইই জন ভন ন্যুম্যান পদক লাভ করেন। and was named Commander of the Royal Norwegian Order of St. Olav in 2000. প্রাথমিক গবেষণা-পত্রাবলী Multiple index countings on the Ferranti Mercury computer / by O.-J. Dahl. Oslo: Norwegian Defence Research Establishment, 1957. Programmer's handbook for the Ferranti Mercury Computer, Frederic at the Norwegian Defense Research Establishment / By O.-J. Dahl, and Jan V. Garwick. – 2nd ed., Kjeller: Norwegian Defence Research Establishment, 1958. Automatisk kodning: et prosjekt ved Forsvarets forskningsinstitutt. Simscript implementation / by Vic Bell and Ole-Johan Dahl. Oslo: Norwegian Computing Center, 1963. Basic concepts of SIMULA: an ALGOL based simulation language / by Ole-Johan Dahl and Kristen Nygaard. Oslo: Norsk Regnesentral, [1965?]. SIMULA: a language for programming and description of discrete event systems : introduction and user's manual. Oslo: Norsk Regnesentral, 1965. Discrete event simulation languages: lectures delivered at the NATO summer school, Villard-de-Lans, September 1966 / by Ole-Johan Dahl. Oslo: Norsk Regnesentral/Norwegian Computing Center, 1966. SIMULA: an ALGOL based simulation language / by Ole-Johan Dahl and Kristen Nygaard. Oslo: Norsk Regnesentral, 1966. Simula: an ALGOL-based simulation language / Ole-Johan Dahl and Kristen Nygaard. New York: Association for Computing Machinery, 1966. I: Communications of the ACM; 9(1966). Class and subclass declarations / Ole-Johan Dahl and Kristen Nygaard. Amsterdam: North-Holland, c1968. I: Simulation programming languages: proceedings of the IFIP working conference on simulation programming languages, Oslo, May 1967 / O.-J. Dahl, conference chairman; organized by IFIP Technical Committee 2, programming languages; edited by J.N. Buxton. Discrete event simulation languages / Ole-Johan Dahl. London: Academic Press, 1968. (Programming languages : NATO Advanced Study Institute / edited by G. Genuys.) SIMULA 67: common base language / by Ole-Johan Dahl, Bjørn Myhrhaug and Kristen Nygaard. Oslo: Norsk Regnesentral, 1968. (Publication S / Norwegian Computing Center; 2) Rev. 1970: Common base language (Publ.; 22). তথ্যসূত্র অন্যান্য উৎস From Object-Orientation to Formal Methods: Essays in Memory of Ole-Johan Dahl, Olaf Owe, Stein Krogdahl and Tom Lyche (eds.), Springer, Lecture Notes in Computer Science, Volume 2635, 2004. . . Pioneer who Prepared the Ground for Road to Java, Jonathan Bowen. The Times Higher Education Supplement, 1677:34, 4 February 2005. বহিঃসংযোগ ব্যক্তিগত তথ্য। তথ্যসূত্র। বিষয়শ্রেণী:নরওয়েজীয় কম্পিউটার বিজ্ঞানী বিষয়শ্রেণী:১৯৩১-এ জন্ম বিষয়শ্রেণী:২০০২-এ মৃত্যু বিষয়শ্রেণী:টুরিং পুরস্কার বিজয়ী
উলাহ্‌-ইয়োহান ডাল
এলেয়া'র পার্মেনিদিস (গ্রিক ভাষায়: Παρμενίδης ὁ Ἐλεάτης) প্রাচীন বৃহত্তর গ্রিসের অন্তর্ভুক্ত দক্ষিণ ইতালির এলেয়া নগররাষ্ট্রে জন্মগ্রহণকারী একজন সক্রেটিসপূর্ব দার্শনিক ও কবি যাকে এলেয়াবাদের (Eleaticism) জনক হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। একটি জটিল অধিবিদ্যক কবিতা রচনা করে তিনি প্রাচীন গ্রিসের সবচেয়ে প্রভাবশালী ও সবচেয়ে দুর্বোধ্য দার্শনিকদের একজন হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। এই কবিতাটি ছাড়া তার আর কোনো লেখা আমাদের হাতে এসে পৌঁছায়নি, এবং আসলে এই কবিতারও পুরোটা আমাদের হাতে নেই, কিছু খণ্ডাংশ আছে কেবল। তার দার্শনিক চিন্তাধারাকে দুই শব্দে প্রকাশ করতে হলে বলতে হয় সেটা ছিল এক ধরনের অধিবিদ্যক একত্ববাদ (metaphysical monism) — যা বলে বিশ্বে কেবল একটিই বা এক ধরনেরই জিনিস আছে। তিনি তার আগের দার্শনিকদের আনাড়ি বিশ্বতাত্ত্বিক মডেলগুলোর এত কড়া সমালোচনা করেছিলেন যে তার পরবর্তীকালের সব গ্রিক বিশ্বতাত্ত্বিক মডেলগুলোকে তার যুক্তির বিরুদ্ধে দেয়া জবাব হিসেবে ধরে নেয়া যায়। তাকে অনেক সময় ক্সেনোফানিসের শিষ্য হিসেবে আখ্যায়িত করা হয় এবং তিনি নিঃসন্দেহে হেরাক্লেইতোসের পর লেখা শুরু করেছিলেন, কারণ তার চিন্তাধারাকে খুব স্পষ্টভাবেই হেরাক্লেইতোসের চিন্তাধারার প্রতিবাদ হিসেবে বিবেচনা করা যায়; পার্মেনিদিস যদি একত্ববাদের পুরোধা হয়ে থাকেন তবে হেরাক্লেইতোস ছিলেন বহুত্ববাদের পুরোধা। জীবন ও কর্ম পার্মেনিদিসের জন্মের বছর অনুমান করার একমাত্র উপায় প্লেটোর সংলাপ পার্মেনিদিস পাঠ। এই সংলাপে দেখানো হয় যে, ৬৫ বছর বয়স্ক পার্মেনিদিস তার শিষ্য জিনোকে সাথে নিয়ে পানাথানাইয়া ক্রীড়া-উৎসব দেখতে এথেন্সে এসেছেন এবং আসার পর তাদের সাথে "কম বয়স্ক" সক্রেটিসের দেখা হয়েছে। "কম বয়স্ক" বলতে প্লেটো সম্ভবত ২০ বছর বুঝিয়েছিলেন, এবং ৩৯৯ খ্রিস্টপূর্বাব্দে মৃত্যুর সময় সক্রেটিসের বয়স যেহেতু আনুমানিক ৭০ বছর ছিল সেহেতু ধরে নেয়া যায় যে, পার্মেনিদিস আনুমানিক ৫১৫ খ্রিস্টপূর্বাব্দে জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং খ্রিস্টপূর্ব ৫ম শতাব্দীর শুরু থেকে মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত দর্শনজগতে সক্রিয় ছিলেন। পার্মেনিদিস যে তার জন্মনগরী এলেয়াতে খুব বিখ্যাত ছিলেন তার প্রমাণ পাওয়া যায় প্লেটোর পরে আকাদেমি-র প্রধান হওয়া স্পেউসিপ্পোস-এর একটি লেখা থেকে। পরবর্তী লেখকদের সূত্রে জানা গেছে স্পেউসিপ্পোস তার On Philosophers বইয়ে লিখেছিলেন যে পার্মেনিদিস এলেয়া শহরের নাগরিকদের জন্য আইন রচনা করেছিলেন, যদিও পার্মেনিদিসের জন্ম হয়েছিল এলেয়া নগরী পত্তনের প্রায় ত্রিশ বছর পর। প্রাচীন ইতিহাসবিদরা সঙ্গত কারণেই পার্মেনিদিসকে তার এক প্রজন্ম আগের দার্শনিক ক্সেনোফানিস ও পিথাগোরাসবাদীদের সাথে যুক্ত করেন; ক্সেনোফানিসের সাথে তার খুব সম্ভবত দেখাও হয়েছিল। ১৯৬০-এর দশকে প্রাচীন এলেয়া নগরীর ধ্বংসাবশেষের নিকটে পার্মেনিদিসের খ্রিস্টীয় ১ম শতকের একটি আবক্ষমূর্তি পাওয়া গিয়েছিল যাতে খোদিত আছে, "পার্মেনিদিস, পিরেস এর পুত্র, ঔলিয়াদিস, প্রাকৃতিক-দর্শন-বিদ"; বুঝাই যাচ্ছে যে এখানে তাকে দেবতা অ্যাপোলো'র ভিষক (গ্রিক ভাষায় ঔলিওস মানে ভিষক) রূপের সাথে যুক্ত করা হয়েছে। প্রাচীন গ্রিক জীবনীকার দিয়োগেনিস লায়ের্তিওস এর বই থেকে জানা যায় পার্মেনিদিস জীবনে কেবল একটি বইই লিখেছিলেন — হোমারীয় ষড়মাত্রিক ছন্দে লেখা একটি অধিবিদ্যক ও বিশ্বতাত্ত্বিক কাব্যগ্রন্থ। বইটি পরবর্তীতে পেরি ফিসেওস (Περί φύσεως — On Nature) নামে পরিচিত হলেও পার্মেনিদিসের দেয়া নাম সম্ভবত এটা ছিল না। কবিতাটিতে সম্ভবত ৮০০ পঙক্তি ছিল যার মধ্যে বর্তমানে মাত্র ১৬০টি পংক্তি সংরক্ষিত আছে, যেগুলো ছড়িয়ে আছে বেশ কয়েকটি টুকরোতে। একেক টুকরোতে সংরক্ষিত পংক্তির সংখ্যা একেক রকম — একটিতে যেখানে মাত্র একটি শব্দ পাওয়া যায় সেখানে ৮ নং টুকরোটিতে পাওয়া যায় ৬২টি অবিচ্ছিন্ন পংক্তি। এই পংক্তিগুলো সংরক্ষিত থাকার একমাত্র কারণ প্লেটো থেকে শুরু করে পরবর্তী অনেক লেখক তাদের লেখায় কবিতাটির বিভিন্ন অংশ সরাসরি উদ্ধৃত করেছেন। যেমন ১ম টুকরোর ৩২টি পংক্তির মধ্যে ৩০টি-ই পাওয়া গেছে সেক্সতুস এম্পিরিকুসের লেখা থেকে। আলেকজান্দ্রিয়ার নব্য-প্লেটোবাদী দার্শনিক সিমপ্লিকিউসের হাতে সম্ভবত পার্মেনিদিসের বইটির একটি অখণ্ড সংস্করণ ছিল এবং এরিস্টটলের বইয়ের ভাষ্য লিখতে গিয়ে তিনি তা থেকে অনেক কিছু উদ্ধৃত করেছেন। সিমপ্লিকিউসের ভাষ্যের এসব উদ্ধৃতির কারণেই "প্রকৃত বাস্তবতা" সম্পর্কে পার্মেনিদিসের অধিবিদ্যক যুক্তিগুলো আমরা প্রায় পুরোপুরি জানি। "কিসের অস্তিত্ব আছে" সে সম্পর্কে পার্মেনিদিসের ধারণাগুলো অনেকটা জানলেও কবিতাটির শেষের দিকে তিনি যে বিশ্বতত্ত্ব তুলে ধরেছেন তা তার কবিতার বিদ্যমান অংশ থেকে অতটা বুঝা যায় না; এর জন্য কবিতাটির পাশাপাশি নির্ভর করতে হয় পরবর্তী লেখকদের সাক্ষ্যের উপর। পার্মেনিদিসের কবিতা পেরি ফিসেওস এর উপক্রমণিকাতে পার্মেনিদিস তার একটি রূপক ভ্রমণের বৃত্তান্ত শোনান। বর্ণনা করেন কিভাবে সূর্যদেবতার কুমারী কন্যারা তার রথকে পথ দেখিয়ে দেবালয়ে নিয়ে যায়। কুমারীরা যে "রাত্রির ঘর" থেকে এসেছে সেদিকেই তাকে নিয়ে যাচ্ছে এবং ঘরটিতে প্রবেশের পথে আছে "দিবা এবং রাত্রির পথে যাওয়ার দরজা।" কুমারীরা দরজাটির পাহারাদার ন্যায়বিচারকে পার্মেনিদিসকে ভিতরে প্রবেশ করতে দিতে রাজি করায়। প্রবেশের পর দেবালয়ের দেবী পার্মেনিদিসকে কিভাবে স্বাগত জানায় তা তিনি বর্ণনা করেছেন এভাবে, "দেবী আমায় সদয়ভাবে গ্রহণ করেন, এবং তার হাতে নেন আমার ডান হাত, এবং আমাকে সম্বোধন করে বলেন: 'হে তরুণ, যে এসেছ অমর সারথিদের সাথে এবং আমাদের দেবালয়ে তোমায় বয়ে আনা ঘোটকীদের সাথে, স্বাগতম, কারণ সে নিশ্চয়ই কোনো মন্দভাগ্য নয় যে তোমায় এনেছে এই দিকে (কারণ নিঃসন্দেহে এটা মানুষের পথ থেকে বহুদূরে), বরং সে হলো সদাচার ও ন্যায়বিচার।'" (টুকরো ১.২২–২৮) তথ্যসূত্র বিষয়শ্রেণী:গ্রিক দার্শনিক বিষয়শ্রেণী:খ্রিস্টপূর্ব ৫১০-এ জন্ম বিষয়শ্রেণী:খ্রিস্টপূর্ব ৪৫০-এ মৃত্যু
পার্মেনিদিস
thumb|ভ্যাটিকান জাদুঘরে স্থাপিত আসপাসিয়ার মার্বেল পাথরের মূর্তি। এটি ১৯৭৭ সালে আবিষ্কৃত হয়। এটি রোমে নির্মিত হয়েছিলো আসপাসিয়া (প্রাচীন গ্রিক: আস্পাসিয়া আনুমানিক খ্রিস্ট পূর্ব ৪৭০– খ্রিস্টপূর্ব ৪০০,) প্রাচীন গ্রিসের একজন খ্যাতনামা মহিলা, যিনি অ্যাথেন্সের রাজনীতিবিদ পেরিক্লিস এর সাথে সম্পর্কের জন্য খ্যাতি অর্জন করেন। তার জন্ম এশিয়া মাইনরের মিলেতুস শহরে, কিন্তু তিনি পরে অ্যাথেন্সে চলে আসেন, ও আমৃত্যু সেখানেই কাটান। পেরিক্লিসের মরণের পর তিনি লাইসিক্লেস এর সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলেন। পেরিক্লিস ও তার একটি পুত্র সন্তান হয়েছিল, যিনি ছোট পেরিক্লিস নামে খ্যাত ছিলেন যিনি সেনাপতি পদে অধিষ্ঠিত হন, এবং আরগুনুসির যুদ্ধের পর তাকে হত্যা করা হয়। তথ্যসূত্র বিষয়শ্রেণী:গ্রিসের ইতিহাস
আসপাসিয়া
thumb|250px|১৯৮৪ সালে খেয়াযান চ্যালেঞ্জারের নভোচারীর মহাশূন্যে পদচারনা। নভোচারী বা মহাশূণ্যচারী (মহাকাশচারী) () সেই ব্যক্তিকে বলা হয় যিনি মহাশূন্যে ভ্রমণ করেন। একজন নভোচারীকে নভোযানের বিমানচালক বা একটি কর্মী সদস্য হিসাবে পরিবেশন করতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। শব্দতত্ত্ব বাংলায় নভোচারী শব্দটি নভো এবং চারী দিয়ে সূত্র। এছাড়া বাংলায় আরো শব্দ রয়েছে নভোচারীদের জন্য। যেমন যদি মহাকাশ বলা হয় তাহলে "মহাকাশচারী" বা যদি মহাশূন্য বলা হয় তাহলে "মহাশূণ্যচারী"। রুশ একজন সোভিয়েত বা রুশ নভোচারীকে "কস্মনাউত (কসমোনট)" () বলা হয়। আক্ষরিক অর্থে космо হচ্ছে মহাবিশ্ব, আর навт হচ্ছে নাবিক। বিশ্বের প্রথম কস্মনাউত ছিলেন ইউরি গ্যাগারিন ও প্রথম মহিলা কস্মনাউত ছিলেন ভ্যালেন্তিনা তেরেসকোভা। ইংরেজি একজন মার্কিন নভোচারী বা যেকোনো ইংরেজিভাষী দেশের নভোচারীকে "আস্ট্রোনট (অ্যাস্ট্রোনট)" () বলা হয়। আক্ষরিক অর্থে astro হচ্ছে তারা, আর naut হচ্ছে নাবিক প্রশিক্ষণ ও উদ্দেশ্য খাদ্য ও পানীয় স্বাস্থ্য ঝুঁকি বিষয়শ্রেণী:নভোচারী বিষয়শ্রেণী:মহাকাশ
নভোচারী
ভি এস রামচন্দ্রন সেন্টার ফর ব্রেইন অ্যান্ড কগনিশন-এর পরিচালক। এছাড়াও তিনি ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, সান ডিয়েগো বিশ্ববিদ্যালয়ে মনোবিজ্ঞান ও স্নায়ুবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক। রামচন্দ্রনের রচনাবলী :en:A Brief Tour of Human Consciousness : From Impostor Poodles to Purple Numbers :en:Phantoms in the Brain : Probing the Mysteries of the Human Mind, coauthor Sandra Blakeslee, 1998, The :en:Encyclopedia of Human Behaviour (editor-in-chief) :en:The Emerging Mind, 2003, বহিঃসংযোগ Vilayanur S. Ramachandran (official webpage) All in the Mind interview Interview with Australian Financial Review 10 June 2005 Reith Lectures 2003 The Emerging Mind by Ramachandran বিষয়শ্রেণী:মার্কিন স্নায়ুবিজ্ঞানী বিষয়শ্রেণী:১৯৫১-এ জন্ম বিষয়শ্রেণী:মার্কিন অজ্ঞেয়বাদী
ভি এস রামচন্দ্রন
thumb|right|ভিলফ্রেদো পারেতো ভিলফ্রেদো পারেতো (ইতালীয় Vilfredo Pareto, পূর্ণ নাম Vilfredo Federico Damaso Pareto ভ়িল্‌ফ্রেদো ফ়েদেরিকো দামাসো পারেতো) ইতালীয় শিল্পপতি, প্রকৌশলী, অর্থনীতিবিদ, দার্শনিক। অর্থশাস্ত্রে তিনি প্যারেতো ভারসাম্য ধারনার জন্য প্রসিদ্ধ। তাকে লসান অর্থশাস্ত্রীয় ঘরানার অর্থনীতিবিদ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ওয়ালরাসের দৃষ্টিভঙ্গী তাকে অনুপ্রাণিত করেছিল। গণিত ও সমাজতত্ত্বেও তার উল্লেখ্যযোগ্য অবদান রয়েছে। উপযোগ তত্ত্ব তিনি বলেছিলেন যে পণ্যের মূল্যায়ন সম্ভব নয়। পণ্যের উপযোগিতা কী এ প্রসঙ্গে তার বক্তব্য যে মানুষ আম ও কলার মধ্যে কোনটিকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করে এর চেয়ে প্রাসঙ্গিক হলো একজন ব্যক্তি কয়টি আমের তুলনায় কয়টি কলা খেতে আগ্রহী এই তথ্য। এই বক্তব্য আধুনিক মাইক্রোইকনমিক্স-এর (ব্যষ্টিক অর্থশাস্ত্রের) ভিত্তিমূল। পারেতো ভারসাম্য তত্ত্ব কল্যাণ অর্থনীতি ও গেইম থিওরি তে পারেতো ভারসাম্য তত্ত্ব সর্বদাই প্রয়োগ করা হয়। পারেতো ভারসাম্য এমন একটি সৌষাম্য যে অবস্থায় একজন মানুষের ক্ষতি না করে আরেকজনের উপকার করা সম্ভব নয়। ভিলফ্রেদো পারেতো বলেন যে যতক্ষণ না এরকম সৌষাম্য অর্জিত হবে ততক্ষণ পর্যন্ত পুনর্বণ্টন করে যেতে হবে। প্যারেতিয়ান লিব্যারেল “প্যারেতিয়ান লিব্যারেল” কথাটি অর্থনীতিবিদ ও দার্শনিক অমর্ত্য সেন এর উদ্ভাবন। তিনি বলেন যে, একজন ব্যক্তি একই সঙ্গে প্যারেতিয়ান ভারসাম্য তত্ত্বে বিশ্বাসী এবং উদারনৈতিক হতে পারে না। এটি অসম্ভব। তথ্যসূত্র বিষয়শ্রেণী:অর্থনীতিবিদ বিষয়শ্রেণী:ইতালীয় অর্থনীতিবিদ বিষয়শ্রেণী:কল্যাণ অর্থনীতি বিষয়শ্রেণী:ইতালীয় দার্শনিক বিষয়শ্রেণী:বিপ্লব তাত্ত্বিক
ভিলফ্রেদো পারেতো
১৮৩১ সালে বিখ্যাত ইংরেজ বিজ্ঞানী মাইকেল ফ্যারাডে তড়িচ্চুম্বকীয় আবেশ বিষয়ে মৌলিক সূত্র আবিষ্কার করেন। তার নামানুসারে এই সূত্রকে ফ্যারাডের আবেশ সূত্র () বা ফ্যারাডের তড়িচ্চুম্বকীয় আবেশের সূত্র বলা হয়। চারটি স্বীকার্যের মাধ্যমে ফ্যারাডের এই সূত্রকে বর্ণনা করা যায়: যখনই কোন বদ্ধ তার কুণ্ডলীতে আবদ্ধ চৌম্বক বলরেখার সংখ্যা বা চৌম্বক ফ্লাক্সের পরিবর্তন ঘটে তখনই উক্ত কুণ্ডলীতে একটি তড়িচ্চালক শক্তি আবিষ্ট হয়। তার কুণ্ডলীতে আবিষ্ট এই তড়িচ্চালক শক্তির মান সময়ের সাথে কুণ্ডলীর মধ্য দিয়ে অতিক্রান্ত চৌম্বক বলরেখার সংখ্যা বা চৌম্বক ফ্লাক্সের পরিবর্তনের হারের সমানুপাতিক। তার কুণ্ডলীতে আবদ্ধ চৌম্বক ফ্লাক্সের বাড়তি বিপরীত তড়িচ্চালক শক্তি এবং এর ঘাটতি সমমুখী তড়িচ্চালক শক্তি উৎপন্ন হয়। তার কুণ্ডলীতে আবিষ্ট তড়িচ্চালক বলের মান গৌণ কুণ্ডলীর পাক সংখ্যার সমানুপাতিক। তথ্যসূত্র বিষয়শ্রেণী:পদার্থবিজ্ঞানের মৌলিক ধারণা বিষয়শ্রেণী:তড়িচ্চুম্বকত্ব de:Elektromagnetische Induktion#Induktionsgesetz in Integralform
ফ্যারাডের আবেশ সূত্র
নিউক্লিয় প্রযুক্তি পারিভাষিক শব্দ অণু- w:en:Molecule অণুবীক্ষণ- w:en:Microscope অতিবেগুনি রশ্মি- w:en:Ultraviolet ray অতিপারমাণবিক কণিকা- w:en:Subatomic particle অতিশক্তিশালী বিকিরণ- w:en:Energetic radiation অনির্দিষ্ট গতি- w:en:Random motion অনিশ্চয়তাবাদ- w:en:Uncertainty principle অন্তরক- w:en:Insulator অর্ধজীবনকাল- w:en:Half-life অস্থায়ী পরমাণুকেন্দ্র- w:en:Unstable nucleus এনোড, ধনমেরু- w:en:Anode এম্বার- w:en:Amber এস্‌ফল্ট- w:en:Asphalt এসটাটিন- w:en:Astatine আইসোটোপ, সমস্থানিক- w:en:Isotope আইসোবার, সমপ্রেষ- w:en:Isobar আধান- w:en:Charge আধান যোগ- w:en:Charge আধান ত্যাগ- w:en:Discharge আপেক্ষিক তত্ত্ব- w:en:Theory of relativity আমেরিসিয়াম- w:en:Americium আল্‌ফা কণিকা- w:en:Alpha particle আল্‌ফা রশ্মি- w:en:Alpha ray আলোক কণিকা- w:en:Photon আলোক-তড়িত্ ক্রিয়া- w:en:Photoelectric effect আলোক-সংশ্লেষণ- w:en:Photosynthesis আয়ন- w:en:Ion আয়নিত- w:en:Ionized আয়নসৃষ্টিকারী বিকিরণ- w:en:Ionizing radiation আয়োডিন- w:en:Iodine
পরমাণু প্রযুক্তি
লুডভিগ এডুয়ার্ড বোলৎসমান () (২০শে ফেব্রুয়ারি, ১৮৪৪ - ৫ই সেপ্টেম্বর, ১৯০৬) প্রখ্যাত অষ্ট্রীয় পদার্থবিজ্ঞানী, দার্শনিক ও গণিতজ্ঞ। তিনিই প্রথম বলেছিলেন, পরমাণুকে না দেখলেও কিছু পরিসাংখ্যিক সমীকরণের মাধ্যমে তাদের গতিবিধি বর্ণনা করা সম্ভব। এভাবেই তিনি পরিসাংখ্যিক গতিবিদ্যার জন্ম দেন। তখনকার প্রতিষ্ঠিত নিয়মের বাইরে গিয়ে তিনি আরও বলেছিলেন, তাপগতিবিদ্যায় সম্ভাব্যতার ধারণা সংযোজন করা উচিত। এভাবে তার হাত ধরে পরিসাংখ্যিক তাপগতিবিদ্যারও জন্ম হয়েছিল। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন প্রকৃতির বিশৃঙ্খলাকে এনট্রপি নামক একটি গাণিতিক রাশির মাধ্যমে পরিমাপ করা সম্ভব। সে সময় প্রচলিত ধ্রুব প্রাকৃতিক নিয়মের বিরুদ্ধে গিয়ে প্রকৃতির বাস্তব বিশৃঙ্খলা এবং সম্ভাব্যতার প্রভাব আবিষ্কার করেছিলেন বলেই তাকে বলা হয় দ্য জিনিয়াস অফ ডিসঅর্ডার। পেশাগত জীবনে আর্নস্ট মাখ-এর মত বিজ্ঞানীদের সক্রিয় বিরোধিতায় তিনি হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। মাখ এবং তার সমর্থকরা পরমাণু পর্যবেক্ষণ করা যায় না বলে তা বিশ্বাস করতেন না, বরং সবকিছু শক্তি দিয়ে ব্যাখ্যার চেষ্টা করতেন। আজীবন মাখ এবং অস্টভাল্ডদের শক্তিবাদ (এনার্জেটিক্স) নামের এই তত্ত্বের বিরোধিতা করেছেন বোলৎসমান। অন্যদিকে ব্যক্তিগত জীবনে তার মা এবং ১১ বছরের ছেলের মৃত্যুতে তিনি ভেঙে পড়েন। মনস্তত্ত্ববিদদের মতে, এই জিনিয়াস অফ ডিসঅর্ডার যে রোগে ভুগছিলেন তার নাম বাইপোলার ডিসঅর্ডার। জার্মানির লাইপৎসিগে একবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। সবশেষে ১৯০৬ সালে ইতালির ত্রিয়েস্তের নিকটে একটি স্থানে আত্মহত্যার মাধ্যমেই এই মহান বিজ্ঞানীর জীবনাবসান ঘটে। বলা হয় আর ২০ বছর বেঁচে থাকলে তিনি দেখে যেতে পারতেন যে, তার পরমাণু এবং সম্ভাব্যতার প্রতি নিরংকুশ সমর্থনই জয়লাভ করেছে, শক্তিবাদ ছদ্ম-বিজ্ঞান হিসেবে পরিত্যক্ত হয়েছে। বোলৎসমানের গবেষণা আধুনিক কোয়ান্টাম পদার্থবিজ্ঞান এবং কোয়ান্টাম বিশ্বতত্ত্বের জন্যও খুব প্রয়োজনীয়। বোলৎসমান মনে করতেন সমগ্র মহাবিশ্ব (বহুবিশ্ব) তাপীয় সাম্যাবস্থায় আছে। তিনি এও বুঝতে পেরেছিলেন, তাপগতিবিদ্যার দ্বিতীয় সূত্র পরম নয়, বরং পরিসাংখ্যিক। সুতরাং সেই সমগ্র মহাবিশ্বের মধ্যে অপরিহার্যভাবেই পরিসাংখ্যিক ব্যত্যয় (ফ্লাকচুয়েশন) শুরু হবে এবং তার স্থানে স্থানে সাম্যাবস্থা থেকে বিচ্যুতি দেখা দেবে। এই স্থানীয় বিচ্যুতিগুলোই জন্ম দেবে আমাদের মত অসংখ্য মহাবিশ্বের। বর্তমানে অবশ্য এ ধরনের চিন্তাধারাকে আক্ষরিক অর্থে গ্রহণ করা হয় না। কারণ পরিসাংখ্যিক ব্যত্যয় বিরল এবং একটি মহাবিশ্ব সৃষ্টির মত ব্যত্যয় আরও বিরল। তবে জ্ঞানের এই ধারার অগ্রদূত হিসেবে লুক্রেতিউসের পরই বোলৎসমানের নাম চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। জীবনী প্রাথমিক জীবন শৈশব লুডভিগ এডুয়ার্ড বোলৎসমানের পিতামহ গটফ্রিড লুডভিগ বোলৎসমান ১৭৭০ সালে জার্মানির রাজধানী বার্লিন থেকে অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় এসে বাদ্যযন্ত্র নির্মাণের ব্যবসা শুরু করেন। এখানেই বিয়ে করেন, ছেলের নাম রাখেন লুডভিগ গেয়র্গ বোলৎসমান। গেয়র্গ বড় হয়ে অস্ট্রীয় সরকারের রাজস্ব বিভাগে যোগ দেন, ১৮৩৭ সালে বিয়ে করেন সালৎসবুর্গের এক বণিকের কন্যা কাথেরিনা মারিয়া পাউয়েনফাইন্ডকে। উল্লেখ্য গেয়র্গ প্রোটেস্ট্যান্ট হলেও মারিয়া ছিলেন ক্যাথলিক মতের অনুসারী। গেয়র্গের আর্থিক অবস্থা খুব ভাল না হলেও মারিয়ার বাবা ছিলেন খুবই ধনাঢ্য। তাদের পরিবারের নামানুসারে সালৎসবুর্গ শহরে এখনও Pauernfeindgasse এবং Pauernfeindstrasse নামে দুটি স্থান আছে। গেয়র্গ ও মারিয়ার বড় সন্তান লুডভিগ বোলৎসমানের জন্ম হয় ১৮৪৪ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে, অর্থাৎ শ্রোভ মঙ্গলবার এবং অ্যাশ বুধবারের ঠিক মাঝামাঝি সময়ে। পরবর্তী জীবনে তিনি বলতেন, এমন একটা সময়ে জন্ম নেয়ার কারণেই তার আবেগ মূহুর্মূহু পরিবর্তিত হয়, তীব্র আনন্দের মধ্যে থেকেই আবার হঠাৎ তীব্র হতাশায় নিমজ্জিত হন। উল্লেখ্য অ্যাশ বুধবার খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের একটি বিশেষ দিন যা ইস্টারের ৪৬ দিন পর পালিত হয়, এই দিন থেকেই কঠোরভাবে ধর্মপালন শুরু হয় যা পরবর্তী ইস্টারের পূর্ব পর্যন্ত চলে। আর অ্যাশ বুধবারের আগের দিনটিই হচ্ছে শ্রোভ মঙ্গলবার। বোলৎসমানের জন্মস্থান ভিয়েনার তৃতীয় জেলা (গেমাইন্ডেবেৎসির্কে), লান্ডস্ট্রাসেতে। ১৮৪৬ সালে তার ছোট ভাই আলবার্ট এবং দুই বছর পর ছোট বোন হেডভিগের জন্ম হয়। তিন ভাইবোনেরই ব্যাপ্টিজম হয় ক্যাথলিক ধর্মমত অনুসারে এবং তারা ক্যাথলিক হিসেবেই বেড়ে উঠতে থাকে। আলবার্ট মাধ্যমিক স্কুলে থাকার সময় নিউমোনিয়ায় মারা যায়। শিক্ষাজীবন বোলৎজমানের প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন হয় বাড়িতে গৃহশিক্ষকের মাধ্যমে। তারা বাবাকে প্রথমে ভেল্স এবং পরে লিনৎস শহরে চলে আসতে হয়। লিনৎসেই বোলৎসমান স্থানীয় জিমনেসিয়ামে পড়াশোনা শুরু করেন। স্কুলে সব সময়ই খুব ভাল করতেন, বিজ্ঞান এবং গণিতের প্রতি তখন থেকেই তার খুব আগ্রহ ছিল। শেষ জীবনে তার চোখের অবস্থা খুব খারাপ হয়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেছিলেন, ছোটবেলায় সন্ধ্যার পর মোমবাতি জ্বালিয়ে দীর্ঘক্ষণ পড়াশোনা করা। লিনৎসে তিনি আন্টোন ব্রুকনারের কাছে পিয়ানো বাজাতে শিখেন। অবশ্য শিক্ষক নিয়ে মায়ের অসন্তুষ্টির কারণে এক সময় তাকে পিয়ানো শেখা ছেড়ে দিতে হয়। কিন্তু নিজে নিজে পিয়ানো বাজানো কখনও ত্যাগ করেননি। বয়স কালে ছেলের সাথে বাজাতেন, ছেলে আর্থুর লুডভিগ বাজাতো বেহালা আর তার সাথে তাল মিলিয়ে তিনি বাজাতেন পিয়ানো। ১৫ বছর বয়সে বোলৎসমানের বাবা যক্ষ্ণায় মারা যান। ছোট ভাইয়ের মৃত্যুও হয় এর কিছুকাল পর। এই দুটি মৃত্যু তার জীবনে বড় ছাপ ফেলেছিল। ভিয়েনায় অধ্যয়ন ১৯ বছর বয়সে তিনি উনিফেরসিটেট ভিয়েন-এ (ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয়) পদার্থবিজ্ঞান ও গণিত বিষয়ে ভর্তি হন। সেখানকার পদার্থবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট মাত্র ১৪ বছর পূর্বে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ডপলার ক্রিয়ার আবিষ্কারক বিখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী ক্রিস্টিয়ান ডপলার (১৮০৩-৫৪)। উনিফেরসিটেট ভিয়েন অস্ট্রিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একটি। এটি সে সময় যথেষ্ট স্বায়ত্তশাসন ভোগ করত। বোলৎসমান যখন এখানে আসেন তখন আনড্রিয়াস ফন এটিংসহাউজেন সবেমাত্র পরিচালকের পদ ত্যাগ করেছেন, নতুন পরিচালক নির্বাচিত হয়েছেন ইয়োসেফ স্টেফান (১৮৩৫-৯৩)। বেশ কম বয়সেই স্টেফান পরিচালক হয়েছিলেন এবং পরে বিকিরিত তাপ ও তাপমাত্রার মধ্যে সম্পর্ক আবিষ্কারের জন্য অনেক খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। স্টেফান তার শিক্ষার্থীদের সাথে খুব ঘনিষ্ঠভাবে কথাবার্তা বলতেন, এই গুণটি বোলৎসমান খুব পছন্দ করেন। স্টেফানের মৃত্যুর পর এক শোকবাণীতে তিনি লিখেছিলেন, ভিয়েনার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার ৩ বছর পর বোলৎসমান পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। এর মধ্যেই তার দুটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়। মজার ব্যাপার হচ্ছে তার পিএইচডি গবেষণার কোন অভিসন্দর্ভ ছিল না। কারণ ১৮৭২ সালের পূর্বে ভিয়েনায় পিএইচডি (দর্শন) ডিগ্রির জন্য কোন অভিসন্দর্ভ জমা দিতে হতো না। ১৮৬৭ সালে বোলৎসমান ভিয়েনায় সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পান। তখন ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটটি ছিল খুব ছোট, এর্ডবের্গারস্ট্রাসে-তে তাদের একটিমাত্র ছোট গবেষণাগার ছিল। কিন্তু ইনস্টিটিউটের সদস্য সবাই ছিলেন তুখোড়। এই সদস্যদের প্রশংসায় বোলৎসমান লিখেছিলেন, উত্তরণের দিনগুলো গ্রাৎসের বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৮৬৮ সালে বোলৎসমান শিক্ষকতায় কৃতিত্বের জন্য ফেনিয়া লেগেন্ডি পুরস্কার লাভ করেন এবং ১৯৬৯ সালে মাত্র ২৫ বছর বয়সে গ্রাৎস বিশ্ববিদ্যালয়ে গাণিতিক পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান মনোনীত হন। সে সময় গ্রাৎস ইউরোপের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একটি হতে চলেছিল। বোলৎসমান এখানে আসার কিছুদিন পূর্বে স্থির-তড়িৎ গবেষণায় অবদানের জন্য বিখ্যাত বিজ্ঞানী আউগুস্ট টোয়েপলার এখানকার পদার্থবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের পরিচালক হয়ে আসেন। টোয়েপলার তার অন্যতম বন্ধু ও উপদেষ্টায় পরিণত হয়েছিলেন। টোয়েপলার প্রশাসনিক কাজেও খুব দক্ষ ছিলেন। তিনি কিছুদিনের মধ্যেই পদার্থবিজ্ঞানের জন্য একটি নতুন ভবন, নতুন যন্ত্রপাতি এবং আরও বেশি অর্থ বরাদ্দের ব্যবস্থার করেন। বোলৎসমান গ্রাৎসে তাই গবেষণার খুব ভাল পরিবেশ পেয়েছিলেন। এর বদৌলতেই ১৮৭২ সালে ইম্পেরিয়াল অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সেস-এর (বর্তমান নাম - Österreichische Akademie der Wissenschaften, অস্ট্রীয় বিজ্ঞান একাডেমি) প্রসিডিংসে তার সবচেয়ে বিখ্যাত গবেষণাপত্রটি প্রকাশ করতে সক্ষম হন। গবেষণাপত্রটির নাম ছিল Weitere Studien über das Wärmegleichgewicht unter Gasmolekülen (ইংরেজি ভাষায়: Further Studies on the Thermal Equilibrium of Gas Molecules) যার বাংলা করলে দাঁড়ায় গ্যাস অণুর তাপীয় সাম্যাবস্থা বিষয়ে নতুন গবেষণা। ম্যাক্সওয়েল-বোলৎসমান বণ্টনের প্রাথমিক রূপ এই রচনাতেই প্রকাশিত হয়েছিল। এতে তিনি এমন একটি সমীকরণ প্রকাশ করেন যার মাধ্যে অসংখ্য অণু দিয়ে গঠিত একটি গ্যাসের বিবর্তন ব্যাখ্যা করা যায়। উল্লেখ্য, এটিই প্রথম সমীকরণ যাতে সম্ভাবনার উপর ভিত্তি করে সময়ের সাথে কণার বিবর্তন দেখানো হয়েছিল। সে সময় তাত্ত্বিক গবেষণার পাশাপাশি বোলৎসমান গ্রাৎসে একটি পরীক্ষণও চালিয়ে যাচ্ছিলেন, বিষয় ছিল প্রতিসরাংক এবং dielectric permittivity-র মধ্যে সম্পর্ক। এই পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন ১৮৭৩ সালে। ইয়োহান ইয়োসেফ লশমিট মারা যাওয়ার পর তার শোকবাণীতে বোলৎসমান লিখেছিলেন, তখন আমি সালফার কেলাসের গোলক নিয়ে গবেষণা করতে চাচ্ছিলাম। কেউ যেহেতু এই কেলাস গুঁড়ো করতে চায় না সেহেতু লশমিট আমাকে পরামর্শ দিল বুর্গথেয়াটার এর টিকেট কেনার লাইনে দাঁড়িয়ে তার সাথে কাজটা করতে। এতে কার্বন ডাইসালফাইডের গন্ধে সবাই লাইন ছেড়ে পালাবে। টোয়েপলার যথেষ্ট অর্থ সংস্থান করতে পেরেছিলেন বলেই বোলৎসমান তখন অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে বিখ্যাত বিজ্ঞানীদের সাথে কাজ করতে যেতে পারতেন। সে সময় তিনি জার্মানির হাইডেলবার্গে বিখ্যাত রসায়নবিদ রবার্ট ভিলহেল্ম ফন বুনসেন (১৮১১-৯৯) এবং গণিতজ্ঞ লেও কোনিগসবের্গারের (১৮৩৭-১৯২১) সাথে কাজ করেন। বার্লিনে কাজ করেন গুস্তাফ কির্খফ (১৮২৪-৮৭) এবং শক্তির একটি নিত্যতা সূত্র প্রদানের জন্য বিখ্যাত হেরমান লুডভিগ ফের্ডিনান্ড ফন হেল্মহোলৎসের সাথে। এরা সবাই সে সময় খুব বিখ্যাত ছিলেন। বোলৎসমান হেল্মহোলৎসকে খুব পছন্দ করতেন। এমনকি অনেক সময় হেল্মহোলৎস ছাড়া তিনি কথা বলার মত আর কাউকে পেতেন না। তার সম্পর্কে একবার মাকে লিখেন, ১৮৭৩ সালে বোলৎসমান ইউনিভার্সিটি অফ ভিয়েনায় গণিতের অধ্যাপক পদে আমন্ত্রণ পান। ভিয়েনার অধ্যাপক হওয়া সে সময় অস্ট্রিয়ায় সবচেয়ে বড় সম্মান বলে বিবেচিত হয়, এখনও হয়। অনেক সময় অবশ্য এতে হিতে বিপরীতও হতো। কিন্তু বোলৎসমানের ভিয়েনায় যাওয়ার ব্যাপারে সম্ভবত আরেকটি বিষয়ও কাজ করেছিল, তিনি আরও পরীক্ষণমূলক কাজ করতে চাচ্ছিলেন। বোলৎসমান পরিচিত ছিলেন পদার্থবিজ্ঞানী হিসেবে। কিন্তু ভিয়েনায় গণিত বিভাগে নিয়োগ দিতে গিয়ে সেখানকার নির্বাচকরা যুক্তি দেখিয়েছিলেন যে, তার গবেষণাপত্রগুলো গণিতের কাজ হিসেবেও চমৎকার, বিশেষত তাত্ত্বিক বলবিদ্যা এবং সম্ভাব্যতার ক্যালকুলাস নিয়ে তার কাজ প্রশংসা করার মত এবং তাপ নিয়ে কাজ করার সময়ও তিনি গণিতে বিশেষ পারদর্শিতা দেখিয়েছেন। প্রেম গ্রাৎস ত্যাগ করার পূর্বেই বোলৎসমানের সাথে তার ভবিষ্যৎ স্ত্রী হেনরিয়েটে ফন আইগেন্টলারের পরিচয় হয়েছিল। সোনালী লম্বা চুল ও নীল চোখের এই তরুণী বোলৎসমানের ১০ বছরের ছোট ছিলেন। হেনরিয়েটের বাবা-মা মারা গিয়েছিলেন, তিনি থাকতেন গ্রাৎসের দক্ষিণে স্টাইনৎসের একটি বাড়িতে। এই বাড়ির কর্তা-কর্ত্রীর সন্তান হচ্ছেন নামকরা অস্ট্রীয় সঙ্গীতজ্ঞ ভিলহেল্ম কিনৎসল। তিনি পেশায় শিক্ষক ছিলেন, কিন্তু বোলৎসমানের সাথে পরিচয় হওয়ার পর আবার গণিত পড়ার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু সে সময় মেয়েদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার চল ছিল না, তবে তা নিষিদ্ধও ছিল না। গ্রাৎসের দর্শন অনুষদের প্রধান অধ্যাপক হিরৎসেলজানতেন না হেনরিয়েটে কেন গণিত পড়তে চায়। তিনি তার আর্জি শোনার পর বলেছিলেন, মেয়েদের কাজ রান্নাবান্না, ঘর-সংসার করা। তবে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি না হয়েই প্রথম সেমিস্টারের লেকচারগুলোর শোনার অনুমতি দিয়েছিলেন। কিন্তু দ্বিতীয় সেমিস্টারের শুরুর আগেই মেয়েদের দর্শন অনুষদ মেয়েদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া নিষিদ্ধ করে একটি আইন জারি করে। হেনরিয়েটে এই আইনের বিরুদ্ধে অস্ট্রিয়ার গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পিটিশন পেশ করেন। মন্ত্রণালয় থেকে তাকে পড়ার অনুমতি দেয়া হয়। কিন্তু পরের সেমিস্টার শুরুর আগে আবারও সেই সমস্যার উদ্ভব ঘটে। অবশ্য বোলৎসমানের সাথে বাগ্‌দান হওয়ার পর তার পড়াশোনার ইচ্ছা চলে যায়, অধ্যাপক হিরৎসেল যা বলেছিলেন তাই পালন শুরু করেন, রান্না শিখেন গ্রাৎসের লর্ড মেয়রের বাসায়, যিনি তার বাবার বন্ধু ছিলেন। ১৯৭৩ সালেই বোলৎসমান ভিয়েনায় চলে যান। ভিয়েনা থেকে নিয়মিত চিঠি লিখতেন হেনরিয়েটেকে। বাগ্‌দানের পর বোলৎসমানের সাথে তার হবু-স্ত্রীর যেসব চিঠি আদান-প্রদান হয়েছিল সেগুলো নিয়ে জার্মান ভাষায় একটি বই বেরিয়েছে, যার ইংরেজি নাম Illustrious Professor: Dearly beloved Louis: Ludwig Boltzmann, Henriette von Aigentler, Correspondence। বইটি সম্পাদনা করেছেন বোলৎসমান ও হেনরিয়েটের পৌত্র অধ্যাপক ডিটার ফ্লাম। এই চিঠিগুলোতে বোলৎসমানের জীবনের কিছু উল্লেখযোগ্য দিকের পরিচয় পাওয়া যায়। বইয়ের শিরোনাম থেকে দেখা যায় ঘনিষ্ঠতা হওয়ার পর হেনরিয়েটে লুডভিগকে কেবল "লুইস" বলে সম্বোধন করত। বোলৎসমান প্রথমে তাকে Hochgeehrtes Fraulein নামে সম্বোধন করলেও পরে শুধু "ইয়েটি" (Jetty) ব্যবহার শুরু করেন। সম্বোধনের এই পরিবর্তন ঘটে ৩০শে নভেম্বর ও ৬ ডিসেম্বরের মাঝের সপ্তাহটিতে, চিঠি থেকে এর প্রমাণ পাওয়া গেছে। বোলৎসমান ১৮৭৫ সালের ২৭শে সেপ্টেম্বর হেনরিয়েটেকে বিয়ের প্রস্তাব দেন, চিঠির মাধ্যমে। এই চিঠি থেকে দেখা যায় তখনও ভিয়েনায় মুদ্রাস্ফীতির সমস্যা ছিল। এই চিঠিতে তিনি নিজের আর্থিক অবস্থার বিবরণ দেন, ১৮৭৪ সালে তার বার্ষিক আয় ছিল ৫৪০০ ফ্লোরিন। দুজনের জন্য এটা যথেষ্ট বলেই মনে হয়েছিল বোলৎসমানের। কিন্তু চিঠিতে এও লিখেন যে, ভিয়েনায় দ্রব্যমূল্য বেড়ে গেলে হেনরিয়েটার অবসর বিনোদন এবং আনন্দের জন্য এই অর্থ যথেষ্ট হবে না। এই চিঠিতে তিনি বিয়ে সম্পর্কেও তার চিন্তাভাবনা প্রকাশ করেন, "পরিবারের সার্বিক দেখভাল একজন স্বামীর জন্য আবশ্যকীয় এবং এক্ষেত্রে তার একমাত্র মূলধন তার কর্ম। কিন্তু আমার মতে স্ত্রী যদি কেবল স্বামীর গৃহপরিচারিকা হয়ে থাকে, তার আনন্দ এবং উদ্যমগুলো ভাগাভাগি না করে বা বুঝতে না পারে, তার সাথে কাঁধ মিলিয়ে সংগ্রাম করতে না পারে তাহলে ভালবাসা চিরস্থায়ী হতে পারে না।" ২৫শে নভেম্বর হেনরিয়েটের লেখা আরেকটি চিঠি থেকে জানা যায় বোলৎসমানকে ফ্রেইবুর্গে একটি পদে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। উল্লেখ্য তখন তিনি ভিয়েনায়। হেনরিয়েটে তার চিঠিতে এ ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত দেননি। তিনি যেহেতু কেবল লুডভিগকেই চান সেহেতু তিনি কোথায় থাকবেন তা খুব গুরুত্বপূর্ণ নয়। তবে এটুকু নির্লিপ্ততা দেখিয়ে তিনি আবার ভিয়েনা ছেড়ে যাওয়ার সুবিধা-অসুবিধার কথা বলেন, যেহেতু বোলৎসমান তার পরামর্শ চেয়েছিলেন। সুবিধার মধ্যে তিনি বলেন, ফ্রেইবুর্গে পেশাদারী কাজ কম, স্ত্রী ও পরিবারকে বেশি সময় দিতে পারবেন, একটি পদার্থবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের প্রধান হতে পারবেন। কিন্তু মূল অসুবিধা হচ্ছে, ফ্রেইবুর্গের বেতন ভিয়েনার প্রায় অর্ধেক, অবশ্য সেখানে খাবার খরচও ভিয়েনা থেকে কম আর বাসার কোন ভাড়া দিতে হবে না। বোলৎসমানের পৌত্রের কাছ থেকে জানা যায় হেনরিয়েটে তাকে Mein liebes dickes Schatzerl (sweet fat darling) বলে ডাকতেন। বোলৎসমান খুব নরম মনের মানুষ ছিলেন, স্ত্রীর কাছ থেকে দূরে কোথাও যেতে হলে চোখের পানি ধরে রাখতে পারতেন না। ভিয়েনায় অধ্যাপনা এবং বিয়ে ১৮৭৫ সালে বোলৎসমানের প্রথম বিখ্যাত গবেষণাপত্রের সেই সমীকরণটি তার বন্ধু লশমিটের সমালোচনার মুখে পড়ে। এ বিষয়ে লশমিটের বক্তব্য অপ্রত্যাবর্তন হেঁয়ালি বা লশমিটের হেঁয়ালি নামে পরিচিত। বোলৎসমান এই সমালোচনার জবাবও দিয়েছিলেন। এ বিষয়ে বিস্তারিত পরে আলোচিত হবে। ভিয়েনায় প্রশাসনিক কাজ অনেক বেশি ছিল, নরম মনের বোলৎসমানের পক্ষে সবকিছু চালিয়ে যাওয়া সহজ ছিল না। তার পুরোটা সময়ই চলে যেতো বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন কাজে। ১৮৭৬ সালেই তার গ্রাৎসে ফিরে যাওয়ার একটি সুযোগ তৈরি হয়। তার বিয়েও হওয়ার কথা সে বছর। হেনরিয়েটে যেহেতু গ্রাৎসের মেয়ে এবং সে যেহেতু ভিয়েনায় উপযুক্ত বাসা খুঁজে পাচ্ছিল না সেহেতু বিয়ের পর গ্রাৎসে থাকাটাই তার জন্য সবচেয়ে ভাল ছিল। তাই সুযোগটির জন্য বোলৎসমান অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলেন। গ্রাৎসের পদার্থবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের সমৃদ্ধির পেছনে মূল অবদান টোয়েপলারের। নতুন ভবনও তিনি নির্মাণ করিয়েছিলেন। ১৮৭৩ থেকে ১৮৭৬ এর মধ্যে ইনস্টিটিউটের জন্য ২৮,০০০ ফ্লোরিনের যন্ত্রপাতি কিনেছিলেন। কিন্তু ১৮৭৬ এ বোলৎসমানকে লেখা এক চিঠিতে টোয়েপলার বলেন, তিনি সরকারের কাছ থেকে যথেষ্ট অর্থ পাচ্ছেন না। সে বছরই তিনি গ্রাৎস ছেড়ে জার্মানির ড্রেসডেনে চলে যান। এতে গ্রাৎসের পদার্থবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের প্রধানের পদটি ফাঁকা হয়ে যায়। এই পদ বোলৎসমানের কাছে ছিল স্বপ্নের মত। কিন্তু এই পদে তার একজন প্রতিদ্বন্দী ছিলেন, যিনি আবার পেশাগত ক্ষেত্রেও বোলৎসমানের বিরুদ্ধমনা ছিলেন। তার নাম আর্নস্ট মাখ। মাখ ১৮৬৪ থেকে ১৮৬৭ সাল পর্যন্ত গ্রাৎসের গণিত বিভাগে অধ্যাপনা করেছেন। তার Die Mechanik in Hirer Enlwickelung historisch-kritisch dargestellt (ঐতিহাসিক ও সমালোচনামূলক দৃষ্টকোণ থেকে বলবিজ্ঞানের উন্নয়ন) নামক গবেষণাপত্রটি বিজ্ঞানীদের একেবারে নতুন একটি প্রজন্মের জন্ম দিয়েছিল যে প্রজন্মের সবচেয়ে বিখ্যাত ব্যক্তি হচ্ছেন আলবার্ট আইনস্টাইন। ১৮৭৬ সালে মাখ প্রাগ-এ ছিলেন কিন্তু চাচ্ছিলেন গ্রাৎসে ফিরে যেতে। অন্যদিকে বোলৎসমান ও হেনরিয়েটের বিয়ের তারিখ ঠিক হয়ে গিয়েছিল জুলাইয়ের ১৭ তারিখ। তখনও তিনি নিশ্চিত না বিয়ের পর তাকে ভিয়েনায় থাকতে হবে নাকি গ্রাৎসে, বাসা কোথায় দেখতে হবে- ভিয়েনায় নাকি গ্রাৎসে। বিয়ের তারিখের ৫ দিন পূর্বে তারা বিয়ে করে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়, যেখানে যেতে হবে হোক। কিন্তু এর পরপরই মন্ত্রণালয় থেকে সিদ্ধান্ত আসে, গ্রাৎসের পদার্থবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের প্রধান মনোনীত হন বোলৎসমান। বিয়ে করে গ্রাৎসে থাকতে শুরু করে নবদম্পতি। গ্রাৎসে প্রত্যাবর্তন thumb|left|280px|১৮৮৭ সালে গ্রাৎসে বোলৎসমান এবং সহকর্মীরা। (দাঁড়িয়ে, বাম থেকে) নার্নস্ট, স্ট্রাইনৎস, আরহেনিয়ুস, হিকে, (বসে, বাম থেকে) আউলিংগার, এটিংসহাউজেন, বোলৎসমান, Klemenčič, হাউসমানিংগার বোলৎসমান দম্পতি গ্রাৎসে ১৪ বছর ছিলেন। এই শহরেই তাদের দুই ছেলে লুডভিগ হুগো (১৮৭৮-৮৯) ও আর্থুর (১৮৮১-১৯৫২) এবং দুই মেয়ে হেনরিয়েটে (১৮৮০-১৯৪৫) ও ইডার (১৮৮৪-১৯১০) জন্ম হয়। গ্রাৎস ছেড়ে যাওয়ার পর তাদের তৃতীয় মেয়ে এলসার (১৮৯১-১৯৬৬) জন্ম হয়। অবশ্য গ্রাৎসে থাকার সময়ই বোলৎসমানের মা মারা যান, ১৮৮৫ সালে। এই মৃত্যুটি ছাড়া গ্রাৎসে তার জীবন ছিল সুখের। এ সময় অস্ট্রিয়ার অনেক রাষ্ট্রীয় সম্মাননা পান তিনি। এ সময়ই তিনি প্রকৃতি সম্পর্কে তার পরিসাংখ্যিক মনোভাবকে শাণিত করেন। অস্ট্রীয় সরকার তার প্রশাসনিক কাজগুলো করে দেয়ার জন্য গ্রাৎসে Extraordinarius (সহযোগী অধ্যাপক) নামে একটি পদ তৈরি করে তাতে আর্থুর ফন এটিংসহাউজেনকে (১৮৫০-১৯৩২) মনোনয়ন দেয়। ১৮৭৮ সালে বোলৎসমান অনুষদের প্রধান হন। ১৮৮১ সালে সরকারী কাউন্সিলর, ১৮৮৫ তে ইম্পেরিয়াল অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সেস এর সদস্য এবং ১৮৮৯ সালে কোর্ট কাউন্সিলর হন। অন্যান্য দেশ থেকেও তাকে অনেক সম্মাননা দেয়া হয়। পদার্থবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের পাশাপাশি গ্রাৎসে আরেকটি পদ ছিল, তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের চেয়ার। প্রথমবার যখন গ্রাৎসে ছিলেন তখন এই পদ বোলৎসমানের ছিল। কিন্তু এবার এই পদে থাকেন আরেক অস্ট্রীয় বিজ্ঞানী হাইনরিখ স্ট্রাইনৎস। স্ট্রাইনৎসের ক্যারিয়ার খুব বেশি সফল নয়। কিন্তু বোলৎসমান সব সময় তাকে সহায়তা করেছেন। এ সময় বোলৎসমানকে রাজকীয় উপাধি দেয়ার ইচ্ছা পোষণ করে রাজপরিবার। কিন্তু তিনি তা গ্রহণ করেননি, উত্তরে বলেছিলেন, তার জন্য তার মধ্যবিত্ত পরিবারের উপাধিই ভাল, এবং তার সন্তান ও তাদের বংশধরদের জন্যও আশাকরি সে উপাধিই যথেষ্ট হবে। এ সময়টা বোলৎসমানের জন্য খুব ব্যস্ততারও ছিল না। তাকে সাহায্য করার জন্য ছিল এটিংসহাউজেন। অনুষদের প্রধান হিসেবেও খুব বেশি কিছু করতে হতো না, ব্যস্ত থাকলে উপ-প্রধানকে দায়িত্ব দিতে পারতেন। তাই সে সময়কার বিখ্যাত সব পদার্থবিজ্ঞানীর সাথে যোগাযোগ রক্ষা করছিলেন। এদের মধ্যে রয়েছেন হেনড্রিক আন্টুন লরেনৎস, হেল্মহোলৎস, ভিলহেল্ম অস্টভাল্ড, এবং কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটির ক্যাভেন্ডিশ অধ্যাপক পদে ম্যাক্সওয়েলের উত্তরসূরী জন উইলিয়াম স্ট্রাট। এ সত্ত্বেও তার সে সময়কার চিঠি পড়ে মনে হয়, তিনি ভাবতেন তিনি বিজ্ঞানীদের মূল গোষ্ঠীর বাইরে আছেন, ভেতরে থাকলে আরও আলোচনা করতে পারতেন। অবশ্য তিনি টোয়েপলারকে এও বলেছিলেন যে, বিয়ে মানুষকে অলস করে দেয়, যতটা ভেবেছিলেন তার চেয়েও বেশি। এ কারণেই বোধহয় ইনস্টিটিউটের প্রধান পদে তার উত্তরসূরী লেওপোল্ড ফাউন্ডলার বলেছিলেন, তিনি এসে দেখেন ইনস্টিটিউটের ভবনটি শূকরের খামাড় হয়ে আছে। বোঝাই যায়, গবেষণার চাপে হয়ত বোলৎসমান ইনস্টিটিউটের দিকে নজর দিতে পারেননি। ১৮৭৭ সালে বোলৎসমান দুটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন যার একটির (১৮৭৭খ) আলোচ্য বিষয়ে ছিল এনট্রপি। এতে তিনি পরমাণুর বিশৃঙ্খলার গাণিতিক পরিমাপ হিসেবে এনট্রপি ব্যবহার করেছিলেন। বিকিরণ চাপ নিয়ে ইতালীয় পদার্থবিজ্ঞানী আদোলফো বারতোলির গবেষণা থেকে খুব অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন তিনি। এই অনুপ্রেরণায় ১৮৮৬ সালে তার শিক্ষক ইয়োসেফ স্টেফানের সূত্রের একটি অনন্যসাধারণ প্রমাণ আবিষ্কার করেন। একই বছর তার আরেকটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয় যাতে তিনি এমন সব গ্যাসীয় অণু নিয়ে আলোচনা করেন যারা মিথস্ক্রিয়া করছে এবং যাদের বিভব শক্তি আছে। এই গবেষণাপত্র খুব একটা পরিচিত না হওয়ায় অনেক বিজ্ঞানী এখনও মনে করেন বোলৎসমান কেবলই আদর্শ গ্যাস নিয়ে কাজ করেছেন। কিন্তু এটি দেখলে মনে হয় উইলার্ড গিবস নয় বরং বোলৎসমানকেই সাম্যাবস্থার পরিসাংখ্যিক বলবিদ্যার জনক হিসেবে আখ্যায়িত করা উচিত। ১৮৮৬ সালে হাইনরিশ হেরৎস এর তড়িচ্চুম্বকীয় তরঙ্গ এবং আলো বিষয়ক গবেষণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে তিনি নিজেই হেরৎসের পরীক্ষণটি পুনরায় করার চেষ্টা করেন। উল্লেখ্য ম্যক্সওয়েল ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে তড়িচ্চুম্বকীয় তরঙ্গ এবং আলো একই, হেরৎস তা প্রমাণ করেন। এ বিষয়ে বোলৎসমানের গবেষণা গ্রাৎস ত্যাগের পূর্বে তার শেষ প্রকাশিত লেখাগুলোতে লিপিবদ্ধ আছে। গ্রাৎসে থাকার সময় তার চরিত্রের একটি লক্ষ্যণীয় দিক হচ্ছে, এ সময় তিনি বিজ্ঞান এবং সাধারণ অর্থে জ্ঞানের দার্শনিক দিকগুলো নিয়ে আলোচনা থেকে বিরত থাকতেন। ১৮৮৭ সালের একটি গবেষণাপত্রে বোলৎসমান তাপগতিবিদ্যার দ্বিতীয় সূত্রকে ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে আলোচনা করেন। বেশ স্বল্প সময়ের মধ্যেই গ্যাসের গতীয় তত্ত্ব বিষয়ে বোলৎসমানের দৃষ্টিভঙ্গি বিশ্বব্যাপী, বিশেষ করে যুক্তরাজ্যে, পরিচিত হয়ে উঠে। এর প্রমাণ পাওয়া যায় ১৮৭৬ সালে প্রকাশিত এইচ ডব্লিউ ওয়াটসনের বইয়ে যাতে তিনি গ্যাসের গতি তত্ত্ব ব্যাখ্যায় বোলৎসমানের পদ্ধতি ব্যবহার করেন। ১৮৮২ সালে লেখা ম্যাক্সওয়েলের একটি জীবনী গ্রন্থে তাকে গ্যাসের গতি তত্ত্বের জনকদের একজন হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। ব্রিটিশ পদার্থবিজ্ঞানীদের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রেখেছিল ১৮৮৫-৮৭ সালের মধ্যে দুজন ব্রিটিশ বিজ্ঞানীর (পিটার টেইট এবং উইলিয়াম বার্নসাইড) সাথে তার বিতর্ক। বোলৎসমানের গবেষণাপত্রগুলো অনেক দীর্ঘ হওয়ায় সবাই সেগুলো পড়ার ধৈর্য্য রাখত না। তাই এই আলোচনাগুলো তাকে ইংরেজভাষী বিশ্বে পরিচিত হতে সাহায্য করেছিল। তাই বিশ্বের নানা দিক থেকে তার জন্য পুরস্কার ও সম্মাননা আসতে থাকে। গ্রাৎসের এই ১৪ বছরে তিনি পৃথিবীর সেরা পদার্থবিজ্ঞানীদের একজনে পরিণত হন। দুঃখময় শেষ জীবন অসুস্থতার পূর্বসূত্র বিশ্ববিখ্যাত হওয়ার পরই ১৮৮৮ সালের জানুয়ারি থেকে বোলৎসমানের শারীরিক এবং মানসিক অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে। এত বিখ্যাত এবং ধিরস্থির একজন মানুষ কেন হঠাৎ এমন হয়ে গেলেন তার কোন সুস্পষ্ট কারণ জানা যায় না। তবে বেশ কিছু ঘটনাকে তার পূর্বসূত্র হিসেবে উল্লেখ করা যায়। খুব বেশি হতাশা এবং উদ্বিগ্নতায় ভোগা এবং খুব নরম মনের মানুষ হওয়ার কারণেই সম্ভবত তার উপর এই ঘটনাগুলো এতোটা প্রভাব ফেলেছিল। বোলৎসমানের জীবনীকার Carlo Cercignini পূর্বসূত্র হিসেবে যে ঘটনাগুলো উল্লেখ করেছেন সেগুলোই এখানে বর্ণীত হবে। ঘটনার সূত্রপাত ১৮৮৫ তে। এই বছর তার মা মারা যান। ৪১ বছর বয়সে মাকে হারানো অস্বাভাবিক কোন ঘটনা নয়। কিন্তু বোলৎসমান ১৫ বছর বয়সে বাবাকে হারিয়েছিলেন এবং সে কারণে মার প্রতি তার আকর্ষণ একটু বেশিই ছিল। উল্লেখ্য এই বছর তিনি কোন বৈজ্ঞানিক গবেষণাপত্র প্রকাশ করেননি, এবং কোন চিঠি লিখেছেন বলেও জানা যায়নি। পরবর্তী ঘটনাটি বিশ্ববিদ্যালয় সংক্রান্ত। বোলৎসমান ছিলেন গ্রাৎস বিশ্ববিদ্যালয়ের রেক্টর। অর্থাৎ শিক্ষার্থীদের আবাসিক ভবনের দায়িত্ব ছিল তার উপর। এমন দায়িত্বের জন্য তিনি প্রস্তুত ছিলেন না। এর মধ্যে আবার ১৮৮৭ সালের ২২শে নভেম্বর গ্রাৎসের জার্মানিবাদী ছাত্ররা আবাসিক ভবনের একটি থেকে অস্ট্রিয়ার রাজার মূর্তি সরিয়ে নেয় এবং হাব্‌সবুর্গ রাজপরিবারবিরোধী শ্লোগান দিতে থাকে। রেক্টর হিসেবে এই পরিস্থিতি সমাধানের দায়িত্ব ছিল বোলৎসমানের উপর এবং স্টিরিয়ার গভর্নর, ভিয়েনার প্রশাসন ও স্বয়ং রাজা তার উপর ভরসা করে ছিল। এই বিদ্রোহ ৪ মাস স্থায়ী হয়েছিল। এদিকে ১৮৮৭ সালের ১৭ অক্টোবর জার্মানির বার্লিনে বোলৎসমানের বন্ধু গুস্তাফ কির্খফ মৃত্যুবরণ করেন। ইউনিভার্সিটি অফ বার্লিনের কর্তৃপক্ষ তাকে আমন্ত্রণ জানালে তিনি এ বছরের শেষ দিকে বার্লিনে যান। সেখানে তাকে কির্খফের পদে যোগ দেয়ার আমন্ত্রণ জানানো হয়। এর মানে তিনি হতে পারবেন কির্খফের উত্তরসূরী এবং হেল্মহোলৎসের সহকর্মী। তিনি প্রস্তাবটি গ্রহণ করেন এবং এমনকি বিভাগে তার কক্ষও ঠিক করে ফেলেন। ১৮৮৮ সালের মার্চে তিনি আবার পদটি গ্রহণে অস্বীকৃতি জানান, যদিও ততোদিনে জার্মানির রাজা কাইজার চুক্তিতে স্বাক্ষর করে ফেলেছিলেন। এর কারণ হিসেবে অনেকে উল্লেখ করেন, জার্মানিতে চাপ গ্রাৎসের চেয়ে অনেক বেশি ছিল কিন্তু বোলৎসমান চাপ পছন্দ করতেন না। তবে কারণ আরও রয়েছে। বোলৎসমানের সম্ভাব্য অস্ট্রিয়া ত্যাগের খবর জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে গ্রাৎসে পৌঁছে যায়। এই সুযোগে তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের প্রধান হাইনরিশ স্ট্রাইনৎস তার অর্থ বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবী জানান। ফেব্রুয়ারির ১ তারিখে তার সহযোগী এটিংসহাউজেন টেখনিশে হোখশুলে (গ্রাৎসের তৎকালীন পলিটেকনিক) তে একটি পদে যোগ দেন। এতে নিজের বিভাগেই বোলৎসমান সমর্থন ও সহযোগিতা হারান। গ্রাৎসে ফিরে বোলৎসমান বুঝতে পারেন তিনি দুঃসাহসিকতা দেখিয়ে ফেলেছেন, অস্ট্রীয় সরকারের অনুমতি না চেয়ে বার্লিনকে সম্মতি দিয়ে দেয়াটা ঠিক হয়নি। অস্ট্রীয় সরকারও চাচ্ছিল না তাদের সবচেয়ে বিখ্যাত বিজ্ঞানীদের একজনকে এভাবে হারাতে। তারাও বোলৎসমানকে বোঝাতে শুরু করে। এই চাপেই তিনি মানসিক ভারসাম্য কিছুটা হারাতে শুরু করেন। তিনি মার্চে বার্লিনকে চিঠি লিখে জানান, চোখের সমস্যার কারণে বার্লিনের পদটিতে ঠিকমত কাজ করা তার পক্ষে কষ্টকর হবে। কিন্তু সেখান থেকে জবাব আসে, এ নিয়ে তার চিন্তা করার কোন প্রয়োজন নেই। অগত্য তিনি আরও এক ধাপ এগিয়ে ব্যাখ্যা করেন কেন তিনি এই পদটির জন্য যোগ্য নন: কিন্তু অন্য সূত্র থেকে জানা যায় বোলৎসমান তার গবেষণা ক্ষেত্র নিয়ে সব সময়ই খুব ওয়াকিবহাল থাকতেন। তার এই লেখা থেকে বোঝা যায়, তিনি কারও প্রত্যাশা পূরণ করতে না পারলে প্রচণ্ড উদ্বিগ্ন হয়ে পড়তেন, সব সময় নিখুঁত হতে চাইতেন। যাহোক, অবশেষে ১৮৮৮ সালের ৯ই জুলাই কাইজার ভিলহেল্ম ২ তাকে মনোনয়ন দিয়ে করা চুক্তিটি বাতিল করে দেন। এসব ঘটনার পরই বোলৎসমানের মধ্যে নিউরাস্থিনিয়া (মনঃগ্লানি) এবং চরম হতাশার লক্ষণ (বাইপোলার ডিসঅর্ডার) দেখা দিতে শুরু করে। তার জীবনের শান্তি এবং সুন্দরের দিন শেষ হয়ে আসে, হতাশা, অসন্তোষ এবং অস্থিরতা তাকে অধিকার করে নেয়। তিনি ঘনঘন স্থান পরিবর্তন করতে থাকেন এই আশায় যে, হয়ত নতুন স্থানে শান্তি মিলবে। যেহেতু তিনি বার্লিন নিয়ে দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত হয়েছিলেন, সেহেতু গ্রাৎসে থাকতে তার অসুবিধা থাকার কথা না। কিন্তু বাইপোলার ডিসঅর্ডার থাকার কারণে এটাই তার পক্ষে স্বাভাবিক ছিল। বার্লিনকে কেন না বলেছিলেন তা তিনি নিজেই জানতেন না। আর গ্রাৎসে ফিরে আসার পর মনে হচ্ছিল, তিনি কি আর সেই মহান বিজ্ঞানী নেই। নিজের বিখ্যাত এবং মহান সত্তাটির সাথে গ্রাৎসের তাকে তুলনা করতে শুরু করেছিলেন। এই অস্থিরতা এবং হতাশার মধ্যেই ১৮৮৯ সালে তার ছেলে, লুডভিগ, মাত্র ১১ বছর বয়সে অ্যাপেন্ডিসাইটিসের রোগে মারা যায়। আরও ভয়াবহ হচ্ছে, তিনি এই মৃত্যুর জন্য নিজেকে দায়ী করতেন। তিনি মনে করতেন, রোগের ভয়াবহতা বুঝতে না পারা এবং ভুল ডাক্তারের কাছে যাওয়ার কারণেই তার ছেলে মারা গেছে। এই মৃত্যু তার হতাশা ও মানসিক রোগে নতুন মাত্রা যোগ করে। তিনি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে থাকেন এবং একা থাকতে শুরু করেন। গ্রাৎস ত্যাগ তার প্রথম চিন্তা ছিল গ্রাৎস ত্যাগ করা। গ্রাৎসে তার প্রতি তার সহকর্মীদের আচরণ পাল্টে গিয়েছিল, তিনি নিজেও মনে করতেন তার আরও ভাল কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকার যোগ্যতা রয়েছে এবং তার ছেলে মারা গেছে এই শহরে। সব মিলিয়ে গ্রাৎস তার কাছে বিষাক্ত হয়ে উঠেছিল। ১৮৮৮ সালের জুলাইয়ে যেখানে কাইজার তার চুক্তিপত্র বাতিল করলেন সেখানে সে বছরেরই শেষ দিকে তিনি হেল্মহোলৎসকে চিঠি লিখে জানালেন, তিনি সুস্থ হয়ে গেছেন এবং বার্লিনে যেতে চান। এমনকি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে তার যত বন্ধু ছিল তাদের সবাইকে জানাতে থাকলেন যে তিনি গ্রাৎস ত্যাগ করতে চান। তার এই বন্ধুদের মধ্যে যে প্রথম তাকে আনার সুযোগটি কাজে লাগালেন তিনি হচ্ছেন জার্মানির মিউনিখের অয়গেন ফন লোমেল। তিনি নোবেল বিজয়ী রসায়নবিদ আডোলফ ফন বাইয়ার এর সহায়তায় ইউনিভার্সিটি অফ মিউনিখের তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে বোলৎসমানের জন্য একটি পদের ব্যবস্থা করেন। মিউনিখে তখন এমন কোন পদ ছিল না, কেবল তার জন্যই এই পদটি তৈরি করা হয়। মিউনিখ কর্তৃপক্ষ যুক্তি হিসেবে দেখায়, তাত্ত্বিক ও পরীক্ষণমূলক পদার্থবিজ্ঞান দিনদিন আলাদা হয়ে যাচ্ছে এবং একজনের পক্ষে দুই বিষয়ে পারদর্শীতা অর্জন প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ছে, বোলৎসমান যেহেতু গণিতে খুবই দক্ষ সেহেতু তিনি তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানে গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে পারবেন যা ম্যক্সওয়েল, ক্লাউসিয়ুস এবং হেল্মহোলৎসের গবেষণাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে। গ্রাৎস ত্যাগের সময় বোলৎসমানের সম্মানে একটি বিদায়ী অনুষ্ঠান হয়। নতুন রেক্টর এবং এইচ স্ট্রাইনৎস তাদের বক্তৃতায় আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, বোলৎসমান আবার অস্ট্রিয়ায় ফিরে আসবেন। উত্তরে বোলৎসমান বলেন, মিউনিখে বোলৎসমান মিউনিখে বোলৎসমান প্রতি সপ্তাহে হোফব্রেউহাউসে বিয়ার নিয়ে সহকর্মীদের সাথে বিজ্ঞান বিষয়ক আলোচনার জন্য। এখানে আসতেন গণিতবিদ ভালটার ফন ডুক, আলফ্রেড প্রিংশাইম, পদার্থবিজ্ঞানী লোমেল ও লেওনহার্ড সোনকে, রসায়নবিদ বাইয়ার, জ্যোতির্বিজ্ঞানী হুগো ফন সেলিগার এবং প্রকৌশলী কার্ল ফন লিন্ডে। এ সময় তিনি পরিবার নিয়ে থাকতেন মাক্সিমিলিয়ান স্ট্রাসেতে, বিশ্ববিদ্যালয় এবং তার প্রিয় অপেরা দুটোই ছিল বাসা থেকে কাছে। প্রায় রিচার্ড ভাগনারের সুর শুনতে যেতেন। দিনদিন তার চোখের অবস্থা আরও খারাপ হতে শুরু করে, অনেক সময় বৈজ্ঞানিক গবেষণাপত্র বা বই তার স্ত্রী পড়ে শোনাতেন যাতে তার চোখ অধিক পরীশ্রম থেকে রেহাই পায়। তবে বাভারিয়ার সরকার বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের কোন পেনশন দেয় না বলে তখন থেকেই বোলৎসমান তার পরিবারের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন। চোখের অবস্থা ভাল নয় দেখেই ১৮৯৬ সালের মধ্যে তার বিখ্যাত বই Lectures on Gas Theory লিখে ফেলেন। ১৮৯২ সালে লোশমিটকে লেখা এক চিঠি থেকে জানা যায় ততোদিনে তার আবার দেশের বাড়ির জন্য খারাপ লাগতে শুরু করে। তিনি লিখেন যে ভাল আছেন কিন্তু অস্ট্রিয়ার চেয়ে ভাল নয়। এই বছর তার পুরনো শিক্ষক ইয়োসেফ স্টেফান মারা যান। ভিয়েনা কর্তৃপক্ষ চেষ্টা করুন স্টেফানের পদে বোলৎসমানকে নিয়ে আসতে। কিন্তু এদিকে মিউনিখ তার বেতন বাড়িয়ে দেয় এবং তার জন্য একজন ব্যক্তিগত সচিবের ব্যবস্থা করে দিয়ে তাকে থাকতে অনুরোধ করে। তিনি ভিয়েনাকে বলেন, আপাতত অন্তত ১ বছর তিনি মিউনিখে থাকতে চান। এ সময় বোলৎসমানের জীবনের একজন উল্লেখযোগ্য সাক্ষী হচ্ছেন জাপানে পদার্থবিজ্ঞান গবেষণা উন্নয়নের অন্যতম ব্যক্তিত্ব হানতারো নাগাওকা। তার একটি চিঠি থেকে জানা যায়, বোলৎসমান মিউনিখে পড়াচ্ছেন জেনেই তিনি মিউনিখে এসেছেন। এতেই বোঝা যায় বোলৎসমান কতোটা বিখ্যাত ছিলেন। ১৮৯৪ সালে মিউনিখে থাকা অবস্থায় বোলৎসমান ইউনিভার্সিটি অফ অক্সফোর্ডের পিএইচডি অনারিস কজা হন। অক্সফোর্ডে তিনি প্রভূত সম্মান পেয়েছিলেন। এ বছরের বসন্তে ভিয়েনা এবং মিউনিখের মধ্যে তার পছন্দ ঘন ঘন পরিবর্তিত হতে থাকে। অবশেষে জুনে মিউনিখ ছেড়ে ভিয়েনা যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তখন তিনি অস্ট্রিয়ার সেরা বিজ্ঞানী। ভিয়েনায় তাকে গ্রহণের জন্য বিশাল আয়োজন করা হয়েছিল। দর্শন অনুষদ রাসায়নিক পদার্থবিজ্ঞানের একটি পদ বাতিল করে তাকে অর্থ যোগান দেয়। শর্ত থাকে, তিনি হঠাৎ দায়িত্ব পালনের অযোগ্য বিবেচিত হলে তাকে পূর্ণ অবসরকালীন ভাতা দিতে হবে। ভিয়েনা-লাইপৎসিগের অস্থির সময় বোলৎসমানকে ভিয়েনায় আনার জন্য অস্ট্রীয় কর্তৃপক্ষ যে মহাযজ্ঞের আয়োজন করেছিল তার মোহ অচিরেই কেটে যায়। বোলৎসমান বুঝতে পারেন, ১৮ বছর ভিয়েনার বাইরে থাকার কারণে এখন এখানে তার কোন বন্ধুমহল নেই। তার উপর আছে আর্নস্ট মাখের তীব্র বিরোধিতা। মাখের দর্শন ছিল বোলৎসমানীয় দর্শনের একেবারে বিপরীত এবং আরও সমস্যা ছিল, একটি সঠিক হলে অন্যটি সঠিক হতে পারে না। মাখ মনে করতেন, পরমাণু দেখা যায় না বলে তা নিয়ে কথা বলার কোন প্রয়োজন নেই, তবে গণিত মেলানোর খাতিরে কিছুটা আলোচনা করা যেতে পারে। এর বদলে তিনি শক্তির আদান-প্রদাণের মাধ্যমে সব ব্যাখ্যা করতে চাইতেন। তার এই দর্শনের নাম হয়েছিল শক্তিবাদ বা এনার্জেটিক্স। তবে বর্তমানে একে বিজ্ঞান না বলে ছদ্ম-বিজ্ঞান বলা হয়। বোলৎসমান মাখের বিরোধিতার সাথে মানসিকভাবে পেরে উঠতেন না, কারণ মানসিকভাবে তিনি মাখের চেয়ে দুর্বল ছিলেন। ১৮৯৫ সাল থেকে মাখ ইউনিভার্সিটি অফ ভিয়েনার দর্শন ও বিজ্ঞানের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে কাজ করছিলেন। তার সাথে বোলৎসমানের সরাসরি কোন বিতর্ক না হলেও মাখ বোলৎসমানকে মূল্য দিতেন না, নিজেকে বোলৎসমানের তুলনায় বুদ্ধিমান মনে করতেন। এমনকি বোলৎসমানের ব্যক্তিগত বিষয় নিয়েও তিনি নেতিবাচক মন্তব্য করতেন। একবার দার্শনিক হাইনরিশ গোমপেরৎস-কে লেখা একটি চিঠিতে তিনি বলেন, "বোলৎসমান ক্ষতিকর নয়, তবে প্রচণ্ড কাঁচা এবং খাপছাড়া। কোথায় সীমারেখা টানতে হবে এ নিয়ে তার কোন ধারণাই নেই। তার ব্যক্তিগত জীবনের অনেক বিষয় সম্পর্কেও এই কথা খাটে, এগুলো তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।" শক্তিবাদ নিয়ে মাখ, অস্টভাল্ড এবং হেল্ম-এর সাথে বোলৎসমানের বিতর্ক আলাদা অনুচ্ছেদে আলোচিত হবে। এসব বৈজ্ঞানিক বিতর্কের কারণে বোলৎসমান ভাবতে শুরু করেন, জার্মানিতে তার কাজ খুব কম মূল্য পাচ্ছে। তিনি একা হয়ে যান। এইচ-তত্ত্বের বিরোধিতা করে সেরমেলোর মন্তব্যের জবাবে তিনি লিখেছিলেন, "সেরমেলোর গবেষণাপত্র প্রমাণ করে যে আমার লেখা সবাই ভুল বুঝছে। অবশ্য এই ভেবে আমি সন্তুষ্ট যে, এটা প্রমাণ করে জার্মানিতে আমার লেখা অন্তত কেউ পড়তে শুরু করেছে।" এর মাঝে ভিয়েনা নিয়ে তার অসন্তুষ্টি বেড়েই চলে। তিনি গবেষণাগারের কোর্স থেকে অব্যাহতি চান। কিছুদিন পর অস্টভাল্ডকে লিখেন, জার্মানির চেয়ে এখানে অনেক কম ছাত্র গবেষণা করতে চায়, এখানে বৈজ্ঞানিক আলোচনাও খুব কম হয়। বছর বছর খানেক পর তার স্ত্রী বলেছিলেন, ভিয়েনার তার কাজ ছিল স্কুল-মাস্টারের মত। এটি অবশ্যই বোলৎসমানের মেধার প্রতি সুবিচার ছিল না। তিনি অস্ট্রিয়ার রাজনীতি নিয়েও অসন্তুষ্ট ছিলেন। ১৯০০ সালে বোলৎসমান ইউনিভার্সিটি অফ লাইপৎসিগে অধ্যাপনার একটি পদ গ্রহণ করেন। এখানে ভৌত রসায়নবিদ ভিলহেল্ম অস্টভাল্ড ইতিমধ্যে গবেষণার একটি চমৎকার পরিবেশ গড়ে তুলেছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ দেয়ার সময় তাকে জার্মানি এবং বহির্বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদার্থবিজ্ঞানী হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। নিয়োগপ্রাপ্তির সম্ভাবনা যখন দেখা দিচ্ছিল তখন বোলৎসমান খুশিই হয়েছিলেন। কিন্তু প্রস্তাবটি গ্রহণ করতে গিয়ে তার প্রচণ্ড মানসিক ধকল যায়। তিনি মানসিক ভারসাম্য হারাতে বসেন, এমনকি কিছুদিন একটি মানসিক হাসপাতালে অবস্থান করেন। যথারীতি লাইপৎসিগেও বোলৎসমানের শান্তি আসেনি। অস্টভাল্ড ব্যক্তিগত জীবনে তার বন্ধু হলেও মাঝে মাঝে তাদের বিতর্ক এত চরমে উঠে যেতো কেউই ভারসাম্য রাখতে পারতেন না। এসব কারণে বোলৎসমানের অবস্থা ভিয়েনার চেয়েও খারাপ হয়ে পড়ে। একসাথে কাজ করতে তিনি পছন্দ করতেন, কিন্তু অস্টভাল্ডের সাথে প্রতিনিয়ত বিতর্ক করতে গিয়ে তিনি বিধ্বস্ত হয়ে পড়েন। এখানেই একবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। অবশেষে স্বাস্থ্যহানির কারণ দেখিয়ে প্রাদেশিক সরকারের কাছে অনুরোধ করেন তাকে অব্যাহতি দিতে। এরপর তিনি আবার ভিয়েনা ফিরে যেতে চান। উল্লেখ্য তিনি যাওয়ার পরও ভিয়েনায় তার পদটি শূন্যই ছিল। তাই ১৯০২ সালে আবার ভিয়েনা ফিরে যেতে সক্ষম হন। এর মধ্যে ১৯০১ সালে স্ট্রোক করার কারণে মাখ অবসরে চলে গিয়েছিলেন। ভিয়েনায় ফিরে আসলেও, লাইপৎসিগ গমনের কারণে অস্ট্রীয় সরকার বোলৎসমানকে পুরোপুরি ক্ষমা করেনি। উপরন্তু তার মানসিক ও শারীরিক অবস্থা নিয়ে বিভিন্ন গুঞ্জন ছড়াচ্ছিল। অনেকে বলছিল, সে মানসিকভাবে অসুস্থ এবং দায়িত্ব পালনের অযোগ্য। গবেষণা ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে তাই রাজা এবং ভিয়েনা কর্তৃপক্ষকে বোঝাতে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়েছিল। মন্ত্রী বোলৎসমানের ডাক্তারদের সাথে কথা বলেন এবং তাকে এই মর্মে একটি চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করতে হয়েছিল তিনি পুনরায় অস্ট্রিয়া ত্যাগের চেষ্টা করবেন না। স্বভাবতই তিনি হয়ে পড়েছিলেন অস্ট্রিয়ার বৈজ্ঞানিক স্বাধীনতার প্রতীক। তবে এখানেও সুখে থাকতে পারেননি। তার ইনস্টিটিউটের জন্য অর্থ সংস্থান কমে যায়। এমনকি তাকে পুনরায় অস্ট্রিয়ার বিজ্ঞান একাডেমির সদস্য হতে ঝামেলা পোহাতে হয়। কারণ মিউনিখ যাওয়ার কারণে তাকে এই সদস্যপদ ত্যাগ করতে হয়েছিল। ১৯০৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে তার স্ত্রী লাইপৎসিগে রয়ে যাওয়া কন্যা ইডাকে লিখেন, "তোমার বাবার অবস্থা দিনদিন আরও খারাপ হচ্ছে। সে আমাদের ভবিষ্যতের উপর আস্থা হারিয়ে ফেলেছে। আমি ভেবেছিলাম ভিয়েনায় জীবন ভাল হবে।" চোখের অবস্থা খারাপ হওয়ার কারণে বেশ কিছুকাল ধরে তার স্ত্রী বিভিন্ন গবেষণাপত্র পড়ে শোনাতেন। কিন্তু এ সময় অবস্থা এতোই খারাপ হয়ে যায় যে তাকে টাকা দিয়ে গবেষণাপত্র পড়ে শোনানোর জন্য একজন সেক্রেটারি রাখতে হয়, আর তার গবেষণাপত্রগুলো লিখে দেন স্বয়ং তার স্ত্রী। পাশাপাশি মাঝেমাঝেই তার হাঁপানির সমস্যা দেখা দিতে শুরু করে, বেশি কাজ করতে গিয়ে প্রচণ্ড মাথা ব্যথায় ভুগেন। এ সময় শিক্ষকতার কাজ ছিল এমন: তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের একটি কোর্সের জন্য সপ্তাহে ৫ ঘণ্টা, একই বিষয়ে একটি সেমিনার, এবং প্রতি ২ সেমিস্টার পরপর সপ্তাহে ১ ঘণ্টার আরেকটি কোর্স। উপরন্তু, ১৯০৩ থেকে তিনি সপ্তাহে দুই ঘণ্টার দর্শনের কোর্সটিও পড়ানো শুরু করেন, যেটি আগে মাখ পড়াতেন। এত চাপ তার সইছিল না। এ সময় বোলৎসমানের সবচেয়ে জনপ্রিয় লেকচার ছিল দর্শনের উপর লেকচারগুলো। তিনি ভেবেছিলেন, দর্শনই তার আসল জায়গা। প্রথম লেকচারে তার অভাবনীয় সাফল্য আসে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে বড় মিলনায়তন নির্বাচন করার পরও তার লেকচারে অনেককে আসন না পেয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। তার লেকচার উপলক্ষে কক্ষটি সাজানো হয় এবং লেকচারের পর শিক্ষার্থীরা প্রচুর সম্ভাষণ জানাতে থাকে। সকল সংবাদপত্রই খবরটি ছাপে। অস্ট্রিয়ার ফিরে আসার কারণে খুব খুশি হয়ে সম্রাট ফ্রানৎস-ইয়োসেফ বলেন, খবরের কাগজে তার লেকচার সম্পর্কে জেনেছেন। অবশ্য দু-তিনটি লেকচারের পর তার উৎসাহে ভাটা পড়ে, সেই সাথে শিক্ষার্থীদেরও। এতে তার মধ্যে ব্যর্থতার অনুভূতি আসে। এ সময় ফ্রানৎস ব্রেন্টানো-কে লেখা কিছু চিঠি থেকে জানা যায় লেকচারগুলো তার কাছে কত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। উল্লেখ্য, ব্রেন্টানো ভিয়েনায় দর্শন পড়াতেন, কিন্তু ক্যাথলিক ধর্মপ্রচারক হয়ে বিয়ে করার কারণে তাকে অস্ট্রিয়া ত্যাগে বাধ্য করা হয়। বোলৎসমান যখন চিঠিগুলো লিখেছেন তখন তিনি ইতালিতে ছিলেন। বোলৎসমান একবার এমন ভাব নিয়ে ফ্লোরেন্সে তার সাথে দেখা করার জন্য গিয়েছিলেন যে মনে হচ্ছিল তিনি তার মনঃরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে যাচ্ছেন। তখনও তিনি সন্ধ্যায় বন্ধু-বান্ধবের সাথে আড্ডা দিতেন। তথাপি ভোর ৫ টায়ও তাকে কাজ করতে দেখা যেতো। এটিও চরম হতাশার রোগে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ। এই রোগে আক্রান্তরা অনেক যখন ম্যানিক তথা পাগলামির দশায় থাকে তখন ভোরে ঘুম থেকে উঠে অনেক কাজ করে, আর হতাশার দশা আসার সাথে সাথে তার মাঝে অবসাদ এবং ঘুম ঘুম ভাব নেমে আসে। এমনটি হলে সে কাজের উৎসাহ হারিয়ে ফেলে, সকাল সকাল তার ঘুমকাতর চোখ দেখা যায় এবং সে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণ বোলৎসমান তিন বার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণে গিয়েছিলেন। ১৮৯৯ সালে প্রথম বারের মত যান, স্ত্রীকে সাথে নিয়ে। ব্রেমেন থেকে কাইজার ভিলহেল্ম ডের গ্রোসে জাহাজে চড়ে সাউদাম্পটন এবং Cherbourg হয়ে নিউ ইয়র্ক পৌঁছান। প্রথমে ম্যাসাচুসেটসের ক্লার্ক ইউনিভার্সিটি ইন ওরচেস্টারে বলবিদ্যার মৌলিক নীতি ও সূত্র নিয়ে চারটি লেকচার দেন। ক্লার্ক ইউনিভার্সিটি তখন ১০ম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন করছিল। এখানে তিনি সম্মানসূচক পিএইচডি ডিগ্রিও গ্রহণ করেন। এই ভ্রমণের সময় বোলৎসমান তার বাচ্চাদের উদ্দেশ্যে ৬টি চিঠি লিখেছিলেন। লিখেছিলেন, নিউ ইয়র্ক সিটি দেখে তিনি এবং হেনরিয়েটে দুজনেই মুগ্ধ, এখানে আছে ঘন ঘন ইলেকট্রিক ট্রাম, উপরে বাষ্প ইঞ্জিনের ট্রেন আর নিচে সুন্দর রাস্তা। বস্টন-কে তাদের বেশ ধূলিমাখা মনে হয়েছিল। এছাড়া তারা মন্ট্রিল, বাফেলো, ওয়াশিংটন ডিসি, বাল্টিমোর এবং ফিলাডেলফিয়া গিয়েছিলেন। শারীরিক ও মানসিক অবস্থা খারাপ থাকা সত্ত্বেও বোলৎসমান ১৯০৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট লুইসে একটি সম্মেলনে যোগ দিতে যান। এবার সাথে নেন ছেলে আর্থুর লুডভিগকে। উল্লেখ্য ১৯০১ সালে স্বাস্থ্য উদ্ধারের জন্য তিনি এই ছেলেকে নিয়েই ভূমধ্যসাগরে জাহাজ ভ্রমণে বেরিয়েছিলেন। এবার নিউ ইয়র্ক যান হামবুর্গ থেকে বেলগ্রাফিয়া নামক একটি জাহাজে করে। ১০ দিনের এই ভ্রমণ তার জন্য খুব কষ্টের ছিল, মূলত হর্নের আওয়াজে ঘুমাতে না পারার কারণে। এ সময় তারা ডেট্রয়েট ও শিকাগো যান, ফিরে আসেন ডয়েচলান্ড জাহাজে করে। ১৯০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র যান শেষবারের মত, একা। এবার ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া বার্কলি-র একটি গ্রীষ্মকালীন স্কুলে ৩০টি লেকচার দেন। অস্টভাল্ড এবং তিনি দুজনেই এই স্কুলের দাওয়াত পেয়েছিলেন। বোলৎসমানের Reise eines deutschen Professors ins Eldorado (এলদোরাদো-তে এক জার্মান অধ্যাপক) নামক রচনায় এই ভ্রমণের একটি চমৎকার বর্ণনা পাওয়া যায়। শেষবার আমেরিকায় থাকাকালে তিনি আবারও হাঁপানিতে আক্রান্ত হতে শুরু করেন। ক্যালিফোর্নিয়ার আবহাওয়া তার সহ্য হয়নি। বোলৎসমানের আগমন সম্পর্কে মার্কিন সংবাদপত্র The Daily California এ ধরনের খবর ছাপে: "প্রেসিডেন্ট হুইলার গ্রীষ্মকালীন স্কুলে নামীদামী অধ্যাপকদের আনার ব্যাপারে যে উদ্যোগ নিয়েছেন তা সাদরে গৃহীত হয়েছে। ইউনিভার্সিটি অফ ভিয়েনার তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক লুডভিগ বোলৎসমান তার নিমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন। তার গবেষণার ক্ষেত্রে বোলৎসমান পৃথিবীর সেরা বিজ্ঞানীদের অন্যতম। ভৌত রসায়নের জন্য অধ্যাপক আরহেনিয়ুস যা করেছেন তিনি গাণিতিক পদার্থবিজ্ঞানের জন্য তাই করেছেন।" বোলৎসমান তার ইংরেজি নিয়ে বেশ আত্মবিশ্বাসী ছিলেন। কিন্তু তার ইংরেজি লেকচার যারা শুনেছেন তাদের মন্তব্য সে কথা বলে না। অনেকেই তার ইংরেজির সমালোচনা করেছেন। একজন লিখেছেন, "তিনি জার্মান ভাষায় কথা বললে অধিকাংশ শ্রোতাই তাকে বুঝতে পারত। কিন্তু সপ্তাহে ৪ দিন করে তথাকথিত ইংরেজিতে বলেছেন এবং বলার বিষয়টি ছিল Mechanical Analogies of Thermodynamics with Special Reference to the Theorems of Statistical Mechanics"। বার্কলির সবাই এখনও তার ব্যাপারে খানিকটা ক্ষুব্ধ, এর একটি কারণ ছিল তার খাপছাড়া আচরণ এবং একজন জার্মান অধ্যাপক হয়ে দর্শকদের অতিরিক্ত মুগ্ধ করার জন্য বলা ইংরেজি। করুণ মৃত্যু লুডভিগ বোলৎসমান ১৯০৬ সালের ৫ই সেপ্টেম্বর ইতালির ত্রিয়েস্তের নিকটে দুইনো নামক একটি ছোট গ্রামে আত্মহত্যা করেন। এই গ্রামটি আড্রিয়াটিক সাগরের তীরে অবস্থিত। এখানে এসেছিলেন মূলত স্বাস্থ উদ্ধারের জন্য বেড়াতে, সপরিবারে। ৬ তারিখেই তাদের ভিয়েনা ফিরে যাওয়ার কথা ছিল। সম্ভবত, দুইনোতেও এতদিন থেকেও স্বাস্থ্যের বিশেষ কোন উন্নতি না হওয়ার কারণে তিনি আবার সেই চরম হতাশায় নিমজ্জিত হয়েছিলেন, নিজের বৈজ্ঞানিক কর্মদক্ষতা নিয়ে শংকিত হয়ে পড়েছিলেন এবং সেই তাড়না থেকেই নিজেকে মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কিন্তু যে ঘটনার সাথে এই আত্মহনন একেবারেই মেলানো যায় না তা হচ্ছে, মাত্র এক মাস আগেই তিনি ক্যালিফোর্নিয়া ভ্রমণ নিয়ে রসাত্মক একটি লেখা লিখেছিলেন। তবে সম্ভবত তিনি শেষ যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণে আরও হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। বার্কলির গ্রীষ্মকালীন স্কুল বা ভিয়েনার দর্শনের ক্লাস, কোথাওই লেকচারগুলো তার মনমত হয়নি। ছাত্রদের বর্ণনা থেকে বোঝা যায়, তিনি শিক্ষক হিসেবে খুবই উঁচু মানের ছিলেন এবং শিক্ষার্থীরা মনে করত লেকচার দিতে তার খুব ভাল লাগে। কিন্তু তার সেক্রেটারি স্টেফান মায়ারের ভাষ্য থেকে প্রমাণ পাওয়া যায়, বোলৎসমান লেকচার দেয়াকে খুবই কষ্টকর মনে করতেন এবং হঠাৎ কোন লেকচার বাতিল হলে খুশিই হতেন। কিন্তু প্রতিটি লেকচারেই নিজের সর্বোচ্চটা দেয়ার চেষ্টা করতেন, এবং বক্তৃতাটি সফল না হলে ভেঙে পড়তেন। ভিয়েনায় দর্শনের লেকচারগুলোর ক্ষেত্রে বোধহয় তার এমনটিই হয়েছিল। ক্যালিফোর্নিয়া ভ্রমণের কাহিনী রচনাটি ছিল তার জীবনের শেষ আনন্দের ছটা। কিন্তু বাইপোলার ডিসঅর্ডারের রোগীদের ক্ষেত্রে প্রায়ই আনন্দের পর হঠাৎ তীব্র হতাশা নেমে আসে। এক মাসের মধ্যেই তিনি এমন হতাশা এবং কষ্টে ভুগতে শুরু করেছিলেন যে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেন। তবে এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, সে সময় ভিয়েনার বুদ্ধিজীবীদের আত্মহত্যার ঘটনা খুব বেশি বিরল ছিল না। একটি অস্থির সময়ে নড়বড়ে রাজতন্ত্রের শাসনের ভেতরে থেকে ভিয়েনায় গড়ে উঠেছিল একটি শক্তিশালী স্বাধীন বুদ্ধিজীবী গোষ্ঠী। বোলৎসমানের মৃত্যুর বেশ কিছুকাল পরে এখানেই জন্মেছিল ভিয়েনা সার্কেল। কিন্তু আত্মহত্যা করেছিলেন অনেকেই। যেমন: অস্ট্রিয়ার রাজপুত্র রুডলফ যিনি সস্ত্রীক আত্মহত্যা করেছিলেন, লুডভিগ ভিটগেনস্টাইনের তিন ভাই, অটো ভাইনিংগার যিনি আত্মহত্যার কিছুদিন পূর্বেই সেক্স অ্যান্ড ক্যারেক্টার নামের একটি অসামান্য বই লিখেছিলেন, গীতিকবি গেয়র্গ ট্রাকল, গুস্তাফ মালারের ছোট ভাই অটো মালার, আলফ্রেড রেডল এবং স্থপতি এডুয়ার্ড ফান ডার নুল যে নিজ হাতে নির্মিত রাজকীয় অপেরা হাউজের সমালোচনা সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেছিলেন। তবে বোলৎসমানের আত্মহত্যার পূর্বে কিছু সুনির্দিষ্ট ঘটনা উল্লেখ করা যায় যেগুলো হয়থ তার হতাশায় ইন্ধন যুগিয়েছিল। ১৯০৬ সালের মে মাসে ইউনিভার্সিটি অফ ভিয়েনার দর্শন অনুষদের প্রধান মন্ত্রণালয়ের কাছে চিঠি লিখে জানান যে, বোলৎসমান নিউরাস্থিনিয়ায় ভুগছে এবং তার বৈজ্ঞানিক কাজ চালিয়ে যাওয়া উচিত নয়। তার চোখের অবস্থা ভাল যাচ্ছিল না। একজন বেনামী সাংবাদিকের কথা থেকে জানা যায়, ১৯০৫ সালের শেষ দিকে বোলৎসমানে মিউনিখে একটি মানসিক হাসপাতালে গিয়েছিলেন, কিন্তু অচিরেই মিউনিখ ছেড়ে ভিয়েনা চলে যান। তার ছাত্র লুডভিগ ফ্লাম (যিনি তার মেয়ে ইডাকে বিয়ে করেছিলেন) বলেন, "ছাত্র হিসেবে আমার বোলৎসমানের দেয়া শেষ লেকচারটি শোনার সৌভাগ্য হয়েছিল, ১৯০৫-০৬ মৌসুমের শীতকালীন সেমিস্টারে। মানসিক সমস্যার কারণে তিনি লেকচার বন্ধ করে দেন। আমি এবং আরেকজন ছাত্র তার ভেরিং-এর বাসায় মৌখিক পরীক্ষা দিয়ে পাশ করেছিলাম। পরীক্ষা শেষে আমরা যখন ফিরে আসছি তখন তার কাতর গোঙানির শব্দ শোনা যাচ্ছিল।" এ বছরেরই গ্রীষ্মকালীন সেমিস্টারে স্বয়ং মাখের মুখে শোনা যায়, তিনি সপরিবারে দুইনো গিয়েছিলেন তার স্ত্রীর একটি বহু পুরনো ইচ্ছা পূরণের উদ্দেশ্যে। তবে এ সময়ও তার অবস্থা খুব একটা ভাল ছিল না। ডি ৎসাইট পত্রিকার ৭ই সেপ্টেম্বর, ১৯০৬ এর একটি নিবন্ধে এমনটি বলা হয়েছিল, "দুইনোতে বোলৎসমান খুব চিন্তিত এবং উদ্বিগ্ন ছিলেন, বিশেষত ভিয়েনায় ফিরে আসার জন্য। তবে এছাড়া তার অবস্থা ছিল আগের তুলনায় ভাল। মৃত্যুর দিন তাকে খুব উৎফুল্ল দেখা গিয়েছিল। তার স্ত্রী এবং মেয়ে সাঁতার কাটতে গেলে তিনি আত্মহত্যার কাজটি করেন।" ডি ৎসাইটেরই আরেকটি লেখা থেকে জানা যায়, তিনি কিভাবে আত্মহত্যা করেছিলেন: কেসমেন্ট জানালার আড়াআড়ি দণ্ডের সাথে একটি ছোট রশি ঝুলিয়ে। তার মেয়েই তাকে প্রথম মৃত অবস্থায় আবিষ্কার করেছিল। তবে কোথায় আত্মহত্যা করেছেন তা নিয়ে দুই ধরনের কথা আছে। অধিকাংশের বর্ণামতে তার হোটেল রুমে, তবে আউগুস্তে ডিকের ভাষ্যমতে, বোলৎসমানের সহকর্মী, গণিতবিদ মের্টেন বলেছেন, বোলৎসমান দুইনোর গীর্জায় আত্মহত্যা করেছিলেন। তার মৃত্যুর পরও হেনরিয়েটে অনেকদিন বেঁচে ছিলেন, ১৯৩৮ সালের ৩রা ডিসেম্বর মারা যান। বোলৎসমানের মৃত্যুতে প্রচণ্ড আহত হয়েছিলেন এরভিন শ্রোডিঙার, তখন তার বয়স ছিল ১৯ বছর। তিনি বোলৎসমানের কাছে তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞান পড়ার ব্যাপারে খুব আগ্রহী ছিলেন। প্রচণ্ড আশাহত হয়েছিলেন দার্শনিক লুডভিগ ভিটগেনস্টাইন, তিনিও ১৯০৬ সালে লিনৎস ছেড়ে বোলৎসমানের কাছে শেখার পরিকল্পনা করছিলেন। উল্লেখ্য ভিটগেনস্টাইন তার সবচেয়ে বিখ্যাত গ্রন্থ Tractatus Logico-Philosophicus-এ হাইনরিশ হেরৎস ও বোলৎসমানের পদার্থবিজ্ঞান ও বিজ্ঞানের দর্শনের সাথে সারেন কিয়েরকেগর ও ল্যেভ তল্‌স্তোয়-এর নীতিবিদ্যা মেলানোর চেষ্টা করেছিলেন। দুইনোতে বোলৎসমানের মৃত্যুর কথা বলতে গিয়ে মুর দুইনোর-ই বিখ্যাত কবি রাইনার মারিয়া রিলকে-র তিনটি চরণ উদ্ধৃত করেন। বোলৎসমানের জীবনীকার কার্লো কেরচিনিয়ানি তার পূর্বে আরও দুটি চরণ যোগ করেন। এই পাঁচটি চরণ বোলৎসমানের মৃত্যুকালীন মনস্ততত্ত্বকেই তুলে ধরে। পদার্থবিজ্ঞানে অবদান thumb|right|200px|ভিয়েনার কেন্দ্রীয় সমাধিস্থলে বোলৎসমানের সমাধি। সমাধিফলকে এনট্রপির সূত্রটি মুদ্রিত আছে। এনট্রপি তাপগতিবিদ্যার দ্বিতীয় সূত্র এবং তাপীয় সাম্যাবস্থার সাথে সংশ্লিষ্ট সম্ভাব্যতা তত্ত্বের মধ্যে সম্পর্ক (১৮৭৭খ) গবেষণাপত্রে বোলৎসমান যা প্রকাশ করেছিলেন তাকে পরবর্তীতে আইনস্টাইন বোলৎসমান নীতি নামে আখ্যায়িত করেন। তিনি তার ১৮৭২ এর গবেষণাপত্রের ফলাফলগুলোকে এখানে আরও বিস্তৃত করেন এবং পরমাণুর বিশৃঙ্খলাকে এনট্রপির মাধ্যমে গণিতে প্রকাশ করেন। বোলৎসমানের আগে পদার্থবিজ্ঞানের পরমাণুর গঠন বিষয়ক কোন আলোচনা ছাড়াই পরমাণুর গতির বিশৃঙ্খলা নিয়ে গবেষণা করা হতো। আর যদি দেখা যেতো কোন প্রক্রিয়া ঘটা নিষেধ তাহলে সেটা ব্যাখ্যার জন্য এনট্রপি নিয়ে আসা হত। কিন্তু বোলৎসমান দেখান, এনট্রপি একটি ম্যাক্রো দশার সম্ভাব্যতা ছাড়া আর কিছুই নয়, যাকে আবার মাইক্রো পর্যায়ের সম্ভাব্যতার সাথে মেলানো যায়। অণুগুলোর সম্ভাব্যতা বর্ণনার মাধ্যমে ম্যাক্রো পর্যায়ে সম্ভাব্যতা বোঝার জন্য তিনি একটি সমীকরণ প্রণয়ন করেন যা ভিয়েনায় তার সমাধিফলকে মুদ্রিত আছে। এনট্রপির এই সমীকরণটি হচ্ছে: যেখানে  = 1.3806505(24) × 10−23 J K−1 হচ্ছে বোলৎসমান ধ্রুবক, Wahrscheinlichkeit, তথা একটি ম্যাক্রো দশা কতবার ঘটে তা। একে একটি ব্যবস্থার ম্যাক্রো দশার সাথে সংশ্লিষ্ট যতগুলো মাইক্রো অবস্থা আছে তা। মাক্স প্লাংক এই সমীকরণটির বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেছেন, "এনট্রপি এবং সম্ভাব্যতার মধ্যে লগারিদমিক সংযোগ প্রথম উত্থাপন করেছিলেন বোলৎসমান, তার গ্যাসের গতি তত্ত্ব বিষয়ক গবেষণায়"। বিশৃঙ্খলা হিসেবে তাপগতিবিদ্যার দ্বিতীয় সূত্র আমরা কেন কিছু ঘটনা একবারের বেশি বা একেবারেই দেখতে পাইনা তা বোলৎসমানের পরিসাংখ্যিক বণ্টন দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায় যে কাজটি তিনি নিজেই করেন। আগে এর ব্যাখ্যা দেয়া হত তাপগতিবিদ্যার দ্বিতীয় সূত্রের মাধ্যমে। এর পরপরই এনট্রপি ধারণার জন্ম হয়েছিল। আসলে সে সময় বাষ্প ইঞ্জিনের ব্যবহার বাড়তে থাকায় তাপগতিবিদ্যার সাথে গালিলেও গালিলেই এবং আইজাক নিউটন দের চিরায়ত গতিবিদ্যার সমন্বয় সাধন অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়েছিল। এই সমন্বয় তৈরি করা হয়েছিল গ্যাসের গতীয় তত্ত্বের মাধ্যমে এনট্রপি যার একটি ফসল। স্টোস-ৎসাল-আনসাৎস এবং আরগডিক অনুকল্প বোলৎসমান সমীকরণ ১৮৭২ সালে গ্যাস অণুর তাপীয় সাম্যাবস্থা বিষয়ে নতুন গবেষণা নামক গবেষণাপত্রে বোলৎসমান গ্যাস অণুর বণ্টন নিয়ে তার সবচেয়ে বিখ্যাত সমীকরণ প্রকাশ করেন যা বোলৎসমান সমীকরণ নামে পরিচিত। পাশাপাশি, এতেই প্রথমবারের মত ম্যাক্রো তথা বৃহৎ পরিমণ্ডলে অপ্রত্যাবর্তী প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করেন। এতে সম্ভাবনার মাধ্যমে অপ্রত্যাবর্তী প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করাটা ছিল বৈপ্লবিক। গ্যাস অণুগুলোর মধ্যে অসংখ্য সংঘর্ষ হয় এবং একটি সংঘর্ষ থেকে আরেকটি সংঘর্ষের দূরত্ব খুবই কম, এক মিলিমিটারের প্রায় ১০ লক্ষ ভাগের এক ভাগ। অণুগুলোর এই মিথস্ক্রিয়া অসংখ্যভাবে হতে পারে। মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে তারা ধীরে ধীরে বিশৃঙ্খল হবে এবং এই বিশৃঙ্খল হওয়ার জন্য অসংখ্য প্রক্রিয়া রয়েছে, অর্থাৎ তারা অসংখ্য প্রক্রিয়ায় বিশৃঙ্খল হতে পারে। তাই শুরুতে কিছু অণুর অবস্থান বা বেগ সামান্য পরিবর্তন করলে শেষ দশায় তেমন কোন পরিবর্তন হবে না। কিন্তু এই বিশৃঙ্খল গ্যাস অণুগুলোকে আবার শুরুর অবস্থায় ফিরিয়ে আনার সম্ভাবনা হবে খুবই কম। বিশৃঙ্খল হওয়ার অসংখ্য প্রক্রিয়া থাকলেও পুনরায় শৃঙ্খলিত হওয়ার প্রক্রিয়া কেবল একটি, বা খুবই কম সংখ্যক। অর্থাৎ অণুগুলোকে আবার আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা তাত্ত্বিকভাবে অসম্ভব নয়, কিন্তু খুবই অসম্ভাব্য। অসম্ভব এর বদলে অসম্ভাব্য শব্দের ব্যবহারের মাধ্যমেই বোলৎসমান পরিসাংখ্যিক বলবিদ্যার জন্ম দেন। বোলৎমান এমন একটি সমীকরণ লিখেছিলেন যার মাধ্যমে একটি গ্যাস অণুর কোন সময়ে একটি নির্দিষ্ট বেগ এবং অবস্থানে থাকার সম্ভাবনা নির্ণয় করা যায়। একটি ঘরের মধ্যকার গ্যাস অণু থেকে শুরু করে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশোদ্যত মহাকাশ খেয়াযান পর্যন্ত সবকিছুর ক্ষেত্রেই এই সমীকরণ প্রয়োগ করা যায়। সমীকরণটির গাণিতিক রূপ হচ্ছে: যেখানে, হচ্ছে কণার বণ্টন অপেক্ষক (ডিস্ট্রিবিউশন ফাংশন) যা একটি নির্দিষ্ট সময়ের কণার অবস্থান ও ভরবেগ নির্দেশ করে। কণার উপর প্রযুক্ত বল, কণার বেগ, কণার ভর এবং t হচ্ছে সময়। আবিষ্কারের পরপর বোলৎসমান ঠিক বুঝতে পারেননি তিনি কি অর্জন করেছেন। তিনি ভেবেছিলেন চিরায়ত বলবিদ্যার গণ্ডির মধ্যে থেকেই তিনি নতুন কিছু একটা করেছেন। এর প্রমাণ পাওয়া যায় তার গবেষণাপত্রের শুরুর কথাগুলোতে, "এটা মনে করা ভুল হবে যে, সম্ভাব্যতার তত্ত্ব ব্যবহার করেছি বলে বলবিদ্যায় তাপের তত্ত্ব অনিশ্চয়তা হয়ে পড়বে... বরং বোঝা উচিত, এখন থেকে উপসংহারে পৌঁছার ক্ষেত্রে আরও সতর্ক হতে হবে।" কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তিনি চিরায়ত নিয়ম ভেঙে একেবারে সম্ভাব্যতার নতুন যুগ শুরু করেছিলেন। শুরুতে বোলৎসমান ভাবছিলেন, চিরায়ত নিয়মের কিছু ব্যতিক্রম হয়ত তিনি বুঝতে পেরেছেন। কিন্তু তার তত্ত্বে সম্ভাবনার ব্যবহার ছিল অনেক বেশি। দেখা যাচ্ছে, তার সমীকরণ যতটা বৈপ্লবিক ছিল তিনি নিজেও ১৮৭২ সালে ততটা বৈপ্লবিক কথা বলেননি। তবে সমীকরণের অব্যর্থতা বোঝা যায় তার সহকর্মীদের প্রতিক্রিয়া দেখে। প্রায় সবাই তার তত্ত্বকে পরিবর্তন করতে বলেছিলেন, বলেছিলেন তিনি যেন এসব ছেড়ে অন্য দৃষ্টিকোণ থেকে চিন্তা করেন। বোলৎসমানের দর্শন মূলধারার দর্শনে লুডভিগ বোলৎসমানের কোন যুগান্তকারী অবদান নেই, কারণ তিনি ছিলেন মূলত গাণিতিক পদার্থবিজ্ঞানী। কিন্তু দর্শন বিষয়ে তিনি বিস্তর পড়াশোনা করেছিলেন এবং একটি নিজস্ব দার্শনিক চিন্তাধারার জন্মও দিয়েছিলেন। দার্শনিক দিক দিয়ে তিনি ছিলেন পুরোদস্তুর বাস্তববাদী এবং বস্তুবাদী। অবশ্য বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির মূলেই রয়েছে এই বাস্তববাদ। তার দার্শনিক চিন্তাধারা লিপিবদ্ধ আছে তার লেখা জনগণের প্রতি নামক বইটিতে। ১৯০৩ সালের দিকে ভিয়েনায় দার্শনিক হিসেবেও তিনি স্বীকৃত ছিলেন, যার প্রমাণ পাওয়া যায় আর্নস্ট মাখের অবসর গ্রহণের পর বিজ্ঞানের দর্শন বিষয়ক একটি পদে তাকে নিয়োগদান। শিক্ষক হিসেবে বোলৎসমান গ্রাৎসে তার শিক্ষকতার মূল বিষয় ছিল পরীক্ষণমূলক পদার্থবিজ্ঞান। এখানে তিনি তাত্ত্বিক ধারণা ব্যাখ্যার জন্য যান্ত্রিক নমুনা ব্যবহার করতেন। যেমন, ম্যাক্সওয়েলের তড়িচ্চুম্বকীয় তত্ত্ব ব্যাখ্যার জন্য তিনি বিসিকেল (সাইকেল) নামে একটি যন্ত্র উদ্ভাবন করেন। দুটি তড়িৎ বর্তনীর পারষ্পরিক প্রভাব ব্যাখ্যার জন্য এটি খুবই কার্যকর একটি যন্ত্র ছিল। যন্ত্রটি বানানোর দায়িত্ব দিয়েছিলেন গ্রাৎসের প্রধান মেকানিক গাস্টাইগারকে। যন্ত্রটি সম্পর্কে বোলৎসমানের ছাত্র এরেনফেস্ট ১৯০৬ সালে তার মৃত্যুর পর শোকবাণীতে বলেছিলেন, চলন এবং বিভিন্ন বলের ক্রিয়া পরিষ্কারভাবে উত্থাপন করাটা বোধহয় বোলৎসমানের কাছে নৈসর্গিক আনন্দের বিষয় ছিল। আর্নল্ড সমারফেল্ড বলেছিলেন, "মিউনিখে আমার প্রাক্তন বিভাগের পাশে বোলৎসমানের বিসিকেলের একটি নমুনা সংরক্ষিত ছিল যা তার আদেশেই বানানো হয়েছিল।... তবে এটি তড়িৎগতিবিদ্যার চেয়ে যন্ত্রকৌশলের কাজে বেশি ব্যবহৃত হতো।" এই বিসিকেলের দুটি নমুনা ছিল, একটি গ্রাৎসে, অন্যটি মিউনিখে। যুদ্ধের সময় দুটিই হারিয়ে যায়। ১৯৮৫ সালে বোলৎসমানের উদ্দেশ্যে নিবেদিত এবটি প্রদর্শনী উপলক্ষে গ্রাৎসে যন্ত্রটির একটি নকল তৈরি করেন তৎকালীন প্রধান মেকানিক কুর্ট আন্সপের্গার। মিউনিখে থাকার সময় বোলৎসমানের শিক্ষকতার একজন সাক্ষী হানতারো নাগাওকা। নাগাওকার চিঠি থেকে বোলৎসমানের শিক্ষকতা জীবন সম্পর্কে যা যা জানা যায় তা হচ্ছে: "তিনি সেখানে গ্যাসের গতি তত্ত্ব এবং পদার্থবিজ্ঞানে হ্যামিল্টনের নীতির প্রয়োগ বিষয়ে পড়াতেন। তার মতে হেল্মহোলৎস ছাড়া বোলৎসমানের মত শিক্ষক আর নেই, তবে বোলৎসমান হেল্মহোলৎসের তুলনায় অনেক স্পষ্টভাবে কথা বলেন, তার কথা সহজেই বোঝা যায়। কিন্তু মাঝে মাঝে বোলৎসমানের কিছু কাজে বুদ্ধিহীনতার লক্ষণ দেখা যায়। তিনি ম্যক্সওয়েলকে অনেক পছন্দ করেন, তার লেকচারগুলো ম্যক্সওয়েলীয় ধারায় গড়া। তিনি এমন একজন মানুষ যাকে সবারই ভালবাসতে পারার কথা।" বোলৎসমান তার ক্লাসে কোন দরিদ্র ছাত্র অকৃতকার্য হলে নিজেকেই দোষী মনে করতেন। জীবনের শেষ বছরগুলোতে তার ক্লাসে কোন ছাত্র কোনদিন অকৃতকার্য হয়নি। তার লেকচারগুলো ছিল খুব প্রাণবন্ত, সময় সময় অনেক স্থূল উদাহরণ দিয়ে বোঝাতেন। তার ক্লাসে শিক্ষার্থীরা যেকোন ধরনের প্রশ্ন করতে পারত, এমনকি তার সমালোচনাও করতে পারত। কোন একটি ধারার প্রতি পক্ষপাতিত্ব তিনি সমর্থন করতেন না, বিজ্ঞান বা দর্শন কোনকিছুতেই নয়। শিক্ষার্থীদের সাথে তার সম্পর্কও ছিল খুব আন্তরিক। তার সাথে দূরত্ব বা অতিভক্তি বজায় রেখে কথা বলতে হতো না কারও। লিজে মাইটনারের লেখা থেকে জানা যায় তিনি শিক্ষার্থীদের সাথে ব্যক্তিগত সম্পর্ক স্থাপনে বিশ্বাস করতেন, তাদের প্রশংসা করতেন এবং চরিত্র বোঝার চেষ্টা করতেন। সময় সময় তাদেরকে নিজের বাসায় নিমন্ত্রণ করতেন এবং নিজে পিয়ানো বাজিয়ে শোনাতেন। বোলৎসমানের ব্যক্তিত্ব বোলৎসমান প্রকৃতি খুব ভালবাসতেন। প্রায়শই বাগানে হাঁটতে বেরোতেন, হাঁটতে হাঁটতে তার বাচ্চাদেরকে বিভিন্ন গাছগাছালি চিনিয়ে দিতেন। অন্যান্য অধ্যাপকদের মত বোলৎসমানকেও পদার্থবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট থেকে একটি বাড়ি দেয়া হয়েছিল। কিন্তু এর বাইরে তিনি ওবেরক্রোইসবাখের নিকটে একটি খামাড় বাড়ি ক্রয় করেন। সেখান থেকে স্টিরিয়ার গ্রামাঞ্চল দেখা যেতো, পরিবারের সাথে তিনি এই বাড়িতেই থাকতেন। গাছগাছালি খুব ভাল চিনতেন। নিজ বাড়িতে বাগান করেছিলেন, এমনকি প্রজাপতিও সংগ্রহ করতেন। ছোটবেলায় তিনি খুব একটা শরীর চর্চা করার সুযোগ পাননি। এজন্য নিজের বাড়িতে ব্যায়ামের কিছু উপকরণ কিনে রেখেছিলেন যাতে তার বাচ্চারা তা থেকে বঞ্চিত না হয়। নিজের পড়ার ঘর থেকে বাইরের পরিবেশ দেখতে পেতেন। তার প্রতিবেশী সবাই ছিল কৃষক। তার একটি অ্যালসেশিয়ান কুকুর ছিল। প্রতিদিন যখন বোলৎসমানের কাজ শেষের পথে তখন কুকুরটি খামাড় বাড়ি থেকে বেরিয়ে ইনস্টিটিউটে চলে আসত। তার জন্য অপেক্ষা করত। বোলৎসমান এলে তার সাথে সাথে পাশের একটি পাবে যেতো। তিনি যখন দুপুড়ের খাবার খেতেন তখন কুকুরটি তার পায়ের সাথে বসে থাকত। বোলৎসমান এমনকি একটি গাভীও কিনেছিলেন। মাঝেমাঝেই তাকে গাভীটিকে নিয়ে গ্রাৎসের রাস্তায় হাঁটতে দেখা যেতো। কারণ তিনি প্রাণিবিজ্ঞানের সহকর্মীদের কাছ থেকে শুনেছিলেন এটাই কুকুরের দুধ দোয়ানোর সর্বোত্তম পন্থা। বোলৎসমান খেতেন খুব আস্তে আস্তে, সম্ভবত মায়োপিয়া থাকার কারণে। রাজবাড়িতে আমন্ত্রণে গেলে সমস্যা হতো তার। কারণ রাজবাড়িতে নিয়ম হচ্ছে রাজার খাওয়া শেষ হওয়ার পর কেউ খেতে পারবে না। দেখা যেতো বোলৎসমান ঠিকমতো খাওয়া শুরুর আগেই বাবুর্চি তার চোখের সামনে দিয়ে সব খাবার নিয়ে চলে যেতো। তিনি নিজের বাচ্চাদের খুব পছন্দ করতেন। একবার তার ছোট মেয়ে একটি পোষা বানর কিনতে চেয়েছিল। তার মা এতে একেবারেই রাজি হয়নি। কিন্তু বোলৎসমান তার আবদার কিছুটা হলেও মেটাতে তাকে খরগোশ কিনে দেন এবং খরগোশগুলোর জন্য নিজের গ্রন্থাগারে একটি খাঁচাও স্থাপন করে দেন। বোলৎনমানের প্রিয় শখের মধ্যে ছিল বরফে স্কেটিং, হাঁটা এবং সাঁতার কাটা। সন্ধ্যায় বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতেও পছন্দ করতেন। নিজের বাড়িতে অনুষ্ঠানের আয়োজন করতেন এবং তাতে তার পিএইডি শিক্ষার্থীদেরকেও আমন্ত্রণ করতেন। অনুষ্ঠানে প্রথম বক্তৃতা দিতেও তার জুড়ি ছিল না। কারণ তিনি ভাল কৌতুক করতে পারতেন, মাঝেমাঝে ব্যঙ্গাত্মক কবিতাও লিখতেন যার মধ্যে একটি হচ্ছে Beethoven im Himmel বা স্বর্গে বেটোফেন। শিল্পজ্ঞান এবং কবিতা ধ্রুপদী জার্মান সাহিত্য সম্পর্কে বোলৎসমান অনেক জানতেন। মাঝেমাঝে বিভিন্ন সাহিত্যিকের লেখা থেকে উদ্ধৃতিও দিতেন। তার Populdre Schriften (জনগণের প্রতি) নামের বইটি উৎসর্গ করেছিলেন বিখ্যাত জার্মান কবি ফ্রিডরিশ শিলারের উদ্দেশ্যে। শিলারই সম্ভবত লুডভিগের প্রিয় কবি ছিলেন। কারণ শিলার ব্যক্তিস্বাধীনতার কথা বলতেন এবং সৌন্দর্য্যকে কখনও নৈতিকতা থেকে আলাদা করতেন না। সঙ্গীতজ্ঞদের মধ্যে তার প্রিয় ছিল লুডভিগ ফান বেটোফেন। বেটোফেনের গান পিয়ানোতে বাজাতে খুব পছন্দ করতেন তিনি। ছেলে আর্থুরকে সাথে নিয়ে কখনও কখনও চেম্বার সঙ্গীত বাজাতেন। কনসার্টে যেতে পছন্দ করতেন এবং ভিয়েনার অপেরা মঞ্চের নিয়মিত দর্শক ছিল। জীবনের শেষ ৫-৬ বছরে বোলৎসমান বেটোফেনকে নিয়ে একটি কবিতা লিখেছিলেন যার নাম বেটোফেন ইম হিমেল (লাতিন বর্ণমালায়: Beethoven im Himmel)। কবিতার বিষয়বস্তু ছিল মানব জীবনের কষ্ট এবং মৃত্যুর আকাঙ্ক্ষা। একে তিনি Scherzgedicht তথা ব্যঙ্গাত্মক কবিতা হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন। কবিতার প্রথমে দেখা যায়, বোলৎসমান পৃথিবীর দুঃখ-কষ্ট এবং পীড়ন আর সহ্য করতে না পেরে মৃত্যু কামনা করছেন। এর সাথে তার ব্যক্তি জীবনও মিলে যায়, কারণ তিনি সে সময় মৃত্যুই চাচ্ছিলেন। কিন্তু এক সময় ভাষা ব্যঙ্গাত্মক রূপ নেয়। দেখা যায়, তার প্রার্থনা ঈশ্বর শুনেছে, তিনি মারা গেছেন। মৃত্যুর পর তার আত্মা স্বর্গে আরোহণ করছে। পথে তিনি আরও অনেক বিশ্বের সন্ধান পান, কিন্তু স্বর্গই মূল লক্ষ্য হওয়ায় ভ্রুক্ষেপ করেননা সেদিকে। অবশেষে স্বর্গে পৌঁছালে পর পরী ও ঈশ্বরের বার্তাবাহকেরা তাকে গান গেয়ে শোনায়। সেই গান তার কাছে বড় একঘেয়ে লাগে। গানটি আরও কিছুক্ষণ শোনার পর তিনি এর সাথে বেটোফেনের সুরের সামঞ্জস্য লক্ষ্য করেন। পরীদের কাছ থেকে জানতে পারেন, গানটি ঈশ্বরের আদেশে বেটোফেনই লিখেছেন। এই প্রেক্ষিতে বোলৎসমান বেটোফেনের সাথে দেখা করতে চান এবং পরীরা তাকে সে পথে নিয়ে যায়। সাক্ষাতে বেটোফেন তাকে জিজ্ঞেস করেন গানটি তার ভাল লেগেছে কিনা। তিনি নিরব থাকেন। বেটোফেন বলতে উৎসাহ দিলে তিনি জানান, তার এখানকার গানগুলো পৃথিবীর মত ভাল লাগছে না। উত্তরে বেটোফেন বলেন, তিনি স্বর্গে এসে গান লেখা ছেড়ে দিয়েছিলেন। কারণ এখানে তার সৃজনশীলতা নষ্ট হয়ে গেছে, তার গান এবং সুরের মূল অনুপ্রেরণা ছিল মানুষের বেদনা। সেই বেদনাই যখন নেই তখন গানও নেই। কেবল শেষ বিচার বলে কিছু একটা আছে বলেই তিনি ঈশ্বরের আদেশে এই গানটি লিখেছেন। তিনি বোঝান যে, পৃথিবীতে বিরাজমান বেদনাই আমাদের মানবীয় অনুভূতির মূল উপজীব্য। এসব শোনার পর বোলৎসমান মানব জীবনের আয়রনি বুঝতে পারেন। তার কবিতার শেষ পংক্তিগুলো এমন: ঘণ্টা খানেক পূর্বে তিনি বেদনামুক্তির আশায় মৃত্যু প্রার্থনা করছিলেন। অথচ স্বর্গে এসে সেই মানুষই পৃথিবীর বেদনা ফিরে পেতে আকুতি করে। বিজ্ঞান এবং দর্শনে বোলৎসমানের প্রভাব রচনাসমূহ বোলৎসমানের রচনাগুলোকে চারটি সময় ভাগ করা যায়। প্রথম সময়কালটি হচ্ছে গঠনের কাল, ১৮৬৬ থেকে ১৮৭১ সাল পর্যন্ত। ১৮৬৮ থেকে ১৮৭১ পর্যন্ত প্রকাশিত পেপারগুলোতে ম্যাক্সওয়েলের প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। ম্যক্সওয়েল পড়ার পরই তিনি এগুলো লিখেছিলেন। এগুলোতে তাপীয় সাম্যাবস্থায় থাকা গ্যাসের বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে, সম্ভাবনাভিত্তিক বিন্যাসের সাহায্যে। তবে তিনি আরও সাধারণ তত্ত্বে উপনীত হওয়ার চেষ্টা করছিলেন, যেমন এক সময়ে বাইরে থেকে প্রযুক্ত বল এবং বহু-পরমাণু গ্যাসের উল্লেখ শুরু করেন। সম্ভাবনার বিভিন্ন ধারণা নিয়ে কথা বলেছেন এগুলোতে, যেমন: কালিক গড়, কণা গড়, বা এনসেম্বল গড়। এই গবেষণাপত্রগুলোর মূল ফলাফল ছিল, Stoßzahlansatz (সমভাবাপন্ন অনুমিতি) এর আলোকে ম্যক্সওয়েলের বণ্টন অপেক্ষক স্থিতিশীল, বা সাম্যাবস্থায় থাকে। অবশ্য এই সময়ে তিনি একেবারে ভিন্ন একটি পদ্ধতিও প্রয়োগ করেন যা স্টোসৎসালআনসাৎস-এর উপর নির্ভর করে না, বরং এর্গোডিক অনুকল্পের উপর নির্ভর করে। এতে একটি নতুন বণ্টন অপেক্ষকের জন্ম হয় সীমায় যা ম্যক্সওয়েলীয় বণ্টনে পরিণত হয়। এ সময় এনসেম্বল এর ধারণাও দেন, কিন্তু ৮০-র দশকের আগে তা গুরুত্ব পায়নি। গবেষণাপত্র ও বইয়ের তালিকা ১৮৬৬, Über die Mechanische Bedeutung des Zweiten Hauptsatzes der Wärmetheorie (তাপগতিবিদ্যার দ্বিতীয় সূত্রের বলবিদ্যাগত গুরুত্ব সম্পর্কে), Wiener Berichte, 53: 195–220 ১৮৬৮, Studien über das Gleichgewicht der lebendigen Kraft zwischen bewegten materiellen Punkten (দুটি গতিশীল পদার্থ বিন্দুর মধ্যে গতিশক্তির ভারসাম্য প্রসঙ্গে), Wiener Berichte, 58: 517–560 ১৮৭১(ক), Über das Wärmegleichgewicht zwischen mehratomigen Gasmolekülen (বহুআণবিক গ্যাস অণুর তাপীয় সাম্যাবস্থা প্রসঙ্গে), Wiener Berichte, 63: 397–418 ১৮৭১(খ), Einige allgemeine Sätze über Wärmegleichgewicht (তাপীয় সাম্যাবস্থা বিষয়ে কিছু সাধারণ উপপাদ্য), Wiener Berichte, 63: 679–711 ১৮৭১(গ), Analytischer Beweis des zweiten Haubtsatzes der mechanischen Wärmetheorie aus den Sätzen über das Gleichgewicht der lebendigen Kraft (গতিশক্তির সাম্যাবস্থা বিবেচনার মাধ্যমে তাপগতিবিদ্যার দ্বিতীয় সূত্রের একটি তাত্ত্বিক প্রমাণ), Wiener Berichte, 63: 712–732 ১৮৭২, Weitere Studien über das Wärmegleichgewicht unter Gasmolekülen (গ্যাস অণুর তাপীয় সাম্যাবস্থা বিষয়ে নতুন গবেষণা), Wiener Berichte, 66: 275–370 ১৮৭৭(ক), Bermerkungen über einige Probleme der mechanische Wärmetheorie (তাপগতিবিদ্যার সূত্রসমূহের সমস্যা বিষয়ে কিছু মন্তব্য), Wiener Berichte, 75: 62–100 ১৮৭৭(খ), Über die beziehung dem zweiten Haubtsatze der mechanischen Wärmetheorie und der Wahrscheinlichkeitsrechnung respektive den Sätzen über das Wärmegleichgewicht (তাপগতিবিদ্যার দ্বিতীয় সূত্র এবং তাপীয় সাম্যাবস্থার সাথে সংশ্লিষ্ট সম্ভাব্যতা তত্ত্বের মধ্যে সম্পর্ক), Wiener Berichte, 76: 373–435 ১৮৮১, Referat über die Abhandlung von J.C. Maxwell: "Über Boltzmann's Theorem betreffend die mittlere verteilung der lebendige Kraft in einem System materieller Punkte" (ম্যাক্সওয়েলের গবেষণাপত্র, "পদার্থ বিন্দুর গড় গতিশক্তির বণ্টনের উপর বোলৎসমানের তত্ত্ব প্রসঙ্গে", বিষয়ে), Wied. Ann. Beiblätter, 5: 403–417 ১৮৮৪, Über die Eigenschaften Monocyklischer und andere damit verwandter Systeme (একচাক্রিক এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে), Crelles Journal, 98: 68–94 ১৮৮৭(ক), Neuer Beweis zweier Sätze über das Wärmegleichgewicht unter mehratomigen Gasmolekülen (বহু-পরমাণবিক গ্যাসে তাপীয় সাম্যাবস্থার দুটি উপপাদ্যের নতুন প্রমাণ), Wiener Berichte, 95: 153–164 ১৮৮৭(খ), Über einige Fragen der Kinetische Gastheorie (গ্যাসের গতি তত্ত্ব বিষয়ে কিছু প্রশ্ন), Wiener Berichte, 96: 891–918 ১৮৯২, III. Teil der Studien über Gleichgewicht der lebendigen Kraft (৩. গতিশক্তির ভারসাম্য বিষয়ক গবেষণার অংশ), Münch. Ber., 22: 329–358 ১৮৯৫(ক), On certain questions in the theory of gases (গ্যাসের তত্ত্বের উপর কিছু প্রশ্ন নিয়ে), নেচার, 51: 413–415 ১৮৯৫(খ), On the minimum theorem in the theory of gases (গ্যাসের তত্ত্বে ন্যূনতম উপপাদ্য বিষয়ে), নেচার, 52: 221 ১৮৯৬(ক), Vorlesungen über Gastheorie: Vol I (গ্যাস তত্ত্ব বিষয়ক লেকচার), লাইপৎসিগ, প্রকাশক - ইয়োহান আমব্রোসিয়ুস বার্থ; ১৮৯৬(খ), Entgegnung an die wärmetheoretischen Betrachtungen des Hrn. E. Zermelo (জনাব আর্নস্ট সেরমেলো-র তাপের তাত্ত্বিক বিশ্লেষণের উত্তরে), Wied. Ann., 57: 772–784 ১৮৯৭(ক), Zu Hrn Zermelos Abhandlung "Über die mechanische Erklärung irreversibler Vorgänge" (ৎসেরমেলোর রচনা "অপ্রত্যাবর্তী প্রক্রিয়ার বলবিদ্যামূলক ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে"-এর উপর), Wied. Ann., 60: 392–398 ১৮৯৭(খ), Über einige meiner weniger bekannte Abhandlungen über Gastheorie und deren Verhältnis zu derselben (গ্যাস তত্ত্ব এবং এ সম্পর্কিত আমার অপেক্ষাকৃত কম পরিচিত কিছু গবেষণাপত্র প্রসঙ্গে), Verh. des 69. Vers. Deutschen Naturf. und Ärzte, Braunschweig, 19–26 ১৮৯৭(গ), Über die Unentbehrlichkeit der Atomistik in der Naturwissensschaft (বিজ্ঞানে পরমাণু তত্ত্বের গুরুত্ব সম্পর্কে), Annalen der Physik und Chemie, 60: 231 ১৮৯৭(ঘ), Über die Frage der objektiven Existenz der Vörgange in der unbelebten Natur (নিষ্প্রাণ প্রকৃতির বিভিন্ন প্রক্রিয়ার নৈর্বক্তিক অস্তিত্ব প্রসঙ্গে), Wiener Berichte, 106: 83 ১৮৯৮(ক), Vorlesungen über Gastheorie: Vol II (গ্যাস তত্ত্ব বিষয়ক লেকচার), লাইপৎসিগ, বার্থ; ২ খণ্ড একসাথে ইংরেজিতে অনুবাদ করেন এস জি ব্রাশ, Lectures on Gas Theory, ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া বার্কলি প্রেস। ১৮৯৮(খ), Über die sogenannte H-Kurve (তথাকথিত এইচ-বক্ররেখা সম্পর্কে), Math. Ann., 50: 325–332 ১৯০৪, (J. Nabl-র সাথে), Kinetische theorie der Materie (পদার্থের গতিবিদ্যা), Encyclopädie der Mathematischen Wissenschaften, Volume V/1, pp. 493–557. ১৯০৫, Populäre Schriften (জনগণের প্রতি), লাইপৎসিগ, ইয়োহান বার্থ পুরস্কার এবং সম্মাননা তথ্যসূত্র আরও দেখুন বোলৎসমান সমীকরণ বোলৎসমান সূচক ম্যাক্সওয়েল-বোলৎসমান বণ্টন বোলৎসমান ধ্রুবক বহিঃসংযোগ Ruth Lewin Sime, Lise Meitner: A Life in Physics ১ম অধ্যায়: Girlhood in Vienna, বোলৎসমানের জীবন ও কর্ম সম্পর্কে তার ছাত্রী লিজে মাইটনারের বক্তব্য। লুডভিগ বোলৎসমান, উনিফেরসিটেট ভিয়েন। আলি ইফতেখারি, লুডভিগ বোলৎসমান (১৮৪৪-১৯০৬) সায়েন্সওয়ার্ল্ডে জীবনী বিষয়শ্রেণী:১৮৪৪-এ জন্ম বিষয়শ্রেণী:১৯০৬-এ মৃত্যু বিষয়শ্রেণী:অস্ট্রীয় পদার্থবিজ্ঞানী বিষয়শ্রেণী:অস্ট্রীয় দার্শনিক বিষয়শ্রেণী:ভিয়েনার ব্যক্তি বিষয়শ্রেণী:লুডভিগ বোলৎসমান বিষয়শ্রেণী:গণিতবিদ যিনি আত্মহত্যা করেছেন
লুডভিগ বোলৎসমান
thumb|300px|পশ্চিমবঙ্গের জেলাসমূহ ভারতীয় ইউনিয়নের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তে নেপাল, ভুটান, বাংলাদেশ (অতীতের পূর্ববাংলা) এবং ভারতের বিহার, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা, অসম ও সিকিম রাজ্য অবস্থিত। রাজ্যের উত্তরে হিমালয় পর্বতমালা ও দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর অবস্থিত। এর মধ্যবর্তী অঞ্চলে গঙ্গা পূর্বমুখে এবং তার শাখানদী হুগলি দক্ষিণে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে। রাজ্যের উত্তরবঙ্গ অঞ্চলে অবস্থিত শিলিগুড়ি করিডোর উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গে দেশের মূল ভূখণ্ডের সংযোগ রক্ষা করছে। পশ্চিমবঙ্গ একাধিক ভৌগোলিক অঞ্চলে বিভক্ত। যেমন, দার্জিলিং হিমালয় পার্বত্য অঞ্চল, তরাই ও ডুয়ার্স অঞ্চল, রাঢ় অঞ্চল, পশ্চিমের উচ্চভূমি ও মালভূমি অঞ্চল, উপকূলীয় সমভূমি অঞ্চল, সুন্দরবন এবং গাঙ্গেয় বদ্বীপ অঞ্চল। ১৯৪৭ সালে, যখন ভারত স্বাধীনতা লাভ করে, তখন ব্রিটিশ ভারতের বাংলা প্রদেশ বিভাজনের পরিকল্পনা অনুযায়ী উক্ত প্রদেশের ১৪টি জেলা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য গঠিত হয়। ১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দের ২৬ জানুয়ারি পূর্বতন দেশীয় রাজ্য কোচবিহার একটি জেলা রূপে পশ্চিমবঙ্গের অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দে পূর্বতন ফরাসি উপনিবেশ চন্দননগর রাজ্যের হুগলি জেলার একটি অংশরূপে যুক্ত হয়। ১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দে রাজ্য পুনর্গঠন আইন অনুযায়ী, পুরুলিয়া জেলার বঙ্গভুক্তি ঘটে এবং বিহারের অপর একটি অংশ পশ্চিম দিনাজপুরের সঙ্গে যুক্ত হয়। পরবর্তীকালে পশ্চিম দিনাজপুর, মেদিনীপুর, চব্বিশ পরগনা, ও জলপাইগুড়ি জেলার মতো বৃহদাকার জেলাগুলিকে দ্বিধাবিভক্ত করা হয়। বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ ৫টি বিভাগ ও ২৩টি জেলায় বিভক্ত। বিভাগগুলি বিভাগীয় কমিশনার ও জেলাগুলি জেলাশাসকের দ্বারা শাসিত হয়। রাজ্যের রাজধানী কলকাতা কলকাতা জেলায় অবস্থিত। অন্যান্য জেলাগুলি মহকুমা ও ব্লকে বিভক্ত। এগুলি যথাক্রমে মহকুমা শাসক ও ব্লক উন্নয়ন আধিকারিকের দ্বারা শাসিত হয়। এই রাজ্যের পঞ্চায়েত ব্যবস্থা ত্রিস্তরীয়। গ্রামস্তরে পঞ্চায়েত ব্যবস্থা "গ্রাম পঞ্চায়েত", ব্লকস্তরে "পঞ্চায়েত সমিতি" ও জেলাস্তরে "জেলা পরিষদ" নামে পরিচিত। ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে বর্ধমান জেলা বিভক্ত হয়ে পূর্ব বর্ধমান জেলা ও পশ্চিম বর্ধমান জেলায় পরিণত হয়েছে। এই সালেই ঘোষিত আরো দুটি জেলা হল ঝাড়গ্রাম জেলা ও কালিম্পং জেলা। ভূগোল পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তে তিনটি রাষ্ট্র নেপাল, ভুটান ও বাংলাদেশ এবং পাঁচটি ভারতীয় রাজ্য সিকিম, বিহার, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা ও অসম অবস্থিত। সিকিম ও ভুটান রাজ্যের উত্তরে, নেপাল উত্তর-পশ্চিমে, বিহার ও ঝাড়খণ্ড পশ্চিমে, ওড়িশা দক্ষিণ-পশ্চিমে, বঙ্গোপসাগর দক্ষিণে, এবং বাংলাদেশ ও অসম পূর্বে অবস্থিত। পশ্চিমবঙ্গই ভারতের একমাত্র রাজ্য যার উত্তরে হিমালয় ও দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর। এই দুইয়ের মধ্যে পশ্চিম সীমান্ত দিয়ে গঙ্গা রাজ্যে প্রবেশ করে পদ্মা নাম ধারণ করে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। তবে বাংলাদেশে প্রবেশের পূর্বে এর প্রধান শাখানদী হুগলি বিচ্ছিন্ন হয়ে দক্ষিণে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে। দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার, উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর , মালদহও কালিম্পং জেলা— গঙ্গার উত্তরে অবস্থিত এই জেলাগুলি একসঙ্গে উত্তরবঙ্গ নামে পরিচিত। উত্তরবঙ্গ তিনটি প্রধান ভৌগোলিক অঞ্চলে বিভক্ত। যথা, দার্জিলিং হিমালয় পার্বত্য অঞ্চল, তরাই ও ডুয়ার্স অঞ্চল এবং উত্তরবঙ্গ সমভূমি। শিলিগুড়ি করিডর (যা ‘চিকেনস নেক’ নামেও পরিচিত) উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গে দেশের মূল ভূখণ্ডের সংযোগ রক্ষা করছে। গঙ্গার দক্ষিণে অবস্থিত জেলাগুলি হল: বাঁকুড়া, বর্ধমান, বীরভূম, পুরুলিয়া, মুর্শিদাবাদ, নদিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুর, পূর্ব মেদিনীপুর,ঝাড়গ্রাম ,হুগলি, হাওড়া, কলকাতা, উত্তর চব্বিশ পরগনা ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা। এই অঞ্চলটি দক্ষিণবঙ্গ নামে পরিচিত। দক্ষিণবঙ্গ পাঁচটি প্রধান ভৌগোলিক অঞ্চলে বিভাজিত। যথা, রাঢ় অঞ্চল, পশ্চিমের মালভূমি ও উচ্চভূমি অঞ্চল, উপকূলীয় সমভূমি অঞ্চল, সুন্দরবন ও গাঙ্গেয় বদ্বীপ অঞ্চল। রাজ্যের রাজধানী কলকাতা কলকাতা জেলা নিয়ে গঠিত। ১৯৭০-এর দশকে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে বঙ্গোপসাগরের বুকে জেগে ওঠা দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপটি ভারত ও বাংলাদেশ উভয় রাষ্ট্রই নিজের বলে দাবি করে থাকে। ইতিহাস 250px|thumb|১৯৪৭ খ্রস্টাব্দে রাজ্য প্রতিষ্ঠার সময় পশ্চিমবঙ্গের মূল ১৪টি জেলা: ১. কলকাতা, ২. চব্বিশ পরগনা, ৩. হাওড়া, ৪. নদিয়া, ৫. হুগলি, ৬. মেদিনীপুর, ৭. বাঁকুড়া, ৮. বর্ধমান, ৯. বীরভূম, ১০. মুর্শিদাবাদ, ১১. মালদহ, ১২. পশ্চিম দিনাজপুর, ১৩. দার্জিলিং ও ১৪. জলপাইগুড়ি। ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে স্বাধীনতা অর্জনের সময় ব্রিটিশ ভারতের বাংলা প্রদেশটি ধর্মীয় ভিত্তিতে দ্বিধাবিভক্ত হয়। উক্ত প্রদেশের হিন্দুপ্রধান পশ্চিমাঞ্চলটিকে নিয়ে গঠিত হয় ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য। ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে রাজ্য প্রতিষ্ঠার সময় পশ্চিমবঙ্গ ১৪টি জেলায় বিভক্ত ছিল— বাঁকুড়া, বীরভূম, বর্ধমান, কলকাতা, দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, হুগলি, হাওড়া, মালদহ, মেদিনীপুর, মুর্শিদাবাদ, নদিয়া, পশ্চিম দিনাজপুর ও চব্বিশ পরগনা। বর্তমান কোচবিহার জেলা অতীতে ছিল কোচবিহার নামে এক দেশীয় রাজ্য। ১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দের ২০ অগাস্ট এই রাজ্য সরকারিভাবে ভারতে যোগ দেয়। ওই বছর ১২ সেপ্টেম্বর প্রশাসনিক ক্ষমতার হস্তান্তর শুরু হয় এবং তা সমাপ্ত হয় ১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দের ১৯ জানুয়ারি। এরপর কোচবিহার পশ্চিমবঙ্গের একটি জেলা হিসেবে ঘোষিত হয়। ১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দে পূর্বতন ফরাসি উপনিবেশ চন্দননগর একটি গণভোটের মাধ্যমে ভারতে যোগদানের পক্ষে মতপ্রকাশ করে। ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দে চন্দননগর ভারতভুক্ত হয় এবং ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দের ২ অক্টোবর এটি পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার একটি অংশে পরিণত হয়। ১৯৫৬ খ্রিস্টব্দের রাজ্য পুনর্গঠন আইন অনুযায়ী ভাষার ভিত্তিতে ভারতীয় রাজ্যগুলির সীমানা পুনর্নির্ধারিত হয়। এই আইন বলবৎ হলে বিহারের একটি অংশ পশ্চিম দিনাজপুর জেলার সঙ্গে যুক্ত হয় এবং ১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দের ১ নভেম্বর বিহারের মানভূম জেলার পুরুলিয়া মহকুমাটি একটি পূর্ণাঙ্গ জেলার আকারে পশ্চিমবঙ্গের অন্তর্ভুক্ত হয়। পরবর্তীকালে কয়েকটি বৃহদাকার জেলাকে ছোটো জেলায় দ্বিখণ্ডিত করা হয়। ১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দের ১ মার্চ পূর্বতন চব্বিশ পরগনা জেলাটিকে ভেঙে উত্তর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলা গঠিত হয়। ১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দের ১ এপ্রিল পূর্বতন পশ্চিম দিনাজপুর জেলা ভেঙে উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা গঠিত হয়। ২০০২ খ্রিষ্টাব্দের ১ জানুয়ারি পূর্বতন মেদিনীপুর জেলা দ্বিখণ্ডিত করে পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা গঠিত হয়। ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দ থেকে দার্জিলিং পার্বত্য অঞ্চলে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা ও তার সমর্থকেরা পুনরায় পৃথক 'গোর্খাল্যান্ড' রাজ্যের দাবি উত্থাপন করতে শুরু করেছেন। অন্যদিকে ২০০০ খ্রিষ্টাব্দ নাগাদ কামতাপুর পিপলস পার্টি ও তার সমর্থকেরা সমগ্র উত্তরবঙ্গ নিয়ে পৃথক 'কামতাপুর' রাজ্যের দাবি জানায়। প্রশাসনিক গঠন প্রত্যেক জেলার শাসনভার একজন জেলাশাসকের হাতে ন্যস্ত থাকে। তিনি জেলা সমাহর্তা বা ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট নামেও পরিচিত। জেলাশাসক সাধারণত ইন্ডিয়ান অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস (আইএএস) অথবা ওয়েস্ট বেঙ্গল সিভিল সার্ভিস (ডব্লিউবিসিএস) ক্যাডারের আধিকারিক হন এবং তাকে নিয়োগ করেন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার। কলকাতা বাদে প্রত্যেকটি জেলা মহকুমায় বিভক্ত। কলকাতা নগরাঞ্চল। তাই কলকাতার শাসনভার কলকাতা পৌরসংস্থার হাতে ন্যস্ত থাকে। মহকুমাগুলি মহকুমা শাসক বা সাব-ডিভিশনাল অফিসারের (এসডিও) দ্বারা শাসিত। পুরসভা অঞ্চল বাদে মহকুমার অবশিষ্টাংশ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকে বিভক্ত থাকে। ব্লকগুলি হঠিত হয় সেন্সাস টাউন (নগরাঞ্চল) ও গ্রাম পঞ্চায়েত (গ্রামাঞ্চল) নিয়ে। ব্লকের শাসনভার ব্লক উন্নয়ন আধিকারিক বা ব্লক ডেভেলপমেন্ট অফিসারের (বিডিও) হাতে ন্যস্ত থাকে। কয়েকটি গ্রাম নিয়ে একটি গ্রাম পঞ্চায়েত গঠিত হয়। এটি পঞ্চায়েত ব্যবস্থায় সর্বনিম্ন স্তরের স্বায়ত্তশাসন সংস্থা। গ্রাম পঞ্চায়েতে নেতৃত্বভার পঞ্চায়েত প্রধানের হাতে ন্যস্ত থাকে। ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দে পশ্চিমবঙ্গ পঞ্চায়েত আইন অনুযায়ী, প্রত্যেক ব্লকে একটি করে পঞ্চায়েত সমিতি রয়েছে। এই সমিতির সদস্যরা হলেন সংশ্লিষ্ট ব্লকের সকল গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান এবং ব্লকের সকল বিধায়ক। পঞ্চায়েত সমিতির প্রধানকে সভাধিপতি বলা হয়। পঞ্চায়েত ব্যবস্থার তৃতীয় স্তরটি হল জেলা পরিষদ। এটি জেলা স্তরের সংগঠন। জেলা পরিষদের সদস্যরা হলেন উক্ত জেলার সকল সভাধিপতি এবং জেলার সকল বিধায়ক। জেলা পরিষদের প্রধান হলেন জেলা সভাধিপতি। দার্জিলিং জেলায় কোনো জেলা পরিষদ নেই। এই জেলার শিলিগুড়ি মহকুমার জন্য একটি অনুরূপ মহকুমা পরিষদ বিদ্যমান। দার্জিলিং জেলার দার্জিলিং সদর, কালিম্পং ও কার্শিয়ং মহকুমা তিনটির প্রশাসনিক দায়িত্ব ১৯৮৮ খ্রিষ্টাব্দে গঠিত দার্জিলিং গোর্খা হিল কাউন্সিলের হাতে দেওয়া হয়েছিল। হিল কাউন্সিল জনস্বাস্থ্য, শিক্ষা, পুর্ত, পরিবহন, পর্যটন, বাজার, ক্ষুদ্রশিল্প, কৃষি, কৃষি জলপথ, বন (সংরক্ষিত বনাঞ্চল ব্যতীত), জলসরবরাহ, গবাদি পশু, বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ, ক্রীড়া ও যুবকল্যাণ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিল। সম্প্রতি এই অঞ্চলের প্রশাসনিক দায়িত্ব পেয়েছে গোর্খাল্যান্ড আঞ্চলিক প্রশাসন বা জিটিএ। জেলা প্রশাসনের হাতে রয়েছে নির্বাচন, পঞ্চায়েত, আইনশৃঙ্খলা ও রাজস্ব ইত্যাদি বিভাগ। জেলা প্রশাসন জিটিএ ও রাজ্য সরকারের মধ্যে সংযোগরক্ষাকারী সংস্থার কাজও করে। পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের প্রতিটি জেলার দায়িত্বে থাকেন একজন করে জেলা পুলিশ সুপার। ১৮৬১ খ্রিষ্টাব্দের পুলিশ আইন অনুযায়ী, এই বিধি সমগ্র ভারতের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। জেলা পুলিশ সুপার ইন্ডিয়ান পুলিশ সার্ভিস (আইপিএস) ক্যাডারের আধিকারিক। প্রতিটি মহকুমায় একটি করে মহকুমা পুলিশ বিভাগ করেছে। মহকুমা পুলিশের দায়িত্বে থাকেন সহ-পুলিশ সুপারের সমমর্যাদাসম্পন্ন কোনো পুলিশ অফিসার। মহকুমা পুলিশের অধীনে থাকে একাধিক পুলিশ কেন্দ্র। এর প্রত্যেকটির দায়িত্ব ন্যস্ত থাকে একজন করে পুলিশ ইনস্পেক্টরের হাতে। পুলিশ কেন্দ্রগুলি আবার একাধিক থানা নিয়ে গঠিত। প্রতিটি থানার দায়িত্বে থাকেন একজন করে পুলিশ ইনস্পেক্টর (শহরাঞ্চল) বা সাব-ইনস্পেক্টর (গ্রামাঞ্চল)। সমগ্র পশ্চিমবঙ্গ কলকাতা উচ্চ আদালতের এক্তিয়ারভুক্ত এলাকা। অধিকাংশ জেলাতেই জেলা আদালত ছাড়াও অন্যান্য নিম্ন আদালতের অস্তিত্ব থাকলেও, রাজ্যের সকল মহকুমায় আদালত নেই। কয়েকটি জেলা নিয়ে একটি বিভাগ গঠিত। প্রতিটি বিভাগের দায়িত্ব একজন করে বিভাগীয় কমিশনারের হাতে ন্যস্ত। বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের ২৩টি জেলা পাঁচটি বিভাগে বিন্যস্ত: জেলা পরিসংখ্যান প্রস্তাবিত জেলা উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলা থেকে বসিরহাট জেলা৷ দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলা থেকে সুন্দরবন জেলা৷ মুর্শিদাবাদ জেলাকে উত্তর দক্ষিণে বিভক্ত করে উত্তর মুর্শিদাবাদ জেলা ও দক্ষিণ মুর্শিদাবাদ জেলা৷ মালদহ জেলাকে উত্তর দক্ষিণে বিভক্ত করে উত্তর মালদহ জেলা ও দক্ষিণ মালদহ জেলা৷ জনপরিসংখ্যান নিচে ভারতের জেলাগুলির জনসংখ্যার পরিসংখ্যানগত (২০১১ খ্রিষ্টাব্দের জনগণনার ভিত্তিতে) অবস্থানের ভিত্তিতে পশ্চিমবঙ্গের জেলাগুলির জনসংখ্যার পরিসংখ্যান দেওয়া হল। ২০১১-পরবর্তী সময়ে দার্জিলিং জেলা থেকে নতুন কালিম্পং জেলা, জলপাইগুড়ি জেলা থেকে নতুন আলিপুরদুয়ার জেলা, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা থেকে নতুন ঝাড়গ্রাম জেলা এবং বর্ধমান জেলা থেকে পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান জেলা গঠন করা হয়৷ তথ্যসূত্র {vgg{ভালো নিবন্ধ}} বিষয়শ্রেণী:পশ্চিমবঙ্গের জেলা
পশ্চিমবঙ্গের জেলা
আমার সোনার বাংলা গানটি ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত। বঙ্গমাতা সম্পর্কে এই গাঁথা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কর্তৃক ১৯০৫ সালে রচিত। বাউল গায়ক গগন হরকরার গান "আমি কোথায় পাব তারে" থেকে এই গানের সুর ও সঙ্গীত উদ্ভূত। ১৯০৫ খ্রিষ্টাব্দে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে এই গানটি রচিত হয়েছিল। ১৩ জানুয়ারি, ১৯৭২ তারিখে মন্ত্রীসভার প্রথম বৈঠকে এ গানটির প্রথম দশ লাইন সদ্যগঠিত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে নির্বাচিত হয়। ব্যুৎপত্তি সোনা শব্দটির অর্থ "স্বর্ণ", আর সোনার শব্দটির আক্ষরিক অর্থ "স্বর্ণের অন্তর্গত", বা "স্বর্ণ দিয়ে তৈরি" এবং "আর" দখল করে। এটি "প্রিয়" অর্থপ্রিয় পরিভাষা হিসাবে ব্যবহৃত, কিন্তু গানের মধ্যে সোনার বাংলা শব্দটি বাঙালির মূল্যবোধ প্রকাশ করতে পারে বা ফসল তোলার আগে ধানক্ষেতের রঙের তুলনা বোঝানো হয়েছে। ইতিহাস রচনা ও সুরারোপ আমার সোনার বাংলা গানটি রচিত হয়েছিল ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে। গানটির পাণ্ডুলিপি পাওয়া যায়নি, তাই এর সঠিক রচনাকাল জানা যায় না। সত্যেন রায়ের রচনা থেকে জানা যায়, ১৯০৫ সালের ৭ আগস্ট কলকাতার টাউন হলে আয়োজিত একটি প্রতিবাদ সভায় এই গানটি প্রথম গীত হয়েছিল। এই বছরই ৭ সেপ্টেম্বর (১৩১২ বঙ্গাব্দের ২২ ভাদ্র) সঞ্জীবনী পত্রিকায় রবীন্দ্রনাথের স্বাক্ষরে  গানটি মুদ্রিত হয়। এই বছর বঙ্গদর্শন পত্রিকার আশ্বিন সংখ্যাতেও গানটি মুদ্রিত হয়েছিল। তবে ৭ আগস্ট উক্ত সভায় এই গানটি গীত হওয়ার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না। বিশিষ্ট রবীন্দ্রজীবনীকার প্রশান্তকুমার পালের মতে, আমার সোনার বাংলা ১৯০৫ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ আগস্ট কলকাতার টাউন হলে অবস্থা ও ব্যবস্থা প্রবন্ধ পাঠের আসরে প্রথম গীত হয়েছিল। আমার সোনার বাংলা গানটি রচিত হয়েছিল শিলাইদহের ডাকপিয়ন গগন হরকরা রচিত আমি কোথায় পাব তারে আমার মনের মানুষ যে রে গানটির সুরের অণুষঙ্গে। সরলা দেবী চৌধুরানী ইতিপূর্বে ১৩০৭ বঙ্গাব্দের বৈশাখ মাসে তার শতগান সংকলনে গগন হরকরা রচিত গানটির স্বরলিপি প্রকাশ করেছিলেন। উল্লেখ্য, রবীন্দ্রনাথের বঙ্গভঙ্গ-সমসাময়িক অনেক স্বদেশী গানের সুরই এই স্বরলিপি গ্রন্থ থেকে গৃহীত হয়েছিল। যদিও পূর্ববঙ্গের বাউলদের ভিডমিড ও ভাটিয়ালি সুরের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের পরিচিতি ইতঃপূর্বেই হয়েছিল বলে জানা যায়। ১৮৮৯-১৯০১ সময়কালে পূর্ববঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চলে জমিদারির কাজে ভ্রমণ ও বসবাসের সময় বাংলার লোকজ সুরের সঙ্গে তার আত্মীয়তা ঘটে। তারই অভিপ্রকাশ রবীন্দ্রনাথের স্বদেশী আন্দোলনের সমসাময়িক গানগুলি, বিশেষত আমার সোনার বাংলা। যেভাবে বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ১ মার্চ গঠিত হয় স্বাধীন বাংলার কেন্দ্রীয় সংগ্রাম পরিষদ। পরে ৩ মার্চ তারিখে ঢাকা শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত পল্টন ময়দানে অনুষ্ঠিত জনসভা শেষে ঘোষিত স্বাধীনতার ইশতেহারে এই গানকে জাতীয় সঙ্গীত হিসাবে ঘোষণা করা হয়। ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মুজিবনগরে স্বাধীন বাংলাদেশের সরকারের শপথ অনুষ্ঠানে এই গান প্রথম জাতীয় সঙ্গীত হিসাবে গাওয়া হয়। গানের কথা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা সম্পূর্ণ আমার সোনার বাংলা গানটি এখানে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। এই গানের প্রথম দশ লাইন বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে স্বীকৃত। আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি। চিরদিন তোমার আকাশ, তোমার বাতাস, আমার প্রাণে বাজায় বাঁশি॥ ও মা, ফাগুনে তোর আমের বনে ঘ্রাণে পাগল করে, মরি হায়, হায় রে— ও মা, অঘ্রানে তোর ভরা ক্ষেতে আমি কী দেখেছি মধুর হাসি॥ কী শোভা, কী ছায়া গো, কী স্নেহ, কী মায়া গো— কী আঁচল বিছায়েছ বটের মূলে, নদীর কূলে কূলে। মা, তোর মুখের বাণী আমার কানে লাগে সুধার মতো, মরি হায়, হায় রে— মা, তোর বদনখানি মলিন হলে, ও মা, আমি নয়নজলে ভাসি॥ তোমার এই খেলাঘরে শিশুকাল কাটিলে রে, তোমারি ধুলামাটি অঙ্গে মাখি ধন্য জীবন মানি। তুই দিন ফুরালে সন্ধ্যাকালে কী দীপ জ্বালিস ঘরে, মরি হায়, হায় রে— তখন খেলাধুলা সকল ফেলে, ও মা, তোমার কোলে ছুটে আসি॥ ধেনু-চরা তোমার মাঠে, পারে যাবার খেয়াঘাটে, সারা দিন পাখি-ডাকা ছায়ায়-ঢাকা তোমার পল্লীবাটে, তোমার ধানে-ভরা আঙিনাতে জীবনের দিন কাটে, মরি হায়, হায় রে— ও মা, আমার যে ভাই তারা সবাই, ও মা, তোমার রাখাল তোমার চাষি॥ ও মা, তোর চরণেতে দিলেম এই মাথা পেতে— দে গো তোর পায়ের ধুলা, সে যে আমার মাথার মানিক হবে। ও মা, গরিবের ধন যা আছে তাই দিব চরণতলে, মরি হায়, হায় রে— আমি পরের ঘরে কিনব না আর, মা, তোর ভূষণ ব'লে গলার ফাঁসি জনপ্রিয়তা শ্রোতাদের পছন্দানুসারে বিবিসি বাংলার তৈরী সেরা বিশটি বাংলা গানের তালিকায় এই গানটি প্রথম স্থান দখল করে। বিশ্ব রেকর্ড ২০১৪ সালের ২৬ মার্চ, জাতীয় প্যারেড ময়দান, ঢাকা, বাংলাদেশে একসঙ্গে ২৫৪,৫৩৭ জন জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ায় মাধ্যমে গিনেস বিশ্ব রেকর্ড করে। চলচ্চিত্রায়ন চলচ্চিত্রকার শহীদ জহির রায়হান ১৯৭০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত তার বিখ্যাত জীবন থেকে নেওয়া কাহিনীচিত্রে এই গানের চলচ্চিত্রায়ন করেন। আরো দেখুন নতুনের গান (বাংলাদেশের রণ সঙ্গীত)। একুশের গান, বাংলা ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে রচিত গান। জনগণমন-অধিনায়ক জয় হে, ভারতের জাতীয় সঙ্গীত। পাদটীকা বহিঃসংযোগ বিষয়শ্রেণী:বাংলাদেশী সঙ্গীত বিষয়শ্রেণী:রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত গান বিষয়শ্রেণী:জাতীয় সঙ্গীত বিষয়শ্রেণী:বাংলা ভাষার কবিতা বিষয়শ্রেণী:বাংলা ভাষার গান বিষয়শ্রেণী:পশ্চিমবঙ্গের ইতিহাস বিষয়শ্রেণী:দেশাত্মবোধক গান বিষয়শ্রেণী:রবীন্দ্রনাথ_ঠাকুর বিষয়শ্রেণী:রবীন্দ্রনাথ_ঠাকুরের_রচনাবলী
আমার সোনার বাংলা
বাংলাদেশে প্রধানত দ্বিদলীয় শাসনব্যবস্থা বিরাজমান। অর্থাৎ দুই দলের বাইরে অন্য কোনো দলের নামে নির্বাচনে জয়লাভ কারো পক্ষে অত্যন্ত কঠিন। এখানে প্রধান দুই দল পালাক্রমে দেশ শাসন করে থাকে। যা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের ক্ষেত্রে সমস্যার কারণ। তাছাড়া বর্তমানে কমিউনিস্ট দলগুলো জোটবদ্ধ হয়ে বিভিন্ন ইস্যুতে গণআন্দোলন করছে। এছাড়া এখানে অনেকগুলো দল মিলে জোট করার ব্যাপার লক্ষ্যণীয়। নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল * ১৪, ২৯ এনং ৩৯ নিবন্ধন নং সম্বলিত দলের নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে। বর্তমান মোট দল সংখ্যা ৪১ টি। রাজনৈতিক জোটসমূহ চৌদ্দ দলীয় জোট বিশ দলীয় জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট যুক্তফ্রন্ট বাম গণতান্ত্রিক জোট সম্মিলিত জাতীয় জোট গণঐক্য অনিবন্ধিত রাজনৈতিক দলসমূহ গণসংহতি আন্দোলন বাংলাদেশ ফ্রিডম পার্টি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী শ্রমিক কৃষক সমাজবাদী দল বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী-লেনিনবাদী) (উমর) বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী) বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল (সাঈদ) জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) ন্যাপ ভাসানী ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি বাংলাদেশ লেবার পার্টি নেজামে ইসলাম পার্টি নাগরিক ঐক্য বাংলাদেশের ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগ বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ আঞ্চলিক দলসমূহ পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (এন এম লারমা) ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) তথ্যসূত্র * বিষয়শ্রেণী:বাংলাদেশের রাজনীতি-সম্পর্কিত তালিকা বিষয়শ্রেণী:বাংলাদেশ ভিত্তিক সংগঠনের তালিকা বিষয়শ্রেণী:এশিয়ার রাজনৈতিক দলের তালিকা বিষয়শ্রেণী:দেশ অনুযায়ী রাজনৈতিক দলের তালিকা
বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলসমূহের তালিকা
thumb|right|200px|জয়দেব বিষ্ণুর উপাসনা করছেন কবি জয়দেব সংস্কৃত সাহিত্যের একজন মধ্যযুগীয় অন্যতম প্রসিদ্ধ কবি। তিনি গীতগোবিন্দ কাব্যের রচয়িতা। সংস্কৃত কাব্য গীতগোবিন্দের অত্যন্ত ব্যাপক ও গভীর প্রভাব রয়েছে। বাংলা ভাষায় বৈষ্ণব পদাবলির সূচনা জয়দেবের গীতগোবিন্দের পদাবলি থেকেই বলে ধারণা করা হয়। কবি জয়দেবের জন্ম ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বীরভূমের কেন্দুবিল্ব বা কেঁদুলি গ্রামে। তার নামে সেখানে প্রতি বছর মেলা অনুষ্ঠিত হয়। তার পিতার নাম ভোজদেব ও মাতার নাম বামাদেবী। তবে অপর মতে জয়দেব ভারতের উড়িষ্যা প্রদেশের পুরীর নিকটবর্তী কেন্দ্রবিল্ব শাসনের ব্রাহ্মণ পরিবারের মানুষ ছিলেন৷ স্বয়ং জয়দেব লিখেছিলেন "কেন্দবিল্ব সমুদ্র সম্ভব"৷ উড়িষ্যা ও দাক্ষিণাত্যর সংস্কৃৃতিতে জয়দেবের প্রভাব অনস্বীকার্য৷ জয়দেব ছিলেন লক্ষ্মণসেনের (১১৭৮-১২০৬) রাজসভার পঞ্চরত্নের অন্যতম; অপর চারজন হলেন গোবর্ধন আচার্য, শরণ, ধোয়ী ও উমাপতিধর। লক্ষ্মণসেনের সভায় thumb|right|200px|গীতগোবিন্দের পান্ডুলিপি সেকশুভোদয়ায় একটি গল্প আছে লক্ষ্মণসেনের সভায় জয়দেবের আগমন নিয়ে। একদিন লক্ষ্ণণসেনের সভায় এক বিখ্যাত সঙ্গীতনিপুণ কলাবিদ এসে নিজেকে শ্রেষ্ঠ হিসেবে জাহির করলেন। রাজা তার দাবি স্বীকার করে নিয়ে জয়পত্র লিখে দিতে চাইলেন। খবর পেয়ে জয়দেব পত্নী পদ্মাবতী রাজসভায় এসে অনুরোধ করলেন তার স্বামীর সাথে না প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করে যেন তাকে জয়পত্র না দেওয়া হয়। রাজা সভায় জয়দেবকে আনলেন। তথাকথিত সঙ্গীতনিপুণ কলাবিদের গানে গাছের সব পাতা ঝরে গেল। সবাই সঙ্গীতনিপুণ কলাবিদকে ধন্য ধন্য করতে লাগল। জয়দেব বললেন এ আর এমন কী! গাছে আবার পাতা গজিয়ে দেখাও। সঙ্গীতনিপুণ কলাবিদ অপারগতা প্রকাশ করলেন। তখন জয়দেব গান ধরলেন, আর সাথে সাথে গাছের পাতা গজিয়ে উঠল। সকলে জয়দেবের শ্রেষ্ঠত্ব স্বীকার করল। তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ উড়িষ্যার সংস্কৃত পন্ডিত এনসাইক্লোপিয়া ব্রিটানিকায় জয়দেব বিষয়শ্রেণী:ভারতীয় কবি বিষয়শ্রেণী:সংস্কৃত কবি
জয়দেব
অমূলদ সংখ্যা হল সেসব বাস্তব সংখ্যা যেগুলোকে দুটি পূর্ণ সংখ্যার অনুপাতে প্রকাশ করা যায় না। অমূলদ সংখ্যাকে দশমিক-এ প্রকাশ করার চেষ্টা করলে দশমিকের পর যত ঘর অবধি-ই দেখা হবে, কোন পৌনঃপুনিকতা (recurrence) দেখা যাবে না। অমূলদ সংখ্যার মধ্যে বৃত্তের পরিধি ও ব্যাসের অনুপাত π, ইউলারের সংখ্যা e, গোল্ডেন অনুপাত φ এবং দুটি এর বর্গমূল ; আসলে বর্গসংখ্যা বাদে সকল অখণ্ডসংখ্যার সমস্ত বর্গমূল, অমূলদ। ইতিহাস প্রাচীন গ্রিসে পিথাগোরাস সম্পর্কিত অমুলদ সংখার ইতিহাসটি বেশ রোমাঞ্চকর। হিপ্পসাস নামক পিথাগোরাসের শিষ্য( যারা পিথাগোরিয়ান নামে পরিচিত) আবিষ্কার করেন। হিপ্পসাস পিথাগোরাসের সদ্য আবিস্কৃত সমকোণী ত্রিভুজের সূত্র (কোন সমকোনী ত্রিভূজের অতিভূজের উপর অঙ্কিত বর্গক্ষেত্র অপর দুই বাহুর উপর অঙ্কিত বৰ্গক্ষেত্রেরদ্বয়ের সমষ্টির সমান)ব্যবহার করে, দুই বাহুর দৈর্ঘ্য ১ একক ধরে, অতিভুজ বের করতে গিয়ে একটা গোল বাধিয়ে ফেলেন। তিনি কিছুতেই অতিভুজ হিসাবে যে পেয়েছেন তার মান আর হিসাব করতে পারছিলেন না। পরে বুঝলেন যে, এটা আর সব অন্য মুলদ সংখ্যার মত নয়, যাদের দুইটি পুর্ণ সংখ্যার অনুপাত আকারে লেখা সম্ভব। পরবর্তিতে আরো এরকম সংখ্যা আবিস্কৃত হয়। আর গণিতবিদেরা এদের নাম দেন অমুলদ সংখ্যা। প্রাচীন ভারতবৰ্ষেও অমূলদ সংখ্যার চিহ্ন পাওয়া যায়৷ শ্রীনিবাস রামানুজন বলেছিলেন যে এর মান যতো খুশি ততো ঘর। অতি সুপরিচিত একটি অমুলদ সংখ্যা হচ্ছে বৃত্তের পরিধি ও ব্যাসের অনুপাত(যাকে গ্রিক অক্ষর পাই π দ্বারা নির্দেশ করা হয়)। π= ৩.১৪১৫৯২৬৫ ....... প্রকারভেদ তুরীয় সংখ্যা (ইংরেজীতে transcendental number ) বীজগাণিতিক সংখ্যা (ইংরেজীতে algebraic tamim) তথ্যসূত্র আরো পড়া Adrien-Marie Legendre, Éléments de Géometrie, Note IV, (1802), Paris Rolf Wallisser, "On Lambert's proof of the irrationality of π", in Algebraic Number Theory and Diophantine Analysis, Franz Halter-Koch and Robert F. Tichy, (2000), Walter de Gruyer বহিঃসংযোগ Zeno's Paradoxes and Incommensurability (n.d.). Retrieved April 1, 2008 বিষয়শ্রেণী:অমূলদ সংখ্যা
অমূলদ সংখ্যা
300px|থাম্ব|right|কেডিই নিওন ৫.৯, কেডিই প্লাজমাকে পূর্বনির্ধারিত ডেস্কটপ পরিবেশন হিশেবে ব্যবহার করা একটি গ্নু/লিনাক্স ডিস্ট্রিবিউশন লিনাক্স বা গ্নু/লিনাক্স () বলতে লিনাক্স কার্নেলের সাথে বিশেষত গ্নু ও অন্যান্য উপাদানের সংমিশ্রণে প্যাকেজ করা অপারেটিং সিস্টেমের একটি পরিবারকে বুঝায়। সাধারণত, ডেস্কটপ ও সার্ভার দু'ধরনের ব্যবহারের জন্যেই লিনাক্স ডিস্ট্রিবিউশন বা ডিস্ট্রো নামে একটি আকারে প্যাকেজকৃত থাকে। একটি লিনাক্স ডিস্ট্রিবিউশনকে বোঝানোর উপাদানই হলো এর কার্নেল - লিনাক্স কার্নেল, যেটি একটি অপারেটিং সিস্টেম কার্নেল, যা লিনুস তোরভাল্দ্‌স ১৭ সেপ্টেম্বর ১৯৯১ তারিখে প্রথম প্রকাশ করেন। অনেক লিনাক্স ডিস্ট্রিবিউশনই লিনাক্স শব্দটি তাদের অপারেটিং সিস্টেমের নামের সাথে ব্যবহার করে এবং ফ্রি সফটওয়্যার ফাউন্ডেশন গ্নু/লিনাক্স শব্দটি এ অপারেটিং সিস্টেম পরিবারকে বুঝাতেই ব্যবহার করে। লিনাক্স মূলত ইন্টেল এক্স৮৬ স্থাপত্যের(আর্কিটেকচার) উপর ভিত্তি করে ব্যক্তিগত কম্পিউটারের জন্য উন্নয়ন করা হলেও, বর্তমানে এটি অন্য যেকোন অপারেটিং সিস্টেমের চেয়ে বেশি প্ল্যাটফর্মে পোর্ট করা হয়েছে। স্মার্টফোন জগতে লিনাক্স কার্নেল-ভিত্তিক অপারেটিং সিস্টেম অ্যানড্রয়েডের আধিপত্যের কারণে, বর্তমানের অন্য সব অপারেটিং সিস্টেমের চেয়ে লিনাক্সের সবচেয়ে বড় ইন্সটল-ভিত তৈরি হয়েছে। লিনাক্স সার্ভার এবং অন্যান্য বড় আইরন সিস্টেম, যেমন মেইনফ্রেম কম্পিউটার, এবং বৃহত্তর ৫০০ সুপারকম্পিউটারে ব্যবহৃত একমাত্র অপারেটিং সিস্টেম (লিনাক্স ২০১৭ সালের নভেম্বর থেকে, অন্য সব প্রতিযোগীদের এ বাজার ধীরে ধীরে সরিয়ে দিচ্ছে)। প্রায় ২.৩% ডেস্কটপ কম্পিউটারে বর্তমানে লিনাক্স ব্যবহার করা হয়। লিনাক্স কার্নেল-ভিত্তিক ক্রোম অপারেটিং সিস্টেম চালিত ক্রোমবুক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কে-১৩ শিক্ষার বাজারে গুরুত্বারোপ করে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৩০০ ডলারের নিচের নোটবুক বিক্রির ২০% ক্রোমবুকই প্রতিনিধিত্ব করে। লিনাক্স গ্রত্থিত সিস্টেম-ডিভাইসগুলোতেও অনেক বেশি ব্যবহার করা হয়, যার মধ্যে টিভো এবং অনুরূপ ডিভিআর ডিভাইস, রাউটার, সুবিধা স্বয়ংক্রিয়করণ নিয়ন্ত্রণ, টিভি, ভিডিও গেম কনসোল এবং স্মার্টওয়াচ অন্তর্ভুক্ত। অনেক স্মার্টফোন এবং ট্যাবলেট কম্পিউটার অ্যান্ড্রয়েড এবং অন্যান্য লিনাক্স ডিস্ট্রোতে চলে। লিনাক্সকে মুক্ত সোর্স ও মুক্ত সফটওয়্যার ধারার একটি আদর্শ উদাহরণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। অন্যান্য স্বত্ত্ব-সংরক্ষিত অপারেটিং সিস্টেম যেমন উইন্ডোজ এবং ম্যাক ওএস হতে লিনাক্স বিভিন্নভাবে আলাদা। লিনাক্সের অন্তর্নিহিত সোর্স কোড যে কেউ গ্নু জেনারেল পাবলিক লাইসেন্স মোতাবেক বাধাহীনভাবে ব্যবহার করতে পারেন, এর উন্নতিসাধন করতে পারেন, এমনকি পুনর্বিতরণও করতে পারেন। একেবারে ঠিকভাবে বলতে গেলে, লিনাক্স বলতে শুধু লিনাক্স কার্নেলকেই বোঝায়। তবে যেসব ইউনিক্স-সদৃশ অপারেটিং সিস্টেম লিনাক্স কার্নেলের উপর ভিত্তি করে নির্মিত এবং মূলত গ্নু (ও অন্যান্য) প্রকল্পের কোড সংগ্রহ (লাইব্রেরি) ও হাতিয়ার (টুলস) ওই কার্নেলের সাথে যুক্ত করে বানানো হয়েছে, সাধারণভাবে সেসব অপারেটিং সিস্টেমকে লিনাক্স হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়। আরও ব্যাপক অর্থে একটি লিনাক্স ডিস্ট্রিবিউশন বলতে লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেম ও এর সাথে সরবরাহকৃত বিপুল পরিমাণের অ্যাপলিকেশন সফটওয়্যারের সমষ্টিকে বোঝায়। লিনাক্স ডিস্ট্রিবিউশনগুলো সহজেই কম্পিউটারে সংস্থাপন (ইন্সটল) ও হালনাগাদ (আপডেট) করা যায়। কিছু ডেস্কটপ পরিবেশ যেমন গ্নোম, কেডিই প্লাজমা ও এক্সএফসিই সাধারণত কেবল লিনাক্সের সাথে জড়িত বলে ধারণা করা হলেও এগুলো অন্যান্য অপারেটিং সিস্টেমেও (যেমন ফ্রিবিএসডি-তে) ব্যবহৃত হয়। প্রাথমিকভাবে কেবল কিছু উৎসাহী ব্যক্তিই মূলত লিনাক্স ব্যবহার ও এর উন্নতিসাধন করতেন। এখন বড় বড় কর্পোরেশন যেমন ডেল, আইবিএম, সান মাইক্রোসিস্টেম্‌স, [[হিউলেট-প্যাকার্ড]], নভেলসহ আরও অনেক বড় কোম্পানি সার্ভারে ব্যবহারের জন্যে লিনাক্সকে বেছে নিয়েছে। ডেস্কটপ বাজারেও লিনাক্সের চাহিদা ও জনপ্রিয়তা বাড়ছে। লিনাক্স বিশেষজ্ঞ ও লিনাক্স সমর্থকদের মতে লিনাক্সের এই উত্থানের পেছনে কারণ লিনাক্স সস্তা, নিরাপদ, নির্ভরযোগ্য এবং এটি কোনো নির্দিষ্ট বিক্রেতার কাছ থেকে কিনতে হয় না, অর্থাৎ এটি বিক্রেতা-অধীন নয়। লিনাক্স প্রাথমিকভাবে ইন্টেল ৩৮৬ মাইক্রোপ্রসেসরের জন্য তৈরি করা হলেও এখন এটি বর্তমানের সব জনপ্রিয় (এমনকি অনেক পুরনো ও বিরল) কম্পিউটার স্থাপত্যের অধীনে কাজ করে। গ্রত্থিত ব্যবস্থা(এম্বেডেড সিস্টেম), যেমন মোবাইল ফোন, ব্যক্তিগত ভিডিও রেকর্ডার, ইত্যাদি থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত ডেস্কটপ বা ল্যাপটপ কম্পিউটার, এমনকি সুপারকম্পিউটার - সব জায়গাতেই এখন লিনাক্স ব্যবহৃত হয়। ইতিহাস ১৯৮৩ সালে রিচার্ড স্টলম্যান গ্নু প্রকল্প প্রতিষ্ঠা করেন। গ্নু প্রকল্পের উদ্দেশ্য ছিল পরিপূর্ণ মুক্ত সফটওয়্যার ব্যবহার করে একটি পূর্ণাঙ্গ ইউনিক্স-সদৃশ অপারেটিং সিস্টেম তৈরি করা। ৯০-এর দশকের শুরুর দিকেই গ্নু এই অপারেটিং সিস্টেমের প্রায় সমস্ত প্রয়োজনীয় উপাদানগুলো বানাতে বা সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়। উপাদানগুলোর মধ্যে ছিল বিভিন্ন কোড লাইব্রেরি, কম্পাইলার, লেখা সম্পাদক(টেক্সট এডিটর), একটি ইউনিক্স-সদৃশ শেল, এবং আরও অন্যান্য কিছু সফটওয়্যার। কিন্তু একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান তখনও উন্নয়ন করা হয়নি, আর তা হল কার্নেল - অপারেটিং সিস্টেমটির নিম্নতম স্তরের উপাদান বা ভিত্তি। ১৯৯০ সালে গ্নু প্রকল্প তাদের নিজস্ব কার্নেল গ্নু হার্ডের ওপর কাজ শুরু করে। হার্ডের প্রাথমিক পরিকল্পনাকারী টমাস বুশনেলের কথানুযায়ী গ্নুর প্রাথমিক পরিকল্পনা ছিল বিএসডি ৪.৪-লাইট কার্নেলটি হার্ডের ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করা। সে সময়ের কথা মনে করে তিনি বলেন, “এখন আমি নিশ্চিত, যদি পরিকল্পনাটি সফল হত, বিশ্বকে তখন একদম আলাদাভাবে দেখতে পারতাম আমরা।” কিন্তু বার্কলির প্রোগ্রামারদের মধ্যে সহযোগিতার ঘাটতি দেখে স্টলম্যান হার্ড প্রকল্পের জন্য মাখ মাইক্রোকার্নেল ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু পরে দেখা যায় এটির ব্যবহার আশাতীতভাবে কষ্টসাধ্য, ফলে হার্ডের উন্নয়নকাজ ধীরগতিতে এগোতে থাকে। thumb|লিনুস তোরভাল্দ্‌স, লিনাক্স কার্নেলের উন্নয়নকারী প্রায় কাছাকাছি সময়ে ১৯৯১ সালে, লিনুস তোরভাল্দ্‌স নামের এক ফিনীয় ছাত্র হেলসিংকি বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠরত অবস্থায় শখের বশে আরেকটি কার্নেলের ওপর কাজ শুরু করেন। এই কার্নেলটিই পরে লিনাক্স কার্নেলে রূপ নেয়। লিনুস প্রথমদিকে মিনিক্স নামের একটি সরলীকৃত ইউনিক্স-সদৃশ অপারেটিং সিস্টেম নিয়ে কাজ শুরু করেন। মিনিক্সের রচয়িতা ছিলেন এন্ড্রু টানেনবম, একজন প্রখ্যাত অপারেটিং সিস্টেম ডিজাইন প্রশিক্ষক। তবে টানেনবম তার মিনিক্স সিস্টেমের ওপর সরাসরি কাজ করে উন্নতিসাধনের অনুমতি দিতেন না। ফলে লিনুসকে মিনিক্সের সমতুল্য একটি সিস্টেম বানাতে হয়। লিনুস প্রথমে আইএ-৩২ এসেম্বলার ও সি'র সাহায্যে একটি টার্মিনাল ইমুলেটর তৈরী করেন ও এটিকে কম্পাইল করে বাইনারি আকারে রূপান্তরিত করেন, যাতে এটি যেকোনো অপারেটিং সিস্টেমের বাইরেও ফ্লপি ডিস্ক থেকে বুট করে চালানো যায়। টার্মিনাল ইমুলেটরটিতে একসাথে দুটো থ্রেড চলত। একটি থ্রেড ছিল সিরিয়াল পোর্ট থেকে ক্যারেক্টার পড়ার জন্য, আর অন্যটি ছিল পোর্টে ক্যারেক্টার পাঠানোর জন্য। যখন লিনুসের ডিস্ক থেকে ফাইল পড়া ও লেখার প্রয়োজন পড়ল, তখন তিনি এই ইমুলেটরটির সাথে একটি সম্পূর্ণ ফাইল সিস্টেম হ্যান্ডলার যোগ করেন। এরপর ধীরে ধীরে তিনি এটিকে একটি সম্পূর্ণ অপারেটিং সিস্টেম কার্নেলে রূপ দেন, যাতে এটিকে পজিক্স-অনুগামী সিস্টেমসমূহের ভিত্তিরূপে ব্যবহার করা যায়। লিনাক্স কার্নেলের প্রথম সংস্করণ (০.০.১) ইন্টারনেটে প্রকাশ পায় ১৯৯১ সালের ১৭ই সেপ্টেম্বর। কিছুদিন পরেই ১৯৯১-এর অক্টোবরে এর দ্বিতীয় সংস্করণটি বের হয়। তখন থেকে সারা বিশ্ব থেকে হাজার হাজার উন্নয়নকারী(ডেভলপার) লিনাক্সের এই প্রকল্পে অংশ নিয়েছেন। এরিক রেমনডের লেখা প্রবন্ধ দ্যা ক্যাথেড্রাল এন্ড দ্যা বাজারে লিনাক্স কার্নেলের (ও অন্যান্য সমজাতীয় সফটওয়্যারের) উন্নয়নপ্রক্রিয়ার মডেল সম্পর্কে আলচনা করা হয়েছে। লিনাক্সের ০.০১ সংস্করণে লিনুস যথেষ্টসংখ্যক পজিক্স সিস্টেম কল বাস্তবায়ন করেন, যাতে লিনাক্স গ্নুর ব্যাশ শেল চলতে পারে। এ বুটস্ট্র্যাপিং প্রক্রিয়াটির বাস্তবায়ন লিনাক্সের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করে। প্রথমদিকে লিনাক্স সংস্থাপন (ইন্সটল), গঠন-প্রকৃতি নির্ধারণ (কনফিগার) ও সংকলন (কম্পাইল) করার জন্য মিনিক্স-চালিত কম্পিউটারের প্রয়োজন হত। এছাড়া লিনাক্সের প্রাথমিক সংস্করণগুলোকে হার্ড ডিস্ক থেকে বুট করানোর জন্য অপর একটি অপারেটিং সিস্টেমের উপস্থিতির প্রয়োজন হত। তবে শীঘ্রই এ সমস্যার সমাধান হিসেবে তৈরি করা হয় কিছু আত্মনির্ভরশীল বুটলোডার; এই বুটলোডারগুলোর মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত ছিলো লিলো। এরপর লিনাক্স উপযোগিতার হিসেবে মিনিক্সকে দ্রুত ছাড়িয়ে যায়। লিনুস ও লিনাক্স কার্নেলের অন্যান্য প্রাথমিক ডেভেলপারেরা কার্নেলের পরিবর্তন সাধন করেন যাতে সেটি গ্নুর বিভিন্ন উপাদান ও ব্যবহারকারীদের জন্য লেখা প্রোগ্রামগুলোর সাথে কাজ করতে পারে। এভাবে ধীরে ধীরে লিনাক্স গঠন ও উপযোগিতার দিক থেকে একটি সম্পূর্ণ অপারেটিং সিস্টেমের রূপ নিতে থাকে। বর্তমানে লিনাক্স কার্নেলের উন্নয়নে দিকনির্দেশনা দেন লিনুস তোরভাল্দ্‌স নিজে, তবে কার্নেলের সহযোগী অন্যান্য ব্যবস্থাগুলো, যেমন গ্নু উপাদান, আলাদাভাবে উন্নয়ন করা হয়। আর লিনাক্স বিতরণকারী বিক্রেতা বা প্রতিষ্ঠানগুলোর বর্তমান কাজ হচ্ছে এই সবগুলো উপাদান একত্র করে এবং এর সাথে গ্রাফিক্যাল ইন্টারফেস (যেমন এক্স-উইন্ডো সিস্টেম-ভিত্তিক গ্নোম বা কেডিই) ও অ্যাপলিকেশন সফটওয়্যার যোগ করে একটি পূর্ণাঙ্গ পরিচালক ব্যবস্থা তৈরি করা। লিনাক্সের ম্যাসকট ও লোগো হচ্ছে টাক্স নামের একটি পেঙ্গুইন। ১৯৯৬ সালে ল্যারি ইউয়িঙের আঁকা একটি ছবি থেকে টাক্স আঁকার অনুপ্রেরণা নেওয়া হয়েছে। টাক্স ছাড়াও ওএস-ট্যান ও আরও কিছু লিনাক্স প্রতিনিধিত্বকারী চরিত্র রয়েছে, তবে সেগুলো খুব একটা প্রচলিত নয়। “লিনাক্স” নামটি কিন্ত লিনুস তোরভাল্দ্‌সের দেওয়া নয়। লিনাক্সের নামকরণের কৃতিত্ব আরি লেমকের। লেমকে হেলসিংকি ইন্সটিটিউট অব টেকনলজিতে ftp.funet.fi নামক একটি এফটিপি সার্ভারের প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করছিলেন। সার্ভারটি ছিল ফিনীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা নেটওয়ার্কের একটি অংশ, আর এই নেটওয়ার্কের সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে একটি ছিল লিনুসের হেলসিংকি বিশ্ববিদ্যালয়। লিনুস যখন তার অপারেটিং সিস্টেম প্রকল্পটি এই সার্ভারটিতে সংরক্ষণ করার জন্য লেমকে-কে দেন, লেমকে তখন তা একটি ডিরেক্টরিতে রাখেন ও ডিরেক্টরিটির নাম দেন “লিনাক্স”, অর্থাৎ “লিনুসের মিনিক্স” কথাটির সংক্ষিপ্ত রূপ। লিনুস অবশ্য নিজে প্রকল্পটির নাম “ফ্রিক্স” (freax) রাখতে চাচ্ছিলেন, যা ছিল “ফ্রি” (মুক্ত) ও ইউনিক্সের শেষ অক্ষর “এক্স”-এর সম্মিলিত রূপ। অবশ্য শেষ পর্যন্ত লেমকের দেয়া লিনাক্স নামটিই টিকে যায়। কপিরাইট ও ট্রেডমার্ক লিনাক্স কার্নেল ও বেশির ভাগ গ্নু উপাদান গ্নু জেনারেল পাবলিক লাইসেন্স (জিপিএল)-এর আওতাধীন। জিপিএলকৃত উৎসের কোডের সংশোধন ও এর থেকে উদ্ভূত সব কাজও জিপিএলের আওতাধীন হয়ে থাকে। লিনুস এ সম্পর্কে ১৯৯৭ সালে বলেন, “লিনাক্সের জিপিএলকরণ নিশ্চিতভাবেই আমার করা সেরা কাজ।“ লিনাক্সের অন্যান্য সহযোগী ব্যবস্থাগুলো অন্য লাইসেন্স ব্যবহার করে, যেমন অনেকগুলো কোড লাইব্রেরি এলজিপিএল ব্যবহার করে, আর এক্স-উইন্ডো ব্যবস্থা এমআইটি লাইসেন্স ব্যবহার করে। তোরভাল্দ্‌স বলেছেন যে, লিনাক্স কার্নেল জিপিএল সংস্করণ ২ থেকে সংস্করণ ৩ এ উন্নীত হবেনা। তিনি স্পষ্ট বলেছেন, নতুন লাইসেন্সের কিছু বিষয় তার পছন্দ হয়নি যেগুলো ডিজিটাল রাইট ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যারের ব্যবহার নিষিদ্ধ করে, এছাড়া সকল স্বত্ত্বধারীদের নিকট থেকে অনুমতি নেওয়ার বিষয়টিও অবাস্তবিক, যেখানে তারা সংখ্যায় হাজারেরও উপরে হতে পারে। ২০০১ সালে রেড হ্যাট লিনাক্স ৭.১ বিশ্লেষন করে দেখা গেছে যে তাতে ৩ কোটি লাইনেরও বেশি উৎস কোড (সোর্স কোড) রয়েছে। গঠনমূলক ব্যয় কাঠামো বিবেচনা করে দেখা গেছে, এই ডিস্ট্রিবিউশনটির উন্নয়নে ৮ হাজার মানববর্ষ লেগে যেতো, যদি এই সব সফটওয়্যার প্রথাগত স্বত্ত্বযুক্ত পদ্ধতিতে উন্নয়ন হতো এবং শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই প্রায় ১১ হাজার কোটি বাংলাদেশি টাকা (২০১৯ সালের বাংলাদেশি টাকা হিসাবে) খরচ হতো। বেশিরভাগ কোড (৭১%) সি দ্বারা উন্নয়নকৃত, এর পাশাপাশি অন্যান্য প্রোগ্রামিং ভাষাও ব্যবহার হয়েছে যেমন, সি++, অ্যাসেম্বলি ভাষা, পার্ল, পাইথন, ফোরট্রান এবং বিভিন্ন শেল স্ক্রিপ্টিং ভাষা। এর মধ্যে প্রায় অর্ধেক বা তার কিছু বেশি লাইন জিপিএল লাইসেন্সের আওতায় রয়েছে। লিনাক্স কার্নেল নিজে ছিল ২.৪ মিলিয়ন লাইন কোড, অথবা মোট পরিমাণের ৮%। পরববর্তীতে একই বিশ্লেষণ ডেবিয়ান গ্নু/লিনাক্স সংস্করণ ৪.০ (ইচ, যেটি ২০০৭ সালে মুক্তি পায়) এর উপর চালানো হয়। এই ডিস্ট্রিবিউশনে রয়েছে ২৮৩ মিলিয়ন এর কাছাকাছি উৎস কোড লাইন, যেটি যদি প্রথাগত পদ্ধতিতে করা হলে প্রয়োজন হতো ৭৩ হাজার মানববর্ষ এবং খরচ হতো প্রায় ৬.৫ হাজার কোটি বাংলাদেশি টাকা (২০১৮ সালের বাংলাদেশি মূদ্রা হিসাবে)। ট্রেডমার্ক লিনুস তোরভাল্দ্‌স মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে লিনাক্স ট্রেডমার্কটির মালিক। ট্রেডমার্কটির লাইসেন্সকরণ বর্তমানে দেখাশোনা করছে লিনাক্স মার্ক ইন্সটিটিউট (এলএমআই)। এলএমআই যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও অন্যান্য দেশে লিনাক্স ট্রেডমার্ক প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালাচ্ছে। দর্শন পারস্পারিক ব্যবহারযোগ্যতা লিনাক্সের বহনযোগ্যতা বহনযোগ্যতা বলতে এখানে একই সফটওয়্যারের বিভিন্ন পরিবেশে কাজ করার ক্ষমতাকে বোঝানো হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে লিনাক্স কার্নেল কেবল ৩৮৬-জাতীয় প্রসেসরের জন্যই বানানো হতো। পরবর্তীতে একে অন্যান্য স্থাপত্যের অধীনেও কর্মক্ষম করা হয়। যেমন: ইন্টেল/এএমডি (এক্স৮৬ স্থাপত্য) এক্স৮৬-৬৪ (এএমডির এএমডি৬৪ ও ইন্টেলের ইএম৬৪টি) আইএ-৬৪ এআরএম স্থাপত্য ডিইসি আলফা ইএসএ/৩৯০ মোটোরোলা ৬৮কে মিপ্স স্থাপত্য পিএ আরআইএসসি পাওয়ারপিসি সুপারএইচ স্পার্ক সম্প্রদায় একটি ডিস্ট্রিবিউশন ব্যাপক অর্থে এর উন্নয়নকারী এবং ব্যবহারকারী সম্প্রদায় কর্তৃক পরিচালিত হয়। কিছু বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে তাদের ডিস্ট্রিবিউশন উন্নয়ন ও অনুদানের কাজ করে থাকে, একটি ভালো উদাহরন হিসাবে বলা যায় ডেবিয়ান। আবার কিছু প্রতিষ্ঠানকে তাদের বাণিজ্যিক পণ্যের একটি সম্প্রদায় চালিত সংস্করণ রাখতেও দেখা যায়, যেমন- রেড হ্যাট কর্তৃক ফেডোরা এবং নভেল কর্তৃক ওপেনসুয্যে। বিভিন্ন শহর ও অঞ্চলে, স্থানীয় সহযোগী যারা লিনাক্স ইউজার গ্রুপ (লাগ) নামে পরিচিত তারা তাদের পছন্দের ডিস্ট্রিবিউশন প্রচারণার কাজ করে, সেই সাথে ফ্রি সফটওয়্যার নিয়েও প্রচার চালায়। তারা মাঝেমধ্যে দেখা সাক্ষাতের আয়োজন করে, প্রদশর্নী, প্রশিক্ষণ, কারিগরী সহায়তা এবং অপারেটিং সিস্টেম ইন্সটলে নতুন ব্যবহারকারীদের সাহায্য প্রদান করে। বিভিন্ন ইন্টারনেট সম্প্রদায়ও লিনাক্স ব্যবহারকারী এবং উন্নয়নকারীদের সহায়তা প্রদান করে। বেশিরভাগ ডিস্ট্রিবিউশন, ফ্রি/মুক্তসোর্স প্রকল্পের রয়েছে নিজস্ব আইআরসি চ্যাটরুম অথবা নিউজগ্রুপ, অনলাইন ফোরামসমূহও সহায়তার একটি ক্ষেত্র, উল্লেখ্যযোগ্য উদাহরন হিসাবে- linuxquestions.org এবং বিভিন্ন ডিস্ট্রিবিউশনভিত্তিক সহায়তা ও সম্প্রদায় ফোরাম, যেমন- উবুন্টু, ফেডোরা, জেন্টু ইত্যাদি ফোরাম। লিনাক্স ডিস্ট্রিবিউশনগুলোর রয়েছে মেইলিং লিস্ট; সাধারণত সেখানে নির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা হয় যেমন, নির্দিষ্ট একটি তালিকার উন্নয়ন এবং ব্যবহার নিয়ে। বিভিন্ন প্রযুক্তি ওয়েবসাইট রয়েছে যেখানে লিনাক্সকে তুলে ধরা হয়। লিনাক্সভিত্তিক ছাপানো পত্রিকাসমূহে প্রচ্ছদ ডিস্ক অন্তর্ভুক্ত থাকে যেখানে সফটওয়্যার অথবা এমনকি সম্পূর্ন লিনাক্স ডিস্ট্রিবিউশন থাকতে পারে। যদিও লিনাক্স ডিস্ট্রিবিউশনগুলো বিনামূল্যে পাওয়া যায়, তবে বেশকিছু বৃহৎ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বিক্রয়, সহায়তা এবং বিভিন্ন উপকরনসমূহ ও ফ্রি সফটওয়্যারের উন্নয়নে অবদান রাখে। এক বিশ্লেষনে দেখা গেছে যে, ডিসেম্বর ২০০৮ থেকে জানুয়ারী ২০১০ পর্যন্ত লিনাক্স কার্নেলের প্রায় ৭৫% কোড বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে কর্মরত প্রোগ্রামারদের দ্বারা লিখিত হয়েছে, প্রায় ১৮% লিখিত হয়েছে প্রথাগত মুক্ত সোর্স সম্প্রদায় দ্বারা। কিছু উল্লেখযোগ্য বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান যারা এতে অবদান রেখেছে তার মধ্যে রয়েছে ডেল, আইবিএম, হিউলেট-প্যাকার্ড, ওরাকল, সান মাইক্রোসিস্টেম (এখন ওরাকলের অংশ), নভেল এবং নকিয়া। কিছু বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, বিশেষত রেড হ্যাট, নভেল, ক্যানোনিকেল লিনাক্স ডিস্ট্রিবিউশন ব্যবহার উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ব্যবসা করছে। ফ্রি সফটওয়্যার লাইসেন্স, যার উপর ভিত্তি করে লিনাক্স কার্নেল নির্ভর বিভিন্ন সফটওয়্যার উন্নয়ন করা হয়, সেটি বাণিজ্যিকীকরণে ব্যাপকভাবে অনুমতিপ্রদান এবং উৎসাহিত করে; সম্পূর্ণ এবং পৃথক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের লিনাক্স ডিস্ট্রিবিউশনের মধ্যে সম্পর্ককে মিথোজীবি হিসাবে কল্পনা করা যায়। বাণিজ্যিক সরবরাহকারীদের ব্যবসার একটি সাধারণ কাঠামো হল সহায়তার জন্য মূল্য নির্ধারণ করা, বিশেষত বাণিজ্যিক ব্যবহারকারীদের জন্য। কিছু প্রতিষ্ঠান তাদের ডিস্ট্রিবিউশনের বিশেষায়িত ব্যবসায়িক সংস্করণ প্রকাশ করে, যেখানে থাকে স্বত্ত্বযুক্ত সহায়তা এবং অনেক বেশি সংখ্যক ইন্সটলেশন নিয়ন্ত্রণকারী সুবিধাযুক্ত ব্যবস্থা বা প্রশাসনিক কার্যক্রম সহজীকরণের ব্যবস্থা। আরেকটি ব্যবসায়িক কাঠামো হল, হার্ডওয়্যার বিক্রয়ের জন্য সফটওয়্যার প্রদান করা। কম্পিউটার শিল্পতে এটি একটি সাধারণ বিষয়, যেমন অপারেটিং সিস্টেম সিপি/এম, অ্যাপল ডস এবং ম্যাক ওএস ৭.৫ এর আগের সংস্করণগুলো, যেগুলো বিনামূল্যে কপিযোগ্য (কিন্তু পরিবর্ধন/পরিবর্তন যোগ্য নয়)। যেহেতু ১৯৮০ এর পুরোটা জুড়ে হার্ডওয়্যার একটি আদর্শ কাঠামোবদ্ধ হয়ে আসছে, ফলে হার্ডওয়্যার নির্মাতাদের জন্য এই পদ্ধতিতে লাভবান হওয়া বেশ কষ্টকর হয়ে গেছে। বর্তমানে সিস্টেম৭৬-এর পপ!_ওএস এমনই একটি উদাহরণ। ডিস্ট্রিবিউশন লিনাক্স ডিস্ট্রিবিউশন, সংক্ষেপে ডিস্ট্রো হলো একটি সফটওয়্যার সংগ্রহ থেকে তৈরি করা অপারেটিং সিস্টেম, যেটার মূল ভিত্তি লিনাক্স কার্নেল এবং মাঝেমধ্যে একটি স্বকীয় প্যাকেজ ব্যবস্থাপনা সিস্টেম। লিনাক্স ব্যবহারকারীরা যেকোন একটি ডিস্ট্রিবিউশন ডাউনলোডের মাধ্যমে লিনাক্স ধারণ করে থাকে, যেগুলো আবার অনেকগুলো যন্ত্রের জন্যে উপযোগী। সে তালিকায় আছে গ্রত্থিত যন্ত্র(ওপেন্ডব্লিউআরটি) আর ব্যক্তিগত কম্পিউটার (লিনাক্স মিন্ট) থেকে ক্ষমতাসম্পন্ন সুপারকম্পিউটারও(রক ক্লাস্টার ডিস্ট্রিবিউশন)। কিছু জনপ্রিয় লিনাক্স ডিস্ট্রিবিউশন হলো— রেড হ্যাট এন্টারপ্রাইজ লিনাক্স ফেডোরা (অপারেটিং সিস্টেম) ওপেন সুসে আর্চ লিনাক্স (লিনাক্স ডিস্ট্রিবিউশন) মানজারো ডেবিয়ান লিনাক্স মিন্ট উবুন্টু কালি লিনাক্স ব্যাকবক্স (লিনাক্স ডিস্ট্রিবিউশন) এলিমেন্টারি ওএস ডিপিন লিনাক্স লাইট এভি লিনাক্স বোধি লিনাক্স ইন্টারফেস কমান্ড লাইন ইন্টারফেস বেশিরভাগ লিনাক্স ডিস্ট্রিবিউশনেই ডিফল্টভাবে গ্রাফিক্যাল ডেস্কটপ পরিবেশ ব্যবহৃত হয় যেখানে কমান্ড-লাইন ইন্টারফেস একটি টার্মিনাল ইমুলেটর বা আলাদা ভার্চুয়াল কনসোল দ্বারা বাস্তবায়িত করা হয়ে থাকে। বেশিরভাগ নিম্নধাপের লিনাক্স উপকরণসমূহ, যেমন গ্নু ইউজারল্যান্ড, ব্যাপকভাবে কমান্ড-লাইন ইন্টারফেস ব্যবহার করে। কমান্ড লাইন ইন্টারফেস সাধারণত পূনরাবৃত্তিমূলক বা কালক্ষেপণমূলক কাজ সমূহের স্বয়ংক্রিকরণের কাজে বহুল ব্যবহৃত হয় এবং আন্তঃপ্রক্রিয়া যোগাযোগ প্রদান করে। একটি গ্রাফিক্যাল টার্মিনাল ইমুলেটর প্রোগ্রাম লিনাক্স ডেস্কটপ থেকে কমান্ড লাইন ইন্টারফেসে প্রবেশের কাজে ব্যবহৃত হয়। একটি লিনাক্স সিস্টেমে কমান্ড লাইন ইন্টারফেস সাধারণত শেল দ্বারা বাস্তবায়িত হয়, যেটি ইউনিক্স সিস্টেমের সাথে মিথস্ক্রিয়ারও একটি প্রথাগত উপায়। সার্ভারের জন্য উন্নয়নকৃত একটি লিনাক্স সিস্টেমে সাধারণত কমান্ড লাইন ইন্টারফেসই একমাত্র ইন্টারফেস হিসাবে ব্যবহার হতে পারে। এক্স উইন্ডো ব্যবস্থাপক বেশিরভাগ লিনাক্স ডিস্ট্রিবিউশনে ব্যবহৃত জনপ্রিয় গ্রাফিক্যাল ডেস্কটপ পরিবেশগুলো এক্স উইন্ডো সিস্টেমের উপর ভিত্তি করে নির্মিত, যেটিকে সংক্ষেপে এক্স হিসাবেও অভিহিত করা হয়ে থাকে। এটি নেটওয়ার্ক স্বচ্ছতা প্রদান করে এবং একটি সিস্টেমে চলা গ্রাফিক্যাল অ্যাপলিকেশনসমূহ অন্য আরেকটি সিস্টেমে প্রদর্শনের অনুমতি প্রদান করে যেখানে ব্যবহারকারীকে উক্ত অ্যাপলিকেশনগুলোর সাথে মিথস্ক্রিয়ার প্রয়োজন হতে পারে। অন্যান্য ডেস্কটপ পরিবেশসমূহ সাধারণ এক্স উইন্ডো ম্যানেজার নামে পরিচিত, যেমন- এফভিডব্লিউএম, এনলাইটমেন্ট ও উইন্ডো মেকার, যেগুলো ডেস্কটপ পরিবেশের সাপেক্ষে আরও স্বল্প পরিমাণের কাজ সম্পন্ন করতে পারে। একটি উইন্ডো ম্যানেজার বিভিন্ন অ্যাপলিকেশন উইন্ডোসমূহের স্থানান্তর এবং চেহারা সংক্রান্ত নিয়ন্ত্রণ প্রদান করে থাকে এবং এক্স উইন্ডো সিস্টেমের সাথে মিথস্ক্রিয়া করে থাকে। ডেস্কটপ পরিবেশসমূহ এদের আদর্শ ইন্সটলেশনের অংশ হিসাবে উইন্ডো ব্যবস্থাপক অন্তর্ভুক্ত করে (যেমন ২০১০ সাল অনুযায়ী, গ্নোমের জন্য মেটাসিটি, কেডিই এর জন্য কেউইন এবং এক্সএফসিই এর জন্য এক্সএফডব্লিউএম), যদিও নিজস্ব পছন্দ অনুযায়ী ব্যবহারকারী অন্য কোন উইন্ডো ম্যানেজার বাছাই করতে পারেন। ডেস্কটপ পরিবেশ বর্তমান সময়ে ডেস্কটপ ও ল্যাপটপ কম্পিউটারে লিনাক্সের চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে। বর্তমানে বেশিরভাগ লিনাক্স ডিস্ট্রোই গ্রাফিক্যাল ডেস্কটপ পরিবেশ ব্যবহার করে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো গ্নোম ও কেডিই প্লাজমা ডেস্কটপ। এর পাশাপাশি এলএক্সডিই, এক্সএফসিই ইত্যাদি তুলনামূলক হালকা ডেস্কটপ পরিবেশও রয়েছে যেগুলো মূলত নিম্ন-কনফিগারেশনের কম্পিউটার সিস্টেমকে উদ্দেশ্য করে উন্নয়ন করা হয়েছে। ডেস্কটপে লিনাক্সের পারফরমেন্স সবসময়ই একটি বিতর্কিত ইশু, উদাহরণস্বরুপ বলা যায়, ২০০৭ সালে কন কলিভাস শুধুমাত্র সার্ভারে লিনাক্সের পারফরমেন্সের দিকে নজর দেওয়ার জন্যে লিনাক্স সম্প্রদায়কে দায়ী করেন। তিনি ডেস্কটপের প্রতি এরুপ ঔদাসীন্য দেখে হতাশ হয়ে লিনাক্স কার্নেল উন্নয়ন থেকে সরে আসেন এবং পরবর্তীতে এই বিষয়ে একটি সাক্ষাৎকারও প্রদান করেন। তখন থেকেই ডেস্কটপে লিনাক্সের পারফরমেন্স উন্নয়নের জন্য উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কাজ শুরু হয়েছে। আপস্টার্ট এধরনেরই একটি প্রকল্প যেটির মূল লক্ষ্য হলো লিনাক্স বুটের সময় ত্বরান্বিত করা। প্রয়োগ thumb|250px|right|একটি গ্নোম ডেস্কটপ অতীতে লিনাক্স সংস্থাপন ও এর গঠন-প্রকৃতি নির্ধারণের জন্য ব্যবহারকারীদের কম্পিউটার সম্পর্কে গভীর জ্ঞানের প্রয়োজন হত। তাছাড়া ব্যবহারকারীরা লিনাক্সের ভেতরের অংশে সরাসরি প্রবেশাধিকার পান। এই কারণে অতীতের লিনাক্স ব্যবহারকারীরা বেশির ভাগই মাইক্রোসফট উইন্ডোজ ও ম্যাকওএস ব্যবহারকারীদের চেয়ে বেশি প্রযুক্তিমনা হতেন। তারা নিজেদেরকে হ্যাকার বা গিক বলতেও ভালবাসতেন। তবে এখন লিনাক্স ব্যবহারকারীদের এই বাঁধাধরা রূপ আর দেখা যায় না। লিনাক্সের ব্যবহারকারী-বন্ধুভাবাপন্নতা অনেক বেড়েছে, আর লিনাক্সের বিভিন্ন ডিস্ট্রিবিউশন এখন অনেক জায়গায় ব্যবহার হচ্ছে। বিশেষ উদ্দেশ্য ক্ষেত্র, যেমন ইমেজ রেন্ডারিং, ওয়েব সেবা, ইত্যাদি ক্ষেত্রে এবং সার্ভারেও লিনাক্সের ব্যবহার চোখে পড়ার মত বৃদ্ধি পেয়েছে। লিনাক্স বর্তমানে ডেস্কটপেও উল্লেখযোগ্যভাবে জায়গা করে নিচ্ছে। thumb|250px|right|একটি কেডিই ডেস্কটপ লিনাক্স তথাকথিত ল্যাম্প সার্ভার-সফটওয়্যার সম্মিলনের (লিনাক্স, অ্যাপাচি, মাইএসকিউএল, পার্ল/পাইথন/পিএইচপি) ভিত্তি। ল্যাম্প প্ল্যাটফর্মটি ওয়েব উন্নয়নকারীদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। উইকিপিডিয়ার জন্য লেখা মিডিয়াউইকি সফটওয়্যারটিও ল্যাম্প প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করছে। এছাড়া লিনাক্সে রয়েছে অনেক ডাটাবেস সফটওয়্যার যেমন - মাইএসকিউএল, সাইবেস এএসই, এমএসকিউএল, ইত্যাদি। সার্ভার এবং ডেস্কটপে সাধারণ ব্যবহারযোগ্য লিনাক্স ডিস্ট্রিবিউশনের পাশাপাশি বিভিন্ন কাজের জন্য বিশেষভাবে উন্নয়নকৃত ডিস্ট্রিবিউশনও রয়েছে, এসকল কাজের মধ্যে রয়েছে, কম্পিউটার স্থাপত্য সমর্থন, গ্রথিত যন্ত্র, স্থায়ীত্ব, নিরাপত্তা, কোন একটি অঞ্চল বা ভাষার আঞ্চলিকতা, নির্দিষ্ট ব্যবহারকারী দলকে উদ্দেশ্য করা, রিয়েল টাইম অ্যাপলিকেশন সমর্থন, অথবা কোন ডেস্কটপ পরিবেশের নিজস্ব ডিস্ট্রিবিউশন। অধিকন্তু, কিছু বিশেষ ডিস্ট্রিবিউশনে কেবলমাত্র পূর্ণ ফ্রি সফটওয়্যার অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকে। বর্তমানে ৩০০ এর অধিক ডিস্ট্রিবিউশন উন্নয়নরত অবস্থায় আছে, যার মধ্যে এক ডজনের মত ডিস্ট্রিবিউশন সাধারণ উদ্দেশ্যে ব্যবহারের জন্য ব্যাপকভাবে জনপ্রিয়তা ও পরিচিতিঅর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। বেশকিছু শিল্প সহযোগী প্রতিষ্ঠান এবং হার্ডওয়্যার কনফারেন্স লিনাক্সের জন্য বিভিন্ন প্রচলিত হার্ডওয়্যারসমূহ পরিচালনা ও সহায়তা উন্নত করার কাজে নিয়োজিত আছে, যেমন- ফ্রিডমএইচইসি। লিনাক্স ব্যবহার ডেস্কটপ লিনাক্সে চালানোর মত উচ্চমানের ডেস্কটপ সফটওয়ারের প্রচন্ড চাহিদা আছে। এধরনের সফটওয়ার হচ্ছে লেখালাখি (word processors), হিসাবনিকাশ (spreadsheets), ইমেইল গ্রাহক (email clients), ওয়েব ব্রাউজার (web browsers) ইত্যাদি। নিচে কিছু প্রধান লিনাক্স সফটওয়ারের তালিকা দেয়া হলঃ অপিস: ওপেনঅফিস, লিব্রাঅফিস, আইবিএম লোটাস সিম্ফনি ইত্যাদি অপিস ব্যবস্থাপনার কাজে লাগে ইন্টারনেট: মোজিলা ফায়ারফক্স, মোজিলা থান্ডারবার্ড, ব্রেভ ওয়েব ব্রাউজার, অপেরা, গুগল ক্রোম, ক্রোমিয়াম, পিজিন, কোপেতে, ট্রান্সমিশন, এমপ্যাথি, ডেল্যুয, জিডব্লিউগেট, ইউগেট, টিমভিউয়ার মাল্টিমিডিয়া: ভিএলসি মিডিয়া প্লেয়ার, সেলুলয়েড, টোটেম (গ্নোম ভিডিওজ), অ্যামারক, ক্যাফেইন, এসএম প্লেয়ার,রিদমবক্স, ক্লেমেন্টাইন, কেথ্রিবি গ্রাফিক্স: গিম্প, ইঙ্কস্পেস, স্ক্রাইবাস, ব্লেন্ডার, গ্নোম ফটোজ, জিথাম্ব প্রোগ্রামিং: অ্যাটম, ভিজুয়াল স্টুডিও কোড, কোড::ব্লকস, নেটবিনস, এক্লিপ্স, কেডেভেলপ, পাইচার্ম, কোয়ান্টা প্লাস, কিউটি ডিজাইনার যদিও লিনাক্সে ডেস্কটপ প্রকাশনা অথবা পেশাদার সঙ্গীতের মত বিশেষ বিষয়ের জন্য বাণিজ্যিক মানের সফটওয়্যারের অভাব আছে, তা সত্ত্বেও যে সমস্ত ব্যবহারকারী ম্যাক ওএস অথবা উইন্ডোজ ছেড়ে লিনাক্স ব্যবহার করা শুরু করেছেন, তারা আগের অপারেটিং সিস্টেমের সমতুল্য প্রায় সব সফটওয়্যারই লিনাক্সে সুলভ। তাছাড়া যেসব সফটওয়ার উইন্ডোজ বা ম্যাক ওএসের জন্য বিনামূল্যে পাওয়া যায়, সেগুলোও সাধারণত লিনাক্সের জন্য পাওয়া যায়। অনেক স্বত্বযুক্ত সফটওয়ারও বর্তমানে লিনাক্স সমর্থন করে; যেমন- অ্যাডোব ফ্ল্যাশ প্লেয়ার, অ্যাডোব রিডার, নিরো বার্নিং রম, অপেরা ওয়েব ব্রাউজার, রিয়েল প্লেয়ার, স্কাইপি। ওয়াইন নামে উম্মুক্ত সোর্সের একটি প্রকল্পের ক্রসওভার এমন একটি সমাধান যা কিনা মাইক্রোসফট অফিস, অ্যাডোবি ফটোশপ, ড্রিমওয়েভার, এডোব ইলাস্ট্রেটর ইত্যাদিের উইন্ডোজ সংস্করণ লিনাক্সে চালাতে পারে। গেমস thumb|right|ভেগা স্ট্রাইক, মহাকাশ ভ্রমণ খেলা উইন্ডোজ, বিভিন্ন গেমিং কনসোল কিংবা ম্যাক ওএস টেনের তুলনায় লিনাক্সে খেলার সফটওয়্যার নেই বললেই চলে। লিনাক্সের বাজার খুব সীমিত হওয়ায় কোন খেলা তৈরির প্রতিষ্ঠান লিনাক্সের জন্য গেম তৈরি করতে আগ্রহী হয়নি। তবে এখন লিনাক্সে স্টীম দিয়ে অনেক গেমস খেলা যায়। লিনাক্স গেমার্স গেম লিস্ট ও দ্য লিনাক্স গেম টোম এ অনেকগুলো লিনাক্সে খেলার মত খেলার তালিকা আছে। কিছু কিছু উম্মুক্ত সোর্সের খেলা আছে যেগুলো বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে, যেমন নেটহ্যাক ও টাক্স রেসার। এদের উপর ভিত্তি করে অনেক খেলা যেমন ফ্রিসিভ ও দি আর-কুয়ান মাস্টার্স তৈরি হয়েছে। এছাড়াও লিনাক্স প্লাটফর্মের জন্য নির্মিত আরো কিছু জনপ্রিয় এবং উচ্চমানসম্পন্ন খেলার মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হলো- এসল্ট কিউব, আরবান টেরর, আমেরিকান আর্মি, ড্রিমচেজ, ভিড্রিফট, টরকস, ডুম, এলিয়েন এরিনা, জিরোএডি, এনিমি টেরিটরি, এক্সমোটো, ফ্রোজেন বাবল ইত্যাদি। কোন কোন খেলা তৈরির প্রতিষ্ঠান সরাসরি লিনাক্সের উপযোগী খেলা প্রকাশ করতে শুরু করেছেন। যেমন- আইডি সফটওয়ারের কোয়েক ৪। অনেক প্রতিষ্ঠান উইন্ডোজে চলা খেলাগুলোকে লিনাক্সের উপযোগী করে তৈরি করছেন। ১৯৯৮ সালে প্রতষ্ঠিত লোকি সফটওয়ার, ২০০১ সালে প্রতিষ্ঠিত লিনাক্স গেম পাবলিশিং এ ধরনের প্রতিষ্ঠান। ওয়াইন, সেডেজা ও ক্রসওভার গেমস উইন্ডোজের অনেক গেম লিনাক্সে চালানোর সুবিধা দিচ্ছে। ভার্চুয়াল মেশিন ও নিম্ন-স্তিরের ইমুলেটর'' এর মাধ্যমেও অন্য প্লাটফর্মের (যেমন- সনি প্লেস্টেশন, নিনটেন্ডো উই]] ইত্যাদি) জন্য তৈরীকৃত খেলা লিনাক্সে চালানো যাচ্ছে। সার্ভার, সুপারকম্পিউটার এবং এম্বেডেড যন্ত্র লিনাক্স ডিস্ট্রিবিউশনগুলো দীর্ঘসময় ধরেই সার্ভার সার্ভার অপারেটিং সিস্টেম হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে, এই ক্ষেত্রে তারা উল্লেখ্যযোগ্য পরিমাণে অবদান রেখেছে, ২০০৬ সালে নেটক্রাফটের একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, বিশ্বের ১০টির মধ্যে ৮টি নির্ভরযোগ্য ইন্টারনেট হোস্টিং কোম্পানী তাদের ওয়েব সার্ভারে লিনাক্স ডিস্ট্রিবিউশন ব্যবহার করে থাকে। ২০০৮ এর জুন পর্যন্ত, ১০টির মধ্যে ৫টিতে লিনাক্স ডিস্ট্রিবিউশন, ১০টির মধ্যে ৩টিতে ফ্রিবিএসডি এবং ১০টির মধ্যে ২টিতে মাইক্রোসফট উইন্ডোজ চলছে, ২০১০ এর ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত, ১০টির মধ্যে ৬টিতে লিনাক্স ডিস্ট্রিবিউশন, ১০টির মধ্যে ২টিতে ফ্রি-বিএসডি এবং ১০টির মধ্যে ১টিতে মাইক্রোসফট উইন্ডোজ চলছে। লিনাক্স ডিস্ট্রিবিউশনগুলো হলো ল্যাম্প সার্ভার-সফটওয়্যার সংমিশ্রনের (লিনাক্স, অ্যাপাচে, মাইএসকিউএল, পার্ল/পিএইচপি/পাইথন) প্রধান অনুষংগ যেটি সাম্প্রতিক সময়ে উন্নয়নকারীদের মাঝে বিপুল জনপ্রিয়তা পেয়েছে এবং যেটি ওয়েবসাইট হোস্টিংয়ের একটি কমন প্লাটফর্ম হিসাবে বর্তমানে সমাদৃত। লিনাক্স ডিস্ট্রিবিউশনগুলো মেইনফ্রেম কম্পিউটারের অন্যান্য অপারেটিং সিস্টেমগুলোর তুলনায় তাদের মূল্যমানের কারণে বিগত কয়েক দশক যাবত মেইনফ্রেম কম্পিউটারের অপারেটিং সিস্টেম হিসাবেও জনপ্রিয়তা পেয়ে আসছে। ২০০৯ সালের ডিসেম্বরে, বড় কম্পিউটার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত আইবিএম মেইনফ্রেম কম্পিউটারভিত্তিক এন্টারপ্রাইজ লিনাক্স সার্ভার বিস্তৃত অর্থে বাজারজাতকরন ও বিক্রয়ের ঘোষণা দেয়। সুপারকম্পিউটারের অপারেটিং সিস্টেম হিসাবেও লিনাক্স ডিস্ট্রিবিউশনগুলো সমাদৃত, ২০১০ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত, বিশ্বের শীর্ষ ৫০০ সিস্টেমের মধ্যে ৪৫৯ টি (৯১.৮%) লিনাক্স ডিস্ট্রিবিউশন দ্বারা চলে। বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুততম সুপার-কম্পিউটার বলে পরিচিত আইবিএমের সিকুয়া এর অপারেটিং সিস্টেম হিসাবেও লিনাক্স ব্যবহৃত হবে যেটি ২০১১ সালে কার্যক্ষম হবে। কম দাম ও উচ্চমানের কাস্টমাইজেশন সুবিধার কারণে গ্রথিত যন্ত্রগুলোতে লিনাক্স ব্যবহৃত হয়ে থাকে। গুগল কর্তৃক উন্নয়নকৃত অ্যানড্রয়েড এধরনেরই একটি লিনাক্সভিত্তিক কাস্টোমাইজড অপারেটিং সিস্টেম যেটি এমুহূর্তে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় মোবাইল অপারেটিং সিস্টেম। মুক্তসোর্স প্লাটফর্মে লিনাক্স ভিত্তিক পিডিএ এবং মুঠোফোন ২০০৭ সাল থেকে জনপ্রিয় হওয়া শুরু করে; উদাহরনস্বরুপ, নকিয়া এন৮১০, ওপেনমোকো নিও১৯৭৩ এবং মটোরোলার আরওকেআর এইট। এই ধারা অব্যাহত রেখে পাম (পরবর্তীতে এইচপি কর্তৃক অধিগ্রহণকৃত) একটি লিনাক্সভিত্তিক অপারেটিং সিস্টেম উন্নয়ন করে যেটির নাম হলো 'ওয়েবওএস' এবং যেটি পাম প্রি স্মার্টফোন সিরিজে ব্যবহৃত হয়। জনপ্রিয় টিভো ডিজিটাল ভিডিও রেকর্ডার একটি কাস্টমাইজড লিনাক্স ব্যবহার করে, একইভাবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যেমন- সিসকো/লিংকসিস কর্তৃক বাজারজাত কৃত বিভিন্ন রাউটার ও নেটওয়ার্ক ফায়ারওয়ালেও এধরনের লিনাক্স সিস্টেম ব্যবহৃত হয়। কর্গ ওয়েসিস, কর্গ ক্রোনাস, ইয়ামাহা মোটিফ এক্সএফ/এক্সএস মিউজিক ওয়ার্কস্টেশন, ইয়ামাহা এস৯০এক্সএস/এস৭০এক্সএস, ইয়ামাহা এমওএক্স৬/এমওএক্স৮ সিন্থেসাইজার, ইয়ামাহা মোটিফ-র‍্যাক এক্সএফ টক জেনারেটর মডিউল এবং রোল্যান্ড আরডি-৭০০জিএক্স ডিজিটাল পিয়ানো লিনাক্স ব্যবহার করে। মঞ্চসজ্জায় ব্যবহৃত আলোক সিস্টেমেও লিনাক্স ব্যবহৃত হয়, যেমন- হোলহুগল কনসোল। পাদটীকা তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ লিনাক্স ইন্টার্নালের গ্রাফিক্যাল ম্যাপ লিনাক্স কার্নেলের ওয়েবসাইট এবংং আর্কাইভ লিনাক্সের ইতিহাস বিষয়শ্রেণী:অপারেটিং সিস্টেম বিষয়শ্রেণী:ওপেন সোর্স বিষয়শ্রেণী:লিনাক্স বিষয়শ্রেণী:১৯৯১ের সফটওয়্যার বিষয়শ্রেণী:কম্পিউটিং প্ল্যাটফর্ম বিষয়শ্রেণী:লিনুস তোরভাল্দ্‌স বিষয়শ্রেণী:ইউনিক্স-সদৃশ
লিনাক্স
লেওনার্ড অয়লার () () (১৫ এপ্রিল, ১৭০৭, বাসেল, সুইজারল্যান্ড - ১৮ই সেপ্টেম্বর, ১৭৮৩, সাংক্‌ত্‌ পেতের্বুর্গ, রাশিয়া) একজন সুইস গণিতবিদ এবং পদার্থবিজ্ঞানী। তিনি ক্যালকুলাস, সংখ্যাতত্ত্ব, অন্তরক সমীকরণ, গ্রাফ তত্ত্ব ও টপোগণিতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। আধুনিক গণিতে ব্যবহৃত অনেক পরিভাষা ও ধারণা তার অবদান। গাণিতিক বিশ্লেষণে ব্যবহৃত গাণিতিক ফাংশন-এর ধারণা তারই আবিষ্কার। অয়লার e , পাই এর জন্য π , যোগের জন্য Σ চিহ্নের প্রবর্তন করেন। তিনি বলবিজ্ঞান, আলোকবিজ্ঞান ও জ্যোতির্বিজ্ঞানেও অবদান রাখেন। সমসাময়িককালে তার মত প্রকাশনা সম্পন্ন কোনো গণিতবিদ ছিলেন না। এমনকি মুদ্রণ ব্যবস্থার উন্নতি হওয়ার পরও তার সমপরিমাণ প্রকাশনা সম্পন্ন বিজ্ঞানীর সংখ্যা খুবই কম। অয়লারকে ১৮শ শতকের সেরা গণিতবিদ ও সর্বকালের সেরা গণিতবিদদের একজন বলে মনে করা হয়। গণিতবিদদের মধ্যে তার প্রকাশিত গবেষণা কাজের পরিমাণ আজও সর্বাধিক এবং এটি একটি গিনেস রেকর্ড। বলা হয় তার সম্পর্কে লাপ্লাস বলেছিলেন: "Lisez Euler, lisez Euler, c'est notre maître à tous" ("অয়লার পড়, অয়লার পড়, তিনি আমাদের সবার শিক্ষক।")। 2002 Euler নামের গ্রহাণুটি তার সম্মানে নামকরণ করা হয়। সুইস ১০-ফ্রা এর নোট এবং সুইজারল্যান্ড, রাশিয়া ও জার্মানির অসংখ্য ডাকটিকেটে তার ছবি রয়েছে। জীবন প্রথম জীবন thumb|অয়লারের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে ছাপানো পুরনো সুইস ১০ ফ্রাঁ এর নোট অয়লার এর বাবা ছিলেন পল অয়লার। তিনি ছিলেন রিফর্মড চার্চের একজন যাজক। মা ছিলেন মার্গারিট ব্রুকার, তিনিও ছিলেন একজন যাজকেরই মেয়ে। অয়লারের ছোট দুই বোন ছিল, আন্না মারিয়া এবং মারিয়া ম্যাগডালেনা। অয়লারের বয়স যখন এক বছর, তখন অয়লার পরিবার ব্যাসেল ছেড়ে রাইহেনে বসবাস করতে শুরু করেন এবং সেখানেই শৈশব কাটান অয়লার। পল অয়লার ছিলেন বের্নুলি পরিবারের—ইয়োহান বের্নুলির পারিবারিক বন্ধু, যিনি সে সময়ে ইউরোপের শ্রেষ্ঠ গণিতবিদ বিবেচিত ছিলেন। বের্নুলি তরুণ অয়লারের ওপর গভীর প্রভাব রাখেন। প্রাথমিক শিক্ষার জন্য অয়লারকে ব্যাসেলে তার মাতামহের কাছে পাঠানো হয়েছিল। মাত্র ১৩ বছর বয়সে তিনি ব্যাসেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং ১৭২৩ সালে তিনি দেকার্ত ও নিউটনের দার্শনিক ধারণাসমূহের তুলনামুলক বিশ্লেষণ করে দর্শনে মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করেন। এ সময়ে তিনি ইয়োহান বের্নুলির কাছে প্রতি শনিবার বিকেলে পড়তে যেতেন, যিনি তার ছাত্রের অসাধারণ গাণিতিক প্রতিভা বুঝতে পারেন। তার পিতার ইচ্ছানুযায়ী ধর্মযাজক হবার লক্ষ্যে এ সময় তিনি ধর্মতত্ত্ব, গ্রীক ও হিব্রু নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন, তবে বের্নুলি পল অয়লারকে বোঝান যে তার পুত্র শ্রেষ্ঠ গণিতবিদদের সারিতে স্থান করে নেবার জন্যেই জন্মগ্রহণ করেছে। বেরনুলির সাহায্যে ১৭২৬ সালে অয়লার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা সমাপ্ত করেন এবং ডি সোনো শিরোনামে শব্দ সঞ্চালনের ওপর পি.এইচ.ডি সম্পন্ন করেন। ১৭২৭ সালে 'জাহাজের পালের সবচেয়ে ভালো সন্নিবেশ কিভাবে করা যায়' তার ওপর একটি প্রবন্ধ লিখে প্যারিস আকাডেমির প্রাইজ প্রবলেম প্রতিযোগিতাতে জমা দেন গ্র্যান্ড প্রাইজের জন্য। সে বছর প্রথম পুরস্কার পেয়েছিলেন নেভাল আর্কিটেকচার এর জনক পিয়েরে বুগুয়ের। অয়লার লাভ করেন দ্বিতীয় স্থান। পরবর্তীকালে অয়লার তার জীবনে মোট ১২ বার এই পুরস্কার পেয়েছিলেন। সাংক্‌ত পিতেরবুর্গ এ সময়ে ইয়োহান বের্নুলির দুই পুত্র দানিয়েল ও নিকোলাস, সেন্ট পিতেরবুর্গে অবস্থিত ইমপেরিয়াল রাশিয়ান একাডেমি অফ সায়েন্সেসে কাজ করছিলেন। ১৭২৬ সালের জুলাই মাসে নিকোলাস রাশিয়ায় অবস্থানের এক বৎসরকাল অতিক্রান্ত হবার পর অ্যাপেন্ডিসাইটিসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। দানিয়েল তার ভাইয়ের গণিত/পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের পদটিতে নিয়োগ পাবার পর শারীরতত্ত্ব বিভাগে তার ছেড়ে আসা পদটির জন্যে সুহৃদ অয়লারের নাম সুপারিশ করেন। ১৭২৬ এর নভেম্বরে অয়লার আগ্রহের সাথেই আমন্ত্রণটি গ্রহণ করেন, কিন্তু মধ্যবর্তী সময়ে ইউনিভার্সিটি অফ বাসেলে পদার্থবিজ্ঞানে অধ্যাপক হবার ব্যর্থ চেষ্টা করে তার সাংক্‌ত পিতেরবুর্গে যোগদান করতে একটু বিলম্ব হয়। thumb|১৯৫৭ সালে প্রাক্তন সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রকাশিত অয়লারের ২৫০তম জন্মবার্ষিকীর স্মারক ডাকটিকেট। এতে লেখা ছিল: মহান গণিতজ্ঞ ও বিদ্যানুরাগী লিউনার্ট অয়লারের ২৫০ তম জন্মবার্ষিকীতে। অয়লার ১৭২৭ সালের ১৭ মে রাশিয়ার রাজধানীতে পদার্পণ করেন। তিনি চিকিৎসাবিজ্ঞান বিভাগের কনিষ্ঠ পদ হতে পদোন্নতিসহ গণিত বিভাগে যোগদান করেন। তিনি দানিয়েল বের্নুলির সাথে একই আবাসস্থলে অবস্থান করতেন এবং তারা যৌথভাবে বহু গবেষণায় অংশ নিয়েছেন। অয়লার রুশ ভাষায় দক্ষতা অর্জন করেন এবং সাংক্‌ত পিতেরবুর্গে থিতু হন। তাছাড়া তিনি রুশ নৌবাহিনীতে চিকিৎসকের কাজেও নিয়োজিত ছিলেন। পিটার দ্য গ্রেট প্রতিষ্ঠিত সাংক্‌ত পিতেরবুর্গের একাডেমিটির লক্ষ্য ছিল রাশিয়ার শিক্ষার উন্নতিসাধন এবং পশ্চিম-ইউরোপের সাথে বৈজ্ঞানিক পার্থক্য কমিয়ে আনা। তাই এ প্রতিষ্ঠানটিতে অয়লারের মত বিদেশী জ্ঞানসাধকদের জন্যে বিশেষভাবে আকর্ষণীয় করে পরিচালনা করা হত। একাডেমির যথেষ্ট অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা ছিল এবং এর ছিল একটি সমৃদ্ধ লাইব্রেরি যা কিনা স্বয়ং পিটারের ও রাশিয়ার অভিজাত ব্যক্তিদের ব্যক্তিগত লাইব্রেরির দানে গড়ে উঠেছিল। শিক্ষকদের ওপর ক্লাসের চাপ কমানোর জন্যে খুব অল্প সংখ্যক ছাত্র ভর্তি করা হত এবং একাডেমি তার বিভিন্ন অনুষদের শিক্ষকদের বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক প্রশ্ন নিয়ে চিন্তাভাবনা করার মত পর্যাপ্ত সময় ও স্বাধীনতা প্রদান করত। একাডেমির পৃষ্ঠপোষক ক্যাথারিন I, যিনি তার পরলোকগত স্বামীর প্রগতিশীল নীতি অনুসরণ করে আসছিলেন, অয়লারের আগমনের দিন তিনি মৃত্যুবরণ করেন। রাশিয়ার অভিজাত সমাজ সিংহাসনের উত্তরাধিকারী পিটার II এর ওপর প্রভাব বিস্তার করে। তারা একাডেমির বিদেশী গবেষকদের ওপর সন্দিগ্ধু হয়ে ওঠে এবং এতে অনুদান কমিয়ে দিয়ে এবং অন্যান্য নানা উপায়ে অয়লার ও তার সহকর্মীদের জন্যে অসুবিধের সৃষ্টি করেন। তবে পিটার II এর মৃত্যুর পর অবস্থার কিছুটা উন্নতি ঘটে, এবং অয়লার দ্রুত পদোন্নতি পেয়ে ১৭৩১ সালে পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপকে পরিণত হন। দু' বছর পর দানিয়েল বের্নুলি সেন্সরশিপ ও বৈরিতায় বিরক্ত হয়ে সাংক্‌ত পিতেরবুর্গ ছেড়ে বাসেলে চলে যান, এবং অয়লার গণিত বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে তার উত্তরসূরি মনোনীত হন। ৭ জানুয়ারি ১৭৩৪ এ তিনি ক্যাথারিনা সেল্লের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন, যিনি ছিলেন একাডেমি জিমন্যাসিয়ামের চিত্রকর গিওর্গ সেল্লের কন্যা। এই তরুণ দম্পতি নেভা নদীর পাড়ে একটি বাড়ি ক্রয় করে সংসার শুরু করেন। তাদের তেরটি সন্তানের মধ্যে কেবল পাঁচজন শৈশব উত্তীর্ণ করতে সক্ষম হয়। বার্লিন thumb|left|বিলুপ্ত জার্মান ডেমোক্রেটিক রিপাবলিকের স্টাম্প, অয়লারের ২০০ তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রকাশিত। স্টাম্পটির মধ্যভাগে লেখা তার বিখ্যাত পলিহেড্রা সূত্র . রাশিয়ার ক্রমাবনতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন হয়ে অয়লার ১৯ জুন ১৭৪১ সালে সাংক্‌ত পিতেরবুর্গ ছেড়ে বার্লিন একাডেমিতে যোগদান করেন, যা ফ্রেডেরিক দ্য গ্রেট অফ প্রুসিয়া তাকে প্রস্তাব করেছিলেন। তিনি দীর্ঘ পঁচিশ বছর বার্লিনে অবস্থান করেন এবং ৩৮০ টির বেশি প্রবন্ধ রচনা করেন। বার্লিনেই তিনি তার শ্রেষ্ঠ দু'টি কাজ সম্পন্ন করেন: Introductio in analysin infinitorum, ১৭৪৮ সালে প্রকাশিত ফাংশানের ওপর একটি রচনা এবং Institutiones calculi differentialis, ১৭৫৫ সালে ডিফারেন্সিয়াল ক্যালকুলাসের ওপর রচিত প্রবন্ধ। ১৭৫৫ সালে তিনি রয়েল সুইডিশ একাডেমি অফ সায়েন্সেস এর বিদেশী সভ্য নির্বাচিত হন। পাশাপাশি অয়লার ফ্রেডেরিকের ভাগ্নী রাজকুমারী আনয়াল্ট-দেসাঁউকে শিক্ষাদানে নিযুক্ত হন। অয়লার তাকে প্রায় ২০০ টি চিঠি লেখেন, যা পরবর্তীকালে একত্রিত হয়ে একটি বহুল-বিক্রিত গ্রন্থে রূপায়িত হয়, যার নাম ছিল প্রাকৃতিক দর্শনের বিবিধ বিষয়ে জার্মান রাজকন্যাকে লেখা অয়লারের পত্রগুচ্ছ। বইটিতে পদার্থবিজ্ঞান এবং গণিত সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে অয়লারের দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় মেলে, পাশাপাশি অয়লারের ব্যক্তিত্ব ও ধর্মবিশ্বাস সম্বন্ধেও অন্তর্দৃষ্টি লাভ করা যায়। বইটি তার যেকোন গাণিতিক প্রকাশনার চাইতে অধিক পঠিত পুস্তকে পরিণত হয়, এবং এটি ইউরোপজুড়ে এবং আমেরিকাতে প্রকাশিত হয়। এই 'চিঠিগুলোর' জনপ্রিয়তা বৈজ্ঞানিক বিষয় সাধারণ মানুষের জন্যে বোধগম্যরূপে উপস্থাপনের ব্যাপারে অয়লারের প্রতিভার পরিচায়ক, যা ছিল তার মতো গবেষক বৈজ্ঞানিকদের মধ্যে বিরল একটি গুণ। একাডেমির সম্মান বৃদ্ধিতে অনন্য ভূমিকা পালন করা সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত অয়লারকে বার্লিন ছাড়তে বাধ্য করা হয়। তার একটি কারণ ছিল ফ্রেডেরিকের সাথে ব্যক্তিত্বের সংঘর্ষ, যিনি অয়লারকে স্থূল বিবেচনা করতেন, বিশেষ করে জার্মান রাজের চক্রের অন্যান্য দার্শনিকদের তুলনায়। ফ্রেডেরিকের নিয়োগপ্রাপ্তদের মধ্যে ছিলেন ভলতেয়ার, এবং এই ফরাসি দার্শনিক রাজার সামাজিক গন্ডিতে একটি বিশেষ সম্মানের অধিকারী ছিলেন। অয়লার, যিনি ছিলেন একজন সাদাসিধে ও ধর্মভীরু মানুষ, তিনি তার বিশ্বাস ও রুচির দিক দিয়ে ছিলেন সাধারণ। তিনি নানাভাবে ভলতেয়ারের ঠিক বিপরীত ছিলেন। অয়লারের বাগ্মিতার সুখ্যাতি ছিল না, তথাপি তিনি এমন সব বিষয়ে বিতর্কে জড়িয়ে পড়তেন যে বিষয়ে তার জ্ঞান ছিল খুবই সামান্য, যার ফলে তিনি ভলতেয়ারের ক্ষুরধার বুদ্ধির নিয়মিত শিকারে পরিণত হতেন। ফ্রেডেরিকও অয়লারের ফলিত প্রকৌশল বিদ্যা সম্বন্ধে এভাবে হতাশা ব্যক্ত করেন: thumb|১৭৫৩ সালে ইমানুয়েল হ্যান্ডমান অঙ্কিত প্রতিকৃতি। এই প্রতিকৃতি থেকে তার ডান নেত্রপল্লবের অসুস্থতা আঁচ করতে পারা যায় এবং সম্ভাব্য নকুলান্ধতারও আভাস পাওয়া যায়। তার বাম চোখ সুস্থই দেখাচ্ছে, তবে পরবর্তীতে তাতে ছানি পড়ে। দৃষ্টিশক্তি হারানো অয়লারের দৃষ্টিশক্তি তার কর্মজীবন জুড়ে ক্রমাগত হ্রাস পেতে থাকে। তিন বছর দুরারোগ্য জ্বরে ভোগাড় পর ১৭৩৫ সালে তিনি তার ডান চোখের দৃষ্টিশক্তি প্রায় পুরোপুরি হারিয়ে ফেলেন, তবে অয়লার এর জন্যে সাংক্‌ত পিতেরবুর্গ একাডেমিতে তার মানচিত্রাঙ্কণের কষ্টকর অভিজ্ঞাতাকেই দায়ী করতেন। তার ডান চোখের দৃষ্টিশক্তি বার্লিনে অবস্থানকালে আরও কমতে থাকে এবং অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে ফ্রেডেরিক তাকে "সাইক্লপ" হিসেবে অভিহিত করতেন। অয়লার পরবর্তীকালে তার সুস্থ বামচোখেও ছানিতে আক্রান্ত হন এবং ১৭৬৬ সালে অসুখটি ধরা পরার কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই প্রায় পুরোপুরি অন্ধ হয়ে যান। তবে তার অসুস্থতা তার কাজের ওপর অল্পই প্রভাব ফেলে, দৃষ্টিশক্তির অভাব তিনি পুষিয়ে নিয়েছিলেন তার মানসিক হিসাবনিকাশে দক্ষতা ও অসাধারণ স্মৃতিশক্তি দিয়ে। দৃষ্টান্তস্বরূপ, অয়লার ভার্জিল রচিত ঈনীড কাব্যগ্রন্থ শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত না থেমে আবৃত্তি করতে পারতেন এবং সে সংস্করণের প্রতিটি পৃষ্ঠার প্রথম ও শেষ বাক্য কি ছিল তাও তিনি বলতে পারতেন। অনুলেখকদের সহযোগিতার ফলে বিভিন্ন শাখায় অয়লারের উৎপাদনশীলতা প্রকৃতপক্ষে বৃদ্ধি পায়। ১৭৭৫ সালে তিনি প্রায় প্রতি সপ্তাহে একটি করে গাণিতিক গবেষণা প্রবন্ধ রচনা করতেন। রাশিয়ায় প্রত্যাবর্তন ক্যাথারিন দ্য গ্রেটের সিংহাসনে আরোহণের পর রাশিয়ার পরিস্থিতির উন্নতি হতে শুরু করে এবং ১৭৬৬ সালে অয়লার সাংক্‌ত পিতেরবুর্গে একাডেমিতে ফিরে যাবার আমন্ত্রণ গ্রহণ করেন এবং তার জীবনের বাকি অংশ রাশিয়াতেই অবস্থান করেন। তার দ্বিতীয় দফায় রাশিয়ায় অবস্থান ছিল বেদনাভারাক্রান্ত। সাংক্‌ত পিতেরবুর্গে ১৭৭১ সালের এক অগ্নিকান্ডে তার বাড়ি ভস্মীভূত হয় এবং সে যাত্রা কোন মতে তার প্রাণ রক্ষা হয়। ১৭৭৩ সালে তিনি তার স্ত্রী সুইস চিত্রকর গিওর্গ সেল্লের কন্যা ক্যাথারিন মাত্র ৪০ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। প্রথম পক্ষের স্ত্রীর মৃত্যুর তিন বছর পর অয়লার তার স্ত্রীর সৎ বোন সালোম আবিজিল সেল্লেকে বিয়ে করেন। অয়লারের মৃত্যু পর্যন্ত তাদের দাম্পত্য জীবন স্থায়ী হয়েছিল। ১৮ সেপ্টেম্বর ১৭৮৩ সালে পরিবারের সদস্যদের সাথে মধ্যাহ্নভোজ সমাপ্ত করার পর আন্দ্রে লেক্সেলের সাথে নতুন আবিষ্কৃত ইউরেনাস এবং তার কক্ষপথ নিয়ে আলোচনা করবার সময় অয়লার মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের শিকার হন এবং কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মৃত্যুবরণ করেন। জ্যাকব ফন স্টেলিন রাশিয়ান একাডেমি অফ সায়েন্সেসের পক্ষে একটি সংক্ষিপ্ত শোকবার্তা রচনা করেন এবং একটি শোকগাঁথা রচনা করেছিলেন রুশ গণিতবিদ ও অয়লারের শিষ্য নিকোলাস ফাস, যিনি অয়লারের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠানে তা পাঠ করেন। ফরাসি একাডেমির পক্ষে লিখিত শোকবার্তায় ফরাসি গণিতবিদ ও দার্শনিক মার্কুই দ্য কন্ডরসেট মন্তব্য করেন: তাকে ভাসিলিয়েভস্কি দ্বীপের স্মলেনস্ক লুথেরান সমাধিক্ষেত্রে তার মৃতা পত্নীর পাশে সমাহিত করা হয়। ১৭৮৫ সালে রাশিয়ান একাডেমি অফ সায়েন্সেস পরিচালকের আসনের প্বার্শে অয়লারের একটি আবক্ষ মূর্তি স্থাপন করে। ১৮৩৭ সালে রাশিয়ান একাডেমি অফ সায়েন্সেস তার কবরে একটি সমাধিফলক স্থাপন করে, যা ১৯৫৬ সালে অয়লারের ২৫০ তম জন্মবার্ষিকীতে তার দেহাবশেষ সহ XVIII শতাব্দীর সমাধিক্ষেত্র আলেক্সান্ডার নেভস্কি লাভ্রায় স্থানান্তরিত করা হয়। thumb|আলেক্সান্ডার নেভস্কি লাভ্রায় অয়লারের কবর পদার্থবিজ্ঞান ও গণিতে অবদান অয়লার গণিতের প্রায় সকল শাখাতেই কাজ করেছেন: জ্যামিতি, ইনফিনিটসিমাল ক্যালকুলাস, ত্রিকোণমিতি, বীজগণিত, এবং সংখ্যা তত্ত্ব, পাশাপাশি কন্টিনিউয়াম পদার্থবিজ্ঞান, চন্দ্র তত্ত্ব পদার্থবিজ্ঞানের অন্যান্য ক্ষেত্রে। তিনি গণিতের ইতিহাসে একজন বহুপ্রজ ব্যক্তিত্ব; ছাপানো হলে তার রচনাবলী, যার কিনা বেশিরভাগই ভিত্তিস্বরূপ কাজ, প্রায় ৬০ থেকে ৮০ টি কোয়ার্টো ভলিউম দখল করবে। অয়লারের নাম বহুসংখ্যক বিষয়ের সাথে যুক্ত। গাণিতিক প্রতীক অয়লার নিজের লেখা বিপুল পরিমাণ ও সুপ্রচারিত পাঠ্যপুস্তকে বেশ কিছু নতুন প্রতীকের প্রচলন ও জনপ্রিয়করণ করেন। এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হল তিনি প্রথম ফাংশনের ধারণা প্রচলন করেন এবং f(x) চিহ্ন দ্বারা f কে x এর ফাংশন রূপে প্রকাশ করেন। তিনি ত্রিকোণমিতিক ফাংশন প্রকাশের আধুনিক রীতিটিরও প্রচলন করেন, e দ্বারা স্বাভাবিক লগারিদমের ভিত্তি (যা বর্তমানে অয়লারের সংখ্যা হিসাবেও পরিচিত), গ্রিক বর্ণ Σ দ্বারা যোগফল এবং i দ্বারা কাল্পনিক সংখ্যা প্রকাশের প্রচলন করেন। গ্রিক বর্ণ 'π দ্বারা বৃত্তের পরিধি ও ব্যাসের অনুপাত প্রকাশের রীতিটিও তিনি জনপ্রিয় করে তোলেন, তবে এ প্রতীকটি তার আবিষ্কৃত নয়। বিশ্লেষণ ইনফিনিটসিমাল ক্যালকুলাসের গড়ে ওঠা ছিল ১৮ শতকের গাণিতিক গবেষণার অগ্রদূত, এবং বের্নুলিরা—যারা ছিলেন অয়লারের পারিবারিক বন্ধু—এ ক্ষেত্রে গবেষণার পথিকৃৎ ছিলেন। তাদের প্রভাবেই ক্যালকুলাস অধ্যয়ন অয়লারের কাজের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। যদিও অয়লারের সব প্রমাণই আধুনিক গাণিতিক কড়াকড়ির মানদন্ডে উত্তীর্ণ হয়নি, তথাপি তার ধারণা থেকে অসাধারণ অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। অয়লার বিশ্লেষণে খ্যাতিমান হয়ে আছেন তার শক্তিধারার পুনঃপুনঃ ব্যবহার এবং অগ্রগতি সাধনের মাধ্যমে, যেমন বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, অয়লার e এবং বিপরীত বৃত্তীয় ফাংশানের শক্তি ধারায় বিস্তৃতি সরাসরি প্রমাণ করেছিলেন (নিউটন এবং লিবনিজ ১৬৭০ থেকে ১৬৮০ এর পরোক্ষ প্রমাণ করেছিলেন)। শক্তি ধারার সাহসী ব্যবহারের মাধ্যমে তিনি ১৭৩৫ সালে বিখ্যাত ব্যাসেল সমস্যা সমাধান করতে সক্ষম হন (১৭৪১ সালে তিনি এর আরো বিস্তারিত একটি প্রমাণ প্রদান করেন): thumb|অয়লারের সূত্রে জ্যামিতিক নমুনা অয়লার বিশ্লেষণী প্রমাণে সূচকীয় ফাংশন এবং লগারিদমের ব্যবহারের সূচনা করেন। তিনি শক্তি ধারার ব্যবহার করে বহুবিধ লগারিদমীয় ফাংশন আবিষ্কার করেন এবং সফলভাবে ঋণাত্মক ও জটিল সংখ্যার লগারিদম সজ্ঞায়িত করেন, যা লগারিদমের গাণিতিক ব্যবহারে বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। এছাড়া তিনি জটিল সংখ্যার সূচকীয় ফাংশনকে সজ্ঞাবদ্ধ করেন এবং এর সাথে ত্রিকোণমিতিক ফাংশনের সম্পর্ক আবিষ্কার করেন। যেকোন বাস্তব সংখ্যা φ এর জন্যে অয়লারের সূত্রানুসারে জটিল সূচকীয় ফাংশন নিম্নলিখিত শর্তটি মেনে চলে উপরিউক্ত সূত্রটির একটি বিশেষ ক্ষেত্র হল অয়লারের অভেদ, যাকে রিচার্ড ফাইনম্যান গণিতের আকর্ষনীয়তম সমীকরণ" হিসেবে মন্তব্য করেছেন, কারণ এতে একই সঙ্গে যোগ, গুণন, সূচকীয় এবং সমতা চিহ্ন ব্যবহৃত হয়েছে এবং সাথে গণিতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধ্রুবক 0, 1, e, i এবং π ব্যবহৃত হয়েছে। ১৯৮৮ সালে ম্যাথেমেটিকাল ইনটেলিজেন্সারের পাঠকেরা এটিকে "সর্বকালের সবচেয়ে সুন্দর গাণিতিক সমীকরণ" হিসাবে ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত করে। অয়লার সেই নির্বাচনের সেরা পাঁচটি সমীকরণের তিনটির সাথেই যুক্ত ছিলেন। দ্য ময়ভার সূত্র অয়লারের সূত্রের সরাসরি উপজাত। এ ছাড়াও অয়লার উচ্চতর তুরীয় ফাংশনের ধারণাটি বিস্তৃত করেন গামা ফাংশন আবিষ্কার করে এবং চতুর্ঘাত সমীকরণ সমাধানের একটি নতুন পন্থা তৈরি করেন। তিনি জটিল সীমা বিশিষ্ট সমাকলন করবারও একটি উপায় আবিষ্কার করেন, যা আধুনিক কমপ্লেক্স এনালিসিসের পথ প্রদর্শন করে। তার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল বৈচিত্রের ক্যালকুলাস, যার একটি বিখ্যাত ফলাফল অয়লার লাগ্রাঞ্জ সমীকরণ। অয়লার বিশ্লেষণী পদ্ধতির ব্যবহারের মাধ্যমে সংখ্যাতাত্তিক সমস্যা সমাধানের পথ দেখান। এর মাধ্যমে তিনি গণিতের দু'টি ভিন্ন শাখা একত্রিত করেন এবং বিশ্লেষণী সংখ্যা তত্ত্ব নামক একটি নতুন শাখার সূচনা করেন। এ নতুন শাখাটির ভিত্তি তৈরি করবার সময় অয়লার অধিজ্যামিতিক ধারা, q-ধারা, অধিবৃত্তীয় ত্রিকোণমিতিক ধারা এবং অবিরত ভগ্নাংশের বিশ্লেষণী তত্ত্বের সূচনা করেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, মৌলিক সংখ্যার অসীমতা প্রমাণ করেন হারমনিক ধারার অপসারিতা ব্যবহার করে, এবং তিনি মৌলিক সংখ্যার বণ্টন অনুধাবনের লক্ষ্যে বিশ্লেষণী পদ্ধতি ব্যবহার করেন। অয়লারের এ কাজের ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে মৌলিক সংখ্যা তত্ত্ব। সংখ্যাতত্ত্ব সংখ্যাতত্ত্বে অয়লারের আকর্ষণের কারণ ছিলেন ক্রিস্টিয়ান গোল্ডবাখ, তার সাংক্‌ত পিতেরবুর্গে একাডেমির সুহৃদ। সংখ্যাতত্ত্বে অয়লারের প্রাথমিক অনেক কাজেরই ভিত্তি ছিল সংখ্যাতত্ত্বের আরেক দিকপাল পিয়ে দ্য ফার্মার কাজ। অয়লার ফার্মার কিছু কাজকে বিস্তৃত করেন এবং কিছু অনুমান ভুল প্রমাণিত করেন। অয়লার মৌলিক সংখ্যার বণ্টনের প্রকৃতির সাথে বিশ্লেষণের যোগসূত্র স্থাপন করেন। তিনি প্রমাণ করেন যে, মৌলিক সংখ্যার বিপরীতকের যোগফল অপসারী হয়। এটি প্রমাণ করতে গিয়ে তিনি রিম্যান জিটা ফাংশন ও মৌলিক সংখ্যার মাঝে সম্বন্ধ খুঁজে পান; যা রিম্যান জিটা ফাংশনের অয়লার উৎপাদক সূত্র নামে পরিচিত। অয়লার নিউটনের অভেদ, ফার্মার ছোট্ট উপপাদ্য, ফার্মার দুই বর্গের সমষ্টির উপপাদ্য প্রমাণ করেন এবং লাগ্রাঞ্জের চার বর্গ তত্ত্বে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন। তিনি টশিয়েন্ট ফাংশন φ(n) উদ্ভাবন করেন যা হল কোন পূর্ণসংখ্যা n এর সমান বা তার চাইতে ছোট এবং n এর সাথে সহমৌলিক এমন সংখ্যার সংখ্যা। এই ফাংশনের বিশেষত্ব ব্যবহার করে তিনি ফার্মার ছোট্ট উপপাদ্যের সাধারণীকরণ করেন, যা বর্তমানে অয়লারের তত্ত্ব নামে সুবিদিত। তিনি নিখুঁত সংখ্যার গবেষণায় নতুন মাত্রা যোগ করেন, গণিতের যে বিষয়টি ইউক্লিডের সময় থেকেই গণিতবিদদের বিশেষ আকর্ষণের বস্তু। তাছাড়া অয়লার মৌলিক সংখ্যা তত্ত্ব উন্নয়নে ভূমিকা রাখেন, এবং বর্গীয় বিপরীততার নিয়মটি অনুমান করেন। এ দু'টি ধারণা সংখ্যাতত্ত্বের ভিত্তিরূপ তত্ত্ব হিসাবে বিবেচিত এবং তার এই ধারণা পরবর্তী সময়ে গাউসের কাজের পথ প্রশস্ত করে। গ্রাফ তত্ত্ব frame|right|অয়লারের সময়কালীন কনিসবার্গের মানচিত্রে সাতটি সেতুর অবস্থান, প্রেজেল নদী ও সেতুগুলো চিহ্নিত করা। ১৭৩৬ সালে অয়লার কনিসবার্গের সাতটি সেতুর সমস্যাটি সমাধান করেন। প্রুসিয়ার অন্তর্গত কনিসবার্গ শহরটি ছিল প্রেজেল নদীর তীরে এবং সেখানকার দু'টি বৃহৎ দ্বীপ সাতটি সেতুর মাধ্যমে সংযুক্ত ছিল। সমস্যাটি ছিল এরকম যে, সাতটি সেতুর প্রত্যেকটি ঠিক একবার ব্যবহার করে শুরুর অবস্থানে ফেরত আসা সম্ভব কিনা। তা সম্ভব নয়: কারণ তা অয়লার বর্তনী তৈরি করে না। এ সমাধানটিকে গ্রাফ তত্ত্বের প্রথম উপপাদ্য বিবেচনা করা হয়, বিশেষত সমতলীয় গ্রাফ তত্ত্বের। অয়লার যেকোন উত্তল বহতলকের শীর্ষ, ধার এবং তলের মধ্যে একটি সম্পর্কসূচক সমীকরণ আবিষ্কার করেন V − E + F = 2, যা সমতলীয় গ্রাফের ক্ষেত্রেও সত্য। সমীকরণটির ধ্রুবকটি তার গ্রাফের অয়লার বিশেষত্ব নামে পরিচিত, যা বস্তুটির গণের সাথে সম্পৃক্ত। কশি এবং লা ইলিয়ের এ সমীকরণটির সাধারণীকরণ করেন, যা টপোলজি নামক গণিতের একটি নতুন শাখার সূচনা করে। ফলিত গণিত অয়লারের শ্রেষ্ঠ সাফল্যের অন্যতম ছিল বাস্তব জগতের নানান সমস্যার বিশ্লেষণী সমাধান প্রদান, এবং বের্নুলি সংখ্যা, ফুরিয়ার ধারা, ভেন চিত্র, অয়লার সংখ্যা, ধ্রুবক e এবং π, অবিরত ভগ্নাংশ এবং সমাকলনের অসংখ্য প্রয়োগ বর্ণনা। তিনি লিবনিজের ডিফারেন্সিয়াল ক্যালকুলাসের সঙ্গে নিউটনের ফ্লাক্সিয়ন পদ্ধতির গাঁটছড়া বাঁধেন এবং বাস্তব সমস্যার সমাধানের ক্যালকুলাস ব্যবহারের বিভিন্ন সহায়ক কৌশল আবিষ্কার করেন। তিনি ডিফারেন্সিয়াল সমীকরণ ব্যবহারেরও পথিকৃৎ, বিশেষ করে অয়লার-মাসকেরনির ধ্রুবকের উদ্ভাবন: অয়লারের সঙ্গীতে গাণিতিক ধারণার ব্যবহারের খেয়ালী শখ ছিল। ১৭৩৯ সালে তিনি Tentamen novae theoriae musicae রচনা করেন এই আশায় যে একসময় সঙ্গীততত্ত্ব একসময় গণিতের মাঝে স্থান করে নেবে। কিন্তু তার এই বিশেষ কাজটি সেভাবে জনপ্রিয়তা পায়নি এবং এ সম্বন্ধে বলা হত এটি সঙ্গীতশিল্পীদের জন্যে একটু বেশি গাণিতিক আর গণিতবিদদের জন্যে একটু বেশি সুরেলা। পদার্থবিজ্ঞান ও জ্যোতির্বিদ্যা অয়লার বের্নুলির সাথে যৌথভাবে অয়লার–বের্নুলি বিম সমীকরণ তৈরি করেন, যা প্রকৌশলবিদ্যার একটি ভিত্তিপ্রস্তর হিসেবে বিবেচিত। অয়লার চিরায়ত বলবিদ্যা এবং জ্যোতির্বিদ্যায়ও তার প্রতিভার পরিচয় রাখেন। জ্যোতির্বিদ্যায় তার কাজের স্বীকৃতি হিসেবে তার ক্যারিয়ারজুড়ে বেশ কয়েকটি প্যারিস একাডেমি পুরস্কারে ভূষিত হন। তার অর্জনের মধ্যে রয়েছে ধূমকেতু ও অন্যান্য মহাকাশীয় বস্তুর কক্ষপথের নিখুঁত হিসাব, ধূমকেতুর আচরণ উপলব্ধিকরণ, এবং সূর্যের প্যারালাক্স হিসাবকরণ। লঙ্গিটিউড সারণী তৈরিতেও তার করা গণনার অবদান রয়েছে। তদু[পরি, অয়লার অপটিক্সে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। তিনি তার অপটিকস গ্রন্থে নিউটনের কণা তত্ত্বের সাথে দ্বিমত পোষণ করেন, যা ছিল সে সময়ের প্রতিষ্ঠিত একটি তত্ত্ব। তার ১৭৪০ সালে উপস্থাপিত প্রবন্ধ ক্রিস্টিয়ান হাইগেনের আলোর তরঙ্গ সংক্রান্ত মতবাদটি প্রতিষ্ঠিত করতে সাহায্য করে, যা আলোর কোয়ান্টাম তত্ত্বের প্রচলনের পূর্ব পর্যন্ত প্রভাবশালী ছিল। যুক্তিবিদ্যা তিনি বদ্ধ রেখার মাধ্যমে সাইলোজিস্টিক কারণ নির্ণয় (১৭৬৮) তত্ত্বের জন্যেও খ্যাত। এ ধরনের চিত্রকে তার নামানুসারে অয়লার চিত্র বলা হয়। ব্যক্তিগত দর্শন এবং ধর্মীয় বিশ্বাস অয়লার এবং তার বন্ধু দানিয়েল বের্নুলি ছিলেন লিবনিজের একক সত্ত্বা এবং ক্রিস্টিয়ান উলফের দর্শনের পরিপন্থী। অয়লার দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন জ্ঞান সঠিক পরিমাণগত নিয়মের ওপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত, যে মতবাদ একক সত্ত্বা তত্ত্ব ও উলফীয় বিজ্ঞানে অনুপস্থিত ছিল। অয়লারের ধর্মীয় বিশ্বাসও হয়তো তার মতবাদটি অপছন্দ করায় ভূমিকা রেখেছিল; তিনি এমনকি উলফের মতবাদকে "পৌত্তলিক ও নাস্তিকতাবাদ" হিসাবেও চিহ্নিত করেন। অয়লারের ধর্মবিশ্বাসের অনেকটুকুই তার জার্মান রাজকুমারীকে লেখা পত্রগুচ্ছ এবং তার আগের একটি রচনা Rettung der Göttlichen Offenbahrung Gegen die Einwürfe der Freygeister (মুক্তচিন্তাবিদদের অভিযোগের জবাবে স্বর্গীয় উদ্ভাসনের আত্মরক্ষা) থেকে ধারণা করতে পারা যায়। এসব রচনা থেকে বোঝা যায় অয়লার ছিলেন একজন পুরোদস্তুর ধর্মভীরু খ্রিস্টান। ধর্মনিরপেক্ষ দার্শনিকদের সাথে ধর্ম বিষয়ে অয়লারের বিতর্ক সম্বন্ধে একটি বিখ্যাত হাস্যরসাত্মক গল্প প্রচলিত আছে, যা অয়লারের দ্বিতীয় দফায় সাংক্‌ত পিতেরবুর্গ বাসের সময় ঘটেছিল। ফরাসি দার্শনিক ডেনিস দিঁদেরো ক্যাথারিন দ্য গ্রেটের আমন্ত্রণে রাশিয়া ভ্রমণ করছিলেন। তো সম্রাজ্ঞী উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ছিলেন যে দার্শনিকের নাস্তিকতাবাদের যুক্তি হয়তো তার দরবারের সদস্যদের প্রভাবিত করছে, এবং তাই অয়লার ফরাসি দার্শনিককে মোকাবিলা করবার জন্যে আদিষ্ট হলেন। দিঁদেরোকে জানানো হয় একজন প্রাজ্ঞ গণিতবিদ ঈশ্বরের অস্তিত্ত্ব প্রমাণ করেছেন: তিনি দরবারে উপস্থাপিত প্রমাণটি দেখতে সম্মত হলেন। অয়লার সেখানে উপস্থিত হলেন, দিঁদেরোর নিকটবর্তী হলেন এবং গলায় সম্পূর্ণ প্রত্যয় নিয়ে ঘোষণা করলেন, "জনাব, , তাই ঈশ্বর আছেন—উত্তর করুন!" দিঁদেরো, যার কাছে (গল্পানুসারে) গণিতশাস্ত্র ছিল হিব্রু ভাষা, হতবুদ্ধি হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন এবং সমগ্র দরবার অট্টহাস্যে ফেটে পড়ল। লজ্জিত হয়ে তিনি সম্রাজ্ঞীর নিকট রাশিয়া ছেড়ে যাবার অনুমতি প্রার্থনা করলেন, যাতে সম্রাজ্ঞী খুশিমনেই সম্মতি জানালেন। তবে গল্পটি যতটা হাস্যকর হোক না কেন, এটি অতরঞ্জিত বলেই মনে হয়, কারণ দিঁদেরো ছিলেন একজন স্বনামধন্য গণিতবিদ যার গাণিতিক গবেষণামূলক আলোচনা গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। নির্বাচিত গ্রন্থতালিকা thumb|অয়লারেরMethodus inveniendi lineas curvas এর প্রচ্ছদপত্র অয়লার গণিতে মহান অবদান রেখেছেন। তার শ্রেষ্ঠ রচনাগুলোর মধ্যে রয়েছে: এলিমেন্টস অফ এলজেবরা। এই প্রাথমিক বীজগণিত বইটি সংখ্যার প্রকৃতির ওপর আলোচনার মাধ্যমে শুরু হয়েছে এবং বহুপদী সমীকরণের সমাধানের কৌশল শেখানোর পাশাপাশি বীজণিতের প্রাথমিক ভিত্তি তৈরি করতে সাহায্য করে। ইন্ট্রোডাকটিও ইন এনালাইসিন ইনফিনিটোরাম (১৭৪৮). ইংরেজি অনুবাদ Introduction to Analysis of the Infinite (অসীমের বিশ্লেষণে প্রথম ধাপ) অনুবাদক জন ব্লানটন (Book I, , Springer-Verlag 1988; Book II, , Springer-Verlag 1989)। ক্যালকুলাসের দু'টি প্রভাবশালী পাঠ্যপুস্তক: ইন্সটিটিউশনেস ক্যালকুলি ডিফারেন্সিয়ালস (১৭৫৫) এবং ইনস্টিটিউশনাম ক্যালকুলি ইন্টিগ্রালিস (১৭৬৮–১৭৭০)। Lettres à une Princesse d'Allemagne (জার্মান রাজকুমারীকে লেখা পত্রগুচ্ছ) (১৭৬৮–১৭৭২)। Available online (in French). English translation, with notes, and a life of Euler, available online from Google Books: Volume 1, Volume 2 Methodus inveniendi lineas curvas maximi minimive proprietate gaudentes, sive solutio problematis isoperimetrici latissimo sensu accepti (১৭৪৪)। এই ল্যাটিন শিরোনামটির অনুবাদ হল সর্বোচ্চ বা সর্বনিম্ন বৈশিষ্ট্য সংবলিত বক্ররেখা অঙ্কনের কৌশল, অথবা সুপারপেরিমেট্রিক সমস্যা সমাধানের সর্বগ্রহণযোগ্য পদ্ধতি. অয়লারের রচনাবলী Opera Omnia নামে, ১৯১১ সাল থেকে সুইস একাডেমি অফ সায়েন্সেস এর অয়লার কমিশন কর্তৃক প্রকাশিত হয়ে আসছে। টীকা তথ্যসূত্র উচ্চতর পঠন Lexikon der Naturwissenschaftler, 2000. Heidelberg: Spektrum Akademischer Verlag. Demidov, S.S., 2005, "Treatise on the differential calculus" in Grattan-Guinness, I., ed., Landmark Writings in Western Mathematics. Elsevier: 191–98. Dunham, William (1999) Euler: The Master of Us All, Washington: Mathematical Association of America. Fraser, Craig G., 2005, "Leonhard Euler's 1744 book on the calculus of variations" in Grattan-Guinness, I., ed., Landmark Writings in Western Mathematics. Elsevier: 168–80. Gladyshev, Georgi, P. (2007) “Leonhard Euler’s methods and ideas live on in the thermodynamic hierarchical theory of biological evolution,” International Journal of Applied Mathematics & Statistics (IJAMAS) 11 (N07), Special Issue on Leonhard Paul Euler’s: Mathematical Topics and Applications (M. T. A.). Heimpell, Hermann, Theodor Heuss, Benno Reifenberg (editors). 1956. Die großen Deutschen, volume 2, Berlin: Ullstein Verlag. Krus, D.J. (2001) "Is the normal distribution due to Gauss? Euler, his family of gamma functions, and their place in the history of statistics," Quality and Quantity: International Journal of Methodology, 35: 445–46. Nahin, Paul (2006) Dr. Euler's Fabulous Formula, New Jersey: Princeton, Reich, Karin, 2005, " 'Introduction' to analysis" in Grattan-Guinness, I., ed., Landmark Writings in Western Mathematics. Elsevier: 181–90. Richeson, David S. (2008) Euler's Gem: The Polyhedron Formula and the Birth of Topology. Princeton University Press. Sandifer, Edward C. (2007), The Early Mathematics of Leonhard Euler, Mathematical Association of America. Simmons, J. (1996) The giant book of scientists: The 100 greatest minds of all time, Sydney: The Book Company. Singh, Simon. (1997). Fermat's last theorem, Fourth Estate: New York, Thiele, Rüdiger. (2005). The mathematics and science of Leonhard Euler, in Mathematics and the Historian's Craft: The Kenneth O. May Lectures, G. Van Brummelen and M. Kinyon (eds.), CMS Books in Mathematics, Springer Verlag. . বহিঃসংযোগ Encyclopedia Britannica article How Euler did it contains columns explaining how Euler solved various problems Euler Archive Euler Committee of the Swiss Academy of Sciences References for Leonhard Euler Euler Tercentenary 2007 The Euler Society Leonhard Euler Congress 2007—St. Petersburg, Russia Project Euler Euler Family Tree Euler's Correspondence with Frederick the Great, King of Prussia "Euler - 300th anniversary lecture", given by Robin Wilson at Gresham College, 9 May 2007 (can download as video or audio files) বিষয়শ্রেণী:১৭০৭-এ জন্ম বিষয়শ্রেণী:১৭৮৩-এ মৃত্যু বিষয়শ্রেণী:সুইজারল্যান্ডীয় গণিতবিদ বিষয়শ্রেণী:সুইজারল্যান্ডীয় পদার্থবিজ্ঞানী
লেওনার্ড অয়লার
thumb|right|250px|দিল্লি জাতীয় রাজধানী অঞ্চলে নতুন দিল্লি শহরের অবস্থান। নতুন দিল্লি বা নয়াদিল্লি হল ভারতের রাজধানী ও ভারত সরকারের প্রশাসনিক, আইন ও বিচারবিভাগীয় কেন্দ্র। এটি দিল্লি সরকারেরও কেন্দ্র। নতুন দিল্লি দিল্লি মহানগরীয় অঞ্চলের মধ্যে অবস্থিত এবং এটি দিল্লি জাতীয় রাজধানী অঞ্চলের ১১টি জেলার মধ্যে অন্যতম জেলা। ১৯১১ সালে দিল্লি দরবারে ভারত-সম্রাট পঞ্চম জর্জ নতুন দিল্লি শহরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। ব্রিটিশ স্থপতি স্যার এডউইন লুটিয়েনস ও স্যার হারবার্ট বেকার এই শহরের নকশা প্রস্তুত করেছিলেন। ১৯৩১ সালের ১৩ই ফেব্রুয়ারি নিউ রাজধানী উদ্বোধন করেন তদনীন্তন ভাইসরয় লর্ড আরউইন। ইতিহাস প্রতিষ্ঠা thumb|left|220px|লর্ড কার্জন ও লেডি কার্জন দিল্লি দরবারে যোগ দিতে আসছেন, ১৯০৩। thumb|250px|left|১৯১১ সালের দিল্লি দরবার, রাজা পঞ্চম জর্জ ও রানি মেরি সিংহাসনে বসে আছেন। ১৯১১ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত কলকাতা ছিল ব্রিটিশ ভারতের রাজধানী। যদিও প্রাচীনকালে, দিল্লি সুলতানি ও মুঘল যুগে দিল্লি ছিল ভারতের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কেন্দ্র। বিংশ শতাব্দীর প্রথম দশকে ব্রিটিশ ভারতীয় সাম্রাজ্যের রাজধানী কলকাতা থেকে দিল্লিতে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার একটি প্রস্তাব ব্রিটিশ প্রশাসনের কাছে রাখা হয়েছিল। কলকাতা ভারতের পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত। দিল্লির অবস্থান ভারতের উত্তরাঞ্চলে। তাই ব্রিটিশ সরকারের মনে হয়েছিল, দিল্লি থেকে ভারত শাসন করা অপেক্ষাকৃত সহজতর হবে। ১৯১১ সালের ১২ই ডিসেম্বর দিল্লি দরবারে তদনীন্তন ভারত সম্রাট পঞ্চম জর্জ ও তার রানী মেরি দিল্লির কিংসওয়ে ক্যাম্পের করোনেশন পার্কে ভাইসরয়ের বাসভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করার সময় দিল্লি থেকে কলকাতায় রাজধানী পরিবর্তনের কথা ঘোষণা করেন। ১৯১১ সালের ১৫ই ডিসেম্বর, কিংসওয়ে ক্যাম্পে দিল্লি দরবারেই রাজা পঞ্চম জর্জ ও রানী মেরি নতুন দিল্লি শহরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। নতুন দিল্লির একটি বড়ো অংশের নকশা করেছিলেন এডউইন লুটিয়েনস (১৯১৮ সাল থেকে স্যার এডউইন)। তিনি ১৯১২ সালে প্রথম দিল্লিতে আসেন। তার সহকারী ছিলেন হারবার্ট বেকার (১৯২৬ সাল থেকে স্যার হারবার্ট)। দুজনেই ছিলেন বিংশ শতাব্দীর উল্লেখযোগ্য স্থপতি। শোভা সিংকে (পরে স্যার শোভা সিং) নির্মাণকাজের ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়। শহর নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এবং তা শেষ হয় ১৯৩১ সালে। "লুটিয়েনস দিল্লি" নামে চিহ্নিত এই শহরের উদ্বোধন করা হয় ১৯৩১ সালের ১৩ই ফেব্রুয়ারি। উদ্বোধক ছিলেন তদানীন্তন ভাইসরয় স্যার আরউইন। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী ধারায় উদ্বুদ্ধ হয়ে লুটিয়েনস দিল্লির কেন্দ্রীয় প্রশাসনিক এলাকাটির নকশা প্রস্তুত করেছিলেন। thumb|left|১৯৩১ সালে সরকারের কেন্দ্র হিসেবে নতুন দিল্লির উদ্বোধন করা হয়। "সেক্রেটারিয়েট বিল্ডিং"-এর ডোমিনিয়ন স্তম্ভগুলির প্রেক্ষাপটে এক টাকার ডাকটিকিটে রাজা পঞ্চম জর্জের ছবি। সাম্রাজ্যের নিউ রাজধানী স্থাপনের জন্য দিল্লি টাউন প্ল্যানিং কমিটি গঠিত হয়। কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন জর্জ সুইনটন এবং সদস্য ছিলেন জন এ. ব্রডি ও লুটিয়েনস। এই কমিটি উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের পরিকল্পনা জমা দেয়। তবে নিউ শহর তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় জমির অধিগ্রহণের খরচ অত্যধিক হচ্ছে দেখে ভাইসরয় এই পরিকল্পনা বাতিল করে দেন। নতুন দিল্লির কেন্দ্রীয় রাস্তাটির মুখ পূর্বে ইন্ডিয়া গেটের দিকে। প্রাথমিক পরিকল্পনা অনুসারে, এটি পাহাড়গঞ্জ থেকে ভাইসরয়ের বাসভবন পর্যন্ত প্রসারিত উত্তর-দক্ষিণে প্রসারিত হওয়ার কথা ছিল। কাজ শুরুর পর প্রথম কয়েক বছর ইন্ডিয়া গেটকে পর্যটকেরা স্বর্গের দরজা মনে করতেন। উত্তর দিকে স্থান সংকুলান ও বেশ কিছু ঐতিহ্যশালী স্থানের উপস্থিতির জন্য কমিটি দক্ষিণাঞ্চলেই নতুন দিল্লি স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়। এখন যেটি রাইসিনা হিল নামে পরিচিত, সেটি আগে ছিল রাইসিনা নামে একটি মেও গ্রাম। এই স্থানটি ভাইসরয়ের বাসভবন (অধুনা রাষ্ট্রপতি ভবন) নির্মাণের জন্য নির্বাচিত হয়। এই স্থানটি নির্বাচনের কারণ ছিল, এটি "দিনাপানাহ্‌" দুর্গের ঠিক বিপরীতে অবস্থিত, যেটিকে আবার প্রাচীন ইন্দ্রপ্রস্থ নগরীর স্থান মনে করা হয়। ১৯১১-১২ সালের দিল্লি দরবারের জায়গায় করোনেশন পিলারটি সচিবালয় ভবনের সামনের উঠানের দেওয়ালে গাঁথা ছিল। এখান থেকে ভিত্তিপ্রস্তরটি সরিয়ে আনা হয়। রাজপথ বা কিংস ওয়ে ইন্ডিয়া গেট থেকে রাষ্ট্রপতি ভবন পর্যন্ত প্রসারিত হয়। রাষ্ট্রপতি ভবনের দুধারে সচিবালয়ের দুটি ব্লকে এখন ভারত সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রকের প্রধান কার্যালয় অবস্থিত। ভারতীয় সংসদ ভবনও এর কাছে রাজপথের সমান্তরালে প্রসারিত সংসদ মার্গে অবস্থিত অবস্থিত। সবগুলির নকশা করেছিলেন হারবার্ট বেকার। দক্ষিণে সফদরজঙ্গের সমাধিসৌধ পর্যন্ত অঞ্চল অধিগ্রহণ করে লুটিয়েনস বাংলো অঞ্চল নির্মিত হয়। রাইসিনা হিলের পাথুরে শৈলশিরায় নির্মাণকাজ শুরুর আগে, কাউন্সিল হাউসকে (অধুনা ভারতীয় সংসদ) ঘিরে একটি রেলপথ গড়ে ওঠে। এর নাম ছিল "ইম্পিরিয়াল দিল্লি রেলওয়ে"। এই রেলপথে পরবর্তী ২০ বছর নির্মাণস্থলে মালপথ ও শ্রমিক আদানপ্রদান করা হত। সেই সময় পুরনো দিল্লি রেল স্টেশন সারা শহরের প্রধান রেল স্টেশন ছিল। তাই আগ্রা-দিল্লি রেলপথটি অল-ইন্ডিয়া ওয়ার মেমোরিয়াল (ইন্ডিয়া গেট) ও কিংস ওয়ের (রাজপথ) উপর দিয়ে যাওয়ায় নির্মাণকাজে বাধা সৃষ্টি হচ্ছিল। এই লাইনটি যমুনা নদী বরাবর সরিয়ে দেওয়া হয়। নিউ রেলপথটি চালু হয় ১৯২৪ সালে। ১৯২৬ সালে চালু হয় নতুন দিল্লি রেল স্টেশন। সেই সময় আজমিঢ়ী গেটের কাছে পাহাড়গঞ্জে এই স্টেশনের একটি মাত্র প্ল্যাটফর্ম ছিল। স্টেশনটি সম্পূর্ণ চালু হয় ১৯৩১ সালে নতুন দিল্লি উদ্বোধনের সময়। ভাইসরয়ের বাসভবন (বর্তমান রাষ্ট্রপতি ভবন), কেন্দ্রীয় সচিবালয়, সংসদ ভবন ও অল-ইন্ডিয়া ওয়ার মেমোরিয়াল (ইন্ডিয়া গেট) নির্মাণের পর শহরের বাণিজ্য এলাকা কনট প্লেসের নির্মাণকাজ শুরু হয় ১৯২৯ সালে। এই কাজ শেষ হয় ১৯৩৩ সালে। প্রিন্স আর্থার, ফার্স্ট ডিউক অফ কনটের (১৮৫০-১৯৪২) নামানুসারে এই স্থানের নামকরণ করা হয়েছিল। এই স্থানের নকশা করেছিলেন পূর্ত বিভাগের মুখ্য স্থপতি রবার্ট টোর রাসেল। ভারতের রাজধানী দিল্লিতে সরে আসার পর উত্তর দিল্লিতে ১৯১২ সালে একটি অস্থায়ী সচিবালয় ভবন তৈরি করা হয়েছিল। পুরনো দিল্লির 'ওল্ড সেক্রেটারিয়েট' (অধুনা দিল্লি বিধানসভা) থেকে সরে আসে শহর উদ্বোধনের এক দশক আগেই। বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি ও মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির মতো ভারতের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে অনেক কর্মচারীকে নিউ রাজধানীতে নিয়ে আসা হয়েছিল। ১৯২০-এর দশকে গোল মার্কেটের কাছে তাদের জন্য একটি আবাসন এলাকা গড়ে তোলা হয়। ১৯৪০-এর দশকে ঐতিহাসিক লোদি উদ্যানের কাছে লোদি কলোনিতে লোদি এস্টেট এলাকায় সরকারের কর্মচারীদের বাড়ি ও উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের যে বাংলোগুলি তৈরি হয়, তাই দিল্লিতে ব্রিটিশ শাসনে নির্মিত শেষ আবাসিক এলাকা। স্বাধীনতা-উত্তর যুগ thumb|200px|সাধারণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ভবন ও সংলগ্ন ভবনগুলির আলোকসজ্জা। ১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীনতা অর্জন করে। এর পর ভারত সরকার দিল্লিকে সীমিত স্বায়ত্তশাসন দিয়ে একজন চিফ কমিশনার নিয়োগ করে। ১৯৫৬ সালে দিল্লিকে একটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করা হয়। এরপর চিফ কমিশনারের পদের বদলে দিল্লিতে লেফট্যানেন্ট গভর্নর নিয়োগ করা হয়। ১৯৯১ সালে ভারতীয় সংবিধানের ৬৯তম সংশোধনী বলে দিল্লি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলটির সরকারি নামকরণ করা হয় "দিল্লি জাতীয় রাজধানী অঞ্চল"। এই দ্বৈত শাসনব্যবস্থায় দিল্লির নির্বাচিত সরকারকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা সহ নানা বিষয়ে প্রভূত ক্ষমতা দেওয়া হয়, যা আগে কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে ছিল। এই আইন কার্যকর করা হয় ১৯৯৩ সালে। লুটিয়েনস দিল্লির বাইরে নতুন দিল্লির প্রথম বড়ো সম্প্রসারণ ঘটে ১৯৫০-এর দশকে। এই সময় উক্ত অঞ্চলের দক্ষিণ-পশ্চিমে কেন্দ্রীয় পূর্ত বিভাগ চাণক্যপুরী নামে একটি দূতাবাস-এলাকা গড়ে তোলে। এই এলাকায় বিভিন্ন রাষ্ট্রের দূতাবাস, রাষ্ট্রদূতগণের বাসভবন এবং দিল্লির অন্যতম প্রধান রাস্তা "শান্তিপথ" অবস্থিত। ভূগোল নতুন দিল্লির আয়তন । এই জেলা দিল্লি নগরাঞ্চলের একটি ক্ষুদ্র অংশ মাত্র। এই অঞ্চলটি সিন্ধু-গাঙ্গেয় সমভূমি অঞ্চলে এবং এর আশেপাশের অঞ্চলগুলি একদা আরাবল্লি পর্বতমালার দিল্লি শৈলশিরা অবশিষ্টাংশের অন্তর্গত বলে এখানকার ভূতল সর্বত্র সমান উচ্চতায় অবস্থিত নয়। দিল্লি শৈলশিরা ‘দিল্লির ফুসফুস’ নামে পরিচিত। নতুন দিল্লি যমুনা নদীর প্লাবন সমভূমিতে অবস্থিত। এটি মূলত স্থলবদ্ধ একটি শহর। নদীর পূর্বদিকে শাহদারা অঞ্চল অবস্থিত। নতুন দিল্লি সিসমিক ক্ষেত্র-চারের অন্তর্গত। এটি অত্যন্ত ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চল। জলবায়ু দিল্লির জলবায়ু মৌসুমি বায়ু প্রভাবিত আর্দ্র উপক্রান্তীয় প্রকৃতির। এখানে শীত ও গ্রীষ্মকালের তাপমাত্রা ও বৃষ্টিপাতের পরিমাণে বিরাট পার্থক্য থাকে। গ্রীষ্মে থেকে শীতে তাপমাত্রা ওঠানামা করে। দিল্লির বৈশিষ্ট্য দীর্ঘ উষ্ণ গ্রীষ্মকাল এবং শুষ্ক শীতল শীতকাল। এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত এখানে গ্রীষ্মকাল থাকে। গ্রীষ্মের মাঝামাঝি সময়ে বৃষ্টিপাত হয়। নভেম্বরে শীতের শুরু। জানুয়ারি মাসে প্রচণ্ড শীত পড়ে। বার্ষিক গড় তাপমাত্রা । মাসিক দৈনিক গড় তাপমাত্রা -এর মধ্যে ওঠানামা করে। দিল্লির সর্বাধিক তাপমাত্রা নথিবদ্ধ হয়েছিল । নথিবদ্ধ সর্বনিম্ন তাপমাত্রা হল . দিল্লি মহানগর অঞ্চলের নথিবদ্ধ সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা হল যথাক্রমে ও । বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ । জুলাই-অাগস্ট মাসেই সর্বাধিক বৃষ্টি হয়ে থাকে। বায়ু দূষণ দিল্লিতে বায়ুদূষণের পরিমাণ অত্যধিক। বায়ুদূষণের কারণ প্রধানত যানবাহনের ধোঁয়া। সরকার thumb|সচিবালয় ভবনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী, প্রতিরক্ষা মন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বিদেশমন্ত্রীর কার্যালয় অবস্থিত। দিল্লি ভারতের জাতীয় রাজধানী। এখানে যুক্তরাষ্ট্রীয় ভারত সরকার ও স্থানীয় দিল্লি সরকারের প্রধান কার্যালয় অবস্থিত। নতুন দিল্লি জাতীয় রাজধানী অঞ্চলেরও রাজধানী। নতুন দিল্লির পৌর স্বায়ত্তশাসন সংস্থাটির নাম নতুন দিল্লি পৌর পরিষদ। ২০০৫ সালের ব্যবস্থা অনুসারে, নতুন দিল্লি পৌর পরিষদ একজন পুরপ্রধান, দিল্লি বিধানসভার তিন জন সদস্য, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী মনোনীত দুই জন সদস্য ও কেন্দ্রীয় সরকার মনোনীত পাঁচ জন সদস্য নিয়ে গঠিত। দিল্লির অন্যান্য নগরাঞ্চলের স্বায়ত্তশাসন সংস্থার নাম দিল্লি পৌরসংস্থা। দিল্লির রাজ্যপ্রধান হলেন লেফট্যানেন্ট গভর্নর। কেন্দ্রীয় সরকারের পরামর্শক্রমে ভারতের রাষ্ট্রপতি তাকে নিয়োগ করেন। লেফট্যানেন্ট গভর্নরের পদটি আনুষ্ঠানিক। কারণ, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীই সরকার প্রধান এবং দিল্লির যাবতীয় প্রশাসনিক ক্ষমতার অধিকারী। ভারতীয় সংবিধান অনুসারে, দিল্লির বিধানসভায় পাস হওয়া কোনো আইনের সঙ্গে সংসদে পাস হওয়া আইনের বিরোধ বাধলে সংসদের আইনটিই বলবৎ থাকবে। নগরাঞ্চলের গঠন thumb|left|ভারতের রাষ্ট্রপতির সরকারি বাসভবন রাষ্ট্রপতি ভবন। এটি বিশ্বের রাষ্ট্রপ্রধানদের বাসভবনগুলির মধ্যে বৃহত্তম। নতুন দিল্লির অধিকাংশ অঞ্চলের পরিকল্পনাই বিংশ শতাব্দীর ব্রিটিশ স্থপতি এডউইন লুটিয়েনস করেছিলেন। এটি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী আদর্শে নির্মিত শহরের কেন্দ্রীয় প্রশাসনিক অঞ্চল। রাজপথ (আগেকার নাম ‘কিংস ওয়ে’) ও জনপথ (আগেকার নাম ‘কুইনস ওয়ে’) দুটি কেন্দ্রীয় প্রমোদপথকে কেন্দ্র করে নতুন দিল্লি গড়ে উঠেছে। রাজপথ রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে ইন্ডিয়া গেট পর্যন্ত প্রসারিত। অন্যদিকে জনপথ কনট প্লেস থেকে শুরু হয়ে রাজপথকে ছেদন করেছে। শান্তিপথের ধারে ১৯টি রাষ্ট্রের দূতাবাস অবস্থিত। এই অঞ্চলটি ভারতের বৃহত্তম কূটনৈতিক অঞ্চল। নতুন দিল্লির কেন্দ্রস্থলে রয়েছে রাষ্ট্রপতি ভবন (আগেকার নাম ভাইসরয়েজ হাউস)। এটি রাইসিনা হিলের উপর অবস্থিত। রাষ্ট্রপতি ভবনের দুপাশে কেন্দ্রীয় সচিবালয়ের দুটি ব্লক অবস্থিত। এই দুই ব্লকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সহ ভারত সরকারের একাধিক মন্ত্রকের প্রধান কার্যালয়ের অবস্থিত। রাজপথের সমান্তরালে অবস্থিত সংসদ মার্গে ভারতীয় সংসদ ভবনটি অবস্থিত। কনট প্লেস নতুন দিল্লির একটি বৃহৎ বৃত্তাকার বাণিজ্য এলাকা। এটি ইংল্যান্ডের রয়্যাল ক্রেসেন্টের অনুকরণে নির্মিত। কনট প্লেসের বাইরের বৃত্তাকার পথটিতে পৌঁছতে মোট বারোটি রাস্তা ব্যবহার করা যায়। তার মধ্যে একটি হল জনপথ। পরিবহণ নতুন দিল্লি একটি পরিকল্পিত নগরী হওয়ায় এখানে অনেকগুলি আর্টেরিয়াল রোড আছে। এর মধ্যে রাজপথ, জনপথ ও আকবর রোড বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। নতুন দিল্লি পৌর পরিষদের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ এই শহরে রাস্তা নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে নিযুক্ত। দিল্লি মেট্রো এখানকার পরিবহনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। ১৯৭১ সালে দিল্লি পরিবহন নিগমের প্রশাসনিক দায়িত্ব দিল্লি পৌরসংস্থার হাত থেকে ভারত সরকারের হাতে তুলে দেওয়া হয়। এরপর নতুন দিল্লি দিল্লি পরিবহন নিগমের আওতাধীন হন। ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হল দিল্লির প্রধান বিমানবন্দর। এটি নতুন দিল্লিকেও পরিষেবা দেয়। সাধারণ উড়ানের জন্য সফদরজং বিমানবন্দরটিও ব্যবহৃত হয়। thumb|দিল্লি মেট্রো বাস, অটোরিক্সা ও মেট্রো রেল দিল্লির গণপরিবহনের প্রধান মাধ্যম। বাস এর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয়। পরিবহন সংক্রান্ত ৬০% যাত্রীচাহিদা বাস পূরণ করে। দিল্লির অধিকাংশ বাস রাষ্ট্রায়ত্ত্ব সংস্থা দিল্লি পরিবহন নিগমের সম্পত্তি। এই সংস্থার কাছে পরিবেশ বান্ধব সিএনজি বাসের বৃহত্তম সম্ভার রয়েছে। দিল্লি বিআরটিএস অম্বেডকর নগর ও দিল্লি গেটের মধ্যে বাস র‌্যাপিড ট্রানসিড পরিষেবা দেয়। thumb|দিল্লির সিএনজি-চালিত অটোরিক্সা দিল্লি মেট্রো পরিচালনা করে দিল্লি মেট্রো রেল কর্পোরেশন। দিল্লি এবং পার্শ্ববর্তী গুরুগ্রাম ও নয়ডার বিভিন্ন অংশকে যুক্ত করেছে এই মেট্রো রেল। নতুন দিল্লি পৌর পরিষদের সঙ্গে এক চুক্তি বলে দিল্লি মেট্রো রেল কর্পোরেশন মেট্রো রেলপথ ও স্টেশন নির্মাণের জন্য নতুন দিল্লিতে কোনো রকম আর্থিক বাধ্যবাধকতা ছাড়াই জমি অধিগ্রহণ করতে পারে। মেট্রো রেল কর্পোরেশনের সঙ্গে যৌথভাবে স্টেশনগুলির পাশে বহুস্তর পার্কিং-এর ব্যবস্থা গড়ে তুলছে পৌর পরিষদ। নতুন দিল্লি রেল স্টেশন দিল্লির প্রধান রেল স্টেশন। এটি এশিয়ার দ্বিতীয় ব্যস্ততম রেল স্টেশন। এই স্টেশনের মাধ্যমে দিল্লির সঙ্গে সারা দেশের ও পাকিস্তানের লাহোর শহরের রেল যোগাযোগ রক্ষিত হয়। জনপরিসংখ্যান নতুন দিল্লির জনসংখ্যা ২৯৪,৯৯৮। এই জেলার জনঘনত্ব । হিন্দি ও পাঞ্জাবি এই শহরের প্রধান ভাষা। ধর্ম thumb|200px|left|লক্ষ্মীনারায়ণ মন্দির। thumb|150px|right| সেক্রেড হার্ট ক্যাথিড্রাল, একটি রোমান ক্যাথোলিক ক্যাথিড্রাল। ইতালীয় স্থাপত্যের অনুকরণে এর নকশা করেছিলেন ব্রিটিশ স্থপতি হেনরি মেড। thumb|200px|left|গুরুদ্বারা বাংলা সাহিব দিল্লির অধিবাসীদের মধ্যে ৮৩.৮% হিন্দু। এছাড়া আছে মুসলমান (৬.৩%), শিখ (৫.৪%), জৈন (১.১%) ও খ্রিস্টানরা (০.৯%)। অবশিষ্টদের (২.৫%) মধ্যে আছে পার্সি, বৌদ্ধ ও ইহুদি ধর্মাবলম্বী মানুষ। সংস্কৃতি রাজধানী দিল্লির আমলাতন্ত্র ও রাজনৈতিক ব্যবস্থা নতুন দিল্লিকে একটি বহুজাতিক শহর হিসেবে গড়ে তুলেছে। রাজধানী হওয়ার জন্য দিল্লিতে কয়েকটি জাতীয় অনুষ্ঠানের গুরুত্ব খুবই বেশি। প্রজাতন্ত্র দিবস, স্বাধীনতা দিবস ও গান্ধী জয়ন্তী নতুন দিল্লিতে বিশেষভাবে পালিত হয়। ভারতের স্বাধীনতা দিবস (১৫ অগস্ট) উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী লালকেল্লায় জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন। প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজের মাধ্যমে ভারতের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য ও সামরিক শক্তিকে তুলে ধরা হয়। দীপাবলি, শিবরাত্রি, তিজ, গুরু নানক জয়ন্তী, বৈশাখী, দুর্গাপূজা, হোলি, লোহরি, ঈদ-উল-ফিতর, ঈদ-উল-আজহা, বড়দিন ও মহাবীর জয়ন্তী দিল্লির প্রধান ধর্মীয় উৎসব। কুতুব মিনার চত্বরে কুতুব উৎসব নামে নৃত্যগীতের একটি বিশেষ উৎসব খুব বিখ্যাত। অন্যান্য অনুষ্ঠানের মধ্যে ঘুড়ি ওড়ানোর উৎসব, আন্তর্জাতিক আম উৎসব ও বসন্তপঞ্চমী প্রতি বছর আয়োজিত হয়। দর্শনীয় স্থান স্থাপত্য নতুন দিল্লি শহর ও তার স্থাপত্যের পরিকল্পনা করা হয়েছিল ব্রিটিশদের শক্তি ও সার্বভৌমত্ব প্রদর্শনের জন্য। নগর পরিকল্পনার সব স্তরের সিদ্ধান্তের পিছনে সেই মানসিকতাই কাজ করেছিল। শুধু কিছু কিছু ক্ষেত্রে হিন্দু ও ইসলামি স্থাপত্যের প্রভাব দেখা গিয়েছিল। ১৯১১ সালের পর শহর তৈরি করতে ২০ বছর সময় লেগেছিল। নতুন দিল্লির স্থাপত্যে অনেক স্থানীয় প্রভাব আছে। তবে সেগুলিকে ব্রিটিশ ক্ল্যাসিকাল ও প্যালাডিয়ান স্থাপত্যের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়া হয়েছিল। স্থাপত্যে স্থানীয় প্রভাবগুলির মূল কারণ ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জ ও আর্নেস্ট বিনফিল্ড হ্যাভেল প্রমুখ ঐতিহাসিকদের ঐ বিষয়ে আগ্রহ। ঐতিহাসিক স্থান ও জাদুঘর thumb|right|জাতীয় সংগ্রহালয়। এটি ভারতের বৃহত্তম জাদুঘরগুলির একটি। thumb|left|ইন্ডিয়া গেট। এটি ভারতের জাতীয় স্মৃতিসৌধ। নতুন দিল্লিতে একাধিক ঐতিহাসিক স্থান ও জাদুঘর আছে। ১৯৪৭-৪৮ সা;এ রয়্যাল অ্যাকাডেমিতে রক্ষিত ভারতীয় শিল্পবস্তু ও অন্যান্য সামগ্রী নিয়ে চালু হয় জাতীয় সংগ্রহালয়। ১৯৪৯ সালে তা রাষ্ট্রপতি ভবনের অন্তর্ভুক্ত হয়। পরে সেই সব শিল্পবস্তু নিয়েই স্থায়ীভাবে জাতীয় সংগ্রহালয় গড়ে ওঠে। ১৯৪৯ সালের ১৫ই অাগস্ট ৫০০০ বছর সময়কালের ২০০,০০০ ভারতীয় ও বিদেশি শিল্পবস্তু নিয়ে এই জাতীয় সংগ্রহালয় আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়। ১৯৩১ সালে গঠিত হয় ইন্ডিয়া গেট। এই স্মারকটি প্যারিসের আর্ক ডে ট্রায়োম্ফের আদলে নির্মিত। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ও তৃতীয় ইঙ্গ-আফগান যুদ্ধে নিহত ভারতীয় সেনাবাহিনীর ৯০,০০০জন জওয়ানের স্মৃতিতে নির্মিত এই স্মারক ভারতের জাতীয় স্মৃতিসৌধ। প্যারিসের চ্যাম্পস-ইলিসিসের আদলে নির্মিত রাজপথ নতুন দিল্লির একটি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা। এটি ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের জাতীয় অনুষ্ঠানগুলির জন্য ব্যবহৃত হয়। প্রতি বছর ২৬শে জানুয়ারি প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজ এই রাস্তায় আয়োজিত হয়। thumb|170px|right|গান্ধীস্মৃতির শহিদস্তম্ভ। ১৯৪৮ সালে এইখানেই মহাত্মা গান্ধী নিহত হয়েছিলেন। thumb|left|১১৩৯ সালে নির্মিত কুতুব মিনার তুঘলক বংশের প্রাচীন রাজধানীর অংশ ছিল। নতুন দিল্লির গান্ধীস্মৃতিতে মহাত্মা গান্ধী জীবনের শেষ ১৪৪ দিন কাটিয়েছিলেন। ১৯৪৮ সালের ৩০শে জানুয়ারি এইখানেই তিনি নিহত হন। ওই বছর ৩১শে জানুয়ারি যে স্থানে তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছিল, সেই স্থানটির নাম রাজঘাট। যমুনা নদীর ধারে এই খানেই তার চিতাভস্ম সমাধিস্থ করা হয়েছিল। রাজঘাটে তার সমাধিস্থলে একটি বর্গাকার কালো পাথরের স্মারক রয়েছে। এটির স্থপতি ভানু ভুটিয়া। কনট প্লেস অঞ্চলের যন্তরমন্তর নির্মাণ করেছিলেন জয়পুরের রাজা দ্বিতীয় জয় সিংহ। এখানে ১৩টি জ্যোতির্বিজ্ঞান যন্ত্র রয়েছে। এই মানমন্দিরটির সাহায্যে জ্যোতির্বিদ্যা-সংক্রান্ত সারণি, সূর্য, চাঁদ ও অন্যান্য গ্রহের সঞ্চারণ-সংক্রান্ত গণনা চলত। কুতুব মিনার ভারতের উচ্চতম মিনার। এটি লাল বেলেপাথর ও শ্বেতপাথরে নির্মিত। নতুন দিল্লিতে ইন্দিরা গান্ধী স্মৃতি সংগ্রহালয়, জাতীয় আধুনিক শিল্প গ্যালারি, জাতীয় প্রাকৃতিক ইতিহাস সংগ্রহালয়, জাতীয় রেল সংগ্রহালয়, জাতীয় কুটির ও বস্ত্রশিল্প সংগ্রহালয়, জাতীয় ডাকটিকিট সংগ্রহালয়, নেহেরু তারামণ্ডল, শঙ্করের আন্তর্জাতিক পুতুল সংগ্রহালয় ও ভারতের সুপ্রিম কোর্ট সংগ্রহালয় নতুন দিল্লির প্রধান প্রধান জাদুঘর। যন্তরমন্তর, গান্ধীস্মৃতি, বুদ্ধজয়ন্তী পার্ক ও লোদি উদ্যান নতুন দিল্লির কয়েকটি ঐতিহাসিক স্থান। জাতীয় যুদ্ধ সংগ্রহালয় ও জাতীয় যুদ্ধ স্মৃতি সংগ্রহালয় বর্তমানে নতুন দিল্লিতে নির্মাণাধীন। দিল্লীতে দর্শনীয় স্থানগুলোর তালিকা, যা দিল্লী ভ্রমণে অবশ্যই দেখতে হবে। ১। লাল কেল্লা। ২। কুতুব মিনার। ৩।হুমায়ুনের সমাধিসৌধ ৪। দিল্লী জামে মসজিদ ৫। চাঁদনি চক মার্কেট ৬। ইন্ডিয়া গেট, পার্লামেন্ট ভবন ৭। বিরলা মন্দির ৮। মহাত্মা গান্ধী র সমাধি। ৯। লোটাস টেম্পল খেলাধূলা thumb|২০১০ কমনওয়েলথ গেমস উদ্বোধনী অনুষ্ঠান, জওহরলাল নেহেরু স্টেডিয়াম। নতুন দিল্লি শহরে ২০১০ কমনওয়েলথ গেমস অনুষ্ঠিত হয়। প্রতি বছর এই শহরে দিল্লি হাফ ম্যারাথন একটি ফুট-রেস আয়োজিত হয়। নতুন দিল্লিতে ১৯৫১ এশিয়ান গেমস ও ১৯৮২ এশিয়ান গেমস আয়োজিত হয়েছিল। নতুন দিল্লির প্রধান প্রধান ক্রীড়াঙ্গনগুলি হল জওহরলাল নেহেরু স্টেডিয়াম, আম্বেডকর স্টেডিয়াম, ইন্দিরা গান্ধী ইন্ডোর স্টেডিয়াম, অরুন জেটলি স্টেডিয়াম, ধ্যানচাঁদ জাতীয় স্টেডিয়াম, তালকোটারা স্টেডিয়াম ও সিরি ফোর্ট ক্রীড়া চত্বর। অর্থনীতি thumb|250 px|right|দিল্লি অটো এক্সপোতে টাটা মোটরস প্যাভিলিয়ন নতুন দিল্লির উত্তর অংশে অবস্থিত কনট প্লেস উত্তর ভারতের বৃহত্তম বাণিজ্যকেন্দ্র। এর আশেপাশের বারাখাম্বা রোড, আইটিও ইত্যাদিও গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যকেন্দ্র। সরকারি ও আধা-সরকারি ক্ষেত্রগুলিই নতুন দিল্লির প্রধান কর্মক্ষেত্র। এখানে অনেক বহুজাতিক সংস্থায় বহুসংখ্যক ইংরেজি-শিক্ষিত কর্মচারী কাজ করে। এখানকার প্রধান শিল্পগুলি হল তথ্যপ্রযুক্তি, টেলিকমিউনিকেশন, হোটেল, ব্যাংকিং, গণমাধ্যম ও পর্যটন। বিশ্ব সম্পদ রিপোর্ট -২০১১ অনুসারে, অর্থনৈতিক ক্রিয়াকাণ্ডের নিরিখে নতুন দিল্লির স্থান ৩৯তম। তবে সামগ্রিকভাবে রাজধানীর স্থান ৩৭তম। এই স্থান জাকার্তা ও জোহানেসবার্গ শহরের উপরে। এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের বাজারগুলির মধ্যে রিটেল গন্তব্য হিসেবে নতুন দিল্লি ও বেজিং একসঙ্গে শীর্ষস্থান দখল করেছে। দিল্লি সরকার নতুন দিল্লির জন্য কোনো পৃথক অর্থনৈতিক তথ্য প্রকাশ করে না। তবে সামগ্রিকভাবে দিল্লির একটি সরকারি বার্ষিক অর্থনৈতিক রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। ইকোনমিক সার্ভে অফ দিল্লি-র সমীক্ষা অনুসারে, দিল্লি মহানগর অঞ্চলের নেট স্টেট ডোমেস্টিক প্রোডাক্ট বা এসডিপি হল ৮৩,০৮৫ কোটি টাকা (২০০৪-০৫ সালের হিসেব অনুসারে)। এই অঞ্চলের মাথাপিছু আয় ৫৩,৯৭৬ টাকা (১,২০০ ডলার)। ২০১১-১২ সালের হিসেব অনুযায়ী, দিল্লির গ্রস স্টেট ডোমেস্টিক প্রোডাক্ট হল ৩.১৩ লক্ষ কোটি টাকা, যা বিগত আর্থিক বছরের তুলনায় ১৮.৭% বেশি। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও সংস্থা নতুন দিল্লিতে অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থার কার্যালয় রয়েছে। ইউএসএএসসিএপি-এর এশিয়ান অ্যান্ড প্যাসিফিক সেন্টার ফর ট্রান্সফার অফ টেকনোলজির এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের সদর দফতর নতুন দিল্লিতে অবস্থিত। এছাড়া ভারতে রাষ্ট্রসংঘের অধিকাংশ আঞ্চলিক কার্যালয় নতুন দিল্লিতে অবস্থিত। ১৪৫টি দেশের দূতাবাস ও হাই কমিশন নতুন দিল্লিতে অবস্থিত। শীর্ষ সম্মেলন ১৯৮৩ সালে সপ্তম এনএএম শীর্ষ সম্মেলন ও ২০১২ সালে বিআরআইসিএস শীর্ষ সম্মেলন নতুন দিল্লিতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। আরও দেখুন দিল্লি পাদটীকা আরও পড়ুন Johnson, David A. "A British Empire for the twentieth century: the inauguration of New Delhi, 1931," Urban History, Dec 2008, Vol. 35 Issue 3, pp 462–487 থাম্ব|থাম্ব|দিল্লি কেমেটেরিজ কমিটিদিল্লী কেমেট্রিজ কমিটি Ridley, Jane. "Edwin Lutyens, New Delhi, and the Architecture of Imperialism," Journal of Imperial & Commonwealth History, May 1998, Vol. 26 Issue 2, pp 67–83 Sonne, Wolfgang. Representing the State: Capital City Planning in the Early Twentieth Century (2003) 367pp; compares New Delhi, Canberra, Washington & Berlin. বহিঃসংযোগ New Delhi Photos New Delhi Government Portal New Delhi Municipal Council Detailed map of New Delhi Official Website of Delhi Tourism New Delhi Information New Delhi Times বিষয়শ্রেণী:ভারতের শহর * বিষয়শ্রেণী:এশিয়ার রাজধানী বিষয়শ্রেণী:ভারতের রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের রাজধানী বিষয়শ্রেণী:দিল্লির জেলা kk:Нью-Дели
নতুন দিল্লি
বাংলাদেশ বেতার বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় বেতার সংস্থা। ১৯৭৫ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত এটি রেডিও বাংলাদেশ নামে পরিচিত ছিল। ইতিহাস এই অঞ্চলে বাংলাদেশ ঢাকাতে রেডিও সম্প্রচার শুরু হয় ১৬ই ডিসেম্বর, ১৯৩৯ সালে। প্রথম দিকে কেন্দ্রটি পুরনো ঢাকায় নাজিমুদ্দিন রোডে একটি ভাড়া করা বাড়িতে (বর্তমানে যেটি শেখ বোরহানুদ্দীন পোস্ট গ্রাজুয়েট কলেজ) যাত্রা শুরু করে। প্রথম নামকরণ করা হয় “ঢাকা ধ্বনি বিস্তার কেন্দ্র”। পরবর্তীতে কেন্দ্রটি শাহবাগে স্থানান্তর করা হয়। রেডিওটি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ তারিখে সম্প্রচার কেন্দ্র রেডিও পাকিস্তান স্বাধীনতার ঘোষণা সম্প্রচার করা হয়।যা চট্টগ্রাম বন্দরে নোঙ্গররত একটি জাপানী জাহাজ থেকে শোনা গিয়েছিল এবং তা পুনসম্প্রচার করা হয়েছিল। যুদ্ধের সময় এটি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র নামে পরিচিত ছিল। ভারী গোলা বর্ষণের কারণে বেতারকেন্দ্রটি কয়েকবার স্থানান্তর করা হয়েছিল।শেষে ২৫শে মে তারিখে কলকাতাতে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল, যেখান থেকে যুদ্ধের বাকি সময় পর্যন্ত অনুষ্ঠান সম্প্রচার করা হতো। ডিসেম্বর ৬ তারিখে বেতারকেন্দ্রটিকে বাংলাদেশ বেতার নাম দেওয়া হয়। সম্প্রচার ঢাকার শেরে বাংলা নগরে জাতীয় বেতার ভবনে বাংলাদেশ বেতার ঢাকার ক, খ ও গ চ্যানেল এবং এফ.এম-এর অনুষ্ঠান নির্মাণের পাশাপাশি ১২টি আঞ্চলিক কেন্দ্র নিয়ে বাংলাদেশ বেতারের অনুষ্ঠান শাখার কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এছাড়া বহির্বিশ্বে কার্যক্রম বাংলার পাশাপাশি সার্কভূক্ত দক্ষিণ এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের জন্য ৫(পাঁচ)টি বিদেশি ভাষায় অনুষ্ঠান নির্মাণ করে। এছাড়া ঢাকা ও আঞ্চলিক কেন্দ্রগুলোতে এ.এমের পাশাপাশি এফ.এমের নিজস্ব অনুষ্ঠান প্রচার করে।এফ.এম অনুষ্ঠানের পাশাপাশি বর্তমানে বিবিসি বাংলা, ডয়চে ভেলে, রেডিও চায়না ও এনএইচকে-এর অনুষ্ঠানও সম্প্রচার করে। কেন্দ্র thumb|বাংলাদেশ বেতার, বগুড়া বাংলাদেশ বেতারের সকল কেন্দ্র। এএম এফএম আরো দেখুন বাংলাদেশের বেতার কেন্দ্রের তালিকা বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ বাংলাদেশ বেতারের অনুষ্ঠান বিভাগ ওয়েবসাইট বাংলাদেশ বেতারের ট্রাফিক সম্প্রচার কার্যক্রমের ওয়েবসাইট বাংলাদেশ বেতারের বিভিন্ন ট্রান্সমিটার বিষয়শ্রেণী:বাংলাদেশের রেডিও স্টেশন বিষয়শ্রেণী:স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীনতা পুরস্কার বিজয়ী বিষয়শ্রেণী:ঢাকার গণমাধ্যম
বাংলাদেশ বেতার
এনটিভি একটি উপগ্রহ-ভিত্তিক বাংলাদেশী এবং বাংলা ভাষার টেলিভিশন চ্যানেল। এটি ২০০৩ সালে যাত্রা শুরু করে। চ্যানেলটির চেয়ারম্যান ও দয়িত্বাধীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোসাদ্দেক আলী ফালু। চ্যানেলটি সংবাদ, শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান, নাটক, রাজনৈকিত অনুষ্ঠান দেখিয়ে থাকে। সেপ্টেম্বর ২০১১ সালে এনটিভি বাংলাদেশের প্রথম টিভি চ্যানেল হিসেবে আইএসও সনদ লাভ করে। ইতিহাস থাম্ব|২০১৫ সালে এনটিভির একযুগ পূর্তী উৎসব পালিত হয়। ২০০৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে এনটিভি চালুর ঘোষণা আসে, প্রাথমিকভাবে একই বছরের এপ্রিলে কার্যক্রম শুরু হয়। আগস্ট ২০০৬ সালে যুক্তরাজ্য ভিত্তিক একটি বাংলাদেশী টিভি চ্যানেল স্কাই চ্যানেল ৮২৬-এর মাধ্যমে ইউকে এবং ইউরোপ জুড়ে এনটিভির অনুষ্ঠানগুলি দেখানোর অধিকার অর্জন করে, তবে এক বছর পর সম্প্রচার বন্ধ হয়ে যায়। ২০০৭ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ১০ টায় এনটিভি ভবনে আগুন লেগে তিনজন মারা যান এবং শতাধিক আহত হন। আগুনের কারণে চ্যানেলটির সম্প্রচার সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায়। ভবনটিতে একই মালিকানাধীন আরটিভি নামক চ্যানলটিও অগ্নিকান্ডের শিকার হয়। ২০০৮ সালের আগস্টে এনটিভি স্কাই চ্যানেল ৮৩৩-এর মাধ্যমে ১ বছর পর আবার যুক্তরাজ্যে সম্প্রচার করা শুরু করে। সেপ্টেম্বর ২০১১ সালে এনটিভি প্রথম বাংলাদেশি টিভি চ্যানেল হিসাবে আইএসও প্রশংসা অর্জন করে। ২০১৫ সালের পহেলা ফেব্রুয়ারি এনটিভি ওয়েবে অনলাইন সংস্করণ চালু করে। এর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন খন্দকার ফকরউদ্দীন আহমেদ (ফকরউদ্দীন জুয়েল)। অনুষ্ঠান এনটিবি সংবাদ, সমসাময়িক ঘটনা, আলোচনা অনুষ্ঠান, প্রামাণ্যচিত্র, খেলাধুলার খবর, ব্যবসা-বাণিজ্যের অনুষ্ঠান, বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান, নাটক, টেলিফিল্ম, সংগীতানুষ্ঠান, ধর্মীয় অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান সম্প্রচার করে। তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ এনটিভি - অফিসিয়াল ওয়েবসাইট এনটিভি - ইন্টারনেট মুভি ডেটাবেজ বিষয়শ্রেণী:বাংলাদেশের টেলিভিশন চ্যানেল বিষয়শ্রেণী:২০০৩-এ প্রতিষ্ঠিত টেলিভিশন চ্যানেল ও স্টেশন বিষয়শ্রেণী:সংবাদ মাধ্যম
এনটিভি
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, যা সাধারণত বিমান নামে পরিচিত, বাংলাদেশের একমাত্র সরকারি এবং জাতীয় পতাকাবাহী বিমান পরিবহন সংস্থা। এটি প্রধানত ঢাকায় অবস্থিত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কার্যক্রম পরিচালনা করে। এছাড়াও চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকেও এর কার্যক্রম পরিচালিত হয়। প্রতিষ্ঠানটি আন্তর্জাতিক রুটের পাশপাশি আভ্যন্তরীণ রুটেও যাত্রী এবং মালামাল পরিবহন করে। বিশ্বের প্রায় ৭০ টি দেশের সাথে বিমানের বিমান সেবা চুক্তি রয়েছে এবং বর্তমানে ১৬টি দেশে এর কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বিমানের প্রধান কার্যালয়ের নাম বলাকা ভবন, যেটি ঢাকার উত্তরাঞ্চলে কুর্মিটোলায় অবস্থিত। বিমান বাংলাদেশের যাত্রীদের অধিকাংশই হজ্জযাত্রী, পর্যটক, অভিবাসী এবং প্রবাসী বাংলাদেশি এবং সহায়ক সংস্থাগুলির ক্রিয়াকলাপসমূহ বিমান পরিবহন সংস্থার কর্পোরেট ব্যবসায়ের একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ গঠন করে। ব্যাপক সংখ্যক বিদেশী পর্যটক, দেশীয় পর্যটক এবং প্রবাসী বাংলাদেশি ভ্রমণকারীদের সেবা প্রদানের জন্য দেশের পরিবহন খাতে 8% বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হারের অভিজ্ঞতা অর্জনকারী বাংলাদেশ বিমানের সাথে অন্যান্য বাংলাদেশি বেসরকারী বিমান সংস্থাগুলির প্রতিযোগিতামূলক সম্পর্ক বিদ্যমান। ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ১৯৯৬ পর্যন্ত দেশে উড়োজাহাজ খাতের একক সংস্থা হিসেবে ব্যবসা চালায়। বিভিন্ন সময়ে উড়োজাহাজ বহর ও গন্তব্য বৃদ্ধির চেষ্টা অব্যাহত রাখলেও দুর্নীতি আর অদক্ষতার জন্য বিমান বার বার পিছিয়ে পড়ে। বাংলাদেশ বিমান তার সুসময়ে সর্বোচ্চ ২৯টি গন্তব্যে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করত যা পশ্চিমে নিউ ইয়র্ক শহর থেকে পূর্বে টোকিও পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। ২০০৭ সালের আগ পর্যন্ত বিমান পুরোপুরি একটি সরকার নিয়ন্ত্রিত সংস্থা ছিল যেটি সে বছরের জুলাই মাসের ২৯ তারিখ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে রুপান্তরিত হয়। কোম্পানিতে রূপান্তরিত হওয়ার পর কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা কমিয়ে আনার পাশাপাশি এর উড়োজাহাজ বহর আধুনিকায়নের জন্য পদক্ষেপ নেয়া হয়। ২০০৮ সালে বিমান সংস্থাটি বোয়িং কোম্পানির সাথে দশটি বিকল্পের পাশাপাশি নতুন দশটি বিমানের জন্য চুক্তি করে। নতুন উড়োজাহাজ হাতে পাওয়ার পর বিমান তার গন্তব্যের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং ফ্লাইট চলাকালীন ইন্টারনেট/ওয়াই-ফাই, মোবাইল যোগাযোগ এবং টেলিভিশন দেখার সুবিধার মতো যাত্রীসুবিধাদি উন্নত করেছে। ইউরোপিয়ান এভিয়েশন সেফটি এজেন্সি নিরাপদ সংস্থা হিসেবে বিমান বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছে। এছাড়াও আইএটিএ-এর নিরাপত্তা নিরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। এরপর বিমান, এশিয়া এবং ইউরোপে তাদের পূর্ববর্তী কয়েকটি গন্তব্যে পুনরায় ফ্লাইট চালু করে। সাম্প্রতিক সময়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স তাদের নতুন পরিচালনা দলের অধীনে সময়োপযোগের পাশাপাশি অন-টাইম ফ্লাইটের কর্মক্ষমতায় উল্লেখযোগ্য উন্নতি করে। ইতিহাস রাষ্ট্রপতি অধ্যাদেশ নং ১২৬ অনুসারে ১৯৭২ সালের ৪ জানুয়ারি বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স গঠিত হয়। এদিন বাংলাদেশ বিমানবাহিনী থেকে একটি ডিসি-৩ বিমান নিয়ে জাতির বাহন হিসেবে বাংলাদেশ বিমান যাত্রা শুরু করে। সাবেক পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের ২৫০০ কর্মচারী ও কিছুসংখ্যক কর্মকর্তা এবং ১০ জন বোয়িং ৭০৭ কমান্ডার ও ৭ জন অন্যান্য পাইলটের সমন্বয়ে প্রতিষ্ঠানটি গঠিত হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরে ১৯৭১ সালের ৩১ ডিসেম্বর তৎকালীন সরকারের কাছে সংস্থাটি একটি প্রস্তাব জানায়। প্রাথমিকভাবে এর নাম ছিল এয়ার বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল। ১৯৭২ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি আভ্যন্তরীণ সেবার মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে বিমান। ভারত থেকে নিয়ে আসা ম্যাকডনেল ডগলাস ডিসি-৩ ছিল প্রথম সংযোজন, যেটি ঢাকার সাথে চট্টগ্রাম, যশোর এবং সিলেটের যোগাযোগ স্থাপন করেছিল। এই ডিসি-৩ বিমানটি ১০ ফেব্রুয়ারি ১৯৭২ সালে পরীক্ষামূলক উড্ডয়নের সময় দুর্ঘটনার পরে। এই দুর্ঘটনার পর ভারত সরকার বাংলাদেশকে আরো দুই ফকার এফ২৭ উপহার দেয়। অল্প সময়ের ব্যাবধানে বাংলাদেশ বিমানের ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য বিশ্ব চার্চ কাউন্সিলের কাছ থেকে লোন নিয়ে ডগলাস ডিসি-৬ সংযোযন করা হয়। পরবরতিতে ডগলাস ডিসি-৬ এর পরিবর্তে ডগলাস ডিসি-৬বি নিয়ে আসা হয়, যা ট্রল-এয়ারের কাছ থেকে লিজ নেওয়া হয়েছিল, যেটি ঢাকা-কলকাতা রুটে চলাচল করত। ১৯৭২ সালের ৪ মার্চ বিমান বাংলাদেশ, ব্রিটিশ কালেডোনিয়ানের থেকে পাওয়া একটি বোয়িং ৭০৭ চার্টার্ড প্লেন নিয়ে ঢাকা-লন্ডন রুটে প্রথম সাপ্তাহিক আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করে। ঢাকা-কোলকাতা রুটে নিয়মিত সেবা প্রদানের জন্য ১৯৭২ সালের ৩ মার্চ ভারত থেকে একটি ফকার এফ-২৭ আনা হয়। ওই বছর বিমান প্রায় ১,০৭৮ টি ফ্লাইটে ৩,৮০,০০০ জন যাত্রী পরিবহন করে এবং সে বছরের সেপ্টেম্বরে নতুন ৩টি ফকার এফ-২৭ যোগ করে। থাম্ব|১৯৭৪ সালে দমদম বিমানবন্দরে বিমানের ফকার এফ২৭ ফ্রেন্ডশিপ ১৯৭৩ সালে ঢাকা-কোলকাতা রুটে নিয়মিত ২টি ফ্লাইট পরিচালনা করার জন্য আরো ৪টি ফকার এফ-২৭ আনা হয়। একই সময় একটি বোয়িং ৭০৭ সংযুক্ত হলে বিমান ঢাকা-লন্ডন সপ্তাহে ২টি ফ্লাইট চালু করে। সে বছরেই বিমান চট্টগ্রাম-কলকাতা রুটে সেবা প্রদান শুরু করে। ১৯৭৪ সালের ফেব্রুয়ারি, কাঠমান্ডু, নভেম্বরে ব্যাংকক এবং ডিসেম্বরে দুবাই রুটে বিমানের পরিসেবা চালু হয়। ১৯৭৬ বিমান তাদের দুইটি ফকার এফ-২৭ বিক্রি করে একটি বোয়িং ক্রয় করে আবুধাবি, করাচি ও বম্বে (বর্তমান মুম্বই) রুটে সেবা চালু করে। ১৯৭৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে আরো একটি বোয়িং কিনে সিঙ্গাপুরে বিমানের পরিসেবা বিস্তৃত করা হয়। পরের বছর বিমান তার ৪র্থ বোয়িং ক্রয়ের মাধ্যমে জেদ্দা, দোহা ও আমস্টারডাম রুটে বিমান সেবা চালু করে। সে বছরেই বিমান পাবলিক সেক্টোর কোম্পানিতে রুপান্তরিত হয় এবং পরিচালনা পর্ষদ দ্বারা পরিচালিত হয়। ১৯৭৭-৭৮ অর্থ বছরে বিমান ব্রেক ইভেন পয়েন্ট স্পর্শ করে এবং পরের বছর লাভের মুখ দেখে। ১৯৭৯ সালে কুয়ালালামপুর, এথেন্স, মাসকট ও ত্রিপলির রুট চালু করে বিমান। থাম্ব|বাম|১৯৮১ সালে লন্ডন হিথ্রো বিমানবন্দরে বিমানের বোয়িং ৭০৭-৩২০সি ১৯৮০ সালে বিমানের ইয়াং, টোকিও এবং ধাবাওং রুট চালু হয়। বিমান ১৯৮১ সালে তাদের প্রথম ৮৫-সিটার ফকার এফ২৮-৪০০০ ক্রয় করে। একটি বোয়িং ৭০৭-৩২০সি ১৯৮১ সালে ঢাকা টু হিথ্রো রুটে সংযোজন করা হয়। ১৯৮৩ সালে আরো ৩টি ডগলাস ডিসি-১০ সংযুক্ত হয় এবং বিমান সংস্থাটি তাদের বোয়িং ৭০৭-এর দশকে প্রবেশ করে। এছাড়াও বিমান ১৯৮৩ সালে বাগদাদ, ১৯৮৪ সালে প্যারিস এবং ১৯৮৬ সালে বাহরাইনে তাদের সেবা শুরু করে। ৫ অগাস্ট ১৯৮৪ তে বিমানের ইতিহাসে সবচেয়ে খারাপ দূর্ঘটনা ঘটে, একটি ফকার বিমান চট্টগ্রাম থেকে কলকাতা যাওয়ার পথে দূর্ঘটনায় পরে, যাতে প্রায় ৪৯ জন যাত্রী মারা যায়। নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি, লম্ভা দূরত্বর ফ্লাইট পরিচালনার জন্য ১৯৯৬ সালে বিমান দুইটি দূরপাল্লার এয়ারবাস এ৩১০ ক্রয় করে। ২০০০ সালে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স আর এয়ার জ্যামাইকা থেকে ভাড়ায় আনা দুইটি এয়ারবাস এ৩১০ সংযোজন করা হয়। এছাড়া ২০০৩ সালে আরো একটি ভাড়ায় আনা এয়ারবাস এ৩১০ বহরে যুক্ত হয়। ২০০৫-২০০৬ অর্থবছরে বিমান ১১,৫০,০০০ জন যাত্রী পরিবহন করে, যা বিগত দশকের তুলনায় দুইগুন আর ৭০ ভাগ বেশি। প্রাইভেট সার্ভিস চালু হলে বিমান ৩৫ ভাগ বাজার হারায় এবং গড়ে বছরে ১,৬২,০০০ জন অভ্যন্তরীণ যাত্রী পরিবহন করে। একই সময় বিমান ইতিহাসে সর্ববৃহৎ লোকসানের মুখ দেখে, যার পরিমাণ প্রায় ৮ কোটি ৩০ লক্ষ টাকা। পরের বছর লোকসান হয় প্রায় ৬ কোটি ৯০ লক্ষ টাকা। সে সময় বিমান তার জ্বালানী সরবরাহকারী, বাংলাদেশ পেট্রলিয়াম করপোরেশনকে এক মিলিয়ন ডলারের তেলের বিলও পরিশোধ করতে পারেনি। ২০০৭ সালে ম্যাকডনেল ডগলাস ডিসি ১০-৩০ ঢাকা থেকে কুয়ালালামপুর বিমানবন্দরে অবতরন করে। প্রাতিষ্ঠানিক বিষয় প্রধান কর্মকর্তা থাম্ব|সাবেক বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর প্রধান ও ক্যাপ্টেন মুহাম্মদ এনামুল বারি , বিমান পরিচালনা পর্ষদে তৃতীয়বারের মতো চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন সাবেক বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর প্রধান ও ক্যাপ্টেন মুহাম্মদ এনামুল বারি। এর পূর্বে ২০১৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব পালন করেছেন সাবেক বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর প্রধান জামাল উদ্দিন আহমেদ। বিমানের বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফরহাত হাসান জামিল। এর পূর্বে বিমানের ইতিহাসে প্রথম বিদেশী নাগরিক কেভিন জন স্টিল, ২০১৩ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসাবে দ্বায়িত্ব পালন করেছেন। প্রতিযোগিতামূলক বাছাই প্রক্রিয়া শেষে দেশি-বিদেশি ৪২ জন প্রার্থীর একটি পুল থেকে তাকে বেছে নেওয়া হয়েছিল। স্টিল ছিলেন একজন ব্রিটিশ নাগরিক, যিনি ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ এবং বিশ্বের অন্যান্য এয়ারলাইন্সে পরিচালনা ও প্রশাসনিক পদে কাজ করার বহু বছরের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছিলেন। বিমানে যোগদানের পর একটি সংবাদ সম্মেলনে স্টিল বিমানকে একুশ শতকের আধুনিক ও লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার প্রতিজ্ঞা ব্যাক্ত করেছিলেন। যদিও নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে প্রায় এক বছর অতিবাহিত হওয়ার পর বিভিন্ন মাধ্যমে তার সাফল্য নিয়ে যথেষ্ট মতবিরোধ সৃষ্টি হয়েছিল। স্টিল স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যার কথা উল্লেখ করে সালে বিমানের দ্বায়িত্বপদ থেকে পদত্যাগ করেন। স্টিলে বিমানের কর্মস্থল ত্যাগ করেছিলেন। সালে কাইল হেইউড বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার পদ গ্রহণ করেন। একজন ব্রিটিশ নাগরিক হেইউড ছিলেন কেভিন স্টিলের পরে এয়ারলাইন্সের পদে অধিষ্ঠিত দ্বিতীয় বিদেশী নাগরিক। এছাড়াও বিমানের পরিচালনা পর্ষদের পরিচালক হিসেবে যাদের নিযুক্ত করা হয়েছিল, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের মূখ্য সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মূখ্য সচিব, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া, বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর সহকারী প্রধান (অপারেশন অ্যান্ড ট্রেনিং), বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ার ইন চিফ, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) এম খুরশিদ আলম, বিজিএমইএ সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার তানজিবুল আলম, ইমার্জিং রিসোর্সেস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুর ই খোদা আব্দুল মবিন ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও (পদাধিকারবলে)। বতর্মানে মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন জনসংযোগ বিভাগের উপ মহাব্যবস্থাপক তাহেরা খন্দকার। এর আগে জনসংরযাগ বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন মহাব্যবস্থাপক শাকিল মেরাজ। মালিকানা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সূচনালগ্ন থেকেই এর মালিকানা ছিল বাংলাদেশ সরকারের আওতাধীন। ১৯৭৭ সালে বিমানকে একটি পাবলিক সেক্টর করপরেশনে পরিনত করা হয় যা সরকার কর্তৃক নিযুক্ত পরিচালিত পরিচালনা পর্ষদের নেতৃত্বে বিমানের সীমাবদ্ধ স্বায়ত্তশাসনের পক্ষে ছিল এবং বিমানের পরিচালক ও কর্মকর্তাদের কিছুটা স্বাধীনতা প্রদান করেছিল। ১৯৮৭ সাল বিমানের পরিশোধিত মূলধন আরো দুই হাজার কোটি টাকা বৃদ্ধি করা হয়। এবং সর্বশেষে ২০০৭ সালে যখন বিমানকে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে পরিনত করা হয় তখন এটি বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে পরিনত হয়। বেসরকারিকরণ ১৯৮০-এর দশক আশির দশকের শুরুর দিকে বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ বিমানের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। শুরুর দিকে কিছু উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ ঘটলেও অদক্ষ্য ব্যাবস্থাপনা ও দূর্নিতীর কারণে ধীরে ধীরে বিমানের লাভ কমতে শুরু করে। তৎকালীন দূর্নিতীগুলোর মধ্যে ছিল লোক দেখানো জিনিসপত্র ক্রয়, ভুয়া মেরামত বিল, রাজনৈতিক কারণে অলাভজনক রুটে বিমান চালনা ইত্যাদি। ১৯৯০-এর দশক বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যায় যে ১৯৯২-৯৩ অর্থবছরে বিমান বাংলাদেশের কাছে সরকারের বকেয়া কর ছিল প্রায় ২ কোটি ২০ লাক্ষ টাকা। পূর্বে ১৯৯৬ সালের একটি গবেষণায় দেখা যায় যে শুধুমাত্র দাফতরিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বিমানে ৫,২৫৩ জন কর্মকর্তা ছিল যেখানে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স প্রায় সমান সংখ্যক দাফতরিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর সমন্বয়ে বিমান বাংলাদেশের চেয়ে দশগুন বেশি বিমান পরিচালনা করতে সক্ষম ছিল। এই গবেষণাই প্রমাণ করেছিল যে তৎকালীন বিমান মূলধন স্বল্পতায় ভূগছিল এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছিল। ১৯৯৯ সালে, বিমান বাংলাদেশের উপর পরিচালিত এক নিরীক্ষা থেকে জানা যায় যে বিমানের টিকিট বিক্রয় প্রতিনিধিদের (সেলস এজেন্ট) কাছে প্রায় ২২ লক্ষ টাকা রকেয়া আছে যা বিমানেরই কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজসে সম্ভব হয়েছিল। উপরন্তু এই টিকিট বিক্রয় প্রতিনিধিদেরকে অতিরিক্ত ২৪ লক্ষ টাকা কমিশন হিসেবে অগ্রিম দেওয়া হয়েছিল যা বিমান বাংলাদেশের নিয়ম বহির্ভূত। ২০০৭ সালে বাংলাদেশের তত্ত্বাবধায়ক সরকার দূর্নিতী প্রতিরোধের অংশ হিসেবে বেশ কয়েকটি দূর্নিতীর অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ভাই বাংলাদেশ বিমানের সাবেক ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ার শামীম ইস্কান্দারকে গ্রেফতার করে। শামীম ইস্কান্দারের গ্রেফতারের আগে তার সহযোগী আরো প্রায় পয়ত্রিশ জন কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া হয়। ১৯৯০ সালের পর থেকে ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতীক ক্ষতির কারণে বাংলাদেশ সরকার বিমান বাংলাদেশকে বেসরকারীকরনের সিন্ধান্ত নেয়। এরই ধারাবাহিকতায় সরকার ২০০৪ সালে বিভিন্ন বিদেশি বিনিয়োগকারীর কাছে বিমানের চল্লিশ শতাংশ শেয়ার বিক্রয়ের করার প্রস্তাব দেয়। এই প্রস্তাবে উল্লেখ ছিল যে বাংলাদেশ সরকার বিমানের কিছু নিয়ন্ত্রণ সরকার সংরক্ষন করতে চায়। এই প্রস্তাব বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে সক্ষম হয় না উপরন্তু প্রস্তাবটি তৈরী এবং নিরীক্ষন করার পেছনে বেসরকারী তদারকি প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করায় সরকারের ১.৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় হয়। ২০০০-এর দশক ২০০৫–০৬ অর্থবছরে বিমান প্রায় সাড়ে ১১ কোটি যাত্রী পরিবহ বহন করেছিল, যা আগের দশকের তুলনায় ৭০% বৃদ্ধি পেয়েছিল। বাংলাদেশে বেসরকারী অভ্যন্তরীণ ক্যারিয়ার চালুর সাথে সাথে, গত দশ বছরের গড়ের তুলনায় বিমানের বাজারের শেয়ারের পরিমাণ ৩৫% হ্রাস পেয়েছে। ২০০৫–০৬ অর্থবছরে কেবল ১৬২,০০০ যাত্রী অভ্যন্তরীণ রুটে বিমানে ভ্রমণ করেছিলেন। একই সময়কালে বিমানটি তার বৃহত্তম বার্ষিক ক্ষতির মুখে পর, যা প্রায় ১২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (২০১০ সালের হিসাবে ৮.৩ বিলিয়ন টাকা), পরের বছরে ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (২০১০ সালের হিসাবে ৬৯9 বিলিয়ন টাকা) লোকসান হয়েছে। বিমানের জ্বালানী সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের কাছে প্রায় দশ লক্ষ টাকা বকেয়া হয়, যা ডিসেম্বর ২০০৬ সালে শেষের দিকে বেড়ে ১৫.৬৪ বিলিয়ন ডলারে পৌছায়। পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি thumb|alt=A white aircraft with cargo doors open being loaded.|২০১০ সালে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বোয়িং ৭৭৭-২০০ইআর বিমানের প্রথম যাত্রা ২০০৭ সালের মে মাসে বাংলাদেশের তত্বাবধায়ক সরকার বিমানকে একটি পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে পরিনত করার পরিকল্পনা মঞ্জুর করে যার শেয়ারের মালিকানা সাতটি সরকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে মানব সম্পদ ও যন্ত্রপাতির অনুপাত কমিয়ে আনার জন্য সরকার বিমানের কর্মকর্তাদের জন্য একটি স্বেচ্ছা অবসরের রুপরেখা প্রনণয়ন করে। তৎকালীন বিমান বাংলাদেশে বিমান এবং মানব সম্পদের অনুপাত ছিল ৩৬৭:১। কিন্তু একই শিল্পে অন্যান্ন এশিয়ান সংস্থাগুলো ১৫০:১ অনুপাত বজায় রেখেছিল। চাকুরীর মেয়াদ অনুযায়ী স্বেচ্ছা অবসরের পাওনাদি ঘোষিত হয়েছিল এবং বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে নেওয়া ২.৯৭ বিলিয়ন ডলারের বেশি ব্যয়ের জন্য পরিষেবার দৈর্ঘ্যের ভিত্তিতে ক্ষতিপূরণ পরিশোধের ব্যাবস্থা করা হয়েছিল। এই পরিকল্পনা থেকে বিমান প্রায় ১৬০০ কর্মী কমিয়ে আনার পরীকল্পনা করেছিল, কিন্তু ২১৬২ জন কর্মী স্বেচ্ছা অবসরের জন্য আবেদন করে। এদের মধ্যে ১৮৬৩ থেকে ১৮৭৭ জনের আবেদন বিমান ব্যাবস্থাপনা গ্রহণ করে। ২৩ জুলাই ২০০৭ সালে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে পরিণত হয়। প্রথমে এটির নাম পূর্বের বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স রাখার সুপারিশ করা হলেও পরে তা বাতিল করা হয়। সরকার এর পূরো পনেরো লক্ষ শেয়ারেরই মালিক যদিও সরকার ৪৯% শেয়ার ব্যক্তিগত খাতের মালিকানায় দিয়ে বাকি ৫১% শেয়ার সরকারি মালিকানায় রেখে এর নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে চেয়েছিল। পূনর্গঠনের পর এর সাবেক ব্যাবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল মোনেমকে পুনরায় ব্যাবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। বাকী ছয়জন পরিচালককে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বিমানের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেন। এই ছয় মন্ত্রণালয়ের সচিব ও বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের যুজ্ঞ সচিবকে সমানভাবে বিমানের শেয়ারের মালিকানা দেওয়া হয়। সরকার ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে এয়ার কমোডর জাহেদ কুদ্দুস কে আব্দুল মোনেমের স্থলাভিষিক্ত করে। এ আগে ২০০২ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত এয়ার কমোডর জাহেদ কুদ্দুস বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পূর্বে তিনি বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর বিভিন্ন উচ্চপদস্থ পদে কর্মরত ছিলেন। পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে রুপান্তরীত করার আগে যেসকল কর্মী স্বেচ্ছা অবসর পরীকল্পনায় চকুরি ছেড়েছিলেন তারা সমন্বিতভাবে একটি প্রতিযোগী এয়ারলাইন্স গঠন করার প্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন। যার জন্য এয়ার বাংলা ইন্টারন্যাশনাল, বিমান ইমপ্লইজ এয়ারলাইন ও বলাকা নামগুলি প্রস্তাব করা হয়েছিল। বিমানের সাবেক ব্যাবস্থাপনা পরিচালক এবং বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স পাইলট এসোসিয়েশনের সাবেক প্রেসিইডেন্ট তাদের সাথে যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে এই বিষয়ে আর কিছু জানা যায় নি। বিমান সংস্থা ২০০৭-০৮ অর্থবছরে ৬০০ কোটি টাকা এবং ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ১৫০ মিলিয়ন ডলার আয় করেছে। ২০০৯-১০ অর্থবছরে, ক্যারিয়ারের ৮০০ মিলিয়ন ডলার লোকসান হয়েছিল। ২০১০-এর দশক থাম্ব|ঢাকার ফার্মগেটে অবস্থিত বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের মুদ্রণ ও প্রকাশনা বিভাগ ২০১০-১১ অর্থবছরে যথাক্রমে বিপিসি ১১.৯৪ বিলিয়ন এবং সিএএবির ৫.৭৩ মিলিয়ন ডলার ছাড়ের পরেও বিমান ২ বিলিয়ন টাকা ক্ষতির সম্মুক্ষিণ হয়। পরবর্তী ২০১১-১২ অর্থবছরে বিমান ৬.০৬ বিলিয়ন ( মিলিয়ন) ডলার লোকসান করে; এবং ২০১২-১৩ অর্থবছরে নিরীক্ষাবিহীন পরিসংখ্যানে প্রায় ২ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি দেখানো হয়। ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে, বিভিন্ন উৎসের ব্যয় বাবদ বিমানের ১৫.৬০ বিলিয়ন ডলার অপরিশোধিত ছিল; যার মধ্যে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের নিকট ৩৬৭৬.২ মিলিয়ন ডলার এবং জ্বালানী সরবরাহকারী পদ্মা অয়েল কোম্পানির নিকট ৮.৫০ বিলিয়ন ডলার বকেয়া ছিল। বিমান ২০১৪–১৫ অর্থবছরে ৩.২৪ বিলিয়ন, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ২.৭৬ বিলিয়ন এবং ২০১৬-১৭ অর্থবছরের ১.৫১ বিলিয়ন ডলার লাভ করেছিল। ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বিমানের সর্বমোট লাভ হয়েছিল ৪৭০ মিলিয়ন ডলার। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বিমানের অপারেটিং আয়ের পরিমাণ ছিল ৪৯৩১ কোটি টাকা কিন্তু ব্যয় হয়েছিল ৫১৩৩ কোটি টাকা, এতে -২০২ কোটি টাকা লোকসান হয়। তবে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বিমানের ৩১৭৫ কোটি টাকা আয় করে যেখানে ব্যয় ছিল ২৯৩৮ কোটি টাকা এবং বিমানের সর্বমোট মুনাফা দাঁড়ায় ২৩৭ কোটি টাকা। অধীনস্ত কোম্পানি বিমানের সহায়ক সংস্থা বিমান গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং, বিমান চলাচল প্রকৌশল, বিমান প্রশিক্ষণ এবং ফ্লাইট ক্যাটারিংয়ের সাথে সম্পর্কিত। বিমানের পাঁচটি সম্পূর্ণ মালিকানাধীন সহায়ক সংস্থা রয়েছে: ১৯৭২ সাল থেকে, বিমান গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং সংস্থাটি বাংলাদেশের সকল বিমানবন্দরের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং পরিসেবা প্রদার করছে। সংস্থাটি ২০১১-১২ অর্থবছরের ৪.৫ বিলিয়ন ডলার মুনাফা আয় করেছিল। উড্ডয়নকালীন সময়ে বিমানে খাবার সরবরাহের জন্য ১৯৮৯ সালে সম্পূর্ণ মালিকানাধীন সহায়ক সংস্থা বিমান ফ্লাইট ক্যাটারিং সেন্টার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এটি সৌদি, ইতিহাদ, মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্স, থাই এয়ারওয়েজ, এমিরেট্‌স, ড্রাগন এয়ার, চায়না সাউদার্ন এয়ারলাইন্স এবং রিজেন্ট এয়ারওয়েজ সহ বাংলাদেশের অন্যান্য বিমান প্রতিষ্ঠানগুলিকে নৈমিত্তিক খাবার সরবরাহ করে এটি বিমানের অন্যতম লাভজনক খাত। বিমান ফ্লাইট ক্যাটারিং সেন্টারের সুবিধার্থে ১৯৭৬ সালে বিমানের আরেকটি লাভজনক সহায়ক সংস্থা বিমান পোল্ট্রি কমপ্লেক্স প্রতিষ্ঠা করা হয়, যেটি ১৯৮০ সালের নভেম্বরে কার্যক্রম শুরু করে। বর্তমানে এখানকার ৯০% ডিম ও মুরগি বিমান ফ্লাইট ক্যাটারিং সেন্টারের পাঠানো হয়। ২০০৭ সালের মার্চে এই খামারে বার্ড ফ্লু ধরা পড়েছিল এবং এতে অনেক মুরগি মারা হয়েছিল। এটি ছিল বাংলাদেশে বার্ড ফ্লু সংক্রমণের প্রথম ঘটনা। সেবা ২০১৩ সালে, বিমান এয়ারলাইন্সে অবকাঠামোগত সহায়তা এবং উপার্জন সম্পর্কিত অ্যাকাউন্টিং পরিষেবা সরবরাহ করার জন্য সিআইটিএ এবং মার্কেটরের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়। ২০১৪ সাল থেকে বিমানের ওয়েবসাইটে অগ্রিম আসন সংরক্ষণের ব্যবস্থা চালু হয়। এছাড়াও অনলাইনে খাবার নির্বাচনের বিকল্পও সরবরাহ করা হয়, যেখানে যাত্রীরা ডায়াবেটিক খাবার, নিরামিষ খাবার, এশিয় নিরামিষ খাবার, শিশুদের খাবার এবং মুসলিম খাবার থেকে পছন্দ মতো খাবার বেছে নিতে পারে, যা তাদেরকে উড্ডয়নকালে বিমানে পরিবেশন করা হবে। তৃতীয় পক্ষের পরিষেবা সরবরাহকারীর সাথে সহযোগিতামূলক ভাবে বিমান যাত্রীরা ইকোনমি (সাশ্রয়ী) শ্রেণি বুকিংয়ের পরে অতিরিক্ত আসন থাকা সাপেক্ষে বিজনেস শ্রেণির আসনের সুবিধা নিতে পারে। ফ্লাইট শ্রেণী থাম্ব|ঢাকা থেকে জেদ্দা যাত্রাকালীন সময়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বোয়িং ৭৭৭-৩০০ইআর ফ্লিটের বিজনেস শ্রেণীর কেবিনের অভ্যন্তর। সাধারনত বড় এবং সুপরিসর বিমানগুলোতে দুই ধরনের ভ্রমণ শ্রেণী বিজনেস ক্লাস ও ইকোনমি ক্লাস রয়েছে, কিন্তু ছোট এবং স্বল্পপরিসর বিমানগুলোতে শুধুমাত্র ইকোনমি ক্লাস সেবা প্রদান করা হয়। বিমানের বেশিরভাগ বিমানগুলিতে একটি দ্বি-শ্রেণীর পরিসেবায় (জে এবং ওয়াই) পরিচালিত হয়। বিমানের বোয়িং ৭৭৭ বিজনেস ক্লাসের কেবিনের আসনব্যবস্থা ২-৩-২ বিন্যাসে সাজানো হয়েছে, অন্যদিকে ইকোনমি ক্লাসের কেবিন ৩-৩-৩ বিন্যাসে সাজানো। সংকীর্ণ বডির বোয়িং ৭৩৭-৮০০-এর বিজনেস ক্লাস ২-২ বিন্যাসে সাজানো হয়েছে, অন্যদিকে ইকোনমি ক্লাসের কেবিন ৩-৩ বিন্যাসে সাজানো। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিজনেস ক্লাসের যাত্রীদের বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন বিমানবন্দর এবং হোটেল লাউঞ্জে প্রবেশাধিকার রয়েছে। এয়ারবাস এ৩১০ ঘরানার বিমানগুলোতে মসলিন এক্সিকিউটিভ শ্রেনীর আসন ২-৩-২ বিন্যাসে সাজানো, অপরদিকে ম্যাকডনাল ডগলাস ডিসি ১০-৩০ বিমানগুলোতে যাত্রীদের আরো বেশি জায়গা দিয়ে ২-২-২ বিন্যাসে সাজানো। অন্যান্য ইকোনমি ক্লাসে সচরাচর আসনগুলো ২-৫-২ বিন্যাসে সাজানো থাকে। ফ্লাইটের আভ্যন্তরীণ সুবিধা বিমান তাদের ফ্লাইটের অভ্যন্তরে সরবরাহকৃত ম্যাগাজিনটি ২০১৩ সালে সেপ্টেম্বর বিহঙ্গ নামে সাবকন্টিনেন্টাল মিডিয়া গ্রুপ থেকে পুনরায় প্রকাশ করছে। দ্বি-মাসিক ম্যাগাজিনটি পূর্বে দিগন্ত নামে পরিচিত ছিল এবং তারও আগে এটি যাত্রী নামে প্রকাশিত হত। ম্যাগাজিনটি বাংলা এবং ইংরেজি উভয় ভাষায় প্রকাশিত হয়, যেটি মুলত বাংলাদেশ ও বিমানের গন্তব্য বিষয়ক তথ্যাদি সরবরাহ করে। বিমানে বিজনেস ক্লাসে বাংলা ও ইংরেজি ভাষার সংবাদপত্র সরবরাহ করা হয়। বিমান ২০১৪ সালের মার্চে, বিমান বুটিক নামে ইন-ফ্লাইট শুল্ক-মুক্ত বিক্রয়প্রদর্শণী চালু করে। শুল্ক-মুক্ত পণ্যগুলির মধ্যে রয়েছে আতর, প্রসাধনী, অলঙ্কার, ঘড়ি, শিশুদের উপহার, চকোলেট, তামাক ইত্যাদি। ২০১৪ সালে বিমান অন-বোর্ডে বাচ্চাদের জন্য রঙিন বই, স্টেশনারি, পুতুল এবং জিগস পাজলের ব্যবস্থা চালু করে। বিমান সাধারণত তাদের ইকোনমিক ক্লাসের ফ্লাইটে অ্যালকোহলযুক্ত পানীয় সরবরাহ করে না, তবে বিজনেস ক্লাসের যাত্রীদের বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন লাউঞ্জে প্রবেশাধিকার দেয়া হয়। থাম্ব|বাম|বিমান বাংলাদেশের ম্যাকডনেল ডগলাস ডিসি-১০-এর অভ্যন্তর thumb|বিমানের বোয়িং ৭৩৭-৮০০ বিমানের ইকোনমি শ্রেণীতে চামড়ায় মোড়া আসন। এই আসনগুলো বিমানের জাঁকজমক বাড়ানোর সাথে সাথে আরো কিছু সুবিধা দেয় যেমন এগুলো পরীষ্কার করা সুবিধা আর তরল পদার্থ পড়লে এই আসনগুলো তা শুষে নেয় না। ম্যাকডনেল ডগলাস ডিসি-১০-৩০ বিমানগুলির প্রত্যেকটি কেবিনে প্রজেক্টরের সাহায্যে প্রদর্শনের ব্যাবস্থা রয়েছে, অপরদিকে এয়ারবাস এ৩১০ বিমানে ছাদের লাগেজ রেকে ঝুলন্ত মনিটরের ব্যাবস্থা আছে। তবে আধুনিক বোয়িং ৭৭৭ এবং বোয়িং ৭৮৭ বিমানগুলোতে যাত্রীদের ইন-ফ্লাইট বিনোদনের সুবিধার্থে ব্যক্তিগত পছন্দ অনুযায়ী অনুষ্ঠান উপভোগের জন্য প্রতিটি আসনের পেছনে এলসিডি মনিটর যুক্ত রয়েছে। প্রতিটি আসনে একটি করে ব্যক্তিগত টাচ স্ক্রিন প্রদর্শন যুক্ত থাকে। পুরাতন বিমানগুলোর ক্ষেত্রে উৎপাদনের সময় এগুলোতে যে ধরনের সুযোগ সুবিধা ছিলো বাংলাদেশ বিমান সেগুলোই অব্যাহত রয়েছে। এছাড়াও এই প্রদর্শনটিতে উচ্চ রেজোলিউশনে বিমানের চলমান মানচিত্র এবং সরাসরি ফ্লাইটের তথ্য জানানো হয়। এগুলি ইংরেজি এবং বাংলা দুটি ভাষায় উপলভ্য। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে বিমানের বহরে সদ্য যুক্ত হওয়া বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনারের মাধ্যমে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স তার বহরে বেশিরভাগ নতুন বিমানগুলিতে ইন্টারনেট, ওয়াইফাই, মোবাইল টেলিফোনি, মুভি স্ট্রিমিং এবং লাইভ টিভি স্ট্রিমিং সেবা চালু করেছে। এই সেবা প্রদানের উদ্দেশ্যে পঁচিশটি উপগ্রহ স্থাপন করা হয়েছিল। প্যানাসোনিক এভিওনিক্সের টাচ স্ক্রিন সহ নতুন প্যানাসোনিক ইএক্সথ্রি সিট-ব্যাক মনিটরগুলি যাত্রীদের এক শতাধিক অন-ডিমান্ড চলচ্চিত্র, সঙ্গীত এবং ভিডিও গেম সরবরাহ করে। অন-বোর্ড টাচ স্ক্রিন থ্রিডি রুট-ম্যাপ, বিমানের সর্বশেষতম সংযোজন। যেখানে বিমান উড্ডয়নকালীন সময়ে অতিক্রমকারী অঞ্চলগুলির বিভিন্ন কাঠামো প্রদর্শন করা হয়। ২০১৭ সালের মার্চ থেকে বিমান তাদের ফ্লাইটগুলিতে ডায়াবেটিস এবং শিশুদের খাবারের প্যাকেজ সহ নতুন-বৈচিত্র্যযুক্ত খাবার এবং পানীয় বিকল্প সরবরাহ করতে শুরু করেছে, যা প্রতি তিন মাস অন্তর পর্যালোচনার মাধ্যমে হালনাগাদ করা হয়। অন-বোর্ডে বিমানের ফ্লাইটে হালাল খাবার পরিবেশন করা হয় এবং বিজনেস ক্লাসে, লা কার্টে মেনু সরবহার হরা হয়। ফ্রিকুয়েন্ট-ফ্লায়ার প্রোগ্রাম বিমান লয়্যালিটি ক্লাবের লোগো|thumb|বিমানের ফ্রিকুয়েন্ট-ফ্লায়ার প্রোগ্রাম বিমান লয়্যালিটি ক্লাবের লোগো বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ২০১৩ সালের নভেম্বরে, বিমান লয়্যালিটি ক্লাব নামে ফ্রিকুয়েন্ট-ফ্লায়ার প্রোগ্রাম চালু করে। এটি গ্রাহকদের বিমানবন্দরে টায়ার্ড বেনিফিট, মাইলেজ বোনাস, অতিরিক্ত ব্যাগেজ, লাউঞ্জ প্রবেশাধিকার এবং চেক-ইন সুবিধার মতো বিভিন্ন পুরস্কার সেবা প্রদান করে। জুলাই ২০১৪ সালের হিসাবে বিমানের ফ্রিকুয়েন্ট-ফ্লায়ার প্রোগ্রামে চার হাজার সদস্য ছিল। ক্লাবটিতে গোল্ড, সিলভার, গ্রিন- এই তিন ধরনের সদস্যতা চালু রয়েছে। ২০১৭ সালে ক্লাবের অধীনে মানবিক রোবট সোফিয়াকে গোল্ড কার্ড প্রদানের মাধ্যমে প্রথম শ্রেণীর সদস্যতা প্রদান করে। টিকেটিং ২০০৭ সালে. আন্তর্জাতিক বিমান পরিবহন সংস্থা (আইএটিএ) নির্ধারিত ই-টিকেটিং নিয়ম প্রবর্তন করায় বিমান এমাডিউস নামক কোম্পানির সাথে চুক্তি করে। আইএটিএ-এর সদস্যদের জন্য এই ই-টিকেটিং নিয়ম চালু করার শেষ সময় ছিল ৩১ ডিসেম্বর ২০০৭। ই-টিকিটিং সুবিধা যাত্রীদের জন্য হারানো টিকিটের চাপ এবং ব্যয় হ্রাস করার নিশ্চয়তা দেয়। আইএটিএ-এর সদস্য হওয়া সত্বেও বিমান এই সময়সীমার মধ্যে ই-টিকেটিং পদ্ধতি চালু করে নি। এর অন্যতম কারণ ছিল এমাডিউসের স্থানিয় অফিস, ২০০৫ সালে আদালত কর্তৃক মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে অভিযুক্ত হওয়ায় এর সকল কর্যক্রম নিষিদ্ধ হয়েছিল। যদিও মাসখানেকের মধ্যেই উচ্চ আদালতে আপিলের মাধ্যমে তারা কার্যক্রমে ফিরে আসে। পূর্বে ২০১৩ সালে, বিমান জার্মান ই-টিকিটিং সংস্থা হহন এয়ারের সাথে চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল, যার ফলে বিশ্বের যে কোনও স্থান থেকে বিমানের টিকিট ক্রয় করার সুযোগ রয়েছে। পণ্য পরিবহন থাম্ব|ম্যানচেস্টার বিমানবন্দরে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বোয়িং ৭০৭ কার্গো যাত্রী পরিবহনের পাশাপাশি বিমান বাংলাদেশ, যাত্রীবাহী বিমানগুলোর মালামাল রাখার জায়গা ব্যবহার করে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গন্তব্যে পৌছানোর কাজও করে থাকে। এই সুবিধার্থে বিমান বাংলাদেশ ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে একটি কার্গো ভিলেজ প্রতিষ্ঠা করেছে, যেখানে বিদেশে পাঠানোর পূর্বে মালামাল মোড়কিকরণ এবং লেবেলযুক্ত করার কাজ করা হয়। ২০০৩-০৪ অর্থবছরে বিমান বাংলাদেশ মালামাল পরিবহনে ১৬.৫% প্রবৃদ্ধি অর্জন করে, যেখানে অন্যান্য মালবাহী বিমান পরিচালনা সংস্থা যেমন বিসমিল্লাহ এয়ারলাইন্স, বেষ্ট এভিয়েশন, এয়ার বাংলাদেশ সহ অন্যান্য বেসরকারি সংস্থাগুলো একই অর্থবছরে ১০৮% প্রবৃদ্ধি অর্জন করে। তা সত্বেও পণ্য পরিবহনে বিমান বাংলাদেশ দৃঢ় অবস্থানে ছিল। এই বেসরকারি সংস্থাগুলো পণ্য পরিবহন পরিসেবার বাজার ১০.৬% বৃদ্ধি করতে সক্ষয় হয়। মোট ৯৯,০০০ টন পণ্যের মধ্যে ৪৭% মালামাল বিদেশি বিমান পরিবহন সংস্থা, ২৪% বেসরকারি সংস্থা এবং বিমান মাত্র ২৯% মালামাল পরিবহন করেছিল। যাত্রীসেবার পাশাপাশি, পণ্য পরিবহনেও বিমানে বাংলাদেশ দূর্নিতিতে জড়িত হয়েছিল। ২০০৪ সালের এক তদন্ত প্রতিবেদন জানা যায় মধ্যপ্রাচ্যে বিমানের পণ্য পরিবহন পরিসেবায় বাংলাদেশ সরকার প্রায় মিলিয়ন ডলার রাজস্ব হারিয়েছে। ২০১৮ সালের মার্চে, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ইউরোপের সমস্ত গন্তব্যে সরাসরি কার্গো বিমানের অনুমতি লাভের মাধ্যমে ইউরোপিয় ইউনিয়নের কাছ থেকে এসিসি৩ ও আরএ-৩ (তৃতীয় দেশের জন্য নিয়ন্ত্রক এজেন্ট) শংসাপত্র লাভ করে। এসিসি৩ বলতে কোনো তৃতীয় দেশের বিমানবন্দর থেকে ইউরোপগামী এয়ার কার্গো বা মেল ক্যারিয়ার বোঝায়। বাংলাদেশ সরকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর উন্নত করার পরে বিস্ফোরক সনাক্তকরণ ব্যবস্থা (ইডিএস), বিস্ফোরক সনাক্তকরণ কুকুর (ইডিডি) এবং বিস্ফোরক ট্রেস সনাক্তকরণ (ইডিটি) মেশিন স্থাপন সহ এর সুরক্ষা উন্নয়নের পরে এই শংসাপত্রগুলি লাভ করেছিল। সুরক্ষার মান উন্নত করার পর বিমান কার্গো ভিলেজ এবং হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর একই সাথে এসিসি৩ এবং আরএ-৩ শংসাপত্র অর্জন করে। পাশাপাশি ইউরোপযুক্ত কার্গো ভাড়ার জন্য হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে একটি আরএ-৩ কমপ্লায়েন্ট গুদাম তৈরি করা হয়েছিল যেখানে বিমান বাংলাদেশে কর্মী ব্যতীত সকলের প্রবেশাধীর নিষেধাজ্ঞা জার করা হয়। বিমান বাংলাদেশ মোবাইল অ্যাপ ২০১৯ সালের ২৮ ডিসেম্বর, দেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের মোবাইল অ্যাপ উদ্ধোধন করেছিলেন। তিনি এছাড়াও হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করার পাশাপাশি বিমানের সোনার তরী এবং আচিন পাখির নামে নতুন দুটি বোয়িং ৭৮৭-৯ ড্রিমলাইনার সংযোজন উদ্বোধন করেন। মোবাইল অ্যাপটি বিশ্বজুড়ে গ্রাহকদের ব্যবহারের জন্য বিনামূল্য উপলভ্য। গন্তব্যসমূহ বিমান ২৫টি গন্তব্যে সেবা প্রদান করছে, যার মধ্যে ১৭টি আন্তর্জাতিক। যদিও ভবিষ্যতে আরও ৪৩টি দেশে গন্তব্য সম্প্রসারণের জন্য বিমান বাংলাদেশের পরিসেবা চুক্তি রয়েছে। বর্তমানে বিশ্বের ১৬ টি শহরে ও বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স তাদের সেবা কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছে। এরমধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি গন্তব্য, দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার কয়েকটি গন্তব্য এবং ইউরোপের লন্ডন এবং ম্যানচেস্টারে ফ্লাইট পরিচালনা করেছে বিমান। এশিয়া ও ইউরোপে চলাচলকারী রুটসমূহের মধ্যে রয়েছে- লন্ডন, ম্যানচেস্টার, রোম, মিলান, কুয়েত, দোহা, কুয়ালালামপুর, কোলকাতা, দিল্লি, কাঠমান্ডু, ব্যাংকক, সিঙ্গাপুর, হংকং ইত্যাদি। বিমান ম্যানচেস্টার হয়ে চীনের গুয়াংজু, নিউ ইয়র্ক এবং টরন্টোতে গন্তব্য চালু করার ঘোষণা করেছে। ক্রমেই বিদেশি বিমান সংস্থাগুলো বিমানের পূর্বের লাভজনক গন্তব্যগুলি দখল করে নিচ্ছে। যেমন ঢাকা-লন্ডন রুটে যেখানে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ ও বিমান বাংলাদেশের একছত্র আধিপত্য ছিল সেখানে এমিরেটস ও এয়ার ইন্ডিয়া সহ অন্যান্য বিমান সংস্থাগুলো এই রুটটিকে লাভজনক রুট হিসেবে চিহ্নিত করে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। বিমান বাংলাদেশের এই বিমান স্বল্পতা ও অব্যাবস্থাপনাকে কাজে লাগিয়ে ব্রিটেন প্রবাসীদের ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ ও রয়েল বেঙ্গল এয়ারলাইন্স সহ অন্যান্য বিমান সংস্থাগুলো সিলেট-লন্ডন রুটে বিমান পরিবহন সেবা প্রদান করার পরিকল্পনা খতিয়ে দেখছে। নিউ ইয়র্ক ও ম্যানচেষ্টার alt=বিমানের আন্তর্জাতিক রুট|থাম্ব|বিমান আন্তর্জাতিক রুটে: লন্ডন, ম্যানচেস্টার; রিয়াদ, দাম্মাম, মদিনা, জেদ্দা, কুয়েত, দোহা, আবুধাবি, দুবাই, মাসকট, নয়াদিল্লি, কলকাতা, কাঠমান্ডু, ব্যাংকক, কুয়ালালামপুর, সিঙ্গাপুরে সেবা প্রদান করে। থাম্ব|বিমান বাংলাদেশে বর্তমানে ঢাকায় থেকে ৮টি আভ্যন্তরীণ গন্তব্যে সেবা প্রদান করে। পর্যন্ত, বিমানের স্বল্পতার এবং বিশেষত মার্কিন বিমান সংস্থা নিয়ন্ত্রকের (এফএএ) বেপরোয়া ও অযৌক্তিক কর্মের কারণে বাংলাদেশ বিমানের নিউ ইয়র্কের ফ্লাইটগুলি স্থগিত রয়েছে। ১৯৯৩ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিমান বাংলাদেশ ব্রাসেলস হয়ে নিউ ইয়র্কের জন এফ. কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর যেবা প্রদান করে। এই ঢাকা- নিউ ইয়র্ক রুটটি বিমানের সবচেয়ে সম্মানজনক রুট হিসাবে বিবেচিত হওয়ায় এবং বিমানের স্বল্পতা ও ক্রমবর্ধমান ক্ষতির সম্মুখিন হওয়া সত্বেও জন এফ কেনেডি বিমানবন্দরের ল্যান্ডিং স্লট ধরে রাখার জন্য বিমান অব্যাহত চেষ্টা চালিয়ে যায়। কারণ একবার ল্যান্ডিং স্লট বাতিল হলে তা পূনরুদ্ধার করা দূরহ ছিল। ক্ষতির পরিমাণ কমাবার লক্ষে এবং ব্রিটেনের উত্তরে ম্যানচেষ্টারে বসবাসরত বাংলাদেশিদের চাহিদা পূরনের লক্ষে বিমান তাদের ফ্লাইট সপ্তাহে একটিতে কমিয়ে আনার পাশাপাশি নিউ ইয়র্ক যাওয়া এবং আসার পথে ম্যানচেষ্টারে যাত্রাবিরতী দেওয়ার পরীকল্পনা করে। ৮ এপ্রিল ২০০৬ সালে নিউ ইয়র্ক যাবার পথে বিমান সর্বপ্রথম ম্যানচেষ্টার বিমানবন্দরে অবতরন করে। যদিও এর আগে ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন তাদের আন্তর্জাতিক বিমান চলাচল সুরক্ষা মূল্যায়ন কর্মসূচি অনুসারে আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থার মান পূরণ না করায় বাংলাদেশ সিভিল এভিয়েশন অথরিটিকে দ্বিতীয় শ্রেণীর সংস্থা হিসেবে তুলিকাভুক্ত করেছিল। দ্বিতীয় শ্রেনীর অন্তর্ভুক্ত বিমান সংস্থাগুলোকে যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবন্দরগুলোতে অবতরন করতে কিছু বাধ্যবাধকতা সম্মুখিন হতে হয়। এই বাধ্যবাধকতা সত্বেও বিমান নিউ ইয়র্কে সেবা কার্যক্রম চালু রাখতে সক্ষম হয়েছিল কিন্তু ফ্লাইট সংখ্যা বাড়ানো ও নতুন ল্যান্ডিং স্লট পাওয়া দুঃসাধ্য হয়ে পরেছিল। দ্বিতীয় শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত বিমান সংস্থাগুলো অন্তত দুই বছরের জন্য তাদের নির্ধারিত সময়সূচী এবং গন্তব্যে কোন ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে না। কিন্তু বিমান বাংলাদেশ নিউ ইয়র্ক-ঢাকা ফ্লাইটটি ব্রাসেল্‌সে ট্রানজিট না দিয়ে সেটি ম্যানচেষ্টারে ট্রানিজিট দেওয়ার মাধ্যমে নিয়ম লঙ্ঘনের জন্য বিমানকে জরিমানা করে। ফলে বিমান ম্যানচেষ্টারে ট্রানজিট বাতিল করে পুনরায় ব্রাসেল্‌সে ট্রানজিট চালু করে। thumb|বাম|বিমান বাংলাদেশের একটি ডিসি ১০ বিমান ব্রাসেল্‌স বিমানবন্দরে অবতরন করছে। বিমান বাংলাদেশ ১৩ বছর ধরে এই ডিসি ১০ বিমান ব্যবহার করে ঢাকা-নিউ ইয়র্ক-ব্রাসেল্‌স পরিসেবা চালু রেখেছিল। ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বিমান বাংলাদেশকে তাদের ডিসি ১০ বিমানগুলি ২০০৫ সালের মধ্যে পরিবর্তন করার ব্যাপারে সতর্ক করে কারণ বিমানটি পুরানো হওয়ায় এতে ত্রুটির সম্ভাবনা থাকায় আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দেওয়ার মত যথেষ্ট সুরক্ষিত নয়। ২০০৬ সালের ১৩ মে ডিসি ১০ বিমানের নিরাপত্তা জনিত কারণে এফএএ বিমানের বিজি০০১ (ঢাকা–ব্রাসেল্‌স–জেএফকে) ফ্লাইট নিউ ইয়র্কের আকাশসীমায় প্রবেশের অনুমতি দেয় নি। পরে বিমানটি কানাডার মন্ট্রিয়ল-পিয়ের ইলিয়ট ট্রুডু আন্তর্জাতিক বিমনবন্দরে অবতরন করে এবং এর যাত্রীরা অন্য একটি বিমানে তাদের গন্তব্যে পৌছায়। কানাডীয় বিমান প্রশানন বিমানটিকে পর্যবেক্ষণ করে কোন ত্রুটিহীন মন্তব্য করলে এফএএ পরবর্তীকালে দুঃখ প্রকাশ করে জানায় যে এটি তাদের ভুল ছিল। সেবার কানাডা থেকে বিমানটি কোন যাত্রী না নিয়েই ঢাকা ফিরে আসে। এই ঘটনার পর থেকেই পুরাতন হয়ে যাওয়া এই ডিসি ১০ বিমান এবং প্রতি যাত্রায় প্রায় ডলার লোকসান করতে থাকা এই রুটটি বিমান বন্ধ করে দেয়। এই বিমানটিকে অন্যান্য স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক রুটে চালিয়ে বিমান তার অব্যাহত লোকসান পুষিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করে। তবে ২০০৭ সালে, সাবেক তত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বিমানের নিউ ইয়র্ক রুটটি পুনরায় চালু করার পরিকল্পনা করা হয়। এর পূর্বে জন এফ. কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ ফ্লাইট পূনর্বহাল করার জন্য ২০০৮ সালের ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত সময় বেধে দেয়, এবং এই সময়ের পরে স্থায়ীভাবে বিমানের অবতরন সময়সূচী বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে জানানো হয়। ক্ষতির সম্মুখিন হওয়া সত্বেও গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় যুক্তরাজ্য সরকারের সাথে একটি চুক্তি পূনর্বিবেচনা করে, বিমান ২০১০ সালে ভাড়ায় আনা একটি বোয়িং ৭৮৭-৯ বিমান দিয়ে ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে বিমান পুনরায় সপ্তাহে তিনবার সরাসরি ঢাকা-ম্যানচেস্টার-নিউ ইয়র্ক ফ্লাইট চালু করার পরিকল্পনা করে। লন্ডন ১৯৭২ সালের ৪ মার্চ বিমান বোয়িং ৭০৭ ব্যবহার করে লন্ডনে সাপ্তাহিক ফ্লাইটের মাধ্যমে প্রথম আন্তর্জাতিক সেবা চালু করে। ২০২০ সালের জানুয়ারি অনুযায়ী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে সরাসরি উড়ে যায়। নতুন কেনা বোয়িং ৭৭৭ বিমান ব্যবহার করে সপ্তাহে দুটি যাত্রী ও দুটি কার্গো পরিবহন চালু করে। নতুন পরিচালনার অধীনে, বিমান বাংলাদেশ সাম্প্রতিক সময়ে সময়ানুবর্তিতার পাশাপাশি অন-টাইম ফ্লাইটের কার্যকারিতাতে উল্লেখযোগ্য উন্নতি করেছে। অনিয়ন্ত্রিত সময়সূচীর জন্য পূর্বে ২০০৭ সালে বিমান লন্ডন হিথ্রো বিমানবন্দর ও দুবাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সহ অন্যান্য বড় আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলো থেকে ব্যাপক সমালোচনার শিকার হয়। ২০০৭ সালের গ্রিষ্মে হিথ্রো বিমানবন্দর পরিচালনাকারী সংস্থা বিএএ বিমানকে প্রমাণসহ একটি চিঠি দেয় যাতে উল্লেখ ছিল যে বিমান ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রেই বরাদ্দকৃত সময়সূচীতে হিথ্রো বিমানবন্দরে অবতরন করে নি যা আন্তর্জাতিক এয়ার ট্রান্সপোর্ট এসোসিয়েশনের নিয়মানুযায়ী বাধ্যতামূলক। এবং পরবর্তী গ্রীষ্মে যদি বিমান লন্ডনে পরিসেবা চালু রাখতে চায় তাহলে হিথ্রো বিমানবন্দরের আশা ছেড়ে দিয়ে স্ট্যান্সড বা গেটউইক বিমানবন্দর ব্যবহার করতে পারে। পরবর্তী বছর বিএএ এর সাথে অলোচনায় বিমান এই মর্মে আশ্বস্ত করে যে এটি বরাদ্দকৃ অবতরন সময়সূচীর অন্তত পক্ষে ৮০% ব্যবহার করবে। ফলে ২০০৮ সালে বিমান লন্ডন হিথ্রো বিমানবন্দরে অবতরনের অনুমতি পায়। ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বরে বিমানের একটি ডিসি-১০ দিয়ে পরিচালিত ঢাকা-লন্ডন সরাসরি সেবার একটি বিমান হিথ্রো বিমানবন্দরে তার নির্ধারিত সময়ের তিন ঘণ্টা পর পৌছালে বিমানটিকে হিথ্রোতে অবতরন করার অনুমতি না দিয়ে জ্বালানী ভরার জন্য গেটউইক বিমানবন্দরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ২০০৮ সালের ১০ সেপ্টেম্বরে দ্য টাইমস পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সকে হিথ্রো বিমানবন্দরের সবচেয়ে নিকৃষ্ট বিমান সংস্থা হিসেবে আক্ষা দেওয়া হয় যার প্রত্তেকটি বিমানে প্রায় তিন ঘণ্টা করে দেরি হয়। ২০০৮ সালে জাতিসংঘ নিরাপত্তা, সুরক্ষা এবং সময়সূচি না মানার কারণে এর কর্মীদের বাংলাদেশ বিমানে ভ্রমন না করার সতর্কতা জারি করে। তাসত্বেও যারা বাংলাদেশ বিমানে ভ্রমণ করেছে তারা নিজ দায়িত্বে ভ্রমণ করেছে এবং তাদের বীমার টাকা দাবি করতে পারে নি। বাংলাদেশ বিমানের নুতুন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জানান ২০০৮ সালের এই ঘটনা সম্পর্কে তিনি জানতেন না। তিনি আরো যোগ করেন যে সে সময় বিমান সময়সূচী মেনে চলতে হিমশিম খাচ্ছিল এবং আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই তা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে চলে আসবে। হজ্জ্ব ফ্লাইট thumb|হজ্জ্ব ফ্লাইট পরিচালনার জন্য কাবো এয়ার থেকে ভাড়ায় আনা বিমান বাংলাদেশের একটি বোয়িং ৭৪৭-২০০ বিমান বাংলাদেশের হাজার হাজার মুসলিম প্রতি বছর হজ্জ পালন করতে মক্কায় যান। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স একমাত্র বাংলাদেশি বিমান সংস্থা যা জেদ্দার বাদশাহ আব্দুলআজিজ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রতি বছর হজ্জ্বযাত্রী পরীবহন করে। বাংলাদেশের উচ্চপর্যায়ের ব্যক্তিবর্গ যেমন প্রধানমন্ত্রী বা বিমান মন্ত্রী প্রতি বছর এই হজ্জ্ব ফ্লাইটের উদ্বোধন করে থাকেন। বাংলাদেশ সরকার ২০০২ সালে একবার বেসরকারি বিমান সংস্থাগুলোর জন্য এই পরিসেবা উন্মুক্ত করেছিল। এয়ার বাংলাদেশ হল সর্বপ্রথম বেসরকারি বিমান পরিবহন সংস্থা যারা হজ্জ্ব ফ্লাইট পরিচালনা করে। কিন্তু বেসরকারি এই বিমান সংস্থা সেই বছর বিবিন্ন যাত্রায় প্রায় সর্বোচ্চ নয় দিন পর্যন্ত বিলম্ব করায় পুনরায় বিমান বাংলাদেশ একচ্ছত্র আধিপত্যে ফিরে যায়। বিমানের হজ্জ্ব ফ্লাইটগুলো আজ পর্যন্ত কখনই ঝামেলামুক্ত ছিল না। ২০০৫ সালে হজ্জ্ব ফ্লাইটের জন্য অতিরিক্ত ভাড়া ধার্য করার অভিযোগে তৎকালীন বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী পদত্যাগ করেন। ২০০৬ সালে বর্ধিত চাহিদার কথা বিবেচনা করে বিমান বাংলাদেশের সমস্ত হজ্জ্ব ফ্লাইট থেকে প্রথম শ্রেণী সরিয়ে নেয়ার মত নজিরবিহীন সিদ্ধান্ত নেয়। অপরদিকে হজ্জ্ব এজেন্সিগুলো নিয়মনীতি মেনে না চলার জন্য হজ্জ্বযাত্রীদের ভিসা প্রাপ্তি বিলম্ব হলে বিমান বাংলাদেশকে প্রায় ১৯টি যাত্রা বাতিল করতে হয়। আবার এই ভিসা সংক্রান্ত জটিলতার অবসান হওয়ার পর বিমান বাংলাদেশ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এই অতিরীক্ত যাত্রীর জন্য অতিরীক্ত বিমান যোগাড় করতে ব্যার্থ হয়। ২০০৭ সালে বিমানের হজ্জ্ব ফ্লাইটের সমস্যা সমাধানের জন্য সাবেক তত্বাবধায়ক সরকার তিন বছর মেয়াদী পরীকল্পনা গ্রহণ করে। এই পরীকল্পনা অনুসারে বাংলাদেশের অন্য দুটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকেও হজ্জ্ব ফ্লাইট পরিচালনা শুরু হয়। বিমান বাংলাদেশ হজ্জ্ব ফ্লাইট পরীচালনার জন্য ফুকেট এয়ার থেকে দুটি বিমান লিজ নেয়। ফুকেট এয়ারকে চুক্তি অনুযায়ী ১০% অগ্রিম দেওয়ার কথা থাকলেও তারা ৩০% অগ্রিম দাবি করে বসলে ২০০৭ সালের আগস্ট মাসে এই চুক্তি শেষ হয়ে যায়। ফুকেট এয়ারের জায়গা পূরণ করতে একটি রি-টেন্ডারের মাধ্যমে অষ্ট্রেলিয়ার আসবান এরোনেটিক্সকে পরবর্তীতে নির্বাচন করা হয়। ২০০৮ সালে বিমান সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের ফ্লাইট পরিচালনা করতে নাইজেরিয়ার কাবো এয়ার থেকে একটি ৫৪২-সিটের বোয়িং ৭৪৭-২০০ ইজারা নিয়েছিল। ওরিয়েন্ট থাই এয়ারলাইন্স থেকে আরো একটি ৫১২-সিটের বোয়িং ৭৪৭-৩০০ ইজারা নেওয়া হয়েছিল। ২০১২ সালের আগস্ট মাসেও বিমান হজ্ব ফ্লাইট নিয়ে একই ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হয়। ২০১৩ সালে হজ্ব ফ্লাইটগুলো কিছুটা বিলম্বিত হলেও অন্যান্য বছরের তুলনায় যাত্রীদের দূর্ভোগ কিছুটা কমই হয়েছে। , বিমান তাদের নির্ধারিত পরিসেবাগুলি সরবরাহ করতে অসুবিধার সম্মুক্ষিণ হয়েছিল, কারণ ক্যারিয়ার হজ মৌসুমে জেদ্দায় হজযাত্রীদের যাতায়াতকে বিমানে অগ্রাধিকার দিয়েছিল ফলে হজ্ব ফ্লাইট সময়সূচী ঠিক রাখতে গিয়ে অন্যান্য গন্তব্যসমূহে অনিয়মিত হয়ে পরে। তা সত্বেও বিমান হজ্ব ফ্লাইট পরিচালনা করে প্রায় একশ কোটি টাকা লাভও করে যা ১৯৭৩ সালের পর বিমানের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। এছাড়া ২০১৪ সালের হজ্ব ফ্লাইটে আরও দুটি ফ্লাইট যোগ করার কথা জানায় বিমান কর্তৃপক্ষ। উড়োজাহাজ বহর বর্তমান বহর thumb|২০১০ সালে সিঙ্গাপুর চাঙ্গি বিমানবন্দরে বিমান বাংলাদেশের বোয়িং ৭৩৭-৮০০। thumb|২০১৮ সালে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমান বাংলাদেশের বোয়িং ৭৮৭-৮১ , বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এর বহরে নিম্নোক্ত বিমানসমূহ রয়েছে: বহরের ইতিহাস ১৯৭২–২০০০ একটি পুরাতন দগলাস ডাকোটা এবং ডিসি-৩ বিমান দিয়ে বিমান বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয়। ঢাকা থেকে সিলেট ও চট্টগ্রামের স্থানীয় রুটগুলো শুরু হয় চারটি ফকার ফকার এফ২৭ বিমান অধিগ্রহণের মধ্যমে। অপরদিকে ব্রিটিশ ক্যালিডোনিয়ান থেকে একটি বোয়িং ৭০৭ চাটার্ড বিমান আনার পর বিমানের আন্তর্জাতিক পরিসেবা শুরু হয়। ১৯৮৩ সালে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স থেকে তিনটি ম্যাকডনেল ডগলাস ডিসি-১০-৩০ বিমান ক্রয়ের মাধ্যমে লম্বা দূরত্বের আন্তর্জাতিক ফ্লাইটগুলো চুলু করা সম্ভব হয়। ৪০,০০,০০০ মার্কিন ডলার (২০১৯ সালে ৪২,৫০২,০১৩ ডলারের সমতুল্য) চুক্তিতে ১৯৮৯ সালের শেষদিকে তিনটি ব্রিটিশ এরোস্পেস এটিপি অর্ডার করা হয়েছিল। এই এটিপিগুলি ১৯৯০ সালের শেষদিকে ফকার এফ-২৭ বিমানগুলির মাধ্যমে প্রতিস্থাপন করা হয়। ১৯৯০ সালের মধ্যভাগে বিমান তার লম্বা দুরত্বের রুটগুলির জন্যে এয়ারবাস সিরিজের বিমানগুলির প্রতি নজর দেয়। ১৯৯৫ সালে, দুটি পিডব্লিউ ৪০০০ চালিত এয়ারবাস রএ৩১০-৩০০-এর আদেশ দেওয়া হয়েছিল; যার মধ্যে প্রথমটি সালে বহরে যুক্ত হয়েছিল। তবুও বিমান তাদের প্রবীণ ডিসি–১০ বিমানগুলি ব্যবহার অব্যহত রাখে। প্রায় দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে ডিসি ১০-৩০ বিমানগুলো কোনপ্রকার উল্লেখযোগ্য যান্ত্রিক গোলোযোগ ছাড়াই বিমান বাংলাদেশের একমাত্র সুপরিসর বিমান হিসেবে ভালভাবেই সেবা দিয়েছে। এই বিমানগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অন্তর্জাতিক সেবা প্রদানের কাজে ব্যবহার করা হত। অন্যদিকে ঘরোয়া রুটগুলোতে ফকার এফ২৭ এবং বিএ এটিপি বিমানগুলো ব্যবহার করা হত যেগুলো প্রায়শই যান্ত্রিক গোলোযোগের শিকার হয়ে পরে থাকত। একবার বাংলাদেশ সরকারের এক মন্ত্রী বিমানে চড়ে যখন জানতে পারলেন যে তিনি যে বিমানটিতে চড়েছেন সেটি ব্রিটিশ এরোস্পেস এটিপি বিমান তখন তিনি তার বিমান যাত্রা বাতিল করে সড়কপথে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। ২০০৩ সালের জানুয়ারিতে বিমান দুটি বোয়িং ৭৩৭-৩০০ ইজারা নিয়েছিল যা আঠার মাসের জন্য আভ্যন্তরীণ এবং আঞ্চলিক রুটে ব্যবহৃত হয়েছিল। থাম্ব|১৯৯৫ সালে ব্যাংকক-ডন মুয়াং বিমানবন্দরে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের এফ২৮-৪০০০ ফেলোশিপ। ১৯৮১ সালে বিমানের বহরে এই ধরনের বিমান যুক্ত হয়েছিল। ম্যাকডোনেল ডগলাস ডিসি-১০এস এবং এয়ারবাস এ৩১০-৩০০ ২০১১ সালে আধুনিক বোয়িং ৭৭৭-৩০০ইআর বহরে যুক্ত হবার আগে বিমানের বেশিরভাগ আন্তর্জাতিক রুটে সেবা দিত। ২০১২ সালে অবসর নেওয়ার পূর্বে, ফকর এফ২৮ দেশীয় এবং আঞ্চলিক রুটগুলির জন্য বহরের অবশিষ্ট অংশ ছিল। বিমানের বহরে দ্বিতীয় সর্বশেষ ডগলাস ডিসি–১০ বিমান যার উৎপাদন (এল/এন ৪৪৫) বন্ধ হয়ে যায় এবং ১৯৯৬ সালে বিমানের দুটি নতুন এয়ারবাস এ৩১০ কেনার পরে তিনটি এয়ারবাস এ৩১০–৩০০ তৈরি করা হয়েছিল। বিমান বাংলাদেশের সর্বশেষ ক্রয়কৃত বিমানটি থাইল্যান্ডের পিবিএয়ার থেকে কেনা। ১৯৯৭ সালে তৈরি এই ফকার এফ২৮-৪০০০এস বিমানটি ২০০৪ সালে ২.৯১ নিলিয়ন মার্কিন ডলার দিয়ে কেনা হয়েছিল। ১৯৭৭ সালে নির্মিত বিমান দুটি বিমানের সর্বশেষ অধিগ্রহণকৃত ও বহরের সবচেয়ে পুরানো বিমান হওয়া সত্বেও বিমানটি বর্তমান বহরের মধ্যে সবচেয়ে পুরাতন। এই পুরাতন হয়ে যাওয়া বিমানগুলোর কারণে অধিকাংশ সময়ই বিমান বাংলাদেশ এর বিমানের সময়সূচী বজায় রাখতে হিমশিম খায়। পুরাতন যামানার বিমানগুলোর সবচেয়ে বড় সমস্যা হল এগুলোর অনেক বেশি রক্ষনাবেক্ষনের প্রয়োজন হয় এবং উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে এর খুচরা যাওন্ত্রপাতি পাওয়া দুষ্কর হয়ে পরে। এই বিমানগুলি কখনই লম্বা দূরত্বের রুটে ডিসি ১০ বিমানগুলির জায়গা দখল করতে পারে নি যদিও ডিসি ১০ বিমান বিভিন্ন দেশে নিরাপত্তা জনিত কারণে নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়েছিল। ডিসি–১০ বিমানগুলির জন্য তাদের বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলির রক্ষণাবেক্ষণের জন্য একটি জার্মান কোম্পানির সাথে তিন বছরের চুক্তি ২০১২ সালের জানুয়ারিতে স্বাক্ষরিত হয়েছিল। বিমান সবসময় এর ফকার এফ২৭, ডিসি-১০-৩০ এবং এয়ারবাস এ৩১০-৩০০ বিমানগুলোর রক্ষনাবেক্ষণ সহ আনুষঙ্গিক কাজগুলো হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে করে থাকে। ২০০০-এর দশক ২০০০ সালে, বিমান তাদের ডিসি-১০ বিমানগুলোকে প্রতিস্থাপন করার জন্য মোট চারটি সুপরিসর বিমান অধিগ্রহণ করার আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দিলেও বেসরকারিকরণ সহ সকল প্রস্তাব ফাইলবন্দি হয়ে পরে থাকে। ২০০৫ সালে আরেকটি প্রস্তাবে বিমান এয়ারবাস এবং বোয়িং কোম্পানির দশটি সুপরিসর বিমান কেনার আগ্রহ দেখায় যার মূল্য ছিল প্রায় বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বোয়িং এই ক্রয় প্রস্তাবে বাংলাদেশ সরকারের নিশ্চয়তা প্রদান সাপেক্ষে অর্থায়নের অগ্রহ প্রকাশ করে। তবে আমলাতান্ত্রিক সময়ক্ষেপণ এবং সরকারের প্রতিশ্রুতির অভাবে বোয়িং এই প্রস্তাবে অগ্রহ হারিয়ে ফেলে এবং প্রস্তাবটি বাতিল করে। স্বল্প দূরত্বের এবং ছোট বিমান কেনার আরো একটি প্রস্তাবও একই কারণে ঝুলে থাকে। সালে, দুটি এয়ারবাস এ৩১০-৩০০ এবং দুটি এয়ারবাস এ৩০০-৬০০ বিমান ভাড়া নেওয়ার জন্য বিমান একটি টেন্ডার আহ্বান করে। এই টেন্ডারে একমাত্র অংশগ্রহণকারী ছিল সংযুক্ত আরব আমিরাত ভিত্তিক স্টার এভিয়েশন। থাম্ব|২০০৫ সালে লন্ডন হিথ্রো বিমানবন্দরের নিকট বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের এয়ারবাস এ৩১০-৩০০। পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে পরিণত হওয়ার পর বিমান বাংলাদেশের পুরাতন বিমানগুলোকে নতুন প্রজন্মের বিমানের মাধ্যমে প্রতিস্থাপনের চেষ্টা করে। এরই অংশ হিসেবে ২০০৭ সালের নভেম্বরে বোয়িং কোম্পানিকে চারটি বোয়িং ৭৭৭-২০০ এবং চারটি বোয়িং বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার বিমান যথাক্রমে ২০১৩ এবং ২০১৭ সালে সরবরাহ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়। এই বিমানগুলোর গড় সর্বনিম্ন দর ছিল মিলিয়ন মার্কিন ডলার। একই সময়ে এয়ারবাস কোম্পানি বিমানকে বোয়িংয়ের চেয়ে সস্তা দরে তাদের এয়ারবাস এ৩২০ অথবা এয়ারবাস এ৩৩০ সিরিজের বিমান সরবরাহ করার প্রস্তাব দেয়। অপরদিকে বিমান বাংলাদেশের সাম্প্রতিক দৈনন্দিন সময়সূচী পালনের জন্য ২০০৮ সালে ক্রয়ের সুবিধা সহ পুরাতন এয়ারবাস এ৩১০-৩০০ বিমান ভাড়ার দরপত্র আহ্বান করে। ২০০৮ সালের মার্চে বিমানের পরিচালনা পর্ষদ বিলিয়ন ব্যয়ে বোয়িং কমার্শিয়াল এয়ারপ্লেন্স থেকে আটটি নতুন প্রজন্মের সুপরিসর বিমান কেনার পরিকল্পনা ঘোষণা করে। এগুলির মধ্যে প্রথম চারটি বিমান হল বোয়িং ৭৭৭-৩০০ইআর (প্রত্তেকটির গড় মূল্য মিলিয়ন), এবং ২৯৪ সিটের চারটি বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার (প্রত্তেকটির গড় মূল্য মিলিয়ন), যেগুলি ২০১৭ সালে সরবাহ করা কথা ছিল। ২০০৮ সালের এপ্রিলে বিমান বোয়িংয়ের সাথে এই আটটি বিমানের অধিগ্রহণের চুক্তি সই করেছিল। এছাড়াও বিমান মিলিয়ন প্রাথমিক কিস্তি পরিশোধ সাপেক্ষে বোয়িং ৭৩৭-৮০০ কেনার জন্য সমঝোতা স্মারক অন্তর্ভুক্ত করেছে, যেগুলি ২০১৫ সালে বহরে যুক্ত হবার কথা ছিল। বাকি অর্থ যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক এক্সিম ব্যাংক ৮৫% এবং বাকী অংশ স্থানীয় বাংলাদেশি ব্যাংকগুলো অর্থায়ন করবে। এই চুক্তির কিছুদিন পরেই বিমান বাংলাদেশ বোয়িংয়ে সাথে আভ্যন্তরীণ রুটগুলো পরিচালনার জন্য আরো চারটি বোয়িং ৭৩৭-৮০০ বিমান কেনার চুক্তি করে এবং এ ধরনের আরো দুটি বিমানের বিকল্প নির্বাচন করে। এই দশটি বিমানের জন্য দরপত্রের মোট মূল্য ছিল প্রায় বিলিয়ন ডলার। ২০১০-এর দশকে থাম্ব|বাম|২০১২ সালে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের এয়ারবাস এ৩১০-৩০০ শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করছে। ২০১০ সালে, বিমান ইউরো আটলান্টিক এয়ারওয়েজের দুটি বোয়িং ৭৭৭-২০০ইআর ইজারা নিয়েছিল। ২০১১ সালে প্রথম দুটি নতুন বোয়িং ৭৭৭-৩০০ইআর গ্রহণ করার পূর্বে এই বিমানগুলি মূলত অন্তর্বর্তীকালীন সময়কালের জন্য ইউরোপিয় গন্তব্যে যাওয়ার পথে ব্যবহৃত হত। এই দুটি ব্র্যান্ডের নতুন ৭৭৭-৩০০ইআর সরবরাহ প্রাপ্তি সুরক্ষিত করতে বিমান জেপিমারোগান চেজ সংস্থা থেকে দেওয়া প্রাথমিকভাবে মিলিয়ন ডলার ঋণ গ্রহণ করে। একটি নতুন লিভার পরিহিত, ক্যারিয়ার ২০১১ সালের অক্টোবরের শেষদিকে তার প্রথম বোয়িং ৭৭৭-৩০০ইআর সরবরাহ গ্রহণ নিয়েছিল। এটি ছিল বোয়িং কর্তৃক সরবরাহকৃত ৭৭৭-৩০০ইআর। বোয়িং ৭৭৭-৩০০ইআর সরবরাহকৃত বিমানটিও বহরে যুক্ত হয়। ২০১১ সালের নভেম্বরের শেষদিকে এয়ারলাইন্স এটি দখল করে নেয়। আকাশ প্রদীপ নামে তৃতীয় বোয়িং ৭৭৭-৩০০ইআর, ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে ক্যারিয়ারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছিল। রাঙ্গা প্রভাত নামে চতুর্থ বিমানটি ২০১৪ সালের মার্চে বহরে যোগ দিয়েছিল। প্রারম্ভিকভাবে বাংলাদেশ সরকার বোয়িংকে ৩৫৬ মিলিয়ন ডলার অনুমোদন করে, যার মধ্যে ২৯০ মিলিয়ন এক্সিম ব্যাংক এবং বাকি অর্থ স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক পরিশোধ করে। ২০১৪ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি, কুয়েত একটি স্টপওভার দিয়ে ঢাকা-বার্মিংহাম রুটে সর্বশেষ ফ্লাইট পরিচলনার পর বিমান তাদের ম্যাকডনেল ডগলাস ডিসি-১০ বহরের ইতি টানে। একই বছর, ২২-২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ক্যারিয়ারটি বার্মিংহামে প্রতিদিন তিনটি করে নয়টি পৃথক ফ্লাইট পরিচালনা করেছিল। এরপরে বিমানটি স্ক্র্যাপ হিসাবে বিক্রির জন্য দেওয়া হয়েছিল। ২০১৬ সালের অক্টোবরে এয়ারবাস এ৩১০-৩০০ পরিসেবা থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছিল। ২০১৪ সালের মার্চে ক্যারিয়ারটি ইজিপ্ট এয়ার থেকে দুটি বোয়িং ৭৭৭-২০০ইআর বিমান ভাড়া নেয়। পরিবহনের রুট সম্প্রসারণের অনুমতি প্রাপ্তির জন্য, বিমান তার বহর ১৬টি বিমানে প্রসারিত করার পরিকল্পনা করেছে। নতুন ইজারা নেয়া ড্যাশ ৮-কিউ ৪০০ বিমানের সাথে ক্যারিয়ারটি ২০১৫ সালের এপ্রিলে, কক্সবাজার, যশোর, সৈয়দপুর, রাজশাহী এবং বরিশালে পুরোদমে অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট চালু করেছিল। স্মার্ট এভিয়েশন কোম্পানির নিকট থেকে পাঁচ বছরের জন্য ইজারা নেওয়া দুটি বিমান কলকাতা ও ইয়াঙ্গুনের আঞ্চলিক ফ্লাইটে চলাচল শুরু করে। প্রাথমিকভাবে ২০১৩ সালের নভেম্বরে এটি পুনরায় চালু হওয়ার কথা ছিল, তবে বিমানের স্বল্পতার কারণে বিমান এতে ব্যর্থ হয়েছিল। থাম্ব|চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, দোহা গামী বিমানের প্রথম বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার। ফেব্রুয়ারি ২০১৭ সালে, ঘোষণা করা হয়েছিল যে বিমান তাদের নিজস্ব তিনটি ড্যাশ ৮-কিউ৪০০ সংগ্রহ করবে যা অভ্যন্তরীণ এবং আঞ্চলিক রুটে চালিয়ে যাওয়ার জন্য স্মার্ট এভিয়েশন কোম্পানি থেকে ইজিারা নেওয়া বর্তমান বিমান প্রতিস্থাপনের জন্য ব্যবহৃত হবে। ইজিপ্ট এয়ারের নিকট থেকে বোয়িং ৭৭৭-২০০ইআর ইজারা নেওয়ার নির্ভরযোগ্যতা সমস্যার কারণে, ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে বিমান ঘোষণা করেছিল যে ইজারা শেষ হওয়ার এক বছর আগেই ২০১৮ সালের মার্চ এবং মে মাসে বিমানটি ফিরে আসবে। ২০১৮ সালের ১৮ আগস্ট, চারটি বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনারের মধ্যে প্রথমটি বিমানের বহরে যুক্ত হয় এবং এটি ৫ সেপ্টেম্বর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক এটি আকাশ বীনা নামকরণ করা হয়েছিল। ড্রিমলাইনার নামের পাশেই, ককপিটের নিচে, পোর্টের পাশে ইংরেজিতে এবং স্টারবোর্ডে বাংলায় নামটি লেখা রয়েছে। ২০১৮ সালের ১ ডিসেম্বর, দ্বিতীয় বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনারটি ১৫৩ম ফ্লিট হিসাবে বিমানের বহরে যোগ দেয়, এবং এর সিরিয়াল নম্বর হিসাবে বিজি-২১১২ এর পাশাপাশি বাংলায় "হাংস বলাকা" নামকরণ করা হয়। "রাজ হ্যাংশা" নামে সর্বশেষ বোয়িং ৭৮৭-৮ বিমানটি ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯ সালে বিমানের বহরে যোগ দেয়ে। চারটি বোয়িং ৭৮৭-৮ গ্রহণ করার পরে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরো দুটি বোয়িং ৭৮৭-৯ ক্রয়ের আগ্রহ দেখিয়েছিলেন। চীন ভিত্তিক হাইনান এয়ারলাইন্স তাদের ৩০টি ড্রিমলাইনারের অর্ডার বাতিল করার পর বোয়িং কোম্পানি বিমানের নিকট প্রস্তার রাখে এবং পরবর্তী দুইটি ৭৮৭-৯ ড্রিমলাইনারের প্রতিটি মিলিয়ন ডলার দামে বিমানের কাছে বিক্রয়ের জন্য রাজি হয়। এই দুইটি বিমান ২১ ও ২৪ ডিসেম্বর ২০১৯ সালে বিমানের বহরে যুক্ত হয় এবং দুটি বিমানের নাম সোনার তরী এবং অনিন পাখি রাখা হয়। ২০২০-এর দশকে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে বিমান আরো দুটি ড্যাশ-৮ কিউ৪০০এনজি শর্ট বোডি বিমান কিনতে আগ্রহ প্রকাশ করেছিল। প্রস্তাবটি করা হয়েছিল মূলত অভ্যন্তরীণ এবং আঞ্চলিক রুটে ফ্লাইটের ফ্রিকোয়েন্সি বৃদ্ধি করার উদ্দেশ্যে। এছাড়া, আরো চারটি বোয়িং ৭৮৭-৯ কেনার আলোচনা চলছে যা হাইনান এয়ারলাইন্সের থেকে নেওয়ার কথা থাকলেও পরবর্তীতে ভিস্তারা থেকে নেয়া হয়। এছাড়া, বিমান অদূর ভবিষ্যতে কার্গো বিমান কেনার ঘোষণা জানায়। বিমান বাংলাদশের পূর্বোক্তোন বিমানসমূহ thumb|২০০৭ সালে কুয়ালালামপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণরত বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ম্যাকডনেল ডগলাস ডিসি-১০-৩০। বিমান বাংলাদশের বিমান পরিচালনার ইতিহাসে নিম্নোক্ত বিমানসমুহ ব্যবহার করা হয়েছে: এয়ারবাস এ৩১০-৩০০ ব্রিটিশ এরোস্পেস এটিপি বোয়িং ৭০৭-১২০বি বোয়িং ৭০৭-৩২০ বোয়িং ৭০৭-৩২০বি বোয়িং ৭০৭-৩২০সি বোয়িং ৭৩৭-৩০০ বোয়িং ৭৪৭-২০০বি বোয়িং ৭৪৭-৩০০ বোয়িং ৭৪৭-৩০০এসসিডি বোয়িং ৭৪৭-৪০০ বোয়িং ৭৭৭-২০০ বোয়িং ৭৭৭-২০০ইআর ডগলাস ডিসি-৬বি ডগলাস ডিসি-৮-৪০ ডগলাস ডিসি-৮-৫০ ফকার এফ২৭-২০০ ফকার এফ২৭-৬০০ ফকার এফ২৮-৪০০০ ম্যাকডনেল ডগলাস ডিসি-১০-১৫ ম্যাকডনেল ডগলাস ডিসি-১০-৩০ ম্যাকডনেল ডগলাস ডিসি-১০-৩০ইআর ম্যাকডনেল ডগলাস এমডি-৮০ প্রতীক থাম্ব|বাম|বিমান বাংলাদেশের সর্বশেষ সংযোজিত প্রতীক অঙ্কিত একটি বোয়িং ৭৭৭-৩০০ইআর বিমান হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবস্থান করছে। thumb|২০১০ সালে সংযোজিত বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এর প্রতীক যা পরে বাতিল করা হয়। আধুনিক বাংলায় বিমান শব্দটি এসেছে সংস্কৃত শব্দ ভিমান থেকে। প্রাচীন বৈদিক সাহিত্যে ভিমান শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে এমন একটি যন্ত্র বোঝাতে যা উড়তে সক্ষম। বিমানের প্রতীক হিসেবে লেজে লাল বৃত্তের ভিতরে সাদা বলাকা অঙ্কিত চিহ্ন ব্যবহার করা হয়। প্রতীক নকশা করেছেন চিত্রশিল্পী কামরুল হাসান। তবে শুরুর দিকে বিমানের নাক থেকে শুরু করে জানালার উপর দিয়ে লেজ পর্যন্ত একটি গাঢ় নীল লাইন বিমান বাংলাদেশের প্রতীক ছিল। এই গাঢ় নীল লাইনটি আশির দশকে পরিবর্তন করে বাংলাদেশের পতাকার সাথে মিলিয়ে লাল ও গাঢ় সবুজ রঙের লাইন ব্যবহার শুরু হয় যা পরবর্তীতে দুই দশক ধরে প্রচলিত ছিল। ২০১০ সালে বিমান বাংলাদেশ একটি বড় ধরনের পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাওয়ার ফলে এর সবধরনের প্রতীকেই পরিবর্তন আনা হয়। সেই বছরই টেগুর নকশাকৃত বিমানের নতুন প্রতীক উন্মোচন করা হয় এবং ভাড়ায় আনা বোয়িং ৭৭৭ ও ৭৩৭ বিমানে তা প্রথমবারের মত ব্যবহার করা হয়। তবে সরকার পরিবর্তনের পর বিমান তার পুরোনো প্রতীকে ফিরে যায় কারণ নতুন প্রতিকটি আকর্ষণীয় ছিল না এবং এটি বিমান ও বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করত না। পরবর্তিতে বিমান ২০১১ সালে পুরাতন প্রতীকের একটি পরিমার্জিত ও আধুনিক রূপ সংযোজন করে যা প্রথম বোয়িং ৭৭৭-৩০০ইআর বিমানে প্রদর্শিত হয়। বর্তমানে বিমান বাংলাদেশের সব বিমান এই নতুন প্রতীক ব্যবহার করছে। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পূর্ব সদর দফতরের নাম রাখা হয়েছে বলাকা ভবন যা বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকায় অবস্থিত। বিমান ভবনের সামনে বলাকা নামে একটি বকের ভাস্কর্য রয়েছে। বাংলাদেশী ভাস্কর, মুরাল, পোড়ামাটি এবং ল্যান্ডস্কেপিং শিল্পী মৃণাল হক ভাস্কর্যটির নকশা প্রণয়ন এবং নির্মাণ করেছেন। দূর্ঘটনা , এভিয়েশন সেফটি নেটওয়ার্ক এভিয়েশন সেফটি নেটওয়ার্ক বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ১২টি দুর্ঘটনা নথিভুক্ত করেছে, যার মধ্যে দুটি প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। চিত্রশালা আরো দেখুন বাংলাদেশের বিমান পরিবহন সংস্থাসমূহের তালিকা বাংলাদেশের পরিবহন ব্যবস্থা তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ বিষয়শ্রেণী:১৯৭২-এ প্রতিষ্ঠিত বিষয়শ্রেণী:১৯৭২-এ প্রতিষ্ঠিত বিমান পরিবহন সংস্থা বিষয়শ্রেণী:বাংলাদেশের বিমান পরিবহন সংস্থা বিষয়শ্রেণী:বাংলাদেশের সরকারি সংস্থা বিষয়শ্রেণী:রাষ্ট্রায়ত্ত বিমান পরিবহন সংস্থা বিষয়শ্রেণী:বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় বিষয়শ্রেণী:আইএটিএ সদস্য বিষয়শ্রেণী:বাংলাদেশি ব্র্যান্ড বিষয়শ্রেণী:বেসামরিক_বিমান_চলাচল
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স
শামসুর রাহমান (২৩ অক্টোবর ১৯২৯ - ১৭ আগস্ট ২০০৬) বাংলাদেশ ও আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি। জীবদ্দশাতেই তিনি বাংলাদেশের প্রধান কবি হিসেবে মর্যাদালাভ করেছিলেন। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় ভাগ, তথা পঞ্চাশের দশকে তিনি আধুনিক কবি হিসেবে বাংলা কবিতায় আবির্ভূত হন। এবং অল্প সময়ের ভেতরেই দুই বাংলায় ( তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম বাংলায়) কবি হিসেবে পরিচিতি পান। আধুনিক কবিতার অনন্য পৃষ্ঠপোষক বুদ্ধদেব বসুর 'কবিতা' পত্রিকায় 'রূপালি স্নান' কবিতাটি প্রকাশিত হলে কবি হিসেবে শামসুর রাহমান সুধীজনের দৃষ্টিলাভ করেন । পরবর্তীতে উভয় বাংলাতেই তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব এবং জনপ্রিয়তা প্রতিষ্ঠিত হয়। তিনি নাগরিক কবি, তবে নিসর্গ তাঁর কবিতায় খুব কম ছিল না। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ওপর লিখিত তাঁর দুটি কবিতা খুবই জনপ্রিয়। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তিনি মজলুম আদিব (বিপন্ন লেখক) ছদ্মনামে কলকাতার বিখ্যাত দেশ ও অন্যান্য পত্রিকায় কবিতা লিখতেন। শামসুর রাহমানের ডাক নাম বাচ্চু। জন্ম, শৈশব ও শিক্ষা কবি শামসুর রাহমানের জন্ম পুরনো ঢাকার মাহুতটুলি এলাকায় নানাবাড়িতে। বাবা মুখলেসুর রহমান চৌধুরী ও মা আমেনা বেগম। পৈতৃক বাড়ি নরসিংদী জেলার রায়পুরা থানার পাড়াতলী গ্রামে। কবি শামসুর রাহমান ১৩ জন ভাই-বোনের মধ্যে ছিলেন ৪র্থ। ১৯৪৫ সালে পুরনো ঢাকার পোগোজ স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন। ১৯৪৭ সালে ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলেজ থেকে আইএ পাশ করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে স্নাতক শ্রেণিতে ভর্তি হন এবং তিন বছর নিয়মিত ক্লাস করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর মূল পরীক্ষা দেননি। ১৯৫৩ সালে পাস কোর্সে বিএ পাশ করে তিনি ইংরেজি সাহিত্যে এমএ (প্রিলিমিনারি) পরীক্ষায় দ্বিতীয় বিভাগে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করলেও শেষ পর্বের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেননি। পেশা শামসুর রাহমান পেশায় সাংবাদিক ছিলেন। ১৯৫৭ সালে দৈনিক মর্নিং নিউজ-এ সহসম্পাদক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৫৭ থেকে ১৯৫৯ সাল পর্যন্ত রেডিও পাকিস্তানের অনুষ্ঠান প্রযোজক ছিলেন। এরপর তিনি আবার ফিরে আসেন দৈনিক মর্নিং নিউজ-এ। সেখানে তিনি ১৯৬০ সাল থেকে ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত সহযোগী সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ১৯৬৪ সালের নভেম্বর মাসে দৈনিক পাকিস্তান (স্বাধীনতা উত্তর দৈনিক বাংলা) এর সহকারী সম্পাদক পদে যোগ দেন এবং ১৯৭৭ সালের জানুয়ারী পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি একইসাথে দৈনিক বাংলা ও সাপ্তাহিক বিচিত্রার সম্পাদক নিযুক্ত হন। ১৯৮৭ সালে সামরিক সরকারের শাসনামলে তাকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়। এরপর তিনি অধুনা নামের একটি মাসিক সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সাহিত্যধারা বিংশ শতকের তিরিশের দশকের পাঁচ মহান কবির পর তিনিই আধুনিক বাংলা কবিতার প্রধান পুরুষ হিসেবে প্রসিদ্ধ। কেবল বাংলাদেশের কবি আল মাহমুদ এবং পশ্চিমবঙ্গের কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় বিংশ শতকের শেষার্ধে তুলনীয় কাব্যপ্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন বলে ধারণা করা হয়। আধুনিক কবিতার সাথে পরিচয় ও আন্তর্জাতিক-আধুনিক চেতনার উন্মেষ ঘটে ১৯৪৯-এ, এবং তার প্রথম প্রকাশিত কবিতা ১৯৪৯ মুদ্রিত হয় সাপ্তাহিক সোনার বাংলা পত্রিকায়। শামসুর রাহমান বিভিন্ন পত্রিকায় সম্পাদকীয় ও উপসম্পাদকীয় লিখতে গিয়ে নানা ছন্দনাম নিয়েছেন। সে গুলো হচ্ছে: সিন্দবাদ, চক্ষুষ্মান, লিপিকার, নেপথ্যে, জনান্তিকে, মৈনাক। পাকিস্তান সরকারের আমলে কলকাতার একটি সাহিত্য পত্রিকায় মজলুম আদিব (বিপন্ন লেখক) নামে কবিতা ছাপা হয় যা দিয়েছিলেন বাংলা সাহিত্যের বিশিষ্ট সমালোচক আবু সায়ীদ আইয়ুব। ব্যক্তিগত জীবন ১৯৫৫ সালের ৮ই জুলাই শামসুর রাহমান জোহরা বেগমকে বিয়ে করেন। কবির তিন ছেলে ও দুই মেয়ে। তাদের নাম সুমায়রা আমিন, ফাইয়াজ রাহমান, ফাওজিয়া সাবেরিন, ওয়াহিদুর রাহমান মতিন ও শেবা রাহমান। প্রতিবাদী কবি ও শহুরে কবি শামসুর রাহমান স্বৈরশাসক আইয়ুব খানকে বিদ্রুপ করে ১৯৫৮ সালে সিকান্দার আবু জাফর সম্পাদিত সমকাল পত্রিকায় লেখেন 'হাতির শুঁড়' নামক কবিতা। বাংলাদেশের অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমান যখন কারাগারে তখন তাকে উদ্দেশ্য করে লেখেন অসাধারণ কবিতা 'টেলেমেকাস' (১৯৬৬ বা ১৯৬৭ সালে)। ১৯৬৭ সালের ২২ জুন পাকিস্তানের তৎকালীন তথ্যমন্ত্রী রেডিও পাকিস্তানে রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্প্রচার নিষিদ্ধ করলে শামসুর রাহমান তখন সরকার নিয়ন্ত্রিত পত্রিকা দৈনিক পাকিস্তান-এ কর্মরত থাকা অবস্থায় পেশাগত অনিশ্চয়তার তোয়াক্কা না করে রবীন্দ্রসঙ্গীতের পক্ষে বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন যাতে আরো স্বাক্ষর করেছিলেন হাসান হাফিজুর রহমান, আহমেদ হুমায়ুন, ফজল শাহাবুদ্দীন। ১৯৬৮ সালের দিকে পাকিস্তানের সব ভাষার জন্য অভিন্ন রোমান হরফ চালু করার প্রস্তাব করেন আইয়ুব খান যার প্রতিবাদে আগস্টে ৪১ জন কবি, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষক ও সংস্কৃতিকর্মী এর বিরুদ্ধে বিবৃতি দেন যাদের একজন ছিলেন শামসুর রাহমানও। কবি ক্ষুদ্ধ হয়ে লেখেন মর্মস্পর্শী কবিতা 'বর্ণমালা, আমার দুঃখিনী বর্ণমালা'। ১৯৬৯ সালের ২০ জানুয়ারি গুলিস্তানে একটি মিছিলের সামনে একটি লাঠিতে শহীদ আসাদের রক্তাক্ত শার্ট দিয়ে বানানো পতাকা দেখে মানসিকভাবে মারাত্মক আলোড়িত হন শামসুর রাহমান এবং তিনি লিখেন 'আসাদের শার্ট' কবিতাটি। ১৯৭০ সালের ২৮ নভেম্বর ঘূর্ণিদুর্গত দক্ষিণাঞ্চলের লাখ লাখ মানুষের দুঃখ-দুর্দশায় ও মৃত্যুতে কাতর কবি লেখেন 'আসুন আমরা আজ ও একজন জেলে' নামক কবিতা। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পরিবার নিয়ে চলে যান নরসিংদীর পাড়াতলী গ্রামে। এপ্রিলের প্রথম দিকে তিনি লেখেন যুদ্ধের ধ্বংসলীলায় আক্রান্ত ও বেদনামথিত কবিতা 'স্বাধীনতা তুমি' ও 'তোমাকে পাওয়ার জন্য হে স্বাধীনতা'। শামসুর রাহমান ১৯৮৭ সালে এরশাদের স্বৈরশাসনের প্রতিবাদে দৈনিক বাংলার প্রধান সম্পাদকের পদ থেকে পদত্যাগ করেন। ১৯৮৭ থেকে পরবর্তী চার বছরের তিনি প্রথম বছরে 'শৃঙ্খল মুক্তির কবিতা', দ্বিতীয় বছরে 'স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে কবিতা', তৃতীয় বছরে 'সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে কবিতা' এবং চতুর্থ বছরে 'সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কবিতা' লেখেন। ১৯৯১ সালে এরশাদের পতনের পর লেখেন 'গণতন্ত্রের পক্ষে কবিতা'। অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও জনমানুষের প্রতি অপরিসীম দরদ তার চেতনায় প্রবাহিত ছিল। শামসুর রাহমানের বিরুদ্ধে বারবার বিতর্ক তুলেছে কূপমণ্ডূক মৌলবাদীরা। তাকে হত্যার জন্য বাসায় হামলা করেছে। এতকিছুর পরও কবি তার বিশ্বাসের জায়াগায় ছিলেন অনড়। মৃত্যু কবি শামসুর রাহমান ২০০৬ সালের ১৭ই আগস্ট বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা বেজে ৩৫ মিনিটে ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার ইচ্ছানুযায়ী ঢাকাস্থ বনানী কবরস্থানে, নিজ মায়ের কবরের পাশে তাকে সমাধিস্থ করা হয়। প্রকাশিত গ্রন্থ শামসুর রাহমানের প্রকাশিত গ্রন্থের পূর্ণ তালিকার জন্য দেখুন শামসুর রাহমানের গ্রন্থাবলি শামসুর রাহমানের প্রথম কাব্য গ্রন্থ প্রথম গান, দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে প্রকাশিত হয় ১৯৬০ সালে। বন্দী শিবির থেকে (১৯৭২): এ কাব্যে স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন আবেগ ও প্রত্যাশা প্রাধান্য পেয়েছে। এ কাব্যের মাধ্যমে তিনি কবি খ্যাতি অর্জন করেন। তিনি ‘মজলুম আদিব’ ছদ্মনামে কাব্যগ্রন্থটি রচনা করেন। এ কাব্যের অধিকাংশ কবিতা মুক্তিযুদ্ধকালে অবরুদ্ধ সময়ে রচিত। এ কাব্যটি ১৯৭১ সালের শহিদদের প্রতি উৎসর্গ করা হয়। এ গ্রন্থে ৩৮ টি কবিতার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: ‘তোমাকে পাওয়ার জন্য হে স্বাধীনতা’, ’স্বাধীনতা তুমি’। উদ্ভট উটের পিঠে চলছে স্বদেশ (১৯৮২): ১৯৭৫-৮২ সাল পর্যন্ত দেশে সংঘটিত একাধিক সামরিক অভ্যুত্থান এবং সামরিক শাসনের যুপকাষ্ঠে দেশ ও জনগনের চরম অবস্থার প্রতিফলন আছে এ কাব্যে। প্রকাশিত গ্রন্থসংখ্যা কাব্যগ্রন্থ - ৬৬( * ''প্রথম গান, দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে'' (১৯৬০) * ''রৌদ্র করোটিতে'' (১৯৬৩) * ''বিধ্বস্ত নিলীমা'' (১৯৬৭) * ''নিরালোকে দিব্যরথ'' (১৯৬৮) * ''নিজ বাসভূমে'' (১৯৭০) * ''বন্দী শিবির থেকে'' (১৯৭২) * ''দুঃসময়ে মুখোমুখি'' (১৯৭৩) * ''ফিরিয়ে নাও ঘাতক কাটা'' (১৯৭৪) * ''আদিগন্ত নগ্ন পদধ্বনি'' (১৯৭৪) * ''এক ধরনের অহংকার'' (১৯৭৫) * ''আমি অনাহারী'' (১৯৭৬) * ''শূন্যতায় তুমি শোকসভা'' (১৯৭৭) * ''বাংলাদেশ স্বপ্ন দেখে'' (১৯৭৭) * ''প্রতিদিন ঘরহীন ঘরে'' (১৯৭৮) * ''প্রেমের কবিতা'' (১৯৮১) * ''ইকারুসের আকাশ'' (১৯৮২) * ''মাতাল ঋত্বিক'' (১৯৮২) * ''উদ্ভট উটের পিঠে চলেছে'' (১৯৮৩) * ''কবিতার সঙ্গে গেরস্থালি'' (১৯৮৩) * ''নায়কের ছায়া'' (১৯৮৩) * ''আমার কোন তাড়া নেই'' (১৯৮৪) * ''যে অন্ধ সুন্দরী কাঁদে'' (১৯৮৪) * ''অস্ত্রে আমার বিশ্বাস নেই'' (১৯৮৫) * ''হোমারের স্বপ্নময় হাত'' (১৯৮৫) * ''শিরোনাম মনে পড়ে না'' (১৯৮৫) * ''ইচ্ছে হয় একটু দাঁড়াই'' (১৯৮৫) * ''ধুলায় গড়ায় শিরস্ত্রাণ'' (১৯৮৫) * ''এক ফোঁটা কেমন অনল'' (১৯৮৬) * ''টেবিলে আপেলগুলো হেসে উঠে'' (১৯৮৬) * ''দেশদ্রোহী হতে ইচ্ছে করে'' (১৯৮৬) * ''অবিরল জলভূমি'' (১৯৮৬) * ''আমরা ক'জন সঙ্গী'' (১৯৮৬) * ''ঝর্ণা আমার আঙুলে'' (১৯৮৭) * ''স্বপ্নেরা ডুকরে উঠে বারবার'' (১৯৮৭) * ''খুব বেশি ভালো থাকতে নেই'' (১৯৮৭) * ''মঞ্চের মাঝখানে'' (১৯৮৮) * ''বুক তার বাংলাদেশের হৃদয়'' (১৯৮৮) * ''হৃদয়ে আমার পৃথিবীর আলো'' (১৯৮৯) * ''সে এক পরবাসে'' (১৯৯০) * ''গৃহযুদ্ধের আগে'' (১৯৯০) * ''খন্ডিত গৌরব'' (১৯৯২) * ''ধ্বংসের কিনারে বসে'' (১৯৯২) * ''হরিণের হাড়'' (১৯৯৩) * ''আকাশ আসবে নেমে'' (১৯৯৪) * ''উজাড় বাগানে'' (১৯৯৫) * ''এসো কোকিল এসো স্বর্ণচাঁপা'' (১৯৯৫) * ''মানব হৃদয়ে নৈবদ্য সাজাই'' (১৯৯৬) * ''তুমিই নিঃশ্বাস তুমিই হৃৎস্পন্দন'' (১৯৯৬) * ''তোমাকেই ডেকে ডেকে রক্তচক্ষু কোকিল হয়েছি'' (১৯৯৭) * ''হেমন্ত সন্ধ্যায় কিছুকাল'' (১৯৯৭) * ''ছায়াগণের সঙ্গে কিছুক্ষণ'' (১৯৯৭) * ''মেঘলোকে মনোজ নিবাস'' (১৯৯৮) * ''সৌন্দর্য আমার ঘরে'' (১৯৯৮) * ''রূপের প্রবালে দগ্ধ সন্ধ্যা রাতে'' (১৯৯৮) * ''টুকরা কিছু সংলাপের সাঁকো'' (১৯৯৮) * ''স্বপ্নে ও দুঃস্বপ্নে বেচে আছি'' (১৯৯৯) * ''নক্ষত্র বাজাতে বাজাতে'' (২০০০) * ''শুনি হৃদয়ের ধ্বনি'' (২০০০) * ''হৃদপদ্মে জ্যোৎস্না দোলে'' (২০০১) * ''ভগ্নস্তূপে গোলাপের হাসি'' (২০০২) * ''ভাঙাচোরা চাঁদ মুখ কালো করে ধুকছে'' (২০০৩) * ''গন্তব্য নাই বা থাকুক'' (২০০৪) * ''কৃষ্ণপক্ষে পূর্ণিমার দিকে'' (২০০৪) * ''গোরস্থানে কোকিলের করুণ আহবান'' (২০০৫) * ''অন্ধকার থেকে আলোয়'' (২০০৬) * ''না বাস্তব না দুঃস্বপ্ন'' (২০০৬) উপন্যাস - ৪টি ‘অক্টোপাশ’ (১৯৮৩), ’অদ্ভুত আঁধার এক’ (১৯৮৫), ‘নিয়ত মন্তাজ’ (১৯৮৫), ‘এলো সে অবেলায়’ (১৯৯৪), প্রবন্ধগ্রন্থ - ‘আমৃত্যু তাঁর জীবনানন্দ’ (১৯৮৬), ‘কবিতা এক ধরনের আশ্রয়’ (২০০২) শিশু কিশোর সাহিত্য, আত্মস্মৃতি, অনুবাদ কবিতা - ৩টি, অনুবাদ নাটক - ৩টি সম্মাননা ও পুরস্কার আদমজী সাহিত্য পুরস্কার, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, একুশে পদক, নাসির উদ্দিন স্বর্ণপদক, জীবনানন্দ পুরস্কার, আবুল মনসুর আহমেদ স্মৃতি পুরস্কার, মিতসুবিসি পুরস্কার (সাংবাদিতার জন্য), স্বাধীনতা পদক, আনন্দ পুরস্কার ভারতের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় এবং রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কবিকে সম্মানসূচক ডি.লিট উপাধিতে ভূষিত করে। তার ৮৯তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে গুগল তাদের হোমপেজে শামসুর রাহমানের গুগল ডুডল প্রদর্শন করে তার জন্মদিন উদযাপন করে। গুগল ডুডলটিতে দেখা যায় সবুজ পাঞ্জাবি পরা শুভ্র চুলের শামসুর রাহমান লেখালেখি করছেন। তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ শামসুর রাহমানের সাক্ষাতকার নান্দনিক শামসুর রাহমান - কুমার দীপ বিষয়শ্রেণী:আধুনিক কবি বিষয়শ্রেণী:১৯২৯-এ জন্ম বিষয়শ্রেণী:২০০৬-এ মৃত্যু বিষয়শ্রেণী:বাংলাদেশী কবি বিষয়শ্রেণী:বাঙালি কবি বিষয়শ্রেণী:কবিতায় বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার বিজয়ী বিষয়শ্রেণী:ভাষা ও সাহিত্যে একুশে পদক বিজয়ী বিষয়শ্রেণী:সাহিত্যে স্বাধীনতা পুরস্কার বিজয়ী বিষয়শ্রেণী:ঢাকা কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী বিষয়শ্রেণী:ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী বিষয়শ্রেণী:বাংলাদেশী সাংবাদিক বিষয়শ্রেণী:সার্ক সাহিত্য পুরস্কার বিজয়ী বিষয়শ্রেণী:২০শ শতাব্দীর কবি বিষয়শ্রেণী:আদমজী সাহিত্য পুরস্কার প্রাপক
শামসুর রাহমান
ঢাকা বিভাগ বাংলাদেশ এর আটটি প্রশাসনিক বিভাগের অন্যতম। এটি বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় অঞ্চলে অবস্থিত। বর্তমানে ঢাকা ও বরিশাল বিভাগের সাথে সীমান্তবর্তী কোন জেলা নেই৷ আয়তনে ঢাকা বিভাগের বৃহত্তম জেলা টাঙ্গাইল জেলা। প্রশাসনিক জেলা ঢাকা বিভাগ বাংলাদেশের একটি বিভাগ, এটি ৪টি সিটি কর্পোরেশেন, ১৩টি জেলা, ৫৮টি পৌরসভা, ১২৩টি উপজেলা, ১,২৩৯টি ইউনিয়ন পরিষদ, ১২,৭৬৫টি মৌজা, ৫৪৯টি ওয়ার্ড, ১,৬২৩টি মহল এবং ২৫,২৪৪টি গ্রাম নিয়ে গঠন করা হয়েছে। ভৌগলিক অবস্থান ঢাকা বিভাগের উত্তরে ময়মনসিংহ বিভাগ, পশ্চিমে রাজশাহী ও খুলনা বিভাগ, দক্ষিণে বরিশাল ও খুলনা বিভাগ এবং পূর্বে কুমিল্লা ও সিলেট বিভাগ অবস্থিত। তথ্যসূত্র বিষয়শ্রেণী:বাংলাদেশের বিভাগ বিষয়শ্রেণী:ঢাকা বিভাগ
ঢাকা বিভাগ
টিমোথি গাওয়ার্স(পুরোনামঃ উইলিয়াম টিমোথি গাওয়ার্স) () (জন্ম ২০শে নভেম্বর, ১৯৬৩, উইল্টশায়ার, যুক্তরাজ্য) কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিতের অধ্যাপক। ১৯৯৮ সালে তিনি গণিতের সর্বোচ্চ সম্মান ফিল্ড্‌স পদক লাভ করেন। বহিঃসংযোগ টিমোথি গাওয়ার্সের ওয়েবসাইট বিষয়শ্রেণী:১৯৬৩-এ জন্ম বিষয়শ্রেণী:ব্রিটিশ গণিতবিদ বিষয়শ্রেণী:ফিল্ডস পদক বিজয়ী বিষয়শ্রেণী:জীবিত ব্যক্তি বিষয়শ্রেণী:আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণকারী
টিমোথি গাওয়ার্স
ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এই বিদ্যালয়টি পুরান ঢাকার সদরঘাট এ অবস্থিত। ইতিহাস thumb|250px| বাবু রায়সাহেব রত্নমনি গুপ্ত প্রধানশিক্ষক থাকাকালীন সময়ে প্রবেশিকা পরীক্ষায় ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলের অসাধারণ সাফল্যের স্মৃতি ধরে রাখতে স্কুলের দেয়ালে স্মৃতিফলক স্থাপন করা হয়। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ১৮৩৫ সালে ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল, ১৮৩৬ সালে রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল এবং পাটনা কলেজিয়েট স্কুলের গোড়াপত্তন করে। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির পক্ষে ঢাকা জেলার কালেক্টর মিঃ স্কিনার স্কুল গভনিং বডির সভাপতি ও জেলা সার্জন ডাঃ জেমস টেইলর স্কুল সচিবের দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং মিঃ রিজ নামক একজন দক্ষ ইংরেজ শিক্ষককে স্কুলের প্রথম প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ করা প্রথমে এর নাম দেয়া হয়েছিল ঢাকা ইংলিশ সেমিনারী। ১৮৪১ খ্রিষ্টাব্দে এ সেমিনারী থেকে ঢাকা কলেজ-এর জন্ম হয়। তখন স্কুল শাখাটির নাম রাখা হয় ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল এবং কলেজের অধ্যক্ষের তত্ত্বাবধানে বিদ্যালয়টি ১৯০৮ সালের জুন পর্যন্ত পরিচালিত হয়। ১৯০৮ সনের জুলাই মাসে এই বিদ্যালয়টি বিদ্যালয় পরিদর্শকের তত্ত্বাবধানে নেয়া হয়। তখন থেকেই বিদ্যালয়টি জিলা স্কুলের মর্যাদা পেয়ে আসছে। কিন্তু বিদ্যালয়টির নাম "ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল" রয়ে যায়। ১৮৭২ সাল পর্যন্ত ইউরোপীয়দের দ্বারাই এই স্কুলটি পরিচালিত হয়। ভারতীয়দের মধ্যে প্রথম প্রধান শিক্ষকের পদ অর্জনের গৌরব লাভ করেন বাবু কৈলাস চন্দ্র ঘোষ। পরে বাবু রায়সাহেব রত্ন মণি গুপ্তের (১৮৮৮-১৮৯৬) পরিচালনাধীনে এ বিদ্যালয়ের ছাত্রগণ পরপর আট বছর বাংলা, বিহার ও আসাম প্রদেশের মধ্যে কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে প্রথম স্থান অধিকার করার এক বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। সাবেক ছাত্রদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকজন আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু, পদার্থবিদ ও জীববিজ্ঞানী মেঘনাদ সাহা, পদার্থবিজ্ঞানে থার্মাল আয়নাইজেসন তত্ত্বের প্রতিষ্ঠাতা। দীনেশ গুপ্ত, বিপ্লবী জাতীয় অধ্যাপক কবীর চৌধুরী, সাবেক সভাপতি(বাংলা একাডেমী) সৈয়দ শামসুল হক, সব্যসাচী লেখক শিবলী সাদিক, চলচ্চিত্র পরিচালক মতিউর রহমান (বীর শ্রেষ্ঠ), বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শহীদ ফ্লাইট লেফটেন্যাংলার মুনীর চৌধুরী, ভাষাবিদ, ও শহীদ বুদ্ধিজীবী। আলমগীর কবির, রামপ্রসাদ চন্দ, নাজির আহাম্মেদ, কাজী আব্দুল ওয়াদুদ, খাজা আব্দুল গনি, ঢাকার জমিদার। ব্রজসুন্দর মিত্র খান আতাউর রহমান চলচ্চিত্র পরিচালক সতীশ চন্দ্র রায় বুদ্ধদেব বসু, সাহিত্যিক আব্দুল হালিম মোস্তফা কামাল, বাংলাদেশের বিচারপতি) শাহ মোয়াজ্জেম, বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ। সাঈদ আহমদ, বাংলাদেশী নাট্যব্যক্তিত্ব। বুলবুল আহমেদ, অভিনেতা। মুস্তফা মনোয়ার,চিত্রশিল্পী রমেশ চন্দ্র মজুমদার, সাবেক উপাচার্য (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) ছাত্র সংগঠন সমুহ এলামনাই অ্যাসোসিয়েশন বিতর্ক ক্লাব স্কাউটস সাহিত্য সংসদ বিজ্ঞান ক্লাব দাবা ক্লাব বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর (বি এন সি সি) তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ বিদ্যার বাতিঘর ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল দৈনিক ইত্তেফাক, ১৯ মে ২০১৮। বিষয়শ্রেণী:ঢাকা জেলার বিদ্যালয় বিষয়শ্রেণী:১৮৩৫-এ প্রতিষ্ঠিত বিষয়শ্রেণী:বাংলাদেশের সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়
ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল
ফরিদা আক্তার পপি (ববিতা নামে পরিচিত; জন্ম: ৩০ জুলাই, ১৯৫৩) বাংলাদেশের একজন চলচ্চিত্র অভিনেত্রী এবং প্রযোজক। তিনি বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ৭০-র দশকের সেরা অভিনেত্রী ছিলেন। তিনি ১৯৭৩ সালে ২৩তম বার্লিন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব থেকে গোল্ডেন বীয়ার জয়ী সত্যজিৎ রায়ের অশনি সংকেত চলচ্চিত্রের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র অঙ্গনে প্রশংসিত হন। ববিতা ৩৫০ এর বেশি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। তিনি ১৯৭৫ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রবর্তনের পর টানা তিনবার শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার জেতেন। এছাড়া ১৯৭৬, ১৯৭৭, ১৯৮৫ সালে আরেকবার শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী, ১৯৯৬ সালে শ্রেষ্ঠ প্রযোজক, ২০০২ ও ২০১১ সালে পার্শ্ব চরিত্রে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী। এছাড়া ২০১৬ সালে তাকে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের আজীবন সম্মাননা পুরস্কার প্রদান করা হয়। প্রাথমিক জীবন thumb|রিয়াজ, সুচন্দা, ববিতা, তিনা ও চম্পা কক্সবাজারে ২০১৪ সালে ফরিদা আক্তার পপি ১৯৫৩ সালে বাংলাদেশের বাগেরহাট জেলায় জন্ম নেন। তার বাবা নিজামুদ্দীন আতাউব একজন সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন এবং মাতা জাহান আরা বেগম ছিলেন একজন চিকিৎসক। বাবার চাকরি সূত্রে তারা তখন বাগেরহাটে থাকতেন। তবে তার পৈতৃক বাড়ি যশোর জেলায়। শৈশব এবং কৈশোরের প্রথমার্ধ কেটেছে যশোর শহরের সার্কিট হাউজের সামনে রাবেয়া মঞ্জিলে। তিন বোন ও তিন ভাইয়ের মধ্যে বড়বোন সুচন্দা চলচ্চিত্র অভিনেত্রী, বড়ভাই শহীদুল ইসলাম ইলেট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার, মেজভাই ইকবাল ইসলাম বৈমানিক, ছোটবোন গুলশান আখতার চম্পা চলচ্চিত্র অভিনেত্রী এবং ছোটভাই ফেরদৌস ইসলাম বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের বাসিন্দা। এছাড়াও অভিনেতা রিয়াজ তার চাচাত ভাই। চলচ্চিত্র পরিচালক জহির রায়হান তার ভগ্নিপতি। ববিতার পরিবার একসময় বাগেরহাট থেকে ঢাকার গেন্ডারিয়াতে চলে আসে। তার মা ডাক্তার থাকায়, ববিতা চেয়েছিলেন ডাক্তার হতে। ববিতার একমাত্র ছেলে অনীক কানাডায় পড়াশোনা করেন। শিক্ষাজীবন তিনি পড়াশোনা করেছেন যশোর দাউদ পাবলিক বিদ্যালয়ে। সেখানে অধ্যয়নকালে বড়বোন কোহিনুর আক্তার চাটনীর (সুচন্দা) চলচ্চিত্রে প্রবেশের সূত্রে পরিবার সহ চলে আসেন ঢাকায়। গেন্ডারিয়ার বাড়ীতে শুরু হয় কৈশরের অবশিষ্টাংশ। এখানে তিনি গ্লোরিয়া স্কুলে পড়াশুনা করেন। চলচ্চিত্রে অত্যন্ত ব্যস্ত হয়ে পড়ায় প্রতিষ্ঠানিক সার্টিফিকেট অর্জন না করলেও ববিতা ব্যক্তিগতভাবে নিজেকে শিক্ষিত করে তোলেন। দক্ষতা অর্জন করেন ইংরেজিসহ কয়েকটি বিদেশী ভাষায়। নিজেকে পরিমার্জিত করে তোলেন একজন আদর্শ শিল্পীর মাত্রায়। কর্মজীবন অভিনয়ের শুরু: ১৯৬৮-১৯৭৪ তার চলচ্চিত্র কর্মজীবনে আসার পেছনে বড়বোন সুচন্দার অনুপ্রেরণায় রয়েছে। বড়বোন সুচন্দা অভিনীত জহির রায়হানের সংসার চলচ্চিত্রে শিশুশিল্পী হিসেবে ববিতার আত্মপ্রকাশ ঘটে ১৯৬৮ সালে। এই চলচ্চিত্রে তিনি রাজ্জাক-সুচন্দার মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করেন, যদিও ছবিটি মুক্তি পায়নি। চলচ্চিত্র জগতে তার প্রাথমিক নাম ছিলো "সুবর্ণা"। তিনি কলম নামের একটি টেলিভিশন নাটকে অভিনয় করেছিলেন সে সময়। জহির রায়হানের জ্বলতে সুরুজ কি নিচে চলচ্চিত্রে অভিনয় করতে গিয়েই তার নাম "ববিতা" হয়ে যায়। ১৯৬৯ সালে শেষ পর্যন্ত চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন প্রথম নায়িকা চরিত্রে। ১৯৬৯ সালের ১৪ই আগস্টে চলচ্চিত্রটি মুক্তি পায় এবং ঐদিন তার মা মারা যান। তার কর্মজীবনের শুরুতে ভগ্নিপতি জহির রায়হানের পথ প্রদর্শনে চললেও পরে তিনি একাই পথ চলেছেন। ৭০'-এর দশকে শুধুমাত্র অভিনয়ের মাধ্যমে তিনি গোটা দশকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেন। ‘টাকা আনা পাই’ সিনেমাটা ছিল তার জন্য টার্নিং পয়েন্ট যা পরিচালনা করেছিলেন জহির রায়হান। এরপর তিনি নজরুল ইসলামের ‘স্বরলিপি’ সিনেমাতে অভিনয় করেন যা ছিল সুপারহিট সিনেমা। অশনি সংকেত thumb|150px|সত্যজিত রায়ের অশনি সংকেত চলচ্চিত্রে ববিতা। ববিতার চলচ্চিত্র কর্মজীবনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের একই নামের একটি অসমাপ্ত উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত সত্যজিৎ রায় পরিচালিত অশনি সংকেত (১৯৭৩)। এই চলচ্চিত্রে "অনঙ্গ বৌ" চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে তিনি আন্তর্জাতিক শিল্পীর মর্যাদা লাভ করেন এবং ব্যপক প্রশংসিত হন। ১৯৯৩ সালে ভারতে বাংলা চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি পুরস্কার, ১৯৭৩ সালে ভারতে বাংলা চলচ্চিত্র প্রসার সমিতি পুরস্কার এবং বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি কর্তৃক বিশেষ পুরস্কার অর্জন করেন। তেতাল্লিশের মন্বন্তর এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে গ্রামীণ বাংলার আর্থ-সামাজিক পটপরিবর্তন ছিলো এই চলচ্চিত্রের মূল বিষয়। চলচ্চিত্রের প্রাক্কালে সত্যজিত রায়ের নির্দেশে ভারতীয় চিত্রগ্রাহক নিমাই ঘোষ স্বাধীনতার পর ঢাকায় এফডিসিতে আসেন, এবং সেখানে ববিতার প্রায় ১৫০ থেকে ২০০ আলোকচিত্র তুলেন। এর কিছুদিন পর ববিতার বাসায় ভারতীয় হাইকমিশন থেকে একটি চিঠি আসে, প্রাথমিক মনোনয়ণের কথা জানিয়ে। এরপর ববিতা এবং তার বোন সুচন্দা ভারতে যান সত্যজিৎ রায়ের সাথে দেখা করতে। সত্যজিত ববিতাকে দেখে প্রথমে অনেক লাজুক ভেবেছিলেন। তাই ইন্দ্রপুরের স্টুডিওতে তিনি তাকে আবার নানারকম পরীক্ষা করেন। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর সত্যজিত বলেন, "আমি অনেক খুশি, আমি "অনঙ্গ বউ" আজকে পেয়ে গেছি। আমি ভাবতেও পারিনি এই মেয়েটি সেদিনের সেই মেয়েটি। আজকে এই মেয়ে সম্পূর্ণ অন্য মেয়ে। এই আমার অনঙ্গ বউ।" ববিতাও অনেক চাপের মুখে ছিলেন তাঁকে নেয়া হয় কিনা এ ব্যপারে। তিনি বলেন, "একজন অল্পবয়সী বাঙালী যা করে, ভেতরে-ভেতরে অনেক মানত-টানত করে শেষে জানলাম, আমি তাঁর ছবির জন্যে নির্বাচিত হয়েছি।" প্রতিষ্ঠা ও স্বীকৃতি: ১৯৭৫-১৯৮৫ ১৯৭৫ সালে ববিতা বাঁদী থেকে বেগম, লাঠিয়াল ' চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। মোহসীন পরিচালিত বাঁদী থেকে বেগম ছবিতে একজন কচুয়ানের ঘরে লালিত পালিত হওয়ার জমিদারের কন্যা চাঁদনী চরিত্রে অভিনয় করেন। এই চলচ্চিত্রে একধারে কচুয়ানের মেয়ে, নর্তকী এবং জমিদারের কন্যা চরিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি ১৯৭৫ সালে প্রবর্তিত জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের প্রথম আসরে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার অর্জন করেন। নারায়ণ ঘোষ মিতা পরিচালিত লাঠিয়াল ছবিতে তিনি বানু চরিত্রে অভিনয় করেন। পারিবারিক অন্তর্দ্বন্দ্ব এবং চর দখল নিয়ে আবর্তিত এই চলচ্চিত্রটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের প্রথম আয়োজনে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রের পুরস্কার লাভ করে। পরের বছর ফারুকের বিপরীতে অভিনয় করেন সূর্যগ্রহণ ও নয়নমনি ছবিতে। নয়নমনি ছবিতে তিনি প্রথমবার আমজাদ হোসেনের পরিচালনায় কাজ করেন। পরবর্তীকালে তিনি হোসেনের পরিচালনায় গোলাপী এখন ট্রেনে (১৯৭৮) ও গোলাপী এখন ঢাকায় (১৯৯৪) ছবিতে নাম ভূমিকায় অভিনয় করেন। নয়নমনি ছবিতে নাম চরিত্র মনি ভূমিকায় অভিনয়ের জন্য তিনি টানা দ্বিতীয়বারের মত শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়া ১৯৭৬ সালে রাজ্জাকের বিপরীতে জহিরুল হক পরিচালিত কি যে করি, ওয়াহিদের বিপরীতে বন্দিনী, এবং জাফর ইকবালের বিপরীতে এক মুঠো ভাত ছবিতে কাজ করেন। ১৯৭৭ সালের মার্চে মুক্তি পায় চিত্রনায়ক রাজ্জাক পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র অনন্ত প্রেম। এই চলচ্চিত্রের শেষ দৃশ্যে রাজ্জাক-ববিতার গভীর চুম্বনের একটি দৃশ্য ছিলো যা সেই সময়ে রীতিমতো হইচই ফেলে দিয়েছিল। তবে চুম্বনের দৃশ্য বাদ দিয়েই চলচ্চিত্রটি মুক্তি দেয়া হয়। ১৯৭৭ সালে মুক্তি পাওয়া চলচ্চিত্রটির জন্যই চিত্রায়িত হয়েছিল বাংলাদেশী চলচ্চিত্রের প্রথম চুম্বন দৃশ্য। একই বছর তিনি ইলিয়াস জাভেদের বিপরীতে ইবনে মিজান পরিচালিত নিশান চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। এছাড়া এই বছর তিনি কথাসাহিত্যিক আলাউদ্দিন আল আজাদ রচিত তেইশ নম্বর তৈলচিত্র অবলম্বনে নির্মিত বসুন্ধরা চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। সুভাষ দত্ত পরিচালিত ছবিটিতে তার বিপরীতে অভিনয় করেন নবাগত ইলিয়াস কাঞ্চন। একজন চিত্রকরের তার স্ত্রীর প্রতি ভালবাসা এবং তার সন্তানের প্রতি স্ত্রীর মার্তৃত্ববোধ নিয়ে নির্মিত এই চলচ্চিত্রে ছবি চরিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি টানা তৃতীয়বারের মত শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। ১৯৮৬-২০০০ নব্বইয়ের দশকের শুরু থেকে ববিতা পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয় শুরু করেন। ১৯৯১ সালে তিনি চাষী নজরুল ইসলামের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত পদ্মা মেঘনা যমুনা চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। এতে তিনি তার বোন চম্পা ও ফারুকের সাথে অভিনয় করেন। ছবিতে সাজু চরিত্রে সৎ বাবার পরিবারে এক নিগৃহীতার ভূমিকায় অভিনয় করেন। একই বছর তিনি আজিজুর রহমান পরিচালিত শ্বশুর বাড়ী চলচ্চিত্রে মাহমুদ কলির বিপরীতে অভিনয় করেন। পরের বছর দিলীপ সোম পরিচালিত মহামিলন চলচ্চিত্রে শাহানা মালিক চরিত্রে অভিনয় করেন। ছবিটিতে প্রধান দুই ভূমিকায় অভিনয় করেন সালমান শাহ ও শাবনূর। ১৯৯৬ সালে তিনি প্রযোজনা করেন পোকামাকড়ের ঘর বসতি। কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন রচিত একই নামের উপন্যাস অবলম্বনে ছবিটি পরিচালনা করেন আখতারুজ্জামান। ববিতা এই ছবিতে অভিনয়ও করেন। তার বিপরীতে ছিলেন খালেদ খান এবং খলচরিত্রে অভিনয় করেন আলমগীর। ছবিটির জন্য ববিতা শ্রেষ্ঠ প্রযোজক হিসাবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়া ছবিটি শ্রেষ্ঠ পরিচালকসহ আরও তিনটি বিভাগে পুরস্কার লাভ করে। এই বছর তিনি পার্শ্ব চরিত্রে এম এ খালেক পরিচালিত স্বপ্নের পৃথিবী, শিবলি সাদিক পরিচালিত মায়ের অধিকার, জাকির হোসেন রাজু পরিচালিত জীবন সংসার এবং মোরশেদুল ইসলাম পরিচালিত দীপু নাম্বার টু চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। ১৯৯৭ সালে তিনি মহম্মদ হান্‌নান পরিচালিত প্রাণের চেয়ে প্রিয় ছবিতে রোকেয়া চরিত্রে অভিনয় করেন। ছবিতে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন রিয়াজ ও রাভিনা, এবং ববিতার বিপরীতে ছিলেন বুলবুল আহমেদ। জাকির হোসেন রাজু পরিচালিত এ জীবন তোমার আমার ছবিতে তিনি মমতা চরিত্রে অভিনয় করেন। এই ছবিতে কেন্দ্রীয় চরিত্রে ছিলেন রিয়াজ এবং পূর্ণিমা। জিল্লুর রহমান পরিচালিত টাইগার চলচ্চিত্রে তিনি জসিমের বিপরীতে কেন্দ্রীয় নারী চরিত্রে অভিনয় করেন। একই বছর খান আতাউর রহমান পরিচালিত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক এখনো অনেক রাত চলচ্চিত্রে বাঁধন চরিত্রে অভিনয় করেন। এটি ছিল খান আতার মৃত্যুর পূর্বে পরিচালিত শেষ চলচ্চিত্র। ১৯৯৯ সালে তিনি শহীদুল ইসলাম খোকন পরিচালিত ম্যাডাম ফুলি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। এই ছবিতে নাম ভূমিকায় অভিনয় করেন নবাগত শিমলা এবং ববিতা তার মায়ের ভূমিকায় অভিনয় করেন। ২০০১-২০১০ ২০০২ সালে বাঙালি গীতিকবি হাছন রাজার জীবনী অবলম্বনে নির্মিত হাছন রাজা চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। ছবিটি পরিচালনা করেন চাষী নজরুল ইসলাম। ছবিতে তাকে হাছন রাজার মায়ের ভূমিকায় দেখা যায়। ছবিটি শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করে এবং ববিতা শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রীর জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার এবং শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রীর জন্য বাচসাস পুরস্কার লাভ করেন। ২০০৩ সালে তিনি চিত্রনায়িকা মৌসুমী পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র কখনো মেঘ কখনো বৃষ্টি চলচ্চিত্রে কাজ করে। এই ছবিতে তাকে দীর্ঘ ১৪ বছর পর রাজ্জাকের বিপরীতে দেখা যায়। ২০০৫ সালে তিনি নারগিস আক্তার পরিচালিত চার সতীনের ঘর ছবিতে অভিনয় করেন। এই ছবিতে তার বিপরীতে ছিলেন আলমগীর এবং তার বাকি তিন সতীনের চরিত্রে অভিনয় করেন পারভীন সুলতানা দিতি, শাবনূর ও ময়ূরী। ২০০৯ সালে তিনি রাজ্জাকের বিপরীতে অভিনয় করেন সবাই তো ভালোবাসা চায় ছবিতে। দেলোয়ার জাহান ঝন্টু পরিচালিত এই ছবিতে কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন মামনুন হাসান ইমন এবং পূর্ণিমা। ২০১০ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ছোটগল্প সমাপ্তি অবলম্বনে নির্মিত অবুঝ বউ ছবিতে অভিনয় করেন। ছবিটি পরিচালনা করেন নারগিস আক্তার। এই ছবিতে তিনি রানীমা চরিত্রে অভিনয় করেন। ছবির কেন্দ্রীয় চরিত্র মৃন্ময়ীর ভূমিকায় অভিনয় করেন প্রিয়াংকা এবং রানীমার পুত্র অপূর্বের ভূমিকায় অভিনয় করেন ফেরদৌস আহমেদ। একই বছর তিনি কাজী হায়াৎ পরিচালিত অপরাধধর্মী-নাট্য চলচ্চিত্র ওরা আমাকে ভাল হতে দিল না-এ অভিনয় করেন। ছবিতে কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেন কাজী মারুফ এবং পূর্ণিমা। ববিতা মারুফের চরিত্রের মায়ের ভূমিকায় অভিনয় করেন। ২০১১-বর্তমান অভিনয়ের ধরন ববিতা প্রায় তিন দশক ধরে চলচ্চিত্রে অভিনয় করছেন। তবে এক পর্যায়ে সিনেমার জগতে টিকে থাকার জন্য এবং বাণিজ্যিক ছবিতে নিজের গ্রহণযোগ্যতা প্রমাণের জন্য তিনি পুরোপুরি বাণিজ্যিক ঘরানার ছবির দিকে ঝুঁকে পড়েন। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে তাই ববিতা একটি উজ্জ্বল নক্ষত্রের নাম। নায়িকা হিসেবে তার স্বাতন্ত্র্যতা লক্ষণীয় ছিল। অভিনয়, গ্ল্যামার, স্কিন পার্সোনালিটি, নৃত্য কুশলতা সবকিছুতেই তিনি পারদর্শিতা দেখিয়েছিলেন। বর্তমানে তিনি মা-ভাবির চরিত্রে অভিনয় করে আসছেন। গ্রামীণ, শহুরে চরিত্র কিংবা সামাজিক অ্যাকশন অথবা পোশাকী সব ধরনের ছবিতেই তিনি সাবলীলভাবে অভিনয় করেন। স্বাধীনতার পর তিনি বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজ পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে ভীষণ জনপ্রিয় ছিলেন।তৎকালীন সময়ে তিনি ফ্যাশনের ক্ষেত্রে শহরের মেয়েদের ভীষণ প্রভাবিত করেন। নগর জীবনের আভিজাত্য তার অভিনয়ে ধরা পড়েছিল। সত্তর দশকের প্রথমার্ধে রুচিশীল, সামাজিক সিনেমা মানেই ছিল ববিতা। চলচ্চিত্র তালিকা পুরস্কার এবং সন্মাননা ববিতা পরপর তিন বছর একটানা জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জেতেন। সত্যজিৎ রায়ের অশনি সংকেত চলচ্চিত্র "অনঙ্গ বউ" চরিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি বাংলা চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতির পক্ষ থেকে সর্বভারতীয় শ্রেষ্ঠ নায়িকার পুরস্কার পান। এছাড়াও সরকারি এবং বেসরকারী অসংখ্য পুরস্কার তিনি লাভ করেছেন। এজন্য তাকে ‘পুরস্কার কন্যা’ বলা হতো। তিনি বাংলাদেশের প্রতিনিধি হয়ে সবচেয়ে বেশিবার আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে অংশগ্রহণ করেছিলেন। আরও দেখুন সুচন্দা চম্পা তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ বিষয়শ্রেণী:১৯৫৩-এ জন্ম বিষয়শ্রেণী:জীবিত ব্যক্তি বিষয়শ্রেণী:২০শ শতাব্দীর বাংলাদেশী অভিনেত্রী বিষয়শ্রেণী:২১শ শতাব্দীর বাংলাদেশী অভিনেত্রী বিষয়শ্রেণী:বাঙালি চলচ্চিত্র অভিনেত্রী বিষয়শ্রেণী:বাংলাদেশী চলচ্চিত্র অভিনেত্রী বিষয়শ্রেণী:বাংলাদেশী টেলিভিশন অভিনেত্রী বিষয়শ্রেণী:খুলনা বিভাগের ব্যক্তি বিষয়শ্রেণী:শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (বাংলাদেশ) বিজয়ী বিষয়শ্রেণী:শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রী বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (বাংলাদেশ) বিজয়ী বিষয়শ্রেণী:বাচসাস পুরস্কার বিজয়ী বিষয়শ্রেণী:মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার বিজয়ী
ববিতা
মুন্সিগঞ্জ জেলা বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চলের ঢাকা বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। মুন্সিগঞ্জ ঢাকা বিভাগের একটি জেলা। মুন্সিগঞ্জের প্রাচীন নাম বিক্রমপুর। ভৌগোলিক পরিচিতি মুন্সিগঞ্জ জেলার উত্তরে ঢাকা জেলা,উত্তর-পূর্বে নারায়ণগঞ্জ জেলা, দক্ষিণে ফরিদপুর জেলা, পূর্বে মেঘনা নদী ও কুমিল্লা জেলা এবং পশ্চিমে পদ্মা নদী ও ফরিদপুর জেলা অবস্থিত।আয়তন: ৯৫৪.৯৬ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৩°২৩´ থেকে ২৩°৩৮´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°১০´ থেকে ৯০°৪৩´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ।মোট আয়তন ২৩৫৯৭৪ একর যার মধ্যে ১৩৮৪৭২ একর চাষযোগ্য এবং ৫৬০৯ একর নিচু জমি। মুন্সিগঞ্জ সমতল এলাকা নয়। জেলার কিছু কিছু অঞ্চল যথেষ্ট উচু যদিও জেলায় কোনো পাহাড় নেই। মুন্সিগঞ্জের বেশির ভাগ এলাকা নিম্নভূমি বলে বর্ষায় পানিতে অধিকাংশ এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়ে। পূর্বে-কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি ও হোমনা উপজেলা, চাঁদপুর জেলার মতলব উপজেলা যা মুন্সিগঞ্জের সাথে প্রবাহিত মেঘনা নদীর দ্বারা বিভাজিত। পশ্চিমে-শরিয়তপুর ও মাদারীপুর জেলাকে পদ্মা নদী বিভাজিত করেছে। উত্তরে-ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জ উপজেলা ও দোহার উপজেলা এবং নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দর উপজেলা। দক্ষিণে-পদ্মা নদী যার অপর পাশে শরিয়তপুর জেলা। জলবায়ু মুন্সিগঞ্জের জলবায়ু সমভাবাপন্ন। তবে আর্দ্রতা ও দূষনযুক্ত এলাকার সংখ্যাও নেহাত কম নয়। এখানকার জলবায়ু ঋতু বিশেষে পরিবর্তনশীল। শীতকালে শীতের তীব্রতা দেশের অন্যান্য স্থানের মতো তত প্রবল নয়। এলাকাটি নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলভূক্ত। জনসংখ্যা মুন্সিগঞ্জ জেলার জনসংখ্যা ১২,৯৩,৯৭২ জন; পুরুষ ৬৫৫৫৮৫ জন ও মহিলা ৬৩৮৩৮৭ জন। মুসলিম ১১৮১০১২ জন, হিন্দু ১১০৮০৪ জন , বৌদ্ধ ১৯২২ জন , খ্রিস্টান ১০৩ জন এবং অন্যান্য ৩০৮ জন। নামকরণ মোঘল শাসনামলে মুন্সিগঞ্জ এর নাম ছিলো ইদ্রাকপুর । ষোড়শ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে ইদ্রাকপুর কেল্লার ফৌজদারের নাম ছিলো ইদ্রাক। ধারণা করা হয় তার নাম অনুসারেই তখন এখানকার নাম হয়েছিলো ইদ্রাকপুর।চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের সময়ে রামপালের কাজী কসবা গ্রামের মুন্সী এনায়েত আলীর জমিদারভুক্ত হওয়ার পর তার মুন্সী নাম থেকে ইদ্রাকপুরের নাম মুন্সিগঞ্জ হিসেবে অভিহিত হয়। আবার অনেকের মতে, মোঘল শাসনামলে এলাকার ফৌজদারী আদালতের প্রধান হায়দার আলী মুন্সীর নামানুসারে মুন্সিগঞ্জ নামের উৎপত্তি। শিক্ষা শিক্ষার হার ৬১.২০%; পুরুষ ৬১.০৮%, মহিলা ৫৯.১২%। কলেজ ১৬টি, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৮৮টি, প্রাথমিক বিদ্যালয় ৫৪৯টি, মাদ্রাসা ২৯টি। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে কে কে গভঃ ইন্সটিটিউশন (১৯৪২),এ ভি জে এম সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৯২) যা ১৯৯১ সালে জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ নির্বাচিত হয়,মুন্সীগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৮৫) যেখান থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ইয়াজুদ্দিন আহমেদ,মুন্সীগঞ্জ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় (১৯৬৮),সরকারি হরগঙ্গা কলেজ (১৯৩৮), সরকারি শ্রীনগর কলেজ (১৯৭০) প্রভৃতি। প্রশাসনিক এলাকাসমূহ right|thumb|মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলা, ধলেশ্বরী নদীতীর মুন্সিগঞ্জ জেলায় ছয়টি উপজেলা রয়েছে। ৬ টি উপজেলার মধ্যে ৬৭ টি ইউনিয়ন রয়েছে। মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলা মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলায় মোট ইউনিয়নের সংখ্যা ০৯ টি। শিলই, আধারা, বাংলাবাজার, পঞ্চসার, রামপাল, বজ্রযোগীনি, চরকেওয়ার, মোল্লাকান্দি, মহাকালি। টংগিবাড়ী উপজেলা টংগিবাড়ী উপজেলায় মোট ইউনিয়নের সংখ্যা ১৩ টি। ধীপুর, পাঁচগাও, কাঠাদিয়া-শিমুলিয়া, সোনারং-টংগিবাড়ী, বেতকা, আব্দুল্লাপুর, যশলং, কামারখাড়া, দিঘিরপাড়, হাসাইল-বানারী, আউটশাহী, আড়িয়ল, বালিগাঁও শ্রীনগর উপজেলা শ্রীনগর উপজেলায় মোট ইউনিয়নের সংখ্যা ১৪ টি। শ্রীনগর, শ্যামসিদ্ধি, ষোলঘর, কুকুটিয়া, তন্তর, আটপাড়া, রাঢ়ীখাল, ভাগ্যকুল, বাঘড়া, কোলাপাড়া, পাটাভোগ, হাসাড়া, বীরতারা, বাড়ৈখালী লৌহজং উপজেলা লৌহজং উপজেলায় মোট ইউনিয়নের সংখ্যা ১০ টি। মেদিনীমন্ডল, খিদিরপাড়া, বৌলতলী, কলমা, গাওদিয়া, বেজগাঁও, কনকসার, লৌহজং-তেউটিয়া, কুমারভোগ, হলদিয়া গজারিয়া উপজেলা গজারিয়া উপজেলায় মোট ইউনিয়নের সংখ্যা ৮ টি। টেংগারচর, বালুয়াকান্দি, ভবেরচর, বাউশিয়া, গজারিয়া, হোসেন্দী, ইমামপুর, গুয়াগাছিয়া সিরাজদিখান উপজেলা সিরাজদিখান উপজেলায় মোট ইউনিয়নের সংখ্যা ১৪ টি। চিত্রকোট, শেখর নগর, রাজানগর, কেয়াইন, বাসাইল, রশুনিয়া, লতব্দী, বালুচর, ইছাপুর, বয়রাগাদি, মালখানগর, মধ্যপাড়া, জৈনসার, কোলা ইতিহাস প্রাচীনকালে নিঃসন্দেহে মুন্সিগঞ্জ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক কেন্দ্র ছিল। অঞ্চলটি খ্রিস্টীয় দশ শতকের শুরু থেকে তেরো শতকের প্রথম পর্যন্ত চন্দ্র, বর্মন ও সেন রাজাদের রাজধানী ছিল। মুন্সিগঞ্জ উল্লেখ ‘স খলু শ্রী বিক্রমপুর সমাবাসিত শ্রীমজ্জয়স্কন্ধবারাত’ (বিজয় অথবা রাজধানীর রাজকীয় স্থান যা মুন্সিগঞ্জে অবস্থিত)-রূপে শ্রীচন্দ্রের তাম্রশাসনে সর্বপ্রথম দেখা যায় এবং পরবর্তী বর্মন ও সেন রাজবংশের শাসনামলে ম এ মর্যাদা অব্যাহত ছিল। এমনকি সেনদের শাসনামলে, যাঁরা বলতে গেলে প্রায় সমগ্র বঙ্গের ওপর প্রাধান্য বিস্তার করেছিলেন, মুন্সিগঞ্জ তাদের রাজধানী রূপে বলবৎ ছিল এবং নদীয়ায় মুসলমান আক্রমণকারী বখতিয়ার খলজীর হাতে পরাজিত হওয়ার পর লক্ষ্মণসেন এ অঞ্চলে এসেছিলেন। তার দুই পুত্র বিশ্বরূপসেন ও কেশবসেন স্বল্পকালের জন্য এ অঞ্চল শাসন করেছিলেন। বিশ্বরূপসেন ও কেশবসেনের তাম্রশাসনগুলিতে রাজধানী রূপে মুন্সিগঞ্জের উল্লেখ না থাকলেও তারা যে ভূমি দান করেছিলেন তার অবস্থান ছিল মুন্সিগঞ্জ ভাগে। এতে এ অঞ্চলের ওপর তাদের কর্তৃত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। মুন্সিগঞ্জের খ্যাতি ১২৮০ খ্রিষ্টাব্দের প্রথম দিক পর্যন্ত বিদ্যমান ছিল। এসময় দনুজমাধব দশরথদেব কিংবা জিয়াউদ্দীন বরনীর দনুজ রায় সুবর্ণ গ্রামের (সোনারগাঁও) সন্নিকটে তার রাজধানী স্থানান্তর করেন। তখন থেকে সমগ্র সুলতানি আমলে এ অঞ্চলটি বিস্মৃতির পাতায় থেকে যায়। এরপর মুগল যুগে রাজস্ব তালিকায় শুধু পরগনা হিসেবে এর নামের উল্লেখ পুনরায় দেখা যায়। মুগল আগ্রাসনের বিরুদ্ধে মুন্সিগঞ্জের জমিদার চাঁদ রায় ও কেদার রায়এর (বাংলার বারো ভূঁইয়াদের উল্লেখযোগ্য দুজন) বীরোচিত প্রতিরোধ মুন্সিগঞ্জকে কিছুটা স্বল্পস্থায়ী গৌরব প্রদান করে। মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলি ১৯৭১ সালের ২৯ মার্চ ছাত্রজনতা সরকারি অস্ত্রাগার থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র লুট করে এবং পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। ৯ মে পাকবাহিনী গজারিয়ায় অভিযান চালিয়ে চার শতাধিক নিরীহ গ্রামবাসিকে গুলি করে হত্যা করে এবং ১৪ মে কেওয়ারে হামলা করে কিছুসংখ্যক যুবককে হত্যা করে। এর আগে ৩১ মার্চ পাকবাহিনী নারায়ণগঞ্জে আক্রমণ চালালে মুন্সিগঞ্জের তরুণরা নারায়ণগঞ্জবাসীদের সঙ্গে মিলিতভাবে আক্রমণ প্রতিহত করে। জুলাই মাসে ধলাগাঁও এলাকায় শত শত যুবককে রিক্রুট করে ট্রেনিং দেওয়া হয় এবং তারা বিভিন্ন অপারেশনে অংশ নেয়। ১১ আগস্ট মুক্তিযোদ্ধারা শ্রীনগর থানা, ১৪ আগস্ট লৌহজং থানা নিয়ন্ত্রণে নেয় এবং সেপ্টেম্বর মাসের শেষের দিকে টংগিবাড়ী থানা আক্রমণ করে প্রচুর অস্ত্র ও গোলাবারুদ হস্তগত করে। মুক্তিযোদ্ধারা উপজেলার শিবরামপুরে আক্রমণ চালিয়ে পাকবাহিনীর তিনটি গানবোট ডুবিয়ে দেয় এবং এতে বেশসংখ্যক পাকসেনা নিহত হয়। গোয়ালিমান্দ্রায় মুক্তিযোদ্ধারা ৬ জন রাজাকারকে হত্যা করে এবং পরে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে এক সম্মুখ লড়াইয়ে প্রায় ৩৫ জন পাকসেনা নিহত হয়। পাকবাহিনী শেখর নগর গ্রামের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয় এবং নিরীহ লোকদের হত্যা করে। ২৭ রমজান শবে কদর রাতে ১১৫ জন মুক্তিযোদ্ধা পাকসেনাদের ওপর সম্মিলিত আক্রমণ চালিয়ে মুন্সিগঞ্জ শহর দখল করে নেয়। ৪ নভেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা টংগিবাড়ী থানা দখল করে নেয় এবং ১১ ডিসেম্বর মুন্সিগঞ্জ শত্রুমুক্ত হয়। অর্থনীতি জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৩৪.৬৪%, অকৃষি শ্রমিক ২.১৭%, শিল্প ৪.৬৯%, ব্যবসা ২৩.১৭%, পরিবহন ও যোগাযোগ ৩.৭৫%, নির্মাণ ২.২৭%, ধর্মীয় সেবা ১.১৯%, চাকরি ১২.৮৭%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ৫.৯৫% এবং অন্যান্য ৯.৩%। অর্থনৈতিক দিক দিয়ে মুন্সিগঞ্জ খুব দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। কয়েক বছরে এখানে অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে। মুন্সিগঞ্জের মাওয়ায় নগরী গড়ে তোলার পরিকল্পনা করা হয়েছে। ইতিমধ্যে অনেক উদ্যোক্তা সেখানে তাদের কাজ শুরু করে দিয়েছে। তাছাড়া সেখানে একটি উন্নত আবাসিক এলাকা তৈরি করা হয়েছে তবে এখনো তারা সবাই প্লট বিক্রি করা শুরু করেনি। অতএব বলা যায় আর কয়েক বছরের মধ্যেই মুন্সিগঞ্জ অত্যন্ত উন্নত নগরী তে পরিণত হবে এবং এদের অর্থনীতির অতি দ্রুত প্রসার ঘটবে। শিল্প প্রতিষ্ঠান ১। হিমাগার- ৬৭টি ২। সিমেন্ট ফ্যাক্টরী - ১১টি ৩। লবন ফ্যাক্টরী - ৩টি ৪। কাগজ ফ্যাক্টরী - ৩টি ৫। টিস্যু - ১টি (বসুন্ধরা) ৬। জাহাজ নির্মাণ শিল্প- ৬টি ৭। ম্যাচ ফ্যাক্টরী - ৩টি ৮। আঁঠা ফ্যাক্টরী -১টি পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী দৈনিক দৈনিক সভ্যতার আলো মুন্সীগঞ্জের কাগজ</code> আমার বিক্রমপুর.কম দৈনিক মুন্সীগঞ্জের খবর দৈনিক রজতরেখা মুন্সিগঞ্জ ভয়েস.কম শ্রীনগর নিউজ সাপ্তাহিক মুন্সিগঞ্জ সংবাদ গজারিয়া নিউজ ২৪.কম উৎসব লোকসংস্কৃতি দুর্গাপূজা, নববর্ষ, চৈত্র সংক্রান্তি উপলক্ষে যাত্রা, পালাগান, কবিগান, কীর্তনলীলা, বাউল গানের অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। শ্যামসিদ্ধির মেলা এবং ঐতিহ্যবাহী ঝুলন মেলার প্রচলন রয়েছে। এছাড়া রথ যাত্রা, নৌকাবাইচ, লাঠি খেলা প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। দর্শনীয় স্থান নয়াগাঁও বেরিবাধ, জগদীশ চন্দ্র বসুর জন্মস্থান, অতীশ দীপঙ্করের জন্মস্থান, রাজা শ্রীনাথের বাড়ি, ভাগ্যকুল জমিদার বাড়ি, রামপালে বাবা আদম মসজিদ, হাসারার দরগা, সোনারং জোড়া মন্দির, পদ্মার চর, ইদ্রাকপুর কেল্লা, রাজা বল্লাল সেন ও হরিশচন্দ্রের দীঘি, শ্যামসিদ্ধির মঠ, শুলপুরের গির্জা, মেঘনা ভিলেজ হলিডে রিসোর্ট প্রভৃতি ধলেশ্বরী সকার কিংস ক্লাব ধলেশ্বরী নদী বিক্রমপুর বিহার পদ্মা সেতু নাটেশ্বর দেউলের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন প্রাচীন বৌদ্ধ বিহার মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার রামপাল ইউনিয়নের রঘুরামপুর গ্রামে মাটির নিচে চাপা পড়ে থাকা হাজার বছরের পুরনো বৌদ্ধ বিহারের সন্ধান মিলেছে। প্রত্নসম্পদ ও ঐতিহাসিক নিদর্শন উদ্ধারে চালানো খনন কাজের মাধ্যমে এ বৌদ্ধ বিহার আবিষ্কৃত হয়। সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে এ তথ্য জানিয়েছেন বিক্রমপুর অঞ্চলে প্রত্নতত্ত্ব খনন ও ঐতিহাসিক নিদর্শন আবিষ্কার নিয়ে গবেষণা পরিচালক ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. সুফি মোস্তাফিজুর রহমান। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এরই মধ্যে বৌদ্ধ বিহারের পাঁচটি ভিক্ষু কক্ষ উন্মোচিত হয়েছে। একেকটি ভিক্ষু কক্ষের পরিমাপ ৩ দশমিক ৫ মিটার (দৈর্ঘ্য) ও ৩ দশমিক ৫ মিটার (প্রস্থ)। ধারণা করা হচ্ছে, বৌদ্ধ ধর্মের জ্ঞান তাপস অতীশ দ্বীপঙ্করের সঙ্গে এ বৌদ্ধ বিহারের সম্পর্ক রয়েছে। উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব চিত্তরঞ্জন দাশ ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ ব্রজেন দাস অতীশ দীপঙ্কর মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রাজকুমার সেন শীর্ষেন্দু মখোপাধ্যায় সৈয়দ মইনুল হোসেন আব্দুল জব্বার খান ইমদাদুল হক মিলন মোঃ মামুনর রশিদ হূমায়ুন আজাদ তথ্যসূত্র আরও দেখুন ঢাকা বিভাগ বাংলাদেশের জেলাসমূহ বহিঃসংযোগ মুন্সিগঞ্জ জেলার সরকারী ওয়েবসাইট - জেলা তথ্য বাতায়ন। বিষয়শ্রেণী:বাংলাদেশের জেলা বিষয়শ্রেণী:মুন্সিগঞ্জ জেলা বিষয়শ্রেণী:ঢাকা বিভাগের জেলা
মুন্সিগঞ্জ জেলা
কালেমা ইসলামের মৌলিক বিশ্বাস সংবলিত কয়েকটি আরবি পংক্তির নাম। এর মাধ্যমেই ইসলামের প্রথম স্তম্ভ শাহাদাহ্‌ পূর্ণতা পায়। ইসলামে মোট ছয়টি কালেমা রয়েছে। প্রথম কালেমা প্রথম কালেমা হচ্ছে কালেমায়ে তাইয়্যেবা এর অর্থ হল পবিত্র বাক্য। আরবি لَا إِلَٰهَ إِلَّا ٱللَّٰهُ مُحَمَّدٌ رَسُولُ ٱللَّٰهِ‎ প্রতিবর্ণীকরণ / বাংলা উচ্চারণ লা~ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু মুহাম্মাদুর রসূলুল্ল-হ্‌। বাংলা অনুবাদ আল্লাহ্ ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নাই, মুহাম্মাদ তার প্রেরিত রসূল। দ্বিতীয় কালেমা দ্বিতীয় কালেমা হচ্ছে কালেমায়ে শাহাদাত, যার অর্থ হল সাক্ষ্য বাক্য। আরবি أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَٰهَ إِلَّا ٱللَّٰهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ وأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ‎ প্রতিবর্ণীকরণ / বাংলা উচ্চারণ আশ্‌হাদু আল-লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ্‌দাহু-লা-শারীকালাহু ওয়া আশ্‌হাদু আন্না মুহাম্মাদান আ'বদুহু ওয়া রাসূলুহু। অনুবাদ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নাই। তিনি এক, অদ্বিতীয় এবং আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ তার বান্দা ও প্রেরিত রাসুল। তৃতীয় কালেমা তৃতীয় কালেমা হচ্ছে কালেমায়ে তামজিদ, যার অর্থ হল "শ্রেষ্ঠত্ববাদী বাক্য"। আরবি سُبْحَانَ ٱللَّٰهِ وَٱلْحَمْدُ لِلَّٰهِ وَلَا إِلَٰهَ إِلَّا ٱللَّٰهُ وَٱللَّٰهُ أَكْبَرُ وَلَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِٱللَّٰهِ ٱلْعَلِيِّ ٱلْعَظِيمِ‎ বাংলা উচ্চারণ সুবহানআল্লাহি ওয়াল হামদু লিল্লাহি ওয়ালা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার, ওয়ালা হাওলা ওয়ালা কুয়াতা ইল্লা বিল্লাহিল আলীইল আজিম। বাংলা অনুবাদ মহিমান্বিত আল্লাহ, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর। আল্লাহ‌ ছাড়া কোন মাবুদ নাই। আল্লাহ মহান। সমস্ত পবিত্রতা আল্লাহর, সকল প্রশংসা আল্লাহর। আল্লাহ ছাড়া কোনো শক্তি নাই, কোনো ক্ষমতা নাই, তিনি সম্মানিত, তিনি মহান। চতুর্থ কালেমা চতুর্থ কালেমা হচ্ছে কালেমায়ে তাওহিদ, যার অর্থ হল "একত্ববাদী বাক্য"। আরবি لَا إِلَٰهَ إِلَّا ٱللَّٰهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ ٱلْمُلْكُ وَلَهُ ٱلْحَمْدُ، يُحْيِي وَيُمِيتُ وَهُوَ حَيٌّ لَا يَمُوتُ أَبَدًا أَبَدًا، ذُو ٱلْجَلَالِ وَٱلْإِكْرَامِ بِيَدِهِ ٱلْخَيْرُ وَهُوَ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ‎ প্রতিবর্ণীকরণ / বাংলা উচ্চারণ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহু, লাহুল মুলকু ওলাহুল হামদু উহয়ী ওয়া ইয়োমিতু ওয়া হুয়া হাইয়ুল লা ইয়ামুতু আবাদান আবাদা জুল জালালি ওয়াল ইকরাম বি ইয়াদিহিল খাইর ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির বাংলা অনুবাদ আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই, তিনি এক ও অদ্বিতীয়। তার কোন অংশীদার নেই। সকল ক্ষমতা এবং প্রশংসা তারই জন্য। তিনিই জীবন ও মৃত্যুর মালিক। তিনি চিরঞ্জীব, তিনি সকল সম্মানের মালিক। তার হাতেই সকল মঙ্গল এবং তিনি সবকিছুর উপর ক্ষমতা রাখেন। পঞ্চম কালেমা পঞ্চম কালেমা কালেমা-ই-আস্তাগফের নামেও পরিচিত। আরবি أَسْتَغْفِرُ ٱللَّٰهَ رَبِّي مِنْ كُلِّ ذَنْبٍ أَذْنَبْتُهُ عَمْدًا أَوْ خَطَأً سِرًّا وَعَلَانِيَةً وَأَتُوبُ إِلَيْهِ مِنَ ٱلذَّنْبِ ٱلَّذِي أَعْلَمُ وَمِنَ ٱلذَّنْبِ ٱلَّذِي لَا أَعْلَمُ، إِنَّكَ أَنْتَ عَلَّامُ ٱلْغُيُوبِ وَسَتَّارُ ٱلْعُيُوْبِ وَغَفَّارُ ٱلذُّنُوبِ وَلَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِٱللَّٰهِ ٱلْعَلِيِّ ٱلْعَظِيمِ‎ প্রতিবর্ণীকরণ / বাংলা উচ্চারণ আস্তাগফিরুল্লাহা রাব্বি মিন কুল্লি জামবি আয নাবতুহু আমাদান আওখাতাআন সিররান আওয়ালা নিয়াতান ওয়াতুবু ইলাইহি মিনাযযামবিল্লাজি ওয়ামিনাযযামবিল্লাজি লা আলামু ইন্নাকা আনতা আল্লামুল গুয়ুবী ওয়া সাত্তারুল উইয়ুবী ওয়া গাফফারুজজুনুবি ওয়ালা হাওলা ওয়ালা কুয়াতা ইল্লা বিল্লাহিল আলিউল আযীম। বাংলা অনুবাদ আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই সকল পাপ থেকে, যা আমি সংঘটিত করেছি আমার জ্ঞাতসারে অথবা অজ্ঞাতসারে, গোপনে বা প্রকাশ্যে এবং আমি আমার পালনকর্তার আশ্রয় চাই সেই পাপ থেকে, যে পাপ আমি জানি এবং যে পাপ আমি জানিনা। অবশ্যই আপনি লুকানো এবং গোপন (ভুল) পাপ সম্পর্কে জানেন এবং ক্ষমাশীল। আল্লাহ ছাড়া কোন শক্তি নেই, কোন ক্ষমতা নেই, তিনি সম্মানিত, তিনি মহান। ষষ্ঠ কালেমা কালেমা-ই-রুদ-ই-কুফর ইসলামে অবিশ্বাসীদের প্রত্যাখ্যানমূলক বাক্য হিসেবেও পরিচিত। আরবি ٱللَّٰهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ أَنْ أُشْرِكَ بِكَ شَيْءً وَأَنَا أَعْلَمُ بِهِ وَأَسْتَغْفِرُكَ لِمَا لَا أَعْلَمُ بِهِ تُبْتُ عَنْهُ وَتَبَرَّأَتُ مِنَ ٱلْكُفْرِ وَٱلشِّرْكِ وَٱلْكِذْبِ وَٱلْغِيبَةِ وَٱلْبِدْعَةِ وَٱلنَّمِيمَةِ وَٱلْفَوَاحِشِ وَٱلْبُهْتَانِ وَٱلْمَعَاصِي كُلِّهَا وَأَسْلَمْتُ وَأَقُولُ لَا إِلَٰهَ إِلَّا ٱللَّٰهُ مُحَمَّدٌ رَسُولُ ٱللَّٰهِ‎ প্রতিবর্ণীকরণ / বাংলা উচ্চারণ আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযুবিকা মিন উশরিকা বিকা শাইআও ওয়ানা আলামু বিহি ওয়াস্তাগফিরুকা লিমালা আলামু বিহি তুবতু আনহু ওয়া তাবাররাতু মিনাল-কুফরি ওয়াশ-শিরকী ওয়াল-কিজবি ওয়ালা-গিবাতি ওয়াল-বিদাতি ওয়ান্না-মিমাতি ওয়াল-ফাওয়া হিমি ওয়াল-রুহতানী ওয়াল-মাআসি কুল্লিহা ওয়াসলামতু ওয়াকুলু লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ। বাংলা অনুবাদ হে আল্লাহ নিশ্চয়, ক্ষমা চাই শিরক করা থেকে (আল্লাহর সাথে কাউকে শরিক করা), আমি ক্ষমা চাই সকল পাপ থেকে যা সম্পর্কে আমি সচেতন নই বা জানি না, আমি পুনরায় ঘোষণা করছি, আমি সকল প্রকার কুফর থেকে, শিরক থেকে, মিথ্যা (কথা বলা), গিবত (কারও অনুপস্থিতিতে পরনিন্দা), বিদাত, পরনিন্দা, অশ্লীলতা এবং অন্যান্য সকল পাপ থেকে মুক্ত। আমি ইসলাম স্বীকার এবং বিশ্বাস করি এবং ঘোষণা দিচ্ছি যে, আল্লাহ‌ ছাড়া কোন প্রভু নেই এবং মুহাম্মদ আল্লাহর প্রেরিত রাসুল। তথ্যসূত্র বিষয়শ্রেণী:কালেমা বিষয়শ্রেণী:ইসলামের পঞ্চস্তম্ভ বিষয়শ্রেণী:ইসলামী পরিভাষা বিষয়শ্রেণী:বিশ্বাস
কালেমা
thumb|গ্রামীণ ব্যাংক ভবন গ্রামীণ ব্যাংক বাংলাদেশের একটি ক্ষুদ্রঋণ প্রদানকারী সংস্থা এবং সামাজিক উন্নয়ন ব্যাংক। এর প্রতিষ্ঠাতা ডঃ মুহাম্মদ ইউনুস। ১৯৭৬ সালে গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ১৯৮৩ সালে এটি একটি বৈধ এবং স্বতন্ত্র ব্যাংক হিসেবে যাত্রা শুরু করে। গ্রামীণ ব্যাংক মূলত ভূমিহীন এবং দরিদ্র নারীদের পাঁচ জনের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দল গঠনের মাধ্যমে ক্ষুদ্রঋণ প্রদান করে এবং এ ঋণের মাধ্যমে তাদের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করে। গ্রামীণ ব্যাংকের ঋণ পরিশোধের হার ৯৮%। পরিচালনা পদ্ধতি এটি বাংলাদেশের তথ্য কমিশন এর তালিকাভুক্ত। অর্জন ও পুরস্কার 200px|thumb|left|ঢাকায় নিজ দপ্তরে অধ্যাপক ইউনূস, ২০১৪ ২০০৬ সালে দারিদ্র বিমোচনে অবদান রাখায় গ্রামীণ ব্যাংক এবং মুহাম্মদ ইউনুস যৌথভাবে নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করেন। আগাখান স্থাপত্য পুরস্কার: ১৯৮৯ (সুইজারল্যান্ড) কাজী মাহবুবউল্লাহ পুরস্কার: ১৯৯২ (বাংলাদেশ) রাজা বোঁদওয়া আন্তর্জাতিক উন্নয়ন পুরস্কার : ১৯৯৩ (বেলজিয়াম) তুন আবদুল রাজাক পুরস্কার: ১৯৯৪ (মালয়েশিয়া) স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার: ১৯৯৪ (বাংলাদেশ) বিশ্ব বসতি পুরস্কার: ১৯৯৭ (যুক্তরাজ্য) গান্ধী শান্তি পুরস্কার: ২০০০ (ভারত) পিটার্সবার্গ পুরস্কার: ২০০৪ (যুক্তরাষ্ট্র) নোবেল শান্তি পুরস্কার: ২০০৬ (নরওয়ে) এম সি সি আই ঢাকা এর শতবর্ষ পদক পুরস্কার:২০১৪ (বাংলাদেশ) ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স ম্যাগাজিন এর "বেস্ট কর্পোরেট সোস্যাল রেসপন্সেবল ব্যাংক পুরস্কার :২০১৪ (যুক্তরাজ্য) আই সি এম এ বি'র বেস্ট কর্পোরেট এ্যাওয়ার্ড পুরস্কার :২০১৪ (বাংলাদেশ) আরও দেখুন বাংলাদেশ ব্যাংক বাংলাদেশের ব্যাংকসমূহের তালিকা তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ গ্রামীণ ব্যাংকের ওয়েবসাইট বিষয়শ্রেণী:বাংলাদেশের ব্যাংক বিষয়শ্রেণী:১৯৭৬-এ প্রতিষ্ঠিত বিষয়শ্রেণী:বাংলাদেশী নোবেল বিজয়ী বিষয়শ্রেণী:নোবেল পুরস্কার বিজয়ী সংস্থা বিষয়শ্রেণী:নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী সংস্থা বিষয়শ্রেণী:পল্লী উন্নয়নে স্বাধীনতা পুরস্কার বিজয়ী
গ্রামীণ ব্যাংক
স্টিভেন কুক (; জন্ম:১৪ ডিসেম্বর, ১৯৩৯) একজন বিখ্যাত মার্কিন কম্পিউটার বিজ্ঞানী ও গণিতবিদ। টুরিং পুরস্কারপ্রাপ্ত কুকের প্রধান অবদান কম্প্লেক্সিটি তত্ত্বের গুরুত্বপূর্ণ এনপি-সম্পূর্ণতা ধারণা উদ্ভাবন করা। তিনি ২০০৮ সালে টুরিং পুরস্কার পান। বর্তমানে তিনি টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয় এ কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগ ও গণিত বিভাগে অধ্যাপক পদে দায়িত্বরত। জন্ম ও শিক্ষাজীবন স্টিভেন কুকের জন্ম ১৯৩৯ সালের ১৪ ডিসেম্বর নিউইয়র্কে। তিনি ১৯৬১ সালে মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি এবং ১৯৬২ ও ১৯৬৬ সালে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। পরবর্তীতে ১৯৬৬ সালে তিনি ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়াতে গণিত বিভাগে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৭০ সালে তিনি ইউনিভার্সিটি অব টরেন্টোতে কম্পিউটার বিজ্ঞান এবং গণিত বিভাগে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন এবং ১৯৭৫ সালে অধ্যাপক হন। কর্মজীবন পুরস্কার ও সম্মাননা স্টিভেন কুক ২০০৮ সালে এসিএম টুরিং পুরস্কার পান। ব্যক্তিজীবন কুক দুই সন্তান এর জনক এবং বর্তমানে তিনি সস্ত্রীক টরেন্টো রয়েছেন। তিনি বেহালা বাজাতে পারেন এবং নৌভ্রমণ পছন্দ করেন। তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ Home page of Stephen A. Cook Oral history interview with Stephen Cook at Charles Babbage Institute, University of Minnesota. Cook discussed his education at the University of Michigan and Harvard University and early work at the University of California, Berkeley, and his growing interest in problems of computational complexity. Cook recounted his move to the University of Toronto in 1970 and the reception of his work on NP-completeness, leading up to his A.M. Turing Award. Stephen Cook at DBLP বিষয়শ্রেণী:মার্কিন কম্পিউটার বিজ্ঞানী বিষয়শ্রেণী:১৯৩৯-এ জন্ম বিষয়শ্রেণী:জীবিত ব্যক্তি বিষয়শ্রেণী:টুরিং পুরস্কার বিজয়ী বিষয়শ্রেণী:হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী বিষয়শ্রেণী:ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, বার্কলের শিক্ষক বিষয়শ্রেণী:টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বিষয়শ্রেণী:মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় বিজ্ঞান অ্যাকাডেমির সদস্য বিষয়শ্রেণী:কানাডীয় কম্পিউটার বিজ্ঞানী বিষয়শ্রেণী:মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী বিষয়শ্রেণী:কানাডায় মার্কিন অভিবাসনকারী বিষয়শ্রেণী:অফিসার্স অব দি অর্ডার অব কানাডা বিষয়শ্রেণী:রয়েল সোসাইটির ফেলো
স্টিভেন কুক
হিন্দি ভাষা () ভারতের অন্যতম সরকারী ভাষা। এই কেন্দ্রীয় ইন্দো-আর্য ভাষাটি মূলত উত্তর, মধ্য ও পশ্চিম ভারতের প্রায় ৬২ কোটিরও বেশি মানুষের মাতৃভাষা। বিস্তার ইতিহাস লিখন পদ্ধতি দেবনাগরী লিপিতে লেখা সাহিত্যিক বা লেখ্য হিন্দি ভাষায় সংস্কৃতের বড় প্রভাব রয়েছে। উপভাষা ও অন্যান্য ভাষার সঙ্গে সম্পর্ক দিল্লীর উত্তর ও পূর্বে প্রচলিত খাড়ি বোলি উপভাষা লেখ্য হিন্দির ভিত্তি। এছাড়া হিন্দির একটি উপভাষা ব্রজ ভাষায় ১৫শ শতক থেকে ১৭শ শতক পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্য রচিত হয়। হিন্দির অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ উপভাষার মধ্যে আওয়াধি, বাঘেলি, ছত্তিশগড়ি, বুন্দেলি ও কনৌজি অন্যতম। তবে ছত্তিসগড়ি,ভোজপুরি সহ অন্যান্য স্বতন্ত্র ভাষাকে এটি রাজনৈতিকভাবে আগ্রাসনের শিকার করেছে। স্বীকৃতি উর্দু সহ অন্যান্য স্বতন্ত্রভাষা সমুহকে বাদ দিলে এর মাতৃভাষি দাড়ায় মাত্র ২৭ কোটি।যেখানে বাংলা মাতৃভাষি ৩০ কোটি। এখানে উল্লেখ্য যে ভোজপুরি,মৈথিলি ও ঝাড়খন্ডি ভাষাগুলোর হিন্দির চেয়ে বাংলার মিল বেশি। ব্যাকরণ হিন্দি ভাষার বিভক্তি ব্যবস্থা সংস্কৃতের তুলনায় সরল। বিভক্তির তুলনায় অনুসর্গই বেশি ব্যবহৃত হয়। হিন্দিতে দুইটি ব্যাকরণিক লিঙ্গ রয়েছে (গুজরাটি ও মারাঠিতে লিঙ্গের সংখ্যা তিন)। ক্রিয়াগুলোতেও বিভক্তির জটিলতা কম। আরও দেখুন হিন্দি-উর্দু বিতর্ক হিন্দী-উর্দু ব্যাকরণ উইকিপিডিয়া:বাংলা ভাষায় হিন্দী শব্দের প্রতিবর্ণীকরণ তথ্যসূত্র হিন্দু বহিঃসংযোগ হিন্দী ভাষার উপর এথনোলগ রিপোর্ট * বিষয়শ্রেণী:হিন্দি-উর্দু বিষয়শ্রেণী:হিন্দি ভাষাসমূহ বিষয়শ্রেণী:নব্য ইন্দো-আর্য ভাষা বিষয়শ্রেণী:ভারতের ভাষা বিষয়শ্রেণী:ভারতের সরকারি ভাষাসমূহ
হিন্দি ভাষা
পাটনা (অপর বানান পটনা) () হল ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য বিহারের রাজধানী তথা বৃহত্তম শহর। এটি পূর্ব ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহরও (কলকাতার পরে) বটে। ২০১১ সালের জনগণনা অনুসারে, পাটনা মহানগর অঞ্চলের জনসংখ্যা ২,০৪৬,৬৫২। এটি ভারতের ১৯শ বৃহত্তম মহানগর। অন্যদিকে পাটনার পৌর এলাকার জনসংখ্যা ১,৬৮৩,২০০। এটি ভারতের ১৮শ বৃহত্তম পৌরসংস্থা। পাটনা হাইকোর্ট এই শহরেই অবস্থিত। বিশ্বের যে প্রাচীনতম অঞ্চলগুলি নিরবিচ্ছিন্নভাবে জনবসতিপূর্ণ, পাটনা তার মধ্যে অন্যতম। খ্রিস্টপূর্ব ৪৯০ অব্দে মগধের রাজা অজাতশত্রু এই শহর স্থাপন করেন। প্রাচীন পাটনা ‘পাটলীপুত্র’ নামে পরিচিত ছিল। এই শহর ছিল হর্যঙ্ক, নন্দ, মৌর্য, শুঙ্গ, গুপ্ত ও পাল রাজবংশের অধীনে মগধ সাম্রাজ্যের রাজধানী এবং শিক্ষা ও শিল্পকলার একটি প্রাচীন কেন্দ্র। মৌর্য শাসনকালে (খ্রিস্টপূর্ব ৩০০ অব্দ নাগাদ) এই শহরের জনসংখ্যা ছিল প্রায় ৪০০,০০০। আধুনিক পাটনা শহরটি গঙ্গা নদীর দক্ষিণ তীরে অবস্থিত। সোন, গণ্ডক ও পুনপুন নদীও এই শহরের পাশ দিয়ে প্রবাহিত। শহরটি দৈর্ঘ্যে প্রায় এবং প্রস্থে প্রায় । ২০০৯ সালের জুন মাসে বিশ্ব ব্যাংক ব্যবসা শুরু করার উপযুক্ত স্থান হিসেবে পাটনা শহরকে ভারতে দ্বিতীয় স্থান (দিল্লির পরে) প্রদান করে। ২০১১-১২ সালে বিহারের মাথাপিছু মোট জেলা আভ্যন্তরিণ উৎপাদনে পাটনা প্রথম স্থান অধিকার করে। উক্ত বছরে পাটনার মোট মাথাপিছু জেলা আভ্যন্তরিণ উৎপাদন ছিল ৬৩,০৬৩ টাকা। গড় বার্ষিক বৃদ্ধির হিসেব অনুসারে, পাটনা বিশ্বের ২১তম এবং ভারতের ৫ম দ্রুততম বর্ধিষ্ণু শহর (সিটি মেয়রস’ ফাউন্ডেশনের সমীক্ষা অনুসারে)। ২০০৬-২০১০ সালে পাটনার গড় বার্ষিক বৃদ্ধি ছিল ৩.৭২%। বৌদ্ধ, হিন্দু ও জৈন তীর্থস্থান বৈশালী, রাজগির, নালন্দা, বুদ্ধ গয়া ও পাবাপুরী পাটনা শহরের কাছে অবস্থিত। পাটনা শহরটি শিখদের কাছে একটি পবিত্র শহর। এই শহরেই ১০ম শিখ গুরু গোবিন্দ সিং জন্মগ্রহণ করেছিলেন। নামকরণ পাটনা শহরের নাম একাধিকবার পরিবর্তিত হয়েছে। শহরের বর্তমান নাম পাটনা বা পটনার (দেবনাগরী: पटना) ব্যুৎপত্তি সম্পর্কে একাধিক মত পাওয়া যায়। একটি মত অনুসারে, স্থানীয় হিন্দু দেবী পাতনের (দেবনাগরী:पIतन) নাম অনুসারে এই শহরের নামকরণ করা হয়েছে ‘পাটনা’। পাটনার গুলজারবাগ মান্ডির কাছে পাতন দেবী মন্দির অবস্থিত। পাতন দেবীর আরেকটি মন্দির আছে পাটনা সাহিবের তখত শ্রী পাটনা সাহিবের কাছে। কোনো কোনো মতে, এই শহরের প্রাচীন নাম ‘পাটলীপুত্র’ পাটলী নামে এক ধরনের গাছের নাম থেকে এসেছিল। প্রাচীন পাটলীপুত্রে এই গাছ প্রচুর দেখা যেত। (এই গাছটি বিহার রাজ্য পর্যটন উন্নয়ন পর্ষদের লোগো) চীনা পর্যটক ফা হিয়েন এই শহরকে ‘পা-লিন-ফউ’ নামে উল্লেখ করেন। বিগত ২০০০ বছরে এই শহরটি বিভিন্ন নামে পরিচিত হয়েছে। যথা: পাটলীগ্রাম, পাটলীপুত্র, কুসুমপুরা, কুসুমধ্বজা, পুষ্পপুরম, পদ্মাবতী, আজিমাবাদ এবং বর্তমান নাম পাটনা। একটি কিংবদন্তি অনুসারে, পৌরাণিক রাজা পুত্রক তার রানি পাটলীর জাদুবলে এই শহর নির্মাণ করেন। সেই থেকে এই শহরের নাম প্রথমে হয় পাটলীগ্রাম। কথিত আছে, রানির প্রথম সন্তানের সম্মানার্থে এই শহরের নাম রাখা হয় পাটলীপুত্র। অপর একটি কিংবদন্তি অনুসারে, খ্রিস্টপূর্ব ৪৩ অব্দে নাগসেন পাটলীপুত্র শহরেই মরকত বুদ্ধ মূর্তিটি নির্মাণ করেন। ইতিহাস প্রাচীন যুগ খ্রিস্টপূর্ব ৪৯০ অব্দ থেকে পাটলীপুত্র (অধুনা পাটনা) শহরের গুরুত্ব বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। সেই সময় মগধের রাজা অজাতশত্রু বৈশালীর লিচ্ছবিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য রাজগৃহের পার্বত্য এলাকা থেকে তুলনামূলকভাবে সুবিধাজনক কোনো এলাকায় রাজধানী স্থানান্তরিত করার কথা চিন্তা করেন। নতুন রাজধানী স্থাপনের জন্য তিনি গঙ্গাতীরবর্তী পাটলীপুত্রকে নির্বাচিত করেন এবং সেখানেই দুর্গ নির্মাণ করেন। গৌতম বুদ্ধ তার জীবনের শেষ পর্বে পাটলীপুত্রে এসেছিলেন। তিনি এই শহরের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের কথা বলেছিলেন। সেই সঙ্গে এও বলেছিলেন যে, বন্যা, অগ্নিকাণ্ড ও কলহবিবাদের ফলে এই শহর ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে। মৌর্য সাম্রাজ্য ও আদি মধ্যযুগ ইন্দো-গ্রিক ইতিহাসকার তথা চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের রাজসভায় গ্রিক রাজদূত মেগাস্থিনিস পাটলীপুত্র নগরীর যে বর্ণনা দিয়েছেন, তা এই শহরের প্রাচীনতম বিবরণীগুলির অন্যতম। তিনি লিখেছেন, এই শহরটি গঙ্গা ও ‘আরেননোভোয়াস’ (শোনভদ্রা – হিরণ্যব) নদীর সংযোগস্থলে অবস্থিত ছিল এবং এই শহরের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ ছিল যথাক্রমে ও । মেগাস্থিনিস খ্যাতির শীর্ষে থাকা পাটলীপুত্রকে তৎকালীন বিশ্বের শ্রেষ্ঠ নগরী বলে বর্ণনা করেছিলেন। মৌর্য সাম্রাজ্যের পতনের পর শুঙ্গ রাজারা এই শহর অধিকার করেন এবং এখান থেকে প্রায় ১০০ বছর নিজেদের সাম্রাজ্য শাসন করেন। শুঙ্গ সাম্রাজ্যের পর কান্ব এবং পরবর্তীকালে গুপ্ত সাম্রাজ্যের শাসনকেন্দ্রে পরিণত হয় পাটলীপুত্র। ভারতে বিদ্যার্জনের উদ্দেশ্যে আগত একাধিক চীনা পর্যটক তাদের ভ্রমণ-বিবরণীতে পাটলীপুত্রের বর্ণনা দিয়েছেন। এই রকম একটি বিখ্যাত বিবরণ রচনা করেছিলেন চীনা বৌদ্ধ পর্যটক ফা হিয়েন। তিনি ৩৯৯ থেকে ৪১৪ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যবর্তী সময়ে ভারতে এসেছিলেন এবং বেশ কয়েক মাস পাটলীপুত্রে অবস্থান করে বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থগুলি অনুবাদ করেছিলেন। মধ্যযুগ গুপ্ত ও পাল রাজবংশ সহ ভারতীয় উপমহাদেশের একাধিক রাজবংশ পাটলীপুত্র থেকে রাজ্য শাসন করেছিলেন। গুপ্ত সাম্রাজ্যের পতনের পর পাটলীপুত্রের ভবিষ্যত অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল। ১২শ শতাব্দীতে বখতিয়ার খিলজি পাটনা দখল করে বহু প্রাচীন শিক্ষাকেন্দ্র ধ্বংস করে দেন। এরপরই পাটলীপুত্র রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের মর্যাদা হারায়। ১০শ শিখ গুরু গোবিন্দ সিং (২২ ডিসেম্বর, ১৬৬৬ – ৭ অক্টোবর, ১৭০৮) পাটনায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তার প্রকৃত নাম ছিল গোবিন্দ রাই। তার পিতা ছিলেন ৯ম শিখ গুরু তেগ বাহাদুর ও মা ছিলেন গুজরি। তার জন্মস্থান পাটনা সাহিব শিখদের পবিত্রতম তীর্থস্থানগুলির অন্যতম। মুঘল শাসনকালে দিল্লি থেকেই শাসনকার্য চালানো হত। মধ্যযুগে পাঠান সম্রাট শের শাহ সুরির রাজত্বকালে পাটনার উন্নতি ঘটে। ১৬শ শতাব্দীর মধ্যভাগে তিনি পাটনার হৃতগৌরব পুনরুদ্ধার করেছিলেন। তিনি একটি দুর্গ নির্মাণ করেন এবং গঙ্গাতীরে একটি শহর প্রতিষ্ঠা করেন। পাটনায় শের শাহের দুর্গটি আর নেই। তবে শের শাহ সুরি মসজিদটি আছে। এই মসজিদটি আফগান স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত। ১৫৭৪ সালে মুঘল সম্রাট আকবর পাটনায় আসেন বিদ্রোহী আফগান নেতা দাউদ খানকে দমন করতে। আকবরের রাজসভার সভা-ইতিহাসকার তথা "আইন-ই-আকবরি" গ্রন্থের রচয়িতা আবুল ফজল পাটনা শহরটিকে কাগজ, পাথর ও কাচ শিল্পের একটি বর্ধিষ্ণু কেন্দ্র হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি পাটনায় উৎপন্ন এক বিশেষ ধরনের চালের উচ্চ মানের কথাও উল্লেখ করেছেন। এই চালটি ইউরোপে পাটনা চাল নামে পরিচিত। ১৬২০ সাল নাগাদ পাটনা ‘বাংলার বৃহত্তম বাণিজ্যশহর’ হিসেবে পরিচিত হয়। সমগ্র উত্তর ভারতে পাটনার পরিচয় হয় ‘বাংলার বৃহত্তম শহর ও সবচেয়ে বিখ্যাত বাণিজ্যকেন্দ্র।’ কলকাতা প্রতিষ্ঠার আগে পর্যন্ত পাটনা এই মর্যাদা ধরে রেখেছিল। মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেব তার প্রিয় নাতি মুহাম্মদ আজিমের অনুরোধে এই শহরের নাম পরিবর্তন করে রাখেন আজিমাবাদ। ১৭০৪ সালে আজিম পাটনায় সুবেদার হিসেবে প্রেরিত হন। পাটনা বা আজিমাবাদে কিছু হিংসাত্মক ঘটনা ঘটেছিল। ফিলিপ ম্যাসন তার "দ্য ম্যান হু রুলড ইন্ডিয়া" গ্রন্থে এই ধরনের কিছু ঘটনার বিবরণ দিয়েছেন। “আওরঙ্গজেব অ-মুসলমানেদের উপর জিজিয়া কর পুনঃস্থাপিত করেছিলেন। এই কর দেওয়া ছিল বাধ্যতামূলক। পাটনায় কুটির প্রধান পিকক এই কর দিতে অস্বীকার করায় তাঁকে বন্দী করা হয় এবং খালি মাথায় ও খালি পায়ে রাস্তা দিয়ে হাঁটতে বাধ্য করা হয়। নানা ভাবে অসম্মান করার পর তাঁর থেকে কর আদায় করে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।” যদিও এই সময় নাম ছাড়া পাটনার পরিবর্তন সামান্যই হয়েছিল। মুঘল সাম্রাজ্যের পতনের পর পাটনার কর্তৃত্ব বাংলার নবাবদের হাতে চলে যায়। তারা এই শহরের উপর করভার বৃদ্ধি করেছিলেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও পাটনার বাণিজ্যিক গুরুত্ব কিছুমাত্র হ্রাস পায়নি। ১৮১১-১২ নাগাদ পাটনার নদী তীরে তেকারি রাজের প্রাসাদ থেকে পাটনা নিয়ন্ত্রিত হত। ব্রিটিশ যুগ ১৭শ শতাব্দীতে পাটনা একটি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যকেন্দ্রে পরিণত হয়। ১৬২০ সালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতীয় সূতিবস্ত্র ও রেশম বাণিজ্যের জন্য একটি কুঠি স্থাপন করে। অনতিবিলম্বেই পাটনা পটাশিয়াম নাইট্রেট বাণিজ্যের একটি কেন্দ্রে পরিণত হয়। ফ্র্যাঙ্কোইস বার্নিয়ার তার ট্রাভেলস ইন দ্য মুঘল এম্পায়ার (১৬৫৬-১৬৬৮) বইতে লিখেছেন, “…পাটনা থেকে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম নাইট্রেট আমদানি করা হত। খুব সহজেই তা গঙ্গার নদীপথে বহন করা হত এবং ডাচ ও ইংরেজরা ভারতের বহু বন্দরে এবং ইউরোপে বিশাল পণ্যবাহী জাহাজ প্রেরণ করত।” এই ব্যবসা ফরাসি, ডেনস, ডাচ ও পর্তুগিজদেরও আকৃষ্ট করেছিল। ১৬৩২ সালে পিটার মান্ডি পাটনাকে ‘পূর্বাঞ্চলের শ্রেষ্ঠ বাজার’ বলে উল্লেখ করেন। ১৭৬৪ সালে বক্সারের যুদ্ধের পর এলাহাবাদের চুক্তি অনুসারে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি মুঘল সম্রাটের কাছ থেকে সুবে-বাংলার (মুঘল বাংলা প্রদেশ) রাজস্ব আদায়ের অধিকার লাভ করে। ১৭৯৩ সালে কোম্পানি পাটনা দখল করে। এই সময় পাটনায় মুঘল শাসনের পরিসমাপ্তি ঘটে এবং কোম্পানি বাংলা ও বিহারের শাসনভার গ্রহণ করে। যদিও পাটনা একটি বাণিজ্যকেন্দ্র থেকে যায়। ১৯১২ সালে বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি বিভাজিত হলে পাটনা নবগঠিত বিহার ও উড়িষ্যা প্রদেশের রাজধানী হয়। ১৯৩৫ সালে পৃথক উড়িষ্যা প্রদেশ গঠিত হলে পাটনা বিহার প্রদেশের রাজধানী হয়। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে পাটনার অবদান বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। চম্পারণে নীলচাষীদের বিদ্রোহ এবং ১৯৪২ সালে ভারত ছাড়ো আন্দোলনে পাটনার নেতৃবৃন্দ খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন। পাটনার জাতীয় নেতাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য: স্বামী সহজানন্দ সরস্বতী, ড. রাজেন্দ্র প্রসাদ, বিহারবিভূতি অনুগ্রহ নারায়ণ সিনহা, বসওন সিং, লোকনায়ক জয়প্রকাশ নারায়ণ, ড. সচ্চিদানন্দ সিং, শ্রীকৃষ্ণ সিনহা, শীলভদ্র ইয়াজি ও শার্ঙ্গধর সিনহা প্রমুখ। স্বাধীন ভারত ১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীন হওয়ার পর পাটনা বিহার রাজ্যের রাজধানী থেকে যায়। ২০০০ সালে বিহার দ্বিখণ্ডিত হয়ে ঝাড়খণ্ড রাজ্য সৃষ্টি হওয়ার পরও পাটনা বিহারের রাজধানীর মর্যাদা ধরে রাখে। ভূগোল টোপোগ্রাফি পাটনা পূর্ব ভারতে গঙ্গা নদীর দক্ষিণ তীরে অবস্থিত। পাটনার আয়তন । এর মধ্যে পাটনা পৌর-এলাকার আয়তন এবং শহরতলি অঞ্চলের আয়তন । শহরটি অক্ষ-দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত। এই শহরের গড় উচ্চতা । পাটনা শহরটি নদী-সঙ্গমস্থলে অবস্থিত। গঙ্গার দক্ষিণ তীরে প্রায় ৮ কিলোমিটারের একটি সংকীর্ণ উচ্চভূমিতে এই শহর অবস্থিত। এই অঞ্চলের মাটি খুবই উর্বর। অবশিষ্টাংশ উর্বর সমভূমির অন্তর্গত। ব্রিটিশ যুগে, পাটনা ছিল বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির অন্তর্গত। ১৯৭৬ সালে পাটনা জেলা ভেঙে নালন্দা জেলা গঠিত হওয়ার পর পাটনা জেলা থেকে সকল পার্বত্য এলাকা বাদ পড়ে। বর্তমানে এটি পাললিক সমভূমির অন্তর্গত। পাটনা জেলার ভূখণ্ডটি অত্যন্ত উর্বর। এখানে কোনো বনাঞ্চল নেই। এই উর্বর সমভূমিতে ধান, আখ ও অন্যান্য খাদ্যশস্য চাষ করা হয়। এখানে প্রচুর আম গাছ, তাল গাছ ও বাঁশ ঝাড় দেখা যায়। নদী থেকে দূরে গ্রামগুলির শুষ্ক জমিতে ঝোপঝাড় দেখা যায়। বেল, শিরীষ, কাঁটাল ইত্যাদি গাছ এখানে প্রচুর চোখে পড়ে। পাটনা শহরের নিকটেই চারটি বড়ো নদী অবস্থিত। এটি পাটনার একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য। পাটনা বিশ্বের দীর্ঘতম নদীতীরবর্তী শহর। গঙ্গার উপর মহাত্মা গান্ধী সেতু নামে যে সেতুটি রয়েছে সেটির দৈর্ঘ্য ৫৫৭৫ মিটার। এটি ভারতের দীর্ঘতম নদী সেতু। পাটনা ভারতের সিসমিক ক্ষেত্র-চারের অন্তর্গত। এটি ভূমিকম্প-প্রবণ এলাকায় অবস্থিত। তবে সাম্প্রতিক ইতিহাসে পাটনায় খুব একটা ভূমিকম্পের ঘটনা ঘটেনি। জলবায়ু পাটনার জলবায়ু আর্দ্র উপক্রান্তীয় প্রকৃতির (কোপেন-গিগার জলবায়ু শ্রেণীকরণ পদ্ধতি অনুসারে)। এখানে গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা অত্যন্ত বেশি থাকে। গ্রীষ্মকালের অবস্থান মার্চ মাসের শেষ থেকে জুন মাসের প্রথম ভাগ পর্যন্ত। জুন মাসের শেষ ভাগ থেকে সেপ্টেম্বর মাসের শেষ ভাগ পর্যন্ত বর্ষাকাল। নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শীতকাল। শীতকালে তাপমাত্রা অত্যন্ত কম থাকে। দিন সাধারণত কুয়াশাচ্ছন্ন বা রৌদ্রোজ্জ্বল হয়। পাটনার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা নথিভুক্ত হয়েছিল ১৯৬৬ সালে। সেই বছর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল । সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নথিভুক্ত হয় ২০১৩ সালের ৯ জানুয়ারি। সেই দিন সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল । সর্বাধিক বৃষ্টিপাত ঘটেছিল ১৯৯৭ সালে। এই বছর বৃষ্টির পরিমাণ ছিল । নিচে বিস্তারিত আকারে পাটনার মাসিক আবহাওয়া-পরিবর্তনের তালিকা দেওয়া হল: বায়ু দূষণ দূষণ পাটনার অন্যতম প্রধান সমস্যা ক্যাগ রিপোর্ট অনুসারে (যেটি ২০১৫ সালের এপ্রিল মাসে বিহার বিধানসভায় পেশ করা হয়), পাটনায় শ্বসনযোগ্য [[সাসপেন্ডেড পার্টিকুলেটেড ম্যাটার) (আরএসপিএম)-এর মাত্রা (পিএম-১০) ৩৫৫; যা প্রস্তাবিত সীমা প্রতি ঘন মিটারে ১০০ মাইক্রোগ্রামের তুলনায় সাড়ে তিন গুণ বেশি। এই বায়ুদূষণের কারণ যানবাহন, শিল্পাঞ্চলের বর্জ্য ও শহরে নির্মাণকার্য। ২০১৪ সালের মে মাসে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি সমীক্ষা অনুসারে, পাটনা শহর দিল্লির পরই দেশের দ্বিতীয় সর্বাধিক বায়ুদূষণের শিকার। এই সমীক্ষা অনুসারে পাটনার বায়ুমণ্ডলে পার্টিকুলেট ম্যাটার (পিএম-২৫) ১৪৭ মাইক্রো-গ্রাম; যা নিরাপদ সীমার (২৫ মাইক্রোগ্রাম) থেকে ছয় গুণ বেশি। শহরের তীব্র বায়ুদূষণ শহরবাসীর ফুসফুসের ক্যান্সার, হাঁপানি, ডিসেন্ট্রি ও ডায়েরিয়া রোগের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। প্রতি বছর শীতকালে গভীর কুয়াশার জন্য পাটনায় রেল ও বিমান পরিষেবা বিপর্যস্ত হয়ে থাকে। অর্থনীতি অর্থনীতির দিক থেকে অনগ্রসর এই শহর। ভারতের অন্যতম শিল্পঅনুন্নত রাজ্যের রাজধানী হিসেবে সেরকম কোনো সুনাম হয়নি। ২০১৭ সালে ভারতীয় বহুজাতিক তথ্য প্রযুক্তি সংস্থা টাটা কন্‌সাল্টেন্সি সার্ভিসেস তাদের ব্যাবসায়িক প্রক্রিয়া বহিঃউৎসকরণের কেন্দ্র এই শহরে স্থাপনা করেছে পরিবহন রেলপথে পাটনা জংশন শহরের প্রধান স্টেশন। এছাড়া পূর্বে রাজেন্দ্রনগর টার্মিনাল ও পশ্চিমে দানাপুর স্টেশন শহরের অন্যতম রেল যোগাযোগ কেন্দ্র। আকাশপথে জয়প্রকাশ নারায়ণ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর আরো পড়ুন তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ Official website of Patna Official website of the Municipal Corporation of Patna বিষয়শ্রেণী:ভারতের শহর বিষয়শ্রেণী:ভারতের পৌর এলাকা
পাটনা
রায়পুর ( ) ভারতের ছত্তিসগড় রাজ্যের রাজধানী। আরও দেখুন রায়পুর-ভিলাই-দুর্গ এক্সপ্রেসওয়ে তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ Raipur District Administration DPR Chhattisgarh DPR Raipur District বিষয়শ্রেণী:ভারতের শহর
রায়পুর, ভারত
সাঁওতাল,খেরওয়াল, সান্তাল, হড় ( মানুষ ), হর,সান্দাল, সন্থাল, সান্থাল, সান্তাড় প্রভৃতি অভিধায়ও অভিহিত হয়ে থাকে। গোত্র সাঁওতালরা বিশ্বাস করে যে, আদি মানব ও মানবী পিলচু বুড়ো (হাড়াম) ও পিলচু বুড়ির সাত জোড়া সন্তান থেকেই তাদের উদ্ভব। এজন্যই সাঁওতালরা সাতটি গোত্রে বিভক্ত। সাঁওতালি ভাষায় এ গোত্র গুলো ‘পারিস‘ নামে অভিহিত । গোত্র (পারিস) গুলো হলো- হাঁসদা সরেন টুডু কিসকু মুর্মু মাণ্ডি বাস্কে বেসরা হেম্বরম পাউরিয়া চঁড়ে বেদেয়া প্রথমে সাতটি গোত্র ও পরবর্তীকালে তাদের মধ্যে আরও পাঁচটি গোত্রের উদ্ভব ঘটে মোট বারটি গোত্র হয় । সাঁওতালদের মধ্যে টোটেম বিশ্বাস প্রচলিত আছে। প্রতিটি গোত্র তাদের পূর্বপুরুষ কিংবা গাছপালা, জীবজন্তু ও পশুপাখী ইত্যাদি নামে পরিচিত। হাঁসদা গোত্রের লোকের বিশ্বাস তাদের উদ্ভব ঘটেছে হাঁস থেকে। তাই হাঁসদা গোত্রের সাওতালদের হাঁস ভক্ষণ নিষিদ্ধ। আবার সরেন গোত্রের উৎপত্তি হরিণ থেকে তাই তাদের হরিণের মাংস খাওয়া নিষেধ। ভাষা ও নৃতাত্ত্বিক পরিচয় ভাষা এবং নৃতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যে সাঁওতালরা বাংলাদেশের অন্য অনেক নৃগোষ্ঠীর মত মঙ্গোলীয় গোত্রের নয়। এরা সাঁওতালি ভাষায় কথা বলে যে ভাষাটি অস্ট্রো-এশীয় ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্গত। এদের মধ্যম গড়নের আকৃতির শরীর, ত্বকের গাঢ় রঙ, চ্যাপ্টা নাক, পুরু ঠোঁট এবং কোঁকড়ানো চুল তাদের অস্ট্রেশীয় নৃতাত্ত্বিক উৎস নির্দেশ করে যে গোষ্ঠির মানুষ ভারতীয় উপমহাদেশে এসেছিল দ্রাবিড়দেরও আগে অস্ট্রেলিয়া এবং সন্নিহিত প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপমালা থেকে। দেহ কাঠামোর বৈশিষ্ট্যগত দিক থেকে সাঁওতালদেরকে বিশুদ্ধ প্রাক-দ্রাবিড়ীয় গোষ্ঠীর প্রতিনিধি বলে মনে করা হয়। তবে অস্ট্রেলীয় কৌমগুলোর সাথে সাঁওতালদের বেশ মিল লক্ষ করা যায় বলে তাদেরকে আদি অস্ট্রেলীয় বলা হয়। ধারণা করা হয় সুঁতার (Soontar) কথাটি থেকে সাঁওতাল শব্দের উদ্ভব। আবাস সাঁওতালরা দিনাজপুর ও রংপুর অঞ্চলে বাস করে। দিনাজপুর জেলার বীরগঞ্জ,নবাবগঞ্জ,বিরামপুর,ঘোড়াঘাট, ফুলবাড়ি, চিরিরবন্দর, কাহারোল এবং রংপুর জেলার পীরগঞ্জে সাঁওতালরা অধিক সংখ্যায় বাস করে। রাজশাহী এবং বগুড়া অঞ্চলে কিছু সংখ্যক সাঁওতাল আছে। প্রাচীনকাল থেকেই সাঁওতালরা এদেশে বসবাস করে আসছে। বাসস্থান ও পোশাক এদের ঘরগুলো ছোট এবং মাটির তৈরি। ঘরে সাধারণত কোনো জানালা থাকে না। সাঁওতালরা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে ভালোবাসে। সাঁওতাল পুরুষরা আগে সাদা থান কাপড়ের ধুতি পরতেন। বর্তমানে লুঙ্গি, ধুতি, গেঞ্জি, গামছা ব্যবহার করে। নারীরা ‘ফতা‘ নামের দুই খন্ডের কাপড় পরে থাকে। বর্তমানে 'আরা শাড়ি'ও ব্যবহার করতে দেখা যায়। পুরুষ সকলে হাতে উল্কির ছাপ দেয়। মেয়েরা রূপার তৈরি গহনা যেমন- বালা, ঝুমকা, আংটি, মল, হাঁসুলি ইত্যাদি ব্যবহার করে এবং খোঁপায় ফুল গুঁজতে ভালোবাসে। অভিভাবকদের পছন্দ অনুযায়ী সাঁওতালি সমাজে যে বিয়ে হয় তাকে সাঁওতালি ভাষায় ‘ডাঙুয়াবাপলা‘ বলে। আগের দিনে মৃতদেহ দাহ করার নিয়ম ছিল। বর্তমানে অর্থনৈতিক কারণে বাংলাদেশের সকল এলাকায় সাঁওতালরা মরদেহের কবর দেয়। খাদ্যাভ্যাস ভাত সাঁওতালদের প্রধান খাদ্য। মাছ, কাঁকড়া, শুকর, মোরগ, মুরগি,খরগোশর মাংস এদের খুবই প্রিয় খাবার। পেশা আদিকাল থেকেই কৃষিকে এরা প্রধান পেশা হিসেবে গ্রহণ করেছে। নারী পুরুষ সবাই জমিতে কাজ করে। পুরুষেরা হাল চাষ এবং নারীরা বীজ বোনা ও ফসল তোলার কাজ করে। সাঁওতালরা কৃষিকাজের যন্ত্রপাতি নিজেরা তৈরি করে। শিকার করার ব্যাপারে এদের উৎসাহ খুব বেশি। বাংলাদেশে বন জঙ্গল কমে যাওয়ার কারণে তাদের এই পেশায় সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে অনেক সাঁওতাল নারী-পুরুষ কুলি, মজুর, মাটি কাটার শ্রমিক ও অন্যান্য কাজ করে। সামাজিক আচার-অনুষ্ঠান পরিবার সাঁওতাল সমাজ পিতৃতান্ত্রিক। সম্পত্তিতে পুত্রদের অধিকার সমান, কিন্তু মেয়েদের কোন অধিকার নেই। তবে পিতা ইচ্ছা করলে মেয়েকে কিছু দিয়ে যেতে পারেন। তবে সম্পত্তি বণ্টনের ক্ষেত্রে পিতা প্রত্যেক মেয়েকে একটি করে গাভী প্রদান করে। পুত্রহীন ব্যক্তির যাবতীয় সম্পত্তির মালিকানা তার সহোদর ভাইয়েরা পেয়ে থাকে। বিবাহ প্রথা সাঁওতাল সমাজে বহিঃগোত্র বিবাহ প্রচলিত। এমনকি উপগোত্রের মধ্যেও বিবাহ হয় না। সাঁওতাল সমাজে যেকোন রকম পণপ্রথা পূর্ব কাল থেকেই নিষিদ্ধ । তাদের সমাজে ছয় প্রকার বিবাহ রীতির প্রচলন থাকলেও বর্তমানে তিন ধরনের বিবাহের প্রচলন দেখা যায়। যথা- আসলি রাজারাজি হুর কাটারা বা ইতুঃবিবাহ সাধারণত ছেলের বয়স ১৯ ও মেয়ের বয়স ১৫-১৬ হলে বিবাহের ব্যবস্থা করা হয়। এছাড়া নিরবোলক নামক বিয়ের প্রচলন সাঁওতাল সমাজে লক্ষণীয়। আসলি বিবাহ: আসলি বিবাহ সম্ভ্রান্ত পরিবার ও শিক্ষিত সমাজের মধ্যেই প্রচলিত। এ ধরনের বিবাহ কন্যার পিতা-মাতা ও আত্মীয় স্বজনের সম্মতিতেই সম্পন্ন হয়। রাজারাজি: রাজারাজি বিবাহ হল প্রেম করে বিবাহ। সাঁওতালদের প্রত্যেক গ্রামেই হাট বসে। বস্তুত কেনাবেচার উদ্দেশ্য হলেও সাঁওতাল যুবক যুবতীরা তাদের পছন্দমত প্রিয়জনদের সেখানে খোঁজ করে। মেয়েরা যখন হাটে যায়, তখন তাদের সাথে একজন গণ্যমান্য ব্যক্তি থাকে। সাঁওতালি ভাষায় তাদের যোগমাঝি বলা হয়। কোন সাঁওতাল মেয়ের যদি কোন ছেলেকে পছন্দ করে তখন সে যুবতী যোগমাঝির কাছে তা প্রকাশ করে। তারপর যোগমাঝি সে যুবককে সন্ধান করে বের করে এবং তার নিকট সব কিছু খুলে বলে। যুবকটি যদি এ ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করে, তখন যোগমাঝি ছেলে ও মেয়ের অভিভাবকের সাথে আলাপ-আলোচনা করে বিয়ের দিন ধার্য করে। হুর কাটারা: হুর কাটারা বিবাহ হচ্ছে জোর করে বিবাহ। কোন যুবক যদি কোন যুবতীকে ভালোবেসে ফেলে এবং সেই যুবতী যদি তাকে অপছন্দ করে ও বিয়েতে অসম্মতি জানায় এক্ষেত্রে যুবক তাকে পাবার জন্য হাটে যায়। সেখানে সে যুবতীর খোঁজ করতে থাকে। যুবতীর সাক্ষাৎ পেলে যুবক সুযোগ মত যদি যুবতীর কপালে সিঁদুর পরিয়ে দিতে পারে তাহলে সে যুবতীর অন্যত্র বিয়ে হতে পারে না। সাঁওতালদের মধ্যে প্রচলিত সংস্কার হল অবিবাহিত যুবতীর কপালে সিঁদুর পরিয়ে দিলে সে যুবতীর আর অন্যত্র বিয়ে হতে পারে না। তার গ্রামের মাতব্বরদের মাধ্যমে যুবককে অর্থদন্ডে দন্ডিত করা হয় এবং তা আদায় হলে যুবক যুবতীর বিবাহ কার্য সমাধা করা হয়। ধর্মাচার সাঁওতালদের পালন করা রীতিনীতি বিভিন্নতা আছে। সাঁওতালি ভাষায় দেবতাকে বলে ‘বোংগা‘। এদের প্রধান দেবতা হচ্ছে সূর্যদেব। অন্ দেবতাকে বলে ‘মারাং বুরু‘। এর প্রভাব সাঁওতালদের জীবনে সবচেয়ে বেশি। এ দেবতাকে তারা জন্ম-মৃত্যুও কারণ বলে মনে করে থাকে। সাঁওতালদের গৃহদেবতার নাম ‘আবগে বোংগা‘। সাঁওতালরা খুব আনন্দ প্রিয় মানুষ। বিভিন্ন পূজাপার্বণ ও সামাজিক উৎসবে এরা নাচ গানে মেতে ওঠে। প্রকৃতির সাথে এদের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। এরা বিভিন্ন উৎসবের আয়োজন করে থাকে। সাঁওতালদের বার্ষিক উৎসবের নাম ‘সোহরাই‘। এই উৎসবে মেয়েরা দলবদ্ধভাবে নাচে। শীতের শেষে যখন বনে ফুল ফোটে তখন এরা ‘বাহা‘ উৎসব উদযাপন করে। এদের একটি জনপ্রিয় উৎসবের নাম ‘দাসাই‘। এছাড়াও এরঃ, মাঃ মড়ে, সাকরাত প্রভৃতি উৎসব প্রকৃতির পালা বদলে সাথে সাথে পালন করে থাকে। ফাল্গুন এবং আশ্বিন মাসে, সাঁওতালিদের অসুর সম্প্রদায় দ্বারা "হুদুর দুর্গা" নামে মহিষাসুরের বার্ষিকভাবে দুইবার পূজা করা হয়। আচার অনুষ্ঠান এরা নিজস্ব সামাজিক রীতিনীতি মেনে চলে। এদের জীবনযাপন সহজ ও সরল। বর্তমানে সাঁওতালিদের ওপর বাঙালি সমাজের প্রভাব পড়েছে। এদের অনেকে শিক্ষালাভ করে আধুনিক জীবনযাপনে অভ্যস্ত হচ্ছে। সাওতালদের পালিত অনুষ্ঠানগুলো বেশ আকর্ষনিয়। এরা জাকজমকভাবে নিজেদের অনুষ্ঠানগুলো পালন করে। অনুষ্ঠানগুলো সাঁওতালি ভাষায় প্রকাশ করা হলো- বাপলা (বিবাহ), ভান্ডান (ফতে অনুষ্ঠান) সরহায় (হিন্দুদের পুশনার সময় সাধারমত এই অনুষ্ঠানটা করা হয়) বাহা পরব বারনি (বারুনি মেলা) শিল্পকলা শিল্পকলার প্রতি সাঁওতালিদের আগ্রহ রয়েছে। এরা ঢোল, দোতারা, বাঁশি, মেগো প্রভৃতি বাদ্যযন্ত্র তৈরি করে ও বাজায়। ঘরবাড়ির দেয়ালে ছবি আঁকে। হাঁড়ি কলসির গায়ে চুনকালি দিয়ে ছবি আঁকে। প্রতিপালিত দিবস সাঁওতাল বিদ্রোহ দিবস ৩০ জুন সাঁওতাল বিদ্রোহ দিবস। আজ থেকে প্রায় ১৫০ বছর আগে, ৩০শে জুন ১৮৫৫, অত্যাচারী ব্রিটিশ শাসক এবং শোষক জমিদার ও মহাজনদের বিরুদ্ধে সাঁওতালরা গণআন্দোলন শুরু করে। নিরীহ ও শান্তিপ্রিয় সাঁওতাল আদিবাসিরা ভারতবর্ষে জ্বালিয়ে দেয় প্রতিবাদের দাবানল। আদিবাসিদের অধিকার ও মযার্দা প্রতিষ্ঠায় করা সে রক্তঝরা সাঁওতাল বিদ্রোহ দিবসটি বিশেষ র‌্যালি এবং সাঁওতাল কৃষ্টিতে নৃত্যের মাধ্যমে যথাযোগ্য মর্যাদায় প্রতিপালিত হয়ে থাকে। সাঁওতালি ভাষা দিবস ২২ ডিসেম্বর, ২০০৩ সাল ভারতের সংবিধানের ৯২তম সংশোধনীর দ্বারা সাঁওতালি ভাষাসহ চারটি ভাষা সংবিধানের অষ্টম তফসিলের অন্তর্ভুক্ত হয়ে, ভারতের রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা লাভ করে। এই চারটি ভাষা হল – বোড়ো, ডোগরি, মৈথিলি ও সাঁওতালি। সারা পৃথিবীর সাঁওতালি ভাষী মানুষের জন্য এটা আনন্দের ও স্মরণীয় দিন। তখন থেকেই ভারতের সাঁওতালরা ২২ ডিসেম্বরকে সাঁওতালি ভাষা দিবস হিসেবে পালন করে আসছে। ভারত ছাড়াও বাংলাদেশ ও নেপালে বহু সংখ্যক সাঁওতাল বসবাস করে। তারাও সাঁওতালি ভাষার চর্চা করে যাচ্ছে। সাঁওতাল কৃতী ব্যক্তিত্ব সিধু কানু (সিধু মুর্মু ও কানু মুর্মু; অন্য বানানে সিধু মাঝি (? - ১৮৫৬) ও কানু মাঝি (১৮২০ - ২৩ জানুয়ারি, ১৮৫৬)) ছিলেন ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রথম দিকের সাঁওতাল বিদ্রোহের দুজন সর্বশ্রেষ্ঠ নেতা। কলিয়ান হরাম (ঊনবিংশ শতাব্দী) ছিলেন সাঁওতালদের গুরু এবং সাঁওতাল বিদ্রোহের ইতিহাসের লিপিকার। মাতলা সাঁওতাল''' (? - ১৯৩৬) ছিলেন ১৯৩০ সালের আইন অমান্য আন্দোলনের অংশগ্রহণকারী। বন্দি অবস্থায় দিনাজপুর জেলে মারা যান। তার জন্ম দিনাজপুরের কান্তাকোলে। রঘুনাথ মুর্মূ (৫ মে, ১৯০৫ – ১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮১) একজন ভাষাতত্ত্ববিদ, লেখক, নাট্যকার ও সাঁওতালি ভাষায় ব্যবহৃত "অলচিকি" লিপির উদ্ভাবক ছিলেন। চুরকা মুর্মু (২ জুলাই ১৯৫১ — ১৮ আগস্ট ১৯৭১), বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহনকারী শহীদ। আরো দেখুন সাঁওতাল বিবাহ প্রথা সাঁওতালি ভাষা সাঁওতাল বিদ্রোহ তথ্যসূত্র বিষয়শ্রেণী:পশ্চিমবঙ্গের উপজাতি বিষয়শ্রেণী:ঝাড়খণ্ডের উপজাতি বিষয়শ্রেণী:উড়িষ্যার উপজাতি বিষয়শ্রেণী:বাংলাদেশের জাতিগোষ্ঠী বিষয়শ্রেণী:সাঁওতাল
সাঁওতাল
ভারত হল ২৮টি রাজ্য ও ৮ টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল নিয়ে গঠিত একটি যুক্তরাষ্ট্রীয় রাজ্যসংঘ। এই দেশের প্রথম স্তরের প্রশাসনিক বিভাগের সংখ্যা ৩৬। রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলি আবার জেলা ও ক্ষুদ্রতর প্রশাসনিক বিভাগে বিভক্ত। ইতিহাস প্রাক্-স্বাধীনতা যুগ অতীতে ভারতীয় উপমহাদেশ শাসিত হয়েছিল ভিন্ন ভিন্ন জাতিগোষ্ঠী কর্তৃক। প্রতিটি জাতিগোষ্ঠীই এই ভূখণ্ডের প্রশাসনিক বিভাগ-সংক্রান্ত নিজস্ব নীতি কার্যকর করেছিল। ব্রিটিশ আমলে পূর্ববর্তী (মুঘল) প্রশাসনিক কাঠামোটি মোটামুটি অক্ষুণ্ণ ছিল। সেই যুগে ভারত বিভক্ত হয়েছিল একাধিক প্রেসিডেন্সি ও প্রদেশ এবং দেশীয় রাজ্যে। প্রেসিডেন্সি ও প্রদেশগুলি ব্রিটিশদের দ্বারা প্রত্যক্ষভাবে শাসিত হত। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অনুগত স্থানীয় রাজারা ছিলেন দেশীয় রাজ্যগুলির নামমাত্র শাসক। এই রাজ্যগুলির সার্বভৌমত্ব (অধিরাজত্ব) কার্যত ব্রিটিশ সম্রাটের হাতেই ন্যস্ত ছিল। ১৯৪৭–১৯৫০ তালিকা রাজ্যসমূহ ২০১৪ সালে ২রা জুন তারিখে অন্ধ্র প্রদেশকে দুইটি রাজ্যে ভাগ করা হয়; একটি হল তেলঙ্গানা এবং অবশিষ্টাংশের নাম অন্ধ্র প্রদেশ রাখা হয়। হায়দ্রাবাদ শহরটি সম্পূর্ণরূপে তেলঙ্গানার সীমানার ভেতরে পড়লেও কিছু সময়ের জন্য (সর্বোচ্চ ১০ বছর) উভয় রাজ্যের রাজধানীর দায়িত্ব পালন করবে। ২০১৭ সালের প্রথমার্ধে অন্ধ্র প্রদেশের সরকার ও বিধানসভা রাজ্যটির পরিকল্পিত নতুন রাজধানী শহর অমরাবতীতে অস্থায়ী কাঠামোসমূহের স্থানান্তর সম্পন্ন করে। দেরাদুন উত্তরাখণ্ডের অস্থায়ী রাজধানী। গৈরসৈণ শহরটিকে রাজ্যের নতুন রাজধানী শহর বানানোর পরিকল্পনা আছে। কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলসমূহ ভারতের দাবী অনুযায়ী জম্মু ও কাশ্মীরের আয়তন ২২২,২৩৬ বর্গকিলোমিটার; এর মধ্যে ১০১,৩৮৭ বর্গকিলোমিটার এলাকা ভারতীয় প্রশাসনের অধীনে পরিচালিত হচ্ছে। প্রাক্তন রাজ্যসমূহ টীকা তথ্যসূত্র বিষয়শ্রেণী:ভারতের রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল বিষয়শ্রেণী:দেশের প্রথম স্তরের প্রশাসনিক উপবিভাগ বিষয়শ্রেণী:এশিয়ার দেশের উপবিভাগ বিষয়শ্রেণী:ভারতের শহর
ভারতের রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলসমূহ
অরুণাচল প্রদেশ (হিন্দি ভাষায়: अरुणाचल प्रदेश, ইংরেজি ভাষায়: Arunachal Pradesh) উত্তর-পূর্ব ভারতে অবস্থিত ভারতের একটি অঙ্গরাজ্য। এর দক্ষিণে ভারতের অঙ্গরাজ্য আসাম, পশ্চিমে ভুটান, উত্তর ও উত্তর-পূর্বে গণচীন, এবং পূর্বে মিয়ানমার। অরুণাচল প্রদেশের আয়তন ৮৩,৭৪৩ বর্গকিলোমিটার। গণচীন অঙ্গরাজ্যটির অংশবিশেষ নিজেদের বলে দাবী করেছে। এর রাজধানী ইটানগর। ভূগোল অরুণাচল প্রদেশের ভূপ্রকৃতি দক্ষিণে পাহাড়ের পাদদেশীয় এলাকা দিয়ে শুরু হয়ে ক্ষুদ্রতর হিমালয় পর্বতমালায় উপনীত হয়েছে এবং সেখান থেকে উত্তরে তিব্বতের সাথে সীমান্তের কাছে বৃহত্তর হিমালয় পর্বতমালায় মিশেছে। ব্রহ্মপুত্র নদ (এখানে সিয়াং (Dihang)নামে পরিচিত) ও তার বিভিন্ন উপনদী তিরাপ, লোহিত, সুবর্ণসিড়ি ও ভারেলি এখানকার প্রধান নদনদী। দক্ষিণের পাহাড়ের পাদদেশীয় এলাকার জলবায়ু উপক্রান্তীয় প্রকৃতির। পার্বত্য অঞ্চলে উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে সাথে তাপমাত্রা দ্রুত হ্রাস পায়। বার্ষিক ২০০০ থেকে ৪০০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। অঙ্গরাজ্যটির উদ্ভিজ্জ ও প্রাণীজীবনে এর বিচিত্র ভূপ্রকৃতি ও জলবায়ুর প্রভাব দেখতে পাওয়া যায়। এখানে ৫০০-রও বেশি প্রজাতির অর্কিড গাছ আছে। বিস্তৃত অরণ্য উপক্রান্তীয় থেকে শুরু করে আল্পীয় ধরনের হতে পার। প্রাণীর মধ্যে বাঘ, চিতাবাঘ, হাতি, লাল পান্ডা এবং হরিণ উল্লেখযোগ্য। ২০০০ সালে প্রায় বনাঞ্চাল ছিল। জনতত্ত্ব অরুণাচল প্রদেশে ১০ লক্ষেরও বেশি লোক বাস করেন। অরুণাচল প্রদেশের ২০টির মত প্রধান তিব্বতি-বর্মী জাতির লোক বাস করেন এবং এরা প্রায় ৫০টিরও বেশি ভাষাতে কথা বলেন। এদের মধ্যে অসমিয়া ভাষা, হিন্দি ভাষা ও ইংরেজি ভাষা সার্বজনীন ভাষা হিসেবে সর্বত্র ব্যবহার করা হয়। সর্বপ্রাণবাদ এখানকার প্রধান ধর্ম, তবে বৌদ্ধ ধর্মের বিশেষ প্রভাব আছে। ১৭ শতকে নির্মিত বৌদ্ধ বিহার তাওয়াং মঠ ভারতের বৃহত্তম বৌদ্ধ মন্দিরগুলির একটি। এই মন্দিরেই তিব্বতি বৌদ্ধধর্মের ষষ্ঠ দালাই লামা জন্মগ্রহণ করেন। ভাষা ধর্ম অর্থনীতি অরুণাচল প্রদেশের অর্থনীতি মূলত কৃষিনির্ভর। ধান প্রধান শস্য; এছাড়াও যব, বজরা, গম, ডাল, আলু, আখ, ফলমূল, তেলবীজ, ইত্যাদি চাষ করা হয়। ঝুম চাষ পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়, যেখানে পাহাড়ের একটি নির্দিষ্ট অংশের সমস্ত গাছ কেটে ফেলে সেখানে কয়েক মৌসুম চাষ করা হয়, এবং এরপর চাষের জায়গা নতুন এলাকায় স্থানান্তর করা হয়। এর ফলে বনসম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হয়। অরুণাচল প্রদেশে কলকারখানার পরিমাণ স্বল্প; এখানে কাঠ কাটা, ধান ও তেলের কল, সাবান ও মোমবাতি তৈরি, রেশম, এবং হস্তশিল্প প্রচলিত। অরুণাচল প্রদেশের অরণ্য, নদী, কয়লা, তেল এবং অন্যান্য খনিজের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা এখনো পুরোপুরি সদ্ব্যবহার করা হয়নি। অংশত রুক্ষ ভূপ্রকৃতির কারণে এমনটি ঘটেছে। ১৯৯২ সালে অঙ্গরাজ্যটিকে সীমিত আকারের পর্যটনের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। অরুণাচল প্রদেশে একটি এক-কক্ষবিশিষ্ট আইনসভা আছে, যাতে আসনসংখ্যা ৬০। অঙ্গরাজ্য থেকে ভারতের জাতীয় আইনসভার নিম্নকক্ষ লোকসভায় ২ জন এবং উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় ১ জন প্রতিনিধি পাঠানো হয়। অঙ্গরাজ্যটির স্থানীয় সরকার প্রশাসন ১২টি প্রশাসনিক জেলায় বিভক্ত। ইতিহাস হিন্দু পুরাণে অঞ্চলটির উল্লেখ পাওয়া গেলেও এর প্রাচীন ইতিহাস সম্পর্কে তেমন কিছু জানা যায়নি। ১৬শ শতকে অসমের রাজারা এর কিছু অংশ দখলে নিয়েছিলেন। ১৮২৬ সালে অসম ব্রিটিশ ভারতের অংশে পরিণত হয়, কিন্তু ১৮৮০-র দশকের আগ পর্যন্ত অরুণাচল প্রদেশকে ব্রিটিশ শাসনের অধীনে আনার কোন প্রচেষ্টা নেওয়া হয়নি। ১৯১২ সালে অঞ্চলটি আসামের একটি প্রশাসনিক অঞ্চলে পরিণত হয় এবং এর নাম দেয়া হয় নর্থ ইস্টার্ন ফ্রন্টিয়ার ট্র‌্যাক্ট (North Eastern Frontier Tract সংক্ষেপে NEFT)। ১৯৫৪ সালে এটির নাম বদলে North East Frontier Agency রাখা হয়। ১৯১৩ সাল থেকেই উত্তরে তিব্বতের এর সীমান্ত নিয়ে বিবাদ রয়েছে। ব্রিটিশেরা হিমালয়ের শীর্ষরেখাকে সীমান্ত হিসেবে প্রস্তাব করেছিল, কিন্তু চীনারা তা প্রত্যাখান করে। এই প্রস্তাবিত রেখাটি ম্যাকমাহন রেখা (McMahon line) নামে পরিচিত এবং বর্তমানে এটিই কার্যত ভারত চীন সীমান্ত হিসেবে স্বীকৃত। ১৯৪৭ সালে চীন প্রায় সম্পূর্ণ অরুণাচল প্রদেশের উপর কর্তৃত্ব দাবী করে। ১৯৫৯ ও ১৯৬২ সালের মধ্যবর্তী সময়ে চীনা সেনারা বেশ কয়েকবার ম্যাকমাহন রেখা অতিক্রম করে ও সাময়িকভাবে ভারতের সীমান্ত ঘাঁটিগুলি দখল করে। ১৯৬২ সালে চীন অরুণাচল প্রদেশ থেকে পশ্চাদপসরণ করে। এরপর বহুবার সীমান্ত বিবাদটি সমাধানের চেষ্টা করা হলেও আজও কোন সমঝোতা হয়নি। ১৯৭২ সালে অঞ্চলটি অরুণাচল প্রদেশ ইউনিয়ন অঞ্চলে পরিণত হয় এবং ১৯৮৬ সালের ডিসেম্বরে একে পূর্ণাঙ্গ অঙ্গরাজ্যের মর্যাদা দেওয়া হয়। পর্যটন পরিবহন আকাশ পথে একমাত্র বিমানবন্দর, ইটানগর বিমানবন্দর নির্মাণাধীন অবস্থায় আছে। রেলপথে বর্তমানে রেলপথ ইটানগর-এর নিকটবর্তী নাহারলাগুন পর্যন্ত বিস্তৃত। রাজ্যের অপর স্টেশনটি হচ্ছে এই রুটের গুমত। একটি নতুন দিল্লি এসি সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস ও গুয়াহাটি শতাব্দী এক্সপ্রেস চলাচল করে। আরও দেখুন ঢোলা-সাদিয়া সেতু তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ বিষয়শ্রেণী:ভারতের রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল বিষয়শ্রেণী:সাতবোনী রাজ্য
অরুণাচল প্রদেশ
মধ্যপ্রদেশ (হিন্দি: मध्य प्रदेश (MP) (, , মধ্য ভারতের একটি রাজ্য। এর রাজধানী ভোপাল এবং বৃহত্তম শহর ইন্দোর। অন্যান্য বড় শহরগুলি হল গওয়ালিয়র, জবলপুর, উজ্জয়েন এবং সাগর। ভৌগলিক অবস্থানের কারণে এই রাজ্যটিকে ভারতের হৃদয় বলে অভিহিত করা হয়। মধ্যপ্রদেশ ক্ষেত্রফল অনুসারে ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম রাজ্য এবং ৭৫ মিলিয়নেরও বেশি জনসংখ্যার সাথে পঞ্চম বৃহত্তম রাজ্য। এই রাজ্যের উত্তর-পূর্বে উত্তর প্রদেশ রাজ্য, দক্ষিণ-পূর্বে ছত্তিসগড়, দক্ষিণে মহারাষ্ট্র, পশ্চিমে গুজরাট এবং উত্তর-পশ্চিমে রাজস্থান সীমানা রয়েছে। এর মোট আয়তন ৩,০৮,২৫২ বর্গ কিমি। ২০০০ সালের আগে, যখন ছত্তিশগড় মধ্য প্রদেশের অন্তর্গত ছিল, তখন মধ্য প্রদেশ ছিল ভারতের বৃহত্তম রাজ্য এবং রাজ্যের অভ্যন্তরে দু'দিকের বিন্দু সিঙ্গোলি এবং কোন্টার মধ্যে দূরত্ব ছিল ১,৫০০ কিমি। কোন্টা বর্তমানে ছত্তিসগড় রাজ্যের সুকমা জেলায় অবস্থিত। বর্তমান মধ্যপ্রদেশের আওতাভুক্ত অঞ্চলটিতে প্রাচীন অবন্তী মহাজনপদের অঞ্চল অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যার রাজধানী ছিল উজ্জয়নী (অবন্তিকা নামেও পরিচিত)। খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীতে ভারতীয় নগরায়ণের দ্বিতীয় পর্যায়ে সময়ে একটি প্রধান শহর হিসাবে গড়ে উঠেছিল। পরবর্তীকালে, এই অঞ্চলটি ভারতের প্রধান রাজবংশ দ্বারা শাসিত হয়েছিল। আঠারো শতকের গোড়ার দিকে এই অঞ্চলটি কয়েকটি ছোট ছোট রাজ্যে বিভক্ত হয়েছিল, যা ব্রিটিশদের দ্বারা দখল করা হয় এবং মধ্যপ্রদেশ, বেরার ও মধ্য ভারতীয় ইউনিয়নে অন্তর্ভুক্ত হয়। ভারতের স্বাধীনতার পরে মধ্যপ্রদেশ রাজ্যটিকে তৈরি করা হয়েছিল নাগপুর শহরকে রাজধানী হিসাবে সঙ্গে করে: এই রাজ্যে বর্তমানের মধ্যপ্রদেশের দক্ষিণ অংশ এবং আজকের মহারাষ্ট্রের উত্তর-পূর্ব অংশ অন্তর্ভুক্ত ছিল। ১৯৫৬ সালে, এই রাজ্য পুনর্গঠিত হয় এবং এর অংশগুলি মধ্য ভারত, বিন্ধ্যপ্রদেশ এবং ভোপাল রাজ্যের সাথে একত্রিত হয়ে নতুন মধ্য প্রদেশ রাজ্য গঠনের জন্য মারাঠি-ভাষী বিদর্ভ অঞ্চলটিকে তৎকালীন বোম্বে রাজ্যে একীভূত করা হয়েছিল। এই রাজ্যটি ২০০০ সালের পূর্ব পর্যন্ত ভারতের বৃহত্তম অঞ্চলে ছিল। ২০০০ সালে রাজ্যের দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলকে নিয়ে ছত্তিশগড় নামে একটি পৃথক রাজ্য হিসাবে তৈরি করা হয়। মোট ₹৮.০৯ লক্ষ কোটি টাকা (১২০ বিলিয়ন কোটি ডলার) দেশীয় উৎপাদন এবং ৯০,০০০ টাকার (মার্কিন ডলার ১,৩০০) মাথাপিছু জিডিপি'র সাথে মধ্যপ্রদেশের অর্থনীতি ভারতের রাজ্যগুলির মধ্যে দশম বৃহত্তম রাজ্য অর্থনীতি। মানব উন্নয়ন সূচকে ভারতের রাজ্যগুলির মধ্যে মধ্যপ্রদেশ ছাব্বিশতম স্থানে রয়েছে। রাজ্যটি খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ এবং এই রাজ্যে ভারতের মধ্যে হীরা এবং তামার বৃহত্তম মজুদ রয়েছে। মধ্যপ্রদেশের ৩০% এরও বেশি অঞ্চল বনভূমি দ্বারা আচ্ছাদিত রয়েছে। পর্যটন শিল্পে যথেষ্ট প্রবৃদ্ধি হয়েছে, ২০১০-১১ সালে রাষ্ট্রীয় পর্যটন পুরষ্কারে শীর্ষে স্থান অধিকার করে। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, রাজ্যের জিডিপি প্রবৃদ্ধি জাতীয় গড়েরও বেশি। ভৌগোলিক অবস্থান ২০০০ সালের ১ নভেম্বর এই রাজ্য ভেঙে ছত্তীসগড় রাজ্যের উদ্ভবের পূর্ব পর্যন্ত আয়তনের বিচারে মধ্যপ্রদেশ ছিল ভারতের বৃহত্তম রাজ্য। মধ্যপ্রদেশ চতুর্দিকে ভারতীয় রাজ্য উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান, গুজরাট, মহারাষ্ট্র ও ছত্তীসগঢ় দ্বারা পরিবেষ্টিত। রাজনীতি রাজ্য পুনর্গঠন আইন, ১৯৫৬ অর্থনীতি ২০১৬-১৭ সালের হিসেব অনুযায়ী ডাল উৎপাদনে এই রাজ্য ভারতে ১ম । প্রায় ৬.২ মিলিয়ন টন ডাল উৎপাদন হয় । রাজ্যের শহরগুলো খেলাধুলা ক্রিকেট রাজ্যের জনপ্রিয় খেলা। ইন্দোর-এ অবস্থিত হোলকার স্টেডিয়াম রাজ্যের প্রধান আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম। এছাড়া গওয়ালিয়র-এ রয়েছে ক্যাপ্টেন রূপ সিং স্টেডিয়াম । পর্যটন অমরকণ্টক ঘুঘুয়া জাতীয় উদ্যান ভারতবর্ষের একমাত্র জীবাশ্ম পার্ক । আমেরিকার অ্যারিজোনার শিলীভূত বন জাতীয় উদ্যান ছাড়া পৃথিবীতে এটাই বোধহয় একমাত্র ‘অরণ্য’ যা কয়েক মিলিয়ন বছর আগে জীবাশ্ম হয়ে ‘রকগার্ডেন’-এ রূপান্তরিত হয়েছে। কার্বন ডেটিং পরীক্ষায় জানা গিয়েছে, প্রায় ৬৫ মিলিয়ন বছর আগে এই জায়গায় ক্রান্তীয় চির সবুজ বৃক্ষের বিশাল এক জঙ্গল ছিল। ঘুঘুয়া এবং পার্শ্ববর্তী গ্রাম উমারিয়া নিয়ে প্রায় ২৭ হেক্টর জায়গা জুড়ে এই জীবাশ্ম পার্কের ব্যাপ্তি। এখনও অবধি এই পার্কে ৩১টি প্রজাতির উদ্ভিদ শনাক্ত করা গিয়েছে। তাদের বেশির ভাগই পাম ও দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদ। ইউক্যালিপটাস, খেজুর, কলা, রুদ্রাক্ষ, জাম— এই সব ক্রান্তীয় সবুজ গাছকেই চিহ্নিত করে রাখা হয়েছে। রয়েছে ছোট বড় ইউক্যালিপটাসের জীবাশ্ম-গুঁড়ি। বিশাল সেই গুঁড়ির মধ্যে এখনও দেখা যায় গাছের বয়স-রেখা। স্থানীয়দের কাছে এই অঞ্চল ‘পাত্থর কা পেড়’ অর্থাত্ পাথরের গাছ নামেই পরিচিত। একটু উল্টেপাল্টে নিলেই— গাছ-পাথর। ভেদাঘাট সাঁচী ভীমবেটকা প্রস্তরক্ষেত্র মান্ডু পরিবহন আকাশপথে রাজ্যে ৫টি বিমানবন্দর রয়েছে। যথা : দেবী অহল্যা বাঈ হোলকার বিমানবন্দর রাজা ভোজ বিমানবন্দর জব্বলপুর বিমানবন্দর গোয়ালিয়র বিমানবন্দর খাজুরাহো বিমানবন্দর তথ্যপঞ্জি Chishti, R̥ta Kapur, Martand Singh, and Amba Sanyal. Saris of India: Madhya Pradesh. New Delhi: Wiley Eastern & Amr Vastra Kosh, 1989. Gyanendra Singh. Farm Mechanization in Madhya Pradesh. Bhopal: Central Institute of Agricultural Engineering, 2000. Madhya Pradesh (India). The Madhya Pradesh Human Development Report 2002: Using the Power of Democracy for Development. [Bhopal: Govt. of Madhya Pradesh, 2002. Parmar, Shyam. Folk Tales of Madhya Pradesh. Folk tales of India series, 12". New Delhi: Sterling Publishers, 1973. Rag, Pankaj, and O. P. Misra. Masterpieces of Madhya Pradesh. Bhopal: Directorate of Archaeology, Archives & Museums, Government of Madhya Pradesh, 2005. Rag, Pankaj. Vintage, Madhya Pradesh: A Collection of Old Photographs. Bhopal: Madhya Pradesh Madhyam jointly with the Directorate of Archaeology, Archives, and Museums, 2005. Sampath, M. D., H. V. Trivedi, and Mandan Trivedi. Epigraphs of Madhya Pradesh. New Delhi: Archaeological Survey of India, 2001. Sati, Vishwambhar Prasad. Madhya Pradesh, a Geo-Economic Appraisal. Delhi: Abhijeet, 2004. Shah, Shampa, and Aashi Manohar. Tribal Arts and Crafts of Madhya Pradesh. Living traditions of India. Ahmedabad: Mapin Pub./in Association with Vanya Prakashan, Bhopal, 1996. Shrivastava, Divya. The Development of Scheduled Tribes in Madhya Pradesh. New Delhi: Gyan Pub. House, 2000. Singh, R. V. Dairy Co-Operatives and Development: A Study of Tribal Dairy Co-Operatives in Madhya Pradesh''. Delhi: Kalpaz Publications, 2006. বহিঃসংযোগ MP Government Portal M P FOrest MP Ecotourism Development Board MP Tourism MP Police MP Transport MP Info A Panorama of Madhya Pradesh Madhya Pradesh The Heart of India (outdated, but still informative) Investment - Industry / MP Industry Madhya Pradesh News Website News From Madhya Pradesh বিষয়শ্রেণী:ভারতের রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল বিষয়শ্রেণী:মধ্যপ্রদেশ বিষয়শ্রেণী:১৯৫৬-এ প্রতিষ্ঠিত রাজ্য ও অঞ্চল
মধ্যপ্রদেশ
তামিলনাড়ু ( তাম্যিল্ড়্‌ নাড়্যি আ-ধ্ব-ব: [t̪ɐmɨɻ n̪aːɽɯ]) ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের ২৮টি রাজ্যের অন্যতম। এই রাজ্যের রাজধানী চেন্নাই (পূর্বতন মাদ্রাজ)। তামিলনাড়ু ভারতীয় উপদ্বীপের সর্বদক্ষিণে অবস্থিত। এই রাজ্যের সীমানায় পুদুচেরি, কেরল, কর্ণাটক ও অন্ধ্রপ্রদেশ অবস্থিত। তামিলনাড়ুর ভৌগোলিক উত্তর সীমায় পূর্বঘাট, পশ্চিম সীমায় নীলগিরি, আন্নামালাই পর্বত ও পালঘাট, পূর্ব সীমায় বঙ্গোপসাগর, দক্ষিণ পূর্ব সীমায় মান্নার উপসাগর ও পক প্রণালী এবং দক্ষিণে ভারত মহাসাগর অবস্থিত। আয়তনের বিচারে তামিলনাড়ু ভারতের একাদশ (এই রাজ্যের আয়তন গ্রিসের সমান) এবং জনসংখ্যার বিচারে সপ্তম বৃহত্তম রাজ্য। অন্যদিকে এই রাজ্য ভারতের জিডিপি-র পঞ্চম বৃহত্তম অবদানকারী এবং ভারতের সর্বাপেক্ষা অধিক পরিমাণ নগরায়িত রাজ্য। ভারতের সর্বাধিক সংখ্যক বাণিজ্যিক সংস্থা (১০.৫৬%) এই রাজ্যে অবস্থিত। যা ৬% জনসংখ্যার ভাগের তুলনায় অনেকটাই বেশি। প্রায় ৫০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ থেকে তামিলনাড়ু ভূখণ্ড তামিল জাতির আবাসস্থল। প্রায় ১৫০০-২০০০ বছর ধরে এই অঞ্চলের ধ্রুপদি ভাষা তামিল বিভিন্ন লেখ ও সাহিত্যে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তামিলনাড়ু প্রাকৃতিক সম্পদ, দ্রাবিড় স্থাপত্যের বিশালাকার হিন্দু মন্দির, শৈলশহর, সমুদ্র সৈকত, বিভিন্ন ধর্মের তীর্থস্থানে পরিপূর্ণ। এই রাজ্যে আটটি ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান রয়েছে। প্রশাসনিক বিভাগ জনউপাত্ত এই রাজ্য ভারতের ৭ম জনবহুল রাজ্য। ভারতীয় রাজ্যগুলির মধ্যে সর্বনিম্ন জন্মহার এই রাজ্যের। এখানে চিকিৎসকের সংখ্যা ১,০৮,৩৬৫ যা ভারতীয় রাজ্যগুলির মধ্যে সর্বোচ্চ। অর্থনীতি এই রাজ্য আয়কর প্রদানে দেশের মধ্যে ৪থ সর্বোচ্চ অবদান রাখে। প্রায় ৭৪ হাজার কোটি রুপি আয়কর আদায় হয় এখানথেকে। মোটরগাড়ি শিল্প এই রাজ্য ভারতের সর্ববৃহৎ মোটরগাড়ি শিল্পঅঞ্চল। ভারতের প্রায় ১/৩ অংশ মুনাফা এই রাজ্য থেকে আসে। পোল্ট্রি পোল্ট্রি জাত দ্রব্য উৎপাদনে এই রাজ্য ভারতে শীর্ষ স্থানে রয়েছে। বার্ষিক প্রায় ১২ কোটি দ্রব্য উৎপাদিত হয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রাজ্যের তিরুচ্চিরাপল্লী-এ একটি ১৯৬৪ সালে প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রীয় প্রযুক্তিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ধর্ম সংস্কৃতি ভাষা খাদ্যাভাস ইডলি , দোসা এখানকার প্রধান খাবার। এছাড়া বিবিধ মিষ্টি খাবারের চল রয়েছে। বিয়ে, অন্নপ্রাশনের মত নানা অনুষ্ঠানে এই মিষ্টি অত্যন্ত সমাদৃত। খেলাধুলা ক্রিকেট এম. এ. চিদাম্বরম স্টেডিয়াম এই রাজ্যের প্রধান আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগ-এ চেন্নাই সুপার কিংস দল এই রাজ্যের প্রতিনিধিত্ব করে। ফুটবল মেরিনা এরিনা এই রাজ্যের প্রধান ফুটবল স্টেডিয়াম। বর্তমানে ইন্ডিয়ান সুপার লীগ এর চেন্নাই দলের ম্যাচ এখানে অনুষ্ঠিত হয়। পরিবহণ আকাশপথে রাজ্যে ৪টি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর রয়েছে। চেন্নাই (৩.৬ কিমি রানওয়ে) , কোয়েম্বাটুর (৩.১ কিমি রানওয়ে) , তিরুচ্চিরাপল্লী (২.৪ কিমি রানওয়ে) এবং মাদুরাই (২.২ কিমি রানওয়ে) । রেল দক্ষিণ রেল-এর সদর দপ্তর এই রাজ্যের চেন্নাই শহরে অবস্থিত। চিত্রশালা তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ Tamil Nadu Government Website বিষয়শ্রেণী:ভারতের রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল বিষয়শ্রেণী:তামিলনাড়ু বিষয়শ্রেণী:১৯৫০-এ প্রতিষ্ঠিত রাজ্য ও অঞ্চল
তামিলনাড়ু
থাম্ব|250px|রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলার অধিকার আদায়ে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় আয়োজিত মিছিল বাংলা ভাষা আন্দোলন ছিল ১৯৪৭ থেকে ১৯৫৬ পর্যন্ত তৎকালীন পূর্ব বাংলায় (বর্তমান বাংলাদেশে) সংঘটিত একটি সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক আন্দোলন। মৌলিক অধিকার রক্ষাকল্পে বাংলা ভাষাকে ঘিরে সৃষ্ট এ আন্দোলনের মাধ্যমে তদানীন্তন পাকিস্তান অধিরাজ্যের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গণদাবির বহিঃপ্রকাশ ঘটে। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিতে এ আন্দোলন চূড়ান্ত রূপ ধারণ করলেও, বস্তুত এর বীজ রোপিত হয়েছিল বহু আগে; অন্যদিকে, এর প্রতিক্রিয়া এবং ফলাফল ছিল সুদূরপ্রসারী। ১৯৪৭ সালে দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ব্রিটিশ ভারত ভাগ হয়ে পাকিস্তান অধিরাজ্য ও ভারত অধিরাজ্য নামক দুটি স্বাধীন রাষ্ট্রের উদ্ভব হয়। পাকিস্তানের ছিল দুইটি অংশ: পূর্ব বাংলা (১৯৫৫ সালে পুনর্নামাঙ্কিত পূর্ব পাকিস্তান) ও পশ্চিম পাকিস্তান। প্রায় দুই হাজার কিলোমিটারের অধিক দূরত্বের ব্যবধানে অবস্থিত পাকিস্তানের দুটি অংশের মধ্যে সাংস্কৃতিক, ভৌগোলিক ও ভাষাগত দিক থেকে অনেকগুলো মৌলিক পার্থক্য বিরাজমান ছিল। ১৯৪৮ সালে পাকিস্তান অধিরাজ্য সরকার ঘোষণা করে যে, উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা। এ ঘোষণার প্রেক্ষাপটে পূর্ব বাংলায় অবস্থানকারী বাংলাভাষী সাধারণ জনগণের মধ্যে গভীর ক্ষোভের জন্ম হয় ও বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। কার্যত পূর্ব বাংলার বাংলাভাষী মানুষ আকস্মিক ও অন্যায্য এ সিদ্ধান্তকে মেনে নিতে পারেনি এবং মানসিকভাবে মোটেও প্রস্তুত ছিল না। ফলস্বরূপ বাংলাভাষার সম-মর্যাদার দাবিতে পূর্ব বাংলায় আন্দোলন দ্রুত দানা বেঁধে ওঠে। আন্দোলন দমনে পুলিশ ১৪৪ ধারা জারি করে ঢাকা শহরে মিছিল, সমাবেশ ইত্যাদি বেআইনি ও নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি (৮ ফাল্গুন ১৩৫৮) এ আদেশ অমান্য করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু সংখ্যক ছাত্র ও প্রগতিশীল কিছু রাজনৈতিক কর্মী মিলে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন। মিছিলটি ঢাকা মেডিকেল কলেজের কাছাকাছি এলে পুলিশ ১৪৪ ধারা অবমাননার অজুহাতে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলিবর্ষণ করে। গুলিতে নিহত হন বাদামতলী কমার্শিয়াল প্রেসের মালিকের ছেলে রফিক, সালাম, এম. এ. ক্লাসের ছাত্র বরকত ও আব্দুল জব্বারসহ আরও অনেকে। এছাড়া ১৭ জন ছাত্র-যুবক আহত হয়। শহীদদের রক্তে রাজপথ রঞ্জিত হয়ে ওঠে। শোকাবহ এ ঘটনার অভিঘাতে সমগ্র পূর্ব বাংলায় তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। ২১ ফেব্রুয়ারির ছাত্র হত্যার প্রতিবাদে সারাদেশে বিদ্রোহের আগুন দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠে। ২২ ও ২৩ ফেব্রুয়ারি ছাত্র, শ্রমিক, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষক ও সাধারণ জনতা পূর্ণ হরতাল পালন করে এবং সভা-শোভাযাত্রাসহকারে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে। ২২ ফেব্রুয়ারি পুলিশের গুলিতে শহীদ হন শফিউর রহমান শফিক, রিক্সাচালক আউয়াল এবং এক কিশোর। ২৩ ফেব্রুয়ারি ফুলবাড়িয়ায় ছাত্র-জনতার মিছিলেও পুলিশ অত্যাচার-নিপীড়ন চালায়। এ নির্লজ্জ, পাশবিক, পুলিশি হামলার প্রতিবাদে মুসলিম লীগ সংসদীয় দল থেকে সেদিনই পদত্যাগ করেন। ভাষা আন্দোলনের শহীদ স্মৃতিকে অম্লান করে রাখার জন্য মেডিকেল কলেজ হোস্টেল প্রাঙ্গণে রাতারাতি ছাত্রদের দ্বারা গড়ে ওঠে শহীদ মিনার, যা ২৪ ফেব্রুয়ারি উদ্বোধন করেন শহীদ শফিউর রহমানের পিতা। ২৬ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে শহীদ মিনারের উদ্বোধন করেন দৈনিক আজাদ পত্রিকার সম্পাদক জনাব আবুল কালাম শামসুদ্দীন। ক্রমবর্ধমান গণআন্দোলনের মুখে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার শেষ পর্যন্ত নতি স্বীকার করতে বাধ্য হয় এবং ১৯৫৪ সালের ৭ই মে পাকিস্তান গণপরিষদে বাংলা অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে গৃহীত হয়। ১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের প্রথম সংবিধান প্রণীত হলে ২১৪ নং অনুচ্ছেদে বাংলা ও উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে উল্লিখিত হয়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হলে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলা প্রবর্তিত হয়। সর্বস্তরে বাংলার ব্যবহার নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সরকার ১৯৮৭ সালে বাংলা ভাষা প্রচলন আইন জারি করে। ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কো বাংলা ভাষা আন্দোলন, মানুষের ভাষা এবং কৃষ্টির অধিকারের প্রতি সম্মান জানিয়ে ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে যা বৈশ্বিক পর্যায়ে সাংবার্ষিকভাবে গভীর শ্রদ্ধা ও যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে উদযাপন করা হয়। উদযাপন right|150px|thumb|ভাষা শহীদদের স্মরণে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে স্থাপিত মোদের গরব ভাস্কর্য। ১৯৫৩ সাল থেকে প্রতি বছর ২১ ফেব্রুয়ারি তারিখে মহান ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানানো হয়। এ দিন প্রত্যুষে সর্বস্তরের মানুষ খালি পায়ে প্রভাতফেরীতে অংশগ্রহণ করে এবং শহীদ মিনারে গিয়ে গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন ও পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে। সারাদিন মানুষ শোকের চিহ্নস্বরূপ কালো ব্যাজ ধারণ করে। এছাড়া আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ইত্যাদির মাধ্যমে ভাষা আন্দোলনের স্মৃতি তর্পণ করা হয় এবং ভাষা আন্দোলনের শহীদদের আত্মার মাগফিরাত ও শান্তি কামনা করা হয়। ১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর থেকে দিনটি কখনো জাতীয় শোক দিবস, কখনোবা জাতীয় শহীদ দিবস হিসাবে রাষ্ট্রীয়ভাবে উদযাপিত হয়ে আসছে। ২০০১ সাল থেকে দিবসটি উদযাপিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে। বাংলাদেশে এদিনে সরকারি ছুটি। বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরা হয়। দৈনিক সংবাদপত্রসমূহে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হয়। বাংলা একাডেমী প্রাঙ্গণে আয়োজিত অমর একুশে গ্রন্থমেলা অনুষ্ঠিত হয় পুরো ফেব্রুয়ারি মাস জুড়ে। বাংলাদেশ সরকার বাংলা ভাষা আন্দোলনকে ঘিরে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের একুশে পদক প্রদান করে। পটভূমি বর্তমানের পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ রাষ্ট্র দুটি পূর্বে ব্রিটিশ শাসনাধীন অবিভক্ত ভারতবর্ষের অন্তর্ভুক্ত ছিল। ঊনবিংশ শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে উর্দু ভাষাটি কিছু সংখ্যক মুসলিম রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও ধর্মীয় নেতা স্যার খাজা সলিমুল্লাহ, স্যার সৈয়দ আহমদ খান, নবাব ওয়াকার-উল-মুলক মৌলভী‎‎ এবং মৌলভী আবদুল হক প্রমুখদের চেষ্টায় ভারতীয় মুসলমানদের লিঙ্গুয়া ফ্রাঙ্কায় উন্নীত হয়। উর্দু একটি ইন্দো-আর্য ভাষা, যা ইন্দো-ইরানীয় ভাষাগোষ্ঠীর সদস্য। এ ভাষাটি আবার ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা-পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। উর্দু ভাষাটি অপভ্রংশের (মধ্যযুগের ইন্দো-আর্য ভাষা পালি-প্রাকৃতের সর্বশেষ ভাষাতাত্ত্বিক অবস্থা) ওপর ফার্সি, আরবি এবং তুর্কির ঘনিষ্ঠ প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে দিল্লি সুলতানাত ও মুঘল সাম্রাজ্যের সময়ে দক্ষিণ এশিয়ায় বিকশিত হয়। এর পারসিক-আরবি লিপির কারণে উর্দুকে ভারতীয় মুসলমানদের ইসলামী সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হত; যেখানে হিন্দি এবং দেবনাগরী লিপিকে হিন্দুধর্মের উপাদান বিবেচনা করা হত। উর্দুর ব্যবহার ক্রমেই উত্তর ভারতের মুসলমানদের মধ্যে জনপ্রিয়তা লাভ করতে থাকে, কিন্তু বাংলার (ব্রিটিশ ভারতের পূর্বাঞ্চলের একটি প্রদেশ) মুসলমানেরা বাংলা ভাষাকে তাদের প্রধান ভাষা হিসেবে ব্যবহারেই অভ্যস্ত ছিল। বাংলা পূর্বাঞ্চলীয় মধ্য ইন্দো ভাষাসমূহ থেকে উদ্ভূত একটি পূর্বাঞ্চলীয় ইন্দো-আর্য ভাষা, যা বাংলার নবজাগরণের সময়ে বিপুল বিকাশ লাভ করে। উনিশ শতকের শেষভাগ থেকেই মুসলিম নারী শিক্ষার অগ্রদূত বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন বাংলা ভাষায় সাহিত্য চর্চা শুরু করেন এবং আধুনিক ভাষা হিসেবে বাংলার বিস্তার তখন থেকেই বিকশিত হয়। বাংলা ভাষার সমর্থকরা ভারত ভাগের পূর্বেই উর্দুর বিরোধিতা শুরু করেন, যখন ১৯৩৭ সালে মুসলিম লীগের লক্ষ্মৌ অধিবেশনে বাংলার সভ্যরা উর্দুকে ভারতের মুসলিমদের লিঙ্গুয়া ফ্রাঙ্কা মনোনয়নের প্রস্তাবটি প্রত্যাখ্যান করেন। মুসলিম লীগ ছিল ব্রিটিশ ভারতের একটি রাজনৈতিক দল, যা ভারত বিভাজনের সময় পাকিস্তানকে একটি মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। আবার এদিকে ১৯৩৭ সালে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ প্রস্তাব করে ও সেটার বিরোধিতা করেন বাঙালিদের নেতা শেরে বাংলা এ.কে. ফজলুল হক এটার বিরোধিতা করেন। কিন্তু আবার বিতর্কটি শুরু হয় যখন পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রের জন্ম নিশ্চিত হয়। ১৯৪৭ সালের ১৭ই মে তারিখে খলীকুজ্জমান ও জুলাই মাসে আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ডক্টর জিয়াউদ্দিন আহমেদ উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষা করার প্রস্তাব প্রদান করেন। এই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ছিলেন ডক্টর মুহাম্মাদ শহীদুল্লাহ ও মুহাম্মদ এনামুল হকসহ বেশ ক'জন বুদ্ধিজীবী প্রবন্ধ লিখে প্রতিবাদ জানান৷ ১৯৪৭ সালের ডিসেম্বর মাসে কারাচীতে অনুষ্ঠিত এক শিক্ষা সম্মেলনে উর্দু পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষা করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যার ফলে বাংলায় শুরু হয় তীব্র প্রতিবাদ৷ ১৯৪৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান গণপরিষদ সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত গণপরিষদে উর্দু ও ইংরেজির পাশাপাশি বাংলা ব্যবহারের দাবি জানান। তার দাবি অগ্রাহ্য হয়। ফলে ২৬শে ফেব্রুয়ারি ঢাকায় ধর্মঘট পালিত হয়। ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে "সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ" পুনর্গঠিত হয়েছিল৷ এবং ১১ মার্চ সাধারণ ধর্মঘট পালিত হয় এবং বাংলা ভাষা দাবি দিবস ঘোষণা দেওয়া হয়। ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠিত পূর্ব পাকিস্তানের মুসলিম ছাত্রলীগ এই কর্মসূচি পালনে বিশিষ্ট ভুমিকা পালন করে। শেখ মুজিব, শামসুল হক, অলি আহাদসহ ৬৯ জনকে গ্রেপ্তার করলে ঢাকায় ১৩-১৫ মার্চ ধর্মঘট পালিত হয়। এ অবস্থায় বাধ্য হয়ে পুর্ব পাকিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন ১৫ই মার্চ ৮ দফা চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। চুক্তিগুলো ছিল- ভাষার প্রশ্নে গ্রেপ্তার করা সবাইকে মুক্তি প্রদান করা হবে। পুলিশি অত্যাচারের বিষয়ে তদন্ত করে একটি বিবৃতি প্রদান করা হবে।থাম্ব|কোলকাতা ভাষা শহীদ মিনার বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্র ভাষা করার জন্য পূর্ব বাংলার আইন পরিষদে একটি বিশেষ প্রস্তাব উত্থাপন করা হবে। সংবাদপত্রের উপর হতে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হবে। আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না। ২৯ ফেব্রুয়ারি হতে জারিকৃত ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার করতে হবে। পূর্ব বাংলার সরকারি ভাষা হিসাবে ইংরেজি উঠে যাবার পর বাংলাকে সরকারি ভাষা হিসাবে প্রবর্তন করা হবে। রাষ্ট্র ভাষা আন্দোলন " রাষ্ট্রের দুশমনদের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয় নাই" এই মর্মে মুখ্যমন্ত্রী ভুল স্বীকার করে বক্তব্য দিবেন। পাকিস্তানের গর্ভনর জেনারেল মুহাম্মাদ আলী জিন্নাহ ১৯৪৮ সালের ১৯ মার্চ ঢাকায় আসেন৷ ২১ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঘোষণা দেন " উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্র ভাষা। "। এরপর ২৪ মার্চ তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একই ঘোষণা দিলে ছাত্ররা তার উক্তির চরম প্রতিবাদ জানায়। তবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এর ব্যতিক্রম হয় নি। আন্দোলনের সূচনা thumb|ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশশাসিত অঞ্চলগুলো ১৯৪৭ এবং ১৯৪৮ সালে স্বাধীনতা লাভ করে চারটি সার্বভৌম রাষ্ট্রে পরিণত হয়: ভারত, বার্মা (বর্তমান মায়ানমার), সিংহল (বর্তমান শ্রীলঙ্কা) এবং পাকিস্তান (যার মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানও অন্তর্ভুক্ত ছিল, যা অধুনা বাংলাদেশ নামে পরিচিত)। ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের পর পূর্ব পাকিস্তানের (পূর্ব বাংলা হিসেবেও পরিচিত) বাংলাভাষী ৪ কোটি ৪০ লক্ষ মানুষ ৬ কোটি ৯০ লাখ জনসংখ্যাবিশিষ্ট নবগঠিত পাকিস্তানের নাগরিকে পরিণত হয়। কিন্তু পাকিস্তান সরকার, প্রশাসন এবং সামরিক বাহিনীতে পশ্চিম পাকিস্তানিদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছিল। ১৯৪৭ সালে করাচীতে অনুষ্ঠিত জাতীয় শিক্ষা সম্মেলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণাপত্রে উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ব্যবহারের সুপারিশসহ প্রচারমাধ্যম ও বিদ্যালয়ে কেবলমাত্র উর্দু ব্যবহারের প্রস্তাব করা হয়। তাৎক্ষণিকভাবে এ প্রস্তাবের বিরোধিতা ও প্রতিবাদ জানানো হয়। ওই সমাবেশে বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা এবং পূর্ব পাকিস্তানে শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহারের প্রবল দাবি উত্থাপন করা হয়। কিন্তু পাকিস্তান পাবলিক সার্ভিস কমিশন বাংলাকে তাদের অনুমোদিত বিষয়তালিকা থেকে বাদ দেয় ও সাথে সাথে মুদ্রা এবং ডাকটিকেট থেকেও বাংলা অক্ষর বিলুপ্ত করে। কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ফজলুর রহমান মালিক উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা বানানোর জন্যে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। পূর্ব পাকিস্তানে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয় এবং ১৯৪৭ সালের ৮ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে ছাত্রদের একটি বিশাল সমাবেশে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদাদানের আনুষ্ঠানিক দাবি উত্থাপন করা হয়। দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ছাত্ররা ঢাকায় মিছিল এবং সমাবেশের আয়োজন করে। নেতৃস্থানীয় বাঙালি পণ্ডিতগণ উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার বিপক্ষে মত দেন। পাকিস্তানের কোনো অংশেই উর্দু স্থানীয় ভাষা ছিল না বলে উল্লেখ করেছেন ভাষাবিদ মুহম্মদ শহীদুল্লাহ। তিনি বলেন যে, “আমাদের যদি একটি দ্বিতীয় রাষ্ট্রভাষা নির্ধারণ করার প্রয়োজন হয়, তবে আমরা উর্দুর কথা বিবেচনা করতে পারি।” সাহিত্যিক আবুল মনসুর আহমেদ বলেছেন যে, উর্দুকে যদি রাষ্ট্রভাষা করা হয় তবে পূর্ব পাকিস্তানের শিক্ষিত সমাজ ‘নিরক্ষর’ এবং সকল সরকারি পদের ক্ষেত্রেই ‘অনুপযুক্ত’ হয়ে পড়বে। ১৯৪৭ সালের ডিসেম্বরের শেষের দিকে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার সমর্থনে প্রথম রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হয়। তমদ্দুন মজলিশের অধ্যাপক নূরুল হক ভূঁইয়া এই কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন। পরবর্তীতে সংসদ সদস্য সামসুল হক আহ্বায়ক হয়ে নতুন কমিটি গঠন করেন এবং বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষে কার্যক্রম আরও জোরদার করেন। গণপরিষদে ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের রাষ্ট্রভাষার দাবি ১৯৪৮ সালের ২৫শে ফেব্রুয়ারি তারিখে পাকিস্তান গণপরিষদে ইংরেজি ও উর্দুর পাশাপাশি সদস্যদের বাংলায় বক্তৃতা প্রদান এবং সরকারি কাজে বাংলা ভাষা ব্যবহারের জন্য একটি সংশোধনী প্রস্তাব উত্থাপন করেন গণপরিষদ সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত। ইংরেজিতে প্রদত্ব বক্তৃতায় বাংলাকে অধিকাংশ জাতিগোষ্ঠীর ভাষা হিসেবে উল্লেখ করে ধীরেন্দ্রনাথ বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেয়ার দাবি তোলেন। এছাড়াও সরকারি কাগজে বাংলা ভাষা ব্যবহার না করার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানান তিনি। সংসদ সদস্য প্রেমহরি বর্মন, ভূপেন্দ্র কুমার দত্ত এবং শ্রীশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় তার এ প্রস্তাবকে স্বাগত জানান। তারা পূর্ব পাকিস্তান থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ছিলেন এবং তাদের এ সমর্থনের মাধ্যমে মূলত পূর্ব পাকিস্তানের স্বাভাবিক মতামতই প্রতিফলিত হয়েছিল। তমিজুদ্দিন খানের নেতৃত্বে পরিষদের সকল মুসলমান সদস্য (সবাই মুসলিম লীগের) একযোগে এ প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন। খাজা নাজিমুদ্দিন এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করে বক্তৃতা দেন। তিনি বলেন যে, “পূর্ব বাংলার অধিকাংশ মানুষ চায় রাষ্ট্রভাষা উর্দু হোক।” পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলি খান এ প্রস্তাবটিকে পাকিস্তানে বিভেদ সৃষ্টির অপচেষ্টা বলে উল্লেখ করেন। উর্দুকে লক্ষ কোটি মুসলমানের ভাষা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা কেবলমাত্র উর্দুই হতে পারে” । অনেক বিতর্কের পর সংশোধনীটি ভোটে বাতিল হয়ে যায়। সংসদীয় দলের আপত্তির কারণে অনেক বাঙালি মুসলমান সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত উত্থাপিত সংশোধনীটিকে সমর্থন করতে পারেননি। প্রথম প্রতিক্রিয়া গণপরিষদের ঘটনার প্রথম প্রতিক্রিয়া শুরু হয় ঢাকায়। ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) তৎকালীন জগন্নাথ কলেজ ছাত্রদের উদ্যোগে শহরের অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্ররা ক্লাস বর্জন করে। ২৯ ফেব্রুয়ারি তারিখেও ধর্মঘট ঘোষিত হয় এবং ঐদিন সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানে প্রতিবাদ দিবস ও ধর্মঘট পালন করা হয়। সরকারের প্ররোচনায় পুলিশ মিছিলে লাঠিচার্জ করে এবং অনেক নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করে। তমদ্দুন মজলিস ঐসময়ে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলে ছাত্র-বুদ্ধিজীবিদের এক সমাবেশ ঘটে। ঐ সভায় দ্বিতীয়বারের মত রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হয় এবং শামসুল আলম আহ্বায়ক নির্বাচিত হন। এ পরিষদে অন্যান্য সংগঠনের দুই জন করে প্রতিনিধি রাখার ব্যবস্থা করা হয়। সেখান থেকে ছাত্ররা ১১ মার্চ ধর্মঘট আহ্বান করে এবং ধীরেন্দ্রনাথ দত্তকে তার সাহসী ভূমিকার জন্য ধন্যবাদ জানায়। ১১ মার্চের কর্মসূচী নির্ধারণের জন্য ১০ মার্চ ফজলুল হক হলে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। ১১ মার্চ ভোরে পূর্ব-পরিকল্পনা অনুযায়ী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল থেকে ছাত্ররা বের হয়ে আসে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পূর্ণাঙ্গ ধর্মঘট পালিত হয়। সকালে ছাত্রদের একটি দল রমনা ডাকঘরে গেলে তাদের গ্রেফতার করা হয়। ছাত্রদের আরও একটি দল রাজনৈতিক নেতাদের সাথে সচিবালয়ের সামনে নবাব আবদুল গণি রোডে পিকেটিংয়ে অংশ নেয়। তারা গণপরিষদ ভবন (ভেঙ্গে পড়া জগন্নাথ হলের মিলনায়তন), প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন বর্ধমান হাউস (বর্তমান বাংলা একাডেমী), হাইকোর্ট ও সচিবালয়ের সামনে দাঁড়িয়ে অফিস বর্জনের জন্যে সবাইকে চাপ দিতে থাকে, ফলে বিভিন্ন স্থানে তাদেরকে পুলিশের লাঠিচার্জের সম্মুখীন হতে হয়। এক পর্যায়ে বিক্ষোভকারীরা খাদ্যমন্ত্রী সৈয়দ মোহাম্মদ আফজল ও শিক্ষামন্ত্রী আবদুল হামিদকে পদত্যাগ পত্রে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করে। এ বিক্ষোভ দমনের জন্য সরকার সেনাবাহিনী তলব করে। পূর্ব পাকিস্তানের জেনারের অফিসার কম্যান্ডিং ব্রিগেডিয়ার আইয়ুব খান (পরে পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি) মেজর পীরজাদার অধীনে একদল পদাতিক সৈন্য নিয়োগ করেন এবং স্বয়ং গণপরিষদে গিয়ে খাজা নাজিমুদ্দিনকে বাবুর্চিখানার মধ্য দিয়ে বের করে আনেন। বিকেলে এর প্রতিবাদে সভা অনুষ্ঠিত হলে পুলিশ সভা পণ্ড করে দেয় এবং কয়েকজনকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে ছিলেন শামসুল হক, শেখ মুজিবুর রহমান, অলি আহাদ, শওকত আলী, কাজী গোলাম মাহবুব, রওশন আলম, রফিকুল আলম, আব্দুল লতিফ তালুকদার, শাহ্ মোঃ নাসিরুদ্দীন, নুরুল ইসলাম প্রমুখ। ঐ সভায় সভাপতিত্ব করেন নঈমুদ্দিন আহমদ। খাজা নাজিমুদ্দিনের সাথে চুক্তি ১১ তারিখের এ ঘটনার পর ১২ থেকে ১৫ মার্চ ধর্মঘট পালন করা হয়। আন্দোলনের তীব্রতার মুখে ১৫ মার্চ খাজা নাজিমুদ্দিন সংগ্রাম পরিষদের নেতাদের সাথে বৈঠকে মিলিত হন। সংগ্রাম পরিষদের পক্ষে আবুল কাশেম, কামরুদ্দীন আহমদ, মোহাম্মদ তোয়াহা, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, আবদুর রহমান চৌধুরী প্রমূখ অংশগ্রহণ করেছিলেন। আলোচনাসাপেক্ষে দুই পক্ষের মধ্যে ৮টি বিষয়ে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ছাত্রদের আন্দোলনের মুখে সরকারের এ নমনীয় আচরণের প্রধান কারণ ছিল ১৯ মার্চ জিন্নাহ্‌'র ঢাকা আগমন। তার আসার পূর্বে পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও শান্ত করার জন্য নাজিমুদ্দিন চুক্তিতে রাজি হয়েছিলেন। কিন্তু বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেয়ার দাবিটি তখন পর্যন্ত মেনে নেয়া হয়নি। চুক্তিতে আন্দোলনের সময় গ্রেফতারকৃত বন্দিদের মুক্তি, পুলিশের অত্যাচারের নিরপেক্ষ তদন্ত, বাংলাকে শিক্ষার মাধ্যম ও রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেয়া, সংবাদপত্রের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার ইত্যাদি বিষয়াবলী অন্তর্ভুক্ত ছিল। মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ্‌র ঢাকা সফর thumbnail|১৯৪৮ সালের ২১শে মার্চ মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ্ ঢাকায় এক ভাষণে ঘোষণা করেন “উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা” ১৯ মার্চ ১৯৪৮-এ ঢাকায় এসে পৌঁছান পাকিস্তানের স্থপতি ও গভর্নর জেনারেল মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ্। ভারত বিভাগের পর এটাই ছিল তার প্রথম পূর্ব পাকিস্তান সফর। ২১ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহ্‌রাওয়ার্দী উদ্যান) এক গণ-সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় ও সেখানে তিনি ভাষণ দেন। তার ভাষণে তিনি ভাষা আন্দোলনকে পাকিস্তানের মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির ষড়যন্ত্র হিসেবে উল্লেখ করেন। যদিও তিনি বলেন পূর্ববঙ্গের প্রাদেশিক ভাষা নির্ধারিত হবে প্রদেশের অধিবাসীদের ভাষা অনুযায়ী; কিন্তু দ্ব্যর্থহীন চিত্তে ঘোষণা করেন - “উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা, অন্য কোনো ভাষা নয়” । তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, “জনগণের মধ্যে যারা ষড়যন্ত্রকারী রয়েছে, তারা পাকিস্তানের শত্রু এবং তাদের কখনোই ক্ষমা করা হবে না” । জিন্নাহ্‌'র এ বিরূপ মন্তব্যে তাৎক্ষণিকভাবে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে উপস্থিত ছাত্র-জনতার একাংশ। উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা - এ ধরনের একপেশে উক্তিতে আন্দোলনকারীরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। ২৪ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে গিয়েও তিনি একই ধরনের বক্তব্য রাখেন। তিনি উল্লেখ করেন এ আন্দোলন সঙ্কীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গীর বহিঃপ্রকাশ এবং অভিযোগ করেন কিছু লোক এর মাধ্যমে তাদের ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করতে চাইছে। যখন তিনি উর্দুর ব্যাপারে তার অবস্থানের কথা পুনরুল্লেখ করেন, উপস্থিত ছাত্ররা সমস্বরে না, না বলে চিৎকার করে ওঠে। একই দিনে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের একটি প্রতিনিধিদল জিন্নাহ্‌'র সাথে সাক্ষাৎ করে এবং বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি জানিয়ে একটি স্মারকলিপি দেয়। প্রতিনিধি দলে ছিলেন শামসুল হক, কামরুদ্দিন আহমদ, আবুল কাশেম, তাজউদ্দিন আহমদ, মোহাম্মদ তোয়াহা, আজিজ আহমদ, অলি আহাদ, নঈমুদ্দিন আহমদ, শামসুল আলম এবং নজরুল ইসলাম। কিন্তু জিন্নাহ্ খাজা নাজিমুদ্দিনের সাথে স্বাক্ষরিত চুক্তিকে একপেশে এবং চাপের মুখে সম্পাদিত বলে প্রত্যাখান করেন। অনেক তর্ক-বিতর্ক ও অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে সভাটি অনুষ্ঠিত হয়। ছাত্ররা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার জন্য জিন্নাহ্'র নিকট স্মারকলিপি পেশ করে। ২৮ মার্চ জিন্নাহ্ ঢাকা ত্যাগ করেন এবং সেদিন সন্ধ্যায় রেডিওতে দেয়া ভাষণে তার পূর্বেকার অবস্থানের কথাই পুনর্ব্যক্ত করেন। জিন্নাহ্'র ঢাকা ত্যাগের পর ছাত্রলীগ এবং তমুদ্দন মজলিসের এক সভা অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে তমুদ্দন মজলিসের আহ্বায়ক শামসুল আলম তার দায়িত্ব মোহাম্মদ তোয়াহা'র কাছে হস্তান্তর করেন। পরবর্তীতে তমুদ্দন মজলিস আন্দোলন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবার জন্য কমিউনিস্টদের দায়ী করে একটি বিবৃতি প্রদান করে এবং পরে তারা আস্তে আস্তে আন্দোলনের পথ থেকে সরে আসে। লিয়াকত আলি খানের ঢাকা সফর ১৯৪৮ সালের ১৮ নভেম্বর পাকিস্তানের প্রথম প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলি খান পূর্ব পাকিস্তান সফরে আসেন। ২৭ নভেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠে তিনি এক ছাত্রসভায় ভাষণ দেন। ঐ সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র ইউনিয়নের তরফ থেকে প্রদত্ত মানপত্রে বাংলা ভাষার দাবি পুনরায় উত্থাপন করা হয়, কিন্তু তিনি কোনোরূপ মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকেন। ১৭ নভেম্বর তারিখে আতাউর রহমান খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত রাষ্ট্রভাষা কর্মপরিষদের এক সভায় আজিজ আহমদ, আবুল কাশেম, শেখ মুজিবুর রহমান, কামরুদ্দীন আহমদ, আবদুল মান্নান, তাজউদ্দিন আহমদ প্রমুখ একটি স্মারকলিপি প্রণয়ন করেন এবং সেটি প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলি খানের কাছে পাঠানো হয়। প্রধানমন্ত্রী এক্ষেত্রেও কোনো সাড়া দেননি। ভাষা সমস্যার প্রস্তাবিত সমাধান এর কিছুদিন পরই, পূর্ব বাংলা সরকারের পক্ষ থেকে ভাষা সমস্যার ব্যাপারে একটি বিস্তারিত ব্যাখ্যা জানতে মাওলানা আকরাম খানের নেতৃত্বে পূর্ব বাংলা ভাষা কমিটি গঠনকরা হয়, এবং এই বিষয়টি নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করতে বলা হয়। ১৯৫০ সালের ৬ ডিসেম্বর তারিখের মধ্যে কমিটি তাদের প্রতিবেদন তৈরি করে; তবে এটি ১৯৫৮ সালের আগে প্রকাশ করা হয়নি। এখানে ভাষা সমস্যার সমাধানের লক্ষ্যে সরকারের পক্ষ থেকে একটি কার্যকর ব্যবস্থার প্রস্তাব করা হয়, যেখানে তারা বাংলাকে আরবি অক্ষরের মাধ্যমে লেখার সুপারিশ করেছিলেন। ১৯৫২: ভাষা আন্দোলনের পুনর্জাগরণ thumb|১৯৫২ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি নওয়াবপুর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) (তৎকালীন জগন্নাথ কলেজ) ছাত্রদের মিছিল। ভাষা আন্দোলনের মতো আবেগিক বিষয়ের পুনরায় জোরালো হবার পেছনে ১৯৫২ সালের ২৭ জানুয়ারি খাজা নাজিমুদ্দিনের ভাষণ প্রধান নিয়ামক হিসেবে কাজ করে। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী পদে আসীন খাজা নাজিমুদ্দিন ২৫ জানুয়ারি ঢাকায় আসেন এবং ২৭ জানুয়ারি পল্টন ময়দানের এক জনসভায় দীর্ঘ ভাষণ দেন। তিনি মূলত জিন্নাহ্'র কথারই পুনরুক্তি করে বলেন, পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু। রেডিওতে সরাসরি সম্প্রচারিত তার ভাষণে তিনি আরো উল্লেখ করেন যে কোনো জাতি দু'টি রাষ্ট্রভাষা নিয়ে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যেতে পারেনি। নাজিমুদ্দিনের বক্তৃতার প্রতিবাদে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ ২৯ জানুয়ারি প্রতিবাদ সভা এবং ৩০ জানুয়ারি ঢাকায় ছাত্র ধর্মঘট পালন করে। সেদিন ছাত্রসহ নেতৃবৃন্দ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় সমবেত হয়ে ৪ ফেব্রুয়ারি ধর্মঘট ও প্রতিবাদ সভা এবং ২১ ফেব্রুয়ারি প্রদেশব্যাপী হরতাল পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। পরে তারা তাদের মিছিল নিয়ে বর্ধমান হাউসের (বর্তমান বাংলা একাডেমী) দিকে অগ্রসর হয়। পরদিন ১৯৫২ সালের ৩১ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বার লাইব্রেরি হলে অনুষ্ঠিত সভায় মাওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে ৪০ সদস্যের সর্বদলীয় কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রভাষা কর্মী পরিষদ গঠিত হয়। সভায় আরবি লিপিতে বাংলা লেখার সরকারি প্রস্তাবের তীব্র বিরোধিতা করা হয় এবং ৩০ জানুয়ারির সভায় গৃহীত ধর্মঘট পালনের সিদ্ধান্তকে সমর্থন দেয়া হয়। পরিষদ ২১ ফেব্রুয়ারি হরতাল, সমাবেশ ও মিছিলের বিস্তারিত কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করে। পূর্ব সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্ররা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এসে সমবেত হয়। সমাবেশ থেকে আরবি লিপিতে বাংলা লেখার প্রস্তাবের প্রতিবাদ এবং বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে গ্রহণের দাবি জানানো হয়। ছাত্ররা তাদের সমাবেশ শেষে এক বিশাল বিক্ষোভ মিছিল বের করে। ২০ ফেব্রুয়ারি সরকার স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে ঢাকায় এক মাসের জন্য সভা, সমাবেশ ও মিছিল নিষিদ্ধ করে ১৪৪ ধারা জারি করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা বিভিন্ন হলে সভা করে ১৪৪ ধারা ভঙ্গের সিদ্ধান্ত নেয়। ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে ৯৪ নবাবপুর রোডস্থ আওয়ামী মুসলিম লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আবুল হাশিমের সভাপতিত্বে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা কর্মী পরিষদের সভা অনুষ্ঠিত হয়। পরিষদের কিছু সদস্য নিষেধাজ্ঞা অমান্য করার পক্ষে থাকলেও, সবশেষে ১১-৩ ভোটে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ না করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলে একই বিষয় নিয়ে পৃথক পৃথক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সন্ধ্যায় সলিমুল্লাহ হলে ফকির শাহাবুদ্দীনের সভাপতিত্বে ১৪৪ ধারা ভঙ্গের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ফজলুল হক মুসলিম হলে অনুষ্ঠিত সভায় নেতৃত্ব দেন আবদুল মোমিন। শাহাবুদ্দিন আহমদের প্রস্তাব অনুযায়ী রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদকে এই সিদ্ধান্তটি জানিয়ে দেয়ার দায়িত্ব নেন আবদুল মোমিন এবং শামসুল আলম। ২১ ফেব্রুয়ারির ঘটনা thumb|২১শে ফেব্রুয়ারি ১৯৫২: ১৪৪ ধারা ভঙ্গের প্রশ্নে পুরাতন কলাভবন প্রাঙ্গণে আমতলায় ঐতিহাসিক ছাত্রসভা। পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচী অনুযায়ী এ দিন সকাল ৯টা থেকে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্ররা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এসে জড়ো হয়। তারা ১৪৪ ধারা জারির বিপক্ষে স্লোগান দিতে থাকে এবং পূর্ব বঙ্গ আইন পরিষদের সদস্যদের ভাষা সম্পর্কে সাধারণ জনগণের মতামতকে বিবেচনা করার আহ্বান জানাতে থাকে। পুলিশ অস্ত্র হাতে সভাস্থলের চারদিক ঘিরে রাখে। বিভিন্ন অনুষদের ডীন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ঐসময় উপস্থিত ছিলেন। বেলা সোয়া এগারটার দিকে ছাত্ররা গেটে জড়ো হয়ে প্রতিবন্ধকতা ভেঙে রাস্তায় নামার প্রস্তুতি নিলে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে ছাত্রদের সতর্ক করে দেয়। কিছু ছাত্র ঐসময়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের দিকে দৌঁড়ে চলে গেলেও বাদ-বাকিরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে পুলিশ দ্বারা অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে এবং পুলিশের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে থাকে। উপাচার্য তখন পুলিশকে কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ বন্ধ করতে অনুরোধ জানান এবং ছাত্রদের বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ত্যাগের নির্দেশ দেন। কিন্তু ছাত্ররা ক্যাম্পাস ত্যাগ করার সময় কয়েকজনকে ১৪৪ ধারা ভঙ্গের অভিযোগে পুলিশ গ্রেফতার শুরু করলে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। অনেক ছাত্রকে গ্রেফতার করে তেজগাঁও নিয়ে গিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়। এ ঘটনায় ছাত্ররা আরও ক্ষুব্ধ হয়ে পুনরায় তাদের বিক্ষোভ শুরু করে। thumb|left|২১শে ফেব্রুয়ারি ১৯৫২: পুরাতন কলাভবন প্রাঙ্গণ, ১৪৪ ধারা ভঙ্গের প্রাক্কালে। বেলা ২টার দিকে আইন পরিষদের সদস্যরা আইনসভায় যোগ দিতে এলে ছাত্ররা তাদের বাঁধা দেয়। কিন্তু পরিস্থিতির নাটকীয় পরিবর্তন ঘটে যখন কিছু ছাত্র সিদ্ধান্ত নেয় তারা আইনসভায় গিয়ে তাদের দাবি উত্থাপন করবে। ছাত্ররা ঐ উদ্দেশ্যে আইনসভার দিকে রওনা করলে বেলা ৩টার দিকে পুলিশ দৌঁড়ে এসে ছাত্রাবাসে গুলিবর্ষণ শুরু করে। পুলিশের গুলিবর্ষণে আব্দুল জব্বার এবং রফিক উদ্দিন আহমেদ ঘটনাস্থলেই নিহত হন। এছাড়া আব্দুস সালাম, আবুল বরকতসহ আরও অনেকে সেসময় নিহত হন। ঐদিন অহিউল্লাহ নামের একজন ৮/৯ বছরেরে কিশোরও নিহত হয়। ছাত্র হত্যার সংবাদ দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে জনগণ ঘটনাস্থলে আসার উদ্যোগ নেয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই সমস্ত অফিস, দোকানপাট ও পরিবহন বন্ধ হয়ে যায়। ছাত্রদের শুরু করা আন্দোলন সাথে সাথে জনমানুষের আন্দোলনে রূপ নেয়। রেডিও শিল্পীরা তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে শিল্পী ধর্মঘট আহ্বান করে এবং রেডিও স্টেশন পূর্বে ধারণকৃত অনুষ্ঠান সম্প্রচার করতে থাকে। ঐসময় গণপরিষদে অধিবেশন শুরুর প্রস্তুতি চলছিল। পুলিশের গুলির খবর জানতে পেরে মাওলানা তর্কবাগিশসহ বিরোধী দলীয় বেশ কয়েকজন অধিবেশন কক্ষ ত্যাগ করে বিক্ষুদ্ধ ছাত্রদের পাশে এসে দাঁড়ান। গণপরিষদে মনোরঞ্জন ধর, বসন্তকুমার দাস, শামসুদ্দিন আহমেদ এবং ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত-সহ ছোট ছয়জন সদস্য মুখ্যমন্ত্রী নুরুল আমিনকে হাসপাতালে আহত ছাত্রদের দেখতে যাবার জন্যে অনুরোধ করেন এবং শোক প্রদর্শনের লক্ষ্যে অধিবেশন স্থগিত করার কথা বলেন। কোষাগার বিভাগের মাওলানা আব্দুর রশিদ তর্কবাগিশ, শরফুদ্দিন আহমেদ, সামশুদ্দিন আহমেদ খন্দকার এবং মসলেউদ্দিন আহমেদ এই কার্যক্রমে সমর্থন দিয়েছিলেন। যদিও নুরুল আমিন অন্যান্য নেতাদের অনুরোধ রাখেননি এবং অধিবেশনে বাংলা ভাষার বিরোধিতা করে বক্তব্য দেন। ২২ ফেব্রুয়ারির ঘটনা thumb|right|২২ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ প্রাঙ্গণে জানাজা শেষে বিশাল মিছিল বের হয়। সেদিন আইন পরিষদে বিরোধী দলের সদস্যরা বিষয়টি উত্থাপন করেন। তারা প্রধানমন্ত্রী নুরুল আমিনকে হাসপাতালে আহত ছাত্রদের দেখতে এবং অধিবেশন মুলতবি করার ঘোষণা দিতে আহ্বান জানান। ক্ষমতাসীন দলের কিছু সদস্যও এই আহ্বানে সমর্থন জানান। কিন্তু নুরুল আমিন তাদের আহ্বানের সাড়া না দিয়ে অধিবেশন অব্যাহত রাখেন এবং হাসপাতালে যেতে অস্বীকৃতি জানান। ফেব্রুয়ারির ২২ তারিখে সারা দেশ হয়ে উঠে মিছিল ও বিক্ষোভে উত্তাল। জনগণ ১৪৪ ধারা অমান্য করার পাশাপাশি শোক পালন করতে থাকে। বিভিন্ন অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কর্মস্থল ত্যাগ করে ছাত্রদের মিছিলে যোগ দেয়। সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শহরের নাগরিক সমাজ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রাবাস পরিদর্শন করেন। পরে তাদের অংশগ্রহণে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে বিশাল মিছিলে অংশগ্রহণ করে। বেলা ১১টার দিকে ৩০ হাজার লোকের একটি মিছিল কার্জন হলের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। প্রথমে পুলিশ তাদের সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে এবং একপর্যায়ে তাদের উপর গুলিবর্ষণ করে। ঐ ঘটনায় সরকারি হিসেবে ৪ জনের মৃত্যু হয়। শহরের বিভিন্ন অংশে একইভাবে জানাজা ও মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। বিভিন্ন কলেজ, ব্যাংক-সহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান থেকে লোকজন এই মিছিলে অংশ নিতে আসে। বিকেলে আরেকটি বিশাল মিছিল পুলিশ দ্বারা আক্রান্ত হয়। বিক্ষুদ্ধ জনতা সরকার পক্ষের প্রথম সারির দুটি সংবাদপত্র জুবিলী প্রেস এবং মর্নিং নিউজ অফিসে অগ্নিসংযোগ করে। উল্লেখ্য, জুবিলী প্রেস থেকে সকালের পত্রিকা বের হয়েছিল। একই দিনে পুলিশ দ্বারা আক্রমণ ও হত্যার বিভিন্ন ঘটনা ঘটে। নবাবপুর রোডের বিশাল জানাজার মিছিলে পুলিশের গুলিবর্ষণ করে। এই গুলিবর্ষণে শহীদ হন ঢাকা হাইকোর্টের কর্মচারী শফিউর রহমান, ওয়াহিদুল্লাহ এবং আবদুল আউয়াল। একই রাস্তায় অহিউল্লাহ নামে নয় বছরের এক বালকের লাশ পড়ে থাকতে দেখা যায়। জনশ্রুতি আছে, পুলিশ কিছু লাশ কৌশলে সরিয়ে ফেলে। পরবর্তী ঘটনা (১৯৫২) ২১ ও ২২ ফেব্রুয়ারির ঘটনার পর সরকার আন্দোলনের বিপক্ষে জোরালো অপপ্রচার চালাতে থাকে। তারা জনগণকে বোঝানোর চেষ্টা করতে থাকে যে, কমিউনিস্ট ও পাকিস্তানবিরোধীদের প্ররোচনায় ছাত্ররা পুলিশকে আক্রমণ করেছিল। তারা বিভিন্নভাবে তাদের এই প্রচার অব্যাহত রাখে। তারা সারাদেশে প্রচারণাপত্র বিলি করে। সংবাদপত্রগুলোকে তাদের ইচ্ছানুসারে সংবাদ পরিবেশনে চাপ সৃষ্টি করতে থাকে। পাশাপাশি ব্যাপক হারে সাধারণ জনগণ ও ছাত্র গ্রেফতার অব্যাহত রাখে। ২৫ ফেব্রুয়ারি আবুল বরকতের ভাই একটি হত্যা মামলা দায়ের করার চেষ্টা করলে, উপযুক্ত কাগজের অভাব দেখিয়ে সরকার মামলাটি গ্রহণ করেনি। রফিকউদ্দিন আহমদের পরিবার একই ধরনের একটি প্রচেষ্টা নিলে, ঐ একই কারণে তাও বাতিল হয়। ৮ এপ্রিল সরকার তদন্ত শুরু করে। কিন্তু এর প্রতিবেদনে মেডিক্যাল কলেজে ছাত্রদের উপর গুলি করার কোনো উল্লেখযোগ্য কারণ দেখাতে পারেনি। সরকারের প্রতিশ্রুত প্রতিবেদন কেন্দ্রীয় কর্ম পরিষদ প্রত্যাখান করে। ১৪ এপ্রিল গণপরিষদের অধিবেশন শুরু হলে রাষ্ট্রভাষার প্রশ্ন সামনে চলে আসে। এ সমস্যা নিরসনের পক্ষে অনেক সদস্য মত প্রকাশ করলেও মুসলিম লীগের সদস্যরা এ ব্যাপারে নীরব ভূমিকা পালন করেন। এ বিষয়ের বিপক্ষে তারা ভোট দিলে তা অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত হয়ে যায়। এর মাধ্যমে তারা ২১ ও ২২ ফেব্রুয়ারির ঘটনার পর গণপরিষদে বাংলা ভাষার পক্ষে কথা বলার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেন। ২৭ এপ্রিল বার সেমিনার হলে কেন্দ্রীয় সর্বদলীয় কর্মপরিষদ একটি সেমিনার আহ্বান করে এবং সরকারের কাছে ২১-দফা দাবি উত্থাপন করে। ১৬ এপ্রিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় খুললে সেদিন ছাত্ররা সমাবেশ করে। বিশ্ববিদ্যালয় লীগ কমিটির প্রধান নেতা আব্দুল মতিন গ্রেফতার হলে কমিটি আবার পুণর্গঠিত হয়। শহীদ মিনার right|thumb|আবুল বরকতের পরিবার শহীদ মিনারের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করে। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ছাত্ররা ২৩ ফেব্রুয়ারি রাতে শহীদ মিনার তৈরির কাজ শুরু করে। কাজ শেষ হয় ২৪ তারিখ ভোরে। তাতে একটি হাতে লেখা কাগজ গেঁথে দেয়া হয়, যাতে লেখা ছিল শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ। শহীদ মিনার নির্মাণের খবর দৈনিক সংবাদপত্রগুলোতে পাঠানো হয় ঐ দিনই। শহীদ বীরের স্মৃতিতে - এই শিরোনামে দৈনিক আজাদ পত্রিকায় ছাপা হয় শহীদ মিনারের খবর। মিনারটি তৈরি হয় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র হোস্টেলের (ব্যারাক) বার নম্বর শেডের পূর্ব প্রান্তে। কোণাকুণিভাবে হোস্টেলের মধ্যবর্তী রাস্তার গা-ঘেষে। উদ্দেশ্য ছিল যাতে বাইরের রাস্তা থেকে সহজেই দেখা যায় এবং যেকোনো ছাউনি থেকে বেরিয়ে এসে ভেতরের লম্বা টানা রাস্তাতে দাঁড়ালেই যেন চোখে পড়ে। শহীদ মিনারটি ছিল ১০ ফুট উচু আর ৬ ফুট চওড়া। মিনার তৈরির তদারকিতে ছিলেন জিএস শরফুদ্দিন (ইঞ্জিনিয়ার শরফুদ্দিন নামে পরিচিত), নকশা অঙ্কন করেছিলেন বদিউল আলম। তাদের সাথে ছিলেন সাঈদ হায়দার। শহীদ মিনার নির্মাণে সহযোগিতা করেন দুইজন রাজমিস্ত্রী। মেডিক্যাল কলেজের সম্প্রসারণের জন্য জমিয়ে রাখা ইট, বালু এবং পুরনো ঢাকার পিয়ারু সর্দারের গুদাম থেকে সিমেন্ট আনা হয়। ভোর হবার পর একটি কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয় মিনারটি। ঐ দিনই অর্থাৎ ২৪ ফেব্রুয়ারি সকালে, ২২ ফেব্রুয়ারির শহীদ শফিউরের পিতা অনানুষ্ঠানিকভাবে শহীদ মিনারের উদ্বোধন করেন। ২৬ ফেব্রুয়ারি সকালে দশটার দিকে শহীদ মিনার উদ্বোধন করেন দৈনিক আজাদ সম্পাদক আবুল কালাম শামসুদ্দীন। উদ্বোধনের দিন অর্থাৎ ২৬ ফেব্রুয়ারি পুলিশ ও পাকিস্তান সেনাবাহিনী মেডিক্যালের ছাত্রদের আবাসিক হোস্টেল ঘিরে ফেলে এবং প্রথম শহীদ মিনার ভেঙে ফেলে। এরপর ঢাকা কলেজেও একটি শহীদ মিনার তৈরি করা হয়, এটিও একসময় সরকারের নির্দেশে ভেঙে ফেলা হয়। অবশেষে বাংলাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি দেবার পরে ১৯৫৭ সালে সরকারিভাবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের কাজ শুরু হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত কমিটির তত্ত্বাবধানে ১৯৬৩ সালে শহীদ মিনারের নির্মাণ কাজ শেষ হয়। এবং ১৯৬৩ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি শহীদ বরকতের মা উক্ত মিনারটি উদ্বোধন করেন। ফেব্রুয়ারি ২৫ তারিখে, কল-কারখানার শ্রমিকরা নারায়ণগঞ্জ শহরে ধর্মঘটের ডাক দেয়। ফেব্রুয়ারির ২৯ তারিখে প্রতিবাদে অংশগ্রহকারীরা ব্যাপক পুলিশী হামলার শিকার হন। একুশের গান ২১ ফেব্রুয়ারি গুলিবর্ষণের ঘটনার পর ‘একুশ’ নিয়ে প্রথম গান আবদুল গাফফার চৌধুরী;- গানটি হল - আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি। এ গানটিতে প্রথমে সুরারোপ করেন আব্দুল লতিফ। পরে করাচী থেকে ঢাকা ফিরে ১৯৫৪ সালে আলতাফ মাহমুদ আবার নতুন করে সুরারোপ করেন। সেই থেকে ওটা হয়ে গেল একুশের প্রভাতফেরীর গান। বর্তমানে আলতাফ মাহমুদের সুর করা গানটিই গাওয়া হয়। ১৯৫৪ সালে হাসান হাফিজুর রহমান সম্পাদিত একুশে সংকলনে প্রকাশিত হয় গানটি। তৎকালীন সরকার সংকলনটি বাজেয়াপ্ত করে। জহির রায়হান তার জীবন থেকে নেয়া ছবিতে এ গানটি ব্যবহার করার পর এর জনপ্রিয়তা ব্যাপকতা লাভ করে। ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পাবার পর আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে এই গানটির সুনাম আরো বাড়তে শুরু করে। ইতোমধ্যে গানটি সুইডিশ ও জাপানি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। বিবিসি শ্রোতা জরিপে বাংলা ভাষার শ্রেষ্ঠ গানের তালিকায় এটি তৃতীয় স্থান লাভ করেছে। চূড়ান্ত পর্যায় (১৯৫৩–৫৬) thumb|১৯৫৩ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি: প্রথম শহীদ দিবস সকালে ছাত্র-জনতার শোক শোভাযাত্রা মেডিক্যাল হোস্টেল মোড়ে (যেখান থেকে গুলি চলেছিল) শহীদানের আত্মার মাগফেরাত কামনায় মোনাজাত করছে। thumb|left|১৯৫৩ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি প্রভাতফেরিতে ফ্যাস্টুন হাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীরা। কেন্দ্রীয় সর্বদলীয় কর্মপরিষদ ২১ ফেব্রুয়ারি স্মরণে শহীদ দিবস পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শেখ মজিবুর রহমানও দিবসটি পালনে সম্মত হন। ১৯৫৩ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি ছাত্ররা শান্তিপূর্ণভাবে ২১ ফেব্রুয়ারি পালনের উদ্দেশ্যে প্রশাসনের সাথে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। ভাষা আন্দোলনের এক বছর পূর্তিতে সারা দেশব্যাপী যথাযোগ্য মর্যাদায় শহীদ দিবস পালিত হয়। অধিকাংশ অফিস, ব্যাংক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা মানুষ প্রভাতফেরীতে যোগ দেন। হাজার হাজার মানুষ শোকের প্রতীক কালো ব্যাজ ধারণ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে আসে এবং মিছিল করে প্রাঙ্গণ ত্যাগ করে। সহিংসতা রোধের জন্য স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করা হয়। প্রায় লক্ষ লোকের উপস্থিতিতে আরমানিটোলায় বিশাল সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে এক-দফা দাবি জানানো হয়, ভাষার দাবির পাশাপাশি মাওলানা ভাসানীসহ রাজবন্দীদের মুক্তির দাবি উত্থাপন করা হয়। রেলওয়ের কর্মচারীরা ছাত্রদের দাবির সাথে একমত হয়ে ধর্মঘট পালন করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ছাত্রাবাসের ছাত্ররা শহীদদের প্রতি তাদের শ্রদ্ধা নিবেদন করে। অন্যদিকে পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী ফজলুর রহমান বলেন যে, বাংলাকে যারা রাষ্ট্রভাষা করতে চায় তারা দেশদ্রোহী। তার এ বক্তব্যে জনগণ হতাশ হয়ে তাকে কালো ব্যাজ দেখায়। সাধারণ মানুষের মাঝে রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই লেখা সম্বলিত স্মারক ব্যাজ বিলি করা হয়। ভাষা সংগ্রাম কমিটি দিবসটি পালন উপলক্ষে সমাবেশ আহ্বান করে। আন্দোলনকে আরো বেগবান করার জন্য বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। দিবসটি উপলক্ষে বিশেষ পত্রিকা প্রকাশিত হয়। ভাষা আন্দোলনের মূল অনুপ্রেরণাদায়ী অমর সঙ্গীত আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো... ঐ বছর কবিতা আকারে লিফলেটে প্রকাশিত হয়। ১৯৫৪ সালের ২১ ফেব্রুয়ারির রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলের ছাদে কালো পতাকা উত্তোলনের সময় পুলিশ কিছু ছাত্রকে গ্রেপ্তার করে। যুক্তফ্রন্ট গঠন thumb|left|150px|১৯৫৪ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারিতে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণের উদ্দেশ্যে প্রভাতফেরিতে নগ্ন পায়ে মওলানা ভাসানী ও শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৫৪ সালকে পূর্ব বঙ্গের রাজনৈতিক ও ভাষা আন্দোলনের ব্যাপক পট পরিবর্তনের বছর হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এ কে ফজলুল হকের নেতৃত্বে গঠিত যুক্তফ্রন্ট এবং আওয়ামী লীগ বৃহত্তর প্রাদেশিক স্বায়ত্ত্বশাসনের প্রস্তাবে ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগ নিন্দা জানায়। নির্বাচনকে সামনে রেখে যুক্তফ্রন্ট যেন আন্দোলনের আর কোনো সুযোগ না পায় সেজন্য মুসলিম লীগ তাদের চেষ্টা অব্যাহত রাখে। সেজন্য তারা ভাষা আন্দোলন দিবসের আগে যুক্তফ্রন্টের একাধিক নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করে। অন্যদিকে ভাষা সংক্রান্ত বিষয়ের অচলাবস্থা নিরসনের উদ্দেশ্যে মুসলিম লীগের সংসদীয় কমিটির একটি সভা করাচীতে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী বগুড়া এবং সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয় বাংলা ভাষাকে উর্দু ভাষার সমমর্যাদা দিয়ে রাষ্ট্রভাষা করে হবে। এ সিদ্ধান্তের ফলে পশ্চিম পাকিস্তানের বিভিন্ন প্রদেশের ছয়টি ভাষাকে একই মর্যাদা দেয়ার দাবি তোলে সেখানকার প্রতিনিধিত্বকারীরা। আবদুল হক (“বাবা উর্দু” নামে পরিচিত) এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানান এবং তার এ সিদ্ধান্তের বিপক্ষে অনড় থাকেন। তার নেতৃত্বে ২২ এপ্রিল করাচীতে এক বিশাল প্রতিবাদ মিছিলের আয়োজন করা হয়। প্রায় ১ লক্ষ মানুষ মিছিলে অংশ নেয় ও মুসলিম লীগের এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানায়। সেখানে সহিংস ঘটনায় সিন্ধি ভাষায় প্রকাশিত দৈনিক আল ওয়াহিদ পত্রিকার অফিস পুড়িয়ে দেয়া হয়। অন্যদিকে ২৭ এপ্রিল বাংলা ও অন্যান্য ভাষাকে সমমর্যাদা দেয়ার দাবিতে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। তারা সংখ্যালঘু উর্দুভাষী যারা এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছিল তাদের মানসিকতার তীব্র সমালোচনা করেন। এমন উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের উদ্যোগ বন্ধ হয়ে যায়। গণপরিষদ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট এবার অধিকাংশ আসনে জয়লাভ করে; যেখানে মুসলিম লীগের আসনসংখ্যা ছিল অত্যন্ত কম। যুক্তফ্রন্ট ক্ষমতায় এসে বাংলা একাডেমী গঠন করে। এ প্রতিষ্ঠান বাংলা ভাষা, সংস্কৃতি, ঐতিহ্যের সংরক্ষণ, গবেষণা এবং মান উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করবে বলে গঠনতন্ত্রে উল্লেখ করা হয়। যুক্তফ্রন্ট ক্ষমতায় আসার কিছুদিনের মধ্যেই পাকিস্তানের গভর্ণর জেনারেল মালিক গোলাম মাহমুদ ১৯৫৪ সালের ৩০ মে তারিখে কেন্দ্রীয় এবং প্রাদেশিক সরকার বাতিল ঘোষণা করে। ১৯৫৫ সালের ৬ জুন তারিখে যুক্তফ্রন্ট পুণর্গঠন করা হয়; যদিও আওয়ামী লীগ মন্ত্রীপরিষদে যোগ দেয়নি। ১৯৫৬ সালে প্রথমবারের মতো সরকারের প্রচ্ছন্ন সহযোগিতায় ২১ ফেব্রুয়ারি পালিত হয়। শহীদ মিনার নতুনভাবে তৈরি করার লক্ষে সরকারের পক্ষ থেকে একটি বড় প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। পুলিশের গুলিতে নিহত ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে পাকিস্তানের গণপরিষদে কার্যক্রম পাঁচ মিনিট বন্ধ রাখা হয়। সারাদেশব্যাপী পালিত হয় শহীদ দিবস এবং বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান ছিল বন্ধ। আরমানীটোলায় এক বিশাল সমাবেশের নেতৃত্ব দেন মাওলানা ভাসানী। রাষ্ট্রভাষা হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি ১৯৫৪ সালের ৭ মে মুসলিম লীগের সমর্থনে বাংলাকে রাষ্ট্রীয় ভাষার মর্যাদা দেয়া হয়। ১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের প্রথম সংবিধান প্রণীত হলে ২১৪ নং অনুচ্ছেদে বাংলা ও উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে উল্লিখিত হয়। সংবিধানের ২১৪(১) অধ্যায়ে রাষ্ট্রভাষা সম্পর্কে লেখা হয়: যদিও আইয়ুব খানের প্রতিষ্ঠিত সামরিক সরকার উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসাবে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করেছিল; ১৯৫৯ সালের ৬ জানুয়ারি সামরিক শাসকগোষ্ঠী এক সরকারি বিবৃতি জারি করে এবং ১৯৫৬ সালের সংবিধানে উল্লেখিত দুই রাষ্ট্র ভাষার উপর সরকারি অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে। বাঙালি সংস্কৃতিতে ভাষা আন্দোলনের প্রভাব thumb|right|কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার; ভাষা আন্দোলনে শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের পাশে নির্মিত বাঙালির সাংস্কৃতিক জীবনে বাংলা ভাষা আন্দোলনের তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব বিদ্যমান। বাঙালির মধ্যে বাংলা ভাষার বিভিন্ন উপলক্ষ উদযাপন ও ভাষার উন্নয়নের কাজ করার মানসিকতা তৈরিতে এ আন্দোলনের যথেষ্ট ভূমিকা আছে। বাংলাদেশে ২১ ফেব্রুয়ারি ‘মাতৃভাষা দিবস’ বা ‘শহীদ দিবস’ হিসেবে, এবং একই সাথে একটি রাষ্ট্রীয় ছুটির দিন হিসেবে পালিত হয়। এছাড়া ফেব্রুয়ারি মাসটি আরো নানাভাবে উদযাপিত হয় যার মধ্যে আছে, মাসব্যাপী অমর একুশে গ্রন্থমেলা উদযাপন, যা একুশে বইমেলা নামে সমধিক পরিচিত। এছাড়াও ভাষা আন্দোলনে আত্মত্যাগকারীদের ত্যাগের সম্মানে এ মাসেই ঘোষণা করা হয় বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রাষ্ট্রীয় বেসামরিক পদক ‘একুশে পদক’। মানুষের ভেতর একুশের আবেগ পৌঁছে দিতে একুশের ঘটনা ও চেতনা নিয়ে রচিত হয়েছে বিভিন্ন প্রকার দেশাত্মবোধক গান, নাটক, কবিতা ও চলচ্চিত্র। তন্মধ্যে সবিশেষ উল্লেখযোগ্য আবদুল গাফফার চৌধুরী রচিত ও আলতাফ মাহমুদ সুরারোপিত আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো গানটি। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের পর থেকেই বাংলা সাহিত্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে ভাষা আন্দোলনের প্রভাব সূচিত হয়ে আসছে। রচনাগুলোর মধ্যে আছে - শহীদ বুদ্ধিজীবী মুনীর চৌধুরী রচিত নাটক কবর; কবি শামসুর রাহমান রচিত কবিতা বর্ণমালা, আমার দুঃখিনী বর্ণমালা এবং ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯; জহির রায়হান রচিত উপন্যাস একুশে ফেব্রুয়ারি; বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক শওকত ওসমান রচিত আর্তনাদ উল্লেখযোগ্য। এছাড়া ভাষা আন্দোলনকে উপজীব্য করে নির্মিত হয়েছে জহির রায়হান পরিচালিত চলচ্চিত্র জীবন থেকে নেয়া। প্রথম শহীদ মিনারটি ভেঙ্গে ফেলার ২বছর পর ১৯৫৪ সালে নিহতদের স্মরণে নতুন একটি শহীদ মিনার তৈরি করা হয়। ১৯৫৭ সালে যুক্তফ্রন্ট সরকারের সহযোগিতায় বড় পরিসরে শহীদ মিনার তৈরির কাজ শুরু করা হয়। নতুন শহীদ মিনারের স্থপতি ছিলেন হামিদুর রহমান এবং নভেরা আহমেদ। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হোস্টেল চত্বরে বড় আকারের এই স্থাপনাটি নির্মাণ করা হয়। মূল বেদির উপর অর্ধ-বৃত্তাকারে সাজানো ৫টি স্তম্ভের মাধ্যমে বোঝানো হয়েছে যে, মা তার শহীদ সন্তানদের সাথে দাঁড়িয়ে আছেন। ১৯৫৮ সালের সামরিক শাসনের কারণে স্থাপনাটির নির্মাণ কাজের অগ্রগতি কিছুটা ক্ষতিগ্রস্থ হয়। ১৯৬৩ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি আবুল বরকতের মা হাসনা বেগম শহীদ মিনারটির উদ্বোধন করেন। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী এটি ভেঙ্গে দেয়। পরবর্তীতে ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ সরকার এটি পুণরায় নির্মাণ করে। পূর্ব পাকিস্তান ছাড়াও ভারতের আসম রাজ্যে বাংলা ভাষাকে সমমর্যাদা দেয়ার লক্ষ্যে আন্দোলন হয়েছিল। ১৯৬১ সালের ১৯ মে শিলচর রেলস্টেশনে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসাবে স্বীকৃতি দেয়ার জন্য দাবি জানালে পুলিশের গুলিতে ১১ বাঙালি শহীদ হন। পরবর্তীতে আসামের বাংলাভাষী লোকসংখ্যা বেশি রয়েছে এমন ৩টি জেলাতে বাংলাকে আধা-সরকারি ভাষার মর্যাদা দেয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২১ ফেব্রুয়ারিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকার ইউনেস্কোর কাছে লিখিতভাবে প্রস্তাব করে, যা ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর সংস্থার ৩০তম সাধারণ অধিবেশনে নিরঙ্কুশ সমর্থন পেয়ে পাশ হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যদিও ১৯৫৬ সালের পর সরকারি ভাষার বিতর্ক সম্পন্ন হয়, কিন্তু আইয়ুব খানের সামরিক শাসন পাকিস্তানের পাঞ্জাবি ও পশতুনদের দেনাগুলো বাঙালিদের ওপর জোরপূর্বক চাপিয়ে দেয়। জনসংখ্যার দিক থেকে সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও সামরিক এবং বেসামরিক চাকুরীর ক্ষেত্রে বাঙালিদের উপস্থিতি ছিল নগণ্য। এছাড়া জাতীয় রাজস্ব এবং সরকারি সাহায্যের দিক থেকেও বাঙালিদের প্রাপ্ত অংশ ছিল খুবই কম। জাতিগতভাবে পশ্চিম পাকিস্তানের সাথে বাঙালিদের এ বৈষম্যের ফলে চাপা ক্ষোভের জন্ম নিতে থাকে। এরই প্রভাব হিসেবে আঞ্চলিক স্বার্থসংরক্ষণকারী রাজনৈতিক দল হিসেবে বাঙালি জাতীয়তাবাদী আওয়ামী লীগের প্রতি মানুষের সমর্থন নিরঙ্কুশভাবে বাড়তে থাকে। এর ফলেই পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ ভাষা আন্দোলনের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে আরো বড় অধিকার আদায় ও গণতন্ত্রের দাবিতে ছয় দফা আন্দোলন শুরু করে। এ আন্দোলনই পরবর্তীতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের আকার ধারণ করে। পশ্চিম পাকিস্তানে প্রতিক্রিয়া left|thumb|200px|ভাষা শহীদদের স্মরণে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠিত অমর একুশে (ভাস্কর্য)। যদিও পূর্ব পাকিস্তানের অনেক বাঙালি মনে করেন যে, বাংলা ভাষা আন্দোলন জাতিগত জাতীয়তাবাদের উপর ভিত্তি করে সংঘটিত হয়েছিল; কিন্তু এ আন্দোলনের মাধ্যমে পাকিস্তানের দুই অংশের সংস্কৃতির পার্থক্যগুলো সুস্পষ্টভাবে পরিলক্ষিত হয়েছে। পশ্চিম পাকিস্তানে এ আন্দোলনটি পাকিস্তানি জাতীয় স্বার্থের বিরুদ্ধে বিভাগীয় উত্থান বলে মনে করা হয়। দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত পাকিস্তান রাষ্ট্রে “একমাত্র উর্দু” নীতি প্রত্যাখ্যান করাকে মুসলমানদের পারসিক-আরবি সংস্কৃতি এবং পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠার মূল মতাদর্শের গুরুতর লঙ্ঘন হিসাবে দেখা হয়। পূর্ব পাকিস্তানের বেশ কয়েকজন শক্তিশালী রাজনীতিবিদ মনে করেন যে, “উর্দু” হল ভারতীয় ইসলামী সংস্কৃতির অংশ, আর বাংলাকে তারা হিন্দু সংস্কৃতির সংমিশ্রণে তৈরি বাংলা সংস্কৃতি হিসেবে বিবেচনা করতেন। অধিকাংশই যারা “একমাত্র উর্দু” নীতির পক্ষে ছিলেন, তারা মনে করতেন যে, উর্দু কেবলমাত্র পাকিস্তান দেশের ভাষা হিসেবেই নয়, বরং সমগ্র জাতির ভাষা হিসেবে উর্দুকে প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন। এধরনের চিন্তা-ভাবনাও উর্দু নীতির বিপক্ষে অবস্থান নেয়ার অন্যতম কারণ হিসেবে বিবেচিত হয়েছিল; কেননা, পাকিস্তানে তখন আরও বেশ কিছু ভাষাগত পার্থক্যের সম্প্রদায় ছিল। ১৯৬৭ সালের শেষের দিকে আইয়ুব খান বলেন যে, “পূর্ব পাকিস্তান... এখনো হিন্দু সংস্কৃতি এবং প্রভাবের অধীনে রয়েছে।” আন্দোলনের পর আওয়ামী মুসলিম লীগ বাঙালি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা করতে শুরু করে এবং দলের নাম থেকে “মুসলিম” শব্দটি বাদ দিয়ে দেয়। ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে পশ্চিম পাকিস্তানের জাতিগত জাতীয়তাবাদীভিত্তিক দলগুলোর কার্যক্রমে গতির সঞ্চার করে। পাশাপাশি পূর্ব পাকিস্তানে রাজনৈতিক অস্থিরতা, কেন্দ্রীয় সরকার এবং যুক্তফ্রন্টের নেতৃত্বে প্রদেশিক সরকারের মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব ছিল ১৯৫৮ সালে সেনাবাহিনী প্রধান আইয়ুব খানের সামরিক অভ্যূত্থানের অন্যতম প্রধান কারণ। গণমাধ্যমে বাংলা ভাষা আন্দোলন পাকিস্তান সৃষ্টির পর পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা নিয়ে বিভিন্ন সংবাদপত্রে বিতর্কের প্রতিফলন লক্ষ করা যায়। সংবাদপত্রগুলো বাংলার পক্ষে-বিপক্ষে নানা প্রবন্ধ, নিবন্ধ ও সংবাদ প্রকাশ করে ভাষার ইস্যুটিকে গুরুত্বপূর্ণ করে তোলে। কলকাতা থেকে মুসলিম লীগের সমর্থক পত্রিকাগুলোতে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা নির্ধারণ প্রসঙ্গে বেশ কিছু প্রবন্ধ ছাপা হয় । দৈনিক ইত্তেহাদ বাংলা ভাষার পক্ষে প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করেছিল। দৈনিক আজাদও ভুমিকা রেখেছিল৷ তারা বাংলা ভাষার সমর্থনে বেশ কিছু প্রবন্ধ ছাপায়। দেশভাগের আগে দৈনিক আজাদ ভাষার প্রশ্নে করা বেশ কিছু প্রবন্ধ প্রকাশ করে। তবে এ ব্যাপারে পত্রিকাটির সম্পাদকীয় নীতি শুরু থেকেই ছিল রহস্যঘেরা। আজাদে কখনো বাংলা ভাষার পক্ষে আবার কখনো বিপক্ষে বক্তব্য প্রকাশিত হতে দেখা যায়। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারির আগ পর্যন্ত ভাষার প্রশ্নে পত্রিকাটির কোনো সুনির্দিষ্ট অবস্থান ছিল না। ১৯৪৭ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর তারিখে তমদ্দুন মজলিসের পক্ষ থেকে ‘পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা বাংলা-না উর্দু?’ শিরোনামে একটি পুস্তিকা প্রকাশ করা হয়। এই পুস্তিকায় দৈনিক ইত্তেহাদের সম্পাদক আবুল মনসুর আহমদের প্রবন্ধও ছিল। শুরু থেকেই বাংলা ভাষার তীব্র বিরোধিতা করে আসছিল মর্নিং নিউজ। এই পত্রিকা ভাষা আন্দোলনের বিরোধিতা করে এবং ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে প্রবন্ধ, নিবন্ধ, সম্পাদকীয়, উপসম্পাদকীয় ও খবর প্রকাশ করত। পাকিস্তান সৃষ্টির পর বাংলা ভাষার প্রতি পাকিস্তানের একচোখা নীতি বিষয়ে তমদ্দুন মজলিসের কয়জন নেতা মন্ত্রী ফজলুর রহমানের সাথে আলোচনা করেন, কিন্তু মন্ত্রী বিষয়টিকে ' অনিচ্ছাকৃত ভুল’ বলে বক্তব্য করেন। ইত্তেহাদ পত্রিকা তাঁর এই বক্তব্যের ওপর ‘ভুলের পুনরাবৃত্তি’ শীর্ষক সম্পাদকীয় প্রকাশ করে। ১৯৪৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারিতে পাকিস্তান গণপরিষদের প্রথম অধিবেশন শুরু হয় । সেখানে পূর্ব পাকিস্তানের প্রতিনিধি ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত উর্দু ও ইংরেজির সঙ্গে বাংলাকে গণপরিষদের অন্যতম ভাষা হিসেবে ব্যবহার করার দাবি তোলেন। ১৯৪৮ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি আনন্দবাজার পত্রিকা এবং ২৭ ফেব্রুয়ারি অমৃত বাজার পত্রিকা এই খবর প্রকাশ করে ৷ ১৯৪৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে গণপরিষদে খাজা নাজিমুদ্দিন বলেছিলেন, পূর্ব পাকিস্তানের অধিকাংশ অধিবাসীর মনোভাব রাষ্ট্রভাষা হিসেবে উর্দুর পক্ষে। ১৯৪৮ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারিতে দৈনিক আজাদ তাঁর এই বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ করে সম্পাদকীয় প্রকাশ করে। এই সম্পাদকীয়র বক্তব্যটি বাংলা ভাষার পক্ষে পত্রিকাটির জোরালো সমর্থন নির্দেশ করে। কিন্তু ভাষা আন্দোলনের সময় পত্রিকাটি সর্বতোভাবে উর্দুকেই সমর্থন করে তাও একই বছরে৷ কিছু পত্রিকা বাংলা ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে। ১৯৪৮ সালের ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলে গঠিত সংগ্রাম পরিষদে ‘ইনসাফ’, ‘জিন্দেগী’ ও ‘দেশের দাবী’ পত্রিকা থেকে তিনজন করে প্রতিনিধি নেওয়া হয়। ১৯৪৮ সালের পর বাংলা ভাষা আন্দোলন কিছুটা স্তিমিত হয়ে পড়ে। তবে পশ্চিম পাকিস্তানের নেতারা ষড়যন্ত্র করে। বাংলা ভাষায় আরবি হরফ প্রবর্তনের চেষ্টা করে যা এই ষড়যন্ত্রের একটি রূপ। দৈনিক আজাদে বিষয়টি নিয়ে সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রমের খবর বিস্তারিতভাবে প্রকাশিত হয় ১৯৫০ সালের ২৪ মে'তে। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি সকালেই ছাত্রছাত্রীতে পূর্ণ হয়ে যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ। তৎকালীন আমতলায় সভা বসেছিল । ১৪৪ ধারা ভঙ্গের পক্ষে-বিপক্ষে চলে তর্ক-বিতর্ক। একপর্যায়ে ১৪৪ ধারা ভঙ্গের ঘোষণা আসে। স্লোগান ওঠে, ‘১৪৪ ধারা ভাঙতে হবে’, ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’। আন্দোলন শুরু হয়। ২১ ফেব্রুয়ারি পুলিশ গুলি চালায়। এবং ভাষার জন্য অনেকে জীবন দেন। ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় গুলিবর্ষণের ঘটনার পর ভাষার প্রশ্নে আগের রহস্যের জাল ছিন্ন করে দৈনিক আজাদ। সেদিন সন্ধ্যায় বিশেষ টেলিগ্রাম প্রকাশ করে দৈনিক আজাদ । ‘ছাত্রদের তাজা খুনে ঢাকার রাজপথ রঞ্জিত’ ব্যানার শিরোনাম করা হয়। পুলিশের গুলিবর্ষণের প্রতিবাদে আজাদ সম্পাদক আবুল কালাম শামসুদ্দীন প্রাদেশিক পরিষদ থেকে পদত্যাগ করেন। ঘটনার প্রতিক্রিয়া নিয়ে পরবর্তী কয়েক দিন দৈনিক আজাদ প্রচুর সংবাদ ছাপে। দৈনিক আজাদ ভাষা আন্দোলনের পক্ষে সোচ্চার ভূমিকা নেয়। অন্যদিকে মর্নিং নিউজ ছিল উর্দু ভাষার সমর্থক। পত্রিকাটি ভাষা আন্দোলনের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালিয়েছিল । ২১ ফেব্রুয়ারির ঘটনাকে তারা অন্য রূপ দিয়ে ২২ ফেব্রুয়ারি খবর প্রকাশ করে। ২২ ফেব্রুয়ারি বিক্ষুব্ধ জনতা ভিক্টোরিয়া পার্কের কাছে অবস্থিত মর্নিং নিউজের প্রেস ও অফিস জ্বালিয়ে দেয়। বাংলা ভাষাপ্রেমী জনতার ক্ষোভের আগুনে পুড়ে ছাই হয় মর্নিং নিউজ। চিত্রশালা আরও দেখুন ভাষা আন্দোলনের কালপঞ্জি আরবি হরফে বাংলা লিখন ২০১৮-র নিরাপদ সড়ক চাই শিক্ষার্থী আন্দোলন ২০১৮-র কোটা সংস্কার আন্দোলন ২০১৫ বাংলাদেশের ছাত্র বিক্ষোভ তথ্যসূত্র গ্রন্থপঞ্জি আরও পড়ুন আবুল মনসুর আহমদ, আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর, ঢাকা, ১৯৭৫। আবদুল হক, ভাষা-আন্দোলনের আদি পর্ব, ঢাকা, ১৯৭৬। বদরুদ্দীন উমর, পূর্ব বাঙলার ভাষা আন্দোলন ও তৎকালীন রাজনীতি, ১ম খন্ড, ঢাকা, ১৯৭৯। বহিঃসংযোগ বিষয়শ্রেণী:বাংলাদেশের ইতিহাস বিষয়শ্রেণী:পাকিস্তানের ইতিহাস বিষয়শ্রেণী:বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বিষয়শ্রেণী:ভাষাগত অধিকার
বাংলা ভাষা আন্দোলন
বান্দরবান জেলা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত চট্টগ্রাম বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। এটি একটি পার্বত্য জেলা। আয়তন বান্দরবান জেলার মোট আয়তন ৪৪৭৯.০২ বর্গ কিলোমিটার। জনসংখ্যার উপাত্ত বান্দরবান জেলা বাংলাদেশের সবচেয়ে কম জনবসতিপূর্ণ জেলা। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী এ জেলার মোট জনসংখ্যা ৩,৮৮,৩৩৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ ২,০৩,৩৫০ জন এবং মহিলা ১,৮৪,৯৮৫ জন। মোট পরিবার ৮০,১০২টি। জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গ কিলোমিটারে প্রায় ৮৭ জন। ধর্মবিশ্বাস অনুসারে এ জেলার মোট জনসংখ্যার ৪৯.৩৩% মুসলিম, ৩.৬২% হিন্দু, ৩৪.৮৮% বৌদ্ধ এবং ১২.১৭% খ্রিস্টান ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বী। মুসলিম ও হিন্দুরা বাংলাভাষী। এছাড়াও এ জেলায় মারমা, চাকমা, বম, মুরং, ত্রিপুরা, খেয়াং, খুমি, লুসাই প্রভৃতি ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে। অবস্থান ও সীমানা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাংশে ২১°১১´ থেকে ২২°২২´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯২°০৪´ থেকে ৯২°৪১´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ জুড়ে বান্দরবান জেলার অবস্থান। রাজধানী ঢাকা থেকে এ জেলার দূরত্ব প্রায় ৩২৫ কিলোমিটার এবং চট্টগ্রাম বিভাগীয় সদর থেকে প্রায় ৭৫ কিলোমিটার। এ জেলার পশ্চিমে কক্সবাজার জেলা ও চট্টগ্রাম জেলা, উত্তরে রাঙ্গামাটি জেলা, পূর্বে রাঙ্গামাটি জেলা ও মায়ানমারের চিন প্রদেশ এবং দক্ষিণে ও পশ্চিমে মায়ানমারের রাখাইন প্রদেশ অবস্থিত। ইতিহাস প্রতিষ্ঠাকাল এই অঞ্চল সম্পর্কে সর্বপ্রাচীন তথ্য পাওয়া যায় তুংগো সাম্রাজ্য-এর হাইসাওয়াদি রাজ্যের প্রথম সার্কেল প্রধান বা গভর্নর, তবাং শোয়েথী-এর দিনলিপি থেকে, যিনি ১৫৩১ খ্রিষ্টাব্দে নিযুক্ত হন। ব্রিটিশ সরকার পঞ্চম বোমং, কং হ্লা প্রু-কে (১৭২৭-১৮১১) সার্কেল প্রধান বা গভর্নর চিহ্নিত এবং ষষ্ঠ বোমং, সাক থাই প্রুকে স্বীকৃতি প্রদান করে। পরবর্তী কালে, চিটাগং হিল ট্রাক্টস রেগুলাশন ১৯০০-এর মাধ্যমে তথা আইন প্রয়োগ করে এই অঞ্চলের স্বকীয়তার প্রকাশ করা হয়, যা এখনো পর্যন্ত অব্যাহত রয়েছে। ১৯৪৭ সালের দেশ ভাগের পর, বান্দরবান জেলা ১৯৫১ সালে পুর্ব পাকিস্তানের মহকুমা হিসেবে প্রশাসনিক কার্যক্রম শুরু করে। এটি রাঙ্গামাটি জেলার প্রশাসনিক ইউনিট ছিল।১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর সমগ্র বান্দরবান জেলা বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। পরর্বতীতে ১৯৮১ সালের ১৮ এপ্রিল, তৎকালীন লামা মহকুমার ভৌগলিক ও প্রশাসনিক সীমানাসহ সাতটি উপজেলার সমন্বয়ে বান্দরবান পার্বত্য জেলা হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে। নামকরণ বান্দরবান জেলার নামকরণ নিয়ে একটি কিংবদন্তি রয়েছে। এলাকার বাসিন্দাদের প্রচলিত রূপকথায় আছে, এ এলাকায় একসময় অসংখ্য বানর বাস করত। আর এই বানরগুলো শহরের প্রবেশমুখে ছড়ার পাড়ে পাহাড়ে প্রতিনিয়ত লবণ খেতে আসত। এক সময় অনবরত বৃষ্টির কারণে ছড়ার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বানরের দল ছড়া পাড় হয়ে পাহাড়ে যেতে না পারায় একে অপরকে ধরে ধরে সারিবদ্ধভাবে ছড়া পাড় হয়। বানরের ছড়া পারাপারের এই দৃশ্য দেখতে পায় এই জনপদের মানুষ। এই সময় থেকে এই জায়গাটির পরিচিতি লাভ করে ম্যাঅকছি ছড়া নামে। অর্থাৎ মারমা ভাষায় ম্যাঅক অর্থ বানর আর ছি অর্থ বাঁধ। কালের প্রবাহে বাংলা ভাষাভাষির সাধারণ উচ্চারণে এই এলাকার নাম রুপ লাভ করে বান্দরবান হিসাবে। বর্তমানে সরকারি দলিল পত্রে বান্দরবান হিসাবে এই জেলার নাম স্থায়ী রুপ লাভ করেছে। তবে মারমা ভাষায় বান্দরবানের নাম রদ ক্যওচি ম্রো। সাধারণ ইতিহাস বান্দরবান পার্বত্য চট্টগ্রামের অংশ। এই অঞ্চলটি ১৫৫০ সালের দিকে প্রণীত বাংলার প্রথম মানচিত্রে বিদ্যমান ছিল। তবে এর প্রায় ৬০০ বছর আগে ৯৫৩ সালে আরাকানের রাজা এই অঞ্চল অধিকার করেন। ১২৪০ সালের দিকে ত্রিপুরার রাজা এই এলাকা দখল করেন। ১৪০০ শতকের দিকে চাকমা রাজা এই অঞ্চল দখল করেন। ১৫৭৫ সালে আরাকানের রাজা এই অঞ্চল আক্রমণ করে কিছু এলাকা পুনর্দখল করেন, এবং ১৬৬৬ সাল পর্যন্ত অধিকারে রাখেন। মুঘল সাম্রাজ্য ১৬৬৬ থেকে ১৭৬০ সাল পর্যন্ত এলাকাটি সুবা বাংলার অধীনে শাসন করে। ১৭৬০ সালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এই এলাকা নিজেদের আয়ত্তে আনে। ১৮৬০ সালে এটি ব্রিটিশ ভারতের অংশ হিসাবে যুক্ত হয়। ব্রিটিশরা এই এলাকার নাম দেয় চিটাগাং হিল ট্র্যাক্টস বা পার্বত্য চট্টগ্রাম। এটি চট্টগ্রাম জেলার অংশ হিসাবে বাংলা প্রদেশের অন্তর্গত ছিল। মূলত চিটাগাং হিল ট্র্যাক্টস রেগুলাসন ১৯০০ দ্বারা এই অঞ্চল আনুষ্ঠানিকভাবে আরাকান রাজ্যের অংশ থেকে তৎকালীন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের আওতায় আসে এবং চাকমা সার্কেল, মং সার্কেল ও বোমাং সার্কেল প্রতিষ্ঠিত হয় এবং প্রত্যেক সার্কেলে সার্কেল চীফ বা রাজা নিযুক্ত করা হয়। বান্দরবান জেলা ছিল বোমাং সার্কেলের অন্তর্ভুক্ত। বোমাং রাজ পরিবার ১৬ শতক থেকেই এই অঞ্চল শাসন করছিল। তাই এ জেলার আদি নাম বোমাং থং। মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় এ উপজেলায় পাকবাহিনী ব্যাপক গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও নির্যাতন চালায়। নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তুমুক্রু পাড়া ও সোনাইছড়ি জুমখোলা পাড়াতে মুক্তিযোদ্ধাদের অস্থায়ী ক্যাম্প ছিল। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন স্মৃতিস্তম্ভ: ২টি প্রশাসনিক এলাকাসমূহ thumb|জেলা প্রশাসকের কার্যালয়|270x270পিক্সেল বান্দরবান জেলা ৭টি উপজেলা, ৭টি থানা, ২টি পৌরসভা, ৩৩টি ইউনিয়ন, ৯৬টি মৌজা, ১৪৮২টি গ্রাম ও ১টি সংসদীয় আসন নিয়ে গঠিত। উপজেলাসমূহ বান্দরবান জেলায় মোট ৭টি উপজেলা রয়েছে। উপজেলাগুলো হল: সংসদীয় আসন শিক্ষা ব্যবস্থা ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী এ জেলার সাক্ষরতার হার ৩৫.৯%। এ জেলায় রয়েছে: কলেজ : ৬টি মাদ্রাসা : ৮টি টেক্সটাইল ভোকেশনাল প্রেনিং ইনস্টিটিউট : ১টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় : ২৭টি কারিগরী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান : ২টি প্রাথমিক বিদ্যালয় : ৩৬৯টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভূ-প্রকৃতি বান্দরবান অঞ্চলের পাহাড়গুলো মূলত টারসিয়ারী যুগের। পারতপক্ষে ভারতীয় ও ইউরেশীয় টেকটনিক পাত-এর সংঘর্ষের ফলে বান্দরবানের নৈসর্গিক পাহাড়ের সৃষ্টি হয়। কর্কট ক্রান্তি ও বিষুবরেখার মধ্যবর্তী অঞ্চল হওয়ায় এখানকার জলবায়ু নাতিশীতোষ্ণ। নদ-নদী thumb|সাঙ্গু নদী এই জেলার অন্যতম নদী সাঙ্গু নদী, যা সাংপো বা শঙ্খ নামেও পরিচিত। এই নদীর বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল, এটি বাংলাদেশের একমাত্র নদী যা দক্ষিণ থেকে উত্তরে প্রবাহিত হয়। অন্যান্য নদীর মধ্যে রয়েছে মাতামুহুরী নদী এবং বাঁকখালী নদী। যোগাযোগ ব্যবস্থা alt=আলীকদম|থাম্ব|270x270পিক্সেল|থানচি থেকে আলীকদম বান্দরবান জেলায় যোগাযোগের প্রধান দুইটি সড়ক চট্টগ্রাম-বান্দরবান মহাসড়ক এবং চন্দ্রঘোনা-বান্দরবান সড়ক। সব ধরনের যানবাহনে যোগাযোগ করা যায়। এছাড়া জেলার আভ্যন্তরীণ সংযোগ সড়কগুলো হল চিম্বুক-রুমা, বান্দরবান-রোয়াংছড়ি-রুমা, আজিজনগর-গজালিয়া-লামা, খানহাট-ধোপাছড়ি-বান্দরবান, বান্দরবান-চিম্বুক-থানচি-আলীকদম-বাইশারী-ঘুমধুম এবং চিম্বুক-টংকাবতী-বার আউলিয়া। প্রধান যোগাযোগ মাধ্যম সিএনজি চালিত অটোরিক্সা। ভাষা ও সংস্কৃতি সরকারি ভাষা হিসেবে বাংলা প্রচলিত। স্থানীয় বাঙ্গালিরা চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলে। এছাড়াও অন্যান্য ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ভাষা হিসেবে মারমা, ম্রো, ত্রিপুরা, বম, লুসাই, চাকমা, তঞ্চঙ্গ্যা, চাক, খেয়াং, খুমী, পাংখুয়া ইত্যাদি প্রচলিত। alt=ফানুস|থাম্ব|550x550পিক্সেল|ফানুস বান্দরবানের মারমাদের বর্ষবরণ উৎসবের নাম সাংগ্রাই। এছাড়া বড় উৎসবের মধ্যে রয়েছে ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে বা প্রবারণা পূর্ণিমা, ঈদুল ফিতর, ঈদুল আযহা, দূর্গা পূজা ইত্যাদি ধর্মীয় উৎসব। অর্থনীতি বান্দরবান পার্বত্য জেলা দুর্গম পাহাড়ী এলাকা হলেও এটি প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ বিধায় জাতীয় পর্যায়ে এ জেলার গুরুত্ব অনস্বীকার্য। বিস্তীর্ণ পাহাড়ী এলাকায় অবস্থিত অশ্রেণীভুক্ত বনাঞ্চল মূল্যবান কাঠ ও বনজ সম্পদে পরিপূর্ণ। একই সঙ্গে এ জেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত সাঙ্গু ও মাতামুহুরী নদী উৎপাদিত বনজ সম্পদ আহরণ ও বিপননে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। এ জেলার উৎপাদিত প্রধান বনজ দ্রব্যের মধ্যে সেগুন, গামারী, গর্জন, শিল কড়ই, তৈলসুর ইত্যাদি মূল্যবান কাঠ ও বাঁশ প্রধান। কৃষিজ দ্রব্যের মধ্যে আনারস, কলা, পেঁপে, কমলা, লেবু ও আলু সর্বোচ্চ উৎপাদিত ফসল। তবে এই অঞ্চলের আরেকটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য প্রচুর বিন্নি চাল উৎপাদন। সাদা, লাল ও কালো এই তিন রকমের বিন্নি চালের উৎপাদন এই অঞ্চলে দেখা যায়। তাছাড়া, এই অঞ্চলের জুমের ভুট্টার স্বাদ বেশ সুস্বাদু। মনোরম নৈসর্গিক দৃশ্যের সমাহার ও বৈচিত্র্যময় সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার সমৃদ্ধ বান্দরবান পার্বত্য জেলা ঠিক যেন ছবির মত। দেশের সর্বোচ্চ পর্বত শৃঙ্গসহ সর্বত্র সবুজ-শ্যামলিমা গিরিশ্রেণীর এক অপরূপ দৃশ্য এ জেলায়। ভারত ও মায়ানমার এ দুটি দেশের আন্তর্জাতিক সীমানায় অবস্থিত দেশের সর্বাধিক সংখ্যক উপজাতির বসবাস সংবলিত এ জেলা স্বকীয় বৈশিষ্ট্যে স্বাতন্ত্র্যমণ্ডিত। এখানকার অর্থনৈতিক অবস্থা ধীরে ধীরে পর্যটন-কেন্দ্রিক হয়ে উঠছে। এর ফলে পর্যটকদের সমাগম বেড়ে উঠছে এবং সাথে সাথে প্রাকৃতিক দূষণের হারও বাড়ছে। পত্র পত্রিকা বান্দরবান জেলা থেকে প্রকাশিত সংবাদপত্রের একটি তালিকা নিচে দেয়া হল: দর্শনীয় স্থান alt=জাদিপাই ঝর্না|থাম্ব|জাদিপাই ঝর্ণা alt=নাফাখুম|থাম্ব|নাফাখুম জলপ্রপাত বান্দরবান জেলার দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে রয়েছে: আমিয়াখুম জলপ্রপাত আলীকদম গুহা আলীকদম সেনানিবাস কিয়াচলং লেক ঋজুক জলপ্রপাত কেওক্রাডং চিম্বুক পাহাড় ও উপজাতীয় গ্রাম চিংড়ি ঝর্ণা জাদিপাই ঝর্ণা জীবননগর ডামতুয়া ঝর্ণা ডিম পাহাড় তাজিংডং তিনাপ সাইতার ত্লাবং ঝর্ণা দেবতাখুম নাফাখুম জলপ্রপাত নীলগিরি পর্যটন কেন্দ্র নীলাচল প্রান্তিক লেক alt=বগাকেইন লেক|থাম্ব|279x279পিক্সেল|বগাকাইন হ্রদ বগাকাইন হ্রদ বান্দরবান সরকারি কলেজ বান্দরবান সেনানিবাস বুদ্ধ ধাতু জাদি মেঘলা পর্যটন কেন্দ্র রাইখিয়াং খাল; বাংলাদেশের দীর্ঘতম খাল। রাজবিহার এবং উজানিপাড়া বিহার রেমাক্রী লুং ফের ভা সাইতার শৈলপ্রপাত সাকা হাফং সাতভাইখুম জলপ্রপাত সাফাখুম জলপ্রপাত কৃতী ব্যক্তিত্ব অং শৈ প্রু চৌধুরী ১৫তম বোমাং রাজা, প্রাক্তন সাংসদ এবং চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী। ইউ কে চিং বীর বিক্রম খেতাব প্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা। বীর বাহাদুর উশৈ সিং রাজনীতিবিদ। চিত্রশালা আরও দেখুন বাংলাদেশের জেলাসমূহ চট্টগ্রাম বিভাগ বান্দরবান সদর উপজেলা তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ বিষয়শ্রেণী:বান্দরবান জেলা বিষয়শ্রেণী:পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়শ্রেণী:চট্টগ্রাম বিভাগের জেলা বিষয়শ্রেণী:বাংলাদেশের জেলা
বান্দরবান জেলা
গাজীপুর জেলা বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চলের ঢাকা বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। অবস্থানগত কারণে এটি বাংলাদেশের একটি বিশেষ শ্রেণীভুক্ত জেলা। ইতিহাস আর ঐতিহ্যের সংশ্লেষে কালোত্তীর্ণ মহিমায় আর বর্ণিল দীপ্তিতে ভাস্বর অপার সম্ভাবনায় ভরপুর গাজীপুর জেলা। মোগল - ব্রিটিশ - পাকিস্তান আমলে বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে গাজীপুরের রয়েছে বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা। ১৯৭১ সালের ১৯ মার্চ মহান মুক্তিযুদ্ধের সূচনা পর্বে গাজীপুরেই সংঘটিত হয় প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধযুদ্ধ। গাজীপুরে রয়েছে জাতীয় পর্যায়ের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সদর দপ্তরসহ ১৯টি কেপি আই, ৫টি বিশ্ববিদ্যালয় ও দেশের একমাত্র হাইটেক পার্কসহ বহু সংখ্যক সরকারী, স্বায়ত্বশাসিত, বেসরকারী প্রতিষ্ঠান এবং ক্ষুদ্র/মাঝারী ও ভারী শিল্প কারখানাসহ দেশের তৈরী পোষাক শিল্পের বিরাট অংশ। মুসলিম বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমাবেশ বিশ্ব ইজতেমা টংগীর তুরাগ নদীর তীরে অনুষ্ঠিত হয়। ভৌগোলিক সীমানা গাজীপুর জেলার উত্তরে ময়মনসিংহ জেলা ও কিশোরগঞ্জ জেলা, দক্ষিণে ঢাকা জেলা ও নারায়ণগঞ্জ জেলা, পূর্বে কিশোরগঞ্জ জেলা ও নরসিংদী জেলা এবং পশ্চিমে ঢাকা জেলা ও টাঙ্গাইল জেলা অবস্থিত। প্রশাসনিক এলাকাসমূহ গাজীপুর জেলায় ৫টি উপজেলা রয়েছে; এগুলি হলোঃ শ্রীপুর উপজেলা কালিয়াকৈর উপজেলা কালীগঞ্জ উপজেলা কাপাসিয়া উপজেলা গাজীপুর সদর উপজেলা এবং এছাড়াও গাজীপুর শহর সিটি কর্পোরেশন এর অন্তর্ভুুক্ত। ইতিহাস ইতিহাস খ্যাত ভাওয়াল পরগণার গহীনবনাঞ্চল আর গৈরিক মৃত্তিকাকোষের টেকটিলায় দৃষ্টিনন্দন ঐতিহাসিক এ জনপদ ১৯৮৪ সালের ১ মার্চ গাজীপুর জেলা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। শিক্ষা উত্তর লস্কর চালা উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজ ৮০ নং গলাচিপা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বিশ্ববিদ্যালয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় বঙ্গবন্ধু ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় দারুল ইহসান ইসলামিক ইউনিভার্সিটি ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজি ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয় ভাওয়াল বদরে আলম সরকারী কলেজ টংগী সরকারি কলেজ গাজীপুর ক্যান্টনমেন্ট কলেজ গাজীপুর সরকারি মহিলা কলেজ পুবাইল ডিগ্রি কলেজ দারুসসালাম ফাজিল মাদ্রাসা কাজী আজিম উদ্দীন কলেজ শ্রীপুর বীর মুক্তিযোদ্ধা রহমত আলী সরকারী কলেজ, শ্রীপুর, গাজীপুর। ভাওয়াল মির্জাপুর কলেজ পিরুজালী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় পিরুজালী উচ্চ বিদ্যালয় পিরুজালী আমানিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পিরুজালী আমানিয়া ফাজিল (বি.এ) মাদ্রাসা যোগীরছিট উচ্চ বিদ্যালয় দর্শনীয় স্থান. ভাওয়াল রাজবাড়ী, জয়দেবপুর রথখোলা, জয়দেবপুর ইন্দ্রাকপুর (প্রাচীন রাজধানী), শ্রীপুর উধুর জগন্নাথদেবের বিগ্রহ মন্দির, পূবাইল বলধার জমিদার বাড়ী, বাড়ীয়া টোক বাদশাহী মসজিদ, কাপাসিয়া পূবাইল জমিদার বাড়ী, পূবাইল সেন্ট নিকোলাস চার্চ, কালীগঞ্জ শ্রীফলতলী জমিদার বাড়ী, কালিয়াকৈর. বলিয়াদী জমিদার বাড়ী, বলিয়াদি, কালিয়াকৈর. ভাওয়াল রাজ শ্মশানেশ্বরী, জয়দেবপুর শৈলাট, শ্রীপুর কাশিমপুর জমিদার বাড়ী, গাজীপুর সদর দত্তপাড়া জমিদার বাড়ী, টঙ্গী কপালেশ্বর (ধ্বংসপ্রাপ্ত পুরাকীর্তি), রাজা শিশু পালের রাজধানী একডালা দুর্গ, কাপাসিয়া মীর জুলমার সেতু, টঙ্গী সাকাশ্বর স্তম্ভ, কালিয়াকৈর উধুর জগন্নাথদদেবের বিগ্রহ মন্দির ভাওয়াল রাজবাড়ী দত্তপাড়া জমিদার বাড়ি বলধা জমিদার বাড়ি ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান আনসার একাডেমী, সফিপুর নুহাশ পল্লী জাগ্রত চৌরঙ্গী বলিয়াদী জমিদার বাড়ী শ্রীফলতলী জমিদার বাড়ী কাশিমপুর জমিদার বাড়ি নাগবাড়ী, চান্দনা, চৌরাস্তা। নাগরী, পাঞ্জুরা চার্চ রাংগামাটিয়া, তুমিলিয়া, কালীগঞ্জ বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক মন পুড়া পার্ক, কাশিমপুর,গাজীপুর নাগরী টেলেন্টিনুর সাধু নিকোলাসের গীর্জা বড় ভূঁইয়া বাড়ী, লুটিয়ারচালা, ভবানীপুর, গাজীপুর সোহাগ পল্লী আনন্দ পার্ক ঢাকা রিসোট রাঙ্গামাটি ওয়াটার ফ্রন্ট প্যাদা_টিং_টিং , মীরবহর, চান্দনা চৌরাস্তা,গাজীপুর বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট পূর্বাচল বাধুন কানাইয়া জিন্দা পার্ক ওয়াদ্দাদীঘী , শ্রীপুর, গাজীপুর। এছাড়াও কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক ইউনিয়নের বাঁশতলী নামক গ্রামে সাম্প্রতিককালে ৩০০ বছরের পুরানো একটি সাদা পাকুড় গাছ আবিস্কৃত হয়েছে যা এ পর্যন্ত বাংলাদেশের আর কোথাও দেখা যায় নি। গাছটিকে ঘিরে পর্যটনশিল্প গড়ে উঠার সম্ভাবনা রয়েছে। বরেণ্য ব্যক্তি: মেঘনাদ সাহা (৬ অক্টোবর, ১৮৯৩ – ফেব্রুয়ারি ১৬,১৯৫৬) ছিলেন একজন জ্যোতির্পদার্থবিজ্ঞানী যিনি পদার্থবিজ্ঞানে থার্মাল আয়নাইজেসন তত্ত্বের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে বিখ্যাত। তার আবিষ্কৃত সাহা আয়োনাইজেসন সমীকরণ নক্ষত্রের রাসায়নিক ও ভৌত ধর্মাবলী ব্যাখ্যায় ব্যবহৃত হয়। মোঃ সামসুল হক, স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ফকির শাহাবুদ্দীন, বাংলাদেশের প্রথম অ্যাটর্নি জেনারেল। তাজউদ্দিন আহমেদ [বিএল] (মৃত্যু), বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী। ব্রিগেডিয়ার এএসএম হান্নান শাহ [বিএনপি] (মৃত্যু), বাংলাদেশ পাটমন্ত্রী। আহসানউল্লাহ মাস্টার রাজনীতিবিদ। এম জাহিদ হাসান - পদার্থবিদ,ভাইল ফার্মিয়ন কণার আবিষ্কারক। ল ফার্মিয়ন কণার আবিষ্কারক। আবু জাফর শামসুদ্দীন আর্চবিশপ পৌলিনুস ডি কস্তা, বাংলাদেশের প্রাক্তন সর্বোচ্চ ক্যাথলিক ধর্মীয় নেতা। আ.ক.ম মোজাম্মেল হক- এমপি (গাজীপুর ১) এবং মাননীয় মন্ত্রী মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় জাহিদ আহসান রাসেল - এমপি গাজীপুর আসন নং ২ ও মাননীয় প্রতিমন্ত্রী যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন (সবুজ)-এমপি গাজীপুর ৩নং আসন আশরাফুল আলম খোকন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপপ্রেস সচিব। লায়ন মোঃ গনি মিয়া বাবুল- (সাংবাদিক), চেয়ারম্যান - জাতীয় সাংবাদিক সংস্থা,স্থায়ী পরিষদ। প্রতিষ্ঠাতা প্রধান উপদেষ্টা, গাজীপুর জেলা রিপোর্টার্স ক্লাব। সভাপতি- বঙ্গবন্ধু গবেষণা পরিষদ (কেন্দ্রীয় কমিটি)। যুগ্ম মহাসচিব-নিরাপদ সড়ক চাই(নিসচা),কেন্দ্রীয় কমিটি। আরও দেখুন বাংলাদেশ তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ জেলা পরিষদ আইন, ২০০০ বিষয়শ্রেণী:বাংলাদেশের জেলা বিষয়শ্রেণী:গাজীপুর জেলা বিষয়শ্রেণী:ঢাকা বিভাগের জেলা
গাজীপুর জেলা
টাঙ্গাইল জেলা বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চলে অবস্থিত যা ঢাকা বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। উপজেলার সংখ্যানুসারে টাঙ্গাইল বাংলাদেশের একটি “এ” শ্রেণীভুক্ত জেলা। এর জনসংখ্যা প্রায় ৩৮ লক্ষ এবং আয়তন ৩৪১৪.৩৫ বর্গ কিলোমিটার। টাঙ্গাইল আয়তনের ভিত্তিতে ঢাকা বিভাগের সর্ববৃহৎ এবং জনসংখ্যার ভিত্তিতে ২য় সর্ববৃহৎ জেলা। ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দ অবধি টাঙ্গাইল ছিল অবিভক্ত ময়মনসিংহ জেলার একটি মহকুমা; ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দে টাঙ্গাইল মহকুমাকে জেলায় উন্নীত করা হয়। এটি একটি নদী বিধৌত কৃষিপ্রধান অঞ্চল। এই জেলা যমুনা নদীর তীরে অবস্থিত এবং এর মাঝ দিয়ে লৌহজং নদী প্রবহমান। অবস্থান ও আয়তন টাংগাইল জেলা ঢাকা হতে প্রায় ৮৪ কি মি দূরে অবস্থিত। এই জেলার পূর্বে রয়েছে ময়মনসিংহ ও গাজীপুর জেলা, পশ্চিমে সিরাজগঞ্জ জেলা, উত্তরে জামালপুর জেলা, দক্ষিণে ঢাকা ও মানিকগঞ্জ জেলা। এর আয়তন ৩৪১৪.৩৮ বর্গ কি.মি.। প্রশাসনিক এলাকাসমূহ টাঙ্গাইল জেলায় মোট উপজেলার সংখ্যা ১২ টি এবং মোট ইউনিয়নের সংখ্যা ১১৮ টি। টাঙ্গাইল সদর উপজেলা টাঙ্গাইল সদর উপজেলায় মোট ইউনিয়নের সংখ্যা ১২ টি। করটিয়া, ঘারিন্দা, গালা, পোড়াবাড়ী, সিলিমপুর, কাকুয়া, কাতুলী, মগড়া, মাহামুদনগর, হুগড়া, দাইন্যা এবং বাঘিল। কালিহাতি উপজেলা কালিহাতি উপজেলায় মোট ইউনিয়নের সংখ্যা ১৩ টি। কোকডহড়া, গোহালিয়াবাড়ী, দশকিয়া, দুর্গাপুর, নাগবাড়ী, নারান্দিয়া, পাইকড়া, পারখি, বল্লা, বাংড়া, বীরবাসিন্দা, সল্লা, সহদেবপুর। ঘাটাইল উপজেলা ঘাটাইল উপজেলায় মোট ইউনিয়নের সংখ্যা ১৪ টি। দেউলাবাড়ী, ঘাটাইল, জামুরিয়া, দিগড়, দিঘলকান্দি, আনেহলা, দেওপাড়া, ধলাপাড়া, সন্ধানপুর, লোকেরপাড়া এবং রসুলপুর,সংগ্রামপুর ইউনিয়ন,লক্ষিন্দর ইউনিয়ন,সাগরদিঘী ইউনিয়ন। বাসাইল উপজেলা বাসাইল উপজেলায় মোট ইউনিয়নের সংখ্যা ৬ টি। কাউলজানী, কাঞ্চনপুর, কাশিল, ফুলকী, বাসাইল এবং হাবলা। গোপালপুর উপজেলা গোপালপুর উপজেলায় মোট ইউনিয়নের সংখ্যা ৭ টি। হাদিরা, নগদাশিমলা, ঝাওয়াইল, হেমনগর, আলমনগর, মির্জাপুর এবং ধোপাকান্দি। মির্জাপুর উপজেলা মির্জাপুর উপজেলায় মোট ইউনিয়নের সংখ্যা ১৪ টি। মহেড়া, ফতেপুর, জামুর্কী, বানাইল, আনাইতারা, ভাতগ্রাম, ওয়ার্শী, বহুরিয়া, গোড়াই, তরফপুর, আজগানা, বাঁশতৈল, লতিফপুর, ভাওড়া। ভূঞাপুর উপজেলা ভূঞাপুর উপজেলায় মোট ইউনিয়নের সংখ্যা ৬ টি। ফলদা, অর্জুনা, গাবসারা, গোবিন্দাসী, অলোয়া, নিকরাইল। নাগরপুর উপজেলা নাগরপুর উপজেলায় মোট ইউনিয়নের সংখ্যা ১২ টি। নাগরপুর, ভাররা, সহবতপুর, গয়হাটা, বেকড়া, সলিমাবাদ, ধুবরিয়া, ভাদ্রা, দপ্তিয়র, মামুদনগর, পাকুটিয়া এবং মোকনা। মধুপুর উপজেলা মধুপুর উপজেলায় মোট ইউনিয়নের সংখ্যা ৬ টি। আলোকদিয়া, আরণখোলা, আউশনাড়া, গোলাবাড়ী, মির্জাবাড়ী, শোলাকুড়ি। সখিপুর উপজেলা সখিপুর উপজেলায় মোট ইউনিয়নের সংখ্যা ৮ টি। কাকড়াজান, কালমেঘা, কালিয়া, গজারিয়া, দাড়িয়াপুর, বহেড়াতৈল, যাদবপুর এবং হাতীবান্ধা দেলদুয়ার উপজেলা দেলদুয়ার উপজেলায় মোট ইউনিয়নের সংখ্যা ৮ টি। আটিয়া, ডুবাইল, ফাজিলহাটি, পাথরাইল, লাউহা্টী, দেলদুয়ার, দেউলী এবং এলাসিন। ধনবাড়ী উপজেলা ধনবাড়ী উপজেলায় মোট ইউনিয়নের সংখ্যা ৭ টি। বীরতারা, বানিয়াজান, পাইস্কা, ধোপাখালী, যদুনাথপুর, মুশুদ্দি এবং বলিভদ্র। নামকরণ নামকরণের ইতিহাসঃ টাঙ্গাইলের নামকরণ বিষয়ে রয়েছে বহুজনশ্রুতি ও নানা মতামত। ১৭৭৮ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত রেনেল তাঁর মানচিত্রে এ সম্পূর্ণ অঞ্চলকেই আটিয়া বলে দেখিয়েছেন। ১৮৬৬ খ্রিস্টাব্দের আগে টাঙ্গাইল নামে কোনো স্বতন্ত্র স্থানের পরিচয় পাওয়া যায় না। টাঙ্গাইল নামটি পরিচিতি লাভ করে ১৫ নভেম্বর ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দে মহকুমা সদর দপ্তর আটিয়া থেকে টাঙ্গাইলে স্থানান্তরের সময় থেকে। টাঙ্গাইলের ইতিহাস প্রণেতা খন্দকার আব্দুর রহিম সাহেবের মতে, ইংরেজ আমলে এদেশের লোকেরা উচু শব্দের পরিবর্তে ‘টান’শব্দই ব্যবহার করতে অভ্যস্ত ছিল বেশি। এখনো টাঙ্গাইল অঞ্চলে ‘টান’শব্দের প্রচলন আছে। এই টানের সাথে আইল শব্দটি যুক্ত হয়ে হয়েছিল টান আইল। আর সেই টান আইলটি রূপান্তরিত হয়েছে টাঙ্গাইলে। আরেক জনশ্রুতি মতে নীলকর টেংগু সাহেবের গল্পই সব চেয়ে বেশি প্রচলিত। বৃটিশ শাসনের প্রায় প্রারম্ভে আকুরটাকুর ও শাহবালিয়া মৌজার মধ্যবর্তী এলাকায় টেংগু সাহেবের নীল চাষ ও নীলের কারখানা ছিল। পূর্বোক্ত দুই মৌজার সীমানা বরাবর তিনি উচু মেটোপথ বা আইল যাতায়াতের জন্য তৈরী করেছিলেন। ক’জন সাধারণ এই আইল কে টেংগু সাহেবের আইল বলে উল্লেখ করতো। সুতরাং অনুমান করা হয় যে, টাঙ্গাইল শব্দটি টেংগু সাহেবের আইল নামেরই অপভ্রংশ। আবার তরুণ গবেষক ইতিহাসবিদ, অনুবাদক জনাব খুররম হোসাইন তার ‘টাঙ্গাইলের স্থান নামঃ ইতিহাস ও কিংবদন্তী’নামক এক প্রবন্ধে উল্লেখ করেন যে, সুবাদার শায়েস্তাখান সামরিক উর্দির নীচে ছিল যার অসাধারণ কুটবুদ্ধি আর প্রশাসনিক দক্ষতা। মগ আর পর্তুগীজ জলদস্যুদের দমন করা যখন কোন ক্রমেই সম্ভব হচ্ছিলো না। তখন তাঁর চিন্তায় আসে দক্ষিণ ভারতের মালাবর অঞ্চলের মোপলাদের কথা, সমুদ্র পাড়ের এই সব মোপলা, যারা অসম সাহসী যোদ্ধা, সম্মুখ যুদ্ধে যারা কখনও পিছু হটে না, সেই সব মোপলাদের নিয়ে এলেন রংরুট করে। জলদস্যুদের উৎপাত যখন কিছুটা দমিত হলো তখন তাদের বসতির স্থান নির্ধারণ করলেন বর্তমান টাঙ্গাইল শহরের পশ্চিম প্রান্তে। মোপলাদের ধর্মগুরুকে তারা নিজস্ব ভাষায় তাংগাইল বলে টাঙ্গাইল এই মোপলা সম্প্রদায় আজও টিকে আছে। এই অঞ্চলের যারা নিজেদের পরিচয় দেয় মাহিফরাস বলে। মৎস্য ব্যবসা যাদের প্রধান জীবিকা। টাঙ্গাইল অঞ্চলের লোকজন তাদেরকে নিকারি বলে জানে। পূবোল্লিখিত বিষয়গুলো বিচার করে আমরা জোর দিয়ে বলতে পারি যে, মোপলাদের সর্দারকে যে স্থানে জায়গা দেয়া হয়েছিল সেই স্থানটিই ক্রমে টাঙ্গাইল নামে পরিচিত হতে থাকে। এমতটির পেছনে রয়েছে যথেষ্ট ঐতিহাসিক প্রমাণাদি। ডঃ তারা চাঁদের "The influence of Islam on Indian culture"- গ্রন্থেও এ বিষয়ে সাক্ষ্য মেলে। টাঙ্গাইলের নামকরণ নিয়ে আরো বিভিন্নজনে বিভিন্ন সময়ে নানা মত প্রকাশ করেছেন। কারো কারো মতে, বৃটিশ শাসনামলে মোগল প্রশাসন কেন্দ্র আটিয়াকে আশ্রয় করে যখন এই অঞ্চল জম-জমাট হয়ে উঠে। সে সময়ে ঘোড়ার গাড়িছিল যাতায়াতের একমাত্র বাহন, যাকে বর্তমান টাঙ্গাইলের স্থানীয় লোকেরা বলত ‘টাঙ্গা’। বর্তমান শতকের মাঝামাঝি পর্যন্তও এ অঞ্চলের টাঙ্গা গাড়ির চলাচল স্থল পথে সর্বত্র। আল শব্দটির কথা এ প্রসঙ্গে চলে আসে। বর্তমান টাঙ্গাইল অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানের নামের সাথে এই আল শব্দটির যোগ লক্ষ্য করা যায়। আল শব্দটির অর্থ সম্ভবত সীমা নির্দেশক যার স্থানীয় উচ্চারণ আইল।একটি স্থানকে যে সীমানা দিয়ে বাঁধা হয় তাকেই আইল বলা হয়। টাঙ্গাওয়ালাদের বাসস্থানের সীমানাকে ‘টাঙ্গা+আইল’এভাবে যোগ করে হয়েছে ‘টাঙ্গাইল’এমতটি অনেকে পোষণ করেন। ইতিহাসবিদ মুফাখখারুল ইসলামের মতে, কাগমারি পরগণার জমিদার ইনাযাতুল্লাহ খাঁ চৌধুরী (১৭০৭-১৭২৭খ্রিস্টাব্দ) লৌহজং নদীর টানের আইল দিয়া কাগমারী আধামাইল দূরে খুশনুদপুর (খুশির জায়গা যার সংস্কৃতায়ন করলে সন্তোষ) তাঁর সদর কাচারিতে যাতায়াতে করতেন। এই টানের আইল বা টান আইল বলিয়া বলে দীর্ঘদিন ধরে উচ্চারিত হতে হতে টাঙ্গাইল নামকরণ হয়েছে। অন্য মতবাদে জানা যায় ১৮৬৯ খ্রিস্টাব্দ সরকারের আদেশ অনুযায়ী পারদীঘুলিয়া মৌজায় অন্তর্গত আতিয়া নামক গ্রামে টান-আইল থানার সদর স্থ্পন করা হয়। গত শতাব্দীর মধ্যবর্তীকালীণ সময়ে টান-আইল মৌজা টাঙ্গাইল নামের রূপান্তরিত হয়। আইল শব্দটি কৃষিজমির সঙ্গে সম্পৃক্ত। এই শব্দটি আঞ্চলিক ভাবে বহুল ব্যবহৃত শব্দ। টাঙ্গাইলের ভূ-প্রকৃতি অনুসারে স্বাভাবিক ভাবে এর ভূমি উঁচু এবং ঢালু। স্থানীয়ভাবে যার সমার্থক শব্দ হলো টান। তাই এই ভূমিরূপের কারণেই এ অঞ্চলকে হয়তো পূর্বে ‘টান আইল’বলা হতো। যা পরিবর্তীত হয়ে টাঙ্গাইল হয়েছে।অন্য একটা সূত্রে জানা যায় হযরত শাহ জামাল (রাঃ) জাহাজ যোগে এদেশে আগমন করার সময় মাদ্রাজ থেকে একদল জেলে সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন। এদের দলপতির নাম ‘টাংগা’। জেলেরা লৌহজং নদীর পূর্ব তীরে বসবাস শুরু করে। তাদের দলপতির নামানুসারে স্থানের নাম হয় ‘টাঙ্গাইল’। পূর্বে টাঙ্গাইল অপেক্ষাকৃত নিচু অঞ্চল ছিলো। এখানকার মানুষ বসবাসের জন্য মাটির উপর বাঁশ পুঁতে টং ঘর নির্মাণ করতো। টং ফরাসী শব্দ, অর্থ হলো উঁচু। অতীত সময়ে স্থানীয় অনার্য বাসিন্দারা বাসস্থানকে ‘ইল’বলতো। তাই কারো কারো মতে এই টংইল (উঁচু বাসস্থান) থেকে টাঙ্গাইল নামের উৎপত্তি। জনশ্রুতিতে আরো আছে যে, ব্রিটিশ আমলে নীল ব্যবসার চরম উন্নতির সময়ে বর্তমানের টাঙ্গাইল শহরে অসংখ্য টাংগা গাড়ির ভিড় লেগে থাকতো। তা থেকেই আঞ্চলিক নাম টাঙ্গাইলের উৎপত্তি। টাঙ্গাইল জেলা গেজেটিয়ারে নামকরণ বিষয়ে সর্বাগ্রে যে তথ্যটি উল্লেখ করা হয়েছে তা হলো, সপ্তদশ শতাব্দীর শেষভাগে নবাব শায়েস্তা খাঁ বাংলার সুবেদার ছিলেন।তাঁর শাসনকালে পর্তুগীজ মগ জনদস্যুদের হামলা ও অত্যাচার বঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চলে চরমে পেঁŠছেছিলো। শায়েস্তা খাঁ পর্তুগীজ জলদস্যুদের আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য দাক্ষিণাত্যের মোগলদের নিয়ে এক শক্তিশালী নৌ-বাহিনী গঠণ করে ছিলেন। কালক্রমেই এই নৌ-বাহিনী ভেঙ্গে দেওয়া হলে এদের অনেকেই দক্ষিণ ভারতে মালাবাদ উপকূলে প্রত্যাবর্তন না করে লৌহজং নদীর চর এলাকায় বসতি স্থাপন করে।এসব নতুন গড়ে ওঠা বসতিগুলোকে মোগলরা অভিহিত করেছিলেন দিহ্ টাঙ্গাল (দিহ্ শব্দের ফরাসী অর্থ হলো মহল্লা) যা কালক্রমে টাঙ্গাইল হয়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ আদম শুমারী রিপোর্ট সূত্রে জানা যায় দাক্ষিণাত্যে মালাবার সমুদ্র উপকূল এলাকায় ‘মোপলা’নামে এক জাতি বাস করত। তারা আরব বণিকদের বংশধর এবং এতদঞ্চলের মেয়েদের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবব্ধ হত। মোপলাদের মধ্যে অত্যন্ত ক্ষমতাশীল ধর্মীয় নেতাদেরকে ‘তাংগাইল’বলা হতো। এসমস্ত ধর্মীয় নেতাদের নামানুসারেই পরবর্তীকালে বর্তমান ‘টাঙ্গাইল’নামকরণ হয়েছে। কথিত আছে জনৈক ইংরেজ সন্তোষ জমিদারিতে ব্রিটিশ আমলে রাজস্ব আদায় করতে এসেছিলেন। রাজস্ব আদায় শেষে ঢাকা যাওয়ার পথে একদল ঠগ রাজস্বের অর্থ লুটপাট করে সেই সঙ্গে ইংরেজ সাহেবকে হত্যা করে লৌহজং এর পূর্ব পারে টাংগিয়ে রেখে যায়। সেই থেকে নাম দেওয়া হয়েছে টাঙ্গাইল। আবার কারো করো মতে ‘টান’এবং ‘ইল’নামক দু’জন ইংরেজ সাহেব সন্তোষ জমিদারিতে এসেছিলেন থানার স্থান নির্বাচনের জন্য তাদের নামানুসারে নাম হয়েছে টাঙ্গাইল। টাঙ্গাইলের বিভিন্ন স্থানের নামে ‘আইল’শব্দের আধিক্য আছে (যেমন- বাসাইল, ঘাটাইল, ডুবাইল, নিকরাইল, রামাইল ইত্যাদি) অনেকের ধারণা টাঙ্গাইলের অন্য স্থানের নামের সাথে সামঞ্জস্য রেখে ঘটনা প্রবাহে ‘টাঙ্গাইল’নাম হয়েছে। টং শব্দের ফরাসী অর্থ উঁচু। আর আইল হচ্ছে আবাদী জমির সীমানা সংলগ্ন অংশ। টাঙ্গাইল জেলা প্রাচীনকাল থেকে পাহাড়ের উঁচু ভূমি ও নিকটবর্তী কৃষি জমির সমাহার। এই উঁচু ভূমি বা টং ও জমির ‘আইল’এই দুইয়ের সমন্বয়ের বিভিন্ন ঘটনা প্রবাহের এলাকার নাম টাঙ্গাইল হয়েছে। টাঙ্গাইল অঞ্চলের প্রাচীন ইতিহাসঃ ইতিহাসের দৃষ্টি প্রসারিত আছে অনেক পিছনে। আমাদের বঙ্গীয় ‘ব’দ্বীপে কবে মানব বসতি শুরু হয়েছে, কবেই বা এই নিম্নাঞ্চলে সমুদ্র গর্ভ হতে মাথাউঁচু করেছে আমরা কি তার সঠিক যুক্তিনির্ভর ইতিহাস উদ্ধারে সামর্থ হয়েছি? না হইনি। কারণ এসব বিষয়ে রয়েছে নানামত, নানাপথ। মূলতঃ বঙ্গীয় ‘ব’দ্বীপ তথা সমগ্র ভারত বর্ষের ইতিহাস অনেকটা অসংলগ্ন। গ্রীস, রোম ও ইংল্যান্ডের ইতিহাসের মতো সুসংগঠিত ভাবে সংরক্ষিত নয়। তবুও বিভিন্ন গবেষণা পরষ্পরায় আবিস্কৃত নিত্য নতুন তথ্যে ইতিহাস একটু হলেও ভিন্ন আলোয় প্রতিভাত হয়। ইতিহাস পাঠে জানা যায় আজ থেকে পাঁচ, সাড়ে পাঁচ হাজার বৎসর পূর্বে বৃহত্তর ময়মনসিংহের অধিকাংশ অঞ্চলই সমুদ্রগর্ভে নিমজ্জিত ছিলো। শুধু মাত্র মধুপুর ভাওয়াল বনাঞ্চল শৈল শিলার উচ্চতা নিয়ে বিরাজ করেছিলো। ধারণা করা হয় যে, সোমেশ্বরী নদীর পাড়ের গারো পাহাড় হতে ভাওয়াল গড় পর্যন্ত যে পাহাড়মালা তাই হচ্ছে বাংলাদেশের একটি প্রাচীনতম স্থলভাগ। এই স্থলভাগের বড় অংশ টাঙ্গাইল জেলার অন্তর্গত। কাজেই এ জেলার জনবসতি, ইতিহাস ও ঐতিহ্য সু-প্রাচীন। প্রাচীনকালে(৬২৯-৬৪৫খ্রিস্টাব্দ) পরিব্রাজক হিউ-এন্থ-সঙ্গ ভারতবর্ষ পরিভ্রমণ করেন।হিউ-এন্থ সঙ্গ এর ভ্রমণ কাহিনী পাঠে জানা যায় বঙ্গভূমি ছয়টি প্রধান রাজ্যে বিভক্ত ছিলো। ১। পৌন্ড্র, (উত্তর বঙ্গ, ব্রক্ষপুত্রের পশ্চিম ভাগ) ২।কামরূপ (ময়মনসিংহের পূর্বভাগসহ পূর্ববঙ্গ ও আসাম) ৩। সমতট (ঢাকা-ফরিদপুর) ৪। কমলাহু (ত্রিপুরা বা কুমিল্লা) ৫। তাম্রলিপ্ত (দক্ষিণ পশ্চিম ভাগ) ও ৬।কর্ণ সুবর্ণ (পশ্চিমবঙ্গ) উপরের বর্ণনায় প্রতীয়মান আমাদের টাঙ্গাইল জেলা তৎকালে কামরূপ রাজ্যের বা প্রাগ জ্যোতিষপুর রাজ্যাংশ- যাকে বলা হয় ‘ভাটির মুল্লুক’এর অন্তর্গত ছিলো। মহাভারত কাব্যগ্রন্থের কামরূপ রাজ্যের সীমানা পর্যন্ত প্রসারিত বলা হয়েছে। হিন্দু শাসন আমলে খ্রি. দশম শতাব্দীতে বাঙ্গালা সেনও পাল রাজ বংশের আবির্ভাব হয়। এই উভয় বংশের নৃপতিবর্গ বঙ্গভূমির বিভিন্ন অঞ্চল শাসন করতো। ক্রমে কামরূপ রাজ্যেও তাঁদের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। জানা যায় টাঙ্গাইল অঞ্চল খ্রি. দশম হতে একাদশ শতাব্দীর প্রারম্ভ পর্যন্ত ১২০ বছর কাল পাল রাজেন্যবর্গ এই অঞ্চল শাসন করেছে। এই সময়ে ময়মনসিংহর দক্ষিণ অংশ বর্তমান কাপাসিয়া, রায়পুরা ও ধামরাই নামক স্থানত্রয়ে শিশুপাল, হরিশ্চন্দ্র পাল ও যশোপাল নামক পাল বংশীয় তিনজন ক্ষুদ্র নৃপতির রাজ্য ও পশ্চিমাংশে মধুপুরে পাল রাজ ভগদত্তের ক্ষুদ্র রাজ্য অল্পে অল্পে বধিষ্ণু ছিলো। আজ পর্যন্তও ভাওয়ালের অরণ্য মধ্যে শিশুপালের বিশাল দিঘি ও বিরাট রাজধানীর ভগ্ন কঙ্কাল বর্ণনার সত্যতা প্রমাণ করছে।মধুপুর ভগদত্তের গৃহভগ্নাবশেষে, পুষ্করিণী- ‘বারতীর্থ দিঘি, দেবলায়, মদন গোপালের বাড়ি প্রভৃতির চিহ্ন এখনও বিদ্যমান আছে। ভগদত্তের প্রতিষ্ঠিত ‘বারতীর্থ’ক্ষেত্র এখনও প্রতিবৎসর বৈশাখ মাসে ‘মেলা’হয়ে থাকে। প্রবাদ এই যে, রাজা ভগদত্ত স্বীয় পুণ্যশীলা জননীর আজ্ঞামতে বারতীর্থের পূণ্যোদক আনিয়া নিজ রাজধানীকে ‘বারতীর্থাশ্রম’করে ছিলেন। সেই ‘বারতীর্থাশ্রমের’পুণ্যনাম আজও তিরোহিত হয়নি। এর পর দ্বাদশ শতাব্দীতে সেন বংশের নৃপতি সেনের আমলে টাঙ্গাইল জেলা সেনদের অধিকারে আসে। সেন রাজবংশের অভ্যূদয়ে এই ক্ষুদ্র রাজ্যগুলো লয় প্রাপ্ত হয়ে যায়। এয়োদশ শতাব্দীর শেষভাগে সোনার গাঁ পতনের সময় পর্যন্ত পূর্ববঙ্গ সেন রাজ্য বংশের শাসনাধীন ছিলো। সেন সাম্রাজ্যের উপর মরণাঘাত হানেন তুর্কী আক্রমণকারী ইখতিয়ার উদ্দিন মোহাম্মদ বখতিয়ার খিলজী।তিনি ১২০৪ খ্রিস্টাব্দে রাজা লক্ষণ সেনের গ্রীষ্মকালীন রাজধানী নদীয়া (বা নদীয়া) আক্রমণ করেন। বৃদ্ধ রাজা রাজধানী থেকে পালিয়ে এসে পূর্ববাংলার বিক্রমপুরে আশ্রয় গ্রহণ করেন। তারপর তাঁর রাজত্বকাল দু’বৎসর স্থায়ী হয় এবং তাঁর রাজ্য সীমাও খুব সংকুচিত হয়ে পড়ে। এ দু’বৎসর রাজত্বকালে বর্তমানে টাঙ্গাইল জেলার উপর তিনি তাঁর প্রভাব অক্ষুন্ন রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন কিনা তা’নিশ্চিত করে বলা কঠিন। অন্যদিকে মোহাম্মদ বখতিয়ার খিলজী তাঁর বিজয়-অভিযান পূর্বদিকে প্রসারিত না করায় এ জেলার উপর মুসলমানদের নদীয়া বিজয়ের কোনো প্রভাব পরিলক্ষিত হয় না। এমনকি ত্রয়োদশ শতাব্দীর শেষ পর্যায়েও মুসলমানদের প্রভাব বা অধিকার এ জেলার উপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এ রকম কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। সুতরাং এ জেলার এক শতাব্দীর ইতিহাস আমাদের কাছে খুবই অস্পষ্ট। কামরূপের বার ভূঁইয়াদের প্রভাব তখন এ এলাকায় বিদ্যমান ছিল বলে ঐতিহাসিকগণ অনুমান করেন। তবে এ জেলা তখন কামরূপের কোন বার ভূঁইয়ার শাসনাধীন ছিল তা আমাদের জানা নাই। প্রথম যে মুসলিম নরপতি যিনি এ জেলার উপর আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন তিনি হলেন গোড়াধিপতি সুলতান শামসুদ্দিন ফিরোজ শাহ্(দেহলভী)। তিনি ১৩০১ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৩২২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত গৌড়ের সিংহাসনে অধিষ্ঠিত ছিলেন। ইতিহাসবিদ যদুনাথ সরকার বলেন, সম্ভবত শামসুদ্দিন ফিরোজের (দেহলভী) রাজত্ব কালের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হচ্ছে বর্তমান কালের ময়মনসিংহ জেলার মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠা। এতে প্রতীয়মান হয় যে, বর্তমান টাঙ্গাইল জেলা যা পূর্বে ময়মনসিংহ জেলার অংশ বিশেষ ছিল সেখানে মুসলমান রাজত্বের সূচনা হয় চতুর্দশ শতাব্দীর প্রথমদিকে। ১৩৩৮ খ্রিস্টাব্দ ফকরুদ্দিন মুবারক শাহ বাংলার পূর্বাঞ্চল সোনার গাঁয়ে স্বাধীনভাবে রাজত্ব শুরু করেন। এ সময়ে বাংলা তৎকালীন রাজধানী গৌড়ের অধিপতি ছিলেন। ১৩৪২ খ্রিস্টাব্দ শামছুউদ্দিন ইলিয়াস শাহ, আলাউদ্দিন আলী শাহকে হত্যা করে দুই বাংলা একত্রিত করে স্বাধীন রাজবংশ প্রতিষ্ঠিত করেন, যা প্রায় দুই শত বৎসরকাল অর্থাৎ ১৩৩৮ খ্রিস্টাব্দ শেরশাহ গৌড় দখলের পূর্বাপর্যন্ত অক্ষুন্ন ছিল। এরপর বাংলা মুগল শাসনের অন্তভূক্ত হওয়ার পূর্বপর্যন্ত প্রায় ৩৮ বৎসরকাল রাজধানী গৌড়কে কেন্দ্র করে নানা যুদ্ধ বিদ্রোহ ও বিশৃঙ্খলায় পরিপূর্ণ ছিলো। ফলে বাংলার উত্তরাঞ্চলের এ অরাজকতাময় পরিবেশ থেকে বিশাল যমুনানদী পার হয়ে অনেক লোক চলে আসে পূর্বাঞ্চলে। পূর্ব বাংলায় তখন বার ভূঁইয়াদের রাজত্ব। অপর দিকে ১৫৭৬ খ্রিস্টাব্দ মুগল সেনাপতি মুনিম খান, দাউদ খানকে পরাজিত করে গৌড়ের তথা বাংলার শাসনভার গ্রহণ করলে বাংলার বার ভূঁইয়াদের স্বাধীন জমিদাররা তা মেনে নিতে অস্বীকার করেন। ঈশা খাঁ এ সকল বা ভূঁইয়াদের নেতৃত্বভার গ্রহণ করেন এবং সোনারগাঁয়ে তাঁর রাজধানী স্থাপন করেন। কিংবদন্তী মতে, ঈশা খাঁ বাইশ পরগণার মালিক ছিলেন। ঈশা খাঁয়ের রাজ্যের প্রকৃত আয়তন বা চৌহদ্দির সঠিক বিবরণ প্রকৃতভাবে পাওয়া না গেলেও বাইশ পরগণার মালিকানা সম্পর্কে যে কিংবদন্তী প্রচলিত আছে সেটা সঠিক বলে মনে হয়। তিনটি ভিন্ন ভিন্ন সূত্র হতে ঈশা খাঁয়ের পরগণাগুলোর নাম পাওয়া যায়: কেদারনাথ মজুমদার রচিত ময়মনসিংহের ইতিহাস; জেলা গেজেটীয়ার, ময়মনসিংহ এবং পূর্ববঙ্গ গীতিকার ‘দেওয়ান ঈছা খাঁর’পালাগানে।এসব ঘটনাবলীর সমন্বয়ে কিছু গরমিল লক্ষণীয়। এ তালিকায় আটিয়াকে একটি পরগণা হিসেবে দেখানো হয়েছে। আবুল ফজলের বিবরণ থেকে জানা যায়, পুখুরিয়া, কাগমারী, আটিয়া এবং বড়বাজু পরগণার অংশ বিশেষ নিয়ে গঠিত ছিল এ সময়ের টাঙ্গাইল।বর্তমানে টাঙ্গাইল থানাধীন আটিয়া একটি ইউনিয়ন ও গ্রাম। ১৯৬১ ও ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দের গ্রাম পরিসংখ্যানে স্থানটি কসবা আটিয়া বলে উল্লেখ করা হয়েছে।আটিয়া পরগণার শাসক বাবা আদম শাহ্ কাশ্মিরী মৃত্যুর পূর্বে প্রিয়ভক্ত সাঈদ খাঁকে আটিয়া পরগণার শাসনভার অর্পণ করেন এবং তাঁর পরামর্শক্রমে সুবেদার ইসলাম খাঁর সুপারিশে দিল্লীর মোগল বাদশা জাহাঙ্গীর ১৬০৮ খ্রিস্টাব্দে সাঈদ খাঁকে আটিয়া পরগণার শাসক নিযুক্ত করেন। তবে বেঙ্গল ডিস্ট্রিক গেজেটিয়ারে বলা আছে সাঈদ খান পন্নী সম্রাট আকবরের (১৫৫৬-১৬০৫ খ্রিস্টাব্দ) কাছ থেকে ও করটিয়ার পন্নী পরিবারের উর্ধ্বতন পুরুষ সাঈদ খান পন্নী সম্রাট আকবরের আমলে একটি জায়গার জায়গীর প্রাপ্ত হন। অন্য মতে সাঈদ খান শাহজাহান বাদশাহ(১৬২৭-১৬৫৮খ্রিস্টাব্দ) থেকে আটিয়ার শাসক নিযুক্ত হন। তবে সময় কাল যাই হোকনা কেনো সাঈদ খান পন্নীই করটিয়া জমিদারির প্রতিষ্ঠাতা। ঘটনা প্রবাহে ও পারিপাশির্বকতায় সাঈদ খান ১৬০৮ খ্রিস্টাব্দ আটিয়া পরগণার শাসক নিযুক্ত হয়ে ছিলেন এ কথা অধিক যুক্তি গ্রাহ্য। জায়গীরের প্রাণকেন্দ্র ছিল আটিয়া। ১৫৮২ খ্রিস্টাব্দ টোডরমলের ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থায় বঙ্গদেশ ১৯ সরকার ও ৬৮২ মহাল বা পরগণাতে বিভক্ত করা হয়। এর মধ্যে বাজুহার অধিকাংশ এলাকা নিয়ে বর্তমান ময়মনসিংহ জেলা গঠিত হয়েছে এবং এর অবশিষ্ট অংশ ঢাকা ফরিদপুর ও পাবনা জেলার অন্তর্গত। সরকার বাজুহার সীমানা পর্যবেক্ষণে প্রতীয়মান হয় আটিয়া পরগণা অধিকাংশ সময় সরকার বাজুহার অন্তর্ভূক্ত ছিল। এখানে উল্লেখ্য, টোডরমলের শাসন ব্যবস্থা পুনর্বিন্যাসের সময়ই আটিয়া ও কাগমারী দু’টিকে পরগণায় পওন করা হয়।১৬০৫ খ্রিস্টাব্দ মুগল সম্রাট আকবরের মৃত্যু হলে ক্ষমতায় আসেন জাহাঙ্গীর।তিনি ইসলাম খানকে বাংলার সুবেদার করে পাঠান। ১৬০৮ খ্রিস্টাব্দে ইসলাম খান তার রাজধানীকে রাজমহল থেকে ঢাকায় নিয়ে আসেন। ঐতিহাসিক আবদুল করিমের মতে, ইসলাম খান মুসা খানের বিরুদ্ধে সমরাভিযান শুরু করে ১৬০৯ খ্রিস্টাব্দ ১৬১১ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে সমগ্র পূর্বাঞ্চল মুগল শাসনাধীনে আনতে সচেষ্ট হন।অপরপক্ষে টাঙ্গাইল অঞ্চলে বিদ্যমান সর্বপ্রথম মস্জিদ স্থাপত্য (আটিয়া মস্জিদ) নিদর্শনের উল্লেখ পাওয়া যায় সপ্তদশ শতাব্দীর প্রারম্ভে। শিলালিপি অনুযায়ী এটি এ অঞ্চলের বিখ্যাত পন্নী পরিবারের সাঈদ খান পন্নী নির্মাণ করেন। সমসাময়িক ইতিহাসে সাঈদ খান পন্নীর সাথে মুসা খানের কোন সম্পর্কের উল্লেখ পাওয়া যায় না। যেহেতু ইসলাম খান ঢাকায় রাজধানী স্থাপন করেন ১৬০৮ খ্রিস্টাব্দে এবং মুসা খান অন্যান্য বার ভূঁইয়াদের শাসনাধীন অঞ্চলে মুগল শাসন প্রতিষ্ঠিত হয় ১৬১১ খ্রিস্টাব্দে। তাই ১৬০৮ খ্রিস্টাব্দের পরে টাঙ্গাইলের করটিয়া অঞ্চলের পন্নী পরিবারের সঙ্গে ইসলাম খানের কোনই সম্পর্ক ছিল না এ কথা নির্ভূল ভাবে বলা চলে। তাঁর সময় থেকে টাঙ্গাইল জেলা বাংলার সুবাদারের অধীনে থেকে ঢাকার নায়েব নাজিম কর্তৃত্ব শাসিত হয়েছে। নবাব মুর্শিদ কুলী খান তাঁর নাত-জামাই মির্জা লুৎফুল্লাহ্কে ঢাকার নায়েব নাজিম নিযুক্ত করেন এবং তাঁর অনুমোদনক্রমে দিল্লীর তদানীন্তন বাদশাহ মির্জা লুৎফুল্লাহ্কে দ্বিতীয় মুর্শিদ কুলী খান উপাধিতে ভূষিত করেন। তিনি তাঁর শশুর নবাব সুজাউদ্দিনের শাসনকালেও উক্ত পদে আসীন ছিলেন। নবাব সুজাউদ্দিনের সময় বিহার এবং উড়িষ্যা প্রদেশ দু’টিকে বাংলার সাথে যুক্ত করা হয়। ফলে এ বিরাট সুবা’র শাসনকার্যের সুবিধার জন্য একে চারটি ভাগে বিভক্ত করতে হয়।ঢাকা বিভাগের দায়িত্ব মির্জা লুৎফুল্লাহ্র উপর ন্যস্ত হওয়ার ফলে টাঙ্গাইল জেলাসহ সমগ্র পূর্ববাংলা, দক্ষিণ বাংলা এবং উত্তর বাংলা কিয়দংশ ঢাকার নায়েব-নাজিমের অধীনে চলে আসে। মির্জা লুৎফুল্লাহ্ ওরফে দ্বিতীয় মুর্শিদ কুলী খান তাঁর এলাকায় সামগ্রিক উন্নতিকল্পে বিশেষ যত্নবান হন। কবিতা রচনায় এবং হস্তলিপিতে তাঁর রূচিবোধের পরিচয় মিলে। দ্বিতীয় মুর্শিদ কুলী খানের পর ঢাকার নায়েব-নাজিম হিসাবে নিযুক্ত হন সরফরাজ খান। তাঁর অবর্তমানে তাঁর সহকারী সৈয়দ গালিব আলী খান শাসন কার্য পরিচালনা করতেন। সরফরাজ খানের দেওয়ান হিসাবে নিযুক্ত হন যশোবন্ত রায়। যশোবন্ত রায় ছিলেন খুবই দক্ষ শাসক। ফলে ঢাকা বিভাগে শান্তি ও সমৃদ্ধি ফিরে আসে নবাব শায়েস্তা খানের আমলের ন্যায়।জিনিসের দাম, বিশেষ করে খাদ্য দ্রব্যের দাম উল্লেখ করার মত। এই শাসক সম্পর্কেও স্যার যদুনাথ সরকারের উক্তি প্রণিধান যোগ্য। এর ফলস্বরূপ, উৎপন্ন দ্রব্যের মূল্য এত কমে যে শায়েস্তা খানের আমলের মত আট মন চালের বিনিময় মূল্য হয়েছিল এক টাকা। সরফরাজ খানের পর ঢাকার নাজিম হন মুরাদ আলী খান। তাঁর স্বপ্লকালীন শাসনকালে বাংলার আকাশ ছিল খুবই দুর্যোগপূর্ণ। এ অবস্থার সুযোগ নিলেন নবাব আলীবর্দী খান। তিনি মুগল বাদশাহ মোহাম্মদ শাহের ফরমান বলে বাংলার সিংহাসনে আরোহণ করেন ১৭৪০ খ্রিস্টাব্দে। নবাব আলীবর্দী খান মসনদে আসীন হয়ে তাঁর ভ্রাতৃস্পুত্র নাওয়াজিস মোহাম্মদকে ঢাকার নায়েব-নাজিম নিযুক্ত করেন। তাঁর সহকারী হিসাবে নিযুক্ত হন হুসেন কুলী খান। নবাব আলীবর্দী খানের পর বাংলার মসনদে খুব অল্প সময়ের জন্য আসীন ছিলেন তাঁর পৌত্র নবাব সিরাজউদ্দৌলা। ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দ পলাশীর যুদ্ধে নবাব সিরাজউদ্দৌলা বাংলায় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী প্রতিভূ বরার্ট ক্লাইভের হস্তে পরাজয় বরণ করলে বাংলার ইতিহাসে ব্রিটিশ শাসনের সূচনা হয়। পলাশী যুদ্ধের পর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী প্রথম যুগে ১৭৬৩ খ্রিস্টাব্দে নবাব শাহ্ সুজা প্রবর্তিত ‘সরকার বাজুহার’কে তিনটি রাজস্ব অঞ্চলে ভাগ করেন- ১) জমিদারি রাজশাহী, ২) আটিয়াদিগর, ৩) জামালপুর, ঢাকা। আটিয়া দিগরের অধীনে আটিয়া, বড়বাজু ও কাগমারী পরগণা অন্তর্ভূক্ত ছিল। ঈশা খাঁর আমলে আটিয়া পরগণার সবটাই মহৎ কাজের উদ্দেশ্যে বাবা আদম কাশ্মিরীকে দান করেন। বাবা আদম কাশ্মিমীরীর মৃত্যুর পূর্বে সাঈদ খাঁ এই পরগণার বন্দোবস্ত পান। সাঈদ খাঁর পরবর্তী বংশধরগণই করটিয়ার পন্নী জমিদার এই টাঙ্গাইল অঞ্চলের সবচেয়ে প্রতাপশালী জমিদার। ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দ পলাশী যুদ্ধের পরই বাংলায় ব্রিটিশ রাজত্ব পরোক্ষভাবে স্থাপিত হলেও ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দের পূর্বে এ এলাকার উপর ব্রিটিশের পূর্ণ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়নি। পলাশি যুদ্ধের পর ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে লর্ড ক্লাইভ, দিল্লীর বাদশাহ দ্বিতীয় শাহ আলমের নিকট থেকে ২৬ লক্ষ টাকার বিনিময়ে বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার দেওয়ানী প্রাপ্ত হ’লে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর শাসন বাংলার উপ সুদৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। তখন থেকে টাঙ্গাইল জেলা ঢাকার নায়েব-নাজিমের অধীন থেকে কোম্পানীর শাসনাধীনে চলে আসে। তখন ঢাকার নায়েব-নাজিম পদের আসীন ছিলেন নবাব জাসারত খান (১৭৫৪-১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দ) নবাব কাজিম আলী খান তখন বাংলার সুবাদার ছিলেন। এসময় তাঁকে কয়েক বৎসর পাটনা অবস্থান করতে হয়। ঢাকায় তাঁর অবর্তমানে কোম্পানীর পক্ষ থেকে দায়িত্ব পালন করেছিলেন জনৈক স্কটল্যান্ডবাসী লেফ্টেনান্ট (পরে ক্যাপ্টেন) সুইন্টন। কোম্পানীর রাজত্ব শুরু হওয়ার পর থেকে ঢাকার নায়েব-নাজিমগণের ক্ষমতা বিভাগীয় শাসকের পর্যায় থেকে আস্তে আস্তে স্থানীয় জমিদারদের ক্ষমতায় সংকুচিত হয়। ঢাকার নায়েব-নাজিমগণ ক্ষমতাশালী ছিলেন। তখন থেকে শুরু করে কোম্পানীর রাজত্বের শেষকাল পর্যন্ত স্থানীয়ভাবে যেসব জমিদার এ জেলার উপর তাঁদের প্রভাব প্রতিপত্তি অক্ষুণ্ণ রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন। তাঁরা হলেন; করটিয়া পন্নীগণ, ও ধনবাড়ির জমিদারগণ এবং দেলদুয়ার, পাকুল্লা, নাটোরের মহারানী ভবানী ও তাঁর বংশধর, সন্তোষের মহারানী দিনমণি চৌধুরাণীর পূর্বপুরুষেরা বা এ বংশের জমিদারগণ নাগরপুর সহ স্থানীয় জমিদারগণ।কোম্পানীর শাসনকালে শুধু প্রজা নয় খাজনা আদায়ে ব্যর্থ হলে জমিদাররাও নিগৃহীত হয়েছে। কোম্পানীর শাসন আমলের প্রথম পর্যায়ে (১৯৬৯-৭০ ছিয়াত্তরের মন্নন্তর) সারা বাংলাদেশে এক ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। ফলে বাংলাদেশের অন্যান্য জেলার মত এ জেলার লোকদেরকে অবর্ণীয় দুঃখ-কষ্টের সম্মুখীন হতে হয় এবং বহু লোক খাদ্যাভাবে মৃত্যুবরণ করে। অনেকে উপায়ন্তর না দেখে দস্যূবৃত্তি অবলম্বন করে। তাঁদের অনেককেই, পরবর্তী পর্যায়ে ফকির ও সন্ন্যাসীদের কোম্পানী শাসনের বিরুদ্ধে যে বিদ্রোহী কার্যক্রম আমরা এ অঞ্চলে দেখতে পাই, সে কার্যক্রমে যোগদান করতে দেখা যায়। অষ্টাদশ শতাব্দীর মধ্যভাগে ব্রিটিশ শাসন ও শোষণের বিরুদ্ধে বাংলার কৃষক ও কারিগরদের বিদ্রোহ ঘটে। যার ব্যাপ্তি টাঙ্গাইল অঞ্চলে কার্যকর ছিলো সাম্প্রতিককালে ইতিহাসে এ বিদ্রোহ ‘ফকির-সন্ন্যাসী’বিদ্রোহ নামে পরিচিত। কিন্তু এই বিদ্রোহকে তৎকালীন ইংরেজ শাসকদের লিখিত পত্রাবলী ও রিপোর্টে সন্ন্যাসীদের আক্রমণ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। গভর্নর জেনারেল হেস্টিংস এই বিদ্রোহকে প্রথম ‘কৃষক-বিদ্রোহ’নামে অভিহিত করেন। ফকির সন্ন্যাসীদের দমন ঢাকা কেন্দ্র থেকে পরিচালনের অসুবিধার জন্য ১৭৮৭ খ্রিস্টাব্দে প্রথম ময়মনসিংহ কালেক্টরেট সৃষ্টি করা হয়। মিঃ রটন ছিলেন ময়মনসিংহ জেলার প্রথম কালেক্টর ম্যাজিস্ট্রেট। এ অবস্থায় আটিয়া পরগণা ব্যতীত টাঙ্গাইলের বেশী ভাগ অঞ্চল ময়মনসিংহ কালেক্টরের অধীনে ন্যস্ত করা হয়। আটিয়া ঢাকা কালেক্টরের অধীনে থাকে। এ সময় যমুনা ব্রহ্মপুত্র নদের গতিপথ পরিবর্তনের ফলে ময়মনসিংহ জেলার সীমানার পরিবর্তন হয়েছে। ১৭৮৭ খ্রিস্টাব্দে যখন ময়মনসিংহ জেলা স্থাপিত হয়েছিল, তখন শ্রীহট্ট জেলার তরফ, ত্রিপুরা জেলার মেহের, সবাইল, বরদাখাত ইত্যাদি, নোয়াখালী জেলার ভেলুয়া, পাবনা জেলার সিরাজগঞ্জ, আসামের তুরা ইত্যাদি দূরবর্তী স্থান সমূহ ময়মনসিংহ কালেক্টরেট এর অধীনে ছিল। কাগমারী ও আটিয়া পরগণা অঞ্চলটি ময়মনসিংহ জেলার শাসনাধীনের ছিল। জেলা স্থাপনের পর ময়মনসিংহ জেলায় ৮ টি তহসিল কাচারী স্থাপন করা হয়েছিল। বর্তমান টাঙ্গাইল জেলায় তখন কাগমারী ও পুখুরিয়া পরগণায় তহসিল কাচারী স্থাপন করা হয়েছিল। ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দে তহসিল কাচারী বন্ধ করে দেওয়া হয়। ১৮১৯ খ্রিস্টাব্দে কাননগোর কার্যালয় স্থাপন করা হয়। ১৮৭১ খ্রিস্টাব্দে কাননগোর পদ বিলুপ্ত করা হয়। ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে বিভাগীয় কমিশনারের পদ সৃস্টি করা হয়। ১৮৪২ খ্রিস্টাব্দে প্রশাসনিক ক্ষেত্রে মহকুমা ব্যবস্থা চালু করা এবং প্রশাসনিক সুবিধার জন্য ১৮৪৫ খ্রিস্টাব্দে ময়মনসিংহ জেলাকে বিভক্ত করে জামালপুর, শেরপুর, হাজিপুর, পিংনা ও সিরাজগঞ্জ থানা সমন্বয়ে সদর মহকুমা স্থাপন করা। এই ব্যবস্থায় বর্তমান টাঙ্গাইল জেলার আটিয়া থানা ঢাকা জেলায়, মধুপুর থানা ময়মনসিংহ সদর মহকুমার এবং নাসিরাবাদ, গাবতলী, মধুপুর, নেত্রকোণা, ঘোষ গাঁও, ফতেপুর, গফরগাঁও, মাদারগঞ্জ, নিকলি ও বাজিতপুর থানা সমন্বয়ে সদর মহকুমা স্থাপন করা হয়। ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে ব্রহ্মপুত্রনদের গতিপথ পরিবর্তনের প্রেক্ষিতে সিরাজগঞ্জ থানার কিছু অংশ পাবনা জেলার অন্তর্ভূক্ত করা হয়। ১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দে সিরাজগঞ্জ থানাকে এনে ময়মনসিংহ জেলার অন্তর্ভূক্ত করা হয়। ১৮৬৬ খ্রিস্টাব্দে আটিয়া থানায় রূপান্তর করে ময়মনসিংহ কালেক্টরেটের অন্তর্ভূক্ত করা হয়। টাঙ্গাইলের অধিকাংশ মৌজা তখন এই আটিয়ার অন্তর্ভূক্ত ছিল। ১৮৬৯ খ্রিস্টাব্দে ইংরেজ সরকার পারদিঘুলিয়া মৌজার অন্তর্গত আটিয়া পরগণায় টানআইল থানা পত্তন করে। যা পরে টাঙ্গাইল নামে রূপান্তরিত হয়। এরপর বর্তমান টাঙ্গাইল জেলার আটিয়া থানা ঢাকা জেলায়, মধুপুর থানা ময়মনসিংহ সদর মহকুমা এবং অন্যান্য অঞ্চল জামালপুর মহকুমা অন্তর্ভূক্ত হয়। ৩ মে ১৮৬৯ খ্রিস্টাব্দে আটিয়া, পিংনা ও মধুপুর থানা সমন্বয়ে প্রতিষ্ঠা করা হয় আটিয়া মহকুমা। ১৫ নভেম্বর ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দে আটিয়া থেকে টাঙ্গাইলে মহকুমা সদর দপ্তর স্থানান্তর করা হয়। জনাব ব্রহ্মনাথ সেন ছিলেন টাঙ্গাইল মহকুমার প্রথম মহকুমা প্রশাসক। ১৮৭৪ খ্রিস্টাব্দে যমুনা নদীকে বগুড়া ও ময়মনসিংহ জেলার সীমানা হিসেবে নির্ধারণ করা হয়। ময়মনসিংহ জেলার ১৬৫টি গ্রামকে বগুড়া জেলার অন্তর্ভূক্ত করা হয়। ১৮৭৫ খ্রিস্টাব্দে ব্রহ্মপুত্রকে রংপুর ও ময়মনসিংহের এবং ১৮৭৭ খ্রিস্টাব্দে যমুনাকে পাবনা ও ময়মনসিংহের সীমানা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। ১৮৭৫ খ্রিস্টাব্দে এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বিভিন্ন পরগণার নিম্নে বর্ণিত অংশসমূহ তৎকালীন টাঙ্গাইল মহকুমা অন্তর্ভূক্ত ছিল। ক) পরগণা আটিয়া, এলাকা ৭৭৯.৬৯ বর্গমাইল, মহাল- ১৪৭টি। খ) পরগণা জাফরশাহি, এলাকা ২৩২.৬৩ বর্গমাইল, মহাল- ১০টি। গ) পরগণা কাগমারি, এলাকা ৩৪৪ বর্গমাইল, মহাল- ৪৫২টি। ঘ) পরগণা কাশীপুর, এলাকা ১.৬০ বর্গমাইল, মহাল- ৬৬টি। ঙ) পরগণা পুখুরিয়া, এলাকা ৫১৫.২৫ বর্গমাইল, মহাল- ৬০৪টি। ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দে টাঙ্গাইল মহকুমার আয়তন ছিল ১০৪১ বর্গমাইল। তখন মহকুমায় টাঙ্গাইল, কালিহাতী ও গোপালপুর এই তিনটি থানা এবং নাগরপুর, মির্জাপুর, ঘাটাইল ও জগন্নাথগঞ্জ- এই চারটি ফাঁড়ি থানা ছিল। মধুপুর থানা তখন ময়মনসিংহ সদর মহকুমার সঙ্গে যুক্ত ছিল। পরে জগন্নাথগঞ্জ ফাঁড়ি থানাকে পাবনা এবং মধুপুর থানাকে টাঙ্গাইলের অন্তর্ভূক্ত করা হয়। ১৮৮৭ খ্রিস্টাব্দে ময়মনসিংহ জেলায় জেলাবোর্ড প্রতিষ্ঠা করা হয়। জেলার কালেক্টর এই বোর্ডের সভাপতি মনোনীত হতেন। সদস্যগণের মধ্য হতে ১ জন সহ-সভাপতি নির্বাচিত করা হতো।সহ-সভাপতি সহ মোট ২৫ জন এই বোর্ডের সভ্য ছিলেন। তন্মধ্যে ১২ জন লোকাল বোর্ডের সদস্যগণ কর্তৃক নির্বাচিত। বাকী ১২ জন সরকার কর্তৃক মনোনীত হতেন।ময়মনসিংহ জেলা বোর্ডের আয়তন ছিল ৬২৭৮ বর্গকিলোমিটার। ময়মনসিংহ জেলা বোর্ডের অধীনে ৫ টি লোকাল বোর্ড স্থাপন করা হয়। লোকাল বোর্ড গুলো হলো- ময়মনসিংহ সদর, জামালপুর, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা ও টাঙ্গাইল। ১৬ জুন ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে তদানীন্তন পূর্ববঙ্গ ও আসাম সরকারের গেজেট বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নাগরপুর, মির্জাপুর, ঘাটাইল ও জগন্নাথগঞ্জ ফাঁড়ি থানাকে পূর্ণাঙ্গ থানায় রূপান্তরিত করা হয়। ই. ভি. লেবিঞ্জ (Levinge) এর সভাপতিত্বে গঠিত Administration Commnittee এর Reprot এ পুনরায় ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে ময়মনসিংহকে বিভক্ত করে ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ ও গোপালপুর জেলা স্থাপনের প্রস্তাব করা হয়। উল্লেখ্য ধনবাড়ির জমিদার সৈয়দ নওয়াব নবাব আলী চৌধুরী গর্ভণরের নির্বাহী পরিষদ সদস্য থাকাকালীন সময়ে ময়মনসিংহ, জেলাকে বিভক্ত করাসহ ধনবাড়িতে একটা মহকুমা স্থাপনের প্রস্তাব পেশ করেছিলেন। তাঁর প্রস্তাবটি অনুমোদিত হলে ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে ধনবাড়িতে মহকুমা স্থাপনের জন্য ৫৫.৫ একর জমি হুকুম দখল করা হয়। শেষ পর্যন্ত বিভিন্ন আন্দোলনে এই পরিকল্পনাও বাস্তবায়িত হতে পারেনি।১৯৬২ খ্রিস্টাব্দে তদানীন্তন পাকিস্তান সরকারের নিকট ময়মনসিংহকে বিভক্ত করে কায়েদাবাদ, নাসিরাবাদ, টাঙ্গাইল ও ইসলামাবাদ নামে ৪ টি জেলা স্থাপনের প্রস্তাব পেশ করা হয়েছিল। প্রস্তাবটিতে টাঙ্গাইলে জেলা সদর স্থাপন করে টাঙ্গাইল ও মানিকগঞ্জ মহকুমা সমন্বয়ে টাঙ্গাইল জেলার প্রতিষ্ঠাসহ গোপালপুরে পৃথক মহকুমা স্থাপনের কথা বলা হয়েছিল। ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দের ৮ মার্চ তৎকালীন পাকিস্তান কেন্দ্রীয় সরকারের জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ কর্তৃক টাঙ্গাইলে একটি পৃথক জেলা স্থাপনের পরিকল্পনা গৃহীত হয়। এই পরিকল্পনা অনুসরণে ১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দে ৩৪১ একর জমি হুমুক দখল করে টাঙ্গাইল জেলা সদরের নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়। ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দে ১ ডিসেম্বর তদানীন্তন পূর্বপাকিস্তানের গর্ভণর এডমিরাল এস. এম আহ্সান টাঙ্গাইল জেলার শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন। জনাব এ. এন কলিমুল্লাহ ছিল টাঙ্গাইল জেলার প্রথম জেলা প্রশাসক। টাঙ্গাইল জেলা সৃষ্টির ইতিহাস বর্তমান টাঙ্গাইল জেলা অতীত যমুনা নদীর বুকে নতুন জেগে ওঠা চর এলাকার সমষ্টি।এখানে ছোট্ট ছোট্ট জনগোষ্ঠী বসবাস শুরু করে যার অধিকাংশই ছিল পাশ্ববর্তী উত্তরবঙ্গের অর্থাৎ যমুনার পশ্চিম পাড়ের অধিবাসী। অতীত কাল থেকেই বহু ভাঙ্গাগড়া ও রাজনৈতিক দখল-বেদখল, চড়াই উৎরাই পেরিয়ে যে এলাকা আজ টাঙ্গাইল জেলা বলে পরিচিত লাভ করেছে, টাঙ্গাইল হিসাবে তার গঠন ও স্বতন্ত্র পরিচয় ১৮৬৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত পাওয়া যায় না। অর্থাৎ এই ভূমিতে জন বসতি পুরাতন হলেও টাঙ্গাইল নামটি সাম্প্রতিক। বরং এই অঞ্চল আটিয়া পরগণার অংশ হিসেবে মোগল আমল থেকে পরিচিত। ১৭৬০ খ্রিস্টাব্দে কাসিম বাংলার নবাব হওয়ার পর খাজনা আদায়ের জন্য যে ভূমি বন্দোবস্ত করেন তাতে আটিয়া, কাগমারী, বড়বাজু হোসেনশাহী ইত্যাদি পরগণার নাম পাওয়া যায়- টাঙ্গাইলের নাম পাওয়া যায় না।১৭৭৮ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত রেনেলের মানচিত্রে টাঙ্গাইলের উল্লেখ নেই।পলাশী যুদ্ধের পর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী ক্ষমতা গ্রহণের পর এদেশে সর্বপ্রথম ভূমি জরিপ হয় ১৭৮৮ খ্রিস্টাব্দে। সেখানেও টাঙ্গাইলের উল্লেখ নেই। ১৮৪৫ খ্রিস্টাব্দে শাসনকার্যের সুবিধার জন্য জামালপুর মহকুমা সৃষ্টি হয়। বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলাকে দু’টি বিভাগে বিভক্ত করা হয়। ১। সদর বিভাগ, ২। জামালপুর বিভাগ। সদর বিভাগের অধীনে নাসিরাবাদ, গাবতলী, মধুপুর, নেত্রকোণা, ঘোষগাঁও, ফতেপুর, গফরগাঁও, মাদারগঞ্জ, নিকলি ও বাজিতপুর থানা সমূহ এবং জামালপুর বিভাগের অধীনে শেরপুর, হাজিগঞ্জ ও পিংনা থানা সমূহ রাখা হয়। আটিয়া পরগণার অঞ্চল সমূহ তখন ঢাকা জেলার অন্তর্ভৃক্ত ছিল। ১৮৫০ খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয় ভূমি জরিপের সময়েও টাঙ্গাইলের উল্লেখ পাওয়া যায় না। রেনেলের মানচিত্রে আটিয়া পরগণার উল্লেখ ছিল। তখন বর্তমান টাঙ্গাইলের অধিকাংশ অঞ্চল আটিয়া পরগণার অধীনে ছিল। আঠার ও ঊনিশ শতকের মধ্যভাগ পর্যন্ত আটিয়া নামে পরিচিত অঞ্চলই বর্ধিত হয়ে বর্তমান টাঙ্গাইলের রূপলাভ করেছে। এ থেকে বুঝা যায় টাঙ্গাইলের সাবেকি নাম আটিয়া বললে খুব বেশী ভূল হবে না। ১৮৬৬ খ্রিস্টাব্দে সরকার পারদিঘুলিয়া মৌজায় টানআইল (পরে নাম রূপান্তর হয়ে টাঙ্গাইল হয়) থানার প্রত্তন করে। করটিয়ার মুসলিম জমিদারও বরাবর ইংরেজ বিদ্বেষী ছিল বিধায় আটিয়া পরগণাতেও নতুন থানা বা চৌকির স্থান নির্দিষ্ট হয়নি। যদিও প্রশাসনিক দিক থেকে সেটাই ছিল সর্বোত্তম। যাই হোক নতুন থানাকেই মহকুমা ঘোষণা দিয়ে ১৮৬৯ খ্রিস্টাব্দে মোমেনশাহীর সঙ্গে জুড়ে দেবার কারণটাও অনেকেই টাঙ্গাইলের স্বাতন্ত্র্যতাকে বিনষ্ট করার একটি সুক্ষ্ণ চক্রান্ত বলে মনে করেছেন।অনেকেই আবার এও মনে করেন যে, টাঙ্গাইলের শিক্ষা সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক সক্রিয়তায় অংশীদারিত্ব দাবি করার একটা পরোক্ষ প্রচেষ্টা হিসেবে বিশেষ একটি গোষ্ঠি ইংরেজদের সহযোগিতায় এমনটি করিয়ে ছিলেন। মরহুম রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর তথ্য মতে তিনি কলিকাতায় ছাত্রাবস্থায় (১৯৩৬-১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দ) কলিতার প্রচলিত প্রবাদ Mymensingh Distrcict minus Tangail is equeal to zero একথাই প্রমাণ করে। ঘটনা যাই ঘটে থাকুক, ময়মনসিংহ জেলায় অন্তর্ভূক্তির পর থেকেই টাঙ্গাইল বাসি নিজেদের স্বাতন্ত্র্যতা রক্ষার প্রয়োজনে টাঙ্গাইলকে ময়মনসিংহের আওতা থেকে মুক্ত করে পৃথক জেলার দাবী করে আসতে থাকেন। ১৯১২ খ্রিস্টাব্দে টাঙ্গাইলে সদর দপ্তর স্থাপন করে টাঙ্গাইল ও জামালপুর মহকুমা সমন্নয়ে পৃথক জেলা স্থাপনের খসড়া প্রস্তাব তৈরি করা হয়েছিল। ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে প্রথম মহাযুদ্ধ শুরু হলে এই প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। ই,ভি লেভিজ (Levige) এর সভাপতিত্বে গঠিত Bengal Administrative Committee এর রিপোর্ট পুনরায় ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে ময়মনসিংহকে বিভক্ত করে ময়মনসিংহ, কিশোরঞ্জ ও গোপালপুর জেলা স্থাপনের প্রস্তাব পেশ করা হয়। শেষ পর্যন্ত বিভিন্ন আন্দোলনের কারণে এই পরিকল্পনাও বাস্তবায়িত হতে পারেনি। ১৯১২ খ্রিস্টাব্দে ইংরেজ লাটের কাউন্সিলার স্যার নওয়াব আলী চৌধুরীর নেতৃত্বে ও তৎকালীন রেলওয়ে বোর্ডের চেয়ারম্যান আবদুল হালিম গজনবীর মিলিত প্রচেষ্টায় টাঙ্গাইলকে পৃথক জেলা করার দাবী প্রত্থাপিত হয়। প্রশাসনিক কারণে ময়মনসিংহ জেলা ভাগ করার লক্ষে তৎকালীন ইংরেজ সরকার রাউল্যান্ড কমিটি গঠন করে। এই কমিটির সুপারিশক্রমে ভারতে বড় লার্ট লড রোনাগোসে ময়মনসিংহ জেলাকে ভেঙ্গে জামালপুরের জেলা সদর ও ধনবাড়িতে মহকুমা স্থাপনের অনুমোদন দেন।কিন্তু শেষ পর্যন্ত সে পরিকল্পনা কার্যকর হয়নি বহুবিধ কারণেই। টাঙ্গাইল মহকুমা সদরে নতুন টাঙ্গাইল জেলা স্থাপনের দাবী অব্যহত ভাবে চলতেই থাকে।খন্দকার আবদুর রহিম টাঙ্গাইলের ইতিহাস গ্রন্থে লিখেছেন; ১৭৮৭ খ্রিস্টাব্দে ময়মনসিংহ জেলা স্থাপিত হয়েছিল। বর্তমানে টাঙ্গাইল যে মোমেনশাহী জেলার অন্তর্গত ছিল। সেই মোমেনশাহী পূর্বেছিলো কামরূপ রাজ্যের অন্তর্গত। গৌড়ের সন্তান হোসেনশাহ (১৪৯৩-১৫১৮ খ্রিস্টাব্দ) কামরূপ রাজ্য অধিকার করেন এবং বর্তমান মোমেনশাহী অঞ্চলটি কামরূপ থেকে আলাদা করে স্বীয়পূত্র নসরত শাহকে আধিপত্য দান করেন। টাঙ্গাইল মহকুমাকে জেলায় উন্নীত করার জন্য বহু সংগ্রাম করতে হয়েছে। এই প্রচেষ্টা বৃটিশ আমল থেকে পাকিস্তান আমলের শেষ পর্যায় ছিলো।অবিভক্ত বঙ্গদেশে ময়মনসিংহ জেলা ছিল সবচেয়ে বড় জেলা। ময়মনসিংহে থেকে জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল শাসন ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষা করা ছিলো কঠিন কাজ। তাই স্বভাবত কারণেই টাঙ্গাইল মহকুমাকে জেলা উন্নীত করার বার বার দাবী উঠছে। প্রশাসনের কাছ থেকে আশ্বাস পাওয়ার পরও টাঙ্গাইল জেলায় উন্নীত হতে পারেনি। কারণ যখনই জেলা প্রতিষ্ঠান দাবী তোলা হয়েছে তখনই রাজনৈতিক কারণে তা বাস্তবায়িত হতে পারেনি। একদা ময়মনসিংহ জেলাই টাঙ্গাইল অঞ্চলের গোপালপুর থানার সূবর্ণ খালীতে স্থানান্তর হতে চেয়েছিল। কারণ সূবর্ণখালী সেই সময়ে ময়মনসিংহ জেলার স্বাস্থ্যকর স্থান ছিল। সুর্বণখালী যে তখন স্বাস্থ্যকর স্থান ছিল তার বিবরণ কিছুটা পাওয়া যায় ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দের প্রকাশিত ময়মনসিংহ গেজেটিয়ারে।অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ থেকে বাঁচার জন্য ময়মনসিংহের তৎকালীন সিভিল সার্জন ১৮৬৯ খ্রিস্টাব্দে ময়মনসিংহ জেলা সদর সুর্বণখালীতে স্থানান্তরের পরমর্শ রেখেছিলেন। সরকারের নিকট গেজেটিয়ারে উল্লেখ আছে - The towns of Maymenshingh are not sufficient impertinence to merit special attention in this chapter. In 1869 civil surgeon recommended the transfer of the head quarters of the district to Seaborne Khaki or Jamalpur. ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দে Sir Andrew Fraser ময়মনসিংহ জেলা বিভক্ত করে পৃথক জেলা প্রতিষ্ঠার বিষয়টি আবার আলোচনায় নিয়ে আসেন। ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গ ভঙ্গ হলেও বিষয়টি নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা চলতে থাকে। ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে পূর্ব বঙ্গ ও আসাম সরকার এক প্রজ্ঞাপণের মাধ্যমে ময়মনসিংহ জেলা সদরের দুই প্রান্তে পৃথক দু’টি জেলা সদর স্থাপন করে ময়মনসিংহকে দ’ুটি পৃথক জেলায় রূপান্তর করার বিষয়ে জনমত জরিপের পদক্ষেপ গ্রহণ করে। প্রস্তাবটি বিরোধিতার সম্মুখীন হলে টাঙ্গাইল জামালপুর মহকুমা নিয়ে পৃথক একটি জেলা প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা গ্রহণ পূর্বক জনমত জরিপের ব্যবস্থা করেন। ১৯১২ খ্রিস্টাব্দে এ বিষয়ে ময়মনসিংহ জেলা শহরে একটি বড় জনসভাও অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ধনবাড়ির অনারেবল নবাব স্যার নওয়ার আলী চৌধুরী সি.আই.ই সাহেব ১৯১২ খ্রিস্টাব্দে টাঙ্গাইল মহকুমার কতিপয় জমিদার ও বিশিষ্ট ব্যাক্তিকে নিয়ে ধনবাড়িতে এক সভার আঞ্জাম করেছিলেন। সেই সভাতেই প্রথম সুবৃহৎ মোমেনশাহী জেলাকে বিভক্ত করার দাবী উত্থাপিত হয়েছিল। অনারেবল নবাব স্যার নওয়াব আলী চৌধুরী সাহেব ছিলেন ইংরেজ লাট সাহেবের কাউন্সিলর। তাঁর সঙ্গে যোগ দিয়ে ছিলেন প্রভাবশালী জমিদার স্যার আবদুল হালীম গজনবী সাহেব। তিনি ছিলেন রেলওয়ের বোর্ডের সদস্য। তাদের মিলিত প্রচেষ্টায় সমগ্র টাঙ্গাইল মহকুমা ও জামালপুর মহকুমার কিয়দংশ নিয়ে একটা স্বতন্ত্র জেলা প্রতিষ্ঠার দাবী পেশ করা হয়েছিল। দাবী করা হয়েছিল প্রস্তাবিত জেলার সদর স্থাপনের জন্য ধনবাড়িকে মনোনীত করা হোক। কেবল তাই নয় ধনবাড়ি হয়ে টুঙ্গি-টাঙ্গাইল-জামালপুর একটা নতুন রেল পথ স্থাপনেরও পরিকল্পনা পেশ করা হয়েছিল ইংরেজ সরকারের কাছে। ময়মনসিংহ জেলা বিভক্তি করণের বিষয়টি সাধারণ জনগণের মনে তেমন প্রক্রিয়া সৃষ্টি করেনি এবং আগ্রহও দেখায়নি। কারণ জনগণ থেকে প্রশাসন ও প্রশাসনিক কর্মকর্তার অবস্থান ছিল অনেক দূরত্বে। তারা প্রশাসনিক সুযোগ সুবিধা থেকেও বরাবর বঞ্চিত ছিল। প্রস্তাবনার পক্ষে বা বিপক্ষে তাদের তেমন অবন্থান ছিল না। তবে শিক্ষিত সুধিমহল বিশেষতঃ উকিল, মোক্তার, ব্যবসায়ী, জমিদার, উচ্চ ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর পেশাজীবি লোকজন জেলা বিভাজনের বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব সহকারে বিচার বিশ্লেষণ করেছেন। ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত স্বার্থ জরিত থাকার কারণে তারা ময়মনসিংহ জেলা সদরের বাইরে অন্য কোথায়ও জেলা সদর স্থাপনের বিরোধিতা করেছেন। প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্ট কমিটির রিপোর্টে উল্লেখ আছে- The protests appeared to come almost entirely from the pleader class. These are supported by the numerous classes of touts, hotel keepers and other persons nourished by litigation. A small number of zaminders, whose house were in Mayenshing and lands in some outlying part of the district, were also very naturally impressed by the inconvenience that would be caused to them selves. This person also put for word the argument, which appealed to a winder section- That the importance of the district ant of it’s local bodies, official & non official, would be diminished, while such head quarters institutions as schools, colleges, water, works, dispensaries & like would suffer... বাংলার বিভিন্ন জেলা সমূহে বিদ্যমান অসুবিধা ও জটিল পরিস্থিতি যাচাই করার জন্য সরকার ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দের ২৫ অক্টোবর ৬ সদস্য বিশিষ্ট Bengal District Administration committee গঠন করেন। কমিটির মেয়াদকাল ছিল ১৯১৩-১৪ খ্রিস্টাব্দ। মিঃ ই.ভি লিভিঞ্জ ছিলেন কমিটির সভাপতি এবং সদস্য সচিব ছিলেন মিঃ সি.ই.লো। কমিটির সম্মানিত সদস্য ছিলেন মিঃ এইচ. ভি. লোভেট, মিঃ এন.ডি বিটসন বেল, মিঃ কে.সি.দে এবং মিঃ ই.এন. ব্লান্ডি। ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দের ১০ নভেম্বর তারিখে কমিটি কাজ শুরু করেন। উক্ত কমিটি সরকারের বিভিন্ন দলিল দস্তাবেজ, বিগত কমিটি সমূহের রিপোর্ট পর্যালোচনার পাশা পাশি বিভিন্ন জেলায় সরোজমিনে পরিদর্শণ ও সুধিমহলের সঙ্গে মত বিনিময়ের মাধ্যমে প্রকৃত সমস্যা চিহ্নিত করে নিজস্ব সুপারিশ বা প্রস্তাবনা সরকারের নিকট পেশ করেন। তাদের সুপারিশ মালায় ময়মনসিংহ জেলা বিভিক্ত করে তিনটি পৃথক জেলা প্রতিষ্ঠা(ময়মনসিংহ, গোপালপুর ও কিশোরগঞ্জ) এবং বিদ্যমান পাঁচটি মহকুমার স্থলে নয়টি মহকুমার স্থাপনের পরিকল্পনা ছিল। প্রস্তাবিত গোপালপুর জেলার রূপরেখা ও কাঠামোঃ নালিতাবাড়ি থানা ব্যতীত সমগ্র জামালপুর এবং টাঙ্গাইল মহকুমা নিয়ে প্রস্তাবিত গোপালপুর জেলা গঠিত হবে। জেলা সদরের জন্য স্থান নির্বাচন প্রসঙ্গে টাঙ্গাইল ও জামালপুর শহরের অধিবাসীদের মধ্যে উত্তেজনা ও উৎকণ্ঠা বিরাজমান ছিল। উভয়ের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতাও ছিল লক্ষনীও। জামালপুর ও টাঙ্গাইলের মধ্যে টাঙ্গাইল মহকুমা ছিল বড় ও গুরুত্বপূর্ণ। তবে টাঙ্গাইল সদর শহর ছিল খুবই অস্বাস্থ্যকর। টাঙ্গাইল অথবা জামালপুর শহরের যে কোন একটিকে প্রস্তাবিত জেলা হিসেবে বেছে নিলে তা জেলার একপ্রান্তে অবস্থিত থাকবে।সেজন্য প্রশাসনিক যে অসুবিধা দেখা দিবে তা মোকাবেলার জন্য আবারও নতুন মহকুমা প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিবে। এসমস্ত অসুবিধা ও প্রতিবন্ধকতার কথা বিবেচনা করে কমিটি টাঙ্গাইল ও জামালপুর জেলার মাঝামাঝি স্থানে অবস্থিত গোপালপুর থানাতে জেলা সদর স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। প্রস্তাবিত জামালপুর-টাঙ্গাইল এবং সুর্বণখালী-ময়মনসিংহের রেলপথের সংযোগস্থলের নিকটবর্তী স্বাস্থ্যকর একটি জায়গাতে জেলা সদর নির্মাণের স্থান বাছাই করা হয়। প্রস্তাবিত গোপালপুর জেলায় মহকুমা ছিল তিনটিঃ ক) সদর মহকুমা, খ) জামালপুর মহকুমা, গ) টাঙ্গাইল মহকুমা। ক) সদর মহকুমাঃ সরিষাবাড়ি, গোপালপুর, কালিহাতী ও ঘাটাইল থানা নিয়ে গঠিত। এর আয়তন ৬১৬ বর্গমাইল। লোক সংখ্যা ৫৫৪৩১৫ জন। গ্রাম- ৮৯টি। ১৯১২ খ্রিস্টাব্দে উল্লেখিত থানা সমূহে পুলিশ কেসের সংখ্যা ছিল ৬৬১টি। খ) জামালপুর মহকুমাঃ জামালপুর-মেলান্দ, শেরপুর, দেওয়ানগঞ্জ ও মাদারগঞ্জ থানা সমন্বয়ে গঠিত। এর আয়তন ৯৪৮ বর্গ মাইল। লোক সংখ্যা ৬৮৮৭৫৩ জন। গ্রাম- ৯৬টি। ১৯১২ খ্রিস্টাব্দে থানা সমূহে নথিভূক্ত পুলিশ কেস ছিল ৬৫২টি। গ) টাঙ্গাইল মহকুমাঃ টাঙ্গাইল, বাসাইল, মির্জাপুর ও নাগরপুর থানা সমন্বয়ে গঠিত। এর আয়তন ৪৪৬ বর্গ মাইল। লোক সংখ্যা ৪৯৫৪৫৭ জন।গ্রাম- ৮৭ টি। ১৯১২ খ্রিস্টাব্দে এসব থানায় পুলিশ কেস ছিল ৬৭১টি।প্রস্তাবিত গোপালপুর জেলায় মোট থানার সংখ্যা ১৩টি, জনসংখ্যা ১৭৩৮৫২৫ জন।আয়তন ২০০৯ বর্গ মাইল। মোট গ্রাম- ২৭২ এবং ১৯১২ খ্রিস্টাব্দে মোট পুলিশ কেসের সংখ্যা ছিল ১৯৮৪ টি। প্রস্তাবিত জেলার প্রশাসন ব্যবস্থা পরিচালনার জন্য সরকারী কর্মকর্তা (Civil Executive Staff) ছিল নিম্নরূপঃ ১। জেলা ম্যাজিস্ট্রেটঃ ০১ জন। ২। মহকুমা প্রশাসকঃ ০১ জন করে প্রতি মহকুমায়। ৩।প্রথম শ্রেণীর ক্ষমতা সম্পন্ন ম্যাজিস্ট্রেট ০২ জন (জেলা সদরের জন্য)। ৪।ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও সাব ডেপুটি ম্যাজিস্টেট (২য় শ্রেণী/৩য় শ্রেণীর ক্ষমতা সম্পন্ন) জেলা সদরের জন্য। ৫। টাঙ্গাইল ও জামালপুর মহকুমার জন্য ২য় শ্রেণী ক্ষমতা সম্পন্ন ২ জন করে সাব ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট। ১৯১৩-১৪ খ্রিস্টাব্দে Bengal District Administration Committee টাঙ্গাইল ও জামালপুর, সদর মহকুমা সমন্বয়ে প্রস্তাবিত ‘গোপালপুর জেলার’রূপরেখা ও কাঠামো চুড়ান্ত করার পাশাপাশি জেলা ও মহকুমা সমূহের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রতি নজর রেখেছিলেন। কারণ জলাভূমি, নদ-নদী, উপনদী, খালবিল নালার কারণে তৎকালীন স্থল যোগাযোগ ব্যবস্থা সন্তোষজনক ছিল না। এলাকার উন্নয়ন ও গতিশীল প্রশাসনের জন্য উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা অপরিহার্য এজন্য কমিটি টাঙ্গাইল থেকে ময়মনসিংহ-সিংঝানি এবং যমুনা নদী তীরবর্তী বিখ্যাত বন্দরনগরী সুবর্ণাখালী হতে ময়মনসিংহ, ভৈরব বাজার হতে কিশোরগঞ্জ হয়ে ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা ও ধারানগিরি কয়লা খনি পর্যন্ত নতুন রেলপথ স্থাপনেরও সুপারিশ করেছিলেন। প্রস্তাবিত গোপালপুর জেলা বাস্তবায়িত হয়নি। ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে বৃটেন প্রথম মহাযুদ্ধে জড়িয়ে পরে। ভারতীয় উপমহাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গন ছিল উত্তপ্ত। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। বিশ্বযুদ্ধ এবং ভারতীয় উপমহাদেশে বিদ্যমান রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণেই তৎকালীন বৃটিশ সরকার মিঃ ই.ভি.লিভিঞ্জ কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়নে উৎসাহী হয়নি। পরবর্তী কালে জেলা বিভাজন ও নতুন জেলা সৃষ্টির প্রস্তাব ও পরিকল্পনা সরকারী ও স্থানীয় ভাবে একাধিকবার আলোচনায় এসেছে। কিন্তু প্রস্তাবিত ‘গোপালপুর জেলার’কথা রহস্যজনক কারণে অন্ধকারেই থেকে গেছে। প্রস্তাবিত ‘গোপালপুর জেলা’বাস্তবায়িত হলে ময়মনসিংহ জেলার সমগ্র পশ্চিম অঞ্চলের জনগণ অধিক লাভবান হতো।টাঙ্গাইল ও জামালপুর জেলার অবস্থান উত্তর-দক্ষিণ লম্বালম্বি। দু’প্রান্তে দু’টি মহকুমা সদর ও মাঝখানে জেলা সদর প্রতিষ্ঠিত হলে সমগ্র অঞ্চলের অবকাঠামোগত উন্নয়ন, রাস্তা-ঘাট, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-কারখানা ও শিক্ষা-সংস্কৃতির ব্যাপক প্রকাশ ঘটতো প্রায় শতবর্ষ পূর্বেই। মিঃ ই.ভি.লিভিঞ্জ কমিটির (১৯১৩-১৪ খ্রিস্টাব্দের) প্রস্তাবিত গোপালপুর জেলা এখন স্থানীয় আঞ্চলিক ইতিহাসে উপাত্ত মাত্র। ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে ভারতবর্ষে খেলাফত আন্দোলন শুরু হয়। মওলালা মুহম্মদ আলী ও মওলানা শওকত আলী এই আন্দোলনকে মহাত্নাগান্ধী সমর্থন করেন। ফলে আলী ভ্রাতৃদ্বয়ের খেলাফত আন্দোলন বৃটিশ সাম্রাজ্যের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। খেলাফত আন্দোলনের জন্য টাঙ্গাইলকে জেলা করার পরিকল্পনা স্থগিত হয়ে যায়। ১৯৩৮, ১৯৪৩,১৯৪৮,১৯৫৪ ও ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে প্রাদেশিক সরকারের বিভিন্ন মূখ্যমন্ত্রী ও বিভাগীয় মন্ত্রী মহোদয়ের সঙ্গে যুক্তিক দাবী দাওয়া উত্থাপন ও সরকারী পর্যায়ে সমর্থিত হবার এক পর্যায়ে ১৯৬০,১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে পাকিস্তান অর্থনৈতিক কাউন্সিল মোমেনশাহীকে ভেঙ্গে টাঙ্গাইল, কাইদাবাদ ও নাসিরাবাদ জেলা করার চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত অনুমোদন করে। ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে বাংলায় এক ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। এই সময় বাংলার দুই তৃতীয়াংশ লোক অনাহারে মারা যায়।মানুষ কচু ঘেচু নানারকম অখাদ্য কুখাদ্য খেয়ে অকালে প্রাণ ত্যাগ করতে থাকে।ইংরেজ সরকার কৃত্রিম দুর্ভিক্ষ রোধ করার জন্য চেষ্টা করেন। বাংলার বাইরে থেকে খাদ্যশস্য এনে জেলাওয়ারী খাদ্যশস্য বণ্টন করে দুর্ভিক্ষ রোধ করার চেষ্টা করা হয়। এই সময় অবিভক্ত বাংলার খাদ্য মন্ত্রী ছিলেন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী সাহেব। টাঙ্গাইলের লোকজন টাঙ্গাইলের জন্য আরো খাদ্য শস্য বরাদ্দের জন্য খাদ্য মন্ত্রীর নিকট দাবি জানায়। শহীদ সাহেব সেই দাবির পরিপ্রেক্ষিতেই টাঙ্গাইলকে আলাদা একটি জেলায় উন্নীত করার প্রস্তাব করেন।১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে পূর্ববাংলার প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন টাঙ্গাইল থেকে উপ-নির্বাচনের প্রার্থী হয়েছিলেন। সে সময় মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর অছিয়তে তরুণ অগ্নিবর্ষী নেতা শামছুল হকের নেতৃত্বে টাঙ্গাইলবাসী ১৭ দফা দাবি সম্বলিত এক স্মারক লিপি পেশ করেছিলেন। খাজা নাজিমুদ্দিনের কাছে। সেই ১৭ দফার মধ্যে প্রধান ছিল টাঙ্গাইলকে পৃথক জেলায় পরিণত করার দাবী। ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১৪ আগস্ট র‌্যাডক্লিফ সীমানা কমিশন বাংলাকে দু’টি ভাগে বিভক্ত করে। ফলে পূর্ব পাকিস্তান বর্তমান বাংলাদেশের কিছু জেলার সীমানা পরিবর্তন ঘটে। তবে ময়মনসিংহ জেলার সীমানা আগের মত বহাল রাখা হয়। ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে উপ-মহাদেশ বিভক্তের পর ময়মনসিংহ জেলাকে ৩ টি জেলায় ভাগ করার প্রস্তাব করা হয়েছিল। প্রস্তাবিত জেলাগুলোর নাম হলো- নাসিরাবাদ, কায়দাবাদ ও টাঙ্গাইল। এমনকি ময়মনসিংহ জেলার ৫টি মহকুমাকে ৫টি জেলায় বিভক্ত করার প্রস্তাবও করা হয়েছিল। ১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দের পাক-ভারত যুদ্ধের কারণে জেলা স্থাপনের কাজ স্থগিত হওয়ার সুযোগে ১৯৬৬,১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দ তৎকালীন গভর্ণর মোনায়েম খাঁর ভাই খোরশেদ খান সাহেব এক শ্রেণীর কায়েমী স্বার্থন্বেষীদের যোগসাহসে গভর্ণরের আর্শিবাদ পুষ্ট হয়ে জুট মিলে বিনিময়ে জেলার দাবী প্রত্যাহারের প্রস্তাব করেন। তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তানে প্রচন্ড রাজনৈতি অস্থিরতা ও সামনে সাধারণ নির্বাচন বিধায় কোনো রাজনৈতিক দলই তখন এদিকটায় তেমন উৎসাহ প্রদর্শন না করার কারণে অবশেষে প্রিন্সিপাল ইব্রাহীম খাঁ কর্তৃক স্থাপ্তিত টাঙ্গাইল মাহ্ফিল (স্থাপিত ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দ) কর্তৃক অরাজনৈতিক ভাবে জেলা প্রতিষ্ঠার দাবী নিয়ে সোচ্চার হতে হয় এবং ‘টাঙ্গাইল জেলা চাই’নামে আন্দোলন শুরু করা হয়। মাহ্ফিলে সভাপতি ড. আলীম আল রাজির নেতৃত্বে। এই আন্দোলনে মাহফিলকে ড. এম.এন হুদা (সাবেক অর্থমন্ত্রী) তাঁর সরকারী সুবিধা ব্যবহার করে এন.ইসি’র অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাদি সরবরাহ করে সর্বাত্নক সহযোগিতা দান করেন। টাঙ্গাইলের বিশিষ্ট নাগরিকবৃন্দ টাঙ্গাইল থেকে সবিশেষ সক্রিয়তা প্রকাশ করেন। ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে পূর্ব-পাকিস্তানে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচন উপলক্ষে হক-ভাসানী- সোহরাওয়ার্দী যুক্তফ্রন্ট গঠণ করেন। এই সাধারণ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের কাছে মুসলিম লীগ সূচনীয় ভাবে পরাজিত হয়। যুক্তফ্রন্টের কাছে টাঙ্গাইল বাসী টাঙ্গাইলকে পৃথক জেলা ঘোষণা করার দাবি জানায়। যুক্তফ্রন্ট তা নির্বাচনী ওয়াদা হিসাবে অন্তর্ভূক্ত করে। যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে জয়লাভ করে। যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনী ওয়াদা হিসেবে টাঙ্গাইলকে পৃথক জেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম শুরু করে। এ ব্যাপারে মওলানা ভাসানীর সক্রিয় সমর্থন ছিল। এইভাবে বিভিন্ন সময়ে দাবির প্রেক্ষিতে টাঙ্গাইল মহকুমা প্রতিষ্ঠার একশত বৎসর পর অর্থাৎ ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দের ১ডিসেম্বর টাঙ্গাইল মহকুমা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ১৯তম জেলা হিসেবে আত্নপ্রকাশ করে। অর্থনীতি দর্শনীয় স্থান সংযোগ=বিশেষ:ফাইলের_পথ/Jomuna_Bridge.jpg|থাম্ব|220x220পিক্সেল|বঙ্গবন্ধু সেতু বড় কালীবাড়ি ফালুচাঁদ চীশতি-এর মাজার - সখিপুর উপজেলা; আতিয়া মসজিদ ২০১ গম্বুজ মসজিদ গোপালপুর উপজেলা; হামিদপুর পলাশতলীর ব্রিজ ও বর্ষাকালিন বিল সখিপুর উপজেলা; মধুপুর জাতীয় উদ্যান যমুনা বহুমুখী সেতু আদম কাশ্মিরী-এর মাজার; মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর মাজার পরীর দালান / হেমনগর জমিদার বাড়ি, খামারপাড়া মসজিদ ও মাজার, ঝড়কা, সাগরদীঘি, গুপ্ত বৃন্দাবন, পাকুটিয়া আশ্রম, মগড়া নাম মন্দির, ভারতেশ্বরী হোমস, মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজ, পাকুল্লা মসজিদ, আরুহা-শালিনাপাড়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, নাগরপুর চৌধুরীবাড়ী, পুন্ডরীকাক্ষ হাসপাতাল, উপেন্দ্র সরোবর, গয়হাটার মঠ, যমুনা নদীর পাড় তেবাড়িয়া জামে মসজিদ, এলেঙ্গা রিসোর্ট, যমুনা রিসোর্ট, যমুনা ক্যান্টনমেন্ট, এলেঙ্গা জমিদার বাড়ী কাদিমহামজানি মসজিদ, ঐতিহ্যবাহী পোড়াবাড়ি, করটিয়া সা’দত কলেজ, করটিয়া জমিদার বাড়ি, কুমুদিনী সরকারি কলেজ, বিন্দুবাসিনী বিদ্যালয়, দোখলা ভিআইপ রেস্ট হাউস, পীরগাছা রাবারবাগান ইবরাহীম খাঁ সরকারি কলেজ গোবিন্দাসী গরুর হাট ভূঞাপুরের নীলকুঠি, শিয়ালকোল বন্দর, ধনবাড়ি নবাব বাড়ি ধনবাড়ী মসজিদ, নথখোলা স্মৃতিসৌধ, বাসুলিয়া, রায়বাড়ী, কোকিলা পাবর স্মৃতিসৌধ, মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভ, ধলাপাড়া চৌধুরীবাড়ী, মহেরা জমিদার বাড়ি, রাধা কালাচাঁদ মন্দির পাকুটিয়া জমিদার বাড়ী বনগ্রাম গনকবর স্বপ্ন বিলাস (চিড়িয়াখানা) মোকনা জমিদার বাড়ী তিনশত বিঘা চর ভারতেশ্বরী হোমস বায়তুল নূর জামে মসজিদ দেলদুয়ার জমিদার বাড়ি নাগরপুর জমিদার বাড়ি এলাসিন ব্রিজ ডিসি লেক ২০১ গম্বুজ মসজিদ চারান বিল তেলিনা জলকুটির সন্তোষ জমিদার বাড়ি অলোয়া জমিদার বাড়ি ছয়আনী শিব মন্দির ধলাপাড়া চৌধুরী বাড়ি। ধলাপাড়া মসজিদ। মনতলা, মাগুরাটা, টাঙ্গাইল সদর। বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব শিক্ষা শিক্ষার হার: ৭১.২১% উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: করিমুননেছা সিদ্দিকী উচ্চ বিদ্যালয়,আউলিয়াবাদ হামিদপুর পলাশতলী কলেজ, সখিপুর হামিদপুর গণ উচ্চ বিদ‍্যালয়, সখিপুর সখিপুর সরকারী মুজিব ডিগ্রী অনার্স কলেজ সখিপুর আবাসিক মহিলা অনার্স কলেজ মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ, সরকারি সা'দত কলেজ, ঘাটাইল ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজ, বঙ্গবন্ধু টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজ, কুমুদিনী মহিলা মেডিকেল কলেজ, কুমুদিনী সরকারি কলেজ নাগরপুর সরকারি কলেজ, নাগরপুর। সরকারি এম.এম আলী কলেজ, কালিহাতি শাহজাহান সিরাজ কলেজ, প্রিন্সিপাল ইব্রাহিম খাঁ সরকারি কলেজ, বিন্দুবাসিনী সরকারী বালক উচ্চ বিদ্যালয়, বিন্দুবাসিনী সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, সন্তোষ জান্হবী উচ্চ বিদ্যালয়, মধুপুর শহীদস্মৃতি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, সরকারি শেখ ফজিলাতুন নেসা মুজিব মহিলা মহাবিদ্যালয়, মেজর জেনারেল মাহমুদুল হাসান আদর্শ কলেজ, কালিহাতী আর এস পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, বেড়ীপটল আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়, মাওলানা ভাসানী ডিগ্রি কলেজ, এলাসিন। হাজী ইসমাইল খাঁ বেসরকারি কারিগরি কলেজ, ইবরাহীম খাঁ সরকারি কলেজ, টাঙ্গাইল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, মসদই উচ্চ বিদ্যালয়, বেলায়েৎ হোসেন বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়, এলেঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয়, সরকারী শামসুল হক কলেজ মগড়া পালস ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়, মগড়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, লাউহাটী এম আজহার মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয় বিবেকানন্দ হাই স্কুল এন্ড কলেজ শিবনাথ উচ্চ বিদ্যালয় জেলা সদর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, আনুহলা উচ্চ বিদ্যালয়, পিটিআই হাই স্কুল, আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়, বেড়াবুচনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাজিতপুর উচ্চ বিদ্যালয়, লায়ন নজরুল ইসলাম ডিগ্রী কলেজ, টাঙ্গাইল কমার্স কলেজ, পুলিশ লাইন্স কলেজ, বুলবুল ক্যাডেট স্কুল, বুলবুল রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল, সৃষ্টি কলেজ, শাহীন কলেজ, আলাউদ্দিন সিদ্দিকী কলেজ, বল্লা করোনেশন উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ, ৫৪ নং বেতডোবা সরকারী মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়, ইছাপুর শেরে বাংলা উচ্চ বিদ্যালয়, খিলদা উচ্চ বিদ্যালয়, পটল উচ্চ বিদ্যালয়, গয়হাটা উদয়তারা উচ্চ বিদ্যালয়, রামপুর উচ্চ বিদ্যালয়, নাগরপুর যদুনাথ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, নয়ান খান মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়, সলিমাবাদ ইউনিয়ন সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, সলিমাবাদ তেবাড়িয়া ইসলামিয়া উচ্চ বিদ্যালয়, ঘুনিপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়, চৌধুরী মালঞ্চ উচ্চ বিদ্যালয়, ছোট বাসালিয়া উচ্চ বিদ্যালয়, অগ্রনী উচ্চ বিদ্যালয়, দেউপুর উচ্চ বিদ্যালয়, নাগবাড়ী হাসিনা চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়, চৈথট্ট গণ উচ্চ বিদ্যালয়, পাকুটিয়া পাবলিক উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়, এম. কে. ডি. আর গণ উচ্চ বিদ্যালয়, কালিহাতী পাইলট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়, আহসান উল্লাহ উচ্চ বিদ্যালয়, বিন্যাফৈর উচ্চ বিদ্যালয়, বাঘিল কে. কে. উচ্চ বিদ্যালয়, নারান্দিয়া টি আর কে এন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, রামপুর উচ্চ বিদ্যালয়, পাইকড়া এম. ইউ. উচ্চ বিদ্যালয়, কোকডহরা উচ্চ বিদ্যালয়, চারান উচ্চ বিদ্যালয়, শহীদ জামাল উচ্চ বিদ্যালয়, ভরসরাই উচ্চ বিদ্যালয়, বল্লা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, নরদহি উচ্চ বিদ্যালয়, দেওপাড়া গন উচ্চ বিদ্যালয়, ভবন দত্ত গণ উচ্চ বিদ্যালয়, ঘড়িয়া উচ্চ বিদ্যালয়, পালিমা আর এইচ কে উচ্চ বিদ্যালয়, লুহুরিয়া বি এইচ আর উচ্চ বিদ্যালয়, বিলবর্ণি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, হাজী নওয়াব আলী উচ্চ বিদ্যালয়, আমজানী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, ফেরদৌস আলম ফিরোজ উচ্চ বিদ্যালয়, শহীদ শাহেদ হাজারী উচ্চ বিদ্যালয়, লাঙ্গলজোড়া উচ্চ বিদ্যালয়, সোমজানী উচ্চ বিদ্যালয়, যদুনাথ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, ঘোনাপাড়া ডঃ নরুর রহমান খান উচ্চ বিদ্যালয়, কে.জি.কে. উচ্চ বিদ্যালয়, পোড়াবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়, বংশাই স্কুল এন্ড কলেজ, নিয়াতমপুর মাদ্রাসা, গোহালিয়াবাড়ী ফাযিল মাদ্রাসা, দেওপাড়া বাহরুন নেছা দাখিল মাদ্রাসা, বিরাহিমপুর হাফিজিয়া মাদরাসা, বাইচাইল ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসা, বীর বাসিন্দা ভোজদত্ত দাখিল মাদ্রাসা, দারুল সুন্নাহ দাখিল মাদ্রাসা, ব্রাহ্মণশাসন এ.কে বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, আবু সাইদ মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়, ঢালান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সৈয়দপুর উচ্চ বিদ্যালয়, আগচারান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পাকুল্যা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, লায়ন ফেরদৌস আলম ফিরোজ কলেজ, শেহাব উদ্দিন কলেজ, যমুনা কলেজ, লুৎফর রহমান মতিন মহিলা কলেজ, কালিহাতী কলেজ, আথাইল শিমুল উচ্চ বিদ্যালয়, ভূয়াপুর সরকারী মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, ঘাটাইল মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, উখারিয়াবাড়ী বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়, আউশনারা বোকার বাইদ দাখিল মাদ্রাসা, আউশনারা উচ্চ বিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজ, খাস বিয়ারা দাখিল মাদ্রাসা, গরিলাবাড়ী দাখিল মাদ্রাসা, গহালিয়াবাড়ী ফাজিল মাদ্রাসা, ধুবড়িয়া আলিফ উদ্দীন ফাযিল (ডিগ্রী) মাদরাসা, ধলাপাড়া কলেজ। শহর গোপিনপুর ফাজিল ডিগ্রি মাদ্রাসা। ধলাপাড়া এস ইউ পি উচ্চ বিদ্যালয়। শহর গোপিনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ধলাপাড়া চন্দনগন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। সৃষ্টি একাডেমিক জুনিয়র স্কুল। গালা গণ উচ্চ বিদ্যালয় গালা গণ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় গালা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় আমিরপুর উচ্চ বিদ্যালয়। মহেলা রাবেয়া সিরাজ উচ্চ বিদ্যালয়। ফটিকজানী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ বিষয়শ্রেণী:বাংলাদেশের জেলা বিষয়শ্রেণী:টাঙ্গাইল জেলা বিষয়শ্রেণী:ঢাকা বিভাগের জেলা বিষয়শ্রেণী:১৯৭১-এর পূর্বে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশের জেলা
টাঙ্গাইল জেলা
সিলেট জেলা (সিলেটি: ꠍꠤꠟꠐ) বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল সিলেট। এটি সিলেট বিভাগের অধিক্ষেত্রভুক্ত একটি জেলা। উপজেলার সংখ্যানুসারে সিলেট বাংলাদেশের একটি “এ” শ্রেণীভুক্ত জেলা। সিলেট বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বে অবস্থিত একটি প্রাচীন জনপদ। বনজ, খনিজ ও মৎস্য সম্পদে ভরপুর এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মন্ডিত এ জেলা দেশের আধ্যাত্মিক রাজধানী ও বিশ্বের দ্বিতীয় লন্ডন হিসেবে খ্যাত। জৈন্তিয়া পাহাড়ের অপরূপ দৃশ্য, জাফলং এর মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্য, ভোলাগঞ্জের সারি সারি পাথরের স্তূপ, পাথরের বিছানাখ্যাত বিছনাকান্দি, রাতারগুল জলাবন পর্যটকদের টেনে আনে বার বার। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর সিলেট জেলার বিপুল সংখ্যক লোক পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে অভিবাসন গ্রহণ করেছে। তারা প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা প্রেরণ করে দেশের অর্থনীতিতে বিশেষ অবদান রাখে। সিলেটের পাথর, বালির গুণগতমান দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। জেলার প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুদ রয়েছে যা সারা দেশের সিংহভাগ চাহিদা পূরণ করে থাকে। স্বাধীনতা যুদ্ধে এ জেলার ভূমিকা অপরিসীম। মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি জেনারেল এম,এ,জি ওসমানী এ জেলারই কৃতী সন্তান। ১৭৬৭ খ্রিষ্টাব্দে এ অঞ্চল ব্রিটিশদের করায়ত্ত হবার পর ১৭৭২ খ্রিষ্টাব্দে সিলেট জেলার সৃষ্টি হয় এবং প্রথম কালেক্টর হিসেবে নিয়োগ পান মিঃ উইলিয়াম থ্যাকারে। ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর এক পর্যায়ে সিলেট জেলাকে ভেঙ্গে চারটি জেলা সৃষ্টি করা হয় । স্বাধীনতাপূর্ব সদর মহুকুমার এলাকা নিয়ে বর্তমানে সিলেট জেলা গঠিত । ১২(বার)টি উপজেলা নিয়ে বর্তমান সিলেট জেলা গঠিত। সিলেট জেলার প্রধান বাণিজ্যিক এলাকা হলো সিলেট শহর । ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমলেই সিলেট দ্রুত বিকাশ লাভ করেছে। সিলেট পৌরসভা সৃষ্টি ১৮৭৮ খ্রিষ্টাব্দে । ১৮৯৭ খ্রিষ্টাব্দের ১২ জুন এক মারাত্মক ভূমিকম্প গোটা সিলেট শহরটি প্রায় সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে ফেলে। পরবর্তী কালে ধ্বংসস্ত্তপের ওপর গড়ে উঠে ইউরোপীয় ধাঁচের আরও সুন্দর ও আধুনিক শহর। ১৮৯০ এর দশকের শেষ ভাগে বেশ কিছু রাস্তাঘাট তৈরি করা হয়। ১৯১২-১৫ সালে আসাম বেঙ্গল রেলওয়ের একটি শাখা সিলেটের সাথে সংযুক্ত হলে দেশের অন্যান্য অংশের সাথে সিলেটের বিচ্ছিন্নতার প্রকৃত অবসান ঘটে। চা শিল্পের কারণে বিশ শতকের প্রথম দিকে সিলেট শহরের গুরুত্ব বৃদ্ধি পেতে থাকে। ১৯৫০ ও ১৯৬০ দশকে প্রবাসী সিলেটিদের কল্যাণে সিলেটের শহর দ্রুত নগরায়ণ ঘটতে থাকে৤ এই নগরায়ন প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। ভৌগোলিক সীমানা সিলেট জেলার ভৌগোলিক অবস্থান ২৪­° ৪০’ থেকে ২৫° ১১’’ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১° ৩’’ থেকে ৯২° ৩’’ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সিলেট জেলার উত্তরে ভারতের মেঘালয় ও খাশিয়া-জৈন্তিয়া পাহাড়, পূ্র্বে ভারতের আসাম, দক্ষিণে মৌলভীবাজার জেলা ও পশ্চিমে সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জ জেলা অবস্থিত। এই জেলার আয়তন ৩,৪৯০.৪০ বর্গ কিমি। বাৎসরিক সর্বচ্চো তাপমাত্রা ৩৩.২° সেলসিয়াস ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৩.৬° সেলসিয়াস। বাৎসরিক বৃষ্টিপাত ৩৩৩৪ মিলিমিটার। প্রধান নদী সুরমা ও কুশিয়ারা। হাওড় সংখ্যা ৮২ টি। সংরক্ষিত বনাঞ্চল ২৩৬.৪২ বর্গ কিলোমিটার। ভারতের খাশিয়া-জয়ান্তা পাহারের কিছু অংশ এই জেলায় পরেছে। এছাড়াও কিছু ছোট পাহাড় ও টিলা রয়েছে এখানে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে জৈন্তাপুর (৫৪ মাইল), সারি টিলা (৯২ মাইল), লালখান টিলা (১৩৫ মাইল), ঢাকা দক্ষিণ টিলাসমুহ (৭৭.৭ মাইল)। প্রশাসনিক এলাকাসমূহ ১৭৮২ সালের ৩ জানুয়ারি সিলেট জেলা প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮৭৪ সাল পর্যন্ত সিলেট জেলা ছিল চট্টগ্রাম বিভাগের অর্ন্তভূক্ত। ঐ বছরেরই ১২ সেপ্টেম্বর নবসৃষ্ট আসাম প্রদেশের সাথে সিলেটকে সংযুক্ত করা হয়। ১৯৪৭ এর আগ পর্যন্ত (১৯০৫-১৯১১ পর্যন্ত বঙ্গভঙ্গ সময়ের কালটুকু বাদ দিয়ে) সিলেট আসামের অংশ ছিল। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভিক্তির সময় গণভোটের মাধ্যমে সিলেট জেলা তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান এর সাথে সম্পৃক্ত হয়। তখন প্রশাসনিকভাবে সিলেট ছিল চট্টগ্রাম বিভাগের অর্ন্তভূক্ত। ১৯৮৩-৮৪ সালে প্রশাসনিক পুনর্গঠন এর সময় বৃহত্তর সিলেট জেলাকে ০৪(চার)টি নতুন জেলায় বিভক্ত করা হয়। প্রশাসনিক এলাকাসমূহ সিলেট জেলা ২৭ ওয়ার্ড বিশিষ্ট ১টি সিটি কর্পোরেশন, ১৩টি উপজেলা, ১৭টি থানা, ৫টি পৌরসভা, ১০৬টি ইউনিয়ন, ১৬৯৩টি মৌজা, ৩৪৯৭টি গ্রাম ও ৬টি সংসদীয় আসন নিয়ে গঠিত। উপজেলাসমূহ সিলেট জেলায় মোট ১৩টি উপজেলা রয়েছে। উপজেলাগুলো হল: সংসদীয় আসন ইতিহাস সিলেটের আঞ্চলিক ইতিহাস গ্রন্থ অনুসারে এই অঞ্চলের প্রাচীন সীমানার যে উল্লেখ পাওয়া যায় সে অনুসারে তৎকালীন শ্রীহট্টমণ্ডল বর্তমান সিলেট বিভাগের চেয়ে আয়তনে অনেক বড় ছিল, এমনকি বাংলাদেশের বর্তমান সরাইল বা সতরখণ্ডল (ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার অন্তর্গত), জোয়ানশাহী (বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার অন্তর্গত), ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের অনেকাংশ শ্রীহট্টের অন্তর্ভুক্ত ছিল। প্রাচীন বৈদিক গ্রন্থ কামাখ্যা তন্ত্র অনুযায়ী প্রাচীন কামরুপ রাজ্যের দক্ষিণ-পশ্চিম সীমাই প্রাচীন শ্রীহট্ট ছিল অর্থাৎ শ্রীহট্ট ছিল কামরূপ রাজ্যের অন্তর্গত। যোগিনী তন্ত্রে শ্রীহট্টের সীমার বিবরণ এরকম: পূর্ব্বে স্বর্ণ নদীশ্চৈব দক্ষিণে চন্দ্রশেখর লোহিত পশ্চিমে ভাগে উত্তরেচ নীলাচল এতন্মধ্যে মহাদেব শ্রীহট্ট নামো নামতা। অতপর খ্রিস্টীয় সপ্তম শতাব্দীর পরবর্তি সময়ে এই অঞ্চলের ভৌগোলিক রুপরেখার বিভিন্ন পরিবর্তন ঘটে। অষ্টম শতাব্দীর মধ্যভাগে সিলেট বিভাগের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের কিছু অংশ ত্রিপুরা রাজ্যের আধিকার্ভুক্ত এবং দক্ষিণ-পশ্চিমের অনেক অংশ হারিকেল রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়। অবশিষ্টাংশে শ্রীহট্টের প্রাচীন রাজ্য জয়ন্তীয়া, লাউড় ও গৌড় বিস্তৃত ছিল। দশম শতাব্দীতে মহারাজা শ্রীচন্দ্র কর্তৃক উৎকীর্ণ পশ্চিমবাগ তাম্রলিপি থেকে জানা যায় যে, তিনি সিলেট জয় করেছিলেন। ঐতিহাসিকদের ধারণা, সিলেট বা শ্রীহট্ট(সমঋদ্ধ হাট) বহু আগে থেকেই একটি বর্ধিষ্ণু বাণিজ্য কেন্দ্র হিসেবে বর্তমান ছিল। প্রাচীন শ্রীহট্টে বিপুল হারে বাঙালি অভিবাসন হয়েছিল। ১৪ শতকে ইয়েমেনের সাধক পুরুষ হযরত শাহ জালাল সিলেট জয় করেন এবং ইসলাম প্রচার শুরু করেন। সুলতানী আমলে সিলেটের নাম ছিল জালালাবাদ। ১৮৫৭ সালে বিদ্রোহের সময়ে সিলেটে বিদ্রোহীরা ব্রিটিশ বেনিয়াদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে ব্যর্থ হয়। নানকার বিদ্রোহ সিলেটের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। নানকাররা ছিল জমিদারদের ভূমিদাস। নানাকার বিদ্রোহ সহ আরও কয়েকটি বিদ্রোহ সংঘটিত হলে ১০৫০ সালে এ প্রথা বিলুপ্ত করা হয়। সিলেট নামের উৎপত্তি প্রাচীন গ্রন্থাদিতে এ অঞ্চলের (সিলেট বিভাগ) বিভিন্ন নামের উল্লেখ আছে। হিন্দুশাস্ত্র অনুসারে শিবের স্ত্রী সতি দেবীর কাটা হস্ত (হাত) এই অঞ্চলে পড়েছিল, যার ফলে 'শ্রী হস্ত' হতে শ্রীহট্ট নামের উৎপত্তি বলে হিন্দু সম্প্রদায় বিশ্বাস করেন। খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতকের ঐতিহাসিক এরিয়ান লিখিত বিবরণীতে এই অঞ্চলের নাম "সিরিওট" বলে উল্লেখ আছে। এছাড়া, খ্রিস্টীয় দ্বিতীয় শতকে এলিয়েনের (Ailien) বিবরণে "সিরটে", এবং পেরিপ্লাস অব দ্যা এরিথ্রিয়ান সী নামক গ্রন্থে এ অঞ্চলের নাম "সিরটে" এবং "সিসটে" এই দুইভাবে লিখিত হয়েছে। চীনা মানুষ—অতঃপর ৬৪০ খ্রিষ্টাব্দে যখন চীনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাং এই অঞ্চল ভ্রমণ করেন। তিনি তার ভ্রমণ কাহিনীতে এ অঞ্চলের নাম "শিলিচতল" উল্লেখ করেছেন। তুর্কি সেনাপতি ইখতিয়ার উদ্দীন মুহম্মদ বখতিয়ার খলজী দ্বারা বঙ্গবিজয়ের মধ্য দিয়ে এদেশে মুসলিম সমাজব্যবস্থার সূত্রপাত ঘটলে মুসলিম শাসকগণ তাদের দলিলপত্রে "শ্রীহট্ট" নামের পরিবর্তে "সিলাহেট", "সিলহেট" ইত্যাদি নাম লিখেছেন বলে ইতিহাসে প্রমাণ মিলে। আর এভাবেই শ্রীহট্ট থেকে রূপান্তর হতে হতে একসময় সিলেট নামটি প্রসিদ্ধ হয়ে উঠেছে বলে ঐতিহাসিকরা ধারণা করেন। যখন "সিলেটে" "হযরত শাহ্ জালাল" আসেন তখন শত্রু পক্ষ তাকে এবং তার অনুসারী ৩৬০ আউলিয়াদেরকে "শিলা" বা "পাথর" দ্বারা আটকেে দিয়েছিল। তখন মহান আল্লাহ্ তায়ালার অশেষ মেহেরবানীতে তিনি বলেন "শিলাহাট"(অর্থ্যাৎ- পাথর সরে যা)। তখন, তথখনাৎ পাথর গুলো সরে যায়। এই থেকে নাম রাখা হয় "শিলাহাট"। তারপর নাম সহজ করতে করতে হয় "শিলহাট", "সিলাহেট", "সিলেট (বর্তমানে)"। * এছাড়াও বলা হয়, এক সময় সিলেট জেলায় এক ধনী ব্যক্তির একটি কন্যা ছিল। তার নাম ছিল শিলা। ব্যক্তিটি তার কন্যার স্মৃতি রক্ষার্থে একটি হাট নির্মাণ করেন এবং এর নামকরণ করেন শিলার হাট। এই শিলার হাট নামটি নানাভাবে বিকৃত হয়ে সিলেট নামের উৎপত্তি হয়। অর্থনীতি সিলেট একটি প্রবাসীবহুল জনপদ। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, মধ্যপ্রাচ্য সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সিলেট বিভাগের মানুষের বসবাস রয়েছে। প্রবাসীদের পাঠানো বৈদেশিক মুদ্রা এই বিভাগের প্রধান উত্স। এছাড়া পাহাড়ে ও প্রান্তরে বেড়ে ওঠা কৃষি ব্যবস্থাপনা যেমন; চা, ধান, মাছ, কমলা, লেবু, আনারস, বাশঁ, আম, ইত্যাদি এই অঞ্চলের মানুষের অনন্য অবলম্বন এছাড়া সিলেট পর্যটন এলাকা হিসেবে প্রসিদ্ধ। পর্যটন খাত থেকেও প্রচুর মুদ্রা অর্জন করে সিলেট। সরকারী ভাবে সিলেটে দুইটি বিসিক শিল্প নগরী গড়ে উঠেছে। ১। খাদিম নগর শিল্প নগরী ২। গোটাটিকর শিল্প নগরী। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষার হার ৫১.২%। শিক্ষার ক্ষেত্রে সিলেট বাংলাদেশের একটি অগ্রসর অঞ্চল। বিশ্ববিদ্যালয়ঃ ০৭ টি (সরকারি ০২ টি, বেসরকারি ০৫ টি)। কলেজঃ ৪৪ টি স্মাতকোত্তর-০১, স্মাতক-১৮, এইচএসসি-২০, সরকারি-৫টি, বেসরকারি-৩৯। মাধ্যমিক বিদ্যালয়ঃ ৩১৬ টি (সরকারি ০৬ টি, বেসরকারি ২৭৭ টি এবং নিম্ন- মাধ্যমিক-৩৩ টি)। প্রাথমিক বিদ্যালয়ঃ ১৯৬১ টি (সরকারি ১,৩৯২ টি, কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়-১৫, কেজি স্কুল-৫৫৪)। মাদ্রাসাঃ ২০০টি [সরকারি ১টি (উচ্চতর), কওমি ৪টি (উচ্চতর) বেসরকারি ইবতেদায়ী ৭৩ টি, দাখিল-৮১,আলিম-২৩, ফাযিল-১০, কামিল-০৮]। ক্যাডেট কলেজঃ ০১ টি (এয়ারপোর্ট রোড, খাদিমনগর)। আইন কলেজ|আইন কলেজঃ]] ০২ টি (মেন্দিবাগ, সিলেট; ইলেকট্রিক সাপ্লাইরোড, আম্বরখানা)। বন বিদ্যালয়|বন বিদ্যালয়ঃ]] ০১ টি (এয়ারপোর্ট রোড, খাদিমনগর)। মডেল স্কুল ও কলেজ|মডেল স্কুল ও কলেজঃ]] ০১টি (পূর্ব শাহী ঈদগাহ)। সংস্কৃত কলেজ|সংস্কৃত কলেজঃ ]]০১ টি (মীরের ময়দান)। মুক ও বধির বিদ্যালয়|মুক ও বধির বিদ্যালয়ঃ]] ০১ টি (শেখঘাট)। মনিপুরি নৃত্য একাডেমী|মনিপুরি নৃত্য একাডেমীঃ]] ০১ টি (সাগরদিঘী)। প্রাইমারী টিচার্স ট্রেনিং একাডেমী|প্রাইমারী টিচার্স ট্রেনিং একাডেমীঃ]] ০১ টি (সুবিদবাজার)। টিচার্স ট্রেনিং কলেজঃ]] ০৩ টি (সরকারি ০১ টি (শাহী ঈদগাহ), বেসরকারি ০২ টি)। ক্রীড়া প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানঃ ০১ টি (এয়ারপোর্ট রোড, খাদিমনগর)। মেডিকেল কলেজঃ ০৬ টি (সরকারি ০১ টি, বেসরকারি ০৫ টি)। সরকারি কারিগরি কলেজঃ ০১ টি (খোজারখোলা)। ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজঃ ০১ টি। কৃষি প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউটঃ ০১ টি। যুব প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউটঃ ০১টি। বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউটঃ ০১টি। আয়ুর্বেদ মেডিকেল কলেজঃ ০১টি (সরকারি)। চক্ষু হাসপাতালঃ ০৩টি। ডায়বেটিক হাসপাতালঃ ০১টি (পুরাণ লেন)। সেবিকা প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউটঃ ০১টি (ওসমানী মেডিকেল কলেজে)। হোমিও কলেজঃ ০১ টি (মির্জাজাঙ্গাল)। :উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো হলোঃ শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় সিলেট সরকারী আলিয়া মাদ্রাসা এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ জামিয়া মাদানিয়া আঙ্গুরা মুহাম্মদপুর ‎ সিলেট ইইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ জামেয়া ক্বাসিমুল উলুম দরগাহ হযরত শাহ জালাল র. জামেয়া তাওয়াক্কুলিয়া রেঙ্গা মাদ্রাসা লিডিং ইউনিভার্সিটি সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি নর্থ ইষ্ট ইউনিভার্সিটি মুরারিচাঁদ কলেজ মদনমোহন কলেজ শাহজালাল জামেয়া ইসলামিয়া কামিল মাদরাসা জামেয়া মাদানিয়া ইসলামিয়া কাজির বাজার জালালাবাদ রাগীব রাবেয়া মেডিকেল কলেজ নর্থ ইস্ট মেডিকেল কলেজ সিলেট উইমেন্স মেডিকেল কলেজ পার্ক ভিউ মেডিকেল কলেজ হযরত শাহজালাল রঃ ডিগ্রি কলেজ,চিকনাগু, জৈন্তাপু, সিলেট জামিয়া ইসলামিয়া দারুল হাদিস হরিপুর বাজার মাদ্রাসা, জৈন্তাপুর সিলেট জামেয়া ইসলামিয়া বুধবারীবাজার,কালিজুরী,গোলাপগঞ্জ,সিলেট সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড সিলেটে বেশ কিছু সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংগঠন রয়েছে; এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেঃ কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদ, নজরুল একাডেমী ইত্যাদি। ভাষা ও সংস্কৃতি ভাষা ভাষা নিয়ত পরিবর্তনশীল এবং ভাষার পরিবর্তন হয় এলাকা ভিত্তিক এবং দুরত্বের উপর নির্ভর করে। সিলেটিদের কথ্য ভাষা প্রকৃত বাংলা ভাষা হতে বেশ আলাদা। সিলেট ঐতিহাসিক ভাবেই আলাদা ভাষা এবং আলাদা সংস্কৃতি ধারণ ও লালন করে আসছে। এখানে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের বসবাস যার ফলে ভাষার ক্ষেত্রেও রয়েছে বৈচিত্র্য। পূর্বে সিলেট আসাম রাজ্যের অন্তর্গত থাকার ফলে সিলেটের ভাষা ও সংস্কৃতিতে আসামের প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। এছাড়াও সিলেটের রয়েছে এক বৈচিত্র্যময় নিজস্ব ভাষা যা নাগরী লিপি হিসাবে পরিচিত। সিলেটের স্বতন্ত্র সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের উজ্জ্বলতম দলিল নাগরী লিপি। ড: সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায় খৃষ্টীয় চতুর্দশ শতাব্দীকে নাগরী লিপির প্রচলন কাল বলে মত প্রকাশ করেন। আবার কেউ কেউ মনে করেন ষোড়শ শতাব্দীর শেষ দিকে মোঘলদের দ্বারা তাড়িত হয়ে সিলেটে আগত আফগান পাঠানরা এর সৃষ্টি করেন। এ ব্যাপারে আরেকটি মত চালু রয়েছে। সেটি হল-ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ সৃষ্ট সংস্কৃত বহুল বাংলার বিকল্প রুপে সিলেটিরা এই লিপি ও সাহিত্যের জন্ম দেন। এই রীতিতেই রচিত তৎকালীন উন্নত সাহিত্য। সিলেটের আঞ্চলিক বা কথ্য ভাষার রয়েছে বিজ্ঞান সম্মত লিপি মালা। গবেষক ও ভাষা বিজ্ঞানীদের কাছে গুরুত্বপুর্ন। নাগরীর আরেকটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে-এটি সিলেট অঞ্চলের মুসলমানদের একান্ত নিজস্ব সম্পদ। নাগরীর অক্ষর মাত্র ৩২টি। যুক্ত বর্ণ সাধারণত ব্যবহৃত হয় না। মাত্র আড়াই দিনে শেখা যায়। তাই মহিলাদের মধ্যে নাগরীর প্রচার ও প্রসার ছিল বেশি। এখনো অনেক মহিলা নাগরী জানেন। নাগরীতে রচিত পুঁথি পুস্তকের বিষয়বস্ত্ত প্রধানত নামায, রোজা, হজ্ব, যাকাত, ইসলামী ইতিহাস, ঐতিহ্য, কাহিনী এবং রাগ, বাউল ও মরমী সঙ্গীত। এ পর্যন্ত ৮৮টি মুদ্রিত গ্রন্থসহ(নাগরী হরফে) ১৪০টি গ্রন্থের সন্ধান পাওয়া গেছে। ‘সিলেটি নাগরী লিপি ভাষা ও সাহিত্য’ সম্পর্কে গবেষণা করে জনাব গোলাম কাদির ১৯৮৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রী লাভ করেন। নাগরী সাহিত্যে ছাদেক আলী সর্বাধিক জনপ্রিয় কবি। তিনি ১৭৯৮ সালে কুলাউড়ায় জন্ম গ্রহণ করেন। ইসলাম ধর্ম গ্রহণের আগে তার নাম ছিল গৌর কিশোর সেন। ১৮২৩ সালে তিনি মৌলভীবাজারের মুনসেফ ছিলেন। নাগরী পুঁথি রচয়িতাদের মধ্যে এ পর্যন্ত মুন্সী ইরপান আলী,দৈখুরা মুন্সী, আব্দুল ওহাব চৌধুরী, আমান উল্যা, ওয়াজি উল্যা, শাহ হরমুজ আলী, হাজী ইয়াছিনসহ ৫৬ জনের পরিচিতি পাওয়া গেছে। গোলাম হুসনের লিখিত ‘তালিব হুসন'কে প্রথম গ্রন্থ রুপে ধরে নেওয়া হয়। নাগরী লিপিতে সাহিত্য সৃষ্টির অনেক পর এর মুদ্রণ শুরু হয়। টাইপ ও ছাপা খানার অভাবে হাতে লিখেই নাগরীর প্রসার ঘটে। এ সময় সিলেট শহরের হাওয়াপাড়া নিবাসী মৌলভী আব্দুল করিম ইউরোপ সফর শেষে দেশে ফেরেন। নাগরী লিপির টাইপ তৈরি করে চালু করেন ছাপা খানা। বন্দর বাজারে স্থাপিত ঐ প্রেসের নাম ছিল ইসলামিয়া প্রেস। মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রেসটি বোমায় পুড়ে যায়। সিলেট শহরের নাইওরপুলে ছিল সারদা প্রিন্টিং পাবলিশিং। ১৯৪৭ পূর্ববর্তীকালে কলকাতা ও শিয়ালদহেও নাগরী লিপির প্রেস ছিল। বৃহত্তর সিলেট, কাছাড়, করিমগঞ্জ, ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ প্রভৃতি এলাকায় নাগরী লিপি ও সাহিত্যের প্রচার ও সমাদর ছিল। মণিপুরী নৃত্যকলা মণিপুরী সংস্কৃতির সমৃদ্ধতম শাখা হলো নৃত্যকলা। মুণিপুরী ধর্মমতে মানব ও পৃথিবী সৃষ্টির ঊষালগ্ন থেকেই নৃত্যের শুরু। নৃত্যের মণিপুরী প্রতিশব্দ হলো-জাগোই। বিশেষজ্ঞদের মতে-চৎনা চৎনা কোয়বা-হেঁটে হেঁটে বৃত্ত সৃষ্টি করা থেকে চকোয় যা পরিবর্তিত হয়ে জগোই শব্দের উৎপত্তি ঘটিয়েছে। আবার অনেকের মতে, এই জাগোই শব্দের উৎপত্তি সঙস্কৃত চক্র শব্দ থেকে। আর তাই মণিপুরী নৃত্যের দৈহিক গতিই বৃত্ত বা অর্ধবৃত্ত রচনা করে যা গোলাকৃতির মণিপুর উপত্যকা বা বৃহত্তর অর্থে পৃথিবী ও বিশ্বসৃষ্টির প্রতীক। মনিপুরী নৃত্যের আদিরূপ লাই হারাওবা নৃত্য। লাই অর্থ দেবতা, হারাওবা অর্থ আনন্দ। অর্থাৎ দেবতাদের আনন্দ বিনোদনের জন্য নৃত্য পরিবেশনা। বর্তমানে প্রচলিত লাই হারাওবা নৃত্যে চারটি প্রকারভেদ রয়েছে। এগুলো হলো কংলৈ হারাওবা, মোইরাং হারাওবা, চকপা হারাওবা ও ককচিং হারাওবা । লাই ঈকৌবা বা দেবতার উদ্ধোধন দিয়ে শুরু লাই হারাওবা নৃত্য। তারপর পর্যায়ক্রমে পরিবেশিত হতে থাকে লৈশেম জগোই (পৃথিদবী সৃষ্টির নৃত্য), লৈনেৎ জগোই (সমতল ভূমির সৃষ্টির নৃত্য), লৈতা জগোই (বসতি স্থাপনের নৃত্য), লৈমা জাগোই (কুমারী নৃত্য)। তারপর ধীরে ধীরে গৃহমনর্মাণ, কাপড় বোনা, শস্যরোপন, শিকার, বিভিন্ন ক্রীড়াকৌশল, সমস্ত কিছুই পর্যায়ক্রমে পরিবেশিত হতে থাকে। তাই ঐতিহাসিক Saraj Nalini Parrott বলেছেন, The Lai Haroba mirrors the entire culture of the Manipuri People. লাই হারাওবা নৃত্য একটি লোকনৃত্য কিন্তু ধ্রুপদী নৃত্যের শৃঙ্খলা এতে সুষ্পষ্ট। বস্তুতঃ এই নৃত্য ধ্রুপদী নৃত্যের অন্কুর বিশেষ। এই নৃত্যে নানাপ্রকার লৌকিক হস্তমুদ্রা ব্যবহ্নত হয়। তান্ত্র্রিক হস্তমুদ্রার সাথে সাদৃশ্য লক্ষণীয়। পরবর্তীকালে লাই হারাওবা নৃত্যই পরিশোধিত-পরিমার্জিত হয়ে রূপ নিয়েছে ধ্রুপদী নৃত্যের। মণিপুরে বৈষ্ণব সংস্কৃতির প্রসারের পর থেকে এই নৃত্য রাসনৃত্যের অন্যতম উপাদান ভঙ্গি পারেং-এর প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। পত্র পত্রিকা দৈনিক যুগভেরী (প্রাচীনতম বাংলা সংবাদপত্র, প্রথম প্রকাশ ১৯৩০), দৈনিক শ্যামল সিলেট, দৈনিক সিলেটের ডাক, দৈনিক জালালাবাদ,দৈনিক সিলেট সংলাপ, দৈনিক সিলেট বানীসহ বেশ কিছু দৈনিক পত্রিকা সিলেট থেকে নিয়মিত প্রকাশিত হয়ে আসছে। এছাড়াও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সাপ্তাহিক, মাসিক ও সাময়িক পত্র পত্রিকা সিলেট থেকে প্রকাশিত হয়ে আসছে। চিত্তাকর্ষক স্থান ও পর্যটন আকর্ষণ হযরত শাহজালাল ও হযরত শাহ পরান এর পবিত্র মাজার শরীফ এ জেলায় অবস্থিত। প্রতি বছর বিপুল সংখ্যক ধর্মপ্রাণ লোক মাজার জিয়ারতের উদ্দেশ্যে আগমন করে। আসে বিপুল সংখ্যক পর্যটক। সিলেট এর স্থানীয় ভাষা ‘‘নাগরী ভাষা’’র একটি বিশেষত্ব রয়েছে যা অন্য অঞ্চল থেকে পৃথক। শীত মৌসুমে সিলেটের হাওর-বাওর গুলো ভরে উঠে অতিথি পাখির কলরবে। # জাফলং ভোলাগঞ্জ লালাখাল তামাবিল হাকালুকি হাওর ক্বীন ব্রীজ হযরত শাহজালাল ও হযরত শাহ পরাণ এর মাজার শরীফ মহাপ্রভু শ্রী চৈত্যনো দেবের বাড়ী হাছন রাজার মিউজিয়াম মালনি ছড়া চা বাগান ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর পর্যটন মোটেল জাকারিয়া সিটি ড্রিমল্যান্ড পার্ক কৈলাশটিলা হাকালুকি হাওর লালাখাল পাংতুমাই আলী আমজদের ঘড়ি জিতু মিয়ার বাড়ী মনিপুরী রাজবাড়ি। মনিপুরী মিউজিয়াম শাহী ঈদগাহ ওসমানী শিশু পার্ক মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত সিলেটি নাগরী লিপি পাংতুমাই রাতারগুল টাংগুয়ার হাওর লোভাছড়া হাম হাম জলপ্রপাত কৈলাশটিলা পরিকুণ্ড জলপ্রপাত সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান হারং হুরং বরাক নদীর তিন মোহনা উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব জেনারেল এম,এ,জি ওসমানী আগা মোহাম্মদ বেগ সিলেটে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দলোনের সংগঠক ও নেতৃত্বদাতা। সাইফুর রহমান সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত নুরুল ইসলাম নাহিদ প্রিন্সিপাল হাবিবুর রহমান –– দেওবন্দি ইসলামি পণ্ডিত ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমীর (১৯৪৯–২০১৮) বিচারপতি মাহমুদুল আমীন চৌধুরী হেমাঙ্গ বিশ্বাস গোবিন্দ চন্দ্র দেব (১৯০৭-১৯৭১) সুহাসিনী দাস খান বাহাদুর এহিয়া চৌধুরী (১৮৫১-১৯২৫) হেনা দাস জিয়া উদ্দিন, দেওবন্দি ইসলামি পণ্ডিত ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সভাপতি (জ.১৯৪১) শ্রীচৈতন্যদেব (১৪৮৫-১৫৩৩) শিতালং শাহ (১৮০৬-১৮৯৯) রাজা গিরিশচন্দ্র রায় (১৮৪৫-১৯০৮) শরচ্চন্দ্র চৌধুরী (১৮৫১-১৯২৭) রাধানাথ চৌধুরী (১৮৫৬-১৯৯২) সুন্দরীমোহন দাস (১৮৫৭-১৯৫০) মৌলভী আবদুল করিম (১৮৬৩-১৯৪৩) অচ্যুতচরণ চৌধুরী (১৮৬৫-১৯৫৩) শিতালং শাহ (গিতিকার) গজনফর আলী খান (১৮৭২-১৯৫৯) আরকুম শাহ (১৮৭৭-১৯৪১) গুরুসদয় দত্ত (১৮৮২-১৯৪১) পূর্ণেন্দুকিশোর সেনগুপ্ত (১৮৯৫-১৯৭৮) যতীন্দ্রমোহন ভট্টাচার্য (১৯০৫-১৯৯০) আবদুল গফ্ফার চৌধুরী (১৯১২-১৯৬৬) আলী আমজাদ খা (১৮৬৯-১৯৫০) রাধা রমন দত্ত-(১৮৩৬-১৯১১) শাহ আবদুল করিম (১৯১৬- ২০০৯) দুরবিন শাহ সুরেন্দ্র কুমার সিনহা প্রধান বিচারপতি সালমান শাহ আরও দেখুন সিলেট বিভাগ সিলেটি ভাষা বাংলাদেশের জেলাসমূহ তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ সিলেট জেলার সরকারি ওয়েবসাইট: জেলা তথ্য বাতায়ন। বিষয়শ্রেণী:সিলেট জেলা বিষয়শ্রেণী:বাংলাদেশের জেলা বিষয়শ্রেণী:সিলেট বিভাগের জেলা বিষয়শ্রেণী:১৯৭১-এর পূর্বে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশের জেলা
সিলেট জেলা
কাতল বা কাতলা (বৈজ্ঞানিক নাম:Catla catla)(ইংরেজি: Catla) হচ্ছে Cyprinidae পরিবারের Catla catla গণের একটি স্বাদুপানির মাছ। এ মাছ বাংলাদেশ ও ভারতে খুব জনপ্রিয়। এটি বাংলাদেশ ও ভারতের স্থানীয় মাছ। বিস্তৃতি বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, পাকিস্তান ও মায়ানমার অঞ্চলে পাওয়া যায়। ভারতের সমুদ্রবেষ্টিত দ্বীপের নদীতে শ্রীলঙ্কা এবং চীনে এদের অনুপ্রবেশ ঘটেছে। এটি নদী, পুকুর, বিল, হাওর, বাওর ইত্যাদি জলাশয়ের উপরিস্তরে বসবাসকারী মিষ্টি জলের মাছ। খাদ্য সাধারণত জলাশয়ের মধ্য ও উপরের স্তরে থাকতে পছন্দ করে এবং ক্রাসটেসিয়া, শৈবাল ও অন্যান্য জলজ উদ্ভিদ এদের প্রধান খাবার। প্রজনন দুই বছরেই এরা প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে থাকে। বর্ষাকালে প্লাবিত নদীতে (বিশেষত জলজ উদ্ভিদময় স্থানে) প্রজনন করে থাকে। এক প্রজনন ঋতুতে একটি মা মাছ প্রায় পনের থেকে ছাব্বিশ লক্ষ ডিম দিয়ে থাকে যা মাছের বয়স, দৈর্ঘ্য ও ওজনের এবং ডিম্বাশয়ের দৈর্ঘ্য ও ওজনের উপর নির্ভর করে কমবেশি হতে পারে। চাষ পদ্ধতি কাতল মাছের চাষ পদ্ধতি খুব সহজ। রুই জাতীয় অন্যান্য মাছের সাথে এই মাছ সহজেই চাষ করা যায়। রন্ধনপ্রণালী ভাজা , ঝোল জনপ্রিয়। মাথা বড় বলে মুড়িঘণ্টর জন্য বেশ উপযোগী। বাংলাদেশে বর্তমান অবস্থা এবং সংরক্ষণ আইইউসিএন বাংলাদেশ (২০০০) এর লাল তালিকা অনুযায়ী এই প্রজাতিটি বাংলাদেশে হুমকির সম্মুখীন নয়। আরও দেখুন বাংলাদেশের মাছের তালিকা বাংলাদেশের স্বাদুপানির মাছের তালিকা বাংলাদেশের সংরক্ষিত মাছের তালিকা তথ্যসূত্র বিষয়শ্রেণী:বাংলাদেশের মাছ বিষয়শ্রেণী:মায়ানমারের মাছ বিষয়শ্রেণী:ভারতের মাছ বিষয়শ্রেণী:নেপালের মাছ বিষয়শ্রেণী:পাকিস্তানের মাছ বিষয়শ্রেণী:শ্রীলঙ্কার মাছ বিষয়শ্রেণী:চীনের মাছ
কাতল
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয়। উচ্চ শিক্ষামানের জন্য প্রসিদ্ধ এই শিক্ষায়তন আইভি লীগের সদস্য। এটি ম্যাসাচুসেট্‌স-এর বোস্টনে অবস্থিত। ১৬৩৬ সালে এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। অ্যাকাডেমিক গঠন র‍্যাংকিং বিখ্যাত শিক্ষার্থী পার্সি উইলিয়াম্‌স ব্রিজম্যান, পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী, ১৯৪৬ এডওয়ার্ড মিল্‌স পারসেল, পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী, ১৯৫২ টি এস এলিয়ট, সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার ১৯৪৮ পল স্যামুয়েলসন, অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার, ১৯৭০ বেন রয় মোটেলসন, পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী, ১৯৭৫ ফিলিপ ওয়ারেন অ্যান্ডারসন, পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী, ১৯৭৭ জন হ্যাসব্রাউক ভ্যান ভ্লেক, পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী, ১৯৭৭ শেল্ডন লি গ্ল্যাশো, পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী, ১৯৭৯ কেনেথ গেড্‌স উইলসন, পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী, ১৯৮২ রজার কর্নবার্গ, রসায়নে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী, ২০০৬ বারাক ওবামা, শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী, ২০০৯ বিল গেটস, মাইক্রোসফট কর্পোরেশন এর প্রতিষ্ঠাতা কারিনা কাপুর, বলিউড অভিনেত্রী মার্ক জাকারবার্গ, ফেসবুক এর প্রতিষ্ঠাতা আবুল মাল আবদুল মুহিত, বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী রবার্ট মেটক্যাফ, আইইই মেডেল অব অনার ১৯৯৬, ন্যাশনাল মেডেল অব টেকনোলজি অ্যান্ড ইনোভেশন ২০০৩ সিডনি ডার্লিংটন, আইইই মেডেল অব অনার ১৯৮১ ডেভিড স্লেপিয়ান, আইইইই আলেক্সান্ডার গ্রাহাম বেল মেডেল ১৯৮১ নরম্যান আব্রামসন, আইইইই আলেক্সান্ডার গ্রাহাম বেল মেডেল ২০০৭ এডওয়ার্ড এইচ সাসেনগাথ, আইইইই সাইমন রামো মেডেল ১৯৮৯ সলোমন ওলফ গলোম্ব, ক্লদ ই শ্যানন অ্যাওয়ার্ড ১৯৮৫, আইইইই রিচার্ড ডব্লিউ হ্যামিং মেডেল ২০০০, ন্যাশনাল মেডেল অব সায়েন্স ২০১১, বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন মেডেল ২০১৬ টবি বার্গার, ক্লদ ই শ্যানন অ্যাওয়ার্ড ২০০২,আইইইই রিচার্ড ডব্লিউ হ্যামিং মেডেল ২০১১ বিখ্যাত শিক্ষক নরম্যান ফস্টার র‌্যামজে, আইইই মেডেল অব অনার ১৯৮৪, পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার ১৯৮৯ চেরি অ্যান মারে, ন্যাশনাল মেডেল অব টেকনোলজি অ্যান্ড ইনোভেশন ২০১২ আরো দেখুন হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুল হার্ভার্ড বিজনেস স্কুল তথ্যসূত্র বহি:সংযোগ Official athletics website Harvard mobile website বিষয়শ্রেণী:মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয় বিষয়শ্রেণী:১৬৩৬-এ প্রতিষ্ঠিত বিষয়শ্রেণী:ম্যাসাচুসেটসের বিশ্ববিদ্যালয় বিষয়শ্রেণী:হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়
হেমন্ত মুখোপাধ্যায় (১৬ জুন ১৯২০ - ২৬ সেপ্টেম্বর ১৯৮৯) একজন খ্যাতিমান বাঙালি কণ্ঠসংগীত শিল্পী, সংগীত পরিচালক এবং প্রযোজক ছিলেন। তিনি হিন্দি সংগীত জগতে হেমন্ত কুমার নামে প্রসিদ্ধ ছিলেন। তিনি বাংলা, হিন্দি এবং অন্যান্য ভারতীয় ভাষায় গান গেয়েছেন। তিনি রবীন্দ্র সংগীতের একজন বিশিষ্ট শিল্পী ছিলেন। তিনি শ্রেষ্ঠ পুরুষ নেপথ্য গায়ক বিভাগে দু-বার জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিলেন। প্রারম্ভিক জীবন শিল্পী হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের জন্ম তাঁর মাতামহের বাড়ি পবিত্র বারাণসী শহরে। তাঁর মাতামহ ছিলেন একজন শীর্ষস্থানীয় চিকিৎসক। তাঁর পৈতৃক নিবাস ছিল দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার জয়নগরে। তাঁর পরিবার কলকাতা শহরে আসে বিশ শতকের প্রথমার্ধে‌। হেমন্ত সেখানে বড়ো হতে থকেন এবং প্রথমে নাসিরুদ্দিন স্কুল এবং পরবর্তীতে ভবানীপুরের মিত্র ইনস্টিটিউশনে পড়াশোনা করেছিলেন। সেখানেই তার সঙ্গে পরিচয় হয় সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের, যিনি পরবর্তীকলে বাংলার স্বনামধন্য কবি হয়েছিলেন। ওই সময়কালে বিশিষ্ট লেখক সন্তোষ কুমার ঘোষ মহাশয়ের সঙ্গে তাঁর সখ্যতা গড়ে ওঠে। ওই সময়ে হেমন্ত ছোটো গল্প লিখতেন, সন্তোষ কুমার কবিতা লিখতেন এবং সুভাষ মুখোপাধ্যায় গান গাইতেন। ইন্টারমিডিয়েট পাস করে হেমন্ত যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে যান। কিন্তু তিনি সংগীতের জন্য আপন শিক্ষা ত্যাগ করেন। তাঁর সাহিত্যিক হওয়ার ইচ্ছে ছিল। কিছুদিন তিনি দেশ পত্রিকার জন্যে লেখেন। ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দ থেকে তিনি সম্পূর্ণভাবে সংগীত জগতে প্রবেশ করেন। প্রারম্ভিক সংগীত কর্মজীবন ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে হেমন্ত তাঁর বন্ধু সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের প্রভাবে আকাশবাণীতে তাঁর গান রেকর্ডিং করেন। গানের প্রথম লাইন ছিল 'আমার গানেতে এলে নবরূপী চিরন্তনী'। হেমন্ত তাঁর প্রারম্ভিক সংগীত কর্মজীবনে পরামর্শদাতা হিসেবে পেয়েছিলেন বাংলা সংগীতজ্ঞ শৈলেশ দত্তগুপ্তকে। প্রথম জীবনে হেমন্ত বাংলার প্রখ্যাত গায়ক পঙ্কজ মল্লিককে অনুসরণ করতেন। এজন্যে তাঁর ডাকনাম ছিল 'ছোটো পঙ্কজ'। ১৯৮০ খ্রিস্টাব্দে এক দূরদর্শন সাক্ষাৎকারে হেমন্ত উল্লেখ করেছিলেন যে, তিনি উস্তাদ ফৈয়াজ খানের শিষ্য ফণীভূষণ ব্যানার্জির কাছে ধ্রুপদী সংগীতেরও তালিম নিয়েছিলেন, কিন্তু উস্তাদের অসময়ের মৃত্যুতে তাঁর শিক্ষা অসমাপ্ত রয়ে যায়। ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে কলাম্বিয়ার লেবেলে হেমন্ত তাঁর প্রথম গ্রামোফোন রেকর্ড প্রকাশ করেন। চলচ্চিত্রের বাইরে রেকর্ডের ওই গানগুলো ছিল 'জানিতে যদি গো তুমি' এবং 'বলো গো বলো মোরে', যেগুলোর কথা নরেশ ভট্টাচার্যের এবং সংগীত শৈলেশ দত্তগুপ্তের। তার পর থেকে ১৯৮৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত প্রতি বছর গ্রামোফোন কোম্পানি অফ ইন্ডিয়ার (জিসিআই) জন্যে ধারাবাহিকভাবে চলচ্চিত্রের বাইরে হেমন্তের রেকর্ড প্রকাশিত হোত। তাঁর প্রথম হিন্দি গানগুলো 'কিতনা দুখ ভুলায়া তুমনে' এবং 'ও প্রীত নিভানেওয়ালি' ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে জিসিআইয়ের কলাম্বিয়া লেবেলেই প্রকাশিত হয়েছিল। ওই গানগুলোর সংগীতকার ছিলেন কমল দাশগুপ্ত; কথা লিখেছিলেন ফৈয়াজ হাসমি। ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দে মুক্তিপ্রাপ্ত বাংলা চলচ্চিত্র নিমাই সন্যাস চলচ্চিত্রে হেমন্ত প্রথম গান গেয়েছিলেন। সংগীত দিয়েছিলেন হরিপ্রসন্ন দাস। ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দে চলচ্চিত্রের বাইরে বাংলা গানে হেমন্ত নিজে প্রথম সুর দিয়েছিলেন 'কথা কোয়োনাকো শুধু শোনো' এবং 'আমার বিরহ আকাশে প্রিয়া' এই দুটি গানে। এগুলোর কথা লিখেছিলেন অমিয় বাগচি। ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দে পণ্ডিত অমরনাথের সংগীত পরিচালনায় তিনি ইরাদা (১৯৪৪ চলচ্চিত্র) চলচ্চিত্রে প্রথম হিন্দি গানগুলো গেয়েছিলেন। হেমন্তকে শীর্ষস্থানীয় রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী হিসেবে ধরা হয়। ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দে প্রিয় বান্ধবী বাংলা চলচ্চিত্রে তাঁর প্রথম রবীন্দ্র সংগীত রেকর্ড করা হয়েছিল। গানটা ছিল 'পথের শেষ কোথায়'। ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দেই তিনি কলাম্বিয়া লেবেলের অধীনে চলচ্চিত্রের বাইরে প্রথম রবীন্দ্র সংগীত রেকর্ড করেন। গানগুলো ছিল 'আমার আর হবে না দেরি' এবং 'কেন পান্থ এ চঞ্চলতা'। তার আগে তিনি অল ইন্ডিয়া রেডিয়ো/আকাশবাণীতে আমার মল্লিকাবনে রেকর্ড করেছিলেন, কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত রেকর্ডটা বিস্মৃতিতে চলে গিয়েছে। ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে সংগীত পরিচালক হিসেবে তাঁর প্রথম বাংলা চলচ্চিত্র ছিল অভিযাত্রী। যদিও ওই সময় অনেক গান রেকর্ড করে হেমন্ত প্রচুর প্রশংসা পেয়েছেন, ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি বড়ো বাণিজ্যিক সাফল্য পেয়েছিলেন। বাংলায় তাঁর সমসাময়িক পুরুষ সংগীত শিল্পীরা ছিলেন জগন্ময় মিত্র, রবীন মজুমদর, সত্য চৌধুরী, ধনঞ্জয় ভট্টাচার্য্য, সুধীরলাল চক্রবর্তী, বেচু দত্ত এবং তালাৎ মাহমুদ। পরিবার হেমন্ত মুখোপাধ্যায়রা তিন ভাই এবং এক বোন, নীলিমা। বড়ো ভাই তারাজ্যোতি ছোটো গল্প লিখতেন। ছোটো ভাই অমল মুখোপাধ্যায় কিছু বাংলা চলচ্চিত্রে সংগীত পরিচালনা করেছিলেন এবং গানও গেয়েছিলেন, তাঁর গান 'এই পৃথিবীতেই সারাটা জীবন'; নামকরা চলচ্চিত্রগুলো ছিল হসপিটাল এবং অবাক পৃথিবী। তিনি ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দের দশকে কিছু গান রেকর্ড করেছিলেন এবং জীবনের অনেকটা পথ একলাই, হেমন্তের এই গানে খুবই স্মরণীয় সুরও দিয়েছিলেন। ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে হেমন্ত বাংলা সংগীত শিল্পী বেলা মুখোপাধ্যায়ের (মৃত্যু ২৫ জুন ২০০৯), সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে কাশীনাথ বাংলা চলচ্চিত্রে সংগীত পরিচালক পঙ্কজ মল্লিক বেলাকে দিয়ে কিছু জনপ্রিয় গান গাইয়েছিলেন কিন্তু বিবাহের পর বেলা আর সংগীত জগতে প্রবেশ করেননি। তাঁদের দুই সন্তান — পুত্র জয়ন্ত এবং কন্যা রাণু। সীমিত সাফল্য নিয়ে রাণু মুখোপাধ্যায় ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দের দশকের শেষে এবং ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দের দশকের শুরুর দিকে গান গাইতেন। জয়ন্ত ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দের দশকের জনপ্রিয় ভারতীয় অভিনেত্রী মৌসুমী চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। সাফল্য এবং মুম্বই যাত্রা ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দের দশকে হেমন্ত ভারতীয় গণনাট্য সংঘ (আইপিটিএ) সংস্থার সক্রিয় সদস্য হয়েছিলেন এবং আর এক আইপিটিএ সদস্য - সংগীত রচয়িতা এবং সংগীতজ্ঞ সলিল চৌধুরির সঙ্গে অনুষঙ্গ শুরু করেছিলেন। আইপিটিএ সংস্থার অন্যতম চালিকাশক্তি ছিল ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে বাংলার দুর্ভিক্ষ এবং এর প্রতিরোধে ব্রিটিশ শাসক ও সম্পদশালী ভারতীয়দের নিষ্ক্রিয়তা। হেমন্ত ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে সলিল চৌধুরির কথায় ও সুরে চলচ্চিত্রের বাইরে একটা গান গাঁয়ের বধূ রেকর্ড করেন। দু-পিঠের ৭৮ আরপিএম ছ-মিনিটের ওই ডিস্ক রেকর্ডে বাংলার ভিন্ন গতির এক আবেগমথিত প্রচলিত কাঠামোকে নিবদ্ধ করেছিল। এই গান এক উন্নত এবং মমতাময়ী গ্রাম্য নারীর জীবন ও পরিবারকে সরল শান্ত মনোরম করে ফুটিয়ে তুলেছিল এবং বর্ণিত হয়েছিল কীভাবে দুর্ভিক্ষের দৈত্য ও আসন্ন দারিদ্র্যের দ্বারা বিধ্বস্ত হয়েছিল। এই গান হেমন্ত এবং সলিলকে পূর্ব ভারতে এক অভাবনীয় জনপ্রিয়তা এনে দিয়েছিল, এককথায়, হেমন্তকে তাঁর সমসাময়িক পুরুষ গায়কদের থেকে এগিয়ে রেখেছিল। পরবর্তী কয়েক বছরে হেমন্ত এবং সলিল জুটি সমাজকে অনেক গান উপহার দিয়েছিল। প্রায় এই সমস্ত গানেই জনপ্রিয়তার প্রমাণ ছিল। একই সময়কালে হেমন্ত বাংলা চলচ্চিত্রে সুরসৃষ্টির জন্যে বরাত পেতে শুরু করেন। তার মধ্যে কয়েকটা ছিল পরিচালক হেমেন গুপ্তের জন্যে। কয়েক বছর পর হেমেন যখন মুম্বই যান, ফিল্মিস্তান স্টুডিয়োর ব্যানারে তাঁর পরিচালনায় আনন্দমঠ নামে প্রথম হিন্দি চলচ্চিত্রে সুরসৃষ্টির জন্যে হেমন্তকে ডাকেন। ওই ডাকে সড়া দিয়ে ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দে হেমন্ত মুম্বই পাড়ি দেন এবং ফিল্মিস্তান স্টুডিয়োতে যোগ দেন। আনন্দমঠ (১৯৫২) চলচ্চিত্রের সংগীত মাঝারি সাফল্য পেয়েছিল। সম্ভবত, এই চলচ্চিত্র থেকে খুবই উল্লেখযোগ্য গানের মধ্যে লতা মঙ্গেশকরের গাওয়া বন্দে মাতরম গানটায় হেমন্ত একটা কুচকাওয়াজের সুরারোপ করেছিলেন। আনন্দমঠ-এর পর শর্ত চলচ্চিত্রের মতো কয়েকটা ফিল্মিস্তান চলচ্চিত্রে হেমন্ত পরবর্তী কয়েক বছরে সুরসৃষ্টি করেছিলেন, যে গানগুলো মাঝারি জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল। একই সঙ্গে হেমন্ত মুম্বইতে নেপথ্য গায়ক হিসেবে জনপ্রিয়তা লাভ করেছিলেন। অভিনেতা দেব আনন্দের জন্যে নেপথ্য গায়ক হিসেবে তাঁর গান শচীন দেব বর্মন সুরারোপিত জাল ("য়েহ রাত, য়েহ চাঁদনি ফির কাঁহা..."), হাউস নম্বর ৪৪ ("চুপ হ্যায় ধরতি, চুপ হ্যায় চাঁদ সিতারে..."), সোলবা সাল ("হ্যায় আপনা দিল তো আওয়ারা..."), ফান্টুস ("তেরি দুনিয়া মে জীনে সে..."), এবং বাত এক রাত কি ("না তুম হামে জানো...") খুবই জনপ্রিয় হয়েছিল এবং এভাবে চলতে থাকে। ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দের দশকে তিনি হিন্দি চলচ্চিত্রের অন্যান্য কয়েকজন নায়কের জন্যে নেপথ্য গায়কের কাজ করেছিলেন; যেমন, প্রদীপ কুমার (নাগিন, ডিটেকটিভ), সুনীল দত্ত (দুনিয়া ঝুঁকতি হ্যায়) এবং ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দের দশকের শেষদিকে বিশ্বজিতের জন্যে (বিস সাল বাদ, বিন বাদল বরসাত, কোহরা) এবং ধর্মেন্দ্রের জন্যে (অনুপমা); তিনি এই সমস্ত চলচ্চিত্রের জন্যে সুরসৃষ্টি করেছিলেন। কর্মজীবনে সাফল্য ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের দশকের মাঝামাঝি হেমন্ত একজন গায়ক ও সুরকার হিসেবে তাঁর অবস্থান মজবুত করেছিলেন। তিনি নিজে গাইতে এবং সুর করতে মূলত পছন্দ করতেন সহজ-সরল মেলডিপ্রধান গান, কেননা বাঙালীর সাঙ্গীতিক অন্তরটি সুরকার ও গায়ক হিসাবে খুব ভালো অনুভব করতেন। বাংলায় তিনি রবীন্দ্র সংগীতের একজন শীর্ষস্থানীয় শিল্পী ছিলেন এবং সম্ভবত পুরুষ গায়কদের মধ্যে খুবই অগ্রগণ্য বিবেচ্য ছিলেন। ১৯৮০ খ্রিস্টাব্দের মার্চে কলকাতায় দেবব্রত বিশ্বাসের (১৯১১-১৯৮০) সম্মানে হেমন্ত এক অনুষ্ঠান আয়োজন করেছিলেন; ওই অনুষ্ঠানে কিংবদন্তি রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী দেবব্রত বিশ্বাস নিঃসংকোচে বলেছিলেন যে, হেমন্ত হচ্ছে রবীন্দ্র সংগীতকে জনপ্রিয় করে তোলার 'দ্বিতীয় নায়ক', প্রথম জন হলেন কিংবদন্তি পঙ্কজ কুমার মল্লিক। রবীন্দ্রসঙ্গীত আর রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে হেমন্তকুমার তাঁর আত্মকথা "আনন্দধারা" এক জায়গায় লিখেছেন- মুম্বইতে নেপথ্য গায়নের পাশাপাশি হেমন্ত সুর সৃষ্টিকারীর একটা ঘরানা গড়ে তুলেছিলেন। তিনি নাগিন (১৯৫৪) নাম এক হিন্দি চলচ্চিত্রের জন্যে সুর সৃষ্টি করেছিলেন, যেটা ওই চলচ্চিত্রে সংগীতের জন্যেই বড়ো সাফল্য এসেছিল। নাগিনের গানগুলো ধারাবাহিকভাবে দু-বছর তালিকা-শীর্ষে অবস্থান করেছিল এবং ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে হেমন্তর মর্যাদাপূর্ণ ফিল্মফেয়ার শ্রেষ্ঠ সংগীত নির্দেশনা পুরস্কার লাভে সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছে দিয়েছিল। ঠিক ওই বছরই তিনি বাংলা চলচ্চিত্র শাপমোচনের জন্যে সংগীত প্রস্তুত করেন, যেখানে অভিনেতা উত্তম কুমারের জন্যে নেপথ্য কণ্ঠে চারখানা গানও গেয়েছিলেন। এটা নেপথ্য গায়ক-নায়ক হিসেবে হেমন্ত-উত্তম জুটির এক লম্বা মেলবন্ধনের শুরুয়াত ছিল। তাঁরা দুজনে পরবর্তী দশক জুড়ে বাংলা চলচ্চিত্র জগতে ভীষণ জনপ্রিয় গায়ক-নায়ক জুটি ছিলেন। ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের দশকের শেষ দিকে হেমন্ত অসংখ্য বাংলা এবং হিন্দি চলচ্চিত্রের জন্যে গান গেয়েছিলেন এবং সুর দিয়েছিলেন, অসংখ্য রবীন্দ্র সংগীত এবং চলচ্চিত্রের বাইরের গান রেকর্ড করেছিলেন। যার মধ্যে প্রায় সবই, বিশেষ করে বাংলা গান অত্যধিক জনপ্রিয় হয়েছিল। ওই সময়কালকে তাঁর কর্মজীবনে সাফল্যের শীর্ষবিন্দু হিসেবে ভাবা হয় এবং যেটা মোটামুটি এক দশক স্থায়ী ছিল। তিনি নচিকেতা ঘোষ, রবিন চ্যাটার্জী, সলিল চৌধুরী প্রমুখ বাংলার বিশিষ্ট সংগীত নির্দেশকের সুরে গান গেয়েছেন। বেশ কিছু নামকরা চলচ্চিত্রে হেমন্ত সুর সৃষ্টি করেছেন; তার মধ্যে আছে: বাংলায় হারানো সুর, মরুতীর্থ হিংলাজ, নীল আকাশের নীচে, লুকোচুরি, স্বরলিপি, দীপ জ্বেলে যাই, শেষ পর্যন্ত, কুহক, দুই ভাই, সপ্তপদী এবং হিন্দিতে জাগৃতি, এক হি রাস্তা। চলচ্চিত্র প্রযোজনা হেমন্ত ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের দশকের অন্তিম পর্বে তাঁর নিজের ব্যানারে হেমন্ত-বেলা প্রোডাকশন্স নামে চলচ্চিত্র প্রযোজনা শুরু করেছিলেন। ওই ব্যানারে প্রথম বাংলা চলচ্চিত্র ছিল স্বনামধন্য মৃণাল সেন পরিচালিত নীল আকাশের নীচে (১৯৫৯)। কাহিনি নেওয়া হয়েছিল ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের পটভূমিকায় কলকাতার রাস্তার এক চিনা ফেরিওয়ালার পরিশ্রমের যন্ত্রণা থেকে। এই চলচ্চিত্র ভারত সরকার কর্তৃক দেশের সর্বোচ্চ চলচ্চিত্র সম্মান রাষ্ট্রপতির স্বর্ণ পদক লাভ করেছিল। পরের দশকে হেমন্তের প্রযোজনা কোম্পানি নাম পরিবর্তন করে গীতাঞ্জলি প্রোডাকশন্স হয় এবং একের পর এক হিন্দি চলচ্চিত্রের প্রযোজনা করতে থাকে; যেমন, বিশ সাল বদ, কোহরা, বিবি অওর মকান, ফরার, রাহগির এবং খামোশি - উপরোক্ত সব চলচ্চিত্রেই সুর সৃষ্টি করেছেন হেমন্ত। শুধুমাত্র বিশ সাল বাদ এবং খামোশি এগুলোর মধ্যে অধিক বাণিজ্যিক সাফল্য পেয়েছিল। এর পর বাংলায় ফেরা। ১৯৬৩ খ্রিস্টাব্দে হেমন্ত পলাতক চলচ্চিত্রের জন্যে সুর সৃষ্টি করেন, যেখানে তিনি পরীক্ষামূলকভাবে বাংলা লোক সংগীত এবং লঘু সংগীতের সংমিশ্রণ ঘটিয়েছিলেন। এটা একটা বড়ো সাফল্যের প্রমাণ দিয়েছিল এবং হেমন্তের সংগীত গ্রন্থনার ধরন ভবিষ্যতের চলচ্চিত্রগুলোতে উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তিত হয়েছিল, যেমন, বাঘিনি এবং বালিকা বধূ। বাংলা ছবিদ্বয় মণিহার এবং অদ্বিতীয়া সাংগীতিক এবং বাণিজ্যিক দিক থেকে বড়ো সাফল্য পেয়েছিল, তাঁর সংগীত গ্রন্থনায় লঘু ধ্রুপদী ছোঁয়া ছিল। ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্ম শতবার্ষিকী উদযাপনে গ্রামোফোন কোম্পানি অফ ইন্ডিয়া হেমন্তকে দিয়ে এক বড়ো অংশের স্মারক প্রস্তুত করেছিল। এটাও এক বড়ো সাফল্যের মুখ দেখেছিল। হেমন্ত ওয়েস্ট ইন্ডিজ ভ্রমণ সমেত অনেক কনসার্টের জন্যে বহুবার বিদেশে গিয়েছিলেন। সর্বসাকুল্যে ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দের দশকে তিনি বাংলার প্রধান পুরুষ গায়ক হিসেবে নিজের জায়গা ধরে রেখেছিলেন এবং হিন্দি চলচ্চিত্রের সংগীতকার ও গায়ক হিসেবে পরিগণিত হয়েছিলেন। ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দের দশকে তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গীতিনাট্যগুলোর উদীয়মান এবং প্রধান পুরুষ কণ্ঠ ছিলেন; যেমন, বাল্মিকী প্রতিভা, শ্যামা, শাপমোচন, চিত্রাঙ্গদা এবং চণ্ডালিকা। ওই গীতিনাট্যগুলোতে প্রধান নারী কণ্ঠ হিসেবে থাকতেন কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায় (১৯২৪-২০০০) এবং সুচিত্রা মিত্র (১৯২৪-২০১০), তিনি রবীন্দ্র সংগীত শিল্পীত্রয়ীর অংশ ছিলেন, যাঁরা জনপ্রিয় এবং শ্রদ্ধাষ্পদ ছিলেন। এঁদের বলা হোত 'হেমন্ত-কণিকা-সুচিত্রা' এবং সঙ্গে ছিলেন দেবব্রত বিশ্বাস, এই শিল্পী চতুষ্টয় ধারাবাহিকভাবে রবীন্দ্র গ্রন্থনার বহুশ্রুত প্রদর্শক ছিলেন। অশোকতরু বন্দ্যোপাধ্যায়, চিন্ময় চট্টোপাধ্যায়, সাগর সেন, সুমিত্রা সেন এবং ঋতু গুহ ছিলেন সেই সময়কার রবীন্দ্র সংগীতের অন্যান্য প্রধান শিল্পী। পরবর্তী কর্মজীবন ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দের দশকে হিন্দি চলচ্চিত্রে হেমন্তর নামমাত্র অবদান ছিল। তিনি তার নিজের প্রডাকশন্সে নিজের মতো সংগীত রচনা করতেন, কিন্তু তার মধ্যে কোনো চলচ্চিত্র কিংবা তার সংগীত সফলতা পায়নি। যাইহোক, বাংলায় তিনি রবীন্দ্র সংগীত, চলচ্চিত্র এবং চলচ্চিত্রের বাইরের গানের বিশিষ্ট শিল্পী ছিলেন। তাঁর সংগীত দশক জুড়ে ধারাবাহিকভাবে জনপ্রিয় ছিল। তার মধ্যে কয়েকটা হলো: যদি জানতে চাও তুমি... (১৯৭২), একগোছা রজনীগন্ধা..., আমায় প্রশ্ন করে নীল ধ্রুবতারা..., সেদিন তোমায় দেখেছিলাম ... (১৯৭৪), খিড়কি থেকে সিংহ দুয়ার... (স্ত্রী, ১৯৭১), কে জানে ক-ঘণ্টা... (সোনার খাঁচা, ১৯৭৪), যেওনা দাঁড়াও বন্ধু... (ফুলেশ্বরী, ১৯৭৫) এবং চলচ্চিত্রের অবস্থা অনুযায়ী সুন্দরভাবে প্রযুক্ত জনপ্রিয় রবীন্দ্র সংগীতগুলো। একটা খুব জনপ্রিয় এবং উচ্চাঙ্গের উদাহরণ হলো দাদার কীর্তি (১৯৮০) চলচ্চিত্রে চরণ ধরিতে দিয়োগো আমারে...। ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে হেমন্ত তাঁর নিজের প্রযোজিত অনিন্দিতা চলচ্চিত্রে চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। এটা বক্স অফিসে খুব ভালো ফল দিতে পারেনি। যাইহোক, এর মূল উপজীব্য ছিল দিনের শেষে ঘুমের দেশে... তার এই শ্রেষ্ঠ ও জনপ্রিয় রবীন্দ্র সংগীত। ওই একই বছরে প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক কনরাড রুকসের ডাকে হেমন্ত হলিউডে গিয়েছিলেন। https://en.m.wikipedia.org › wiki হেমন্ত কনরাড রুকসের সিদ্ধার্থ চলচ্চিত্রের সঙ্গীত পরিচালক। তিনি ওই চলচ্চিত্রে নেপথ্য গায়ক হিসেবে ও নদীরে... (সংগীত এবং কণ্ঠ তাঁর নীল আকাশের নীচে থেকে) গেয়েছেন। হেমন্ত হলিউডে নেপথ্য গায়ক হিসেবে গান করা প্রথম ভারতীয়। যুক্তরাষ্ট্র সরকার হেমন্তকে মেরিল্যান্ড, বাল্টিমোরের নাগরিকত্ব দিয়ে সম্মানিত করেছিলেন; তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব পাওয়া প্রথম ভারতীয় গায়ক। ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দের শুরু থেকে মাঝামাঝি পর্যন্ত বাংলার দুজন প্রধান সংগীতকার নচিকেতা ঘোষ এবং রবিন চট্টোপাধ্যায়, যাঁরা ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের দশকের প্রথমদিক থেকে হেমন্তের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করতেন, তাঁদের জীবনাবসান হয়েছিল। একই সঙ্গে ফুলেশ্বরী, রাগ অনুরাগ, গণদেবতা এবং দাদার কীর্তি ইত্যাদি চলচ্চিত্রে হেমন্ত সংগীত পরিচালনা করায় তাঁকে বাংলার প্রধান সংগীত পরিচালকরূপে প্রতিষ্ঠিত করেছিল। ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দের দশক এবং ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের দশকে সলিল চৌধুরীর সঙ্গে হেমন্ত যেসব কাজ করেছিলেন ১৯৭৯ খ্রিস্টাব্দে তার মধ্যে থেকে কিছু পুনরায় রেকর্ড করেছিলেন। এই অ্যালবামের নাম হলো লেজেন্ড অফ গ্লোরি, ভল্যুম ২, হেমন্তের বয়সের ছাপ এবং শ্রান্ত কণ্ঠ সত্ত্বেও রেকর্ডটা ভালো বাণিজ্যিক সাফল্য পেয়েছিল। ১৯৮০ খ্রিস্টাব্দে হৃদাঘাত হয়েছিল, যার ফলে তাঁর কণ্ঠস্বর ক্ষেপণের, বিশেষত তাঁর শ্বাস নিয়ন্ত্রণের মারাত্মক ক্ষতি হয়েছিল। তিনি আটের দশকের গোড়ার দিকে ধারাবাহিকভাবে গান রেকর্ড করছিলেন, কিন্তু তাঁর পুরুষালি কণ্ঠে একটু স্বরের তফাত পড়ে। ১৯৮৪ খ্রিস্টাব্দে হেমন্ত তাঁর সংগীত জীবনের ৫০ বর্ষপূর্তিতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে সংবর্ধনা পেয়েছিলেন, এর মধ্যে খুব উল্লেখযোগ্য হলো গ্রামোফোন কোম্পানি অফ ইন্ডিয়া। ওই বছরই হেমন্ত গ্রামোফোন কোম্পানি অফ ইন্ডিয়া থেকে তাঁর শেষ অ্যালবাম প্রকাশ করেন - এটা ছিল চারটে চলচ্চিত্রের বাইরের গান সমৃদ্ধ একটা ৪৫ আরপিএম সমন্বিত সম্প্রসারিত রেকর্ড। পরবর্তী বছরগুলোতে হেমন্ত ছোটোখাটো কোম্পানিগুলো থেকে কিছু চলচ্চিত্রের বাইরের গান রেকর্ড করেছিলেন যারা উঠতি ক্যাসেট-ভিত্তিক সংগীত তৈরি শিল্পের সঙ্গে এঁটে উঠছিল। সেগুলোর মধ্যে অল্প কয়েকটা বাণিজ্যিকভাবে সফল হয়েছিল। তিনি তখন মুষ্টিমেয় কিছু চলচ্চিত্র, একট বাংলা এবং একটা হিন্দি দূরদর্শন ধারাবাহিকের জন্যে সংগীত পরিচালনা করেছিলেন। যাইহোক, এই সময়ের মধ্যে তিনি এক প্রতিষ্ঠান, প্রিয় এবং শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়েছিলেন, যিনি ছিলেন নম্র এবং বন্ধুত্বপূর্ণ ভদ্রলোক। তাঁর মানবধর্মী কার্যকলাপের মধ্যে অঙ্গীভূত ছিল পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলায় তাঁর নিজের গাঁ বহড়ুতে তাঁর প্রয়াত পিতার স্মরণে একটা হোমিয়োপ্যাথিক হাসপাতাল চালানো। তাঁর সময়কালে তিনি আকাশবাণী, দূরদর্শন (টিভি) এবং চলন্ত অনুষ্ঠান/কনসার্টে নিয়মিত বৈশিষ্ট্যে অবিরত ছিলেন। ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দের দশকের প্রথমদিকে রেকর্ড করা বাচিক শিল্পী গৌরী ঘোষের সঙ্গে এক দূরদর্শন সাক্ষাৎকারে হেমন্তের স্ত্রী বেলা মুখোপাধ্যায় পুনরুল্লেখ করেন যে, তিনি জানতেননা জীবৎকালে হেমন্ত কত সংখ্যক ব্যক্তি এবং পরিবারকে আর্থিক ও অন্যান্যভাবে সাহায্য করেছেন; শুধুমাত্র তার চলে যাওয়ার পরেই সেসব ক্রমশ প্রকাশ পেয়েছিল। ১৯৮৭ খ্রিস্টাব্দে হেমন্ত ভারত সরকার কর্তৃক পদ্মভূষণ পুরস্কারের জন্যে মনোনীত হয়েছিলেন যেটা তিনি বিনীতভাবে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন, ইতিমধ্যে ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে তিনি একইভাবে পদ্মশ্রী পুরস্কার নিতে অস্বীকার করেছিলেন। ওই বছরই কলকাতার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে হেমন্তের সংগীত জীবনের ৫০ বর্ষপূর্তিতে তাঁকে এক রাজকীয় গণসংবর্ধনা দেওয়া হয়েছিল; তাঁর ভক্ত এবং গুণগ্রাহীদের তরফ থেকে আর এক কিংবদন্তি সংগীত শিল্পী লতা মঙ্গেশকর তাঁকে স্মারক দিয়ে সংবর্ধনা জানান। তাঁর বয়সের ছাপ পড়া গলাতেও তিনি ১৯৮৮ খ্রিস্টাব্দে লালন ফকির চলচ্চিত্রে গান গেয়ে শ্রেষ্ঠ পুরুষ গায়কের সম্মান পেয়েছিলেন। ১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দে মাইকেল মধুসূদন পুরস্কার গ্রহণের জন্যে তথা একটা কনসার্টে সংগীত পরিবেশনের তাগিদে হেমন্ত বাংলাদেশের ঢাকা শহরে ভ্রমণ করেছিলেন। ওই সফরের অব্যবহিত পর ফিরেই ২৬ সেপ্টেম্বর তিনি আর একটা হৃদাঘাত পেয়েছিলেন এবং দক্ষিণ কলকাতার এক নার্সিং হোমে রাত ১১:১৫টায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। উত্তরাধিকার হেমন্ত মুখোপাধ্যায় প্রায় দেড়শোটি বাংলা ছবিতে সুর দিয়েছেন, গান গেয়েছেন। তাঁর প্রয়াণের প্রায় দুই দশক পরেও গ্রামোফোন কোম্পানি অফ ইন্ডিয়া প্রত্যেক বছর অন্তত একটা হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের অ্যালবাম প্রকাশ করে থাকে, বাণিজ্যিক সম্ভাব্যতা থাকায় তাঁর পুরোনো গানের পুনর্প্রস্তুতকরণ করে। যে গান তিনি রেকর্ড করেছেন, যে সুর তিনি সৃষ্টি করেছেন, এবং অসংখ্য গায়ক বাংলা এবং ভারতে তাঁর গায়কী ধরন অবিরত নকল/অনুকরণ করার ফলে তাঁর উত্তরাধিকার এখনো জীবন্ত! পুরস্কার ১৯৫৬: ফিল্মফেয়ার বেস্ট মিউজিক ডাইরেক্টর অ্যাওয়ার্ড: [[নাগিন(১৯৫৪ চলচ্চিত্র)|নাগিন]] ১৯৭১: ন্যাশনাল ফিল্ম অ্যাওয়ার্ড ফর বেস্ট মেল প্লেব্যাক সিঙ্গার: নিমন্ত্রণ ১৯৮৬: ন্যাশনাল ফিল্ম অ্যাওয়ার্ড ফর বেস্ট মেল প্লেব্যাক সিঙ্গার: লালন ফকির ১৯৬২: বিএফজেএ বেস্ট মিউজিক ডাইরেক্টর অ্যাওয়ার্ড স্বরলিপি - বিজয়ী ১৯৬৩: বিএফজেএ বেস্ট মিউজিক ডাইরেক্টর অ্যাওয়ার্ড (হিন্দি); বিস সাল বাদ - বিজয়ী ১৯৬৪: বিএফজেএ বেস্ট মিউজিক ডাইরেক্টর অ্যাওয়ার্ড পলাতক - বিজয়ী ১৯৬৭: বিএফজেএ বেস্ট মিউজিক ডাইরেক্টর অ্যাওয়ার্ড মণিহার - বিজয়ী ১৯৬৮: বিএফজেএ বেস্ট মিউজিক ডাইরেক্টর অ্যাওয়ার্ড বালিকা বধূ - বিজয়ী ১৯৭৫: বিএফজেএ বেস্ট মিউজিক ডাইরেক্টর অ্যাওয়ার্ড ফুলেশ্বরী - বিজয়ী ১৯৮৬: বিএফজেএ বেস্ট মিউজিক ডাইরেক্টর অ্যাওয়ার্ড ভালোবাসা ভালোবসা - বিজয়ী ১৯৮৭: বিএফজেএ বেস্ট মিউজিক ডাইরেক্টর অ্যাওয়ার্ড পথভোলা - বিজয়ী ১৯৮৮: বিএফজেএ বেস্ট মিউজিক ডাইরেক্টর অ্যাওয়ার্ড আগমন - বিজয়ী ১৯৭২: বিএফজেএ বেস্ট মেল প্লেব্যাক সিঙ্গার অ্যাওয়ার্ড ধন্যি মেয়ে - বিজয়ী ১৯৭৫: বিএফজেএ বেস্ট মেল প্লেব্যাক সিঙ্গার অ্যাওয়ার্ড ফুলেশ্বরী - বিজয়ী ১৯৭৬: বিএফজেএ বেস্ট মেল প্লেব্যাক সিঙ্গার অ্যাওয়ার্ড প্রিয় বান্ধবী'' - বিজয়ী ১৯৮৫: বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক সাম্মানিক ডি.লিট ১৯৮৬: সংগীত নাটক আকাদেমি পুরস্কার ১৯৮৯: মাইকেল মধুসূদন পুরস্কার জনপ্রিয় গান হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের গাওয়া অসংখ্য গানের মধ্যে জনপ্রিয় কিছু গান: মাগো ভাবনা কেন পথের ক্লান্তি ভুলে স্নেহ ভরা কোলে তব মাগো, বলো কবে শীতল হবো ও নদীরে, একটি কথা শুধাই শুধু তোমারে আয় খুকু আয়,আয় খুকু আয় মুছে যাওয়া দিনগুলি আমায় যে পিছু ডাকে ও আকাশ প্রদীপ জ্বেলোনা, ও বাতাস আঁখি মেলোনা আমি দূর হতে তোমারেই দেখেছি,আর মুগ্ধ এ চোখে চেয়ে থেকেছি এই রাত তোমার আমার, ঐ চাঁদ তোমার আমার…শুধু দুজনে মেঘ কালো, আঁধার কালো, আর কলঙ্ক যে কালো রানার ছুটেছে তাই ঝুমঝুম ঘণ্টা বাজছে রাতে আজ দুজনার দুটি পথ ওগো দুটি দিকে গেছে বেঁকে আমায় প্রশ্ন করে নীল ধ্রুবতারা,আর কতকাল আমি রব দিশাহারা বন্ধু তোমার পথের সাথীকে চিনে নিও,মনের মাঝেতে চিরদিন তাকে ডেকে নিও আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ কেন দূরে থাকো, শুধু আড়াল রাখো ওলিরও কথা শুনে বকুল হাসে ছেলে বেলার গল্প শোনার দিনগুলো আমিও পথের মত হারিয়ে যাবো সুরকার হিসেবে চলচ্চিত্রের তালিকা সুরকার হিসেবে ইংরেজি চলচ্চিত্রের তালিকা সুরকার হিসেবে বাংলা চলচ্চিত্রের তালিকা সর্বমোট চলচ্চিত্রের সংখ্যা: ১৩৮ সুরকার হিসেবে হিন্দি চলচ্চিত্রের তালিকা সুরকার হিসেবে অন্যান্য চলচ্চিত্রের তালিকা উৎসসমূহ হেমন্ত কুমার মুখোপাধ্যায়, 'আনন্দ ধারা', দেব সাহিত্য কুটীর প্রেস, কলকাতা, ১৯৭০। এ. রাজাধ্যক্ষ এবং পি. উইলহেল্ম, 'অ্যান এনসাইক্লোপিডিয়া অফ ইন্ডিয়ান সিনেমা', দ্বিতীয় সংস্করণ, ব্রিটিশ ফিল্ম ইন্সটিটিউট, ১৯৯৯। এস. ভট্টাচার্য, 'আমার গানের স্বরলিপি', এ. মুখার্জি প্রেস, কলকাতা, ১৯৮৮। https://web.archive.org/web/20100107012222/http://www.bfjaawards.com/legacy/pastwin/196225.htm https://web.archive.org/web/20100108013155/http://www.bfjaawards.com/legacy/pastwin/196326.htm https://web.archive.org/web/20100108082149/http://www.bfjaawards.com/legacy/pastwin/196427.htm https://web.archive.org/web/20100106143248/http://www.bfjaawards.com/legacy/pastwin/196730.htm https://web.archive.org/web/20100108050315/http://www.bfjaawards.com/legacy/pastwin/196831.htm https://web.archive.org/web/20100108054631/http://www.bfjaawards.com/legacy/pastwin/197235.htm https://web.archive.org/web/20100114151114/http://www.bfjaawards.com/legacy/pastwin/197538.htm https://web.archive.org/web/20100108051039/http://www.bfjaawards.com/legacy/pastwin/197639.htm https://web.archive.org/web/20100108050106/http://www.bfjaawards.com/legacy/pastwin/198649.htm https://web.archive.org/web/20100108094117/http://www.bfjaawards.com/legacy/pastwin/198750.htm https://web.archive.org/web/20100108062601/http://www.bfjaawards.com/legacy/pastwin/198952.htm তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ বিষয়শ্রেণী:১৯২০-এ জন্ম বিষয়শ্রেণী:১৯৮৯-এ মৃত্যু বিষয়শ্রেণী:বাঙালি কণ্ঠশিল্পী বিষয়শ্রেণী:রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী বিষয়শ্রেণী:ভারতীয় চলচ্চিত্র সঙ্গীত সুরকার বিষয়শ্রেণী:ভারতীয় সঙ্গীতশিল্পী বিষয়শ্রেণী:বাংলা সঙ্গীত বিষয়শ্রেণী:বলিউডের নেপথ্য সঙ্গীতশিল্পী বিষয়শ্রেণী:২০শ শতাব্দীর ভারতীয় সুরকার বিষয়শ্রেণী:ভারতীয় পুরুষ সুরকার
হেমন্ত মুখোপাধ্যায়
রাফায়েল বা রাফায়েল্লো () (এপ্রিল ৬, ১৪৮৩ – এপ্রিল ৬, ১৫২০) চিত্রশিল্পের রেনেসাঁস যুগের অন্যতম প্রধান শিল্পী। তিনি নিখুঁত ও সৌন্দর্যময় চিত্রকর্মের জন্য বিখ্যাত। তার পিতা জিওভানি দ্য সানতিও ছিলেন একজন চিএশিল্পী ও স্থপতি। তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ Raphael Research Resource from the National Gallery, London V&A London online feature on the Raphael Cartoons Ten drawings and three paintings from the Royal Collection Web Gallery of Art Most of the Raphael/Raimondi prints from the San Francisco Museums Raphael Project/Raffael Projekt Website of Teylers Museum on the provenance of the Raphael drawings in the museum's collection. বিষয়শ্রেণী:১৪৮৩-এ জন্ম বিষয়শ্রেণী:১৫২০-এ মৃত্যু বিষয়শ্রেণী:ইতালীয় চিত্রশিল্পী
রাফায়েল
right|thumb|জটনারের বিরুদ্ধে থরের যুদ্ধ (১৮৭২), মার্টেন এস্কিল উইং-এর আঁকা। নর্স পুরাণে থর (প্রাচীন নর্স ভাষা: Þórr) হলেন একজন হাতুড়ি-ধারী দেবতা। তিনি বজ্রবিদ্যুৎ, ঝড়, ওক গাছ, শারীরিক শক্তি, মানবজাতির সুরক্ষা এবং প্রথাগত পবিত্রকরণ অনুষ্ঠান, আরোগ্য ও উর্বরতার দেবতা। বৃহত্তর জার্মানিক পুরাণ ও প্যাগানিজমে থরের অনুরূপ দেবতার নাম প্রাচীন ইংরেজিতে Þunor এবং হাই ওল্ড জার্মান ভাষায় Donar (রুনিক লিপিতে þonar)। শব্দটির উৎস সাধারণ জার্মানিক *Þunraz শব্দটি, যার অর্থ "ঝড়"। জার্মানিক জাতির রোমান ঔপনিবেশিক যুগ থেকে অভিবেশন পর্ব পর্যন্ত নথিবদ্ধ ইতিহাসের সর্বত্র থরের নাম বেশ গুরুত্বের সঙ্গেই উল্লিখিত হয়েছে। ভাইকিং যুগেও থর খুব জনপ্রিয় দেবতা ছিলেন। সেই সময় স্ক্যান্ডিনেভিয়ায় খ্রিস্টধর্ম প্রচারের কাজ চলছিল। সেই অবস্থাতেও থরের প্রতীক হাতুড়ি "মিয়োলনির" মানুষ গর্বের সঙ্গে ধারণ করত এবং থরের নর্স প্যাগান ব্যক্তিগত নামটির বহুল ব্যবহার তাঁর জনপ্রিয়তার পরিচয় বহন করছে। আধুনিক যুগেও সারা জার্মানিক অঞ্চলের লোককথায় থরের উল্লেখ পাওয়া যায়। বিভিন্ন স্থাননামে থরের উল্লেখ আছে। "থার্সডে" (বৃহস্পতিবার) কথাটি "থর'স ডে" বা "থরের দিন" কথাটি থেকে এসেছে। প্যাগান যুগ থেকে প্রচলিত থরের নামাঙ্কিত নামগুলির প্রচলন এখনও আছে। আইসল্যান্ডে নথিভুক্ত নর্স পুরাণে, যেখানে স্ক্যান্ডিনেভিয়ার প্রচলিত পুরাণকথা থেকে উপাদান প্রচুর পরিমাণে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, সেখানে থর সম্পর্কে অনেক গল্প ও তথ্য আছে। এই সূত্র থেকে থরের চোদ্দোটি নাম পাওয়া যায়। জানা যায়, তিনি সোনালি চুলবিশিষ্ট দেবী সিফের স্বামী এবং জটুন ও জার্নসাজার প্রেমিক। তাঁর চোখদুটিকে ভয়ানক বলা হয়েছে। তাঁর মাথার চুল ও দাড়ির রং লাল বলে উল্লেখ করা হয়েছে। থরের ঔরসে সিফের গর্ভে তিনি এক দেবী (সম্ভবত ভালকিরি) ব্রুনরের জন্ম দেন। জার্নসাজার গর্ভে জন্ম নেন থরের সন্তান মাগনি। তিনি মদিরও পিতা, তবে মদির মায়ের নাম জানা যায় না। দেবতা উল্লর তাঁর সৎপিতা। একই সূত্র থেকে জানা যায় তিনি ওডিন ও পৃথিবী দেবী জোরগিনের সন্তান। ওডিনের সূত্রে থরের অনেকগুলি ভাই আছে। থরের দুই পরিচারক জালফি ও রোস্কভা। তিনি দুই ছাগলে টানা গাড়িতে ভ্রমণ করেন। তাঁর তিনটি বাসস্থান। থর হাতে ধরে থাকেন মিয়োলনির নামে একটি পাহাড়-ভাঙা হাতুড়ি। তিনি বেল্ট ও লোহার হাতমোজা পরে থাকেন যা দ্বারা তিনি তার হাতুড়ি কে যেখানেই নিক্ষেপ করেন সেটা তার কাছে ফিরে আসে। তাঁর গ্রিনারভোল নামে এক কর্মচারী আছে। থর জরমুনগান্ডার নামে এক বিশাল সাপের সাথে যুদ্ধ করেন আরও দেখুন জার্মানিক দেবতাদের তালিকা পাদটীকা তথ্যসূত্র Bellows, Henry Adams (1923). The Poetic Edda. American-Scandinavian Foundation. Birley, Anthony R. (Trans.) (1999). Agricola and Germany. Oxford World's Classics. Chrisholm, Hugh (Editor) (1910) Encyclopædia Britannica, vol. 9. The Encyclopædia Britannica Co. Davidson, H. R. (1965). "Thor's Hammer" as published in Folklore, Vol. 76, No. 1 (Spring 1965). Taylor & Francis. Ellis Davidson, H. R. (1975). Scandinavian Mythology. Paul Hamlyn. Dumézil, Georges (1973). Gods of the Ancient Northmen. University of California Press. Greg, Robert Philips (1884). On the Meaning and Origin of the Fylfot and Swastika. Westminster: Nichols and Sons. Hollander, Lee Milton. (Trans.) (2007). Heimskringla: History of the Kings of Norway. University of Texas Press. Grimm, Jacob (James Steven Stallybrass Trans.) (1882). Teutonic Mythology: Translated from the Fourth Edition with Notes and Appendix by James Stallybrass, volume I. London: George Bell and Sons. Lindow, John (1978). Swedish Folktales and Legends. University of California Press. Johnston, Richard (July 24, 2013). "Shrew has a spine of godly strength". Nature. Retrieved July 24, 2013. MacLeod, Mindy; Mees, Bernard (2006). Runic Amulets and Magic Objects. Boydell Press. Morris, Christopher G. (1992). Academic Dictionary of Science and Technology. Gulf Professional Publishing. Orchard, Andy (1997). Dictionary of Norse Myth and Legend. Cassell. Orel, Vladimir (2003). A Handbook of Germanic Etymology. Brill. Reynolds, Richard (1994). Super Heroes: A Modern Mythology. University Press of Mississippi. Robinson, George W. (Trans.) (1916). The Life of Saint Boniface by Willibald. Harvard University Press. Sawyer, Birgit (2003). The Viking-Age Rune-Stones: Custom and Commemoration in Early Medieval Scandinavia. Oxford University Press. Simek, Rudolf (2007) translated by Angela Hall. Dictionary of Northern Mythology. D.S. Brewer. Thorpe, Benjamin (1851). Northern Mythology, Compromising the Principal Traditions and Superstitions of Scandinavia, North Germany, and the Netherlands: Compiled from Original and Other Sources. In three Volumes. Scandinavian Popular Traditions and Superstitions, Volume 2. Lumley. Thorpe, Benjamin (Trans.) (1907). The Elder Edda of Saemund Sigfusson. Norrœna Society. Turville-Petre, E. O. G. (1964). Myth and Religion of the North: The Religion of Ancient Scandinavia. London: Weidenfeld and Nicolson. Worsaae, J. J. A. (1882). The Industrial Arts of Denmark''. Chapman and Hall. বহিঃসংযোগ * বিষয়শ্রেণী:আকাশ ও আবহাওয়ার দেবতা বিষয়শ্রেণী:বজ্রবিদ্যুতের দেবতা বিষয়শ্রেণী:জার্মানিক দেবতা
থর
thumb|right|ওয়াশিংটন ডিসির ম্যালকম এক্স পার্কে অবস্থিত দান্তের মূর্তি দুরান্তে দেইলি আলিগিয়েরি (ইতালীয় Durante degli Alighieri) বা দান্তে (Dante) (১২৬৫ - ১৩২১) ছিলেন এক বিখ্যাত ইতালীয় কবি। দান্তের জন্ম ইতালির ফ্লোরেন্সে। তার পরিবার তেমন একটা বিত্তশালী না হলেও অভিজাত হিসেবে পরিচিত ছিল। ব্রুনেত্তো লাটিনি এর কাছে তিনি ক্ল্যাসিক্যাল লিবারেল আর্টস এর জ্ঞান লাভ করেন। এর মধ্যে ল্যাটিন এবং গ্রিক ভাষা সংক্রান্ত জ্ঞানও ছিল। এরপর তিনি তার সবচেয়ে বিখ্যাত গ্রন্থ দ্য ডিভাইন কমেডি রচনা শুরু করেন। উল্লেখ্য যে বইটি রচিত হয় স্থানীয় ভেনেশিয়ান কথ্য ভাষায়। এই গ্রন্থ টি তিন খন্ডে বিভক্ত এবং এখানে চার্চ এবং সমসাময়িক বিখ্যাত ঘটনা এবং ব্যক্তিবর্গের প্রতি ব্যাঙ্গাত্মক বিদ্রূপ স্থান পেয়েছে। রচনাসমূহ লা ভিতা নুওভা (LA VITA NUOVA), ১২৯৩ - The New Life ইল কনভিভিও (IL CONVIVIO), ১৩০৭ - Dante's Convivio দে ভুলগারি এলোকুয়েন্তিয়া DE VULGARI ELOQUENTIA, ১৩০৪-০৭ - Concerning Vernacular Eloquence লা দিভিনা কমেডিয়া(দ্যা ডিভাইন কমেডি) LA DIVINA COMMEDIA, ১৩১০-১৪ - ইনফের্নো (১৩১৬'র আগে সম্পন্ন), পুরগেতোরিও (১৩২০'র আগে), পারাদিসো, (১৩২১'র আগে) - The Divine Comedy (হেনরি লংফেলো কর্তৃক অনূদিত) দে মনার্কিয়া DE MONARCHIA, ১৩১৩ - On Monarchy ECLOGUES, ১৩১৯ QUAESTIO DE SITU AQUE ET TERRE, ১৩২০ RIME, ১৯৪৩ OPERE, ১৯৪৪ দ্য পোর্টেব্‌ল দান্তে, ১৯৪৭ (পাওলো মিলানো সংস্করণ) LE OPERE DI DANTE, ১৯৬০ চিঠিপত্র, ১৯৬৬ দান্তে'স লিরিক পোয়েট্রি, ১৯৬৭ (২ খন্ড) বহিঃসংযোগ স্ট্যানফোর্ড এনসাইক্লোপিডিয়া অব ফিলোসফি; বায়োগ্রাফি The World of Dante multimedia, texts, maps, gallery, searchable database, music, teacher resources, timeline Danteworlds multimedia The Princeton Dante Project texts and multimedia The Dartmouth Dante Project searchable database of commentary Società Dantesca Italiana (bilingual site) manuscripts of works, images and text transcripts "Digital Dante" – Divine Comedy with commentary, other works, scholars on Dante Works Italian and Latin texts, concordances and frequency lists "The Earth is Round! The Image of the Earth in the Middle Ages"- Animated Short বিষয়শ্রেণী:১২৬৫-এ জন্ম বিষয়শ্রেণী:১৩২১-এ মৃত্যু বিষয়শ্রেণী:ইতালীয় কবি বিষয়শ্রেণী:ইতালীয় সাহিত্যিক
দান্তে আলিগিয়েরি
আম্মিয়ানুস মারকেল্লিনুস খ্রিষ্টীয় তৃতীয় শতকের রোমান ঐতিহাসিক। তথ্যসূত্র আরো পড়ুন Wolfgang Seyfarth (ed.) Rerum gestarum libri qui supersunt (in 2 vols). Leipzig: Teubner, 1978. Latin text and facing English translation (by J.C. Rolfe) in the Loeb Classical Library, 1935‑1940 with many reprintings. Walter Hamilton (trans.) The Later Roman Empire (AD 354–378). Penguin Classics, 1986. An abridged English translation. Barnes, Timothy D. Ammianus Marcellinus and the Representation of Historical Reality (Cornell Studies in Classical Philology). Ithaca, NY: Cornell University Press, 1998 (hardcover, ). Clark, Charles Upson. The Text Tradition of Ammianus Marcellinus. Ph.D. Diss. Yale: 1904. Crump, Gary A. Ammianus Marcellinus as a military historian. Steiner, 1975, . Drijvers, Jan and David Hunt. Late Roman World and its Historian. Routledge, 1999, . Kelly, Gavin. Ammianus Marcellinus: The Allusive Historian. Cambridge University Press, 2008, . Matthews, J. The Roman Empire of Ammianus. Johns Hopkins University Press, 1989. Rowell, Henry Thompson. Ammianus Marcellinus, soldier-historian of the late Roman Empire. University of Cincinnati, 1964. Sabbah, Guy. La Méthode d'Ammien Marcellin. Paris: Les Belles Lettres, 1978. Seager, Robin. Ammianus Marcellinus: Seven Studies in His Language and Thought. Univ of Missouri Pr, 1986, . Thompson, E.A. The Historical Work of Ammianus Marcellinus. London: Cambridge University Press, 1947. বহিঃসংযোগ Ammianus Marcellinus on-line project Ammianus Marcellinus' works in Latin at the Latin Library Ammianus Marcellinus' works in English at the Tertullian Project with introduction on the manuscripts Bibliography for Ammianus Marcellinus at Bibliographia Latina Selecta compiled by M.G.M. van der Poel বিষয়শ্রেণী:রোমান ঐতিহাসিক
আম্মিয়ানুস মারকেল্লিনুস
রাস্‌মুস রাস্ক () (নভেম্বর ২২, ১৭৮৭ - নভেম্বর ১৪, ১৮৩২) একজন ডেনীয় ভাষাতাত্ত্বিক ও পণ্ডিত। তিনি কয়েকটি ব্যাকরণ বই রচনা করেছেন এবং তুলনামূলক ধ্বনিতত্ত্ব ও রূপতত্ত্ব বা শব্দতত্ত্ব নিজে কাজ করেছেন। রাস্ক ভাষা শিক্ষার জন্য প্রথমে আইসল্যান্ড যান। সেখানে তিনি আইসল্যান্ডীয় ভাষায় তার প্রথম ব্যাকরণ বই রচনা করেন। পরে তিনি রাশিয়া, পার্সিয়া, ভারত ও সিলন (বর্তমান শ্রীলঙ্কা) ভ্রমণ করেন। তার মৃত্যুর কিছুদিন পূর্বে তিনি কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয় এ প্রাচ্য ভাষার অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন। রাস্ক মূলত তুলনামূলক ভাষাবিজ্ঞান এ তার অবদানের জন্য প্রসিদ্ধ, বিশেষ করে তার প্রাথমিক সূত্র যা পরে গ্রিম্‌স ল বা রাস্ক রুল নামে পরিচিত লাভ করে। তথ্যসূত্র বিষয়শ্রেণী:১৭৮৭-এ জন্ম বিষয়শ্রেণী:১৮৩২-এ মৃত্যু বিষয়শ্রেণী:ডেনীয় ভাষাবিজ্ঞানী বিষয়শ্রেণী:১৯শ শতাব্দীর ডেনীয় ভাষাবিজ্ঞানী
রাস্‌মুস রাস্ক
বের্টোল্ড ডেলব্রুক () (২৬শে জুলাই, ১৮৪২—৩রা জানুয়ারি, ১৯২২) একজন জার্মান ভাষাবিজ্ঞানী। তিনি ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাসমূহের তুলনামূলক বাক্যতত্ত্বের উপর গবেষণা করেন। ডেলব্রুক ১৮৭০ থেকে ১৯১২ সাল পর্যন্ত ইয়েনা বিশ্ববিদ্যালয়ে সংস্কৃত ভাষা ও তুলনামূলক ভাষাবিজ্ঞানের অধ্যাপক ছিলেন। তার শ্রেষ্ঠ কাজ বাক্যতত্ত্বের উপর লেখা তিন খণ্ডের গ্রুন্ডরিস ডের ভের্গলাইখেন গ্রামাটিক ডের ইন্ডোগের্মানিশেন শ্‌প্রাখেন (Grundriss der vergleichenden Grammatik der indogermanischen Sprachen ইন্দো-জার্মানীয় ভাষাসমূহের তুলনামূলক ব্যাকরণের রূপরেখা), যা ১৮৯৩ থেকে ১৯০০ সালের ভেতরে প্রকাশিত হয়। বিষয়শ্রেণী:জার্মান ভাষাবিজ্ঞানী
বের্টোল্ড ডেলব্রুক
আবু নয়ীম মোহাম্মদ মুনীর চৌধুরী (২৭ নভেম্বর ১৯২৫ - ১৪ ডিসেম্বর ১৯৭১) ছিলেন একজন বাংলাদেশি শিক্ষাবিদ, নাট্যকার, সাহিত্য সমালোচক, ভাষাবিজ্ঞানী, বাগ্মী এবং বুদ্ধিজীবী। তিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী কর্তৃক বাংলাদেশী বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের অন্যতম একজন শিকার। তিনি তৎকালীন ঢাকা জেলার মানিকগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক নিবাস নোয়াখালী জেলার চাটখিল থানাধীন গোপাইরবাগ গ্রামে। তিনি ছিলেন ইংরেজ আমলের একজন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট খান বাহাদুর আবদুল হালিম চৌধুরীর চৌদ্দ সন্তানের মধ্যে দ্বিতীয়। কবীর চৌধুরী তার অগ্রজ, ফেরদৌসী মজুমদার তার অনুজা। ১৯৪৯-এ লিলি চৌধুরীর সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। ছাত্রজীবন মুনীর চৌধুরী ১৯৪১ সালে ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল (বর্তমান ঢাকা কলেজ) থেকে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় পাস করেন এবং ১৯৪৩ সালে আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দ্বিতীয় বিভাগে আইএসসি পাস করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে অনার্স (১৯৪৬) এবং মাস্টার্স (১৯৪৭) পাস করেন, উভয় ক্ষেত্রেই দ্বিতীয় শ্রেণীতে। তিনি ছিলেন সলিমুল্লাহ হলের আবাসিক ছাত্র। বক্তৃতানৈপুণ্যের সুবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রজীবনের প্রথম বছরেই, ১৯৪৩ সালে, হলের সেরা বক্তা হিসেবে প্রোভোস্ট্‌স কাপ জেতেন। ১৯৪৬ সালে নিখিল বঙ্গ সাহিত্য প্রতিযোগিতায় সর্বাধিক সংখ্যক পুরস্কার জেতেন। ছাত্রাবস্থাতেই এক অঙ্কের নাটক রাজার জন্মদিনে লিখেছিলেন, যা ছাত্র সংসদ মঞ্চস্থ করেছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকেই মুনীর চৌধুরী বামপন্থী রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়েন, ফলে তার পরীক্ষার ফলাফল এতে ব্যাহত হয়। বামপন্থী রাজনীতিতে অতিমাত্রায় সম্পৃক্ততার কারণে তাকে সলিমুল্লাহ হল থেকে বহিস্কার করা হয়। একই কারণে পিতার আর্থিক সাহায্য থেকেও তিনি বঞ্চিত হন। এসময় তিনি ঢাকা বেতার কেন্দ্রের জন্য নাটক লিখে আয় করতেন। বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ‌১৯৪৭ সালের ৬ই ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে যে প্রথম ছাত্রসভা হয়, তাতে তিনি বক্তৃতা করেন। পাকিস্তানের কমিউনিস্ট পার্টির কাজ ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পরপরই ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির বঙ্গীয় প্রাদেশিক কমিটির অধীনে পূর্ববঙ্গে (নববগঠিত পূর্ব পাকিস্তান) কাজকর্ম পরিচালনার জন্য একটি আঞ্চলিক (জোনাল) কমিটি গঠন করা হয়। এই জোনাল কমিটির সাত সদস্যের একজন ছিলেন মুনীর চৌধুরী। ১৯৪৮ সালের মার্চ মাসে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির দ্বিতীয় কংগ্রেসে মুনীর চৌধুরী যোগদান করেন। একই বছরের শেষের দিকে প্রগতি লেখক সংঘের সম্পাদক নির্বাচিত হন। শিক্ষকতা পর্ব ১৯৪৯ সালে মুনীর চৌধুরী খুলনার ব্রজলাল কলেজে ইংরেজির অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। সেখানে তিনি কিছুদিন বাংলাও পড়িয়েছিলেন। ঐ বছর মার্চে তিনি ঢাকায় এসে রাজনৈতিক তৎপরতার কারণে গ্রেপ্তার হন, তবে রাজনীতি না করার প্রতিশ্রুতিতে ছাড়া পান। একই বছর তিনি লিলি মীর্জাকে বিয়ে করেন। ১৯৫০ সালে তিনি ঢাকার জগন্নাথ কলেজে যোগ দেন এবং সে বছরই আগস্ট মাসে ইংরেজির অস্থায়ী প্রভাষক হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিযুক্তি লাভ করেন। কিন্তু রাজনীতি থেকে বেশি দূরে থাকতে পারেন নি। ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে গিয়ে পুলিশের ধাক্কা খেয়ে পড়ে যান। ২৬শে ফেব্রুয়ারি শিক্ষকদের প্রতিবাদ সভা আহ্বান করতে গিয়ে গ্রেফতার হন ও তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়। এসময় প্রায় দুই বছর তিনি দিনাজপুর ও ঢাকা জেলে বন্দী জীবনযাপন করেন। বন্দী অবস্থায় ১৯৫৩ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি কারাবন্দীদের অভিনয়ের জন্য লেখেন কবর নামের একাঙ্কিকা। ১৯৫৩ সালে বামপন্থী রণেশ দাশগুপ্ত জেলখানাতে ২১ ফেব্রুয়ারি উৎযাপনের লক্ষে মুনীর চৌধুরীকে একটি নাটক লেখার অনুরোধ জানান। এই অনুরোধের ভিত্তিতে তিনি ঐ নাটকটি রচনা করেন। এ নাটকটি তার শ্রেষ্ঠ নাটক হিসেবে খ্যাত এবং এর প্রথম মঞ্চায়ন হয় জেলখানার ভেতরে, যাতে কারাবন্দীরাই বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। সঙ্গী কারাবন্দী অধ্যাপক অজিত গুহের কাছ থেকে তিনি প্রাচীন ও মধ্য যুগের বাংলা সাহিত্যের পাঠ গ্রহণ করেন, কারাগারে থেকেই ১৯৫৩ সালে বাংলায় প্রাথমিক এম এ পরীক্ষা দেন ও প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অধিকার করেন। ১৯৫৪ সালে পূর্ব পাকিস্তানে যুক্তফ্রন্ট সরকার ক্ষমতায় আসলে তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পান। ১৯৫৪ সালে নিরাপত্তা বন্দী থাকা অবস্থায় এম এ শেষ পর্ব পরীক্ষা দিয়ে তিনি কৃতিত্বের সাথে বাংলায় মাস্টার্স ডিগ্রি পাস করেন। ১৯৫৪ সালের ১৫ই নভেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজির অস্থায়ী প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৫৫ সালের জানুয়ারিতে মুহম্মদ আবদুল হাইয়ের প্রচেষ্টায় বাংলা বিভাগে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন এবং আগস্ট মাসে বাংলা বিভাগে সার্বক্ষণিক চাকুরি লাভ করেন। ১৯৫৬ সালের এপ্রিল মাসে তিনি বাংলার প্রভাষক হিসেবে চাকুরি স্থায়ী করেন। ১৯৫৬ সালের শেষ দিকে রকাফেলার বৃত্তি নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যান এবং ১৯৫৮ সালে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভাষাতত্ত্বে আরও একটি মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। সে বছর সেপ্টেম্বরে দেশে ফিরে আসেন। ১৯৬২ সালে অস্থায়ী রিডার পদে নিযুক্ত হন। ১৯৬৯ সালে মুহম্মদ আবদুল হাই অকালে মৃত্যুবরণ করলে তার স্থানে মুনীর চৌধুরী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রধান হন। ১৯৭০ সালের ফেব্রুয়ারিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত একটি ভাষাতাত্ত্বিক সম্মেলনে যোগ দিতে যান। রাজনৈতিক জীবন মুনীর চৌধুরী ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করে পাকিস্তান সরকারের হাতে বন্দী হন। বন্দী থাকা অবস্থায় তিনি তার বিখ্যাত নাটক কবর রচনা করেন (১৯৫৩)। পঞ্চাশ ও ষাটের দশকের যে কোন ধরনের সংস্কৃতিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন সোচ্চার। ১৯৬৬ সালে রেডিও ও টেলিভিশনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গান প্রচারে পাকিস্তান সরকারের নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদ করেন। ১৯৬৮ সালে পাকিস্তান সরকার বাংলা বর্ণমালাকে রোমান বর্ণমালা দিয়ে সংস্কারের উদ্যোগ নিলে তিনি এর প্রতিবাদ করেন। ১৯৭১ সালে অসহযোগ আন্দোলনের সময়ে সে আন্দোলনের সমর্থনে সিতারা-ই-ইমতিয়াজ খেতাব বর্জন করেন। বাংলা টাইপরাইটার ও মুনীর অপ্‌টিমা মুনীর চৌধুরী ১৯৬৫ সালে কেন্দ্রীয় বাঙলা উন্নয়ন বোর্ডের উদ্যোগে বাংলা টাইপরাইটারের জন্য উন্নতমানের কী-বোর্ড উদ্ভাবন করেন, যার নাম মুনীর অপ্‌টিমা। An Illustrated Brochure on Bengali Typewriter (1965) শীর্ষক পুস্তিকায় তিনি তার পরিকল্পনা ব্যাখ্যা করেন এবং এই নতুন টাইপরাইটার নির্মাণের লক্ষ্যে বেশ কয়েকবার তৎকালীন পূর্ব জার্মানিতে যান। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অবদান মুনীর চৌধুরী ১৯৫৩ সালে কারাবন্দী অবস্থায় কবর নাটকটি রচনা করেন। ১৯৫৮ সালে প্রকাশিত পূর্ববঙ্গ সরকারের ভাষা-সংস্কার কমিটির রিপোর্টের অবৈজ্ঞানিক ও সাম্প্রদায়িক বিষয়বস্তুর তীব্র সমালোচনা করে মুনীর চৌধুরী পূর্ববঙ্গের ভাষা কমিটির রিপোর্ট আলোচনা প্রসঙ্গে একটি দীর্ঘ ভাষাতাত্ত্বিক প্রবন্ধ লেখেন। ১৯৫৯ সালের ২৭শে এপ্রিল প্রবন্ধটি বাংলা একাডেমিতে পঠিত হয়। কিন্তু মুসলিম ধর্মবিশ্বাসে আঘাতের অভিযোগে সামরিক সরকারের কাছে তাকে কৈফিয়ৎ দিতে হয়। এরপর তিনি সাহিত্যে মনোনিবেশ করেন ও বেশ কিছু মৌলিক ও অনুবাদ নাটক লেখেন। অনেকগুলি প্রবন্ধের সংকলনও প্রকাশ করেন। মীর মানস (১৯৬৫) প্রবন্ধ সংকলনের জন্য দাউদ পুরস্কার এবং পাক-ভারত যুদ্ধ সম্পর্কে লেখা সাংবাদিকতাসুলভ রচনা-সংকলন রণাঙ্গন (১৯৬৬)-এর জন্য সিতারা-ই-ইমতিয়াজ উপাধি লাভ করেন। ১৯৬৭-৬৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে বাংলা বর্ণমালা ও বানান-পদ্ধতির সংস্কার প্রচেষ্টার প্রতিরোধের উদ্দেশ্যে প্রকাশিত একটি রিপোর্টে প্রবন্ধ লেখেন এবং পরবর্তীতে এ বিষয়ক বিতর্কে সক্রিয় অংশ নেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ ও মৃত্যু ১৯৭১ সালের মার্চে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে মুনীর চৌধুরী ফিরে আসার কিছুকাল পরেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। তার কিশোর ছেলে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে চলে যায়। এসময় তিনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আদেশে মে-জুন মাসে ইংরেজি বিভাগের প্রধান হিসেবে এবং জুলাই মাস থেকে কলা অনুষদের ডীন হিসেবে কাজ করেন। ১৯৭১ সালের ১৪ই ডিসেম্বর মুনীর চৌধুরীকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীদের সহযোগী আল-বদর বাহিনী তার বাবার বাড়ি থেকে অপহরণ করে ও সম্ভবত ঐদিনই তাকে হত্যা করে। উল্লেখযোগ্য রচনাবলি নাটক রক্তাক্ত প্রান্তর (১৯৬২): পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধের কাহিনী এর মূল উপজীব্য। এতে তিনি যুদ্ধবিরোধী মনোভাব প্রকাশ করেন। নাটকটির জন্য তিনি ১৯৬২ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার পান। চিঠি (১৯৬৬) কবর (রচনাকাল ১৯৫৩, প্রকাশকাল ১৯৬৬) পূর্ববাংলার প্রথম প্রতিবাদী নাটক। নাটকটির পটভূমি হলো ১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলন। দণ্ডকারণ্য (১৯৬৬): রূপকাশ্রয়ী নাটক। পলাশী ব্যারাক ও অন্যান্য (১৯৬৯): মানুষ(১৯৪৭): ১৯৪৬ সালের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার কাহিনী এর মূল উপজীব্য। নষ্ট ছেলে(১৯৫০): রাজনৈতিক চেতনাসমৃদ্ধ নাটক। দণ্ডকারণ্য(১৯৬৬): তিনটি নাটকের সমন্বয়। এতে দণ্ড, দণ্ডধর, দণ্ডকারণ্যথাম্ব|মুনীর চৌধুরীর তুলনামূলক সমালোচনা গ্রন্থের প্রথম সংস্করণের প্রচ্ছদ। রাজার জন্মদিন(১৯৪৬) চিঠি(১৯৬৬) পলাশী ব্যারাক ও অন্যান্য(১৯৬৯) অনুবাদ নাটক কেউ কিছু বলতে পারে না (১৯৬৯): জর্জ বার্নার্ড শর You never can tell-এর বাংলা অনুবাদ। রূপার কৌটা (১৯৬৯): জন গলজ্‌ওয়র্দির The Silver Box-এর বাংলা অনুবাদ। মুখরা রমণী বশীকরণ (১৯৭০): উইলিয়াম শেক্‌স্‌পিয়ারের Taming of the Shrew-এর বাংলা অনুবাদ। প্রবন্ধ গ্রন্থ ড্রাইডেন ও ডি.এল. রায় (১৯৬৩): পরে তুলনামূলক সমালোচনা গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত মীর মানস (১৯৬৫) রণাঙ্গন (১৯৬৬): সৈয়দ শামসুল হক ও রফিকুল ইসলামের সাথে একত্রে। তুলনামূলক সমালোচনা (১৯৬৯) বাংলা গদ্যরীতি (১৯৭০) অন্যান্য An Illustrated Brochure on Bengali Typewriter (1965) ১৯৮২ সাল থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত বাংলা একাডেমি থেকে আনিসুজ্জামানের সম্পাদনায় চার খণ্ডে মুনীর চৌধুরী রচনাবলি প্রকাশিত হয়। প্রথম খণ্ডে (১৯৮২) মৌলিক নাট্যকর্ম, দ্বিতীয় খণ্ডে (১৯৮৪) অনুবাদ নাট্যকর্ম, তৃতীয় খণ্ডে (১৯৮৪) সমালোচনামূলক গ্রন্থাবলি এবং চতুর্থ খণ্ডে (১৯৮৬) ছোটগল্প, প্রবন্ধ, পুস্তক সমালোচনা ও আত্মকথনমূলক রচনা প্রকাশিত হয়। পুরস্কার ও সম্মাননা বাংলা একাডেমি পুরস্কার (নাটক), ১৯৬২ দাউদ পুরস্কার (মীর মানস গ্রন্থের জন্য) ১৯৬৫ সিতারা-ই-ইমতিয়াজ (১৯৬৬) (পরবর্তীতে বর্জন করেন) স্বাধীনতা পুরস্কার (সাহিত্য) ১৯৮০ অনুসন্ধান ইঞ্জিন গুগল তার ৯৫তম জন্মদিনে তাকে নিয়ে ডুডল দিনব্যাপী প্রদর্শন করে। তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ বাংলাপিডিয়ায় মুনীর চৌধুরী বিষয়শ্রেণী:বাংলাদেশী শিক্ষাবিদ বিষয়শ্রেণী:১৯২৫-এ জন্ম বিষয়শ্রেণী:১৯৭১-এ মৃত্যু বিষয়শ্রেণী:১৯৭১-এ শহীদ বুদ্ধিজীবী বিষয়শ্রেণী:বাংলাদেশী ভাষাবিজ্ঞানী বিষয়শ্রেণী:বাংলাদেশী নাট্যকার বিষয়শ্রেণী:ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষার্থী বিষয়শ্রেণী:ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী বিষয়শ্রেণী:ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বিষয়শ্রেণী:বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার বিজয়ী বিষয়শ্রেণী:নোয়াখালী জেলার ব্যক্তি বিষয়শ্রেণী:মানিকগঞ্জের ব্যক্তিত্ব বিষয়শ্রেণী:বাংলাদেশী পাঠ্যপুস্তক লেখক বিষয়শ্রেণী:সাহিত্যে স্বাধীনতা পুরস্কার বিজয়ী বিষয়শ্রেণী:বাংলাদেশী প্রাবন্ধিক বিষয়শ্রেণী:বাংলাদেশী অনুবাদক বিষয়শ্রেণী:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে নিহত ব্যক্তি
মুনীর চৌধুরী
আধুনিকীকরণ-কে সে-সব সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক প্রক্রিয়া ও সম্পর্কের একটি সেট হিসেবে ধরা যেতে পারে, যেগুলো আধুনিক জীবন সম্পর্কে ইউরোপীয় ধ্যানধারণার ওপর ভিত্তি করে ১৭ শতক থেকে গড়ে উঠেছে। উৎপত্তি ১৯শ শতাব্দীর শেষের দিকে সমাজবিজ্ঞানের তত্ত্ব, সামাজিক ডারউইনবাদ-এ মানব সমাজের বিবর্তনের নিয়মাবলী বিবৃত হয়েছে। বর্তমান আধুনিকীকরণ তত্ত্ব মূলত জার্মান সমাজবিজ্ঞানী মাক্স ভেবার (১৮৬৪-১৯২০) এর প্রাসঙ্গিতকতা ও অসঙ্গতার ভূমিকা ধারণার সাথে সাথে বিকাশ লাভ করে। ভেবারের ধারণা আধুনিকীকরণের মূল রচনা করে এবং এই ধারণাকে জনপ্রিয় করে তুলেন হার্ভার্ডের সমাজবিজ্ঞানী থেলকট পার্সনস (১৯০২-১৯৭৯), যিনি ওয়েবারের কাজকে ১৯৩০ এর দশকে ইংরেজিতে অনুবাদ করেন এবং তার ব্যাখ্যা প্রদান করেন। প্রযুক্তি নতুন প্রযুক্তি সামাজিক পরিবর্তনের অন্যতম কারণ। আধুনিকীকরণের পর থেকে সামাজিক পরিবর্তনে কৃষিভিত্তিক সমাজ থেকে শিল্পায়নে অগ্রসর হয়েছে। ফলে প্রযুক্তিগত দিকে নজর দেওয়া জরুরী হয়ে পড়ে। নতুন প্রযুক্তি সমাজ পরিবর্তন করে না। বরং প্রযুক্তিগত কারণে সামাজিক পরিবর্তন হয়। আরও দেখুন বিশ্বায়ন ভোক্তাবাদ তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ বিষয়শ্রেণী:সমাজবিজ্ঞান বিষয়শ্রেণী:উন্নয়ন অধ্যয়ন বিষয়শ্রেণী:আধুনিকতা
আধুনিকীকরণ
জব চার্নক (১৬৩০ -১০ জানুয়ারি, ১৬৯৩) ১৭শ শতকের একজন ইংরেজ ব্যবসায়ী। কোম্পানির কাসিমবাজার কারখানায় জব চার্নক ১৬৫৮ খ্রিস্টাব্দে একজন নিম্নপদস্থ ব্যবসায়ী হিসেবে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি তে যোগদান করেন। যখন ১৬৮৬-৯০ খ্রিস্টাব্দের ইঙ্গ-মুগল যুদ্ধ শুরু হয় তখন তিনি কোম্পানির হুগলি বসতির প্রধান ছিলেন। বাংলা রণাঙ্গনে পরাজিত হলে শীঘ্র ইংরেজদের তাড়িয়ে দেওয়া হয় এবং তারা ব্যবসায়ে পাততাড়ি গুটাতে বাধ্য হয়ে মাদ্রাজে সরে যায়। কিন্তু যুদ্ধ শেষ হলে শায়েস্তা খান এর উত্তরাধিকারী সুবাহদার ইবরাহিম খান বাংলায় ব্যবসায়-বাণিজ্য পুনরায় শুরু করতে তাদের ডেকে পাঠান। দুটি প্রধান বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছতে জব চার্নক সুবাহদারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেন। একটি ছিল ইংরেজদের বসতি হুগলি থেকে সুতানটিতে স্থানান্তরের প্রস্তাবে সরকারকে অবশ্যই রাজি হতে হবে। দ্বিতীয়ত, বার্ষিক পূর্বনির্দিষ্ট ৩০০০ টাকা কর পরিশোধের বিনিময়ে কোম্পানিকে বাংলায় শুল্কমুক্ত বাণিজ্যের অনুমতি প্রদানকারী একটি ফরমানের দ্বারা সুবাহদার তাদেরকে আনুকূল্য করবেন। সুবাহদার ইবরাহিম খান তাদের উত্থাপিত উভয় পরিকল্পনা মেনে নিতে সম্মত হন। এভাবে উপসাগরীয় পরিষদের প্রধান হিসেবে জব চার্নক ১৬৯০ খ্রিস্টাব্দের ২৪ আগস্ট তারিখে হুগলি নদীর তীরে অবস্থিত জলাভূমি বেষ্টিত সুতানটির নির্বাচিত জমিতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কুঠি স্হাপন করেন । তার মৃত্যুর পর তার জামাতা ক্যাপ্টেন চার্লস আয়ারকে সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবার ১৬৯৮ সালের ১১ই নভেম্বর কলকাতা - সুতানুটি - গোবিন্দপুর গ্রাম তিনটির প্রজাস্বত্ব ১২০০ টাকায় একটি দলিলের দ্বারা দান করেন । সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবার এতদঞ্চলের জায়গিরদার ছিলেন । দলিলটি সই হয় সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবারের আটচালা বাড়িতে যা আজও পর্যটকদের কাছে দর্শনীয় । thumb|জব চার্নকের সমাধিস্তম্ভ চার্নক স্থানীয় একটি নিম্নবর্গীয় মেয়েকে বিয়ে করেন, যাকে তিনি পুনঃনামকরণ করেন মারিয়া। ইংরাজদের রচিত কাহিনী অনুযায়ী, চার্নক তাকে সতীদাহের চিতা থেকে উদ্ধার করে বিয়ে করেন। মারিয়ার গর্ভে তার চারটি কন্যার জন্ম হয়; বাংলায় বসবাসরত ইউরোপীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে তাদের বিয়ে হয়। চার্নক ১৬৯৩ খ্রিস্টাব্দের ১০ জানুয়ারি কলকাতায় ইহলোক ত্যাগ করেন। তাকে সেন্ট জন দিসিসন্স চার্চে সমাধীত করা হয়। জব চার্নককে ঔপনিবেশিক ইতিহাসকারগণ কলকাতার প্রতিষ্ঠাতা বলতেন। ২০০৩ সালে কলকাতা উচ্চন্যায়ালয় এক ঐতিহাসিক আদেশে এই তথ্য ভুল ঘোষণা করেন। তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ Charnock's article at the website of William Carey University Job Charnock's memorial in Calcutta বিষয়শ্রেণী:১৬৯৩-এ মৃত্যু বিষয়শ্রেণী:কলকাতার ইতিহাস বিষয়শ্রেণী:ভারতের ইতিহাস বিষয়শ্রেণী:কলকাতার ব্যক্তি
জব চার্নক
পৃথিবীর দক্ষিণ ভাগে অবস্থিত যে স্থানে পৃথিবীর আহ্নিক গতির অক্ষ ভূপৃষ্ঠকে ছেদ করে, সেই স্থান হল পৃথিবীর দক্ষিণ মেরু বা ভৌগোলিক দক্ষিণ মেরু বা কুমেরু। দক্ষিণ মেরু অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশে অবস্থিত পৃথিবীর দক্ষিণতম বিন্দু। এই স্থান পৃথিবীর উত্তর প্রান্তে অবস্থিত উত্তর মেরুর ঠিক বিপরীতে অবস্থিত। পৃথিবীর দক্ষিণ মেরুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী গবেষণাগার আমুন্ডসেন-স্কট দক্ষিণ মেরু কেন্দ্র অবস্থিত। ভূগোল left|thumb|ভৌগোলিক দক্ষিণ মেরু পৃথিবীর দক্ষিণ গোলার্ধের যে স্থানে পৃথিবীর আহ্নিক গতির অক্ষ ভূপৃষ্ঠকে ছেদ করে, সেই স্থানটি হল পৃথিবীর ভৌগোলিক দক্ষিণ মেরু। এই স্থানের ভৌগোলিক স্থানাঙ্ক ৯০° দক্ষিণ। এই স্থানের দ্রাঘিমা অসংজ্ঞাত হওয়ায় একে ০° ধরে নেওয়া হয়। দক্ষিণ মেরুতে সমস্ত দিক উত্তর দিকে নির্দেশ করে। এই কারণে দক্ষিণ মেরুতে মূল মধ্যরেখার সাপেক্ষে দিক নির্ণয় করা হয়। পূর্বে দক্ষিণ মেরু পৃথিবীর দক্ষিণ গোলার্ধের সমুদ্রে অবস্থান করলেও মহাদেশীয় প্রবাহের ফলে বর্তমানে অ্যান্টার্কটিকায় অবস্থিত। অ্যান্টার্কটিকার এই স্থানটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২,৮৩৫ মিটার বা ৯,৩০১ ফুট ওপরে ২,৭০০ মিটার পুরু বরফে ঢাকা মালভূমিতে অবস্থিত। তাই এই স্থানের ভূপৃষ্ঠ সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে মাত্র ১০০ মিটারের মতো উঁচু। এই স্থান থেকে সবচেয়ে নিকটবর্তী সমুদ্র ১৩০০ কিলোমিটার দূরে তিমি উপসাগর। মেরুর বরফ মূল মধ্যরেখার থেকে ৩৭° থেকে ৪০° পশ্চিমের মধ্যে ওয়েডেল সাগরের দিকে বছরে ১০ মিটার করে প্রবাহিত হচ্ছে। সময় যেহেতু দক্ষিণ মেরুতে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত বছরে একবার হয় এবং পৃথিবীর সকল দ্রাঘিমা রেখা এই বিন্দুতে এসে মিলিত হয়, সেহেতু দক্ষিণ মেরুকে কোন নির্দিষ্ট সময় অঞ্চলে অন্তর্ভুক্ত করা যায় না। কিন্তু প্রায়োগিক ও প্রাত্যাহিক ব্যবহারের জন্য আমুন্ডসেন-স্কট দক্ষিণ মেরু কেন্দ্র নিউজিল্যান্ড সময়ের সাহায্য নেয়। আবহাওয়া মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দক্ষিণ মেরুতে সূর্য দেখতে পাওয়া যায় না। শুধুমাত্র মে থেকে জুলাই মাস অব্দি সামান্য গোধূলির আলো পাওয়া যায়। সেপ্টেম্বর থেকে মার্চ অব্দি পুরো গ্রীষ্মকাল সূর্য দিগন্তের ওপরে অবস্থান করে ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে ঘোরে বলে মনে হয়। দিগন্তের ওপরে সূর্য থাকলেও আকাশে নিচের দিকেই থাকে, ডিসেম্বর মাসে সর্বোচ্চ ২৩.৫° অব্দি ওপরে ওঠে। অধঃপাতিত সূর্যালোক বরফের দ্বারা প্রতিফলিত হয়ে যায়। সূর্য থেকে প্রাপ্ত উষ্ণতার অভাব ও প্রায় ২,৮০০ মিটার ঊচ্চতার কারণে দক্ষিণ মেরুতে পৃথিবীর অন্যতম শীতলতম আবহাওয়া লক্ষ করা যায়। দক্ষিণ মেরুতে বছরের মধ্যে ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে সব চেয়ে বেশি তাপমাত্রা থাকে [গড় ] মার্চের শেষে সূর্যাস্ত ও সেপ্টেম্বরের শুরুতে সূর্যোদয়ের সময় তাপমাত্রা নেমে হয়। শীতকালে গড় তাপমাত্রা থাকে। ২০১১ খ্রিষ্টাব্দের ২৫শে ডিসেম্বর সর্বকালীন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা এবং ১৯৮২ খ্রিষ্টাব্দের ২৩শে জুন সর্বকালীন সর্বনিম্ন পাওয়া যায়। দক্ষিণ মেরুর আবহাওয়া শুষ্ক। বাতাসের আপেক্ষিক আর্দ্রতা প্রায় শূন্যের কাছাকাছি। বৃষ্টিপাত প্রায় কখনোই হয়না বললেই চলে। কিন্তু প্রচন্ড গতিবেগে প্রবাহিত হাওয়ায় তুষারপাত হয় এবং প্রতি বছর হারে তুষার জমা হয়। তথ্যসূত্র বিষয়শ্রেণী:অ্যান্টার্কটিকা বিষয়শ্রেণী:পৃথিবী বিষয়শ্রেণী:পৃথিবীর চরম বিন্দু
দক্ষিণ মেরু
উচ্চচাপ অঞ্চলের বায়ু নিম্নমুখে ঘুরতে ঘুরতে চারপাশের নিম্নচাপবিশিষ্ট অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়লে তাকে প্রতীপ ঘূর্ণিঝড় বলা হয়। তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ Intertropical Convergence Zone photo - NASA Goddard Space Flight Center বিষয়শ্রেণী:আবহাওয়া বিষয়শ্রেণী:ঘূর্ণিঝড়
প্রতীপ ঘূর্ণিঝড়
পুনর্নির্দেশ ভিসুভিয়াস পর্বত
ভিসুভিয়াস
আজমিরীগঞ্জ উপজেলা বাংলাদেশের হবিগঞ্জ জেলার একটি প্রশাসনিক এলাকা। অবস্থান ও আয়তন “ভাটি অঞ্চলের রাজধানী” হিসেবে খ্যাত আজমিরীগঞ্জ উপজেলা বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে অবস্থিত। এই উপজেলাকে ঘিরে রয়েছে কিশোরগঞ্জ, সুনামগঞ্জ জেলার অন্যান্য উপজেলা। এর উত্তরে শাল্লা উপজেলা, পূর্বে ও দক্ষিণে বানিয়াচং উপজেলা এবং পশ্চিমে ইটনা উপজেলা। থাম্ব|আজমিরিগঞ্জ-হবিগঞ্জ হাইওয়ে ইতিহাস ১৯০৭ সালে আসাম সরকার এর অধীনে আজমিরীগঞ্জ থানায় পরিণত হয়। ১৯৮৩ সালে আজমিরীগঞ্জ থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয়।শহরটিতে বেশ কয়েকটি কাঠামোগত সুন্দর বাড়ি রয়েছে, যা ১৮০০ সালের আগে থেকেই ছিল, ত্রিপুরার মহারাজা দ্বারা এইগুলির অর্থায়ন করা হয়েছিল। এই উপজেলার জলসুখাতে রয়েছে অনেক জমিদার বাড়ি। যার ধ্বংসাবশেষ এখনো রয়েছে। গোপী নাথ আখড়াকে কেন্দ্র করে এই উপজেলা থেকেই ঘাটুগানের উৎপত্তি হয়েছিল বলে সিলেটের ইতিবৃত্ত গ্রন্থ থেকে জানা যায়। নামকরণ আযদাম> আজমার্দীন> আয়েজমাদাম> আবদাবাদ> আজমিরীগঞ্জ। উপমহাদেশের বিশ্ববিখ্যাত সুফী সাধক সুলতানুল হিন্দ খাজা গরীবে নেওয়াজ হযরত খাজা মঈন উদ্দিন চিশতী আজমিরী (রহ:)র সুযোগ্য প্রতিনিধি কুতুবে রব্বানী হযরত শাহ সুফী আলহাজ্ব হাফিজ খাজা সৈয়দ মোহাম্মদ ইসহাক চিশতী (রহ:) প্রায় দেড় শতাব্দী পূর্বে আজমির শরীফের প্রতিনিধি হিসাবে এ প্রাচীন জনপদে পবিত্র ইসলাম ধর্মের প্রচার প্রসারের লক্ষে সুদূর ভারত হতে হিজরত করে তশরীফ এনেছিলেন। তার পবিত্র প্রচারনায় এবং অসাম্প্রদায়িক পবিত্র বাণীর প্রভাবে ধীরে ধীরে জনসাধারণ দ্বীন ইসলামের সুশীতল ছায়ায় আশ্রয় লাভ করে এবং সর্বসাধারণ তাকে আজমিরী বাবা বলে অভিহিত করেন। পরবর্তী সময়ে আজমিরী বাবা কুতুবে রব্বানী আ্উলিয়ায়ে কামিল হযরত শাহ সুফী আলহাজ্ব খাজা হাফিজ সৈয়দ মোহাম্মদ ইসহাক চিশতী (র:)এর পবিত্র স্মৃতির স্মরণে সরকারী গেজেট নোটিফিকেশনের মাধ্যমে এ উপজেলার নাম আজমিরীগঞ্জ নামকরণ করা হয়। মুক্তিযুদ্ধে আজমিরীগঞ্জ আজমিরীগঞ্জের বদলপুর অপারেশন ছিল মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে একটি একটি বিশাল সাফল্য।বদলপুরে শত্রুসেনারা দাস পার্টির প্রতিরোধের মুখে পাকসেনারা শক্তি বৃদ্ধি করতে বাধ্য হয়। গুলি ছোড়ার জন্য হেলিকপ্টারও ব্যবহার করা হয়।১৬ নভেম্বর মুক্তিযোদ্ধা ও পাকবাহিনীদের মধ্যে দীর্ঘ আঠারো ঘণ্টার সম্মুখযুদ্ধ সংঘটিত হয়।এই যুদ্ধে দাস পার্টির কমান্ডার জগৎজ্যোতি দাস বীর বিক্রম শহীদ হয়।এছাড়া, পাকবাহিনী নির্দোষ ১১ জন নিরীহ গ্রামবাসীকে হত্যা করে। প্রশাসনিক এলাকা আজমিরীগঞ্জ উপজেলায় বর্তমানে ১টি পৌরসভা ও ৫টি ইউনিয়ন রয়েছে। সম্পূর্ণ উপজেলার প্রশাসনিক কার্যক্রম আজমিরীগঞ্জ থানার আওতাধীন। পৌরসভা: আজমিরীগঞ্জ ইউনিয়নসমূহ: ১নং আজমিরীগঞ্জ সদর ২নং বদলপুর ৩নং জলসুখা ৪নং কাকাইলছেও ৫নং শিবপাশা ভৌগোলিক উপাত্ত ভূপ্রকৃতি থাম্ব|কুশিয়ারা নদী হাওর বেষ্টিত ভাটি বাংলার একটি জনপদ এই আজমিরীগঞ্জ। যার পশ্চিম পাশ ঘেষে বয়ে গেছে সুরমা-কুশিয়ারার মিলিত স্রোত কালনি-কুশিয়ারা- ভেড়ামোহনা। বছরের অর্ধেক সময় জলমগ্র থাকে অধিকাংশ এলাকা। দোআশ ও এটেল মাটি সাংষ্কৃতিক বৈশিষ্ঠ্য ভাষা এখানে ভাষার মূল বৈশিষ্ট্য বাংলাদেশের অন্যান্য উপজেলার মতই, তবুও কিছুটা বৈচিত্র্য খুঁজে পাওয়া যায়। এখানে সিলেটি ভাষার সাথে সাথে বিভিন্ন আদিবাসীদের প্রচলিত ভাষাও প্রচলিত রয়েছে। উৎসব প্রতি বৎসর ওরশ, বৈশাখীী, মেলা,নৌকা বাইছ অনুষ্ঠিত হয়। খেলাধুলা অতিতে হাডুডু, দারাগুড়ি,ননদাই,কানামাছি,খেলার রেওয়াজ ছিল। বর্তমানে ফুলবল খেলার প্রচলন আছে। জনসংখ্যার উপাত্ত ২০০১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী,আজমিরীগঞ্জের জনসংখ্যা ৯৯,২৪০ জন (প্রায়)।জনসংখ্যার পুরুষ ৫০,১৬০ জন (প্রায়) (৫১.১১%) এবং নারী ৪৯,০৮০ জন (প্রায়) (৪৮.৮৯%)। জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ৪৪৩ জন। শিক্ষা আজমিরীগঞ্জের শিক্ষার হার ৩৬%।এখানে ৫৪টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়,৮ টি উচ্চ বিদ্যালয়,১ টি দাখিল মাদ্রাসা,২ টি কলেজ রয়েছে।১৮৭৬ সালে জলসুখা কৃষ্ণ গোবিন্দ পাবলিক হাইস্কুল এবং ১৯৩০ সালে আজমিরীগঞ্জ এমালগামেটেড বীরচরণ(এ.বি.সি.) সরকারী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। অর্থনীতি আজমিরীগঞ্জ এর প্রধান প্রাকৃতিক সম্পদ হলো মাছ ও ধান। এ উপজেলায় রয়েছে বৃহৎ ফিশ ইন্ড্রাসট্রিস। এ উপজেলার মানুষ মূলত ধান ও মাছের উপর নির্ভরশীল। কৃতী ব্যক্তিত্ব শিক্ষাবিদ সতীশ চন্দ্র রায় (১৮৮৮-১৯৬০) আসামের জনশিক্ষা পরিচালক ও ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দর্শন বিভাগের রিডার ছিলেন। পরে বেশ কয়েকটি কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন। তার প্রকাশিত গ্রন্হের সংখ্যা প্রায় ২০ টি। জগৎজ্যোতি দাস -(১৯৪৯-১৯৭১) স্বাধীনতা যুদ্ধে বীর বিক্রম খেতাবপ্রাপ্ত একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। বিবিধ আরও দেখুন হবিগঞ্জ জেলা; সিলেট বিভাগ; বাংলাদেশের উপজেলাসমূহ। তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ আজমিরীগঞ্জ উপজেলা - জাতীয় তথ্য বাতায়ন বিষয়শ্রেণী:আজমিরীগঞ্জ উপজেলা বিষয়শ্রেণী:হবিগঞ্জ জেলার উপজেলা
আজমিরীগঞ্জ উপজেলা
আলমডাঙ্গা উপজেলা বাংলাদেশের চুয়াডাঙ্গা জেলার একটি প্রশাসনিক এলাকা । অবস্থান ও আয়তন ৩৬৫ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের আলমডাঙ্গা উপজেলাটি খুলনা বিভাগের চুয়াডাঙ্গা জেলার অন্তর্ভুক্ত। আলমডাঙ্গা উপজেলা ২৩°৩৭' উত্তর অক্ষাংশ থেকে ২৩°৫০' উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮°৪৭' পূর্ব দ্রাঘিমা থেকে ৮৯°০০' পূর্ব দ্রাঘিমার মধ্যে অবস্থিত। এর উত্তর পার্শ্বে কুষ্টিয়া জেলার মিরপুর ও মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলা, পূর্বে কুষ্টিয়া সদর উপজেলা ও ঝিনাইদহ জেলার হরিণাকুন্ডু উপজেলা, পশ্চিমে দামুড়হুদা উপজেলা ও মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলা এবং দক্ষিণে চুয়াডাঙ্গা সদর ও দামুড়হুদা উপজেলা অবস্থিত। ইতিহাস নামকরণ জনশ্রুতি আছে, এক বানভাসি বৃদ্ধা নান্দায় ভাসতে ভাসতে আলমডাঙ্গার কোন এক স্থানে উঠে এসে বলেছিলেন, ‘আলাম ডেঙায়!’ আর সেই থেকে এই জনপদের নাম হয়েছিল ‘আলামডেঙা’, যা কালক্রমে আলমডাঙ্গা নামে পরিচিত পাই। তবে এটা অনেকটাই কিম্বদন্তী। আরেকটি মত আছে যেটা মোটামুটি গ্রহণযোগ্য। কথিত আছে আলমডাঙ্গার উপকণ্ঠে আসাননগর এলাকায় আলম ফকির নামে এক সাধক বাস করতেন। তাঁর নাম অনুসারে এই জায়গার নাম হয় আলমডাঙ্গা। আসাননগরের কিছু অংশ পার আলমডাঙ্গা নামে পরিচিত, যা আলম ফকির সম্পর্কীয় জনশ্রুতিকে কিছুটা হলেও সমর্থন করে। তবে আলম ফকিরের কোনো কবর বা মাজারের অস্তিত্ব পাওয়া যায় নি। মুক্তিযুদ্ধে আলমডাঙ্গা মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে তৎকালীন নেতৃবৃন্দ চুয়াডাঙ্গা জেলাকে বাংলাদেশের প্রথম রাজধানী ঘোষণা করে সরকার গঠন করার প্রক্রিয়া শুরু করলে এ অঞ্চলটি পাকিস্তানি বাহিনীর টার্গেট পয়েন্টে রুপান্তরিত হয়। ফলে এ অঞ্চলে হানাদার বাহিনীর সঙ্গে মুহুর্মুহু প্রতিরোধ ও সম্মুখ যুদ্ধ লেগেই থাকে। আলমডাঙ্গায় সংঘটিত গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধ গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য মুক্তিযুদ্ধগুলো হচ্ছে- ১. হাড়গাড়ী সুকচা, বাজিদপুর যুদ্ধ- ১৩ আগস্ট, ১৯৭১। এ যুদ্ধে ১জন শহীদ হন, ২. আলমডাঙ্গা সদরে সংঘটিত যুদ্ধ- ১২ নভেম্বর, ১৯৭১। এ যুদ্ধে ৪জন শহীদ হন। মুক্তিবার্তা (লাল কভার) অনুযায়ী বর্তমানে আলমডাঙ্গা উপজেলায় মোট মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যাঃ ৪৪৮ জন। প্রশাসনিক এলাকা আলমডাঙ্গা উপজেলায় ১টি পৌরসভা এবং ১৫ টি ইউনিয়ন রয়েছে । পৌরসভা আলমডাঙ্গা পৌরসভা ইউনিয়ন আইলহাস ইউনিয়ন ভাংবাড়িয়া ইউনিয়ন হারদী ইউনিয়ন কুমারী ইউনিয়ন বাড়াদী ইউনিয়ন গাংনী ইউনিয়ন খাদিমপুর ইউনিয়ন জেহালা ইউনিয়ন বেলগাছি ইউনিয়ন ডাউকী ইউনিয়ন জামজামী ইউনিয়ন নাগদাহ ইউনিয়ন খাসকররা ইউনিয়ন কালিদাসপুর ইউনিয়ন এবং চিৎলা ইউনিয়ন নদ-নদী আলমডাঙ্গা উপজেলার অন্যতম নদীঃ মাথাভাঙ্গা নদী, কুমার নদ, নবগঙ্গা নদী ভাটুই নদী ও মরা নদী। এছাড়াও এখানে রয়েছে ওয়াবদার খাল, জহুরুলনগর খাল, অণুপনগর খাল প্রভৃতি। এখানকার অন্যতম বিলগুলো হলোঃ গাড়িয়াল বিল, বোয়ালিয়া বিল, বলেশ্বরপুর-হাড়োকান্দি বিল, রাযশাবিল, বেলসাদপুর কাঁঠালিয়া বিল, মনিদহ বিল, চাকিলার বিল, খড়কাটি বিল প্রভৃতি। এছাড়া ঘোলদাড়ী বাজারে অবস্থিত নীলকুটিরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া কুটির নদী অন্যতম। শিক্ষা আলমডাঙ্গা উপজেলায় শিক্ষার হার ৫৫.১৪%। আলমডাঙ্গা উপজেলায় বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি প্রতিষ্ঠান হলো: আলমডাঙ্গা একাডেমী এরশাদপুর একাডেমী আলমডাঙ্গা আলিম মাদ্রাসা আলমডাঙ্গা পাইলট গাল্স হাই স্কুল আলমডাঙ্গা পাইলট হাই স্কুল আলমডাঙ্গা সরকারি ডিগ্রি কলেজ আলমডাঙ্গা মহিলা ডিগ্রি কলেজ এম.এস.জোহা কৃষি কলেজ নিগার সিদ্দিক ডিগ্রি কলেজ অর্থনীতি ১৮৬২ সালে কলকাতার সঙ্গে রেল যোগাযোগ স্থাপিত হলে রেল পথে পূর্ববঙ্গের সঙ্গে আলমডাঙ্গার যোগাযোগ সুবিধাজনক থাকায় ব্যবসা-বাণিজ্য অত্যন্ত সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে। বর্তমানে এখানে প্রায় ৩৫টি হাট-বাজার রয়েছে। এ সকল হাটে বিভিন্ন ধরনের পশু, কৃষি পণ্য, তামাক, ভুট্টা প্রভৃতি ব্যাপক আমদানী ঘটে থাকে। আলমডাঙ্গা উপজেলায় প্রায় ১৫০টি চালের মিল রয়েছে। মিলগুলো থেকে উৎপাদিত চাল উপজেলার অভ্যন্তরের চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে রপ্তানি হচ্ছে। এছাড়া আলমডাঙ্গা উপজেলার প্রায় ২৫% লোক ছোট বড় বিভিন্ন ধরনের ব্যবসার সাথে জড়িত। দর্শনীয় স্থান কুমারী সাহা জমিদার বাড়ি আলমডাঙ্গা বধ্যভূমি আলমডাঙ্গা দ্বিতল রেলস্টেশন কৃতী ব্যক্তিত্ব খোদা বক্স শাহ্ - একুশে পদকপ্রাপ্ত বাউল সাধক ও গীতিকার। আহাদ আলী মোল্লা - কাজী হায়দার স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত মকবুলার রহমান কবি গোলাম রহমান আ ফ ম সিরাজ শামজী আরও দেখুন চুয়াডাঙ্গা জেলা; খুলনা বিভাগ; বাংলাদেশের উপজেলাসমূহ। বাংলাদেশের জেলাসমূহ। তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ আলমডাঙ্গা উপজেলা - জাতীয় তথ্য বাতায়ন। বিষয়শ্রেণী:আলমডাঙ্গা উপজেলা বিষয়শ্রেণী:চুয়াডাঙ্গা জেলার উপজেলা
আলমডাঙ্গা উপজেলা
উলিপুর উপজেলা বাংলাদেশের কুড়িগ্রাম জেলার একটি প্রশাসনিক এলাকা। এটি দেশের বৃহৎ উপজেলা সমূহের মধ্যে একটি। অবস্থান ও আয়তন এই উপজেলাটি কুড়িগ্রাম জেলা সদর হতে ১৮ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত। ৫০৪.১৯ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই উপজেলাটির উত্তরে কুড়িগ্রাম সদর ও রাজারহাট উপজেলা, দক্ষিণে সুন্দরগঞ্জ ও চিলমারী উপজেলা, পূর্বে রৌমারী উপজেলা ও ভারতের আসাম রাজ্যের গোয়ালপাড়া জেলা এবং পশ্চিমে পীরগাছা ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলা। প্রশাসনিক এলাকা সমূহ সংসদীয় এলাকার সংখ্যা: ১টি, কুড়িগ্রাম - ৩ (উলিপুর - চিলমারী); পৌরসভার সংখ্যা: ১টি (উলিপুর পৌরসভা); ইউনিয়ন পরিষদের সংখ্যা: ১৩টি, দূর্গাপুর, বেগমগঞ্জ, বুড়াবুড়ি, বজরা, দলদলিয়া, ধামশ্রেণী, ধড়নিবাড়ি, গুনাইগাছ ইউনিয়ন, হাতিয়া, পান্ডুল, সাহেবের আলগা, তবকপুর, থেতরাই; গ্রামের সংখ্যা: ৩৯৬টি। জনসংখ্যার উপাত্ত জনসংখ্যা: মোট ৩,৫২,৪২০ জন, পুরুষ-১,৭৬,৭০০ জন, মহিলা-১,৭৫,৭২০ জন ভোটার সংখ্যা: মোট ১,৯৪,৬৯০ জন, পুরুষ ৯৮,৫০৭, মহিলা-৯৬,১৮৩ জন শিক্ষা শিক্ষার হার: ৫৫.৪০% কলেজের সংখ্যা: ১০টি (সরকারি- ১টি) হাইস্কুলের সংখ্যা: ৪৬টি (সরকারি- ১টি) মাদ্রাসার সংখ্যা: ৫৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা: ১১৮টি ২০১৩ জাতীয়করণকৃত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা: ১২৪টি অর্থনীতি মোট আবাদী জমির পরিমাণঃ ২৮,২৫০ একর অর্থকরী ফসলঃ ধান, গম, সবজি,আলু, পাঠ, আখ প্রভৃতি শিল্প প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাঃ মোট ৭৩০টি, কুটির শিল্প- ৭৩০টি পেশাঃ প্রাধান পেশা হচ্ছে কৃষি কাজ,তাছারাও আছে চাকরিজীবি,কামার,কুমার,জেলে ইত্যাদি। পাকা রাস্তাঃ ১৮০কি. মি কাচা রাস্তাঃ ৪৪৬ কি. মি. দর্শনীয় স্থান টুপামারী বিল; জালার পীরের দরগাহ; সাত দরগাহ মাজার; কাজীর মসজিদ; ঠাঁকুরবাড়ি মন্দির; ব্রহ্মপুত্র নদ; তিস্তা নদী; নাওডাঙ্গার বিল; দাগারকুটি বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধ; পাঁচপীর রেল স্টেশন, দুর্গাপুর; পানের বড়জ,পান্ডুল; কাঁচারী পুকর; কাশির খামার জমে মসজিদ; বিবিধ মসজিদের সংখ্যা: ৮৯৫টি মন্দিরের সংখ্যা: ২৪টি আরও দেখুন কুড়িগ্রাম জেলা; রংপুর বিভাগ। তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ কুড়িগ্রাম জেলা তথ্য বাতায়ন বিষয়শ্রেণী:রংপুর বিভাগের উপজেলা বিষয়শ্রেণী:উলিপুর উপজেলা
উলিপুর উপজেলা
হোসেনপুর উপজেলা বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জ জেলার অন্তর্গত। অবস্থান উত্তরে ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল উপজেলা, পূর্বে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা, দক্ষিণে পাকুন্দিয়া উপজেলা এবং পশ্চিমে ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁও উপজেলা অবস্থিত। প্রশাসনিক এলাকা হোসেনপুর উপজেলায় ০৬টি ইউনিয়ন পরিষদ রয়েছে। যথা- গোবিন্দপুর ইউনিয়ন, হোসেনপুর সিদলা ইউনিয়ন জিনারী ইউনিয়ন আড়াইবাড়ীয়া ইউনিয়ন শাহেদল ইউনিয়ন পুমদী ইউনিয়ন জনসংখ্যা এই উপজেলার মোট জনসংখ্যা ১,৯১,২০৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৯৩,৮২৩ জন এবং মহিলা ৯৭,৩৮৩ জন। উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব ত্রৈলোক্যনাথ চক্রবর্তী ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন অন্যতম ব্যক্তিত্ব এবং অগ্নিযুগের বিপ্লবী। বিচারপতি মোঃ মোজাম্মেল হোসেন বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত আইনবিদ এবং ২০তম প্রধান বিচারপতি। মির্জা আব্বাস একাধারে ঢাকার সাবেক মেয়র এবং গণপূর্তমন্ত্রী ছিলেন, বর্তমান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য। আবদুস সালাম, মুক্তিযোদ্ধা, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য। ঐতিহাসিক নিদর্শন ও ঐতিহ্য গাংগাটিয়া জমিদার বাড়ি (মানব বাবুর বাড়ি) তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ বিষয়শ্রেণী:হোসেনপুর উপজেলা
হোসেনপুর উপজেলা
নড়াইল জেলা বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের খুলনা বিভাগের একটি জেলা। ১৮৬১ সালে যশোর জেলার অধীন নড়াইল মহাকুমা প্রতিষ্ঠিত হয়। নড়াইল শব্দটি স্থানীয় লোকমুখে নড়াল নামে উচ্চারিত হয়। ঐ সময় নড়াইল সদর, লোহাগড়া ও কালিয়া থানার সমন্বয়ে এই মহাকুমা গঠিত হয়। ১৯৮৪ সালের ১লা মার্চ নড়াইল মহাকুমাকে জেলায় রুপান্তরিত করা হয় । ভৌগোলিক সীমানা ভৌগোলিক অবস্থানে নড়াইল জেলা ৮৯.৩১° দ্রাঘিমাংশে এবং ২৩.১১° অক্ষাংশে অবস্থিত। নড়াইল জেলার পশ্চিমে যশোর জেলার বাঘারপাড়া উপজেলা, যশোর সদর উপজেলা ও অভয়নগর উপজেলা , উত্তরে মাগুরা জেলার শালিখা উপজেলা ও মহম্মদপুর উপজেলা, পূর্বে ফরিদপুর জেলার আলফাডাঙ্গা উপজেলা, গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী উপজেলা ও গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা এবং দক্ষিণে বাগেরহাট জেলার মোল্লাহাট উপজেলা, খুলনা জেলার তেরখাদা উপজেলা , দিঘলিয়া উপজেলা ও ফুলতলা উপজেলা এবং যশোরের অভয়নগর উপজেলা। নড়াইলের ভূমি দক্ষিণ দিকে ঢালু। এ ভূ-প্রকৃতিকে তিনটি অঞ্চলে ভাগ করা যায়। উত্তর পশ্চিমের অপেক্ষাকৃত উচ্চভূমি, উত্তর ও পূর্ব অঞ্চলের মধুমতি নদী তীরবর্তী নিম্ন অঞ্চল এবং নবগঙ্গা নদী ও চিত্রা নদীর তীরবর্তী মধ্যম উচ্চতা বিশিষ্ট অঞ্চল। এই জেলার পাকা সড়ক ২৪৩ কি: মি:, আধাপাকা ৭৪ কি: মি:, কাচা রাস্তা ১৬১৫ কি: মি: এবং জলপথ ৬৭ নটিকাল মাইল। ঐতিহ্যগত পরিবহনের মধ্যে রয়েছে পালকি (বিলুপ্ত), ঘোড়ার গাড়ি, মহিষের গাড়ি, গরুর গাড়ি (প্রায় বিলুপ্ত) এবং নৌকা। প্রশাসনিক এলাকাসমূহ নড়াইল জেলায় ৩টি উপজেলা ও একটি থানা আছে; এগুলো হলোঃ কালিয়া; নড়াইল সদর ও লোহাগড়া। নড়াগাতী। নড়াইলে জাতীয় সংসদের সংসদীয় আসন ২টি। কালিয়া উপজেলা ও নড়াইল উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন নিয়ে নড়াইল-১ এবং লোহাগড়া ও নড়াইল পৌরসভাসহ উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন নিয়ে নড়াইল-২ আসন। ইতিহাস ১৮৬১ সালে যশোর জেলার অধীন নড়াইল মহাকুমা প্রতিষ্ঠিত হয়। নড়াইল শব্দটি স্থানীয় লোকমুখে নড়াল নামে উচ্চারিত হয়। ঐ সময় নড়াইল সদর, লোহাগড়া ও কালিয়া থানার সমন্বয়ে এই মহাকুমা গঠিত হয় । পরবর্তীতে আলফাডাঙ্গা থানা এবং অভয়নগর থানা এই মহাকুমা ভুক্ত হয়। ১৯৩৪ সালে প্রশাসনিক সীমানা পূর্নগঠনের সময় অভয়নগরের পেড়লী, বিছালী ও শেখহাটি এই তিনটি ইউনিয়নকে নড়াইল জেলা ভুক্ত করে অবশিষ্ট অভয়নগর যশোর জেলা ভুক্ত করা হয়। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির সময় এই মহাকুমায় চারটি থানা ছিল । ১৯৬০ সালে আলফাডাঙ্গা থানা যশোর হতে ফরিদপুর জেলা ভুক্ত হয় । ১৯৮৪ সালের ১লা মার্চ নড়াইল মহাকুমাকে জেলায় রুপান্তরিত করা হয় । প্রথম জেলা প্রশসাক ছিলেন ম শাফায়াত আলী । ১৯৭১ সনের ২৬শে মার্চ নড়াইল মহকুমার প্রশাসক জনাব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকীর নেতৃত্বে অধ্যাপক নূর মোহাম্মদ, জনাব আব্দুল হাই এবং অন্যান্যদের সহযোগিতায় নড়াইল ট্রেজারীর তালা ভেঙ্গে অস্ত্র নিয়ে যশোর সেনানিবাস আক্রমণের মধ্যে দিয়ে এ জেলার মানুষের মুক্তি সংগ্রাম শুরু হয়। অগণিত মুক্তিযোদ্ধার রক্ত এবং অনেক অত্যাচারিত , লাঞ্চিত মা-বোনদের অশ্রু ও সংগ্রামের ফলে ১৯৭১ সনের ১০ ডিসেম্বর নড়াইল হানাদার মুক্ত হয়। মহান মুক্তিযুদ্ধে নড়াইল জেলার বিশেষ অবদান রয়েছে। নড়াইল জেলা বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুক্তিযোদ্ধা অধ্যুষিত জেলা। এ জেলা হতে প্রায় ২০০০ জন মুক্তিযোদ্ধা মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছে। দেশের ৭ জন বীরশ্রেষ্ঠর একজন মরহুম ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখ নড়াইলের কৃতি সন্তান। মুক্তিযুদ্ধকালীন পাক বাহিনী ও তাদের দোসরদের হাতে শাহাদাৎ বরণকারীর সংখ্যাও একেবারে কম নয়। পাক হানাদার বাহিনী কর্তৃক চিত্রা নদীর পাড়ে লঞ্চঘাটের পল্টুনের উপর ২৮০০ লোককে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। নামকরণের ইতিহাস কথিত আছে বাংলার সুবাদার আলিবর্দি খানের শাসন আমলে দেশের বিভিন্ন অংশে বর্গি ও পাঠান বিদ্রোহীরা নানা ধরনের উৎপীড়ন শুরু করে। আলিবর্দির মুঘল বাহিনী বর্গি ও পাঠানদের সম্পূর্ণ শায়েস্তা করতে ব্যর্থ হন। এরপর বর্গি ও পাঠান দস্যুরা তাদের অত্যাচারের মাত্রা আরো বাড়িয়ে দেয়। সুবা বাংলার পশ্চিম ও উত্তর অঞ্চলের অধিবাসীরা প্রাণভয়ে অপেক্ষাকৃত নিরাপদ এলাকায় পালাতে থাকে। সেই সময় মদনগোপাল দত্ত নামে সুবাদারের এক কর্মচারী কিসমাত কুড়িগ্রামে সপরিবারে নৌকা যোগে উপস্থিত হন। সেখানে তিনি কচুড়ির শক্ত ধাপের উপর একজন ফকিরকে যোগাসনে উপবিষ্ট দেখতে পান। উক্ত ফকির দত্ত মশাইয়ের প্রার্থনায় তার নড়িটি (লাঠি) দান করেন এবং এই নড়ি পরবর্তীতে আশীর্বাদ হয়ে দাড়ায়। মদনগোপাল দত্ত ফকির বা সাধক আউলিয়ার নড়ি বা লাঠি পেয়ে ধীরে ধীরে প্রতিপত্তি অর্জন করেন। এই ভাবে কিসমাত কুড়িগ্রাম অঞ্চলের ঐ স্থানের নাম হলো নড়াল। নড়ালের লেখ্য রূপ হলো নড়াইল। স্থানটি নড়িয়াল ফকিরের নড়ি থেকে পরিচিতি লাভ করে। মদনগোপাল দত্তের পৌত্র বিখ্যাত রূপরাম দ্ত্ত। রূপরাম দত্তই নড়াইলের জমিদারদের প্রথম পুরুষ। যা হোক, মদনগোপাল দত্ত ও তার উত্তরাধিকারীরা নড়িয়াল ফকিরের অতি শ্রদ্ধাবশত নড়াল নামটি স্থায়ী করেন। তারা কোনো পরিবর্তন আনেননি। নড়াইলে নীলবিদ্রোহের কারণে মহকুমা স্থাপনের প্রয়োজন হলে ১৮৬৩ সালে ইংরেজ সরকার মহিশখোলা মৌজায় মহকুমার প্রধান কার্যালয় স্থাপন করেন। এইভাবে মুঘল আমলের ’নড়াল’ নামটি ইংরেজ শাসনামলে নড়াইল নামে পরিচিতি পায়। কিসমাত কুড়িগ্রাম বা কুড়িগ্রাম নড়াইল বা নড়ালগ্রাম হতে প্রাচীন। কিসমাত কুড়িগ্রামে মুঘল শাসনামলের পূর্বে সুলতানি শাসনামলে একটি প্রশাসনিক কেন্দ্র ও সেনাছাউনি ছিল। কিসমাত কুড়িগ্রামের আয়তন ও ছিল বেশ বিস্তৃত। গবেষক এস,এম রইস উদ্দীন আহমদ এর মতে লড়েআল হতে নড়াইল নামের উৎপত্তি হয়েছে। যারা শক্রর বিরুদ্ধে লড়াই করে স্থানীয় ভাষায় তাদের লড়ে বলে । হযরত খান জাহান আলীর সময়ে রাজ্যের সীমান্তে সীমান্ত প্রহরী নিয়োজিত ছিল। নড়াইল এলাকা নদী নালা খাল বিল বেষ্টিত । খাল কেটে রাজ্যের সীমান্তে পরীখা তৈরী করা হত। খাল বা পরীখার পাশে চওড়া উচু আইলের উপর দাড়িয়ে লড়ে বা রক্ষী সেনারা পাহারা দিত। এভাবে লড়েআল হতে লড়াল > নড়াইল নাম এর উৎপত্তি হয়েছে বলে জনশ্রুতি আছে । আরেকটি প্রচলিত মত হল নড়ানো থেকে নড়াইল নামের উৎপত্তি হয়েছে। বাংলাদেশে অনেক স্থানের নামের সাথে ইল প্রত্যয় যুক্ত আছে যেমন টাঙ্গাইল, ঘাটাইল, বাসাইল, নান্দাইল ইত্যাদি। প্রত্যোকটি সহানের নামকরণের ক্ষেত্রে কিছু কিংবদন্তী বা লোক কাহিনী প্রচলিত আছে। একটি বড় পাথর সরানোকে কেন্দ্র করে নড়াল বা নড়াইল নামের উৎপত্তি বলে কেউ কেউ মনে করেন । তবে বাংলাপিডিয়া এবং কতিপয় লেখকদের বিভিন্ন লেখা থেকে নামকরনের ইতিহাস যা পাওয়া গেছে সেটা এরকমঃ- "নড়াইল জেলার নামকরণ : ভূ-তত্ত্ববিদদের মতে আনুমানিক ১০ লক্ষ বৎসর পূর্বে গঙ্গা নদী প্রবাহিত পলিমাটি দ্বারা গাঙ্গেয় বদ্বীপ সৃষ্টি হয়। সমগ্র বঙ্গে নড়াইল জেলা ও দক্ষিণ বঙ্গের ব-দ্বীপের অন্তর্গত এক ভূখন্ড।” নড়াইল নামের কোন সঠিক তথ্য পাওয়া যায় না। কিংবদন্তী আছে যে হযরত খানজাহান আলী (রা:) দক্ষিণ বঙ্গে ইসলাম প্রচার করতে এসে খলিফাতাবাদ রাজ্য স্থাপন করেছিলেন এবং রাজধানী স্থাপন করেছিলেন বাগেরহাটে। বাগেরহাটে তার মাজার আছে। খলীফাতাবাদ রাজ্যের সীমানা বা আয়তন কতটুকু ছিল তার সঠিক তথ্য পাওয়া যায় না। অনেকের মতে, খলিফাতাবাদ রাজ্যের উত্তর অংশের সীমান্ত ছিল আজকের নড়াইল এলাকা। এ রাজ্যের সীমান্ত প্রহরী ছিল। সীমান্ত রক্ষীরা যুদ্ধবিদ্যায় পারদর্শী ছিল। তাই লোকে তাদেরকে “লড়ে” বলত। “লড়ে” একটি আঞ্চলিক শব্দ। “লড়ে” শব্দটিকে সাধারণ মানুষ বুঝতো - যারা লড়াই করে। আর নড়াইল এলাকা হযরত খানজাহান আলী (রা:) এর সময় খাল-বিল ও নদী নালায় ভরপুর ছিল। তাই লড়েরা উঁচু আইল তৈরী করে তার ওপর দিয়ে সীমান্ত পাহারা দিতো। লোকে এই আইলকে নাম দিয়েছিল “লড়ে আল”। পরবর্তী সময়ে ‘লড়ে আল’ থেকে নড়াইল নাম হয়েছে। আর লড়েরা সেখানে এক পর্যায়ে বসবাস শুরু করে এবং সেখানে গ্রাম গড়ে ওঠে। লোকে গ্রামের নাম দেয় ‘লড়ে গাতী’। গাতি শব্দের অর্থ গ্রাম। ‘লড়েগাতি’ পরবর্তী সময়ে ‘নড়াগাতি’ হয়েছে। কালিয়া উপজেলায় ‘নড়াগাতি’ অবস্থিত (বর্তমানে একটি নতুন থানা)। নড়াগাতির পাশে যে নদী ছিল তারও নাম হয়েছিল ‘লড়াগাতী নদী’। পরবর্তীতে নাম হয় ‘নড়াগাতী নদী’। নড়াগাতী নামে একটি বন্দরও ছিল। বর্তমানে নড়াগাতিতে একটি বাজার আছে। তাই ‘লড়া আইল’ থেকে ‘নড়াইল’ নাম হবার ব্যাপারে অনেকেই সমর্থন করেছেন।" জলবায়ু বার্ষিক গড় তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ৩৭.১০° সে: এবং সর্বনিম্ন ১১.২০° সে:। বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমান ১৪৬৭ মি: মি:। জনসংখ্যা নড়াইলের মোট জনসংখ্যা প্রায় ৯ লক্ষ। এর মধ্যে পুরুষ ৫৪.২২%, মহিলা ৪৫.৭৮%, মুসলিম ৭৫.৫৬%, হিন্দু ২৪.৩১% এবং অন্যান্য ০.১৩%। নড়াইলে গড় সাক্ষরতা ৩৫.৬৫%। এর মধ্যে পুরুষ ৪২.২৩% এবং মহিলা ২৮.৯৯%। অর্থনীতি এই জেলার লোকজনের প্রধান পেশা কৃষি ৪৭.৫৫%, মৎস্য ২.৮৮%, কৃষি মজুর ১৮.০২%, মজুরী শ্রমিক ২.৪৪%, শিল্প ১.৩১%, ব্যবসা ১০.৯২% এবং চাকুরী ৭.৮৪%, পরিবহন ২.৬% এবং অন্যান্য ৭.২৪। মোট আবাদযোগ্য জমি ৭৮৪৫৮ হেক্টর। এর মধ্যে একক ফসল ৪৩.১৭%, দ্বৈত ফসল ৪৪.২৫% এবং ত্রিফসলী জমি ১২.৫৮%। সেচের আওতায় জমি ২২.১৬%। চাষীদের মধ্যে ২৭.৫৪% ভূমিহীন, ৩৬.৮১% ক্ষুদ্র, ১৪.৭৭% মাঝারী এবং ধনী ২০.৯৭%। এই জেলার প্রধান শষ্য ধান, পাট, গম, তেল বীজ, সরিষা, আলু, আখ, কলাই ও খেসারী। বিলুপ্ত অথবা প্রায় বিলুপ্ত শষ্যের মধ্যে রয়েছে নীল, কাউন, তুলা ও বার্লি। প্রধান ফল আম, কাঁঠাল, পেঁপে, কলা, জাম, নারিকেল ও সুপারী। বৃহৎ ও মাঝারী শিল্পের মধ্যে রয়েছে বস্ত্রকল ১টি, বিস্কুট কারখানা ৬টি, কলম শিল্প ১টি, করাত কল ৪২টি, বরফ কারখানা ১৮টি, চাল ও আটা কল ৪৫টি, হলুদ মেশিন ৬টি, ওয়েল্ডিং ৭৩টি এবং ছাপাখানা ৪টি। কুটির শিল্পের মধ্যে তাঁত, বাঁশ ও বেতের কাজ, কাঠের কাজ, স্বর্ণকার, কামার, কুম্ভকার, দরজী ইত্যাদি অন্তর্ভূক্ত। নদ-নদী নড়াইল জেলায় অনেকগুলো নদী রয়েছে। নদীগুলো হচ্ছে আঠারোবাঁকি নদী, নবগঙ্গা নদী, চিত্রা নদী, মধুমতি নদী ও ভৈরব নদ। রয়েছে প্রচুর বিল ও বাওড়। এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ইছামতির বিল ও চাচুরি বিল। শিক্ষা কলেজ ১৭টি, কারিগরি কলেজ ১টি, উচ্চ বিদ্যালয় ৯৪টি, জুনিয়র হাইস্কুল ২২টি, মাদ্রাসা ৮৫টি, মক্তব ১৬০টি, সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ২৮৭টি, বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৭১টি, আর্ট স্কুল ১টি, বৃত্তিমূলক স্কুল ১টি, কারিগরি স্কুল ৩টি, অন্ধদের স্কুল ১টি, কিন্ডার গার্ডেন ২টি, কমিউনিটি স্কুল ৬টি এবং স্যাটেলাইট স্কুল ১৯টি। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে নড়াইল সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়(১৯০৩) ভিক্টোরিয়া কলেজিয়েট স্কুল (১৮৫৬), নড়াইল সরকারী ভিক্টোরিয়া কলেজ (১৮৮৬), কালিয়া পাইলট হাইস্কুল (১৮৬৫)। প্রখ্যাত ব্যক্তিত্ব পন্ডিত শ্যাম শঙ্কর চৌধুরী - প্রথিতযশা বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিবিদ এবং আইনজ্ঞ। ভূবনখ্যাত শ্রেষ্ঠ নৃত্যশিল্পী, উদয় শঙ্কর ও আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সেতার বাদক, পন্ডিত রবিশঙ্কর-এর পিতা সৈয়দ নওশের আলী- ফজলুল হক মন্ত্রী সভার মন্ত্রী, অমল সেন-তেভাগা আন্দোলনের প্রাধান নেতা, এস এম সুলতান-বিখ্যাত চিত্রশিল্পী নূর মোহাম্মদ শেখ-বীরশ্রেষ্ঠ, শরীফ খসরুজ্জামান, বীর মুক্তিযোদ্ধা (নড়াইল মুজিব বাহিনীর কমান্ডার), সাবেক সংসদ সদস্য (1991-2001), নড়াইল 2। মাশরাফি বিন মর্তুজা - অধিনায়ক, জাতীয় ক্রিকেট দল। শামীমা সুলতানা- কবি, ঔপন্যাসিক এবং রাজনীতিবিদ। তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটি, বাংলাদেশ কৃষক লীগ। ইমরান পরশ কবি ও শিশুসাহিত্যিক ড.রথীন্দ্রনাথ বোস-রসায়নবিদ চারণ কবি মোসলেমউদ্দিন-১৩০০ সালের রচয়িতা, কবিয়াল বিজয় সরকার-বিখ্যাত কবিগান গায়ক, ডাঃ নিহার রঞ্জন গুপ্ত-প্রায় ৫০টি উপন্যাসের লেখক, নূর জালাল- তেভাগা আন্দোলনোর মধ্যমনি, কমলদাশগুপ্ত- নজরুল সঙ্গীত শিল্পী শেখ আব্দুস সালাম- সর্বকনিষ্ঠ শহীদ বুদ্ধীজীবি, জমিদার অমৃতনাল দাস অধ্যাপক নূর মোহাম্মদ মিয়া- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা ও সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন এবং নড়াইল জেলার মুক্তিযুদ্ধের প্রথম নেতৃত্বদানকারী অধ্যাপক কাজী সাজ্জাদ হোসেন––কুয়েটের উপাচার্য। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার অন্যতম আসামী *লেঃ মতিউর রহমান রায় বাহাদুর যদুনাথ মজুমদার শরীফ নূরুল আম্বিয়া রাজনীতিবিদ ও সমাজসেবক অধ্যাপক ড. মো: আবু সিনা (বিবিএস অনার্স, এমবিএস,কামিল, পিএইচ.ডি), দৌলতপুর, হিসাববিজ্ঞানী, সাবেক সভাপতি, হিসাববিজ্ঞান বিভাগ ও ডিন, ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া। দর্শনীয় স্থান নড়াইল জমিদার বাড়ি, হাটবাড়িয়া জমিদার বাড়ি, এস এম সুলতান বেঙ্গল চারুকলা মহাবিদ্যালয় গোয়াল বাথান গ্রামের মসজিদ (১৬৫৪), কদমতলা মসজিদ, নলদীতে গাজীর দরগা, উজিরপুরে রাজা কেশব রায়ের বাড়ী, জোড় বাংলায় অষ্টাদশ শতাব্দীতে নির্মিত রাধাগোবিন্দ মন্দির, লক্ষ্মীপাশায় কালিবাড়ী, নিশিনাথতলা মধুমতি নদীর উপর নির্মিত চাপাইল সেতু, আঠারো বাকি নদীর তীরবর্তী দৃশ্য। চিত্রা রিসোর্ট নিরিবিলি পিকনিক স্পট স্বপ্নবিথী অরুণিমা রিসোর্ট গল্ফ ক্লাব বাঁধাঘাট ভিক্টোরিয়া কলেজ চিত্রা নদী হাটবাড়িয়া জমিদার বাড়ি/ পার্ক অমৃত নগর কাচারী বাড়ি (নড়াগাতী)। শ্রী শ্রী গঙ্গাধর পাগলা ঠাকুরের আশ্রম (দেবদুন, নড়াগাতী)। উইলিয়াম ফোর্ট ক্যানেল ( নবগঙ্গা এবং মধুমতি নদীর সংযোগের জন্য খনন করা হয়)। আরো দেখুন খুলনা বিভাগ বাংলাদেশের জেলাসমূহ তথ্যসূত্র বিষয়শ্রেণী:বাংলাদেশের জেলা বিষয়শ্রেণী:নড়াইল জেলা বিষয়শ্রেণী:খুলনা বিভাগের জেলা
নড়াইল জেলা
নীলফামারী জেলা বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের একটি জেলা (দ্বিতীয় স্তরের প্রশাসনিক ইউনিট)। এটি রংপুর বিভাগের (বাংলাদেশের আটটি বিভাগের একটি যা ২০১০ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ জানুয়ারিতে সপ্তম বিভাগ হিসাবে গঠিত হয়) আটটি জেলার একটি অন্যতম সীমান্তঘেষা জেলা। এ জেলার সদর বা রাজধানীর নামও নীলফামারী। নীলফামারী জেলার উত্তর সীমান্তে ভারতের জলপাইগুড়ি জেলা এবং অন্য দিকে লালমনিরহাট জেলা, রংপুর জেলা, দিনাজপুর জেলা ও পঞ্চগড় জেলা অবস্থিত। নীলফামারী জেলাকে নীলের দেশ বলা হয়। এই জেলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও ভূ-সংস্থান বেশ সমৃদ্ধ যা অন্যান্য জেলা থেকে এই জেলাকে কিছুটা হলেও আলাদা করেছে। জেলার উত্তর দিক উচু ও খরা পিরিত অঞ্চল, পূর্ব দিক তিস্তার বালুকাময় এলাকা, এই উচু ও বালুময় ভূমি ধীরে ধীরে দক্ষিণপশ্চিম দিকে উর্বর কৃষি জমিতে পরিণত হয়েছে। নীলফামারী অতীত ইতিহাসের অনেক সাক্ষী বহন করে। এ জেলায় সত্যপীরের গান, হাঁস খেলা, মাছ খেলাসহ অনেক উৎসব ও মেলার আয়োজন হয়। নীলফামারী একটি কৃষি প্রধান জেলা। এ জেলার ৬৮.৫% মানুষ কৃষির উপর নির্ভরশীল। এখানকার প্রধান শিল্প বয়ন, চাল, বাশবেত প্রভৃতি। দারোয়ানী বস্ত্র কল এ জেলার সর্ববৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠান। এছাড়া উত্তরা ইপিজেড ও সৈয়দপুর বিসিক শিল্প নগরীর মত শিল্প পার্ক। নামকরণ দুই শতাধিক বছর পূর্বে এ অঞ্চলে নীল চাষের খামার স্থাপন করে ইংরেজ নীলকরেরা। এ অঞ্চলের উর্বর ভূমি নীল চাষের অনুকূল হওয়ায় দেশের অন্যান্য এলাকার তুলনায় নীলফামারীতে বেশি সংখ্যায় নীলকুঠি ও নীল খামার গড়ে ওঠে। ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুতেই দুরাকুটি, ডিমলা, কিশোরগঞ্জ উপজেলা, টেঙ্গনমারী প্রভৃতি স্থানে নীলকুঠি স্থাপিত হয়। সে সময় বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলের মধ্যে নীলফামারীতেই বেশি পরিমাণে শস্য উৎপাদিত হতো এখানকার উর্বর মাটির গুণে। সে কারণেই নীলকরদের ব্যাপক আগমন ঘটে এতদঅঞ্চলে। গড়ে ওঠে অসংখ্য নীল খামার। বর্তমান নীলফামারী শহরের তিন কিলোমিটার উত্তরে পুরাতন রেল স্টেশনের কাছেই ছিল একটি বড় নীলকুঠি। তাছাড়া বর্তমানে অফিসার্স ক্লাব হিসেবে ব্যবহৃত পুরাতন বাড়িটি ছিল একটি নীলকুঠি।ধারণা করা হয়, স্থানীয় কৃষকদের মুখে ‘নীল খামার’ রূপান্তরিত হয় ‘নীল খামারী’তে। আর এই নীলখামারীর অপভ্রংশ হিসেবে উদ্ভব হয় নীলফামারী নামের। ভৌগোলিক অবস্থান রাজধানী ঢাকা থেকে উত্তর-পশ্চিম দিকে প্রায় ৪০০ কিঃমিঃ দুরে ১৫৮০.৮৫ বর্গ কিলোমিটার আয়তন বিশিষ্ট নীলফামারী জেলার অবস্থান, যা কর্কটক্রান্তি রেখার সামান্য উত্তরে, ২৫°৪৪´ উত্তর অক্ষাংশ থেকে ২৬°১৯´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮°৪৪´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ থেকে ৮৯°১২´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত। এ জেলার পূর্বে রংপুর জেলা ও লালমনিরহাট জেলা, দক্ষিণে রংপুর জেলা ও দিনাজপুর জেলা,পশ্চিমে দিনাজপুর জেলার খানসামা উপজেলা ও পঞ্চগড় জেলা এবং উত্তরে ভারতের জলপাইগুড়ি জেলা। আবহাওয়া স্থানীয় জনপ্রতিনিধি স্থানীয় সরকার ১৮৭৫ সালে মহকুমা ও পরে ১৯৮৪ সালে জেলায় উন্নীত হয়।প্রথম নির্বাচিত এবং বর্তমান জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল আবেদীন। পৌরসভা এই জেলায় মোট ৪ টি পৌরসভা নীলফামারী পৌরসভা সৈয়দপুর পৌরসভা ডোমার পৌরসভা জলঢাকা পৌরসভা উপজেলা পরিষদ মোট ৬ টি উপজেলা নিয়ে নীলফামারী জেলা। নীলফামারী সদর উপজেলা ডোমার উপজেলা ডিমলা উপজেলা জলঢাকা উপজেলা কিশোরগঞ্জ উপজেলা ও সৈয়দপুর উপজেলা ইউনিয়ন পরিষদ নীলফামারী জেলায় মোট ৬০ টি ইউনিয়ন পরিষদ রয়েছে। শিক্ষা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গোড় গ্রাম স্কুল অ্যান্ড কলেজ , নীলফামারী । ]] নীলফামারী মেডিকেল কলেজ বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সৈয়দপুর নীলফামারী সরকারি কলেজ, নীলফামারী নীলফামারী টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ, নীলফামারী নীলফামারী সরকারি মহিলা কলেজ, মশিঊর রহমান ডিগ্রী কলেজ, নীলফামারী ডোমার সরকারি কলেজ, চিলাহাটি সরকারি কলেজ সৈয়দপুর সরকারি কলেজ সৈয়দপুর সরকারি কারিগরি মহাবিদ্যালয় ডিমলা ইসলামিয়া ডিগ্রী কলেজ ছোটখাতা বহুমুখী ফাজিল মাদরাসা, ডিমলা, নীলফামারী। কালেক্টরেট পাবলিক স্কুল ও কলেজ সৈয়দপুর ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড হাই স্কুল ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ, সৈয়দপুর নীলফামারী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় নীলফামারী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ডোমার বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় ডোমার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় জলঢাকা কলেজ টেংগনমারী ডিগ্রী কলেজ, জলঢাকা, নীলফামারী সোনারায় সংগলশী উচ্চ বিদ্যালয়। ডিমলা রাণী বৃন্দা রাণী সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় কিশোরীগঞ্জ বহুমুখী মডেল উচ্চ বিদ্যালয় কালেক্টরেট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ, নীলফামারী বাবরীঝাড় দ্বিমূখী উচ্চ বিদ্যালয়, নীলফামারী। লায়ন্স স্কুল এন্ড কলেজ,সৈয়দপুর বালাগ্রাম কৃষি কলেজ। বালাগ্রাম,জলঢাকা, নীলফামারী। বালাগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়। বালাগ্রাম,জলঢাকা, নীলফামারী। জলঢাকা মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, জলঢাকা, নীলফামারী। অর্থনীতি নীলফামারী মূলত একটি কৃষি নির্ভর জেলা। জেলার অন্যতম প্রধান অর্থকরী ফসল ভুট্টা, ও মরিচ। জেলার ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলার তিস্তা নদীর অববাহিকায় প্রচুর ভুট্টার চাষ হয়। ডোমার, ডিমলায় মরিচের চাষ হয়। এছাড়া আলু, ধান, গম, সরিষা, পাট, তামাক প্রচুর পরিমাণে উৎপাদিত হয়। চিত্তাকর্ষক ও প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান আদি নাম বিন্যাদিঘী বা বিরাট রাজার দিঘি - যা বর্তমান নীলসাগর নামে পরিচিত , ধর্মপালের গড়,তিস্তা ব্যারেজ ও সেচ প্রকল্প, কুন্দুপুকুর মাজার, হযরত শাহ কলন্দর মাজার, হরিশচন্দ্রের পাঠ, ময়নামতির দূর্গ, ভীমের মায়ের চুলা,চীনা মসজিদ, সৈয়দপুর চার্চ, সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানা, দারোয়ানী টেক্সটাইল মিল, উত্তরা ইপিজেড, সৈয়দপুর বিমানবন্দর, ডিমলা রাজবাড়ী, বালাপাড়া গণকবর জলঢাকা মুন্নু পার্ক(সাইটের পাড়) ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব শাহ কলন্দর পীর ও কামেলের আধ্যাত্মিক শক্তি ও ইসলামের মহান আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে এ অঞ্চলের বহু লোক ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে। তাঁর জন্ম ও মৃত্যুর সঠিক তারিখ জানা যায়নি। উত্তরাঞ্চলের প্রথম পর্যায়ের ইসলাম প্রচারকদের মধ্যে তিনি উল্লেখযোগ্য। নীলফামারী জেলার ডোমার উপজেলায় হযরত শাহ কলন্দর (রা:) এর মাজার অবস্থিত। কাজী কাদের, সাবেক মন্ত্রী (পাকিস্তান আমল); মশিউর রহমান (যাদু মিয়া) (জিয়াউর রহমান সরকারের সময় প্রধানমন্ত্রীর মর্যাদায় সিনিয়র মন্ত্রী ছিলেন); শহীদ জননী জাহানারা ইমাম; খয়রাত হোসেন, সাবেক মন্ত্রী; বিচারপতি মোস্তফা কামাল, সাবেক প্রধান বিচারপতি; শফিকুল গনি স্বপন, সাবেক মন্ত্রী; মহেশ চন্দ্র রায়, উত্তরবঙ্গের বিখ্যাত ভাওয়াইয়া গানের শিল্পী। মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব (জ. ১৯৬৮) হরলাল রায়, ভাওয়াইয়া শিল্পী; রথীন্দ্রনাথ রায়, ভাওয়াইয়া শিল্পী; মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল আবেদীন, প্রথম চেয়ারম্যান নীলফামারী জেলা পরিষদ ও সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড। আসাদুজ্জামান নূর, নাট্য ব্যক্তিত্ব; বর্তমান সংসদ সদস্য এবং সাবেক মন্ত্রী ; নীলফামারী-২ আনিসুল হক, লেখক, নাট্যকার ও সাংবাদিক; বেবি নাজনিন, কন্ঠশিল্পী। আরোও দেখুন রংপুর বিভাগ বাংলাদেশের জেলাসমূহ তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ বিষয়শ্রেণী:বাংলাদেশের জেলা বিষয়শ্রেণী:নীলফামারী জেলা বিষয়শ্রেণী:রংপুর বিভাগের জেলা
নীলফামারী জেলা
সাংস্কৃতিক ভাষাতত্ত্ব (Philology) বলতে প্রাচীন রচনাবলি ও তাদের ভাষা নিয়ে গবেষণা বোঝায়। আরও বিস্তৃতভাবে বলতে গেলে মানব যোগাযোগের লিখিত অথবা কথ্য রূপের পটভূমি এবং বর্তমান ব্যবহার জানার যে আগ্রহ তাকে সাংস্কৃতিক ভাষাতত্ত্ব বলা যায়। শাব্দিকভাবে চিন্তা করলে ফিলোলজি শব্দে অর্থ হচ্ছে "শব্দের জন্য ভালোবাসা"। যে ভাষা সম্বন্ধে অধ্যয়ন করা হবে তার উৎস এবং বয়সের তুলনায় সে ভাষায় যে সমস্ত লোক কথা বলে তারা এক্ষেত্রে বেশি গুরুত্বপূর্ণ যদিও উৎস ও বয়সের গুরুত্বও উপেক্ষা করার মত নয়। ফিলোলজি শব্দটি গ্রিক ফিলোস (Φιλος - ভালোবাসা) এবং লোগোস (λογος - শব্দ) থেকে এসেছে। এক হিসেবে কোন একটি ভাষাকে বুঝার জন্য ফিলোলজি সেই ভাষার উৎপত্তির অনুসন্ধানে ব্যপৃত হয় যে কারণে এই তত্ত্বকে বলা যেতে পারে প্রাচীন রচনাবলী এবং ভাষার অধ্যয়ন। অবশ্য এটি একটি স্থুল চিন্তাধারা। বিষয়শ্রেণী:ভাষাবিজ্ঞান
সাংস্কৃতিক ভাষাতত্ত্ব
thumb বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত। বাংলাদেশের সংবিধানের ষষ্ঠ অধ্যায়ে সুপ্রীম কোর্ট প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে আইনি বিধান রয়েছে। সংবিধানের ধারা ১০০-এর বিধান অনুযায়ী বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহরের রমনায় সুপ্রীম কোর্ট অবস্থিত। এটা সচরাচর হাইকোর্ট নামে পরিচিত; কারণ ১৯৭১ সালের পূর্বে এই ভবনে পূর্ব পাকিস্তানের উচ্চ আদালতের কার্যক্রম পরিচালিত হতো। কাঠামো বাংলাদেশের সংবিধানের ষষ্ঠ অধ্যায়ের ৯৪ ধারায় সুপ্রিম কোর্ট প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে আইনি বিধান ব্যক্ত করা হয়েছে। এই ধারার (১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে, "বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট" নামে বাংলাদেশের একটি সর্বোচ্চ আদালত থাকিবে এবং আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগ লইয়া তাহা গঠিত হইবে। এই ধারার (১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে, "প্রধান বিচারপতি এবং প্রত্যেক বিভাগে আসন গ্রহণের জন্য রাষ্ট্রপতি যেরূপ সংখ্যক বিচারক নিয়োগের প্রয়োজন বোধ করিবেন, সেইরূপ সংখ্যক অন্যান্য বিচারক লইয়া সুপ্রিম কোর্ট গঠিত হইবে"; আরো বলা হয়েছে যে, সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি "বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি" নামে অভিহিত হইবেন। পরবর্তী অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “প্রধান বিচারপতি ও আপিল বিভাগে নিযুক্ত বিচারকগণ কেবল উক্ত বিভাগে এবং অন্যান্য বিচারক কেবল হাইকোর্ট বিভাগে আসন গ্রহণ করিবেন।”; এবং চতুর্থ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে, “সংবিধানের বিধানাবলী সাপেক্ষে প্রধান বিচারপতি এবং অন্যান্য বিচারক বিচারকার্য পালনের ক্ষেত্রে স্বাধীন থাকিবেন।” সংবিধানের ধারা-১০০-এর বিধান অনুযায়ী বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহরে সুপ্রিম কোর্টের স্থায়ী আসন অবস্থিত হবে। তবে বিধান আছে যে, রাষ্ট্রপতির অনুমোদন ক্রমে প্রধান বিচারপতি সময়ে সময়ে অন্য যে স্থান বা স্থানসমূহ নির্ধারণ করবেন, সেই স্থান বা স্থানসমূহে হাইকোর্ট বিভাগের অধিবেশন অনুষ্ঠিত হতে পারবে। এখতিয়ার সংবিধানের বিধান অনুযায়ী বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট-এর দুটি বিভাগ আছেঃ আপিল বিভাগ এবং হাইকোর্ট বিভাগ। সংবিধানের ১০১ ধারায় হাইকোর্টের এখতিয়ার বর্ণিত আছে। ১০৩ ধারায় আপিল বিভাগের এখতিয়ার বর্ণিত আছে। হাইকোর্ট বিভাগ নিম্ন আদালত এবং ট্রাইবুনাল থেকে আপিল শুনানি করে থাকে। এছাড়াও, বাংলাদেশের সংবিধানের আর্টিকেল ১০২ এর অধীনে রিট আবেদন , এবং কোম্পানি এবং সেনাবিভাগ বিষয় হিসেবে নির্দিষ্ট সীমিত ক্ষেত্রে মূল এখতিয়ার আছে। হাইকোর্ট বিভাগ থেকে আপিল শুনানির এখতিয়ার রয়েছে আপিল বিভাগের। সুপ্রিম কোর্ট নির্বাহী শাখা হতে স্বাধীন এবং রাজনৈতিকভাবে বিতর্কিত ক্ষেত্রে সরকারের বিরুদ্ধে আদেশ দিতে পারে। বেঞ্চ গঠন এক বা একাধিক বিচারক সমন্বয়ে প্রধান বিচারপতি হাইকোর্টের বেঞ্চ গঠন করতে পারবেন। বিচারপতি নিয়োগ বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের বিচারপতি নিয়োগ সম্পর্কে বাংলাদেশ সংবিধানের ৯৫ অনুচ্ছেদে আলোচনা করা হয়েছে। ৯৫(১) অনুযায়ী প্রধান বিচারপতি রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত হবেন এবং প্রধান বিচারপতির সাথে পরামর্শ করে রাষ্ট্রপতি অন্যান্য বিচারককে নিয়োগদান করবেন। সংবিধানের ৪৮ অনুচ্ছেদের (৩) দফায় বলা হয়েছে, ‘এই সংবিধানের ৫৬ অনুচ্ছেদের (৩) দফা অনুসারে কেবল প্রধানমন্ত্রী ও ৯৫ অনুচ্ছেদের (১) দফা অনুসারে প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্র ব্যতীত রাষ্ট্রপতি তাঁহার অন্য সকল দায়িত্ব পালনে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী কার্য করিবেন।’ অর্থাৎ প্রধান বিচারপতি নিয়োগে রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রির পরামর্শ গ্রহণে বাধ্য নন। হাইকোর্ট বিভাগে অতিরিক্ত বিচারক হিসাবে প্রথমে দুই বছর প্রাথমিক ভাবে নিয়োগ পাওয়ার যোগ্যতা হচ্ছে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নিবন্ধিত হয়ে উকিলতি করা এবং সংবিধানের ৯৮ বিধানের অধীনে জুডিশিয়াল সার্ভিসে নিযুক্ত অতিরিক্ত বিচারক । বর্তমানে এই অনুপাত হচ্ছে ০০% - ০০%। এই সময়ের সফল সমাপ্তির পরে এবং প্রধান বিচারপতি কর্তৃক সুপারিশের উপর একজন অতিরিক্ত জজকে সংবিধানের ৯৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী স্থায়ী নিয়োগ দেন। আপিল বিভাগের বিচারক একই বিধান অধীন রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত করা হয়। সব ধরনের নিয়োগ সংবিধানের ১৪৮ এর বিধান অনুযায়ী শপথ গ্রহণের তারিখ থেকে কার্যকর হয়। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের একজন বিচারক ৬৭ বছর পর্যন্ত সংবিধানের বিধান (তের) দ্বারা বর্ধিত হিসাবে সে / তিনি বিচারপতি থাকবেন সংশোধনী আইন ২০০৪ (২০০৪ এর ১৪)। সুপ্রীম কোর্টের বিচারপতিবৃন্দ ২০২১ সালের মার্চ মাসে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টে ৯৮ জন বিচারপতি কর্মরত আছেন। তাদের মধ্যে ০৬ জন আপিল বিভাগে এবং ৯২ জন হাইকোর্ট বিভাগে রয়েছেন। হাইকোর্ট বিভাগে কর্মরত ৮৩ জন স্থায়ী বিচারপতি এবং ৯ জন অতিরিক্ত বিচারপতি। তার মধ্যে ৩ জন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে কর্মরত আছেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের বিচারপতিবৃন্দ সমালোচনা বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী একমাত্র রাষ্ট্রভাষা বাংলা হওয়া সত্ত্বেও এবং বাংলা ভাষা প্রচলন আইন, ১৯৮৭ লঙ্ঘন করে সুপ্রিম কোর্টের রায় ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনামলের মতো এখনও ইংরেজিতে দেওয়া হয় বলে সমালোচনা রয়েছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুপ্রিম কোর্টের রায় বাংলায় লেখার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, “যে ভাষা আমরা সবাই বুঝতে পারি, সেই ভাষায় [রায়] লেখা উচিত। আর বাংলায় রায় লিখে সেটা ইংরেজিতে ট্রান্সলেশন করেও দিতে পারেন।” বাংলাদেশের সাবেক প্রধান বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান লিখেছেন, 'যদি ন্যায়বিচার সদগুণ হয় এবং জনগণের কল্যাণের জন্যই যদি এর কাজ হয় তবে তা জনগণের ভাষাতেই হওয়া উচিত।' তবে "আমি খোলাখুলি করে বলি 'দেশের জনগণ যদি চান তাঁদের দেশের সর্বোচ্চ আদালতের সব কাজ তাঁদের ভাষায় হবে, তাঁদের প্রতিনিধিরা সংসদের যতদিন না আইন পাস করছেন ততদিন বিচারকবৃন্দ স্বেচ্ছায় বাংলায় হাতেখড়ি দিতে চাইবেন না।" বিতর্কিত ঘটনাবলী বিচারপতি হিসাবে নিয়োগের পূর্বে বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান এবং বিচারপতি এস এম এমদাদুল হক বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সদস্য (রুকন) ছিলেন। ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ তারিখে বিচারপতি মো. মিজানুর রহমান ভূইয়ার পক্ষে তার জমাদার সিদ্দিকুর রহমান হাওলাদার হাইকোর্টের বিচারপতিদের কক্ষে কক্ষে গিয়ে সুপ্রিম কোর্টের খামে করে ব্লগার রাজীব হায়দারকে মুরতাদ (ইসলাম ধর্ম ত্যাগকারী) আখ্যায়িত করে লেখা একটি প্রতিবেদন দিয়ে আসেন। ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দারকে নিয়ে অপপ্রচার চালানোর কারণে বিচারপতি মিজানুর রহমান ভূইয়ার পদত্যাগের দাবি উঠে। তথ্যসূত্র বিষয়শ্রেণী:বাংলাদেশ সরকার বিষয়শ্রেণী:বাংলাদেশের বিচার বিভাগ
বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট
right|thumb|জর্জ বুল জর্জ বুল () (২রা নভেম্বর, ১৮১৫—৮ই ডিসেম্বর, ১৮৬৪) ছিলেন একজন ব্রিটিশ গণিতবিদ ও দার্শনিক যাকে গাণিতিক যুক্তিবিজ্ঞানের (mathematical logic) জনকদের একজন হিসাবে গণ্য করা হয়। ১৮৫৪ সালে তার প্রধান কাজ Investigation of the Laws of Thought বের হয়। তিনি যে প্রকার প্রতীকী যুক্তিবিজ্ঞান নির্মাণ করেন, তার উপর ভিত্তি করে পরবর্তীতে বুলিয়ান বীজগণিতের গবেষণা শুরু হয়। বর্তমান সময়ের কম্পিউটিং এবং বীজগণিতে এই বুলিয়ান বীজগণিতের গুরুত্ব রয়েছে। বুল, ডি মরগান এবং অন্যান্যদের কাজ আধুনিক বিধিগত বীজগণিতের নির্মাণে সাহায্যকারী ভূমিকা রাখে। প্রভাব বুলের গবেষণাকর্মের উপরে পরবর্তিতে উইলিয়াম স্ট্যানলি জেভন্স, অগাস্টাস দ্য মরগান, চার্লস পিয়ার্স, এবং উইলিয়াম আর্নস্ট জনসন কাজ করেছেন। বুলের গবেষণাকর্ম বহুদিন যাবত যুক্তিবিদরা ব্যতীত অন্যদের কাছে অপরিচিত ছিল। বুলীয় বীজগণিতের ব্যবহারিক কোনো প্রয়োগ বহুদিন যাবত অনাবিষ্কৃত ছিল। বুলের মৃত্যুর ৭০ বছর পরে ক্লদ শ্যানন ইউনিভার্সিটি অফ মিশিগান এ অধ্যয়নরত অবস্থায় দর্শন বিষয়ে পড়াশোনা করতে গিয়ে বুলিয়ান বীজগণিতের খোঁজ পান। পরবর্তীতে ম্যাসাচুসেটস ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজিতে পড়ার সময় শ্যানন তার মাস্টার্সের থিসিসে দেখান, কীভাবে বুলিয়ান বীজগণিতের মাধ্যমে টেলিফোন রাউটিং সুইচের তড়িৎ-যান্ত্রিক রিলেসমূহের নকশা সঠিকভাবে করা যায়। তিনি আরো দেখান, এধরনের বর্তনী দিয়ে বুলিয়ান বীজগণিতের বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করা সম্ভব। তড়িৎ বর্তনী দিয়ে যুক্তিবিদ্যার গণনা হলো আধুনিক কম্পিউটার বিজ্ঞানের মূল ভিত্তি। বিষয়শ্রেণী:ব্রিটিশ গণিতবিদ বিষয়শ্রেণী:১৮১৫-এ জন্ম বিষয়শ্রেণী:১৮৬৪-এ মৃত্যু বিষয়শ্রেণী:ইংরেজ গণিতবিদ বিষয়শ্রেণী:ইংরেজ দার্শনিক
জর্জ বুল
ময়দা হচ্ছে বিভিন্ন খাবারে (বিশেষ করে রুটি, পাউরুটি ইত্যাদি জাতীয়) ব্যবহৃত একটি উপকরণ। বিভিন্ন প্রকার শষ্যদানার মিহি গুড়ো হতে ময়দা পাওয়া যায়। গমের গুঁড়ো হল গমের আটা (কখনো আটাকেই ময়দা বলা হয়)। আটাকে সাদা করলে সাদা ময়দা পাওয়া যায়। ময়দাতে প্রচুর পরিমানে কার্বোহাইড্রেট, শর্করা থাকে।যা আমাদের শরীরে শক্তি যোগায়। Amount Per 100 grams Calories 364 % Daily Value* Total Fat 1 g 1% Saturated fat 0.2 g 1% Polyunsaturated fat 0.4 g Monounsaturated fat 0.1 g Cholesterol 0 mg 0% Sodium 2 mg 0% Potassium 107 mg 3% Total Carbohydrate 76 g 25% Dietary fiber 2.7 g 10% Sugar 0.3 g Protein 10 g 20% Vitamin A 0% Vitamin C 0% Calcium 1% Iron 6% Vitamin D 0% Vitamin B-6 0% Cobalamin 0% Magnesium 5% Per cent Daily Values are based on a 2,000 calorie diet. Your daily values may be higher or lower depending on your calorie needs. তথ্যসূত্র বিষয়শ্রেণী:গম
ময়দা
ফ্রান্স ( ফ্রঁস্‌), যার সরকারী নাম ফরাসি প্রজাতন্ত্র (République Française রেপ্যুব্লিক্‌ ফ্রঁসেজ়্‌), ইউরোপের একটি রাষ্ট্র। এটি ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক দিক থেকে পশ্চিমা বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জাতিগুলির একটি। ফ্রান্স আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেছে; বিশ্বের প্রায় সর্বত্র এর প্রাক্তন উপনিবেশগুলি ছড়িয়ে আছে। আটলান্টিক মহাসাগর, ভূমধ্যসাগর, আল্পস পর্বতমালা ও পিরিনীয় পর্বতমালা-বেষ্টিত ফ্রান্স বহুদিন ধরে উত্তর ও দক্ষিণ ইউরোপের মাঝে ভৌগোলিক, অর্থনৈতিক ও ভাষিক সংযোগসূত্র হিসেবে ভূমিকা পালন করে আসছে। আয়তনের দিক থেকে ফ্রান্স ইউরোপের তৃতীয় বৃহত্তম রাষ্ট্র; রাশিয়া ও ইউক্রেনের পরেই এর স্থান। আর জনসংখ্যার দিক থেকে এটি ইউরোপের চতুর্থ বৃহত্তম রাষ্ট্র। মূল ভূখণ্ডের বাইরে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে ফ্রান্সের দশটি উপনিবেশ আছে, যেগুলি বেশির ভাগই প্রাক্তন ফরাসি সাম্রাজ্য থেকে পাওয়া। ফ্রান্স মোটামুটি ষড়ভুজাকৃতির। এর উত্তর-পূর্বে বেলজিয়াম ও লুক্সেমবুর্গ, পূর্বে জার্মানি, সুইজারল্যান্ড ও ইতালি, দক্ষিণ-পশ্চিমে অ্যান্ডোরা ও স্পেন, উত্তর-পূর্বে ইংলিশ চ্যানেল, পশ্চিমে আটলান্টিক মহাসাগর, উত্তরে উত্তর সাগর, এবং দক্ষিণ-পূর্বে ভূমধ্যসাগর। বিশ্বের সবচেয়ে পুরনো জাতি-রাষ্ট্রের মধ্যে একটি হল ফ্রান্স। মধ্যযুগে ডিউক ও রাজপুত্রদের রাজ্যগুলি একত্র হয়ে একটিমাত্র শাসকের অধীনে এসে ফ্রান্স গঠিত হয়। বর্তমানে ফ্রান্স এর পঞ্চম প্রজাতন্ত্র পর্যায়ে রয়েছে। ১৯৫৮ সালের ২৮শে সেপ্টেম্বর এই প্রজাতন্ত্রের যাত্রা শুরু হয়। রাজনীতিতে কেন্দ্রীয় প্রবণতার উত্থান এবং বেসরকারী খাতের উন্নয়ন এই নতুন ফ্রান্সের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। ফ্রান্স ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্যতম প্রধান সদস্য। ফ্রান্স জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ স্থায়ী সদস্য-দেশের একটি এবং এর ভেটো প্রদানের ক্ষমতা আছে। ভূগোল ফ্রান্সের ভূপ্রকৃতি বিচিত্র। দেশটির উত্তরে উপকূলীয় নিম্নভূমি ও বিস্তৃত সমভূমি। দক্ষিণ-মধ্য ফ্রান্সে আছে পাহাড়ী উঁচুভূমি। আর পূর্বে আছে সবুজ উপত্যকা ও সুউচ্চ বরফাবৃত আল্পস পর্বতমালা। ফ্রান্সের সীমানার প্রায় সর্বত্রই পর্বতময়, ফলে কেবল উত্তর-পূর্বের সীমান্ত বাদে দেশটির প্রায় সর্বত্রই একটি প্রাকৃতিক সীমানা নির্ধারিত হয়েছে। ফ্রান্সের প্রধান নদীগুলি হল সেন, লোয়ার, গারন এবং রোন। প্রশাসনিক অঞ্চলসমূহ ফ্রান্স নগরভিত্তিক রাষ্ট্র। জনসংখ্যার প্রায় তিন-চতুর্থাংশ শহরে বাস করেন। প্যারিস (ফরাসি Paris পারি) ফ্রান্সের রাজধানী ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শহর। ফ্রান্সের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চল প্যারিসের বৃহত্তর মহানগর এলাকাতে প্রায় এক কোটি ২৫ লক্ষ লোকের বাস। এটি বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। ১৯শ শতকের মধ্যভাগে ব্যারন জর্জ ওজেনের সময় সড়কগুলির পরিবর্ধন করে, পুরাতন ভবন ধ্বংস করে ও নতুন নকশা মেনে বহু ভবন নির্মাণ করে পরিকল্পনামাফিক শহরটিকে ঢেলে সাজানো হয়। ফ্রান্সের অন্যান্য বড় শহরের মধ্যে আছে লিয়োঁ (Lyon), যা উত্তর সাগর ও ভূমধ্যসাগরকে সংযোগকারী প্রাচীন রোন উপত্যকায় অবস্থিত। আরও আছে মার্সেই (Marseille), ভূমধ্যসাগরের উপকূলে অবস্থিত একটি বহুজাতিক সমুদ্রবন্দর; গ্রিক ও কার্থেজীয় বণিকেরা খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে এ শহরের পত্তন করে। নঁত (Nantes) আটলান্টিক মহাসাগরের তীরে অবস্থিত একটি গভীর পানির পোতাশ্রয় ও শিল্পকেন্দ্র। বর্দো (Bordeaux) গারন নদীর উপর অবস্থিত দক্ষিণ-পশ্চিম ফ্রান্সের প্রধান শহর। জনসংখ্যা ফরাসিরা বিশ্বের সবচেয়ে স্বাস্থ্যবান, ধনী ও সুশিক্ষিত জাতির একটি। দেশটিতে একটি পূর্ণাঙ্গ সমাজকল্যাণ ব্যবস্থা রয়েছে, যা প্রতিটি ফরাসি নাগরিকের ন্যূনতম জীবনের মান ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করে। বেশির ভাগ ফরাসি নাগরিক ফরাসি ভাষায় কথা বলেন। খ্রিস্টান ধর্মের রোমান ক্যাথলিক ধারা এখানকার মানুষের প্রধান ধর্ম। সংস্কৃতি ফরাসি সংস্কৃতি জগদ্বিখ্যাত; শিল্পকলা, সাহিত্য, গণিত, বিজ্ঞান, প্রকৌশল, নৃবিজ্ঞান, দর্শন ও সমাজবিজ্ঞানের উন্নয়নে ও প্রসারে ফ্রান্সের সংস্কৃতি ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে। মধ্যযুগ থেকেই প্যারিস পাশ্চাত্যের সাংস্কৃতিক জীবনের কেন্দ্রবিন্দু। ফরাসি রন্ধনশৈলী ও পোষাকশৈলী (ফ্যাশন) বিশ্বের সর্বত্র অনুসৃত হয়। রাজনীতি সরকারী ও প্রশাসনিক ক্ষেত্রেও ফ্রান্স প্রভাব রেখেছে; ফ্রান্সই প্রথম বিশ্বকে ফরাসি বিপ্লবের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র উপহার দেয়। ফরাসি বিপ্লবের আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে বহু প্রজন্ম ধরে বিশ্বের অন্যত্র অনেক সংস্কারবাদী ও বিপ্লবী আন্দোলন ঘটে। বৈদেশিক সম্পর্ক দেশটির সঙ্গে অন্যান্য দেশের সুসম্পর্ক রয়েছে। এই দেশের পাসপোর্টে ১২৫টি দেশে বিনা ভিসায় ভ্রমণ করা যায়, যা পাসপোর্ট শক্তি সূচকে ৩য় স্থানে রয়েছে। অর্থনীতি ফ্রান্সের মোট দেশজ উৎপাদনের মূল্য ২৫০০ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি। ফলে ফ্রান্স ইউরোপের তৃতীয় বৃহত্তম ও বিশ্বের ষষ্ঠ বৃহত্তম অর্থনীতি । কৃষিদ্রব্য উৎপাদনে ফ্রান্স ইউরোপের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দেশ; এটি মূলত খাদ্যশস্য, ওয়াইন, পনির ও অন্যান্য কৃষিদ্রব্য ইউরোপ ও সারা বিশ্বে রপ্তানি করে। ফ্রান্স ভারী শিল্পের দিক থেকেও বিশ্বের প্রথম সারির দেশ; এখানে মোটরযান, ইলেকট্রিক যন্ত্রপাতি, ও রাসায়নিক দ্রব্য উৎপাদন করা হয়। তবে ইদানীংকার দশকগুলিতে সেবামূলক শিল্প যেমন ব্যাংকিং, পাইকারী ও খুচরা বাণিজ্য, স্বাস্থ্যসেবা ও পর্যটন ফরাসি অর্থনীতিতে ব্যাপক ও প্রধান ভূমিকা রাখা শুরু করেছে। ফ্রান্স সরকার কর্তৃক নিবন্ধিত কোম্পানির সংখ্যা ২৯ লক্ষ। সেই হিসেবে দেশটিতে প্রতি বারো জনের জন্য একটি করে কোম্পানি রয়েছে। ইতিহাস ফ্রান্স পশ্চিমা বিশ্বের প্রাচীনতম রাষ্ট্রগুলির একটি। এর ইতিহাস সমৃদ্ধ ও বিচিত্র। ফ্রান্সের সর্বপ্রথম অধিবাসীদের সম্পর্কে তেমন বিশেষ কিছু জানা যায় না। দক্ষিণ-পশ্চিম ফ্রান্সের গুহায় পাওয়া ছবিগুলি প্রায় ১৫,০০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের বলে অনুমান করা হয়। খ্রিস্টপূর্ব ৮ম শতক থেকে কেল্টীয় ও অন্যান্য গোত্রের লোকেরা ফ্রান্সে প্রবেশ করতে ও এখানে বসবাস করতে শুরু করে। প্রাচীনকালে ফ্রান্স অঞ্চল কেল্টীয় গল (Gaul) নামে পরিচিত ছিল। প্রাচীন রোমানরা খ্রিস্টপূর্ব ১ম শতকে ফ্রান্সের দখল নেয় এবং খ্রিস্টীয় ৫ম শতকে রোমান সাম্রাজ্যের পতন হওয়ার আগ পর্যন্ত অঞ্চলটি শাসন করে। রোমের পতনের পর অনেকগুলি রাজবংশ ধারাবাহিকভাবে ফ্রান্স শাসন করে। মধ্যযুগে রাজতন্ত্রের প্রভাব খর্ব হয় এবং স্থানীয় শাসকভিত্তিক সামন্তবাদের উত্থান ঘটে। ১৪শ শতক থেকে ১৮শ শতক পর্যন্ত আবার রাজতন্ত্রের ক্ষমতা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায়; এসময় ফ্রান্সের রাজারা ও তাদের মন্ত্রীরা ধীরে ধীরে একটি কেন্দ্রীয় আমলাতন্ত্র ও বড় আকারের সামরিক বাহিনী গড়ে তোলেন। ১৭৮৯ সালে ফরাসি বিপ্লবে রাজতন্ত্রের পতন ঘটে এবং এর পর বহু দশক ধরে ফ্রান্স রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলায় নিমজ্জিত হয়। এ সত্ত্বেও নেপোলিয়ন বোনাপার্টের (স্থানীয় ফরাসি উচ্চারণ নাপোলেওঁ বোনাপার্ত) এর শাসনামলে ফ্রান্স একটি সংহত প্রশাসনিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠালাভ করে। ১৯শ শতকে ও ২০শ শতকের শুরুতে ফরাসি শক্তি ও আর্থিক সমৃদ্ধি বৃদ্ধি পায়। এসময় ফ্রান্স বিশ্বজুড়ে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রতিদ্বন্দ্বী একটি সাম্রাজ্য গড়ে তুলতে সক্ষম হয়। কিন্তু প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রায় পুরোটাই ফ্রান্সের মাটিতে সংঘটিত হয় এবং এর ফলে দেশটির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানি উত্তর ফ্রান্স দখল করলে মধ্য ফ্রান্সের ভিশিতে (Vichy) একটি অস্থায়ী সরকার গঠন করা হয়। ২য় বিশ্বযুদ্ধের পর ফ্রান্স তার ধূলিস্যাৎ অর্থনীতিকে আবার গড়ে তোলে এবং বিশ্বের একটি প্রধান শিল্পরাষ্ট্র হিসেবে আবির্ভূত হয়। বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে ফ্রান্সের উপনিবেশগুলিতে সাম্রাজ্যবিরোধী আন্দোলন জেগে ওঠে এবং এর ফলে ফ্রান্স অচিরেই তার বেশির ভাগ উপনিবেশ হারায়। ১৯৫৮ সালে আলজেরিয়ায় ফরাসিবিরোধী আন্দোলন ফ্রান্সকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিচ্ছিল। এসময় ফরাসি সরকার ২য় বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম ফরাসি নেতা শার্ল দ্য গোল-কে (Charles de Gaulle) একনায়কের ক্ষমতা দান করে। দ্য গোল বিশ্ব রাজনৈতিক অঙ্গনে ফ্রান্সকে অন্যতম প্রধান শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন। সাম্প্রতিককালে ফ্রান্স জার্মানির সাথে একত্রে মিলে গোটা ইউরোপের অর্থনীতি ও রাজনীতির সমন্বয়ে প্রধান ভূমিকা রেখে চলেছে। যোগাযোগ শার্ল দ্য গোল বিমানবন্দর এই দেশের মুখ্য আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। এটি ইউরোপের অন্যতম বৃহত্তম বিমানবন্দর। ছবিতে ফ্রান্স তথ্যসূত্র আরও দেখুন ফ্রান্স-মধ্যপ্রাচ্য সংকট বহিঃসংযোগ সরকারি Official site of the French public service – Links to various administrations and institutions Frenchculturenow.com: French society, culture, politics news Official site of the French Embassy in the United Kingdom Chief of State and Cabinet Members সাধারণ তথ্য France, from the BBC France, from the Encyclopædia Britannica France at UCB Libraries GovPubs OECD France statistics সংস্কৃতি Cocorico! French culture Contemporary French Civilization, journal, University of Illinois. বিষয়শ্রেণী:ফ্রান্স বিষয়শ্রেণী:প্রজাতন্ত্র বিষয়শ্রেণী:ইউরোপের রাষ্ট্র বিষয়শ্রেণী:জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র
ফ্রান্স
লোহাগড়া উপজেলা বাংলাদেশের নড়াইল জেলার একটি প্রশাসনিক এলাকা। অবস্থান ও আয়তন লোহাগাড়া উপজেলার মোট আয়তন . উত্তরে মাগুরা জেলার মহম্মদপুর উপজেলা, পূর্বে গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী উপজেলা, দক্ষিণে নড়াইল জেলার কালিয়া উপজেলা এবং পশ্চিমে নড়াইল সদর উপজেলা অবস্থিত। প্রশাসনিক এলাকা এই উপজেলার ইউনিয়নগুলো হচ্ছে - নলদী ইউনিয়ন লাহুড়িয়া ইউনিয়ন শালনগর ইউনিয়ন নোয়াগ্রাম ইউনিয়ন লক্ষীপাশা ইউনিয়ন জয়পুর ইউনিয়ন, লোহাগড়া লোহাগড়া ইউনিয়ন দিঘলিয়া ইউনিয়ন মল্লিকপুর ইউনিয়ন কোটাকোল ইউনিয়ন ইতনা ইউনিয়ন কাশিপুর ইউনিয়ন ইতিহাস জনসংখ্যার উপাত্ত শিক্ষা লোহাগড়া উপজেলায় ৫ টি কলেজ, ৩৪ টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৩ টি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ১৫৫ টি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ৮ টি মাদ্রাসা রয়েছে। এবং রামনারায়ন পাবলিক লাইব্রেরি (1901) নামে একটা লাইব্রেরি আছে অর্থনীতি নদ-নদী লোহাগড়া উপজেলায় অনেকগুলো নদী রয়েছে। নদীগুলো হচ্ছে নবগঙ্গা নদী ও মধুমতি নদী। বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব মাশরাফি বিন মর্তুজা -ক্রিকেটার ও বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক। তিনি একজন সাংসদ আরও দেখুন নড়াইল জেলা খুলনা বিভাগ বাংলাদেশের উপজেলাসমূহ তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ বিষয়শ্রেণী:লোহাগড়া উপজেলা বিষয়শ্রেণী:নড়াইল জেলার উপজেলা বিষয়শ্রেণী:খুলনা বিভাগের উপজেলা
লোহাগড়া উপজেলা
জমিদার কচু রায়ের নামানুসারে কচুয়া নামকরণ হয়েছে বলে জানা যায়। কচুয়া উপজেলার আয়তন ১৩১.৬২ বর্গ কিলোমিটার। লোকসংখ্যা লক্ষাধিক। কচুয়া বাগেরহাটের সর্বপ্রথম থানা। কচুয়ার পূর্বে পিরোজপুর জেলার নাজিরপুর উপজেলা পশ্চিমে বাগেরহাট সদর উপজেলা, উত্তরে চিতলমারী এবং দক্ষিণে মোড়েলগঞ্জ ও শরণখোলা উপজেলা। কচুয়া আগে বাকেগঞ্জ তথা বরিশালের একটি প্রশাসনিক ইউনিট ছিল। ১৮৬৩ সালে বাগেরহাটকে মহকুমা করা হলে কচুয়াকে বরিশাল থেকে কেটে এনে বাগেরহাটের (তৎকালীন যাশোর জেলার) অন্তর্ভুক্ত করা হয়। নারিকেল সুপারী উৎপাদনে কচুয়ার বিশেষ খ্যাতি আছে। কচুয়া উপজেলার উল্লেখযোগ্য জলাশয় হিসেবে বলেশ্বর, তালেশ্বর ও বিষখালী নদী ও লড়ার খাল উল্লেখযোগ্য। কচুয়া উপজেলায় মোট সাতটি ইউনিয়ন রয়েছে: কচুয়া (৫৭), গজালিয়া (৩৮), গোপালপুর (৪৭), ধোপাখালী (২৮), বাধাল (০৯), মঘিয়া (৬৬), রাড়িপাড়া (৭৬)। কচুয়া উপজেলাতে গ্রাম রয়েছে সর্বমোট ১০১টি। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে কচুয়া উপজেলার মুক্তিযোদ্ধাদের যেমন বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে, তেমনি স্বাধীনতা বিরোধী রাজাকার বাহিনী এবং হন্তারক পাকিস্তানি বাহিনীর নৃশংসতার ঘটনাও রয়েছে। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, উপজেলার মঘিয়া ইউনিয়নের ভাসা বাজারে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে রাজাকার বাহিনীর একটি সন্মুখ যুদ্ধ সংগঠিত হয়েছিল। পিছন থেকে অতর্কিতে আক্রমণ করে কিশোর আলফাজ হোসে ননী সহ চারজন মুক্তিযোদ্ধার জীবন কেড়ে নিয়েছিল রাজাকার বাহিনী।    এছাড়া এ উপজেলার গণহত্যার ঘটনাগুলো খুবই হৃদয় বিদারক। প্রতিটি ইউনিয়নে গণহত্যার ঘটনা পাওয়া গিয়েছে। এর মধ্যে কচুয়া সদর ইউনিয়নে ২টি, বাধাল ইউনিয়নে ২টি, গজালিয়ায় ১টি, গোপালপুর ২টি, মঘিয়ায় ৩টি এবং রাড়িপাড়ায় ২টি গণহত্যার সন্ধান পাওয়া গেছে। অবস্থান ও আয়তন এই উপজেলার পূর্বে নাজিরপুর উপজেলা, উত্তরে চিতলমারী উপজেলা, দক্ষিণে মোড়েলগঞ্জ উপজেলা, পশ্চিমে বাগেরহাট সদর উপজেলা। প্রশাসনিক এলাকা কচুয়া উপজেলার ইউনিয়নগুলো হচ্ছে - বাধাল ইউনিয়ন, গজালিয়া ইউনিয়ন ধোপাখালী ইউনিয়ন মঘিয়া ইউনিয়ন কচুয়া ইউনিয়ন গোপালপুর ইউনিয়ন রাড়ীপাড়া ইউনিয়ন ইতিহাস জনসংখ্যার উপাত্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কচুয়া দাখিল মাদরাসা। টেংরাখালি হো:আলিম মাদরাসা। মাধপকাঠি আহমাদিয়া কামিল মাদরাসা। নুরজাহানপুর দাখিল মাদরাসা। মঘিয়া আলিম মাদরাসা। চরশোনাকুর আলিম মাদরাসা। চরশোনাকুর মহিলা মাদরাসা। কচুয়া ডিগ্রি কলেজ। সরকারী শহীদ শেখ আবু নাসের মহিলা কলেজ। মাজেদা বেগম কৃষি প্রযুক্তি কলেজ। মোবাইদুল ইসলাম মাধ্যমিক বিদ্যালয়। সি এস পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়। গোপালপুর শহীদ আসাদ স্মৃতি মাধ্যমিক বিদ্যালয়। ১ নং বারুইখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। কচুয়া মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। গোপালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। উত্তর গোপালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। অর্থনীতি উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ, বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা। তমা মির্জা, চিত্রশিল্পী ডাঃ পঞ্চানন মুন্স, চিকিৎসক সন্তোষ কুমার দাস,শিক্ষাবিদ আরও দেখুন বাগেরহাট জেলা; খুলনা বিভাগ; বাংলাদেশের উপজেলাসমূহ। তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ বিষয়শ্রেণী:কচুয়া উপজেলা, বাগেরহাট বিষয়শ্রেণী:বাগেরহাট জেলার উপজেলা বিষয়শ্রেণী:খুলনা বিভাগের উপজেলা
কচুয়া উপজেলা, বাগেরহাট
শার্শা উপজেলা বাংলাদেশের যশোর জেলার একটি প্রশাসনিক এলাকা। শার্শা উপজেলা পরিষদ কার্যালয়,উপজেলা ভুমি অফিস,শিক্ষা অফিস,শার্শা মডেল প্রাইমারি স্কুল,শার্শা পাইলট হাইস্কুল সহ বিভিন্ন সরকারি,আধা-সরকারি ও বেসরকারি অফিস এই উপজেলার প্রাণ কেন্দ্রে অবস্থিত। এছাড়াও শার্শা উপজেলায় অবস্থিত দেশের সবচেয়ে বড় স্থলবন্দর (বেনাপোল স্থলবন্ধর) এবং দেশের প্রথম শ্রেণির পৌরসভা বেনাপোল পৌরসভা এই উপজেলার অন্তর্গত। বেসরকারি ভারী শিল্পপ্রতিষ্ঠান হিসাবে এই উপজেলাতে আফিল জুট উইভিং মিলস লিঃ নামের একটি জুট মিল ও আফিল এগ্রো লিঃ নামে কৃষিভিত্তিক শিল্পপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। অবস্থান ও আয়তন জেলা সদর হতে ৩১ কিলোমিটার দুরত্বে যশোর-বেনাপোল সড়কের উত্তর পাশ্বে অবস্থিত। শার্শা উপজেলাটি প্রায় ২২. ৫৪ডিগ্রি ও ২৩. ১৩ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮. ৫১ ডিগ্রি ও ৮৯.০১ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত। শার্শা উপজেলার উত্তরে চৌগাছা উপজেলা, পূর্বে ঝিকরগাছা উপজেলা, দক্ষিণে সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলা ও পশ্চিমে ভারতের পশ্চিম বঙ্গ। ইতিহাস শার্শা উপজেলার নামকরণের সঠিক কোন ইতিহাস জানা যায় না। তবে জনশ্রুতি আছে, শার্শা মৌজায় উপজেলা হেডকোয়ার্টার অবস্থিত হওয়ায় শার্শা মৌজার নাম অনুসারে শার্শা উপজেলার নামকরণ হয়েছে। প্রশাসনিক এলাকা এই উপজেলার ইউনিয়নগুলো হচ্ছ - ডিহি ইউনিয়ন লক্ষণপুর ইউনিয়ন বাহাদুরপুর ইউনিয়ন বেনাপোল ইউনিয়ন পুটখালী ইউনিয়ন গোগা ইউনিয়ন কায়বা ইউনিয়ন বাগআঁচড়া ইউনিয়ন উলাশী ইউনিয়ন শার্শা ইউনিয়ন এবং নিজামপুর ইউনিয়ন এছাড়া, বেনাপোল পৌরসভা। জনসংখ্যার উপাত্ত মোট পরিবার সংখ্যাঃ ৬৬,১৯৫টি এবং মোট জনসংখ্যা ৩,০৯,৬৩৩ জন। শিক্ষা শিক্ষার হার ৪২.৭৪%। এখানে রয়েছেঃ কলেজ - ৮টি (ডিগ্রী - ৫টি, উচ্চ মাধ্যমিক - ৩টি); মাধ্যমিক বিদ্যালয় - ৩১টি; নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় - ৪টি; মাদ্রাসা - ১০২ (ফাজিল - ৭টি, আলিম - ৭টি, দাখিল - ১৮টি, এবতেদায়ী - ৪০টি, ফোরকানিয়া - ৩০টি); প্রাথমিক বিদ্যালয় - (সরকারি - ৭৩টি, বে-সরকারি - ২৯টি, স্যাটেলাইট - ১০টি, কিন্ডারগার্ডেন - ১৮টি, কমিউনিটি - ১২টি, এনজিও পরিচালিত - ১০০টি)। জানুয়ারী ২০০৯ এর তথ্যানুযায়ীঃ ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যাঃ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় - ৩৬,৯৬৯ জন মাধ্যমিক বিদ্যালয় + মাদ্রাসা- ২৭,৯২৫ জন কলেজ - ৩,০৩৯ জন। কৃষি মোট জমির পরিমাণঃ ৩৩,৬৪২.১৯ হেক্টর। মোট আবাদী জমির পরিমানঃ ২৯,২৪০ হেক্টর; ফল, বাগান ও বনজঃ ১,০০০ হেক্টর, মৌসুমী আবাদী জমিঃ ২৮,২৪০ হেক্টর। এক ফসলী জমির পরিমানঃ ৫২৩ হেক্টর, দো-ফসলী জমির পরিমানঃ ১৪,১২৪ হেক্টর, তে-ফসলী জমির পরিমানঃ ১৩,৯৯৩ হেক্টর, তিনের অধিক ফসলীঃ ৬০০ হেক্টর। আউশ (উন্নত) - ৩৬,৪৩২ একর, রোপা আমন(উফসী) - ৫০,৩৩৮ একর, বোরো(উফসী) - ৫৬,১০০ একর, গমঃ ১৮,০৫২ একর, পাটঃ ৬,২৯৮ একর, তুলাঃ ২৪ একর। গভীর নলকুপঃ ৩৭৮টি, অগভীর নলকুপঃ ১৩,৪৩৪টি, পাওয়ার পাম্পঃ ১৯৫টি। বিসিআইসি সার ডিলার সংখ্যাঃ ১৪ জন, মোট বিএুয় কেন্দ্রের সংখ্যাঃ ৪৩ টি, কীটনাশক হোলসেল ডিলারঃ ১২ জন, খুচরা ডিলারঃ ২১৯ জন, উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা (ব্লক সুপারভাইজার) - ২৪ জন। মোট উৎপাদিত খাদ্যশস্যঃ ১,৮১,৮৫৫ মেঃ টন, মোট খাদ্যশস্যের চাহিদাঃ ৮৩,৮৯৮ মেঃ টন, উদ্বৃত্ত খাদ্য শস্যঃ ৯৭,৯৯৭ মেঃ টন। নার্সারিঃ ৩০টি(পুকুর), জলমহালঃ ৮টি, পুকুরঃ সরকারীঃ ৩২টি এবং বে-সরকারীঃ ৪১৩২টি। মৎস্য ঘেরের সংখ্যা-৪৫১টি, উৎপাদিত মাছের নামঃ রুই,কাতলা, মৃগাল, পাঙ্গাশ, তেলাপিয়া,পাবদা,ব্লাককার্প,কইমাছ ইত্যাদি । রেজিঃ দুগ্ধ খামারঃ ৬৩টি, মোটাতাজাকরণ খামারঃ ৭৬টি, ছাগলের খামারঃ ০৯টি, রেজিঃ ব্রয়লার খামারঃ ৬৮টি, রেজিঃ লেয়ার খামারঃ ১৪টি, হাঁসের খামারঃ ০১টি। পশু চিকিৎসালয়ঃ ০১টি, কৃত্রিম প্রজনন উপ-কেন্দ্রঃ ০১টি, কৃত্রিম প্রজনন পয়েন্টঃ ০৩টি, কৃত্রিম প্রজনন সেবা কেন্দ্রঃ ০৬টি। বিবিধ পাঠাগার - ১টি। সাহিত্যপত্রিকা- অর্বাচীন, শ্রদ্ধাঞ্জলি(২১ শে সংকলন) গানের দল- Offline (লোকজ ও সমসাময়িক) পর্যটন- বাহাদুরপুর মেন্দে বাওড়, সোনামুখি বিল বাংলাদেশের পর্যটন কর্পোরেশন- পর্যটন মোটেল। আধুনিক রেঁস্তোরা- THE SUN ROOF আরও দেখুন যশোর জেলা খুলনা বিভাগ তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ বিষয়শ্রেণী:যশোর জেলার উপজেলা বিষয়শ্রেণী:খুলনা বিভাগের উপজেলা বিষয়শ্রেণী:শার্শা উপজেলা
শার্শা উপজেলা
দাকোপ উপজেলা পশুর নদীর পাড়ে অবস্থিত বাংলাদেশের খুলনা জেলার একটি প্রশাসনিক এলাকা। দাকোপের প্রশাসনিক অঞ্চল চালনায় অবস্থিত। দাকোপের সাথে খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলা, পাইকগাছা উপজেলা এবং বাগেরহাটের মোংলা উপজেলার সীমানা রয়েছে। অবস্থান ও আয়তন দাকোপের ভৌগোলিক অবস্থান । দাকোপের মোট আয়তন ৯৯১.৫৮ কিমি²। উত্তরে বটিয়াঘাটা উপজেলা, পূর্বে বটিয়াঘাটা ও রামপাল উপজেলা, দক্ষিণে সুন্দরবন এবং পশ্চিমে পাইকগাছা উপজেলা। ইতিহাস ১৯১৩ সালে দাকোপ থানার প্রশাসনিক কার্যক্রম শুরু হয় এবং ১৯৮৩ সালে উপজেলা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ১০ টি ইউনিয়ন পরিষদ, ২৬ মৌজা এবং শতাধিক গ্রাম নিয়ে দাকোপ থানা গঠিত। ১৯৭১ সালে দাকোপে অবস্থিত বাজুয়া উচ্চবিদ্যালয় প্রাঙ্গনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কর্তৃক গণহত্যা সংঘটিত হয়। শহীদদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে উপজেলা পরিষদ ভবনের সামনে যুদ্ধ সৌধ স্মৃতি অম্লান নির্মাণ করা হয়েছে। প্রশাসনিক এলাকা দাকোপ উপজেলা ৮টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত, সেগুলি হল: বাজুয়া ইউনিয়ন কামারখোলা ইউনিয়ন তিলডাঙ্গা ইউনিয়ন সুতারখালী ইউনিয়ন লাউডোব ইউনিয়ন পানখালী ইউনিয়ন বানিশান্তা ইউনিয়ন কৈলাশগঞ্জ ইউনিয়ন জনসংখ্যার উপাত্ত জনসংখ্যা ১৫৭৪৮৯; পুরুষ ৮৩১৯৩, মহিলা ৭৪২৯৬। মুসলিম ৬৫৭৫৬, হিন্দু ৮৮৮৪২, বৌদ্ধ ২৭৬০ এবং অন্যান্য ১৩১। স্বাস্থ্য শিক্ষা প্রাথমিক বিদ্যালয় বটবুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় গুনারী শীতল চন্দ্র প্রাথমিক বিদ্যালয় আড়াখালি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বটবুনিয়া জে. এন. সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় হামিদা খাতুন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সোনাপাখি প্রি-ক্যাডেট স্কুল নতুনকুঁড়ি কিন্ডারগার্টেন দক্ষিণ গুনারী উপেন নগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কাচারীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাধ্যমিক বিদ্যালয় গুনারী শীতল চন্দ্র মাধ্যমিক বিদ্যালয় কৈলাশগঞ্জ মাধ্যমিক বিদ্যালয় বটবুনিয়া কলেজিয়েট স্কুল মোজামনগর মাধ্যমিক বিদ্যালয় নলিয়ান মাধ্যমিক বিদ্যালয় কালাবগী সুন্দারবন মাধ্যমিক বিদ্যালয় জে পি মাধ্যমিক বিদ্যালয় চালনা কে সি মাধ্যমিক বিদ্যালয় কলেজ চালনা কলেজ চালনা এম এম কলেজ বাজুয়া সুরেন্দ্রনাথ ডিগ্রি কলেজ কৃষি অর্থনীতি দাকোপ থানার অর্থনীতি কৃষি এবং চিংড়ি চাষের উপর নির্ভরশীল। এই থানার বিস্তৃত এলাকা জুড়ে চিংড়ি ঘেরগুলোতে বাগদা চিংড়ির চাষ হয়। যোগাযোগ দর্শনীয় স্থান ও স্থাপনা সুন্দরবন বিবিধ আরও দেখুন খুলনা জেলা; খুলনা বিভাগ; বাংলাদেশের উপজেলাসমূহ। তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ বিষয়শ্রেণী:দাকোপ উপজেলা বিষয়শ্রেণী:খুলনা জেলার উপজেলা বিষয়শ্রেণী:খুলনা বিভাগের উপজেলা
দাকোপ উপজেলা
শ্যামনগর বাংলাদেশের খুলনা বিভাগের অন্তর্গত সাতক্ষীরা জেলার একটি উপজেলা। অবস্থান ও আয়তন বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থিত উপজেলা হল শ্যামনগর। ১৯৬৮.২৪ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২১°৩৬´ থেকে ২২°২৪´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°০০´ থেকে ৮৯°১৯´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে কালীগঞ্জ (সাতক্ষীরা) ও আশাশুনি উপজেলা, দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর, পূর্বে কয়রা ও আশাশুনি উপজেলা, পশ্চিমে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য । জনসংখ্যা মোট জনসংখ্যা ৩১৩৭৮১; পুরুষ ১৬০২৯৪, মহিলা ১৫৩৪৮৭। মুসলিম ২৪৩২৫৭, হিন্দু ৭০১৫১, বৌদ্ধ ৫৬, খ্রিস্টান ২০ এবং অন্যান্য ২৯৭। এ উপজেলায় মুন্ডা, ভগবেনে, চন্ডাল, কৈবর্ত প্রভৃতি নৃগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে। প্রশাসনিক এলাকা শ্যামনগর থানা গঠিত হয় ১৮৯৭ সালে। শ্যামনগর থানায় ১২টি ইউনিয়ন, ১২৭টি মৌজা/মহল্লা এবং ২১৬টি গ্রাম আছে। ইউনিয়নগুলো হলো: ভুরুলিয়া ইউনিয়ন কাশিমাড়ী ইউনিয়ন শ্যামনগর ইউনিয়ন নূরনগর ইউনিয়ন কৈখালী ইউনিয়ন রমজাননগর ইউনিয়ন মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়ন ঈশ্বরীপুর ইউনিয়ন বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন আটুলিয়া ইউনিয়ন পদ্মপুকুর ইউনিয়ন গাবুরা ইউনিয়ন শিক্ষা শিক্ষার হারঃ ৬৪.৮৪%; পুরুষ ৩৮%, মহিলা ২৬.৮৪%। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানঃ ২৭৫টি; কলেজ ০৭, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৪৩, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৮৯, কমিউনিটি স্কুল ০৩, মাদ্রাসা ৩৬। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: শ্যামনগর সরকারি মহসীন ডিগ্রি কলেজ (১৯৭২), আতরজান মহিলা মহাবিদ্যালয়, নকিপুর সরকারি হরিচরণ মাধ্যমিক উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৯৯), নকিপুর হরিচরণ বালিকা বিদ্যালয়, ভুরুলিয়া নাগবাটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ভুরুলিয়া (১৯৪৫), নূরনগর আশালতা মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯৫৫) পাতাখালি মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯৫৪), মুন্সিগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ, গোবিন্দপুর কলেজিয়েট স্কুল, ভুরুলিয়া সিরাজপুর মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, সিরাজপুর। পাতাখালি সিনিয়র মাদ্রাসা (১৯৪৫), জয়নগর হামিদিয়া সিনিয়র মাদ্রাসা (১৯৬৩)। উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব পচাব্দী গাজী - প্রখ্যাত শিকারী। রাজা হরিচরণ রায় চৌধুরি - সমাজসেবী। ফজলুল হক- মুক্তিযোদ্ধা, সাবেকসংসদ সদস্য । জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় - আবৃত্তিকার ও অভিনেতা। প্রাচীন নিদর্শন ও দর্শনীয় স্থান ১. যশোরেশ্বরী মন্দির (ঈশ্বরীপুর), রাজা প্রতাপাদিত্য কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত। ২. বংশীপুর শাহী মসজিদ (মুগল আমলে নির্মিত), ৩. নকিপুর হরিচরণ রায়চৌধুরীর বিখ্যাত জমিদার বাড়, শ্যামনগর জমিদার বাড়ি। নুরুল্লা খাঁ মাযার (নূরনগর), ইশ্বরীপুর হাম্মামখানা|ছয় গম্বুজবিশিষ্ট হাম্মামখানা]] (বংশীপুর), ভুরুলিয়া সার্বজনীন কালীমন্দির, চন্ড ভৈরবের মন্দির (ঈশ্বরীপুর), যীশুর গির্জা (১৫৯৯), গোবিন্দ দেবের মন্দির (গোপালপুর, ১৫৯৩), জাহাজঘাটা নৌদুর্গ (খানপুর, ভুরুলিয়া), রাজা প্রতাপাদিত্যের রাজধানী, ধুমঘাট। ঐতিহাসিক গোপালপুর স্মৃতিসৌধ </div> আকাশনীলা পার্ক, মুন্সিগঞ্জ অন্যান্য দর্শনীয় স্থান মান্দারবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত, আকাশনীলা ইকো ট্যুরিজম সেন্টার, কলাগাছি, সুন্দরবন, গোপালপুর দীঘি পার্ক। জাহাজঘাটা-ভুরুলিয়া, শ্যামনগর। তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ শ্যামনগর উপজেলা(বাংলাপিডিয়া) বিষয়শ্রেণী:সাতক্ষীরা জেলা বিষয়শ্রেণী:সাতক্ষীরা জেলার উপজেলা
শ্যামনগর উপজেলা
কালীগঞ্জ উপজেলা বাংলাদেশের ঝিনাইদহ জেলার একটি প্রশাসনিক এলাকা। এগারোটি ইউনিয়ন নিয়ে এই উপজেলা গঠিত। এই এগারোটি ইউনিয়নে ১৯৮ গ্রামে ৬৭,৮৪১ টি পরিবার (খানা) রয়েছে। কালীগঞ্জ উপজেলা লোকসংখ্যা ২,৮২,৩৬৬ এর বেশি। অবস্থান ও আয়তন কালীগঞ্জ উপজেলার মোট আয়তন ৩১০.১৬ বর্গ কিলোমিটার। কালীগঞ্জ উপজেলার অবস্থান ২৩.১৬ উত্তর অক্ষাংশ থেকে ২৩.২৮ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯.০২ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ থেকে ৮৯.১৬ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে। এর উত্তরে ঝিনাইদহ সদর উপজেলা, দক্ষিণে যশোর সদর ও চৌগাছা উপজেলা, পূর্বে শালিখা ও বাঘারপাড়া উপজেলা, পশ্চিমে কোটচাঁদপুর ও চৌগাছা উপজেলা অবস্থিত। প্রশাসনিক এলাকা ১৮৬৩ সালের পূর্বে কালীগঞ্জ নলডাঙ্গা রাজবাড়ী প্রসাশনের অন্র্তভূক্ত ছিল। ১৮৬৩ সালে কালীগঞ্জ থানার সৃষ্টি হয়। কালীগঞ্জ থানাকে উপজেলায় রুপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে। এই উপজেলায় ১টি পৌরসভা, ১১ টি ইউনিয়ন, ১৮৮টি মৌজা এবং ১৯৮টি গ্রাম রয়েছে। কালীগঞ্জ উপজেলার ইউনিয়ন ও এর জিও কোড হলঃ সুন্দরপুর-দুর্গাপুর ইউনিয়ন। এর জিও কোড-৩৩ জামাল ইউনিয়ন। এর জিও কোড-২০ কোলা ইউনিয়ন। এর জিও কোড-৪৭ নিয়ামতপুর ইউনিয়ন। এর জিও কোড-৬১ সিমলা-রোকনপুর ইউনিয়ন। এর জিও কোড-৮৮ ত্রিলোচনপুর ইউনিয়ন। এর জিও কোড-৯৪ রায়গ্রাম ইউনিয়ন। এর জিও কোড-৭৪ মালিয়াট ইউনিয়ন পরিষদ। এর জিও কোড-৫৪ বারবাজার ইউনিয়ন পরিষদ। এর জিও কোড-১০ কাষ্টভাঙ্গা ইউনিয়ন। এর জিও কোড-৪০ রাখালগাছি ইউনিয়ন। এর জিও কোড-৮১ জনসংখ্যা উপাত্ত উপজেলার মোট জনসংখ্যা ২৫২,৪৪৩ জন। এর মধ্যে পুরুষের সংখ্যা ১৩০,৭১৬ জন এবং মহিলার সংখ্যা ১২১,৭২৭ জন। ধর্মাবলম্বী অনুসারে- * মুসলিম ২১০,৪৪১ জন, * হিন্দু ৪১,২১৪ জন, * বৌদ্ধ ৫৮৭ জন, * খ্রিস্টান ৩৫ জন, * অন্যান্য ১২৬ জন লোক বসবাস করে । ইতিহাস thumb|মোবারকগঞ্জ চিনিকল এই গঞ্জ শহর প্রতিষ্ঠা করে নলডাঙ্গা রাজা প্রমথভূষণ দেবরায়। এটি নলডাঙ্গা রাজবংশ-এর তহশীল ভুক্ত ছিল। প্রায় দেড়শ বছর পূর্বে বর্তমান স্থানে এই শহরের গোড়াপত্তন। কালী দেবী-এর নামানুসারে নামকরণ করা হয় কালীগঞ্জ। পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক জটিলতায় কখনও আলীগঞ্জ, কখনও মোবারকগঞ্জ, কখনও মধুগঞ্জ নামকরণ করা হলেও শেষ পর্যন্ত কালীগঞ্জ নামটি তার ঐতিহাসিকতা নিয়ে টিকে আছে। ব্রিটিশ আমলে এখানে নদী উপর ব্রিজ এবং রেল স্টেশন নির্মিত হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শুরুতে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে সোচ্চার হয়ে ওঠে এখানকার গণমানুষ। মুসলিম লীগের মোবারক আলী (?-১৯৫৯) এই আন্দোলনে এখানকার অন্যতম নেতা ছিলেন। পূর্ব-পাকিস্তান সময়ে মোবারক আলীর নামে মোবারকগঞ্জ চিনিকল, মোবারকগঞ্জ চিনিকল মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মোবারকগঞ্জ স্টেশনের নামকরণ করা হয়। মুক্তিযুদ্ধে কালীগঞ্জ যশোর এবং ঝিনাইদহ সীমান্তে মহিষাহাটি গ্রামের মান্দারতলায় ১৯৭১ সালের ১৩ এপ্রিল মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর যুদ্ধ হয়। এই যুদ্ধে ২০ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন এবং আনুমানিক ১০০ পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়। মুক্তিযোদ্ধারা মান্দারতলা থেকে পিছু হটে আসে। পরদিন ১৪ এপ্রিল দুলালমুন্দিয়ায় প্রতিরক্ষা ব্যুহ গড়ে তোলে। কিন্তু যশোর ক্যান্টনমেন্ট পাকিস্তানিদের খুব শক্ত ঘাঁটি ছিল। ফলে তারা পিছন থেকে আক্রমণ করে। এইদিনের যুদ্ধে আনুমানিক ১৫০ থেকে ২০০ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে পরিণতির সময়ে ৫ ডিসেম্বর ১৯৭১ কালীগঞ্জ শত্রুমুক্ত হয়। কালীগঞ্জ উপজিলার ৩১৭ জন মুক্তিযোদ্ধা বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ নিয়েছিলেন। এই শহরে একটি মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিচিহ্ন স্তম্ভ রয়েছে। নদনদী ও জলাশয় কালীগঞ্জ উপজেলায় অনেকগুলো নদী রয়েছে। নদীগুলো হচ্ছে চিত্রা নদী, ভৈরব নদ ও বেগবতী নদী। বেগবতী নদী জেলা সদর থেকে আলাদা করেছে। বারোবাজার ইউনিয়নের উপর দিয়ে প্রবাহিত ভৈরব নদী যশোর জেলা হতে এই উপজেলাকে আলাদা করেছে। এছাড়া মর্জাদ, মাজদিয়া, বারফা, চাঁদবার বাওড় ও সিমলা বাওড় রয়েছে। বিলের মধ্যে সাকোট, উত্তর, দিঘার, অরুয়া সালভা এবং তেঁতুল বিল উল্লেখযোগ্য। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমুহ সরকারি এম ইউ কলেজ। শহীদ নূর আলী কলেজ,কালীগঞ্জ। সরকারি ভূষণ হাইস্কুল হাসানহাটি বড় ধোপাদি এবাদৎ আলী মাধ্যমিক বিদ্যালয় রায়গ্রাম বানীকান্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয় , সিংগীর বাজার, রায়গ্রাম। পাঁচকাহুনিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়,বারোবাজার,ঝিনাইদহ । বারবাজার মাধ্যমিক বিদ্যালয়। মেগুরখির্দ্দা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। বারফা প্রাথমিক বিদ্যালয়। আসাদুজ্জামান হোসনিন কেয়াবাগান আদর্শ কলেজ মোবারকগঞ্জ চিনিকল মাধ্যমিক বিদ্যালয় বাবরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পুখুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মনোহরপুর পুকুরিয়া দাখিল মাদ্রাসা পাইকপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় দয়াপুর ভাতঘরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়o ভাতঘরা দয়াপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় সলিমুন্নেছা পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় নলডাঙ্গা ভূষণ সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় নলডাঙ্গা ভূষণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বি.এইস.এবি মুন্দিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়,কেয়াবাগান,আগমুন্দিয়া বুজিডাঙ্গা মুন্দিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয় বঙ্গ বন্ধু শেখ মুজিব মাধ্যমিক বিদ্যানিকেতন,ঝনঝনিয়া। দর্শনীয় স্থান নলডাঙ্গা রাজবাড়ি(এনআরবি) রিসোর্ট এন্ড পিকনিক স্পট বর্তমান নাম এনআরবি পার্ক এন্ড রিসোর্ট, নলডাঙ্গা বাজারের দক্ষিণপাশে মোবাইল০১৭১৩০৮৭৩০০। এখানকার সুইতলা মল্লিকপুর নামক স্থানে এশিয়ার বৃহত্তম বট গাছ রয়েছে। বারোবাজার সুলতানী আমলের মসজিদ এবং নলডাঙ্গা মঠবাড়ী রাজাদের নির্মিত অনেকগুলো মন্দির। উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থানের মধ্যে রয়েছেঃ গাজীকালু চম্পাবতীর মাজার, গলাকাটা মসজিদ, জোড়বাংলা মসজিদ, পীর বলুদেওয়ান এর মাজার। এছাড়াও বলুদেওয়ানের মাজার, এটি কালিগঞ্জ থানার রাখালগাছি ইউনিয়নের হাসানহাটি গ্রাম ও ধোপাদি গ্রামের মিলন কেন্দ্রে অবস্থিত। উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব কাজী মুতাসিম বিল্লাহ, ইসলামি পণ্ডিত; জামিয়া শরইয়্যাহ মালিবাগ, ঢাকার মহাপরিচালক (১৯৩৩ — ২০১৩) তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ বিষয়শ্রেণী:কালীগঞ্জ উপজেলা, ঝিনাইদহ বিষয়শ্রেণী:ঝিনাইদহ জেলার উপজেলা বিষয়শ্রেণী:খুলনা বিভাগের উপজেলা
কালীগঞ্জ উপজেলা, ঝিনাইদহ
সরাইল উপজেলা বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার অন্তর্গত একটি প্রশাসনিক এলাকা। আয়তন সরাইল উপজেলা আয়তন ২১৫.২৮ বর্গ কিলোমিটার (৫৩,১৯৬ একর)। অবস্থান ও সীমানা উপজেলার ভৌগোলিক অবস্থান : সরাইল উপজেলা ২৪°০০´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১°১৫´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর হতে ১২ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত। এ উপজেলার উত্তরে নাসিরনগর উপজেলা; পূর্বে বিজয়নগর উপজেলা; দক্ষিণে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা ও আশুগঞ্জ উপজেলা এবং পশ্চিমে মেঘনা নদী, কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব উপজেলা ও বাজিতপুর উপজেলা অবস্থিত। এর পাশ দিয়ে বয়ে গেছে মেঘনা,তিতাস ও লাহুর নদী। সরাইল উপজেলা সদরের আয়তন ১৪.০৩ বর্গ কিলোমিটার। এটি ঢাকা-সিলেট ও কুমিল্লা সিলেট মহাসড়কের পাশে অবস্থিত। নামকরণ ও ইতিহাস সর অর্থ সরোবর বা হূদ। এটাকে ব্যাখ্যা করলে বুঝায় বিশাল জলাশয় আর আইল শব্দের অর্থ বাঁধ বা উঁচুভূমি। অর্থাৎ প্রাচীনকালে এ এলাকা ছিল বিশাল জলরাশিতে ভরা এক জলমগ্ন স্থান। কালের বিবর্তনে এখানে ধীরে ধীরে বেশ কিছু চর পড়তে থাকে যা দুর থেকে জমির আইল বা বাঁধের মত দেখাতো। এতে করে বিশাল জলাশয়ের সরঃ জেগে উঠা আইলে বা ভূখন্ডে জনপদ গড়ে উঠতে থাকে আর তাই অর্থাৎ বিশাল জলরাশিতে জেগে উঠা ভূখন্ডে সরঃ + আইল = সরাইল নামে পরিচিতি পায়। ওই বিশাল জলরাশিকে কালীধর সায়র বা কালীদহ সাগর বলে গবেষকরা চিহ্ণিত করেছেন,যা প্রাচীনকাল থেকে এ এলাকার বিভিন্ন অঞ্চলে কবি গান ও পুঁথি পাঠ আসরের গাওয়া বন্দনা- গীতির শুরুতেই উল্লেখ পাওয়া যায়। অন্য একটি মতে, সরাইখানা শব্দের অর্থ ক্ষণস্থায়ী বসবাস। ফার্সী ঈল শব্দের অর্থ বিদ্রোহী বন্ধু। সরাইখানার সরাই ও ঈল শব্দ মিলে (সরাই+ঈল) সরাইল শব্দের উৎপত্তি। অর্থাৎ বিদ্রোহী বন্ধুর বাসস্থান। ১৩৩৮ খ্রিষ্টাব্দে ফখরুদ্দিন মোবারক শাহ, বাহরাম খানের শিলহদর (বর্মরক্ষক) অর্থাৎ দেহরক্ষী হিসেবে বিদ্রোহী হয়ে তিনি যে স্থানের সামরিক প্রস্ততির জন্য ক্ষণস্থায়ী রাজধানী স্থাপন করেছিলেন সেই স্থানটি দিল্লীর সুলতান ও সভাসদগণ এবং স্থপতিগণ কর্তৃক সরাই + ঈল = সরাইল নামে আখ্যায়িত হয়েছিল। দিল্লী থেকে প্রচারিত হতে হতে এটাই কালের আবর্তে পরবর্তী শাসন আমলে সরাইল নামে পরিচিত ও গৃহীত হয়েছিল। মোগল আমলে (১৩৩৮-১৫২৬) প্রায় দুইশত বৎসর এ নামটি সরাইল পরগণা হিসাবে চিহ্নিত হয়ে ইতিহাসে লিপিবদ্ধ হয়ে আছে। বারো ভুঁইয়া দের অন্যতম ঈসা খাঁর জন্ম ১৫২৯ সালে সরাইল পরগণায়। ইসা খাঁর দাদা রাজপুত বংশীয় 'ভাগিরথ' অযোধ্যা হতে বাংলায় এসে বাংলার সুলতান গিয়াসউদ্দিন মাহমুদ শাহের (১৫৩৩-৩৮) অধীনে দেওয়ান এর চাকরি লাভ করেন। তার পুত্র কালিদাস গজদানী পিতার মৃত্যুর পর দেওয়ানি লাভ করেন এবং ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে সোলায়মান খাঁ নাম গ্রহণ করেন। সোলায়মান খাঁ সুলতান গিয়াসউদ্দিন মাহমুদ শাহের কন্যা সায়েদা মোমেনা খাতুনকে বিয়ে করে সরাইল পরগণা ও পূর্ব মোমেনশাহীর জমিদারি লাভ করেন। সুলতান গিয়াসউদ্দিন মাহমুদের মৃত্যুর পর সোলায়মান খাঁ নিজেকে সুলতানের উত্তরাধিকারি হিসেবে ঘোষণা দেন এবং সম্রাট শের শাহের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। তিনি স্বাধীনভাবে তার জমিদারি পরিচালনা শুরু করেন এবং তার জমিদারির প্রশাসনিক কেন্দ্র ছিল সরাইল। ১৫৪৫ সালে শের শাহের মৃত্যুর পর তার পুত্র ইসলাম শাহ দিল্লীর সিংহাসন লাভ করেন এবং সোলায়মান খাঁকে তার আনুগত্য মেনে নিতে বলেন। সোলায়মান খাঁ তা প্রত্যাখ্যান করলে ইসলাম শাহ তার দুই সেনাপতি তাজ খান কররানী ও দারিয়া খান কে যুদ্ধের জন্য পাঠান। যুদ্ধে সোলায়মান খাঁর পরাজয় হয় ও তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তার দুই পুত্র ঈসা ও ইসমাইল কে বন্দি করে দাস হিসেবে ইরানি বণিকদের কাছে বিক্রি করে দেয়া হয়। তারপর তাজ খান কররানী অধিকৃত এলাকার দখল লাভ করেন ও ঈসা খাঁর চাচা কুতুব খানকে তার আদালতে নিয়োগ দেন। তিনি ঈসা ও ইসমাইল কে ইরানি বণিকদের কাছ থেকে মুক্ত করেন। তারপর ঈসা খাঁ তার চাচা কুতুব খানের সাহায্যে সরাইলের জমিদারী দখল করেন। ১৫৬৫ সালে তাজ খান কররানীর মৃত্যুর পর আফগান শাসকদের সাথে মিলে মোগলদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। ১৫৮০ সালের দিকে তিনি তার প্রশাসনিক কেন্দ্র সরাইল থেকে স্থানান্তর করে সোনারগাঁতে নেন। প্রাচীনকালে এটি ভাটি (জলাবদ্ধ নিম্ন ভাগ) অঞ্চল হিসেবে পরিচিত ছিল। ১৮৩০ সালের পূর্বে সরাইল পরগণা ময়মনসিংহ জেলার অন্তর্ভুক্ত ছিল। ১৮৩০ সালে সরাইল পরগণা ময়মনসিংহ হতে বিচ্ছিন্ন করে ত্রিপুরা জেলার অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ইস্টইন্ডিয়া কোম্পানি প্রশাসনিক কাজের সুবিধার্তে পরগণার পরিবর্তে জেলা ও মহকুমা ব্যবস্থার প্রচলন করে। যার কারণে সরাইল পরগনা ভেঙ্গে দেয়া হয়। ১৮৬০ ত্রিপুরা জেলা ভেঙ্গে ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহকুমার সৃষ্টি করার পর সরাইল পরগণাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহকুমার সাথে যুক্ত করা হয়। প্রতিষ্ঠাকাল ১৯৯০ সালে সরাইল উপজেলা প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রশাসনিক এলাকা সরাইল উপজেলায় বর্তমানে ৯টি ইউনিয়ন রয়েছে। সম্পূর্ণ উপজেলার প্রশাসনিক কার্যক্রম সরাইল থানার আওতাধীন। ইউনিয়নসমূহ: ১নং অরুয়াইল ২নং পাকশিমুল ৩নং চুণ্টা ৪নং কালিকচ্ছ ৫নং পানিশ্বর ৭নং সরাইল সদর ৮নং নোয়াগাঁও ৯নং শাহজাদাপুর ১০নং শাহবাজপুর জনসংখ্যার উপাত্ত ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী সরাইল উপজেলার মোট জনসংখ্যা ৩,১৫,২০৮ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১,৫২,৩৮৯ জন এবং মহিলা ১,৬২,৮১৯ জন। মোট পরিবার ৫৮,৬২২টি। জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গ কিলোমিটারে প্রায় ১,৪৬৪ জন। শিক্ষা ব্যবস্থা ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী সরাইল উপজেলার সাক্ষরতার হার ৪০.৯%। অত্র এলাকার সবচেয়ে প্রাচীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হল সরাইল অন্নদা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, যা ১৮৭১ সালে সরাইল এস্টেটের জমিদার রাজা রায় বাহাদুর অন্নদা প্রসাদ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয়। অন্যান্য উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে ১৯৪৪ সালে প্রফুল্ল চক্রবর্তী কর্তৃক স্থাপিত কালীকচ্ছ পাঠশালা (উচ্চ বিদ্যালয়), ১৯৭০ সালে স্থাপিত সরাইল কলেজ ও ১৯৫৩ সালে স্থাপিত সরাইল পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। এখানে রয়েছে - সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় - ৮১টি বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় - ৪৩টি মহাবিদ্যালয় - ২ টি (সরাইল সরকারি কলেজ ও আব্দুস সাত্তার ডিগ্রি কলেজ) কিন্ডারগার্টেন - ০৮টি এবতেদায়ী মাদ্রাসা - ০৪টি দাখিল মাদ্রাসা - ০২টি উচ্চ বিদ্যালয় - ১৫টি স্বাস্থ্য স্বাস্থ্য সেবাদানের জন্য রয়েছেঃ উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্র - ১টি পশু চিকিৎসা কেন্দ্র - ১টি দাতব্য চিকিৎসা কেন্দ্র - টি কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্র - ১টি কৃষি এখানকার প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ কৃষক। প্রধান ফসলঃ ধান, গম, পাট, সরিষা, আলু ও নানা রকম শাক-সবজি। লুপ্ত বা লুপ্ত প্রায় শস্যাদিঃ কাউন, আউশ ও আমন ধান, পাট ও আড়হর ডাল। প্রধান ফলঃ কলা, কাঁঠাল, আম, জাম। অর্থনীতি এ উপজেলার প্রায় ৬৮% লোক কৃষিজীবি, ৭% লোক মৎস্যজীবি এবং বাকি ২৫% বিভিন্ন পেশায় জড়িয়ে আছেন। এ অঞ্চলে প্রবাসীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য। কুটির শিল্প - মৃৎ শিল্প, সূচী-শিল্প। রপ্তানি পণ্য - শাক-সবজি এখানকার কলকারখানার মধ্যে রয়েছে - ময়দাকল, বরফকল, ইটভাটা, ওয়েল্ডিং কারখানা প্রভৃতি। প্রাকৃতিক সম্পদ সরাইলের প্রধান প্রাকৃতিক সম্পদ গ্যাস। ২০১৬ সালের ১৮ই জুলাই বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি লিমিটেডের (বিজিএফসিএল) এর অধীনে সরাইলের কুট্টাপাড়া এলাকায় তিতাস গ্যাস ক্ষেত্রের ২৪ নং কূপের খনন কাজের উদ্বোধন করা হয়। আগামী বছরে এ কূপের খনন কাজ শেষ হলে দৈনিক ২০-২৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন সম্ভব হবে। যোগাযোগ ব্যবস্থা সড়ক পথ : পাকা ও আধাপাকা - ১১৫.৫ কিলোমিটার। দুটি গুরুত্বপূর্ণ হাইওয়ে রোড সরাইলকে অন্যান্য জেলার সাথে যুক্ত করেছে, এর একটি হল ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক, যা এশিয়ান হাইওয়ে নেটওয়ার্ক এর অংশ এবং অন্যটি হল কুমিল্লা সিলেট মহাসড়ক। এ দুটি মহাসড়ক সরাইলের বিশ্বরোডে এসে মিলিত হয়েছে। নৌপথ - নৌপথে যোগাযোগের জন্য এখানে রয়েছে মেঘনা ও তিতাস নদী এবং আকাশি বিল ও শাপলা বিল। নৌপথের দৈর্ঘ্য - ১৪ নটিক্যাল মাইল পত্র-পত্রিকা সরাইলের স্থানীয় পত্রিকা সমূহ - সাপ্তাহিক পরগণা সরাইল বার্তা পাক্ষিক বাতায়ন শ্বাশত সরাইল (ত্রৈমাসিক) সরাইল যুগে যুগে কৃতি ব্যক্তিত্ব অখিলচন্দ্র নন্দী –– ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের বিপ্লবী। আবদুস সাত্তার ভূঞা –– রাজনীতিবিদ এবং আইনজীবি। আহমদ রফিক –– কবি ও গবেষক। ঈসা খান - বারো ভুঁইয়া দের অন্যতম ঈসা খাঁর জন্ম ১৫২৯ সালে সরাইল পরগনায়। উল্লাসকর দত্ত –– ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন বিপ্লবী। তাহেরউদ্দিন ঠাকুর –– রাজনীতিবিদ এবং সাংবাদিক। নুরুল আমিন –– পাকিস্তানের অষ্টম প্রধানমন্ত্রী এবং পাকিস্তানের একমাত্র উপ-রাষ্ট্রপতি। প্রবোধচন্দ্র সেন –– ছন্দবিশারদ। রবীন্দ্রমোহন নাগ –– ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের বিপ্লবী এবং মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক। দ্বিজ কালিদাস - লেখক,কলকাতার বেথুন স্কুলের প্রধান শিক্ষক,কৃষিবিদ,ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট। তিনি উল্লাসকর দত্তের পিতা ও সাধক আনন্দ স্বামীর জামাতা। দেওয়ান মাহবুব আলী (কুতুব মিয়া) - মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক সৈয়দ আকবর হোসেন (বকুল মিয়া) (১৯৩৫-১৯৭১) - শহীদ বুদ্ধিজিবী শেখ আবু হামেদ (১৯২৮-২০১৪) - ভাষা সৈনিক, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও ইতিহাসবিদ। ১৯২৮ সালের ১৮ই মে সরাইলের নোয়াগাও ইউনিয়নের আঁখিতারা গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। ১৯৫৩ সালে সরাইল কালচারাল এসোসিয়েশন প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ছিলেন সরাইল কলেজ, সরাইল পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও সরাইল থানা আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা। ডক্টর অবিনাশ চন্দ্র সেন - অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় হতে অর্থনীতিতে ডক্টরেট ডিগ্রী প্রাপ্ত,দানবীর পায়েল ঠাকুর - ইতালীয় চলচ্চিত্র অভিনেতা হাবিবুর রহমান মিলন (১৯৩৯-২০১৫) - ২০১২ সালের একুশে পদক প্রাপ্ত সাংবাদিক। আহমেদুর রহমান (১৯৩৩-১৯৬৫)- সরাইলের উচালিয়াপাড়াতে জন্ম। ইত্তেফাকের খ্যাতিমান সাংবাদিক, সাংবাদিক হাবিবুর রহমান মিলনের বড় ভাই, ছায়ানটের প্রতিষ্ঠাতা সদস্যেদের একজন। ১৯৬৫ সালের ২০ মে কায়রোতে বিমান দুর্ঘটনায় নিহত। আলহাজ্ব হাফেজ ক্বারী মাওলানা কাজী মাসুদুর রহমান - সাবেক রাষ্ট্রপতির ইমাম:- বঙ্গভবন জামে মসজিদ<ref>আপন বিভাগ, রাষ্ট্রপতির কার্যালয়, বঙ্গভবন (২০১০-২০১৩খ্রি:),: বঙ্গভবন'</ref>, সম্মানিত প্রধান মুয়াযযিন:- জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম<ref>ধর্ম মন্ত্রণালয়, জাতীয় মসজিদ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, বায়তুল মোকাররম, ঢাকা-১০০০,(২০০৯খ্রি:চলমান),: ''জাতীয় মসজিদ'.</ref>, মূল ক্বারী, প্রধান মুকাব্বির ও উপস্থাপক:-জাতীয় ঈদগাহ, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের (রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানের) ধর্ম গ্রন্ত পাঠক। ইসলামিক আলোচক, ধর্মীয় অনুষ্ঠান গ্রন্তনা ও উপস্থাপক:-বাংলাদেশ বেতার এবং টেলিভিশন। আনন্দ চন্দ্র নন্দী - সঙ্গীতজ্ঞ ও সাধক। সরাইল উপজেলার কালিকচ্ছ ইউনিয়নে জন্ম। আনন্দস্বামী নামে সুপরিচিত। মহেন্দ্রচন্দ্র নন্দী (১৮৫৩-১৯৩২)- একাধারে প্রখ্যাত ডাক্তার,শিল্প উদ্যোক্তা ও সাধক। সাধক আনন্দ চন্দ্র নন্দীর পুত্র। নরেন্দ্রচন্দ্র দত্ত (১৮৭৮-১৯৬২) - কালিকচ্ছ ইউনিয়নে জন্ম। প্রখ্যাত ব্যাংকার,ইউনাইটেড ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার সহপ্রতিষ্ঠাতা। সুধীর দাস - কবি। কালিকচ্ছ ইউনিয়নের নন্দীপাড়া গ্রামে জন্ম। অমিতাভ নন্দী (-২০১৪) - কালিকচ্ছ ইউনিয়নে জন্ম। ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্ক্সবাদী) সিপিএম এর নেতা। পবিত্র কর - কালিকচ্ছ ইউনিয়নে জন্ম। ত্রিপুরা রাজ্যের বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার। প্রভাত চন্দ্র সেন - চিত্রশিল্পি। কালিকচ্ছ ইউনিয়নে জন্ম। মুক্তিযুদ্ধে সরাইল ১৯৭১ সালের ৫ মে মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে শাহবাজপুর পাকসেনা ক্যাম্পে ৯ জন পাকসেনা নিহত হয়। সরাইলের কালীকচ্ছ বাজারে মুক্তিযোদ্ধাদের মাইন বিস্ফোরণে দুটি গাড়ি বিধ্বস্ত হয়ে পাকবাহিনীর কয়েকজন অফিসার ও সরাইলের শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান নিহত হন। ১৯৭১ সালে সরাইল উপজেলার বিটঘরে ৭০ জন লোক পাকবাহিনীর হাতে নিহত হয়। মুক্তিযুদ্ধের স্মরণে এখানে ৩ টি স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপন করা হয়েছে - বিটঘর স্মৃতিস্তম্ভ, সরাইল ডিগ্রি কলেজ মাঠের স্মৃতিস্তম্ভ, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা শেখ মেজবাহউদ্দিন স্মৃতিস্তম্ভ। তাছাড়া স্মৃতিসৌধ রয়েছে ৪ টি - অাঁখিতারা স্মৃতিসৌধ, নোয়াগাঁও স্মৃতিসৌধ, কালীকচ্ছ-বারিউড়া সড়ক স্মৃতিসৌধ, শাহবাজপুর ইউপি অফিস স্মৃতিসৌধ। দর্শনীয় এবং উল্লেখযোগ্য স্থান ও স্থাপনা আড়িফাইল মসজিদ - সরাইল উপজেলা সদরের প্রায় ১ কি.মি. পশ্চিমে দক্ষিণ আরিফাইল গ্রামে অবস্থিত। এটি ১৬৬২ খ্রিষ্টাব্দে মুঘল আমলে নির্মিত হয়। দরবেশ শাহ আরিফ কর্তৃক মসজিদটি নির্মিত হয় বলে ধারণা করা হয়। মসজিদটি আয়তাকার এবং এর দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ যথাক্রমে ২৪.৩৮ মি x ৯.৩০ মি। মসজিদটি ৩ গম্বুজ বিশিষ্ট। বর্তমানে বাংলাদেশ প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তরের অধীন এই মসজিদটি প্রত্ন সম্পদ হিসেবে ঘোষিত হয়েছে। এটির স্থাপত্যশৈলী অনন্য। মসজিদের পাশেই রয়েছে জোড়া কবর। এর পাশে সাগরদিঘী নামে একটি বিশাল পুকুর রয়েছে। হাতিরপুল - সরাইল উপজেলার ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক সংলগ্ন বারিউড়া নামক স্থানে অবস্থিত। বর্তমানে বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর কর্তৃক সংরক্ষিত। দেওয়ান শাহবাজ আলী সরাইলের দেওয়ান থাকা অবস্থায় ১৬৫০ খ্রিষ্টাব্দে এটি নির্মাণ করেন বলে ধারণা করা হয়। দেওয়ানরা হাতির পিঠে করে চলাচল করতো এবং পুলটির গোড়ায় হাতি নিয়ে বিশ্রাম নেয়া হতো বলে এটিকে হাতির পুল নামে অভিহিত করা হয়। সরাইল শাহী জামে মসজিদ - ১৬৭০ খ্রিষ্টাব্দে মুঘল আমলে প্রতিষ্ঠিত। সরাইল বিকাল বাজারে অবস্থিত। হাটখোলা মসজিদ (আরফান নেছার মসজিদ) - সরাইল উপজেলা চত্বরের নিকটে অবস্থিত। সরাইলের দেওয়ান নূর মোহাম্মদের স্ত্রী আরফান নেছা কর্তৃক ১৬৬২ খ্রিষ্টাব্দে নির্মিত। ভিন্নমত রয়েছে যে মজলিশ শাহরাজের পুত্র নূর মোহাম্মদ কর্তৃক ১০৭৩ খ্রিষ্টাব্দে মসজিদটি নির্মিত হয় বলে জানা যায়। অরুয়াইল নদীঘাট - সরাইলের অরুয়াইল ইউনিয়নে অবস্থিত। নৌকা তৈরির জন্য বিখ্যাত। ধরন্তী - সরাইলের কালীকচ্ছ ইউনিয়ন অবস্থিত। সরাইল-নাসিরনগর-লাখাই সড়ক যাওয়ার পথে অবস্থিত। ঈদের সময় ব্যাপক লোকসমাগম হয়। বর্ষাকালে সড়কের দুই পাশের বিল পানিতে পরিপূর্ণ হয়ে উঠে এবং আশেপাশের এলাকার পর্যটকদের আকৃষ্ট করে। পর্যটকদের কাছে 'মিনি কক্সবাজার' নামে পরিচিত। বৈশাখ থেকে আশ্বিন মাস পর্যন্ত ছয়মাস পানিতে পরিপূর্ণ থাকে এই হাওর। বাকি সময় ধান চাষ করা হয়। আয়েত উল্লাহ শাহ এর মাজার - এটি সরাইলের পানিশ্বর ইউনিয়নের বিটঘর গ্রামে অবস্থিত। শ্রী শ্রী কালাচাঁদ বাবাজীর মন্দির - সরাইলের পানিশ্বর ইউনিয়নের বিটঘর গ্রামে অবস্থিত। মুক্তিযোদ্ধে নিহত ৭১ জন শহীদের নামে নির্মিত স্মৃতিসৌধ - সরাইলের পানিশ্বর ইউনিয়নের বিটঘর গ্রামে অবস্থিত। কালিকচ্ছ দয়াময় আনন্দধাম - সরাইলের কালীকচ্ছ ইউনিয়নে অবস্থিত। দেওয়ান শাহবাজ এর ঐতিহাসিক কুপ - সরাইলের শাহবাজপুর ইউনিয়নে অবস্থিত। সেন বাড়ি - সরাইলের চূন্টা ইউনিয়নে অবস্থিত। প্রাচীন বৌদ্ধ মন্দির - সরাইলের চুন্টা ইউনিয়নে অবস্থিত। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সদর দপ্তর - ১৯৭৮ সালের ৩০ এপ্রিল কালীকচ্ছ ইউনিয়নে তৎকালীন বিডিআর ক্যাম্প প্রতিষ্ঠা করা হয়। ২০১৩ সালের ২৩ জানুয়ারি এখানে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সদর দপ্তর উদ্ভোধন করা হয়।http://sarail.brahmanbaria.gov.bd/node/1159722/বিজিবি ক্যামেলিয়া ডানকান ফাউন্ডেশন অর্কিড প্রজেক্ট - শাহবাজপুরে অবস্থিত। হরষপুর জমিদার বাড়ি উল্লেখযোগ্য প্রাণী গ্রে-হাউন্ড কুকুর - সরাইলের গ্রে-হাউন্ড কুকুর এক ধরনের শিকারি জাতের কুকুর। স্থানীয়ভাবে হাউন্ড কুকুর নামেও পরিচিত,তাছাড়া দেশব্যাপী 'সরাইলের কুকুর' নামেও সুপরিচিত। শিকারি বৈশিষ্ট্যের জন্য এই কুকুর দেশে-বিদেশে বিখ্যাত। সরাইল গ্রে-হাউন্ডের লেজ নিচের দিকে ঝুলে এবং লেজটি চিকন হয়। গ্রে-হাউন্ড জাতের কুকুরের কান ও লেজ লম্বা হয়। এদের মুখটা লম্বাটে ধরনের হয় ও গায়ে ডোরাকাটা দাগ রয়েছে। অন্যান্য প্রজাতির কুকুরের মত এটা আহ্লাদি নয়। এই কুকুর অত্যন্ত হিংস্র, এর নজর তীক্ষ ও দ্রুত দৌড়াতে পারে। এই জাতের পুরুষ কুকুরের উচ্চতা হয় ২৫-২৮ ইঞ্চি এবং ওজন ২৩-৩৩ কেজি আর নারী কুকুরের উচ্চতা হয় ২৩-২৬ ইঞ্চি এবং ওজন ১৮-২৮ কেজি। প্রতি ঘণ্টায় এই কুকুর প্রায় ৫৫ কিলোমিটার পর্যন্ত দৌড়াতে পারে। এই কুকুর গড়ে ৮-১৪ বছর বাঁচে। এই কুকুরের রং দুই ধরনের হয় বাদামী-সাদা ও সাদা-কালো। ধারণা করা হয় মধ্যপ্রাচ্যের বণিকদের সাথে আনা আরবি জাতের কুকুর, যেমন সাইট হাউন্ড,সালুকি,আফগানি হাউন্ড এর সাথে ব্রিটিশদের গ্রে হাউন্ড এর সংমিশ্রণে এক জাতের কুকুরের উৎপত্তি হয় এবং সরাইলের এক দেওয়ান এজাতের কুকুর নিয়ে আসেন, তারপর বুনো জাতের কুকুরের সাথে মিলনে সরাইল হাউন্ডের উৎপত্তি । এর উৎপত্তি নিয়ে আরও কয়েকটি কিংবদন্তি রয়েছে, যেমন - সরাইলের এক দেওয়ান হাতি নিয়ে সরাইল পরগনা থেকে ভারতের কলকাতা যাচ্ছিলেন। পথে একটি কুকুর দেখে তার অনেক পছন্দ হয়, কিন্তু কুকুরের মালিক (মতান্তরে ইংরেজ) এটি কিছুতেই বিক্রি করতে চাননি। তারপর দেওয়ান নিজের হাতির বিনিময়ে মালিকের কাছ থেকে কুকুরটি কিনে নেন। পরে কুকুরটি শিয়ালের সঙ্গে মিলন করে, যার ফলে সৃষ্টি বর্তমান এই জাতের কুকুরের। তাছাড়া আরও জনশ্রুতি আছে যে, সরাইলের এক দেওয়ান হাতি নিয়ে শিকারের জন্য বনে যান। সঙ্গে ছিল তার মাদী কুকুর। তারপর কুকুরটি বনে হারিয়ে যায়। কুকুরটি বনে বাঘের সঙ্গে মিলন করে এবং বাঘের সঙ্গে মিলনের ফলেই এই গ্রে-হাউন্ড কুকুরের উৎপত্তি । গবেষকদের মতে এরাবিয়ান শিকারি কুকুর,ইংরেজ গ্রে-হাউন্ড ও দেশি বন্য কুকুরের মিশ্রণে এই জাতের কুকুরের উৎপত্তি । বর্তমানে সরাইল উপজেলার নোয়াগাঁও ইউনিয়নের চৌরাগোদা গ্রামের তপন পাল রবিদাস ও তার পরিবার এই জাতের কুকুর লালন পালন করেন এবং বিক্রি করেন। সমগ্র ব্রাক্ষণবাড়িয়ায় শুধুমাত্র তাদের পরিবারেই এ জাতের কুকুরের সংরক্ষন ও প্রজনন করা হয়। বর্তমানে কুকুরের বাচ্চা ২০-৩০ হাজার টাকায় বিক্রি হয় । তপন পাল রবিদাসের ভাষ্যমতে, শত বছর আগে তৎকালীন জমিদার দেওয়ান মনোয়ার আলি তার দাদা কালি চরন রবি দাসকে দুটি হাউন্ড কুকুর দিয়েছিলেন । অন্যান্য কুকুরের তুলনায় এই জাতের কুকুর শিকারের জন্য ঘ্রানশক্তির বদলে দৃষ্টিশক্তি বেশি ব্যবহার করে। জেনারেল এম. এ. জি. ওসমানীর দুটি সরাইল হাউন্ড ছিল http://dailynotunvor.com/?p=43168। র‌্যাব ও পুলিশের ডগ স্কোয়াডে এই কুকুর যোগ করা হয়েছে http://archive.samakal.net/print_edition/details.php?news=17&view=archiev&y=2011&m=11&d=17&action=main&menu_type=&option=single&news_id=209342&pub_no=874&type=n। সংরক্ষন - ডঃ শাহজাহান ঠাকুর নামে একজন গবেষক ২০০১ সালে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে সরাইলের কুকুর প্রজনন ও সংরক্ষনের চেষ্টা করেন, কিন্তু সফল হতে পারেননি। ২০০৬ সালে ঢাকার ফয়সাল মাহমুদ ফয়েজী নামক একজন পশুপ্রেমিক এই জাতের কুকুর সংরক্ষনের জন্য ন্যাশনাল সোসাইটি ফর দা সরাইল হাউন্ড'' প্রতিষ্ঠা করেন। তিনিও সফলতা লাভ করতে পারেননি। ২০০৯ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের সংসদ সদস্য এড: মো: জিয়াউল হক মৃধা এই কুকুরের সংরক্ষনের জন্য প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে চিঠি পাঠান এবং সংসদে বক্তব্য রাখেন। কিন্তু পরবর্তীতে কোন উদ্যোগ নেয়া হয় নি। পরবর্তীতে র‌্যাব-৯ এর মেজর মোঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন ট্রেনিং এর জন্য ৪ টি কুকুর সংগ্রহ করেন। উন্নত জাতের কুকুরের বংশ সংরক্ষণ, প্রজনন ও চিকিৎসাসেবার জন্য ১৯৮০ সালে প্রতিষ্ঠিত 'বাংলাদেশ কেনেল ক্লাব' বর্তমানে এই জাতের কুকুরের বংশবৃদ্ধি ও সংরক্ষনের চেষ্টা করছে । হাচলি/হাঁসলি/আসলি/আসিল মোরগ - সরাইল মোরগ লড়াইয়ের জন্য বিখ্যাত। এই মোরগ লড়াইয়ে ব্যবহার করা হয় 'হাচলি মোরগ' যা শক্তিশালী দৈহিক গঠনের জন্য বিখ্যাত। এটি 'আসলি' বা আসিল নামেও উচ্চারন করা হয়। 'আসিল' শব্দের অর্থ আসল। 'আসিল মোরগ লড়াই' এর অর্থ 'আসল মোরগ লড়াই'। কিংবদন্তি অনুসারে সরাইলের দেওয়ানরা ৪০০ বছর আগে ইরান থেকে এই জাতের মোরগ এনেছিল। আবার অনেকের মতে মুঘল আমলে ভারতের রায় বেরেলি থেকে এ জাতের মোরগ আনা হয় । ‘সরাইল মিতালী শৌখিন আসিল মোরগ সংস্থা’ নামে একটি সংগঠন সরাইলে মোরগ লড়াইয়ের আয়োজন করে থাকে। বিবিধ এনজিও ব্রাক, আশা, গ্রামীণ ব্যাংক সক্রিয় এনজিওদের মধ্যে অন্যতম। হাট-বাজার ও মেলা সরাইলের প্রধান বাজারগুলি হল - সরাইল প্রাতঃ (সকাল) বাজার সরাইল বিকাল বাজার সরাইল গরু বাজার পানিশ্বর বাজার অরুয়াইল বাজার কালিকচ্ছ বাজার শাহবাজপুর বাজার দেওড়া বাজার মেলা সরাইল প্রাত বাজার মেলা (প্রতিবছর সাববাড়ির সম্মুখে অনুষ্ঠিত হয়) সরাইল বিকাল বাজার মেলা আলীনগর মেলা বাঘাচাঁন মিয়ার মেলা - শাহবাজপুর জনপ্রতিনিধি আরও দেখুন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা চট্টগ্রাম বিভাগ বাংলাদেশের উপজেলাসমূহ আরও পড়ুন তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ বিষয়শ্রেণী:সরাইল উপজেলা
সরাইল উপজেলা
রাজস্থলী বাংলাদেশের রাঙ্গামাটি জেলার অন্তর্গত একটি উপজেলা। আয়তন রাজস্থলী উপজেলার মোট আয়তন ১৪৫.০৪ বর্গ কিলোমিটার। এটি আয়তনের দিক থেকে রাঙ্গামাটি জেলার সবচেয়ে ছোট উপজেলা। অবস্থান ও সীমানা রাঙ্গামাটি জেলার দক্ষিণাংশে ২২°১৭´ থেকে ২২°২৬´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯২°০৬´ থেকে ৯২°২২´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ জুড়ে রাজস্থলী উপজেলার অবস্থান। রাঙ্গামাটি জেলা সদর থেকে এ উপজেলার দূরত্ব প্রায় ৪৮ কিলোমিটার। এ উপজেলার উত্তরে কাপ্তাই উপজেলা, পূর্বে বিলাইছড়ি উপজেলা, দক্ষিণে বান্দরবান জেলার রোয়াংছড়ি উপজেলা ও বান্দরবান সদর উপজেলা এবং পশ্চিমে চট্টগ্রাম জেলার রাঙ্গুনিয়া উপজেলা অবস্থিত। নামকরণ রাজস্থলী উপজেলার নামকরণ নিয়ে তেমন জটিল কোন ইতিহাস নাই, তবে এলাকার গুণীজনের ভাষ্যমতে রাখাইন প্রদেশের রাজা, বর্মী বারান্ডং সেনাপতির কাছে পরাজিত হয়ে বাংলাদেশে আসার পর এই বুধুঝিই (রাজস্থলীর পূর্ব নাম) এসেছিলেন তার নিজ রাজ্য গড়তে। তাঁর নিজের প্রথা অনুযায়ী রাজ্য গড়ার আগে কলাগাছ রোপন করে দেখা হয়। যত বেশি কলার কান্ধি তত রাজার রাজ্যভিষেক হবে ঐ রাজ্যে। এই নিয়ম মেনে কলা গাছটি রাজস্থলী উপজেলার ১নং ঘিলাছড়ি ইউনিয়নের খাগড়াছড়ি পাড়ায় রোপন করা হয়। কিন্তু কলার ছড়ায় কান্ধি কম হওয়ায় তিনি এই স্থান ত্যাগ করে বান্দরবান উদ্দেশ্যে রওয়ানা করেন। যাবার বেলায় ঐ কলা গাছে রাজার ছোট থলে রয়ে যায়। তখন থেকে রাজারথলে নামকরণ হয় এবং পরে তা রাজারথলে থেকে রাজারথলি ও বর্তমান রাজস্থলী নামকরণ করা হয়। প্রশাসনিক এলাকা ১৯০৯ সালে রাজস্থলী থানা প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ১৯৮৩ সালে প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের ফলে রাজস্থলী উপজেলায় রূপান্তরিত হয়। এ উপজেলায় বর্তমানে ৩টি ইউনিয়ন রয়েছে। সম্পূর্ণ রাজস্থলী উপজেলার প্রশাসনিক কার্যক্রম রাজস্থলী থানার আওতাধীন। ইউনিয়নসমূহ: ১নং ঘিলাছড়ি ২নং গাইন্দ্যা ৩নং বাঙ্গালহালিয়া জনসংখ্যার উপাত্ত ২০১১ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী রাজস্থলী উপজেলার জনসংখ্যা ২২,৬১১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১২,১৪২ জন এবং মহিলা ১০,৪৬৯ জন। মোট জনসংখ্যার ২২.৭৮% মুসলিম, ৭.১৮% হিন্দু, ৬২.৪১% বৌদ্ধ এবং ৭.৬৩% খ্রিস্টান ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বী রয়েছে। এ উপজেলায় চাকমা, মারমা, তঞ্চঙ্গ্যা, ত্রিপুরা, চাক, খুমি, লুসাই, পাংখোয়া প্রভৃতি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে। শিক্ষা রাজস্থলী উপজেলার সাক্ষরতার হার ৩৪%। এ উপজেলায় ২টি কলেজ, ৩টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৪টি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ৫৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যোগাযোগ ব্যবস্থা রাজস্থলী উপজেলায় যোগাযোগের প্রধান সড়ক রাঙ্গামাটি-বান্দরবান সড়ক। সব ধরনের যানবাহনে যোগাযোগ করা যায়। ধর্মীয় উপাসনালয় রাজস্থলী উপজেলায় ১৬টি মসজিদ, ৩টি মন্দির, ২৮টি বিহার এবং ২টি গীর্জা রয়েছে। নদ-নদী রাজস্থলী উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে কাপ্তাই খাল। হাট-বাজার রাজস্থলী উপজেলার প্রধান ২টি হাট-বাজার হল বাঙ্গালহালিয়া বাজার এবং রাজস্থলী বাজার। দর্শনীয় স্থান রাজস্থলী ঝুলন্ত সেতু মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলী মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে পাকবাহিনী এ উপজেলায় ব্যাপক হত্যা, নির্যাতন, লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগ করে। মিজোরাম রাজ্যের বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র মিজো গেরিলারা পাকবাহিনীর সহযোগী হিসেবে কাজ করে। গাইন্দ্যা ইউনিয়নে বান্দরবান জেলার সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায় পাকবাহিনীর সাথে মুক্তিবাহিনীর সংঘর্ষ হয়। এ সংঘর্ষে ৫ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ১৫ ডিসেম্বর এ উপজেলা শত্রুমুক্ত হয়। জনপ্রতিনিধি সংসদীয় আসন উপজেলা পরিষদ ও প্রশাসন আরও দেখুন রাঙ্গামাটি জেলা তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ বিষয়শ্রেণী:রাঙ্গামাটি জেলার উপজেলা বিষয়শ্রেণী:রাজস্থলী উপজেলা
রাজস্থলী উপজেলা